“বাবা ওই গাড়িটা কি গাড়ি”, রন্টু মুগ্ধ দৃষ্টিতে লাল রঙের সশব্দে চলে যাওয়া ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িটির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল।
“ফায়ারব্রিগেড এর গাড়ি, বাবা”।
“ওটা কই যায় ?”
“আগুন থামাতে যায় বাবা, কোথাও আগুন লাগলে ওই গাড়িটা গিয়ে আগুন নেভায়”।
এ ব্যাপারে বাবা আর ছেলের বক্তব্য এখানেই শেষ। আমরা বুঝতে পারছিলাম রন্টুর গাড়িটা খুবই পছন্দ হয়েছে। এরপর সে হয়ত ভাবতে পারে বড় হয়ে সে এই গাড়ির চালক হবে বা এমন কিছু। কিন্তু সে সেরকম কিছুই বলল না। তার দুইদিন পর যা ঘটল তা যে ঘটতে পারে আমরা কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি।
দুপুরের দিকে বাসা যখন একটু ফাঁকা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে কাল ধোঁয়া দেখে পাশের বাড়ির আন্টি চেঁচিয়ে উঠেছিল “আগুন, আগুন” বলে। এমনিতেই বাসায় তখন তেমন কেউ নেই। তার উপর যারা ছিল কিছুটা ভাত ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন। চ্যাঁচামেচি শুনে দৌড়ে এসে বুয়া দেখল মিটসেফের একাংশ পুড়ে ছাই। অন্য পাশটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর ঘটনার কালপ্রিট রন্টু অবাক হয়ে আগুন দেখছে। তাড়াতাড়ি বালতি ভর্তি পানি এনে আগুন নেভানো হল। আর রন্টুর শুরু হল বাড়ি মাথায় তুলে কান্না।
“তোমরা আগুন থামালা ক্যান? লালগাড়িটা তো এখনো আসে নাই, আর একটু পরেই তো চলে আসত”।
রন্টু হল আমাদের বাড়ীর সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য। যার কর্মকাণ্ড আমাদের বাড়ির বাকি সদস্যদের শুধু আনন্দিত করে না, প্রায়শই এমন ভয়ংকর একই সাথে যন্ত্রনাকর সব ঘটনার জন্ম দেয়। ইদানিং রন্টুর গাড়ি প্রীতি বেড়েছে। ইন্টারনেট এর ফ্রিকয়েন্ট ইউজার রন্টু রেগুলার টয়োটা, মিতসুবিসি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে নতুন সব গাড়ির ব্যাপারে আপডেটেড থাকে। গত বানিজ্যমেলায় বাবা-মার সাথে ঘুরতে গিয়ে সারাটা সময় জ্বালাতন করেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে এখানে একটা টয়োটার দোকান আছে, এখন চুপ করলে তোমাকে সেটাতে নিয়ে যাওয়া হবে। আইস্ক্রিম, চকলেট এইসব লোভ দেখিয়ে আজকালকার টেকি বাচ্চাদের কোন লাভ নাই। এদের লোভ দেখানো লাগে প্লেস্টেশান, ল্যাবটপ, সেলফোন, অথবা গাড়ীর। ওদের আর দোষ কি, বড়রাই তো এইসব নিয়ে বুঁদ।
সে যাকগে, মেলায় বাকিটা সময় চুপচাপ ছিল আর বাবা-মা কি কি কিনছিল তা দেখছিল আর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করছিল ফ্রি অফারের ছড়াছড়ি। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হল টয়োটার স্টলে। খুব ভাব নিয়ে ওখানকার সেলসের ছেলেমেয়েদের জিগ্যেস করল, “তাইলে এখানে শুধু টয়োটা অ্যাভানযাই আছে, আর কিছু নেই”? ওরা তো দারুন মজা পেল এইটুকুন খুদে কাস্টমারের এত ভাব দেখে। বলল, “জ্বি স্যার, আপনার কোন রঙটা পছন্দ”? রন্টু আরো একটু ভাব নিয়ে প্রশ্ন করল “কোন রঙটা কিনলে তোমরা আমাকে আরেকটা ফ্রি দিবা”?
রন্টুর গাড়ি প্রীতি শুধু গাড়ি নয়, গাড়ির ড্রাইভার পর্যন্ত বিস্তৃত। মামা, চাচা বা খালা যার সাথে ফোনে কথা হবে তাকেই জিগ্যেস করবে, “খালামনি তোমাদের ড্রাইভার কেমন আছে?” স্বভাবতই প্রথম প্রথম সবাই মহা বিরক্ত হত, তাদের অথবা তাদের ছেলেমেয়েদের কুশল না জানতে চেয়ে যানচালকের ব্যাপারে রন্টুর এত আগ্রহ দেখে। পরে ব্যাপারটাতে সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
শুধু কুশলাদি জিগ্যেস করা পর্যন্তই নয় বাড়িতে ড্রাইভারদের যেন কোন আপ্যায়নে কোন ভুলত্রুটি না থাকে সে ব্যাপারেও রন্টুর সজাগ দৃষ্টি। বুয়া যখন ওদের খাবার দেয়, সে তখন বুয়ার পিছু পিছু। একবার বুয়া রান্নাঘরের কলের পানি গ্লাসে ভরে ড্রাইভারকে দিয়ে আসতে রন্টু ব্যাপারটা লক্ষ্য করে, ড্রাইভার চাচাকে গিয়ে বলল, “খান, খান ময়লা পানি খান, বুয়া কল থেকে এইমাত্র ঢেলে দিয়েছে”।
যে গাড়ি চালাতে জানে সেই কেবল রন্টুর চোখে হিরো বাকি সব জিরো, প্রায় এরকম অবস্থা। ওর এই দৃষ্টি ভঙ্গীর কারণে আমাদের খুব ভীতু ছোট ফুপুও ড্রাইভিং স্কুলের চৌকাঠ পেরুল।
রন্টুর খেলতে গিয়ে পা ভাঙ্গার পর ডাক্তার অন্তত একুশদিন বেড রেস্ট এ থাকতে বলেছিল। আমাদের সবার ধারনা ছিল এই সময়টা পাড় করা শুধু ওর জন্যেই না বাড়ির আর সবার জন্যেও সহজ হবে না। কিন্তু রন্টু প্রায়ই অদ্ভুত সব পরস্থিতিতে অদ্ভুত সব আচরণ করে যা আমাদের জন্য একেবারেই আনপ্রেডিক্টেবল। দেখা গেল সে লক্ষ্মী সোনা হয়ে পুরো সময়টাই শুয়ে শুয়ে গেইম খেলেছে বা কার্টুন দেখেছে। এবং যার কাছ থেকে যা যা আদায় করার সব কড়ায় গন্ডায় আদায় করে ছাড়ছে। চাচা কে কেঁদো কেঁদো হয়ে বলেছে, “চাচু পা টা যে ভেঙ্গেই গেল, একটা নিন্টেন্ডও হলে কত্ত ভাল হত। সবাই স্কুলে আর অফিসে চলে গেলে আমি কি করব”? পরদিন চাচা নিন্টেন্ড কিনে তবেই বাসায় ফিরলেন।
নিজের থেকে বছর তিনেক বড় বোনকে দিয়ে সারাক্ষন খাটিয়ে মারছে, “আপু, যাও পানি নিয়ে আস, আপু টিভির রিমোট আমাকে দাও, ডিসনি চ্যানেল দেখব”। ভাইয়ের অসুস্থতায় তার সব ছড়ি ঘুরানো নীরবে সহ্য করে নিচ্ছে তার শান্ত শিষ্ট বোন।
আমাকে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ফোন করে বলবে, “আপ্পি, আজ তুমি কিসের ডিভিডি আনবা? টিনটিনটা আনতে পার অথবা রিয়েলস্টিল, রোবটের মুভ্যি”?
কলেজ ফেরত ভাইয়াদের বলবে, কি কি চকলেট আনতে হবে এবং কতক্ষণ তার সাথে গল্প করতে হবে।
যার কাছ থেকে যা যেভাবে লুটেপুটে খাওয়া যাই সে ধান্দায় থাকল রন্টু সেই বেড রেস্টের তিন সপ্তাহ।
এরপর প্লাস্টার খুলে দেবার পর রন্টুর প্রথম আবদার তার বাবার কাছে, “বাবা এখন থেকে তাহলে আমি গাড়ি ড্রাইভ করতে পারি”?
(চলতেও পারে)
মন্তব্য
চট করে পড়ে ফেলা গেলো, যদি চলে তবে আরেকবার চট করে পড়ে নেব , তবে চলার অপেক্ষায় থাকার মতো তেমন কিছু নয়।
পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টুর পরবর্তী কাণ্ড পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতম।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
facebook
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অলস সময়
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
কমন সেন্স জিনিসটা বাচ্চাদের মধ্যে ভালোভাবেই থাকে। বড়ো হতে হতে এইটা নাই হয়ে যায়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
১০০%সহমত আপু।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
্রন্টুর কান্ডকীর্তি পড়ে খুব মজা পেলাম। অবশ্যই চালিয়ে যান।
অনেক ধন্যবাদ কালো কাক।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
পুরা ট্যালেন্টেড ব্ল্যাকমেইলার দেখি।
-শহরবন্দী
এক্কেরে
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
বেডাই একখান!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ওয়ান পিস
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টুর জন্য
লেখা চলুক।
পর পর দুইটি ধুসর মন্তব্য।
ধন্যবাদ ধুসর জলছবি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টু যখন থামবে না- আপনি কেনো থামবেন...
রন্টু বড় না হওয়া পর্যন্ত থাম্বে বলে হয় না ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
রন্টু ইতিহাস ঘেটে দেখবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে সাক্ষী সত্যানন্দ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন