৭ ডিসেম্বর, সময় সন্ধ্যা ৬টা।
স্থান মতিঝিল জীবন বীমা ভবন এলাকা।
তথাকথিত বিরোধীদলীয় জোটের ডাকা টানা 'অবরোধের' একটি দিন।
খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরক্তি চরমে পৌঁছেছে। কাঁহাতক আর সহ্য হয় এইসব বেহুদা স্টান্টবাজি!
যদিও বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা মরিয়া হয়ে রাস্তাঘাটে গ্যাঞ্জাম করছে, চোখের পলকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছে গাড়িতে, এমনকি জীবন্ত নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে, ককটেল মেরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে যা চোখের সামনে পড়ছে তাই, উদ্দেশ্য একটাই - আন্দোলনের মৌলিক অধিকারের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে দিনশেষে যুদ্ধাপরাধী তথা রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচার বানচাল করা; তবু সাধারণ মানুষ নিতান্ত পেটের দায়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সারাদিন অফিসে কাজ করার পর সন্ধ্যায় বের হয়েছেন জনৈক ভদ্রলোক।
তার নাম ধরে নিই 'তুষার'। পেশায় তিনি একজন প্রোগ্রামার, নেটওয়ার্কিঙেও তার বেশ ভাল দখল বলে সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ কদর রয়েছে তার।
জটিল একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে করতে গত কয়েকটা দিন আহারনিদ্রা ত্যাগ করার দশা তার। স্বাভাবিকভাবেই সন্ধ্যের দিকে রীতিমত চোখেমুখে সর্ষেফুল দেখতে লাগলেন তুষার। তাই বের হলেন কিছুক্ষণের জন্য। উদ্দেশ্য আয়েশ করে এককাপ চা আর একটা সিগারেট খেয়ে একটু ফ্রেশ হওয়া।
চা খেতে খেতে নানান বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘুরছে মাথায়। ছবির হাটের দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক্সিবিশন চলছে। দেখতে যাওয়া দরকার। চা-টা শেষ করে আবার গিয়ে কাজে বসতে হবে। আজকে নয়টার আগে বের হওয়ার উপায় নেই।
হঠাৎ ধুম ধুম করে কয়েকবার বিকট শব্দ হল, সামনে দশ হাতের মধ্যেই ককটেল ফুটেছে!
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল চারদিক কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
পর মুহূর্তেই তার পাশ দিয়ে হুশ করে ছুটে যেতে লাগল একটা বাইক। বাইক আরোহী কিছুক্ষণ আগে ককটেল ছোঁড়ার অপকর্মটি করে ছুটে পালাচ্ছে।
তুষারের মাথায় মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেল। চোখের সামনে বোমা হামলাকারীকে ছুটে যেতে দেখে তিনি হাতের চায়ের কাপটি ছুঁড়ে মারলেন তিনি সজোরে বাইক আরোহীকে লক্ষ্য করে। কাপটি গিয়ে আঘাত করল তার পায়ে।
আচমকা আঘাত পেয়ে হার্ডব্রেক করে থেমে গেল বাইকটি, আরোহী কিঞ্চিৎ হতভম্ব হয়ে এদিকওদিক তাকাতে লাগল...
তার চোখ গিয়ে আটকাল কাপ ছুঁড়ে মারা ভদ্রলোকের দিকে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোয়াল ঝুলে গেছিল তার...
থামাটাই তার কাল হল। পিছু পিছু ধাওয়া করে আসা একজন দাঙ্গা পুলিশ ঝট করে ধরে ফেলল তাকে।
ধরা পড়ে যাওয়ার পর তার হুঁশ ফিরল।
সে শুরু করল ধস্তাধস্তি, এক পর্যায়ে সে দাঙ্গা পুলিশের শটগান নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে লাগল।
কাপ ছুঁড়ে মারার পরের এই আধ মিনিটের মাথায় আবার পুলিশের শটগান নিয়ে টানাটানির দৃশ্য দেখে তুষারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল।
তিনি এবার একটু এগিয়ে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে বোমা হামলাকারীর ঘাড়ে লাগালেন একটা ঘুষি!
ঘুষিটি খেয়ে সে একেবারে মিইয়ে পড়ল এবার।
ইতোমধ্যে আরও পাঁচজন দাঙ্গা পুলিশ ছুটে এসেছে।
নিস্তেজ হয়ে পরা অপরাধীকে এবার পুলিশ ভালমতন পাকড়াও করে নিয়ে গেল।
তুষার সাহেব বিধ্বস্ত অবস্থায় নেমে এসেছিলেন চা খেতে।
এখন তার মনে হচ্ছে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমেষেই উধাও হয়ে গেছে কোথাও!
ফুরফুরে মন নিয়ে আবার তিনি ফেরত গেলেন অফিসে।
কাজে বসতে হবে আবার।
নয়টার সময় বের হয়ে যেতে হবে শাহবাগ, এক্সিবিশন দেখতে ...
উপরের ঘটনাটি একটি সত্য ঘটনা। ঘটনার স্থান ও কাল সবকিছুই ঠিক আছে। সঙ্গত কারণেই ব্যক্তির ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি গল্প আকারে লেখার উদ্দেশ্য একটাই - সন্ত্রাসী বোমাবাজদের ভয়ে আমরা যেন গুটিয়ে না যাই। নব্য রাজাকার এইসব সন্ত্রাসীদের সাহস ততক্ষণই থাকে যতক্ষণ কেউ রুখে না দাঁড়ায়।
আমরা সবাই যদি নিজেদের মত করে এইসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসি তাহলে এরা আর অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারবে না।
আসুন সবাই মিলে জামাত-শিবির-রাজাকার-সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করি।
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির,
বাংলা মোদের পুণ্যভূমি, আমরা সবাই বীর।
জয় বাংলা।
মন্তব্য
আড়ালের মানুষটিকে
কবিগুরু বলেছিলেন নাঃ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে?"
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সাব্বাস৷ হোতায়ালান!
..................................................................
#Banshibir.
সাহসী মানুষটিকে কুর্নিশ।
নব্য রাজাকারদের পিডানি চলবে।
----------------------------------------------------------------
''বিদ্রোহ দেখ নি তুমি? রক্তে কিছু পাও নি শেখার?
কত না শতাব্দী, যুগ থেকে তুমি আজো আছ দাস,
প্রত্যেক লেখায় শুনি কেবল তোমার দীর্ঘশ্বাস!''-সুকান্ত ভট্টাচার্য
প্রত্যেকের নিজের অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়াতে পারলেই, দাঁড়াতে পারার সাহসটা অর্জন করতে পারলেই সব কিছু সম্ভব। আর ছদ্মনামের মানুষটিকে স্যালুট।
=সৌ রভ
সেই নাম না জানা মানুষটিকে
লক্ষ লক্ষ নাম না জানা বীরের রক্তে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই স্বাধীন দেশে পুরোনো শকূন জামাতের এই তান্ডব দেখে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদেরকে শুধু ৭১ কে স্মরণ করতে বলি. ৭১ ও আজকের মতো প্রগতিশীল বাঙালি সংখ্যায় কম ছিলো। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যায় কম হয়েও রণাঙ্গনে ভয় পায়নি মহান মুক্তিযোদ্ধারা, বন্দুকের নলায় নিজের জীবনকে বিপন্ন রেখে নতুন একটি দেশের জন্যে জীবন বাজি রেখেছিলেন তারা। তাদের উত্তরসুরি হয়ে জামাতের চোরাগুপ্ত হামলায় ভীত হয়ে চুপসে গিয়ে আমরা কোনদিন বলবো না এই অশান্তি আর চাইনা, মতিমিয়ার প্রথম আলু আর চুশিলদের মতো বলবো না দুই দলের কারনে দেশের আজ এই অবস্থা। আমরা জানি শত্রু যখন সাধারন মানুষের জীবনের উপর আঘাত করে তখন মুখে স্যুাট কোর্ট পড়ে শান্তির বানী উড়িয়ে লাভ নেই, শান্তির বাণীর খৈ ফুটিয়ে কেউ কোন দিন কোন যুদ্ধে জয়লাভ করেনি। আঘাতের বদলে পাল্টা আঘাত করতে হয়, নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ তাই করবে, তাই জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।
মাসুদ সজীব
সাহসী মানুষটিকে অভিনন্দন। অভিনন্দন আপনাকেও এই ঘটনাকে তুলে ধরার জন্য। আকাঙ্খা রাখি একদিন এই ঘটনাই সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ডরাইলেই ডর, হান্দায়া দিলে কিয়ের ডর! আস্তে আস্তে প্রতিরোধ মানুষের মাঝ থেকেই শুরু হবে।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
এই রকম ঘটনা ঘটানো যেমন অভিনন্দনের যোগ্য, তেমনি এই ঘটনাকে জনমানসের সম্মুখে নিয়ে আসাও অভিনন্দনের যোগ্য। ধন্যবাদ অকুতোভয় - সবাই যেন আপনার আর সেই নাম না জান অকুতোভয় বীরের মত অকুতোভয় হয়ে ওঠে।
____________________________
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
'তুষার' কে
এই শনিবারই বাংলামোটর এ রাস্তার ওপার থেকে কে চলন্ত বাসের কাঁচ ভাঙার আওয়াজ পেলাম। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বাসে বাসে ঠোকাঠুকি হয়ে কাঁচ/আয়না ভেঙেছে (যেটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল ঢাকায়)। যখন আশাপাশে তাকিয়ে কিছু বুঝতে পারলাম না, তখন বুঝলাম কেউ ইচ্ছে করে ইট মেরেছে। কত টাকা পায় এরা একটা ইট মারার জন্যে?
পরিচিত এক ভাইয়ের বাবা পাড়ার মোড়ের ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে, কেউ একজন ককটেল ছুঁড়েছিল কাছাকাছি। চাচা অল্পের উপর রক্ষা পেয়েছেন, পায়ে কিছু কাটাছেঁড়া হয়েছে; হাসপাতাল অবধি যেতে হয়নি। কত টাকা পায় এরা এক একটা ককটেল মারার জন্যে?
শুভেচ্ছা 'তুষার' এর গল্প শেয়ার করার জন্য।
হু! বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো পথেই নামেননি এখনো, আমাদের ভয় পাবার কোন কারণ নেই। জামাতের বিরোধিতা করা মূল শক্তি কিন্তু আমি, আপনি কিংবা শহুরে শিক্ষিত-সুবিধাভোগী মানুষগুলা নয়, মূল শক্তিটাই খেটে খাওয়া মানুষেরা, যারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ভেতরে ভেতরে সহজ প্রত্যয় ধারণ করেন। বাংলাদেশ নিয়ে এই কারণে কোনদিন পুরোপুরি হতাশ হতে পারিনা।
বহুদিন পর লিখলেন মিয়া, নিয়মিত লেখা দেন, নাইলে খবর আছে।
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
আর তাছাড়া আপনার চমৎকার প্রোফাইল পিকচারটা দেখলেইঃ বুকে আসে বল, মনে আসে শক্তি... এইটারে নিয়মিত নীড়পাতায় রাইখেন... পোস্ট নাহয় ছোটই হইল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
রুখে দাঁড়ালেই লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হবে জানোয়ারগুলো।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
আরে হাচল যে!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
হাচলাভিনন্দন গান্ধর্বী!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
গান্ধর্বী, "গান ধরা" বন্ধ করবেন না যেন!
হাচলত্বে স্বাগতম
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
সুর লাগুক আগে, তারপর আবার গান ধরব!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
এই শক্তিটাই আজ বড় বেশী প্রয়োজন। না; কোন হিমালয় জয় করতে হবেনা। একটু ইচ্ছাশক্তিই পারে এই দানব গুলোর টুটি চেপে ধরতে। নইলে প্রত্যেকদিন বাড়তে থাকবে এদের আস্ফালন। আর আমাদেরকে নামতে হবে নিজেদের গোটাতে থাকার প্রতিযোগিতায়। কিন্তু কি হবে এই নির্জীব হয়ে হাজার বছর বেঁচে থেকে ? এই হিংস্র দানব গুলো মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি এরা আমাদেরই আশেপাশে, আমাদেরই রক্ত চুষে চুষে আজ দানবীয় রূপ নিয়েছে। এদেরকে এখনই থামানো দরকার। এইতো শুরু; গায়ে জমে উঠা কাদামাটি ঝেড়ে ফেলে এখান থেকেই জেগে উঠবে একাত্তরের অগ্নিশিখারা। - জেগে উঠার দিন
হ্যাঁ, এদেরকে রুখতেই হবে।
নতুন মন্তব্য করুন