দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পথে, খিদে পেয়েছে বেশ। কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
খিদেটা উপেক্ষাও করা যাচ্ছে না। লেবু আর আদাকুচি দেয়া তিন কাপ চা পরপর মেরে দিলাম, খিদেটা এখন আর জ্বালাবে না।
রোদের তেজ কম নয়, বেশ কড়া বরঞ্চ। অফিস থেকে নিচে নেমে এসেও ভালো লাগছে না।
চা খেলাম, খিদেটাকে মাটিচাপা দিলাম। এবার বরং উপরে উঠে যাই, কাজ করি গিয়ে।
হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে অফিসের বিল্ডিঙের নিচে চলে এলাম। ভেতরের দিকে হাঁটছি অন্যমনস্কভাবে। গতকাল রাতে একটা ছবি দেখেছিলাম, নাম Devil; সাধারণ মানের হরর ছবি। এক বহুতল ভবনের লিফটে আটকে পড়ে পাঁচজন। তারা আর বের হতে পারছিল না, এর মধ্যেই একের পর এক ঘটনা ঘটে যেতে থাকে, চারজনই খুন হয়ে যায় ভেতরে বীভৎসভাবে। যাই হোক, খুবই সাধারণ মানের ছবি হলেও দেখার যোগ্য। সেই ছবিটাই সারাদিন ধরে মাথায় ঘুরছে খালি, অজানা কোন এক কারণে এটা মাথা থেকে সরছে না কোনভাবেই। মাথার ভেতর যখন তখন হুট করে শুরু হয়ে যায় এই ছবির কোন একটা অংশ, আজব বিপদ হল একটা!
এই যেমন এখনও হুট করে এটা মাথায় চলে এল।
সমান্তরালভাবে মাথায় ঘুরতে লাগল এই চিন্তা - ভুতুড়ে ব্যাপারগুলি না হোক, এমনিতেই তো কখনও কোথাও লিফটে আটকে যেতে পারি, হয়তো আর বের হতে পারলাম না কন কারণে, হয়তো ছিঁড়ে পড়ে গেলাম, হয়তো পুড়ে কয়লা হয়ে গেলাম, হয়তোবা দম বন্ধ হয়ে কিংবা আটকে থেকে থেকে না খেয়ে মরে গেলাম - নানান হাবিজাবি মাথায় ঘুরতেই লাগল।
হঠাৎ তীব্র একটা ঝাঁকি খেলাম, চমকে ওঠার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেল!
কয়েকটা মুহূর্ত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রইলাম...
ভাবলাম, জ্ঞান আছে তো আমার? নিজের গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম সবই ঠিক আছে।
তাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন কিছু?
বাইরে রোদ থাকার কারণে রোদচশমা পরে বের হয়েছিলাম, সেটা চোখেই ছিল। চোখ থেকে সেটা খুলে ফেললাম, ভাবলাম হয়তো মাথা ঘুরে গেছে কোন কারণে, চোখে অন্ধকার দেখছি তার উপর আবার চোখ ঢাকা, খুলে ফেলি বরং।
কিন্তু তবু অন্ধকার গেল না, অনেক বেশি গাঢ়, অনেক বেশি নিশ্ছিদ্র, অনেক অনেক বেশি কালি গোলানো একটা অন্ধকার জাপটে ধরে রেখেছে যেন।
আর সেই সাথে আছে দমবন্ধ করা একটা ভ্যাপসা গরম অনুভূতি...
আমি ভাবলাম, আমি কি মারা যাচ্ছি?
নাকি আমি মারা গেছি এরই মধ্যে?
খেয়াল করলাম গাঢ় অন্ধকারের মধ্যেও কেমন করে যেন আমার হাতে সবুজ আলোর রেখা দৃশ্যমান হচ্ছে! এমনকি হাত নাড়ালে সেটাও নড়ছে সমান্তরালভাবে! হাতের ঘড়িটির কথা খেয়াল হল এবার।
আন্দাজ করলাম মরি নি এখনও।
পকেট হাতড়ে ফোন বের করলাম।
কল করার চেষ্টা করলাম একজনকে।
কিন্তু কল যেন হচ্ছিলই না!
ইনি ফোন ধরছেন না ...
এবার তিনি কল করলেন, আমি ধরলাম, হড়বড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওদিকে তার কানে কিছুই গেল না, তিনি হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছেন... কুট করে কেটে গেল লাইন। তিনি আবার কল করলেন, যথারীতি কথা কেটে কেটে যাচ্ছে... তিনি কিছুই বুঝলেন না...
মিনিটখানেক পর কল করলাম আরেকজনকে। এবারও একই ঘটনা।
কথা কেটে কেটে যাচ্ছে। তিনি বুঝেন তো বুঝেন না...
বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলাম...
ঠায় দাঁড়িয়েই আছি।
মনে হল সাথে তো ফোন আছেই।
এংরি বার্ডস খেলা শুরু করলাম, অনেকগুলি লেভেল শেষ করে ফেললাম।
কবরের নিস্তব্ধতার মধ্যে কতগুলি রাগী পাখির রাগত উল্লাসের বিচিত্র আওয়াজ আরও বিচিত্র শোনাতে লাগল...
বন্ধ করে দিলাম খেলা, অসহ্য লাগছে এখন সবকিছুই...
ঘড়ি দেখলাম, পঁয়ত্রিশ মিনিট কেটে গেছে এর মধ্যে।
আর সারা শরীরই ভিজে জবজবে হয়ে গেছে ভ্যাপসা গরমে...
হঠাৎ আবারও তীব্র একটা ঝাঁকুনি খেলাম, প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম...
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, চোখের সামনে আপনা আপনি হাতের আড়াল চলে এল... কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না আলোর তীব্রতায়...
সত্যি কি মারা গেলাম নাকি?
এখন কি যমদূত দেখব নাকি দেবদূত?
যেই দূতই হোক, তার কি হাঁটু পর্যন্ত লম্বা সাদা দাড়ি থাকবে আর সাদা আলখাল্লা পরা থাকবে? হাতে কোন ত্রিশূল থাকবে? মাথায় জটা থাকবে?
খুব দ্রুত এসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতেই দেখলাম কিছুই হচ্ছে না, ধীরে ধীরে হাত সরাতে লাগলাম চোখের সামনে থেকে... আলোটা একটু চোখ সওয়া হতেই দেখলাম বিশাল মুক্ত আকাশ, আর সেটা খানিকটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে একটা মূর্তি...
কয়েক মুহূর্ত পর মূর্তিটা একটা হাত বাড়িয়ে দিল আমার দিকে, তার পেছনে আকাশের তীব্র সাদা আলো থাকায় তার চেহারা বুঝতে পারছিলাম না, কিন্তু হাত ধরতেই টান পড়ল উপরের দিকে...
মন্তব্য
একবার এক লিফটে শুধু আমি আর অচেনা এক সুন্দরী তরুণী... লিফট উঠছে, হঠাৎ ঝাঁকি দিয়ে থেমে গেলো, তারপর সব অন্ধকার...
যাহোক, হরর ফিল্ম দেখা ভালু না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি একলাই ছিলাম
আর হরর ফিল্ম দেখে আমি কোন হ্যালুসিনেশনে ছিলাম না, একেবারেই না।
আমি যখন ব্যাপারগুলি চিন্তা করছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটনাটা ঘটেছে। এতটা কাকতালীয় ব্যাপার কেমন করে হতে পারে জানি না
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
লাইনে আসুন। এইগুলান হৈল ইঙ্গিত।
তা বটে [আবেগঘন ইমো]
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
অন্ধকারে কি ঘটিতং? সাধু সাবধান! ভালোয় ভালোয় নিজেই বলে ফেলেন। নয়তো আমরা কেউ যদি বৈলা দেই....... মু হা হা হা!!!
ইসরাত
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
এইডা কী হইলো? লিফটে নাকি ম্যানহোলে? নাকি আমি বুঝি নাই ঘটনাটা?
চেষ্টা করেন, আমি জানি আপনি পারবেন
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
দুরবস্থাটা ভালো বোঝান হয়েছে।
আমি এইসব ভাবনার চাপে লিফট (এখানে বলে এলিভেটর)-এ উঠতেই চাইনা।
- একলহমা
না উঠে তো উপায় নাই। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী যে!
ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
আমিও গত সপ্তাহে আটকা পরলাম লিফটে (পঁচিশতলায়)। জীবনে প্রথমবার বলে কথা - একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম।
তার উপর লিফটের ইমার্জেন্সি ফোন কাজ করছিলোনা! তাও ভাল সাথে আরেকজন কলিগও আটকা পরেছিলেন বলে রক্ষা...
তাড়াতাড়ি মোবাইল ফোন থেকে সিকিউরিটি ডেস্কে ফোন। ভাগ্য ভাল ১৫-১৬ মিনিটের মধ্যে বের হতে পেরেছিলাম।
নগরবাউল জেমসের মত এখন আমিও বলতে চাই "প্রত্যেক পুরুষ মানুষের জীবনে একবার হলেও জেলে থুক্কু লিফটে আটকা পরা উচিৎ"
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
একবার আমি লিফ্ট থেকে নামতেই ঠাস করে দরজা লেগে গেলো! ভেতরে তুলি আটকা পড়লো। ক্যাপসুল লিফ্ট ছিলো সেটা। গ্লাস থাকায় বাইরের সবকিছু দেখতে পারছিলো। নয়তো খবর ছিলো।
লেখার ব্যাডপ্যাচ থাকে জানতাম। তখন লেখাটেখা বের হয় না। তুমি সম্ভবত সেটা কাটায়া উঠলা। গুড।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
facebook
লেখার ব্যাডপ্যাচ থাকে জানতাম। তখন লেখাটেখা বের হয় না। তুমি সম্ভবত সেটা কাটায়া উঠলা। গুড।
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
ভয়ংকর!!!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ভয়ঙ্কর না আসলে। এইরকম অনাহূত বিপদে আমার মাথা সাধারণত গরম হয় না, তাই ভয়ঙ্কর লাগে না। তবে বিরক্তিকর। পঁয়ত্রিশ মিনিট লিফটে আটকে থাকাটা একেবারেই সুখকর কোন অভিজ্ঞতা নয়, তাও আবার নিশ্ছিদ্র অন্ধকার আর ভ্যাপসা গরমে
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
নতুন মন্তব্য করুন