সাক্ষাত্ কার

শাহীন হাসান এর ছবি
লিখেছেন শাহীন হাসান (তারিখ: সোম, ২৬/০৫/২০০৮ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাক্ষাত্ কার

- আচ্ছা, আপনি শহরে যান-না কেন?
সুধীজনের- আড্ডাতেও আজকাল, তেমন দেখা যায় না,
দয়া-করে একটু কিছু, বলবেন?

: শহর থেকে আমি নির্বাসিত, তাছাড়া আমার যানবাহন নেই,
গাধার পিঠে করে যেতে হয় বলেই, যাই না শহরে।
- মানে?
: মানে, তেমন কিছু নয় ; আমার নির্বাসনদণ্ডের আরও কতগুলো,
বড় ধরনের কারণ আছে,
- কারণটা আসলে কী?
: নকল কিনা জানি না। শহরে শব্দসংকট, পংক্তিবিকৃতি আর
চিত্রকল্পের লুটপাট চলছে, সবই তো কষ্টকর ; অন্য
কারও কী না, সনাক্ত করা সহজ।

- একটু নিজের কথা বলুন,
মানে জানতে চাচিছ, আপনার লেখালেখির খবর?
: আমি লিখছি, লিখে যাবো... শেষটুকু সময় অবধি ; কিন্তু কী লিখছি?
কেন লিখছি, এটা আমার জ্ঞাতব্যের ব্যাপার নয়।

- যা বলছিলেন, ঐ শহরে যাবার বিষয়টি ...?
: তাছাড়া, বারবার
শহরের বদ্ধমাতালদের স্বীকৃতি দিতে, আর পারবো না,
বলেই যাই না শহরে।
- মাতালদের কথা থাক ; শহরে
ভদ্রলোকেরাও থাকেন?
: ভদ্রলোকেরা নিতান্ত ভালো মানুষ ; মুখ খুলবে না,
গা-বাঁচিয়ে চলবে, এরাই ভদ্রলোক, ভালোমানুষ।
যা কবিতার কাছে, প্রয়োজনহীন!

- আর?
: আর আছেন কিছু ব্যবসায়ি, কথার ; ওরা রঙেরশিল্পী!
মহাভারতের লঙ্কাকাণ্ড বাধানোই
ওদের ব্যবসা।
- আর কেউ?
: আছেন, আরও একশ্রেণীর ;
হাসিটা অমায়িক, সাক্ষাত্ সভ্যতা,
এক-একটা আর্যতন্ত্রের বস্তা ; রাতারাতি
দেশজাতিটাকে উদ্ধার করা সম্ভব! এই তত্ত্বটা বলেই,
সেমিনার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন :
গরমগুড়ের মতো হেটে!
আর মহা-নগরীরর সিঁড়ি ধরে দাঁয়িয়ে থাকেন
দেশের ভাগ্যহত জনগণ, অনার্যমগ হাতে।
বুড়িয়ে নিতে?
এরাই হলেন সুধিজন, বুদ্ধিজীবী এবং যুগপত্ ভদ্রলোক?

- আর আপনি?
: আমি, নির্বাসিত-
শহর থেকে, স্বনির্বাসিত!

- আমার শেষ প্রশ্ন :
আচ্ছা, আর ঐ যে ভদ্রলোক, প্রেসিডেন্ট বুশকে
আপনার কেমন লাগে?
: বড়বিশ্রী গণতন্ত্র!
- আর ...?

: হ্যা, আছেন আর একজন,
অদ্ভুত-টনিব্লেয়ার!
এ শতাব্দীর অন্ধ-বৃটিশঘোড়া ...


মন্তব্য

শাহীন হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ, ধূসর!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

কবিরা স্বনির্বাসিত তো বটেই! স্বনির্বাসনেই কবিতার ভূমি উর্বরতা পায়।

মরুক বিশ্রী গণতন্ত্রের ধারক আর অন্ধবৃটিশঘোড়া!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

মরুক বিশ্রী গণতন্ত্রের ধারক আর অন্ধবৃটিশঘোড়া!
উত্তম! আমিও বলবো সম্মতি ...। ধন্যবাদ।

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

পুতুল এর ছবি

খুব ভাল লাগল, হয়তো একটু রাজনৈতিক কবিতা বলেই!
চলুক এধরণের আরো কিছু লেখা আসুক।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শাহীন হাসান এর ছবি

অনুরোধ রাখার চেষ্টা করবো ...। ধন্যবাদ, পুতুল।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

রণদীপম বসু এর ছবি

'বুশ' শব্দটা কবিতাকে অপবিত্র করে।
অতএব, কবিতাটা ভালো কিন্তু অপবিত্র !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বেশ বক্তব্যধর্মী এবং সমসাময়িক...
বিশেষ করে দুটো নাম এটাকে একেবারেই এই সময়ের বানিয়ে দিয়েছে। নাম দুটো অপ্রত্যক্ষে এলে কেমন হতো তাই ভাবছি।

ধন্যবাদ কবি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শাহীন হাসান এর ছবি

যুদ্ধবাজ আর যুদ্ধের বিপরীতে কলম-সংযত নয়।
ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

মুশফিকা মুমু এর ছবি

কবিতা কঠিন লাগে আর বুঝিনা বলে কখনও কমেন্ট করার সাহস পাইনা, আপনার এ কবিতা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম, মজার হাসি
--------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

শাহীন হাসান এর ছবি

কবিতা কঠিন নয়, ভয়টাই কঠিন করে তোলে।
আবারও সাহস করে পড়ে ফেলবেন ...। ধন্যবাদ।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সেমিনার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন :
গরমগুড়ের মতো হেটে!
আর মহা-নগরীরর সিঁড়ি ধরে দাঁয়িয়ে থাকেন
দেশের ভাগ্যহত জনগণ, অনার্যমগ হাতে।

শাহীন ভাই, খুব ভালো লিখেছেন।

নিঝুম এর ছবি

এই কবিতার টোন আপনার অন্য কবিতার সাথে মেলে না। অন্যরকম। বিষাদ থেকে উঠে আসছেন তাহলে। পড়ে গেলাম যদিও, একটু দেরী করে ।

---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।