ঘটনাঃ ১
জামেনা জে এস সি পাশ, গ্রামে আবিয়াত্তা কলঙ্ক নিয়ে বসবাস না করে গার্মেন্টস করবে ভেবে ঢাকায় চলে আসে। এসেই ঠিক ঠাহর করতে পারে না কোথায়, কিভাবে কাজ পাওয়া যাবে। ভাগ্যক্রমে বাড়িতে কাজ জোটে। "খালা, আমার বেতনের ট্যাকাটা রাইখা দেন আপনের কাছে। বিয়ার সময় একটা স্বর্ণের চেইন বানায়া দিয়েন। বাপের আর কষ্ট হইব না।" পাঁচ ভাই বোনের অভাবের সংসারে বাবা মা লেখা পড়া শিখিয়েছে, তাই হয়ত নিজেরটা করে নেয়ার বোধটুকু জন্মেছে নিজের ভিতর।
ঘটনাঃ ২
বেশ উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার তিনি। নিজে শিক্ষিতা, মেয়েকেও যথেষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়েছেন। খুব দুঃখ করে বলছিলেন, "মেয়ের কপাল খারাপ, আমি তো বিয়েতে কিছুই দিতে পারছি না। যা খরচ নিজের আয় থেকেই করছে।" অবাক লাগল আমার, বললাম, আপনার কি গর্বিত হওয়া উচিত নয় বিষয়টাতে? সমাজে ছেলেরা বিয়ে করলে তো নিজের আয়েই করে। মেয়েকে তো ছেলে সন্তানের চেয়ে কম কিছু দেননি।
ঘটনাঃ ৩
দুই কন্যার বাবা মা, বড় মেয়েকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন, ছোটটা ইকোনমিক্স নিয়ে পড়ছে এখনো। নিজেদের আখের গুছানো নিয়ে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বড়টাকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোটটার জন্য পাত্র দেখছেন। দুজনের বিয়ে হয়ে গেলে শেষ বয়সে কে তাদের দেখা শোনা করবে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাই হঠাৎ করেই বিষয় সম্পত্তি নিয়ে লেগে পড়েছেন। আফটার অল, মেয়ের পয়সায় কি আর খাওয়া যায়?
২০১৫ এর আন্তর্জাতিক নারীদিবসের থিম নির্বাচিত হয়েছে "Empowering Women, Empowering Humanity: Picture it!" "নারী ক্ষমতায়ন, মানবতার ক্ষমতায়নঃ চিত্রায়ন!"
বাড়ি থেকেই বা পরিবার থেকে যদি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন শুরু না হয়, তবে এই শিক্ষা বা যোগ্যতা অর্জনকে কি বলা যায়, সোশ্যাল অরনামেন্টেশান? বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত অনেক পরিবার আমাদের দেশে কন্যা সন্তানের উপর নির্ভরশীল হতে লজ্জিত নয়, কিন্তু শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চমধ্যবিত্তরা এখনো কন্যা সন্তানকে পরিবারের অর্থনৈতিক দায়ভার দিতে কুণ্ঠা বোধ করছে। পরিবারের প্রধান আয়কারী ব্যক্তি যদি বাবা হয়ে থাকেন, তাঁর মৃত্যুর পর দায় পুত্রের উপরেই বর্তে, এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাবার আয়ের সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। অথচ সমাজে অনেক সিঙ্গেল মাদার আছেন যারা পরিবারকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাফল্যকে লক্ষ্য করে ৮ই মার্চ নারীদিবস পালিত হয়। আমাদের দেশেও আজ আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি বেগুনী রঙের ছোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, স্পীকার থেকে শুরু করে নারী ক্রিকেট দল সর্বত্রই বাংলাদেশী নারীদের ক্ষমতায়ন সুস্পষ্ট। প্রতিটি স্বতন্ত্র পরিবারে নারী হয়ে উঠুক যোগ্য, মানবতার ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত হোক সমাজের প্রতিটি স্তরে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে!
মন্তব্য
এইখানেই আসল ঘাপলা, সিডও সনদ নিয়েও বাংলাদেশের মূল আপত্তি কিন্তু
ধর্ম কিংবা সমাজবিজ্ঞানে না, মূল আপত্তিটি অর্থনীতিতে, খুউপ খিয়াল কইরা।
মাদার না হয়েও কিছু মানুষ (জৈবিক পরিচয়ে XX-ক্রমোজমধারী) পরিবারকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। ভাবতে আনন্দ লাগে, এমন কিছু স্যালুট করার মত মানুষকে চিনি, কাছে থেকে দেখেছি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যেকোন নীতির মূলে "অর্থ" খুঁজতে গেলেই ঘাপলা।
XX-ক্রমোজমধারী দায়ভার যতই বহন করুন না কেন, সার্টিফাই করতে XY-ক্রমোজমধারী প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
রিসেন্টলি আমার দেখা এক মা যে কিনা তার সন্তানের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিজেই বহন করেন, তার ডিভোর্সড স্বামীর ইনকাম সার্টিফিকেট যোগাড় করতে বাধ্য হলেন, কারণ সন্তানের স্কুলে মাতৃ আয়ের সনদ গৃহীত হল না।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অনেক স্থানেই ইদানীং পিতা/অভিভাবক থাকে, সেখানে সমস্যা হয় না।
তবে শুধু "অভিভাবক" থাকাই যথেষ্ট মনে হয়। একসময় হয়ে যাবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হোক তবে প্রকৃতঅর্থে নারীর ক্ষমতায়ন।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
হোক মানবতার ক্ষমতায়ন।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আশার কথা এই যে, বদলাচ্ছে ঘটনাগুলো, হয়ত এখনও কম কিন্তু বদলাচ্ছে।
দেবদ্যুতি
বড় পরিসরে দেখা যাচ্ছে যত না বদলাচ্ছে, ক্ষুদ্র পরিসরে ততটা কি আসলেই বদলাচ্ছে?
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আমি তো মনে করি, ক্ষুদ্র পরিসরেই বেশি বদলাচ্ছে। তবে এটা তো মানতেও হবে-যে মেয়েটা কোনোভাবেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন অর্জন করেনি, তার ক্ষেত্রে আগের মতনই আছে। তবে স্বাবলম্বীদের ক্ষেত্রে বাবা-মা থেকে শুরু করে তাদের নিজেদেরও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবার ঘটনা অনেক।
দু'দিন ধরে নারীর মাথায় সমাজ কতভাবে বাড়ি বসাচ্ছে সেসব এট্টু পড়ার চেষ্টা করছি। পড়তে গিয়ে হাসছি,রাগছি, কাঁদছি।
'নারীর ক্ষমতায়ন' বিষয়টা কখনো কখনো মানকচুর(ইয়ে মানকুচতেই গলা ধরে তো? নইলে বুঝে নিন ) মত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্হার গলা চুলকাতে মদদ দেয় যেন!
এই ২০১৫ তেও!!! সভ্যতার খালি ফ্যাশনই বদলাইলো, মানসিকতার খুব একটা নড়নচড়ন হইল না যেন!
এসব নিয়ে আরো আউল ফাউল বকবার খায়েশ রেখে গেলাম। অনেকদিন আইসক্রিম খাইনা খাইতে যাচ্ছি।
পিতিমির সব নারীদের সাথে আপনারেও আমন্ত্রণ জানাইলাম। জলদি আসেন আপনার জন্যেও শুভেচ্ছা থাকলো ভগ্নি
আইসক্রিম খাইলে গলা যখন চুলকাবে না, সেটা খাওয়াই সেইফ, কি কন?
আপনাকেও শুভেচ্ছা আপু, ভাল থাকবেন।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
"সমাজে অনেক সিঙ্গেল মাদার আছেন যারা পরিবারকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।"
এবং, শুধু মা-ই নন এমন অনেক মেয়েরাও। সাক্ষী যেমন লিখেছেন "মাদার না হয়েও কিছু মানুষ (জৈবিক পরিচয়ে XX-ক্রমোজমধারী) পরিবারকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।" আবারও সাক্ষীর মতই বলি, নমস্য তাঁরা সকলে।
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন যত জোরদার হবে তার সামগ্রিক ক্ষমতায়নও তত বাস্তব হয়ে উঠবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যাবাদ এক লহমা।
ভাল থাকবেন।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
১। নারীকে মানুষ হিসেবে স্বীকার করতে হবে। পুরুষের মতো সেও পূর্ণাঙ্গ মানুষ - একটুও কম নয়। সুতরাং, সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান মর্যাদা, ক্ষমতা ও অধিকারের দাবীদার।
২। যেহেতু নারীকে সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখা হয়েছে (মানবিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি) তাই সমপর্যায়ে না আসা পর্যন্ত নারীকে কিছু বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে হবে। এটা করুণা নয়, এটা পুরুষের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত।
৩। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন নারীর ক্ষমতায়ণকে নিশ্চিত না করলেও নারীর মানবিক অধিকারের অনেক কিছু অর্জনের পথ সহজ করে দেয় তাই অর্থনৈতিকভাবে নারীর স্বাবলম্বনকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা উচিত।
৪। নারীর অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে হবে। নয়তো প্রণীত কোন আইন-বিধি-বিধান ফল দেবে না।
নারীর ক্ষমতায়ণ মানে মানবতার ক্ষমতায়ণ! আসুন একে বাস্তব করে তুলি!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমাদের এখানে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ যে শুধু বুলির ব্যাপার তা এখন আর লুকোছাপার কিছু না। সমাজের উচ্চ থেকে নিম্ন সব জায়গায় এটা দেখা যায়। এই শব্দবন্ধ যে একটা প্রতারণা তা প্রকাশিত হয়েছে ক’বছর আগেই, নারী নীতি প্রণয়নের পর। মূল বিষয়টাই অর্থনৈতিক। সম্পত্তির সমান ভাগ এরা কোনো ভাবেই চিন্তাকরতে পারে না।
গার্মেন্টস শিল্প এবং তার হাত ধরেই কিছু পরিবর্তন আসছে এটা যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে, এই অতি ধীর পরিবর্তনকে গ্রহণ করা ও তাকে আরো এগিয়ে নেয়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। সরকারি-বেসরকারি প্রতষ্ঠিানের অনেক উচ্চপদেই নারীরা আছেন। কিন্তু পিতৃতন্ত্রের দৃঢ় ভীতের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এবং একইরকম মানসিকতা পোষণ করার কারণে এখান থেকেও আদতে কোনো লাভ হচ্ছে না। মাঝখান থেকে (জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পিকার কে?) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যএকটা প্রশ্ন বাড়া ছাড়া। লাভ যে হচ্ছে না তার বড় প্রমাণ হচ্ছে, শফী হুজুরের প্রতাপসহ বেঁচে থাকা। নারীনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়া।
এ কারণে অর্থনৈতিক দিকটা যেমন গুরুত্ব নিয়ে দেখতে হবে ঠিক একই রকম গুরুত্ব নিয়ে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা ভাঙার কাজে নামতে হবে। আমার ধারনা দ্বিতীয় কাজটা সমাজের নিম্নস্তর থেকেই সাধিত হবে। উচ্চ ও মধ্য স্তর টক শো, সেমিনার, বড়জোর দু একটা মানব বন্ধন আর মিছিল করবে।
লেখাটা আগেই পড়েছিলাম। মন্তব্য করতে পারিনি। দেরীতে হলেও শুভেচ্ছা রইলো।
স্বয়ম
নতুন মন্তব্য করুন