কিছু কিছু দিন যায় বেশ ক্লান্তিকর, কিন্তু কোন একটা কারণে ইন্টারেস্টিং, এবং মনে রাখার মতন। গতকাল দিনটি ছিল অনেকটা সেরকম। জুন মাসের দাবদাহ চলছে সারা দেশজুড়ে, ঢাকা শহরকে এককাঠি সরেস বলব আমি, রাজধানীর হরেকরকম গ্যাঞ্জাম ধুলোবালি জ্যাম ইত্যাদি মিলিয়ে গরমের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু তবু কোথায় যেন একটা মায়ার টান টের পাই ঢাকা শহরটার জন্য। আমার শৈশবের শহর, ভালবাসার শহর, প্রেমের শহর, বিড়ম্বনার শহর, বেদনার শহর, কষ্টের শহর ...
ঢাকাতে প্রতিটি দিনই আসলে ইন্টারেস্টিং, অন্তত আমার কাছে লাগে। বিশেষ কিছু না থাকাটাও ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। কিছুই ঘটল না তেমন, এই ব্যাপারটাও ইন্টারেস্টিং লাগে। রাজনৈতিক দলগুলির নানান হ্যাপা চালানোর আসল টার্গেট হছে ঢাকা, তাই যার যা করার সবকিছুর কেন্দ্রেই থাকে ঢাকা শহরটাই। ইদানীং অবশ্য কিছুদিন ধরে ওইদিকটা কেমন জানি শান্তশিষ্ট, আমার কাছে এটা আরও আতঙ্কজনক লাগে, কে যে কী ভাজছে ভিতরে ভিতরে কে জানে!
একটা ছোট্ট মোটরসাইকেল ব্যবহার করি আমি, জ্যামজেলিতে ভরপুর ঢাকা শহরে দুটো করে খাবার জন্য, রাস্তাঘাটের কষ্ট কাজের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে বলে। ইদানীং মাথার ভুত চেপেছে মোটরসাইকেল মডিফাই করার ব্যাপারে। তবে আহামরি জবড়জং বানানো নয়। সিম্পল কিছু চেঞ্জ করে যদি চেহারা পরিবর্তন করা যায় তাহলে খারাপ কি! এই এক্সপেরিমেন্ট নিজের চেহারাতেও মাঝে মাঝে করি, কিন্তু আমার প্রকৃতি হচ্ছে খালি চেঞ্জ করা, এক জিনিস বেশিদিন ভাল লাগে না, তাই বারবার আগের রূপেই ফিরে যাই। আমেরিকার বিখ্যাত হার্লে-ডেভিডসন মোটরসাইকেল কোম্পানির বয়স ১১০ বছর, যে মারদাঙ্গা স্টাইল তারা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে এক শতাব্দীতে, আমি তার বিশেষ ভক্ত। নিজের একাডেমিক শিক্ষার কারণে ডিজাইনে কোন বাহুল্য আমি পছন্দ করি না, ছিমছাম ডিজাইনের মধ্যে থেকেই যেকোনো কিছুকে চিন্তা করার চেষ্টা করি। সেরকমভাবেই চিন্তা করলাম মোটরসাইকেলটাকে একটু মডিফাই করলে কেমন হয়! হেডলাইট দিয়ে শুরু হল। আমার বাইকটি ইয়ামাহার ভারতীয় একটা ভার্শন। ডিজাইনটাও ভারতেই ডেভেলপ করা, কাজেই ভারতীয়দের খুব স্বাভাবিক মসল্লাদার করার চেষ্টা এর মাঝেও আছে। তবে কেমন করে যেন একটু পরিমিত মাত্রায়। সব মোটরসাইকেলকেই তারা সামনের দিকে ব্যাটম্যান বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করে, আমার সেটা ভাল লাগে না। তাই আমি চেষ্টা করলাম আমার বাইকের সামনের দিককার কিটটাকে খুলে একটা গোলাকার হেডলাইট লাগাতে। সস্তায় একটা গোল হেডলাইট কিনে লাগালাম, দেখতে মন্দ হয়নি
গতকাল দিবসের অবস্থা ছিল হাবিয়া দোযখের মতন গরমাগরম, কুলকুল করে ঘামছি তো ঘামছিই, বাসা থেকে বের হতে না হতেই পরনের কাপড় সব জবজবে হয়ে ভিজে গেল ঘেমে, বাধ্য হয়ে ওই অবস্থাতেই গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজের ডীন মহাশয়ের সাথে একটা মিটিং করতে।
এরপর সেখান থেকে বংশাল গিয়ে বাইক মডিফাই করার সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম জুতার তলা খুলে কুত্তার জিহ্বার মতন ঝুলছে, কিন্তু আশেপাশে মুচি নাই যে সারিয়ে নেব। এদিকে একটু পর এক বিদেশী ভদ্রলোকের সাথে মিটিং করতে যেতে হবে, পায়ে কুত্তার জিহ্বা ঝুলিয়ে কেমনে মিটিং করতে যাই চিন্তা করে আরও অস্থির লাগছিল। :/
এরই মধ্যে আবার হাতের ঘড়িটার চেইনের একটা হুক ভেঙে গেল, ঘাম লেগে লেগে মরিচা ধরে দুর্বল হয়ে ছিল, এখন ভেঙেই গেল, ঘড়ি খুলে এল। ভাগ্যিস রাস্তাঘাটে হয়নি ব্যাপারটা, সাধের ঘড়িটা এক মহান বান্ধবী গিফট করেছিল মার্কিন মুলুক থেকে এনে, সেটা রাস্তায় পড়ে হারালে দুঃখেই মরে যেতাম :/
আর হ্যাঁ, মোবাইল ফোন বাবাজি আগের রাতেই আচার্জ হয়ে ছিলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিদ্যুৎ নাই, কিছু করা গেল না। বিদ্যুৎ যখন এল ততক্ষণে আমার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় উপস্থিত, কোনোরকমে তাকে উপাচার্জ করা গিয়েছিল আর কি, সেই চার্জটুকু শেষ হয়ে বিকেল নাগাদ তিনি আবার আচার্জ হয়ে গেলেন! :/
বংশাল মার্কেটে কাজ করার সময় থেকেই বন্ধু এমি বারবার কল করছে জাপানি ভদ্রলোকের সাথে মিটিং করার জন্য, যেতে হবে ধানমণ্ডিতে মিঃ নোগুয়োচি আইওয়ানোর বাসায়। কিন্তু কাজ তো শেষ হয় না, ঘড়ি খুলে গেল, জুতার নিচে কুত্তার জিহ্বা, মোবাইল ফোন আচার্জ ... বিড়ম্বনা আর বিড়ম্বনা, আর জ্যাম তো আছেই, এই জ্যাম ঠেলে ধানমণ্ডি যেতে হবে চিন্তা করেই শিরদাঁড়া বেয়ে ভীতিকর শিহরণ বয়ে যাচ্ছিল বারবার ... বহু কষ্টে কাজ শেষ করে জ্যাম ঠেলে কুত্তার জিহ্বা আর ছেঁড়া ঘড়ি নিয়েই হাজির হলাম নিজের অফিসে। নিচে থাকা মুচির কাছে জুতার ব্যবস্থা করতে দিয়ে উপরে গেলাম বাইকের খুলে ফেলা পুরনো জিনিসগুলি রেখে আসতে, মোবাইল বাবাজিকে আবারো কিঞ্চিৎ উপাচার্জ করার উদ্দেশ্যে। তাকে কোনরকম জীবিত করে দেখলাম এমি ডার্লিং আবারও কল করছে এবং ফোন বন্ধ থাকায় একহাত দেখে নিল সে, কোনোরকমে তাকে বুঝালাম যে আমার আর দেরি হবে না, প্রায় চলে এসেছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হয়ে যাব। সে অনুযোগ করতে লাগল যে খিদেয় আধামরা অবস্থা তার আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে। জুতার জিহ্বা ঠিকঠাক করে আবার দৌড় দিলাম ধানমণ্ডির পথে। শেষমেশ সাড়ে সাতটায় পৌঁছানর কথা ছিল যেখানে, সেখানে পৌঁছলাম সাড়ে আটটায়! মানইজ্জতের সুতিকাবাব হতে আর বাকি থাকল না কিছু; আর পৌঁছানর পরেই এমির ঝাড়ি আবার - এই তোর কাছাকাছি এসে পড়া? খালি মিছা কথা কস ক্যান শালা?
জাপানি ভদ্রলোক ইংলিশ জানেন না। খালি থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ আর গুটিকতক ইংলিশ টেকনিক্যাল শব্দ যেমন এসি, সিলিং ইত্যাদি ছাড়া আর কোন কিছুই আমি বুঝি না। এমি ডার্লিং পড়াশুনা করত জাপানে, সে অনর্গল জাপানি ভাষায় রীতিমত বকবক করতে পারে, সে দোভাষী হিসাবে কথা চালাচ্ছিল, কিচিরমিচির করে কি কি সব বলছে কিছুই আমি বুঝতে পারছি না, হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসতেও পারছি না। সবাই হাসলে আমি হাসি এইরকম অবস্থা, তবে নিজেদের মাঝে আবার নির্দ্বিধায় সবরকম আলাপ বাংলায় করে চলেছি বিচিত্র এক অনুভূতি হল একেবারেই না বুঝা এক ভাষায় কথা বলা এক লোকের সাথে আলাপ করতে গিয়ে তবে জাপানি ভদ্রলোকের কাছ থেকে তাদের মতো করে সামনে ঝুঁকে বাও করে অভিবাদন জানানোটা শিখে ফেলেছি, বেশ ভাল লাগে
মিটিং শেষ হওয়ার পর এমি আবদার করল, "শালা তোর জন্য সন্ধ্যা ছয়টা থেকে অপেক্ষা করতে করতে খিদেয় মরে যাচ্ছি, রাইফেলস স্কয়ারে নিয়ে আমারে বার্গার খাওয়াবি।"
আমি বললাম কবুল। মিটিং শেষ করে এমি, আমি আর আমার সহযোগী বন্ধু মিলে চললাম রাইফেলস স্কয়ারে, সেখানে বিফ ডাবল চীজ বার্গার খেলাম, কিছুক্ষণ মার্কেটের বাইরের সিঁড়িতে বসে তিনজনে মিলে জম্পেশ আড্ডা দিলাম। বহুকাল আগে যখন ধানমণ্ডিতে এখানে সেখানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতাম, সেইসময়ের কথাগুলি মনে পড়ে গেল।
বন্ধুটি বিদায় নিল, আমি এমিকে বাসায় ড্রপ করে বাসায় ফিরলাম। ফিরে দেখি তার কাঁধে থাকা ব্যাগের সাথে আমার ল্যাপি তার বাসায় চলে গেছে :/
বিড়ম্বনা কি গাছে ধরে!
মন্তব্য
মডিফাইড মোটরসাইকেল এর ছবি দেখান!
এই যে ছবি
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
আপনার ভটভটির আগের আর পরের ছবি দেন ভাই। এইটা কি আগের না পরের ছবি?
ডিম পোচ
ডিম্ভাই, এটা পরের ছবি বলেই তো দিলাম। আগের ছবি দেয়া হয়নি অবশ্য
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
ডিম্ভাই ?! পছন্দ হইছে!!
উনি ডিম পোচ নিকে কমেন্ট করতে পারলে আমারও তো উনাকে সমাদর করে ডিম্ভাই ডাকার অধিকার আছে, কী বলেন শ্যাম্ভাই?
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
নিচ্চিত!
আগের চেহারার ছবিও দিয়ে দিলাম এখানে
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
হ, মডিফাইড মোটরসাইকেল এর ছবি দেখান!
মনে হয় আগেই কোথায় যেন পড়েছি লেখাটা।
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
'উপাচার্জ' আর 'আচার্জ' এ পাঁচতারা।
আর আমারও দাবি, একটা ছবি দিন।
ছবি ২ নাম্বার কমেন্টে আছে তো!
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
আইতাছি ! ঘুরুম!
facebook
খালি হাতে আইলে ছৈলত ন'
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
উপাচার্য, আচার্য - হা: হা: দারুণ
- একলহমা
হেঁহেঁ, বানান খিয়াল কইরা কৈলাম!
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
বিড়ম্বনার রোজ নামচা - রোজই কি এতগুলো করে বিড়ম্বনা সামলান? বাপরে!
পরের কিস্তির অপেক্ষায় -
রোজ এতগুলো না হলেও একগাদা বিড়ম্বনা তো থাকেই, কেন থাকে সে ব্যাখ্যায় আর না-ই বা গেলাম!
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
জীবন্টাই একটা ঝামিলা।
হুন্ডার ছবি দিসেন ডাবল চীজ বার্গারের ছবি কো?
..................................................................
#Banshibir.
হেঁহেঁ, ওইটা তো খায়ালচি
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
বিপ্লবীর দোস্ত
হুর মিয়াঁ!
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
নতুন মন্তব্য করুন