শিশু যৌন নির্যাতনের প্রতিকার : নিজে সতর্ক হই, শিশুটিকে সতর্ক করি - পর্ব দুই

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৯/০১/২০১৪ - ৯:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যৌন নির্যাতন আমাদের দেশে এমন একটি ট্যাবু যা নিয়ে আমরা কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইনা, প্রসঙ্গটা সবসময় এড়িয়ে যেতে চাই। আর তা যদি শিশু যৌন নির্যাতন হয় তাহলে তো আর কথায় নেয়... খুব কম পরিবারই রয়েছে যারা নিজ শিশুর যৌন নির্যাতনের কথা জানতে পেরেও নির্যাতকের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করে থাকে। কারন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুটি নির্যাতিত হয় তার আশেপাশের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী চেনা পরিচিত মানুষ দ্বারা। আর এক্ষেত্রে সামাজিকতার বা লোকলজ্জার ভয়েও অনেক সময় অনেক অভিভাবক নির্যাতকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় না।

শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমাদের সচেতন হতে হবে তার সাথে সাথে বাচ্চারা একটু বুঝার বয়স হলেই তাদের কিছু জিনিষ বুঝাতে হবে। কিছুটা সচেতন হলে হয়তবা আমরা আমাদের আদরের শিশুটিকে সহজেই নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে তার নির্মল,সুন্দর, হাসিখুশিতে ভরপুর একটি শৈশব নিশ্চিত করতে পারব।

প্রথম পর্বের পর ...

৪) শিশুটিকে জানতে দিন যে সে যে কোন বিষয় নিয়ে যে কোন সময়ে আপনার সাথে কথা বলতে পারবে :

আজকাল আমরা প্রায় সকলেই নিজেদের সমস্যা নিয়ে এতটাই বিব্রত আর বিরক্ত থাকি যে অন্য কাউকে বিশেষ করে বাচ্চাটিকে একেবারেই সময় দেইনা। খেয়াল করে দেখুন আপনার শিশুটি মাঝে মাঝে আপনার কাছে বিভিন্ন গল্প বলতে আসে কার্টুন নিয়ে বা তার বন্ধু নিয়ে বা তার খেলনা নিয়ে অথবা কাল্পনিক কিছু বানিয়ে, আবার অনেক সময় বাচ্চারা বাবা মায়ের সাথে তাদের খেলনা নিয়ে টুকটাক খেলতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চাদের সাথে কার্টুনের গল্পে বা খেলায় বড়দের তেমন একটা আগ্রহ থাকবেনা তবুও যদি বাচ্চাটিকে কিছুটা সময় দিয়ে তার কথা শুনতে থাকি তাহলে সে নিজেকে কখনই একা বা অবহেলিত মনে করবেনা।

আমরা যদি তাদের ছোট ছোট কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে না শুনি, ছোট ছোট সমস্যা গুলো হেসে উড়িয়ে দেয় তাহলে কিভাবে আর কোন সাহস নিয়েই বা তারা আমাদের কাছে বড় কোন সমস্যা নিয়ে আসবে?

অনেক বাচ্চা থাকে যারা নিজ থেকেই কথা বলতে আসে, স্কুলের গল্প করে তাদের সাথে বাবা মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ। কিন্তু যেসব বাচ্চারা একটু অন্তর্মুখী হয়, সহজে কথা বলতে চায়না তাদের সাথে সহজ হতে অভিভাবকদের কিছুটা কৌশলী হতে হবে।
কৌশলী হবার প্রথম ধাপ হিসেবে শিশুটিকে সবসময় এমন প্রশ্ন করা উচিত যার উত্তর এক কথায় হয়না। যেমন আমরা যদি বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করি স্কুলে কি মজা হয়েছিল তার উত্তরে সে সহজেই হয়ত এককথায় বলে দিবে হ্যাঁ অথবা না। কিন্তু তার পরিবর্তে আমরা যদি জিজ্ঞেস করি স্কুলে কি করলে সারাদিন?/ আমাকে তোমার স্কুলের গল্প বল তার জবাবে কিন্তু শিশুটি অনেক কিছুই বলবে, তার শিক্ষকদের গল্প, বন্ধুদের গল্প, আড্ডার গল্প ইত্যাদি ইত্যাদি।

শিশুটি মজার কোন গল্প করলে ওর সাথে হাসুন। ওর বন্ধুর কোন সমস্যার গল্প করলে ওর সাথে আপনিও উদ্বিগ্ন হন, পরবর্তী দিনে ও স্কুল থেকে বাসায় ফিরলে আপনি ওর সমস্যার সমাধান হয়েছে কিনা আন্তরিক ভাবে জানতে চান, এভাবে কিন্তু একসময় আপনাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আপনার শিশুটি বুঝতে পারবে তার যে কোন কথা বা সমস্যা আপনার কাছে কত বেশী গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা শিশুর কাছেই তার বাবা মা তার রোল মডেল, তার সুপার হিরো, এভাবে খুব সহজেই কিন্তু সুপার হিরোর পাশাপাশি আপনি তার বেস্ট ফ্রেন্ড ও হয়ে যেতে পারেন।

আর এভাবেই বিভিন্ন গল্পের ছলে সব সময় বলতে পারেন তোমার যায় হোক না কেন, যে কোন সমস্যা, যে কোন কষ্ট বা কেউ তোমাকে বকা দিলে বা পচা কাজ করলে সবসময় আমাকে এসে বলবে।
যে বাচ্চাটিকে আমরা পৃথিবীতে এনেছি তাকে একটি সুন্দর শৈশব দেবার দায়িত্ব ও আমাদের। তাকে একটু আলাদা মনোযোগ দিলে, সহজ সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে তাকে সুরুক্ষা দেওয়াটাও অনেক সহজ হয়ে যায়।

৫) অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর ও সহজ ভাবে দেবার চেষ্টা করুন :

অনেকেই আছেন বাচ্চারা বেশী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে বিরক্ত হয়, তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয় অথবা অহেতুক শিশুটিকে বকতে শুরু করেন। কিন্তু এমনটি করা কখনই উচিত নয়।

অনেক সময় অনেক বাচ্চা অদ্ভুত এবং অন্যরকম বা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে বসে, চেষ্টা করা উচিত তাদের যে কোন প্রশ্নের জবাব সহজ ভাবে এবং সহজ ভাষায় দেবার। হয়ত আপনি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন এমন সময় টিভিতে কনডমের অ্যাড দেখাচ্ছে, দেখে আপনার শিশুটি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করতে পারে কনডম কি? এমন প্রশ্ন বড়দের জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর অবশ্যই কিন্তু তারপরেও অহেতুক রেগে না গিয়ে বা তার প্রশ্নটা এড়িয়ে না গিয়ে তার বয়স অনুযায়ী তাকে উত্তর দেওয়া উচিত।

আপনি কিন্তু জানেন না সম্ভাব্য নির্যাতককারী আপনার বন্ধুদের মধ্যেই কেউ কিনা অথবা কেউ থাকলেও আপনার বাচ্চাটির এই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া বা রাগারাগি করার সুযোগ ভবিষ্যতে কেউ নিবে কিনা।
এক্ষেত্রে বাবাটি সহজ ভাষায় বলতেই পারেন এটি একটি প্রয়োজনীয় জিনিষ যেটি বড়রা ব্যবহার করে। এতেই হয়ত অনেক বাচ্চা শান্ত হয়ে যাবে, আর প্রশ্ন করবেনা কিন্তু তারপরেও কেউ যদি বিস্তারিত জানতে চায় তাহলে আরও বলা যেতে পারে বড়রা অনেক কিছুই ব্যবহার করে যা বাচ্চারা করেনা যেমন শেভিং ফোম, লোশন, আফটার শেভ এটিও তেমন ধরনের কিছু যেটি বড় মানুষেরা ব্যবহার করে। এ কথাটি কিন্তু খুবই সত্যি যে বাচ্চারা এমনি জানার জন্যই প্রশ্ন করে কোন অসুস্থ বা অহেতুক কৌতূহল থেকে নয়। তাই আমরাই তার যে কোন প্রশ্নের এমনকি সেটা যদি যৌন সম্পর্ক নিয়েও হই তার উত্তর একটুও না হেসে সহজ আর বৈজ্ঞানিক ভাবেই যদি দিয়ে থাকি তাতে তার মনেও আর অহেতুক নিষিদ্ধ কৌতূহল জন্মাবেনা। আর অপরপক্ষে শিশুটির সাথে সহজ এই আচরণটি অন্য মানুষকেও বুঝিয়ে দিবে বাবা/মায়ের সাথে বাচ্চাটির সহজ, স্বাভাবিক আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

প্রায় সব বাচ্চারই কৌতূহল থাকে তার জন্ম নিয়ে, কিভাবে সে পৃথিবীতে আসল এটি নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা উত্তর দিয়ে থাকেন তাকে হাসপাতাল থেকে আনা হয়েছে অথবা তাকে আল্লাহ দিয়েছে। কিন্তু এই জবাব কিন্তু বাচ্চাটিকে কখনই সন্তুষ্ট করতে পারেনা, তার মনে নানান প্রশ্ন জাগে। এর বদলে আমরা বলতে পারি যে শিশুটি তার মায়ের পেটে বড় হয়েছে মায়ের শরীরের পুষ্টি নিয়ে আর ডাক্তারের সাহায্য তাকে পেট থেকে বের করা হয়েছে।

বেশীরভাগ বাচ্চায় এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে থাকে তারপরেও যদি বাচ্চার মনে কোন প্রশ্ন থেকে যায় আমাদের উচিত সেই প্রশ্নের সুন্দর জবাব দেওয়া, যেমন বাচ্চাটি যদি সিজারিয়ান বেবি হয় আমরা বলতে পারি তাকে পেট কেটে বের করা হয়েছে অথবা সহজ ভাবেই তাকে বলতে পারি ভ্যাজাইনা দিয়ে সে বের হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিশুটির মনে জন্ম রহস্য বা যৌন বিষয় নিয়ে যেন কোন অহেতুক বা অসুস্থ কৌতূহল জন্ম না নেয়। সহজ কথা সহজ ভাবে বললেই আর খারাপ শোনায় না।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল তার অদ্ভুত প্রশ্নে কখনই হেসে উঠা উচিত নয়। এতে করে সে নিজেকে অবহেলিত ভাবতে পারে অথবা ভাবতে পারে যে এটি কোন গোপনীয় বিষয় যা তার বাবা মা তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়।

কোন বিষয় নিয়ে যত বেশী রাখ ঢাক করা হয় সে বিষয় নিয়ে শিশুদের আগ্রহ তত বেশী জন্মে। আর শিশুদের এই শিশুসুলভ আগ্রহের সুযোগ নিয়েই হয়তবা সম্ভাব্য যৌন নির্যাতনকারী তাকে নিজের টার্গেটে পরিণত করতে পারে। এমন হতেই পারে আপনি কোন প্রশ্নের উত্তরে তার কৌতূহল দমন করতে পারলেন না আর সেই সুযোগটাই নিল সম্ভাব্য যৌন নির্যাতক। সে হয়ত বাচ্চাটিকে প্রলোভন দেখাল বাচ্চাটি তার কথা শুনলে সে তাকে আসল সত্যি জানাবে অথবা তাকে হাতে কলমে শিক্ষা দিবে যাতে সে সহজে বুঝতে পারে।

তাই চেষ্টা করুন শিশুটির সমস্ত প্রশ্নের জবাব ধৈর্য সহকারে সহজ ও সুন্দর ভাবে দেবার যেন তার কখনই না মনে হয় বিষয়টির মধ্যে লুকান কোন ব্যপার রয়েছে।

৬) সবসময় মনে রাখা উচিত সম্ভাব্য যৌন নির্যাতনকারী হয়ত এমন কেউ যাকে আমরা ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করব না :

আমাদের সবার একটি সাধারন ধারনা হল যৌন নির্যাতক হয় অপরিচিত কেউ, রাস্তার কোন ছেলে অথবা বাইরের কোন মানুষ। কিন্তু সত্যি কথা হল একজন শিশুর সবচেয়ে বড় বিপদ আসে তার আপনজনদের কাছ থেকে। সম্পর্কে এমন কেউ হয় যাকে অভিভাবক শিশুটির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে থাকেন। এমন কেউ যাকে শিশুটি নিজে বিশ্বাস করে, পছন্দ করে, ভালবাসে, নিজের বন্ধু মনে করে।

সম্পর্কে যে কোন ব্যাক্তি যৌন নির্যাতক হতে পারে, মামা, চাচা, খালু, ফুফা, দাদা, নানা, বাবা/ মায়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা, যে কোন ধরনের কাজিন, স্কুল শিক্ষক, বাসার কাজের লোকটা, ড্রাইভার, যে কোন ধরনের গৃহ শিক্ষক, যে কেউ হতে পারে যৌন নির্যাতক। আমরা হয়ত রাস্তার কোন অচেনা মানুষকে ভয় পেয়ে শিশুটিকে বাইরে প্রোটেকশন দিচ্ছি অথচ আমাদের জানার আড়ালে প্রতিনিয়ত ঘরের যাকে বিশ্বাস করে আমরা আমাদের বাচ্চার রক্ষানবেক্ষনের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি সেই হয়ত শিশুটির আর অভিভাবকের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাকে ভয়ংকর এক পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

এই বিষয়টি নিয়ে ভারতে নির্মিত একটি অসম্ভব মর্মস্পর্শী ভিডিও চিত্র রয়েছে যেখানে দেখান হয় কিভাবে একটি বাক প্রতিবন্ধী শিশু তার চাচার দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

যারা সাধারনত শিশু যৌন নির্যাতক তারা প্রথমেই চেষ্টা করে শিশুটির সাথে একটি ভাল সম্পর্ক তৈরি করার, শিশুটির বিশ্বাস অর্জন করার যেন তার এই ভয়ংকর অন্যায়টি শিশুটি অন্য কাউকে বলে না দেয় এবং সত্যি বলতে কি বেশীরভাগ সময়েই সে সফল ও হয়ে থাকে। এই জন্যই শিশুটির নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা,বাবা মায়ের সাথে শিশুটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সহজ যোগাযোগের মাধ্যম ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

৭) খেয়াল করে দেখুন তো অন্য কেউ কি শিশুটির প্রতি বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছে :

প্রতিটা মানুষই কমবেশি বাচ্চাদের ভালবেসে থাকে, তাদের আদর করে, তাদের মজার কর্মকাণ্ডে আমদিত হয়। এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার সাথে সাথে এটাও স্বাভাবিক যে বড়রা সাধারনত বড়দের সাথেই মিশতে পছন্দ করবে বা বড়দের সাথেই গল্প করতে সহজ বোধ করবে। একটু খেয়াল করে দেখুন তো আপনার আশে পাশে এমন কেউ আছে কি যে কিনা ঘোর আড্ডার সময়েও আপনাদের সাথে গল্প না করে বাচ্চাটিকে সময় দিতে চাচ্ছে বা তার সাথে আলাদা সময় কাটাচ্ছে, তাকে গল্প বলার ছলে অন্য কোথাও আলাদা করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

আমাদের আদরের শিশুটিকে কেউ অনেক সময় দিলে বা আদর করলে আমরা খুশী হয় কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে শিশুটির প্রতি অন্য কারো বেশী আগ্রহ হয়ত অন্য কিছুরও নির্দেশক। বলছি না যে সব ক্ষেত্রেই কারো আগ্রহ অন্য কিছু প্রকাশ করে কিন্তু আমরা সেই মানুষটিকে নিয়ে অন্ততপক্ষে আগাম সতর্ক তো হতে পারি। অথবা কৌশলে বাচ্চাটির কাছ থেকে জেনে নিতে পারি যে সে বাচ্চাটির সাথে অন্যরকম কোন আচরণ করেছে কিনা।

৮) নিজে সতর্ক হন, অন্যদের সতর্ক করুন :

সম্ভাব্য যৌন নির্যাতক কে হতে পারে সেটি বের করার চাইতেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল জানা যে , যে বাচ্চাটি একা একা বড় হয়, কিছুটা অন্তর্মুখী হয়, বড়রা যাদের গুরুত্ব কম দেয়, যারা নিজেদের একা এবং অসহায় মনে করে তারায় কিন্তু সবচেয়ে বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের এই একাকীত্ব আর অসহায়ত্তের সুযোগই নির্যাতক নিয়ে থাকে। কারন এমন বাচ্চা চুপচাপ সব সহ্য করে যাবে, কাউকে কিছু বলবে না, বলার সাহস পাবেনা, এমন বাচ্চার সাথে বন্ধুত্ব করা সহজ, তাকে যা ইচ্ছা বুঝ দেওয়া সহজ, যে শিশুটি আদরের কাঙ্গাল থাকে তাকে অল্প আদরেই তার বিশ্বাস অর্জন সম্ভব আর তাছাড়া শিশুটি হয়ত ধারনা করবে সে বললেও কেউ তার কথা বিশ্বাস করবেনা। তাই শুধু নিজের শিশুর ব্যপারে সতর্ক থাকলেই চলবে না, আমাদের পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত কারো মধ্যে যদি এমন শিশু দেখি যাকে ভঙ্গুর, অসহায় আর ভীত মনে হয়, সেক্ষেত্রে উচিত তার অভিভাবকের সাথে শিশুটিকে নিয়ে আলাপ করা। এমনকি নিজ থেকে গিয়েও শিশুটির সাথে কিছুটা সময় কাটানো।

মোট কথা হল অভিভাবক হিসেবে নিজে সতর্ক থাকতে হবে, অন্য অভিভাবকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে হবে এবং বাচ্চাটিকেও সতর্ক রাখতে হবে।সামাজিক প্রতিরোধ এই ক্ষেত্রে অবশ্যই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যত এই বিষয় নিয়ে কথা বলব, সোচ্চার হব, প্রতিবাদী হব তত বেশী শিশু যৌন নির্যাতনের আশংকা কমাতে পারব। নিজ সন্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে নিজের আচার আচরনের প্রতি পূর্ণ নিয়ন্ত্রন এনে সন্তানের ভরসার স্থল হয়ে উঠা প্রতিটি অভিভাবকের অবশ্য কর্তব্য। নিজ সন্তানটিকে একটি খোলামেলা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপহার দিন, তার ভরসারস্থল হয়ে উঠুন, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন তবেই শিশুটির নির্মল শৈশব সম্ভব কিছুটা হলেও নিশ্চিত করা সম্ভব।।

ভবিষ্যতে একজন যৌন নির্যাতক কিভাবে একটি বাচ্চার সাথে মানসিক সম্পর্ক স্থাপন করে তা নিয়ে বিস্তারিত লেখার আগ্রহ রইল।


মন্তব্য

শেহাব এর ছবি

আপনার কম্যুনিকেট করার পদ্ধতিটি ভাল লাগছে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

জেনে ভাল লাগল। আপনাকে ধন্যবাদ।:)

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

এক লহমা এর ছবি

"আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল তার অদ্ভুত প্রশ্নে কখনই হেসে উঠা উচিত নয়।" - চলুক
অত্যন্ত দরকারী পোস্ট, সফিনাজ-দিদি। খুব ভাল ভাবে লিখেছ তুমি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দাদাভাই। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আমাদের আশে পাশের সবচেয়ে কাছের মানুষ দ্বারাই শিশুরা বেশি নির্যাতিত হয়। ছোট বেলায় আমার এক চাচাতে ভাই এমন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলো তার এক চাচা দ্বারা। কিন্তু কাউকে বলতে পারেনি সেই কথা, আমি প্রথম শুনেছিলাম তার কাছ থেকে সেই ভয়ংকর গোপন কথা। বাড়ীর সবার কাছে ভদ্র আর কলেজ পড়ুয়া সেই লোকটির প্রতি আমার সব শ্রদ্ধা হারিয়ে গেল। এভাবেই চারপাশে নির্যাতনে অসংখ্য ঘটনা ঘটছে, আমরা সবাই শুধু সেটা জানার চেষ্টা করছি না, সচেতন হচ্ছি না। আপনার লেখাগুলো ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে, সচেতন হয়ে উঠুক প্রতিটি বাবা-মা।

মাসুদ সজীব

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কথাটা একদম সত্যি যে সবচেয়ে কাছের মানুষ দ্বারাই শিশুরা বেশি নির্যাতিত হয়। প্রতিটা বাবা-মায়ের উচিত এই বিষয়টি উপলব্ধি করে তার বাচ্চাটির শৈশব সুরক্ষিত করা। শৈশবে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে শিশু মনে। মনে প্রানে চাই এর প্রতিকার।
ধন্যবাদ মাসুদ ভাই পাশে থাকার জন্য। হাসি
ভাল থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

খুব জরুরী একটা বিষয় নিয়ে লিখছেন সাফিনাজ সে জন্য উত্তম জাঝা!
এ থেকে অনেকেই উপকৃত হবেন বলে ধারণা করি।
এসব বিষয় নিয়ে আরো বেশি বেশি লেখা আসুক।
শুভ কামনা থাকলো।
-----------------------------------
একটু চোখ বুলিয়ে নিবেন প্লিজ? দু'এক জায়গাতে 'হই' এর বদলে 'হয়' হয়ে গেছে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
টাইপো এখুনি ঠিক করে দিচ্ছি। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অমি_বন্যা এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে । তবে একটা বাস্তবতা হল আমরা বাবা মায়েরা নানা রকমের ব্যাস্ততার কারণে (যা কখনই করা উচিৎ নয়) আমাদের শিশুদের কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনি না অথবা তারা খেলতে চাইলেও সময় দেই না।
শিশুদের প্রতি মনোযোগী হবার বিকল্প নেই।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

শিশুদের প্রতি মনোযোগী হবার বিকল্প নেই।

চলুক
ধন্যবাদ অমি ভাই। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

সাফিনাজ আজ একটা মুভি দেখেই আবার ঘুরে আপনার পোস্টে আসা। দ্যা হান্ট
নামের চমৎকার এই ডেনিশ মুভিটিতে দেখানো হয় কিভাবে একটা ছোট্ট শিশুর মনগড়া মিথ্যের কারণে একজন সাধারণ মানুষের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যায়। মিথ্যেটা ছিল অ্যাবিউস সংক্রান্ত। শিশুদের এই মনস্তাত্ত্বিক দিকটি নিয়ে পরের কোন লেখা লেখুন না প্লিজ! মুভিটি দেখতে চাইলে নেটফ্লেক্সে পাবেন। সুযোগ পেলে দেখে নিবেন। সময় অপচয় হবে না কথা দিচ্ছি। চমৎকার মুভি!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনার চমৎকার কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আয়না।
সত্যি বলতে কি আমি আগেই ভেবেছিলাম এই বিষয়টি নিয়েও লেখার চেষ্টা করব।
কিছু সময় হয়ত কিছু বাচ্চাও বিষয়টির সুবিধা নিয়ে মিথ্যা বলে থাকে, যদিও জানা নেই আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তার পরিমান কত ভাগ, তবে ধারনা করতে পারি তা কম ই হবে। আর এই জন্যই কিন্ত অভিভাবকদের সচেতন হওয়াটা খুব জরুরী।
একজন অভিভাবক সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারবে তার বাচ্চার মানসিক অবস্থা। যে শিশুর যখন তখন মিথ্যা বা বানিয়ে বলার অভ্যাস রয়েছে যে কোন বিষয় নিয়ে তার ব্যাপারটা অন্যভাবে সামলানোর চেষ্টা করা উচিত। যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে আগেই অভিযুক্ত কাউকে দোষী না ভেবে পুরো বিষয়টি তলিয়ে দেখা উচিত।
সত্যি চেষ্টা করব এই বিষয়টি নিয়েও লিখার।
মুভিটির কথা জানতাম না, খুব দ্রুত দেখে ফেলব আশা করি। হাসি
অনেক বেশী ধন্যবাদ মুভিটির নাম জানানোর জন্য। ভাল থাকবেন।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

তিথীডোর এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সুন্দর লেখা - লেখাটাকে ছড়িয়ে দেয়া দরকার

____________________________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

বলছেন হাসি
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

দুটো পর্বই পড়লাম। সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করা। অনেক ভালো লেগেছে। এ বিষয়ে আরো লিখুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।