প্রবাস জীবনের কাটানো এটা আমার দ্বিতীয় শীতকাল। গত বছর এসে প্রচন্ড শীতে হাত, পা, মাথা, কল্লা সব লক হয়ে গেছিল। কি করব ভেবে না পেয়ে দুইবেলা স্যুপ খেতাম আর বাকি সময়ে চুপচাপ বসে পিঁপড়া হলাম না কেন, মনের দুঃখে তাই ভাবতাম। প্রথম প্রথম আসার পর ঠান্ডা সহ্য করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল, তখন ডাক্তার বলেছিল, যত ঠান্ডাই থাকুক না কেন প্রতিদিন অন্তত পনের মিনিট বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে। কি যন্ত্রনার কথা! প্রচুর ঠান্ডার মধ্যে প্যাকেট হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু পরে দেখলাম ব্যাপারটা বেশ কাজে দিচ্ছে, শরীর এই তাপমাত্রাটা মানিয়ে নিচ্ছে বেশ। পিঁপড়া না হলেও, তেলাপোকা আর মানুষের মধ্যে আসলেও অনেক মিল।
এবছর দেখছি বেশ পাংখা গজিয়ে উঠেছে। কাজে কর্মে অনায়াসে যেতে পারছি। শীতের জামা কাপড়, জুতা মোজা, টুপি, দস্তানা পড়তে সময় একটু বেশি লাগলেও স্মার্ট ফোনে টেম্পারেচার দেখতে পারাটা বেশ আরামের, তাতে করে কি প্রস্তুতি নিতে হবে বুঝে ফেলা যায়। সে অনুযায়ী তৈরি হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ি যখন তখন।
এই মাইনাস তাপমাত্রার ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে ইরানী মেয়ে সিমি সেদিন বলছিল, জানো আমার দেশে এখন প্রচুর গরম, প্লাস ছয় ডিগ্রী সেলসিয়াস। আমি বললাম আমার দেশে এখন বেশ ঠান্ডা, মাত্র বিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এগুলো বললে সবাই আমার দিকে করুণার চোখে তাকিয়ে থাকে, আহারে! মেয়েটার কি কষ্ট হচ্ছে।
তুষার দেখলে আমার মাথায় স্নোওয়াইট এর গল্পটা ঘুরতে থাকে কেন জানি, ওই যে রাণীর সেলাই করতে করতে সুঁই ফুটে হাত কেটে গেল। সাদা বরফের উপর টপটপ করে লাল রক্ত পড়ে খুব সুন্দর একটা রঙ হল। রানী তখন তেমনি রঙের একটা ফুটফুটে রাজকন্যা চাইলেন। আমার হাত কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত বরফে ফেলে রংটা কেমন হয় দেখতে মন চাইছে। কিন্তু হাত কাটার পর ব্যথাটার কথা ভেবে ঠিক সাহসটা জোটাতে পারছি না। ভাববার চেষ্টা করছিলাম জীবনে কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি কি না, মনে করতে পারলাম না। নাহ! আমি আসলেই বেশ ভীতু প্রকৃতির। এত্তগুলি বসন্ত কেটে গেল জীবনে, আত্মহত্যার প্রচেষ্টা ছাড়াই, কি চরম হতাশাজনক জীবন! জীবনে ভাল কিছু করাই হল না।
আজ ভাল একটা ছুটির দিন। বাইরে কনকনে ঠান্ডা, ভীষণ তুষারপাত। ভুনাখিচুড়ি আর হাঁসের মাংস রান্না করে খেয়েদেয়ে, কাঁথা কম্বল গায়ে দিয়ে বেশ একটা ঘুম দেয়া যায়। কিন্তু সকাল থেকেই “জীবনে ভাল কিছুই করা হল না” চিন্তাটা আমার মাথা কুড়ে খাচ্ছিল। তাই ভাবলাম আজ ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়েই দেখি না, ইফ লাইফ ইজ হোপফুল অর নট। যা হয় হোক, আজ আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াব।
তার ই ফলশ্রুতিতে এই পোষ্ট খানার জন্ম- মানে মিনিংফুল লাইফ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আজ সারাদিনের তোলা কয়খান ছবি পোষ্ট করলাম। হতাশাজনক হলেও তেমন কিছু আসলেই করার নাই।
১। ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে
২। তুষার মানব
৩। বাসস্টপে তোমার অপেক্ষায়
৪।প্রাগঐতিহাসিক
৫। চিকচিক করে বরফ, কোথা নাই কাদা-
৬।দুই ধার গহীন বন বরফেতে সাদা
শীত মানে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ, নতুন ক্লাস, নতুন বইয়ের গন্ধ, ভাপা আর পাটিসাপ্টা, হলদে সরিষাফুলের ক্ষেত আরও অনেক পরিচিত ছবি ছিল, আজ না হয় সেসব ছবির ছুটি দিয়ে একটু অন্য ছবিই আঁকলাম।
মন্তব্য
২,৪,৫ বেশ ভালো হয়েছে । ৭ এর ম্যাক্রোটা ঠিক মত হয়ত ফোকাস হয়নি মনে হচ্ছে। আমার এখানে এবার বরফ নিতান্তই কম, তাই আর ক্যামেরা নিয়ে বের হওয়ার উৎসাহ পাচ্ছি না । মাঝে একদিন দুপুরে একটা এইচডিআর এর একটা চেষ্টা নিয়েছিলাম এখানে
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
বোকেহ ছবি আমার তেমন ভাল আসে না । ম্যাক্রো লেন্সও নাই
আপনার ফ্লিকার ঘুরে এলাম। সুন্দর সব ছবি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ধন্যবাদ ফিক্লার ঘুরে আসার জন্য, ১৮-৫৫ এ কিন্তু ম্যাক্রো খুব খারাপ আসে না, আমার এতোদিন ১৮-৫৫ ছিল, রিসেন্টলি একটা ৩৫ মিমি. গিফট পেয়েছি । বোকেহ তোলার জন্য ইউটিউবে কিছু ভিডিও টিপস দেখতে পারেন। ছবি তোলা চলতে থাকুক
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
১৮-৫৫ দিয়ে বকেহ তোলার চেষ্টা করেছি আগেই, ইউটিউব ভিডিও দেখেও। হাত কেপে যায়। ট্রাপোড ইউজ করলে ভাল আসতে পারে। এই ঠান্ডার মধ্যে বাইরে থাকাই যথেষ্ট। এরপর আবার ট্রাইপোড ক্যারি করে ছবি তোলার মত স্থিতিশীল হওয়া সম্ভব না।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
স্নোর মধ্যে আছাড় খেয়ে পড়েই না হয় একখান কাজের কাজ করতা
স্কী করতে গিয়ে অনেকবারই এই মহান কাজটি হয়ে যায়। মেরিকুরি নাকি প্রায় প্রায় আত্মহত্যার চেষ্টা
করতেন।এটা চিন্তা করেছি বার কয়েক। করার মত সেরকম মহান উদ্দেশ্য না থাকায় মহান কাজটা অসমাপ্তই থেকে গেলু।
যাক স্নো দেখার অজুহাতে অনেকদিন পর একটা পোস্ট তো পাওয়া গেলু। ফটুকগুলো ভালু হইছে।
সমান রাস্তায় অহরহই আছাড় খাই, কিন্তু বরফে কেন জানি পড়ি নাই
নামীদামী লোকেরা সুন্দর সুন্দর সুইসাইড নোট পড়লে বিষয়টা ইন্সপায়ারিং মনে হয়, কিন্তু আমার মুরগী হৃদয়ে অত সাহস হবে না কোনদিন, এইটা শিওর।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
কী সুন্দর জীবন তবু মানুষ কেন বলে জীবনে তেমন কিছুই করা হলো না? সব কিছু করার দরকার কী, বলুন? এই যে এত সুন্দর সুন্দর নাম দিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি দিলেন, তবু তেমন কিছু করা হলো না বলবেন?
সুইসাইড নোটগুলো পড়তে পারছি না। আহা! এই একটা জিনিস আমার এত রোম্যান্টিক ঠেকে! কী জানি, কোনোদিন হয়তো নিজেই সুইসাইড করব আর চমৎকার একখান নোট লিখে রেখে যাবো, হাপিস না হলেই হয় অবশ্য
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
জীবনে কিছু করার জন্যই তো সেদিন ক্যামেরা নিয়ে বের হওয়া, ঠান্ডায় শহীদ হলেও তো কিছু না কিছু হবে ।
সুইসাইড ব্যাপারটা আমারও বেশ রোমান্টিক ঠেকে। সুন্দর, সুন্দর নোট লেখে অভিমানী/রোমান্টিক মানুষের পক্ষেই কেবল সুইসাইড করা সম্ভব।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
'তুষার মানব' ছাড়া কোনও ছবি দেখতে পাচ্ছি না!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি তো পাচ্ছি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
৫ নং ছবিটা ভাল হয়েছে।
আপাতত বাস যেখানে, সেখানে তুষারপাত দুর্লভ।
ছেড়ে আসা স্টেটের গত উইন্টারে তোলা এটা :
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বরফ আর রিকশা? প্রাসঙ্গিক নাহলেও মজার
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
" জীবনে ভাল কিছুই করা হল না" এই জিনিস হটাত হটাত মাথায় এসে প্যারা দেয়ার রোগ তাইলে খালি আমার একার না। তবে আলসেমি ঝেড়ে ভাল কিছু করা আর হয় না ভাবা পর্যন্তই। ৫ নাম্বার ছবিটা বেশি ভাল লাগল
কি যে বিরাট এক যন্ত্রণা!!! বেঁচে থাকাই হাঙ্গামা
ধন্যবাদ
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন