ঢাকা শহরে আমার মত হতদরিদ্র মানুষদের নিত্যদিনের চলাফেরায় বাসের বিকল্প নেই। সিএনজি চালকদের ভাবসাব দেখে কিছুটা আঁচ করা যায় আগেকারদিনের রাজাবাদশাদের আচরণ কেমন ছিল। আর রিকশা দ্বারা সব দূরত্ব অতিক্রম্য নয়। অফিস বাসা আসা যাওয়ায় আজকাল অন্য বিকল্প ব্যবস্থা পাচ্ছি না দেখে নতুন করে লাল রঙের বি আর টি সি বাসের শরণাপন্ন হলাম।
বাসে মহিলা যাত্রীর সংখ্যা পঞ্চাশ না হলেও ত্রিশ শতাংশের কম হবে না, অন্তত পিক আওয়ারগুলিতে। সংরক্ষিত নয়টি আসন নিয়ে নিত্যদিন বাসে নিত্যনতুন নাটক উদ্ভাবন হয়ে। মাঝে মাঝে বেশ এঞ্জয় করি ঝগড়াঝাঁটিগুলি। আবার মাঝে মধ্যে মহাবিরক্তির উদ্রেগ হতে থাকে।
স্টুডেন্ট থাকতে আমি সবসময় সংরক্ষিত আসন এড়িয়ে চলতাম। কারন সেগুলিতে লেখা থাকে “মহিলা, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত”। ব্যাপারটাতে আমার ঘোরতর আপত্তি ছিল, মহিলা আর প্রতিবন্ধী এক ব্যাপার হল নাকি। কিংবা শিশুর শারীরিক ক্ষমতা কেন তুলনীয় প্রাপ্ত বয়স্কার সাথে। তখন তো ম্যালা কিছুই মনে হত, এখন এতকিছু চিন্তা ভাবনা করি না, ফাঁকা সীট পেলেই বসে যাই। দেশের বাইরে দেখেছি সংরক্ষিত আসন রাখা হয় বৃদ্ধ, গর্ভবতী মহিলা, শিশুসহ মহিলা অথবা প্রতিবন্ধীদের জন্য। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে দেখা যায় অনেক সময় থুড়থুড়ে বুড়োলোকটা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অথচ কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া কিংবা শক্ত সামর্থ মহিলা তাকে সীট ছেড়ে নারাজ। এই নিয়ে শুরু হয়ে গেল হাউকাউ। একদল বলছে মহিলাটির ছেড়ে দেওয়া উচিত সীটটি, আরেকদল বলছে, মোটেও না, ওই সীট কেবল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত, জোয়ান, বুড়ো কোন রূপ পুরুষ সেখানে বসার যোগ্যতা রাখে না। এই তর্কে অংশগ্রহণকারী অনেক পুরুষও থাকে যারা কিন্তু নিজের সীট ছেড়ে দিতে রাজি নন। এমন কি অনেক সময় নয়জনের কম মহিলা থাকলেও অন্য সব সীট ভরে গেছে, ওই আসনগুলির দিকে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে অনেক পুরুষ তাকালেও কেউ মান সম্মান হারাবার ভয়ে বসার কথা ভাবছে না।
অনেক সময় আবার উল্টো দেখা যায়, সংরক্ষিত আসন ফাঁকা অবস্থায় কোন পুরুষ বসে পড়ল, পরবর্তী স্টপ থেকে কোন মহিলা উঠলে সে কিছুতেই আসন ছাড়তে নারাজ। বাস ভর্তি লোক তাকে অনুনয় করে একসময় বিরক্ত হয়ে যায়, সে এমন ভাব দেখাচ্ছে যে সে আসলে বুঝতেই পারছে কথাগুলি তাকে উদ্দেশ্য করে বলা। এক্ষেত্রে আশেপাশের লোকজন ঐক্যমতে পৌঁছায় যে উক্ত ব্যক্তি প্রতিবন্ধী, তাকে একটি সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দেওয়া হোক।
একটু আগে যে ব্যাপারটা বলছিলাম, আমাদের দেশে সংরক্ষিত আসন যে কোন মহিলাদের জন্য রাখা হয়, কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে যা করা হয় না। আমাদের দেশের মহিলারা কি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, নাকি এদের পা একটা অন্যদেশীয় মহিলাদের কম আছে, এই রকম কিছু ভাবনা মনে আসতেই পারে। কিন্তু রিয়েল সিনারিয়টা কিন্তু যথেষ্ট অন্যরকম। সেদিন যেমন দেখলাম এক ছাত্রী সুন্দরীই বলতে হবে, মহিলা সীটগুলির আশেপাশে জায়গায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বসে আছি ঠিক তার পাশে। এক মধ্যবয়স্ক লোক পাশের জনকে ঠেলে মেয়েটার গায়ে হাত দেয়ার চেস্টা করছে। প্রথমবার বললাম, আপনি সরে দাঁড়ান। একটু সরে দাড়াল ঠিকই, পাশের জন নেমে সে এসে মেয়েটার গায়ে সেটে দাঁড়াল। অল্প বয়সী মেয়েটা ভীত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না অন্যান্যরা লোকটাকে কড়া ধমক লাগালো। দুঃখের সাথেই বলতে হয়, এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার প্রাণীর সংখ্যা আমাদের দেশে খুব কম নয়। দেশের বাইরে যতই স্বল্পবয়সী বা স্বল্পবসনা যে কোন মহিলা যাত্রীই থাকুক না কেন, বাস বা সাবওয়েতে অন্য যাত্রীদের তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে দেখলাম না। অনেক সময় দেখা যায় বাসগুলি যেহেতু স্টপে পুরাপুরি থামছে না, তাই হেল্পারগুলিও নারী যাত্রীদের হেল্প করার ভঙ্গীতে গায়ে হাত দেয়ার পায়তারা করছে।
আবার প্রায়শই উলটা ঘটনা যে হয় না, তা না। হঠাৎ জোরে ব্রেক কষলে দেখা গেল হুড়মুড় করে কিছু লোকজন পড়ে যাচ্ছে, রাংডমলি দুই একজন পুরুষ গিয়ে পড়ল দজ্জাল এক মহিলার উপর।আর যায় কই, ওইলোকের বাপদাদা চৌদ্দগুষটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাকার অবস্থা করে মহিলা ক্ষান্ত দিলেন না, বাসশুদ্ধ যাত্রীর গণপিটুনি খাইয়ে তবেই মহিলা শান্ত হলেন।
এত গেল লিঙ্গ বৈষম্যে হয়রানীর ঘটনা। একী লিঙ্গের মানবসম্প্রদায় নিজেরা নিজদের মধ্যে যে খুব প্রীতি সম্পর্ক বজায় রাখেন এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। সেদিন দুই জন ভদ্রলোক বলব কি না ঠিক বুঝতে পারছি না, সকাল বেলা বাসে উঠে বিপুল পরিমাণ হইচই জুড়ে দিল। অধিকাংশ সময় জানালার পাশে সীট পেলে আমি কানে হেডফোন গুঁজে জানালার বাইরের দৃশ্যে মনোনিবেশ করি। কিন্তু সেদিন এদের যন্ত্রনায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না, কি ঘটনা বোঝার চেষ্টা করলাম। দেখা গেল বাসের সীটের পাশে আটকানো ফ্যানটা কার দিকে ঘুরানো তাই নিয়ে ঝগড়া চলছে। তখনো বাসটা চলা শুরু হয়নি, এমনকি ড্রাইভার সীটে এসেও বসেনি, সুতরাং ফ্যানটা তখনো বন্ধ। অতপর ঝগড়া চলতে থাকে, একসময় যখন বাস চলা শুরু করল এবং অন্যান্য ফ্যানগুলি ঘুরতে শুরু করল তখন দেখা যায় ওই নির্দিষ্ট ফ্যানটাই নষ্ট।
এরপর নিত্যদিনের অন্যতম ঝগড়ার দুটি বিষয় হল সময় মত বাস ছাড়া এবং ভাড়া বা টিকেট। বাসের সীটগুলি ভর্তি হয়ে দাঁড়াবার জায়গা নাই, ড্রাইভার তক্ষণও অপেক্ষা করছে ফাঁকে ফোকরে কিছু যাত্রী ঢুকলে পরে বাসটা ছাড়বে, আর ভিতরের যাত্রীগুলির অফিস কি ক্লাসটাইম দৌড়াচ্ছে। আরকি, যার যার ডিকশানারিতে বাংলা ইংরেজি গালির ভাণ্ডার খালি দিয়ে গালি দিতে থাকে কিছু যাত্রী। ড্রাইভার ব্যাটাও কম সেয়ানা না, দুই কানে তুলা গুঁজে চুপাচাপ বসে থাকে, সে এক কমেডি পুরাই। কিছুক্ষন পর যাত্রীরা অধৈর্য হয়ে হাত পা ছুঁড়তে শুরু করলে বাস ভাঙ্গাভাঙ্গির এটেম্পট নিলে তখন ড্রাইভার সাহেব একটু নড়েচড়ে উঠেন।
বাসের ভাড়া বা টিকেট নিয়ে নিত্যদিনের ক্যাচাল তো লেগেই আছে। টিকেট ওয়ালা বাসে কিছু মানুষ কেন জানি কিছুতেই টিকেট কিনবে না। টিকেট ছাড়া বাসে উঠে কি মজা তা একবার দেখবার ইচ্ছা আছে আমার। এদের সাথে বাসকন্ডাক্টারের ঝগড়াটা প্রায়শই দেখা যায় মারামারি হাতাহাতি এবং শেষ পর্যন্ত অর্ধচন্দ্র দিয়ে বাস থেকে বের করা দেয়া পর্যন্ত পৌঁছে।
দীর্ঘ সময় জ্যামে বসে বসে অনেকে খবরের কাগজ, বই পত্র পড়তে থাকেন, কেউবা ফেইসবুকিং কি হেডফোনে গানটান যেমন শুনে, কেউ কেউ আবার সহযাত্রীদের সাথে বেশ আলাপ জমিয়ে ফেলে। সেদিন আমার পাশে বসে থাকা দুইমহিলা দেখি সফলভাবে ঘটকালির দিকে এগিয়ে চলেছেন, একজন বয়স্কা মহিলা তার ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। তার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী মেয়ে ফর্সা না হলেও চলবে কিন্তু লম্বা হতে হবে। তিনি মনে করেন তিনি একজন ভাল শাশুড়ি হবেন। অন্যজনের লম্বা ফর্সা ননদের জন্য পাত্র খুঁজছেন। পাত্র ব্যাংকার হলে তাদের তেমন আপত্তি নেই। ফোন নম্বর আদানপ্রদান পর্যন্ত দেখলাম, পরবর্তী কর্মসূচী অনুযায়ি পদক্ষেপ কি হল তা অবশ্য আমার জানা নেই।
বি আর টি সি বাসগুলি যে ডেটিং স্পট হতে পারে এই ধারনা বেশ নতুন। আমার এক বন্ধুর সচিত্র অভিজ্ঞতা শুনলাম সেদিন। একজুটি ডাবলডেকার বাসের দোতলার কোণার সীট বেছে নিয়ে বেশ চুটিয়ে প্রেম করছে, এই পর্যন্ত ব্যাপারটা খারাপ ছিল না। কিছুক্ষনপর দেখা গেল তারা নিজেদের আড়াল করার জন্য ছাতা মেলে ধরেছে। ঘটনা ততক্ষনে বেশ জমে উঠেছে। গুরুজনেরা হাঃ হাঃ করে উঠছে, দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে বলে, ফচকে ছেলেপেলে ডি এস এল আর বের করে ফটকবাজি শুরু করে দিয়েছে। সে কি কান্ড!
তারপরও মাঝে মাঝে অনেক সময় যখন দেখি বুড়া মানুষটি উঠল বলে বাসে কেউ কেউ হাত ধরে উঠিয়ে নিজের সীটটা ছেড়ে দেয়, কিংবা কোন ভদ্রমহিলা শাড়ী সামলে হাঁপাতে হাঁপাতে বাসের সিঁড়ি টপকালে তাকে বসার জায়গা করে দেয় আরেকজন তখন মনে হয় ছোট্ট আমাদের দেশটাতে অনেক ভাল মানুষ এখনও আছে বলেই দেশটা বোধহয় এত অনিয়মের মাঝেও টিকে যাচ্ছে।
মন্তব্য
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
চমৎকার। এই রকম আরো লিখুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই, আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
চমৎকার। লাইভ
facebook
ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
চমৎকার লাগলো। বাস যাত্রীর ডায়রি নামে একটা দারুণ সিরিজ হতে পারে কিন্তু এরকম ছোট ছোট ঘটনাগুলি নিয়ে।
ধন্যবাদ চ'উদা। চেষ্টা করব তেমন কিছু লিখতে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
একবার ফার্মগেটে ওভারব্রিজ থেকে দেখলাম একটা বাস দাঁড়িয়ে আছে, কয়েকটা মেয়ে সেটায় উঠছে। পেছনে এক মধ্যবয়স্ক লোক। মনে হলো বাসে উঠতে তার খুব তাড়াহুড়া। সে একটা মেয়ের গায়ে মোটামুটি সেঁটে আছে, অথচ তার পিছনে কোনো ভিড় নাই!
এবং তারচেয়ে অবাক হলাম, যখন দেখলাম বাস ছাড়ার আগেই লোকটি নির্বিকারভাবে বাস থেকে নেমে অন্যদিকে হাঁটতে শুরু করলো...
বাসে ডেটিং সবচেয়ে বেশি হতো যখন 'নিরাপদ' নামের একটা বাস সার্ভিস চালু হলো গুলিস্থান উত্তরা রুটে। এসি বাস। বিশ টাকার টিকিট কিনে চুটিয়ে প্রেম করা যেতো। এই বাসটা মোটামুটি দুপুরের দিকে খালি থাকতো বলে পোলাপানের খুব পছন্দ ছিলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রথম যে ঘটনাটা বললেন এই ধরনের বিকৃত মানসিকতার লোকের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি সমাজে।
বুঝা যাচ্ছে আপনার আর ভাবীর ডেটিং প্লেস ছিল গুলিস্থান টু উত্তরা
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
না ভাই, আমার ডেট করার জন্য বাস লাগে নাই কোনোদিন। ঐ আমলে আমি উত্তরায় একলা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়া থাকতাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নজু ভাইয়ের ফ্ল্যাট!
বেশ বিখ্যাত আছিলো, নাম শুঞ্ছি শুঞ্ছি লাগে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লিটন না তো?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
খাইছে
আরো চাই এরকম দিনপঞ্জী।
..................................................................
#Banshibir.
হ, আপনারা খালি পুরুষ নির্যাতনটাই চক্ষে দেখলেন
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ভাল লাগলো
ধন্যবাদ অতিথি, কিন্তু আপনার নিক কই?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
২০০৯ সালের প্রথমার্ধে মিরপুর থেকে বেঙ্গল পরিবহনে করে গুলশানে যেতে হত। আমি চেষ্টা করতাম সংরক্ষিত ০৯দত আসন বাদ দিয়ে বসতে। আর সে সুযোগ ও ছিলো কারন আমি যাত্রা শুরু করতাম বাসটির স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে। মিরপুর ১০ এর স্টপেজ থেকে অনেক যাত্রী উঠত, ০৯ টি সিট সেখানেই ভরে যেত। একদিন তিতুমীর কলেজের কিছু ছাত্র উঠেছিল (ঐ রুটটায় সবসময় ই উঠে থাকত)। সংরক্ষিত সিটের ২ টি তখন খালি হয়েছিল। আমাকে একজন বলে যে আমি যেন উঠে ঐ সংরক্ষিত সিটে যেয়ে বসি কারন সে বসবে আমার সিটএ। আমি অপারগতা প্রকাশ করতেই সে আর তার সাথে জনেরা তর্ক জুড়ে দিলো, মেয়েদের জন্য ০৯ টি সিট থাকার পর ও আমি কেন অন্য সিটে বসেছি। আমি বল্লাম যে ঐ দুটি সিট এই স্টপেজেই খালি হয়েছে। তারা বসুক ওখানে, পরে অন্য কোন মহিলা আসলে তারা সিট ছেড়ে দিলেই হবে। সে বলে না, সে আমার সিটটাতেই বসবে আর আমি যেন (ভীড় ঠেলে) ওই সিটে গিয়ে বসি। আমি চুপ করে বসে থাকলাম আমার সিটে আর সারা বাস জুড়ে তারা আলাপ শুরু করলো, মেয়েরা সব জায়গায় সমান অধিকার চাইয় তাহলে বাসে কেন সিট চায় ব্লা ব্লা ব্লা। ওরা যখন তিতুমীর কলেজের সামনে নামলো, আমি শুনতে পেলাম বলছে আমাকে উদ্দেশ্য করে Óএই সব মেয়েদের রাস্তায় ফেলে স্যান্ডেল দিয়ে পিটাতে হয়, তাহলে ঠিক হয়ে যাবেÓ ক্ষোভে অপমানে আসা কান্নাকে গিলতে হয়েছিল বাস ভর্তি মানুষের সামনে চোখের পানি ফেলব না বলে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তিগতভাবে না নেবার অনুরোধ করছি। আমার একজন মামা ও তিতুমীর কলেজ থেকে লেখাপড়া করেছেন।
আসলে এধরনের অভিজ্ঞতা খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের কারও কাম্য নয়। ২০০৯ এর দিকে এই সংরক্ষিত আসনের ব্যপারটা কিছুটা নতুন ছিল এবং অনেকে খুব সহজে মেনে নিতে পারত না। মানে ওই নয়টি আসনেই মেয়েরাই কেবল বসতে পারবে, বাকি মেয়েরা দাঁড়িয়ে যাবে নাকি পুরুষদের উঠিয়ে অন্যান্য আসনে বসা যাবে ব্যাপারগুলি নিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দিত। আজকাল অনেকদিন পর আবার বাসে আসা যাওয়া শুরু করেছি, দেখলাম এখন জনগণ এই সংরক্ষিত আসনের ব্যাপারে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে।
অটঃ-ব্যাঙের ছাতা আপনার মন্তব্য সবসময় পাই, লেখা পাই না কেন?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ইয়ে সচিত্র অভিজ্ঞতা শুনে কেমতে? জানতে মন চাইতাছে। আমিতো বাসে বইসা বইসা দুইবার আরেক কোম্পানীর ক্লায়েন্ট কাইড়া লয়া আইছিলাম
ঐ যে কইলাম পুলাপানের হাতে ডি এস এল আর ছিল, কি প্রযুক্তি!!!
আপ্নেরে দিয়াই হইবে, ক্যারি অন
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ভালো লাগলো। বাসের ডেটিং এর পুরান কাহিনী নজু ভাই বলে দিয়েছেন, আরেকটা ছিলো ঘন্টাওয়ারী রিক্সা ভাড়া করা। সাইকেল চালানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ইদানিং অনেক বাইসাইকেল গ্রুপ জনপ্রিয় হচ্ছে ঢাকায়।
হুম বুঝলাম, আপনে শুধু বাস না, ত্রিচক্রযানে প্রেম চালাইসেন।
চারচাক্কা চালাইতে পারি, তিন চাক্কা চেষ্টা করলে মনে হয় পারব। দুইচাক্কা শেখা হয় নাই। এখন শিখলে সম্ভব?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অবশ্যই সম্ভব।
হ সম্ভব! হ্যারে সাইকেল চালানো শিখানের লাইগ্গা পুরানখান বেইচ্চা দিয়া নতুন একখান সাইকেলই কিন্যা লাইসিলাম। ভোর বেলায় চইলা যাইতাম হ্যার ভার্সিটির হলে, আর মতিহারের সবুজ বুকে ঘন্টা দুয়েক সাইকেল চালানি আর ডেট কইরা সকালের নাস্তাডা বাইরেই সাইরা আইসা পড়তাম বাসায় - হে হে হে
ইশ! আমার জন্য যদি কেউ নতুন সাইকেল কিনত !
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
দুই চাক্কায় প্রেম?? মমিন সাহেব কি বলেন??
দুই চাক্কারই তো তফাৎ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমিও একদিন মাঝবয়সী এক মহিলার ঝাড়ি খেয়েছিলাম ঝাকি খেয়ে গুতা লাগার কারণে, ভাগ্যিস পিটুনি খেতে হয়নি। সেইদিনের পর অনেকদিন বাস এড়িয়ে চলেছিলাম। বাসে যেমন বিকৃতরুচীর লোক থাকে গুতানোর জন্য তেমনি ঝাকাঝাকির কারণে অনিচ্ছাকৃতও গুতা লেগে যেতে পারে, সেটা অনেকে বুঝতে চায়না। তবে তাদের দোষও দেয়া যায়নি, কোন গুতা ইচ্ছা করে দেয়া আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত বোঝা কঠিন।
প্রতি বাসেই আরেকপ্রকারের লোক দেখা যায় যারা হেল্পার ভাড়া চাইলেই ক্ষেপে উঠে আর পরে দিতে চায়। বিশেষ করে হেল্পার বেচারা ভুলে ২য়বার ভাড়া চাইলেতো কথাই নাই, পারলে গিয়ে যেন মারে। আমার ব্যাক্তিগত ধারণা হলো এরা অফিসে আর বাসায় ঝাড়ির উপরে থাকে সারাক্ষণ, আর বাসে গিয়ে সেটা হেল্পারের উপর ঝাড়ে।
বাসে ওঠার ধাক্কাধাক্কিটা মনে হয় আমাদের জাতি হিসাবে উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দেয়, কে আগে আসছে কে পরে আসছে ব্যাপারনা, কে কাকে ধাক্কা-গুতা দিয়ে আগে উঠতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে যায় সবাই। একটু নীরিহ প্রকৃতির মানুষের জন্য ফার্মগেট টাইপের জায়গা থেকে বাসে উঠা ভয়ংকর কঠিন, আমি নিজেও সেই দলে পড়ি, বেশ কয়েকদিন মেজাজ খারাপ করে ঢাকা ভার্সিটি থেকে সোজা হেটে ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছি। হাটার আগে সিএনজি ওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞেস করে নেই, ২০০ টাকা শোনার সাথে সাথে হাটার এনার্জি শরীরে চলে আসে!!
এইটা ভাল বলেছেন, আসলেই সিএনজি ভাড়া শুনলে হাটার এনার্জি চলে আসে।
ফার্মগেট এলাকা আমি সবসময় এড়িয়ে চলি দরকার হয় কারনবাজার না হয় আগের স্টপে নামব। একবার ঈদের আগে ঐ এলাকায় বাস থেকে নেমে এমন শিক্ষা হয়েছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
(শেষ লাইন পড়ার পর) আছে, আছে, সব আছে!
আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি।
ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ভালু হইছে।
লেখা ভাল লাগল আপু, আরও লিখনা প্লিজ প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
এখন আর বাসে যাই না। অফিসের গাড়ী দেয়। আবার গেল লিখবনে
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন