রন্টুকে নিয়ে লিখতে গিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম সচলের সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় দুইবছরের বেশি সময় পাড় হয়ে গেছে। কারন রন্টুকে নিয়ে যখন প্রথম লেখা শুরু করেছিলাম তখন তার বয়স ছিল ছয়, এখন সে আট প্লাস।
আজকালকার ডিজিটাল বাচ্চাকাচ্চার একজন রিপ্রেসেন্টেটিভ রন্টুর সাথে যাদের আগে পরিচয় হয়নি তারা জেনে রাখুন আমাদের বিশাল যৌথ পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য রন্টু সব সময়েই আমাদের সবার থেকে একধাপ এগিয়ে।
রন্টুর জীবনের প্রথম প্রেম ও তাই অন্য সবার চেয়ে একটু আগেই আসে, মাত্র আট বছর বয়সে। নাহ, ফেইসবুকের অধিকারী রন্টু ডিজিটাল প্রেম করছে না। তার বয়সী মেয়েদের বোধকরি এখনো ফেইসবুক একাউন্ট হয়নি। তার গার্ল ফ্রেন্ড তার স্কুলেই পড়ে। দুটা শিং ওয়ালা ঝুঁটি আর টুকটুক গোলাপী গাল, যে কারো দেখলেই গাল টিপে দিতে ইচ্ছা হবে। আমাদের পাশের ব্লকে থাকে। রন্টুর সাথে স্কুল বাসে যায়। বাসায় এসে আবার ফোনে কথা বলতে হয় দুজনের।
শাওন সেদিন খেপানোর জন্য জিগ্যেস করছিল, 'কিরে রন্টু তোর গার্ল ফ্রেন্ড কেমন আছে?'
রন্টু গম্ভীর স্বরে জবাব দিয়েছে, 'আমার চেয়ে ভাল আছে। ম্যাথসে এ প্লাস পেয়েছে, আমি বি।'
সত্যিই মেয়েরা ছলনাময়ী।
একদিন আড়ি পেতে দুজনের ফোনালাপ শুনছি, রন্টু বলছে, বড় ভাইয়ার বৌভাতে পড়ার জন্য সে বো টাই সহ স্যুট কিনেছে। আর বিয়েতে শেরওয়ানী পড়বে। মাথায় জেল দিয়ে স্পাইক করবে। বড় ভাইয়ার বিয়েতে রন্টুর সাজগোজ আসলেও দেখার মত ছিল।
বৌকে যখন বাড়িতে রিসিভ করা হয় বাড়ির ক্ষুদ্রতম সদস্য হিসেবে তাকেই দায়িত্ব দেয়া হয় পা ধোঁয়ানোর। ভাবি পা বাড়িয়ে দিলে হঠাৎ নাটকীয় ভাবে সে বলে উঠল "স্টপ", বলে তার কোটীর ভিতর থেকে একটা ছোট্ট আয়না বের করল। এরপর সারা অনুষ্ঠানের ধকলে নুইয়ে পড়া হেয়ার স্পাইকে আরেকবার হাত চালান করে বলল, "অ্যাকশান"।
বড় ভাইয়ার বিয়েতে ডালা র্যাপিং, স্কচটেপ কাটা, ঘর সাজানো ইত্যাদি ইত্যাদি সব দায়দায়িত্ব রন্টু সুন্দর ভাবেই পালন করল কোন রকম কান্নাকাটি, ঝুটঝামেলা ছাড়াই। আমি বললাম, 'কিরে রন্টু গতবার ফুপুর বিয়ের সময় তো ম্যালা কান্নাকাটি করেছিলি। এখন দেখি বড় হয়ে গেছিস?' সে উত্তর দিল, 'নাহ, ঠিক তা না। ফুপু তো বিয়ে করে ফুপার বাসায় চলে গেল তাই কান্না পাচ্ছিল। ভাইয়া তো বিয়ের পর কোথাও যাচ্ছে না, বরং ভাবি এ বাসায় চলে আসবে। ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছি।'
আমি বললাম, 'তো তুই বিয়ের পর কোথায় থাকবি?'
সে বলল, 'যেখানেই থাকি, পুলক ভাইয়ার সাথে আর ঘুমাবো না।'
রন্টুর ফেইসবুকিং আগের মতই জারি আছে। আজকাল সে বিভিন্ন গ্রুপের সদস্য। সেদিন হোমপেইজে দেখাচ্ছিল, রন্টু হেস বিন ইনভাইটেড ইন এন ইন্টারনেশেনাল পোকেমন কনফারেন্স ইন জাপান। চাচা দুঃখের চোটে বলেই বসল এত বছর চাকরী জীবনে কোন ইন্টারনেশেনাল কনফারেন্সে কল পেলাম না। আমার ছেলে দেখি আট বছর বয়স থেকেই পাওয়া শুরু করেছে।
গতবার বলেছিলাম রন্টুর পা ভাঙ্গার কাহিনী। কাকতালীয় হলেও সত্যি এইবার ঠিক একই তারিখে অন্য পায়ের একই জায়াগায় ভেঙ্গে বসে আছে রন্টু। ঘটনাটা কি করে একই দিনে ঘটল আমি এর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। এটা ঠিক যে দুইবার ই তার সামার ভ্যাকেশান চলছিল, কিন্তু একই তারিখটা খুবই অদ্ভুত। সে ঠিক করেছে প্রতিবছর এই দিনে সে 'পা ভাঙ্গা ডে' পালন করবে।
ডাক্তার তার পুরোনো প্রেস্ক্রিপসান দেখে খুবই অবাক হয়ে বলল, 'তুমি সেইম ডেতে সেইম জায়গায় পা ভাঙ্গা কি করে ম্যানেজ করলে?' যদিও সে তার এই ইয়ং পেসেন্টের চরিত্র সম্পর্কে কিছুটা অবগত, কিন্তু এমন কোয়েন্সিডেন্সে অবাক না হয়ে পারল না। রন্টু বলা শুরু করল, 'আসলে আঙ্কেল হয়েছে কি যে মাঠে খেলতে যাই সে মাঠে একটা ফড়িং থাকে। সেই ফড়িংটার সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল..................' ডাক্তার তার চাপাবাজির আভাস পেয়ে বললেন, ' নাউ ইউ আর মেকিং এনাদার স্টোরি। থাক হয়েছে, আর বলা লাগবে না। বাসায় গিয়ে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাও বেশি করে।'
এর মধ্যে রন্টুর জীবনে প্রথম বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ চলে আসল। থাইল্যান্ড যাত্রা পথে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশান পাড় হবার পর সবাই পরবর্তী ঘোষণার অপেক্ষা করছে। রন্টু আশেপাশে হেঁটে দেখছে। কিছুক্ষন পর চাচা আবিষ্কার করলেন রন্টুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ফ্লাইটের সময় এগিয়ে আসছে। সবাই তাকে খুঁজতে হইচই শুরু করে দিল। চাচি তো প্রায় কেঁদে ফেলে। মিনিট পনের পরে রন্টুকে হেলেদুলে হেঁটে আসতে দেখা গেল। চাচা প্রচন্ড রেগে আগুন, 'কই ছিলে তুমি, কাউকে না বলে কোথায় গেছিলে?' নিস্পাপ একটা ভাব ফুটিয়ে রন্টু বলল, 'বাবা আমি তো নামাজ পড়ে আসলাম।' এমন ভাব যেন তার এক ওয়াক্তের নামাজ কাজা যায় না। চাচা জিগ্যেস করল, 'নামাজ পড়ে আসলে মানে?' রন্টুকে শান্ত কন্ঠে জবাব দিল, 'দেখলাম এয়ারপোর্টের ভেতর সুন্দর একটা মসজিদ আছে। তাই প্রথমবার প্লেন এ উঠার আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করে নিলাম।'
আল্লাহ অবশ্য তার দোয়া কবুল করে ঠিকঠাক মতই তাকে থাইল্যান্ড ঘুরিয়ে আনলেন।
রন্টুকে নিয়ে অন্যান্যঃ
রন্টুর ফেইসবুকিং
আবারও রন্টু
রন্টুর কান্ড
স্পাইক হেয়ার রন্টু
মন্তব্য
বাপরে!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
এত্তগুলা কিউট রন্টু
facebook
এত্তগুলা ধন্যবাদ আপনাকে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টুর ভবিষৎ তো দেখছি মারদাঙ্গা স্টাইলের হবে ।
মাসুদ সজীব
আমাদেরও সেরকম ধারনা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মাসুদ সজীব।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
চারবছর বয়সেই স্পাইকিং! এত বড় হয়ে ভাইকিং হবে, হাহাহাহাহাহাহাহা। হাই-টেক জেনারেশন। শুভকামনা রইলো।
হাইটেক যামানার হাইটেক জেনারেশান।
ধন্যবাদ তানিম ভাই মন্তব্যের জন্য।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
বাচ্চাগুলা এত বেশী কিউট হয়, আমাদের মাহিনটার কথা মনে পড়ে গেল।
রন্টুর জন্য আদর।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বাচ্চারাই তো কিউট হবে ।
লিখে ফেল মাহিনকে নিয়ে আরেকটা।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
লন্তু লক্স (অনুবাদ: রন্টু রক্স) অনেক আদল থাকলো ছোত্তো লন্তুর জন্ন
আপনাকেও ফেলেস দন্নাপাতা আপু
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টু রক্স!
ধন্যবাদ আপু।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
রন্টুর জন্য এত্ত এত্ত ভালোবাসা।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আপনাকেও এত্ত এত্ত ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আপনার সব লেখায় তথা রন্টুর সব কর্মকাণ্ডে একটা না একটা মন্তব্য অবশ্যই করেছি এটা বাদ যাবে ক্যান কন! দিলাম ঠুকে একখান।
রন্টু পুরাই বস!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধু'গোর মন্তব্য ছাড়া রন্টুর লেখা গুলি অসম্পূর্ণ মনে হয়।
ধন্যবাদ ধু' গো সবসময় রন্টুর সাথে থাকার জন্য।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন