বনফুলের প্রেমিক ছিলাম। নীল নাকফুলকে রেখে
কখনো সখনো গিয়েছি
হলুদ লাল কমলা ফুলের কাছে,
আবার ফিরে এসেছি।
তুমি আমার প্রাণ, প্রাণবায়ু।
তুমি আমার প্রেম, স্বপ্ন, অমর একুশে। তুমি স্বাধীনতা।
তুমি হাজার বছরের পুরাতন চর্যার ঝাণ্ডা। তুমি অগ্নিবীণা
সোনার তরী, তুমি আমার রূপসী বাংলা।
একটি সরল মুখ
আর একটি জটিল হৃদয়ের মধ্যে
আমি খুঁজেছি জীবন,
পৃথিবীর
১.
সুধীর আরতি। বেদীতে আসীন হলে দেবী। অর্চণা-
রচিছে তোমাকে ঘিরে বনদীপ, দূরের নক্ষত্ররাজি।
আঙুলে তোমার ফুলোঙ্গুরীয়, আমার হৃদয়ের শেষচিহ্ন,
এ নয় এক জনমের প্রেম, এ নয় এক জনমের হৃদয়!
তোমার কণ্ঠে পুষ্প-জড়োয়া, কর্ণে দুলছে ঝুম্কো,
কোমরে জড়ানো লতার বিছাহার।
সাবধানে পরালাম বনবালা,
কেননা সে তো সূর্যের-আগুন!-
আমার হৃদয় থেকে স্খলিত। সিঁথির শিখরে
তুমি পুষ্পিত-পূজিত পুষ্পাভরণ
তুমি ঈশ্বরের সুন্দরী
কবি বা সন্ন্যাসীর ঘর লাগবে না ভাল তোমার
তাই লিখিত রেখেছি আগেই
কিছু শিশিরের পংক্তি, মুখ ধুয়ে দিতে তোমার
কেননা শিশিরে স্নাত হয়ে পুষ্প ফোটে
সতেজ-শুভ্র হয়ে ওঠে ফুলের সৌন্দর্য
বাতাস আর রোদ, আগেই কথা হয়ে আছে
ঝিরিঝিরি ছায়ার পাতায়
এঁকে দেবে তারা, তোমার মুখের আল্পনা
আর হৃদয়ে এখন আমার তাজা মেহেদির সুগন্ধ
বনদীপ
পাখিগুলো ডেকে উঠে হঠাৎ সান্ধ্যরাগে,
আর কাউকে কী খুঁজতে হবে ?
দূরতম অতীতে কোন অধ্যয়ের উপমা খুঁজতে,
স্মৃতির পথ জুড়ে প্রদীপের খোঁজে খোঁজে
আমি বনভূমির ভেতর দিয়ে হেটে যাচ্ছি একা ...
এই পথটাই কী ঐ কথাগুলোর সাকার চেহারা ?
বনভূমির বিশালবৃক্ষ সূর্যের আলোকেও আটকে রাখতে চায়
তবুও কিছু আলো ঠিক্রে এসে পড়ে বনের গভীরে।
রাতের শয্যাটা সাজাত যে মোমের শিখা জ্বেলে ...
বনবালা
জানিনা কোথায় থাকে সে সুন্দর চোখ জোড়া,
আর সেই হাত জোড়া এখন কার হাতে রাখা ?
বনচুড়ি অথবা বনবালার নকশা আমি পেয়েছিলাম
এক দুপুরের কাছে, অতি আভাসে ইংগিতে --
বনভূমির শূন্য হাতজোড়া আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে
দুপুর বলেছিল, আছে কোন অলংকার তোমার হাতে ?
তখনই শুরু করি খোদাই করতে, আমি সূর্যের আগুন!
তোমার হাতের মাপে মাপে বালার মতো করে
লতার বিছাহার
অজস্র সূক্ষ্মবনফুল লতাগুল্মকে দেখেছি
বনে বনে ঘুরে অনন্ত বারোটি বছর
শুধু পূর্ণতা দিয়েছি হৃদয়কে
এক জনমে যতটুকু সম্ভব
ফোটাতে এই বনফুল
বনলতা নিজের মধ্যে ...
আমি পৃথিবীর পথে রোপণ করিনি টাকার বৃক্ষ
গড়তে আসিনি ইমারত।
এই খ্যাপা, গৃহত্যাগী-হৃদয় ছাড়া
আর কোনো ধন-সম্পত্তি নেই আমার
এ হাতের ইচ্ছার মতো
আমার কালজ্ঞপ্রেম
তোমার কোমল কোমরে জড়াতে চাই ;
খোঁপার জন্য প্রজাপতি-রাতজোনাকি
রোদে আগুনলাগা দুপুরে এখানে এসে বসলে
এক ধরনের প্রজাপতি উড়ে এসে
বসতে চায় মাথায়। আমি তাদের
জায়গা করে দিয়েছি কবিতায়।
আমার কবিতা থেকে এখন
উৎসারিত হতে পারে ঝর্ণা।
উড়ে যেতে পারে প্রজাপতি,
তোমার খোঁপার উদ্দেশ্যে আর
রাতজোনাকির মৃদুঝিলমিল।
কিন্তু নিসর্গকে পড়তে, আয়ত্ব করতে
আমাকে বহুবার জন্মাতে হবে এই নিসর্গে ;
আরও উদ্দিষ্ট-অনুদ্দিষ্টকাল বনে জঙ্গলে-
পত্রমুকুট
ত্রিকোণ আকৃতির কচি পাতায় পাতায়
মাথা ভরে আছে গাছটার।
পথের পার্শ্বেই দাঁড়িয়ে আছে
নিরিবিলি
ঝিরিঝিরি ...
বাতাসও যেন সারাক্ষণ
এক অনুষঙ্গ দিতে চায় তাকে।
আমি ভেবেছি বহুকাল এই মহান শিল্প
কী করে চুরি যায় ? আর
কাকেই বা- তা মানায় ?
স্বর্ণের মতো ঘোর রোদলাগা মুকুট
শুধু তোমাকেই মানায়। কথায় কথায়
বনফুলের নকশি-কাঁথা
এ যাবৎ কাল যত বনফুল
বনভূমি বাগিচায় নিসর্গে দেখেছি
তাদের তিনটি ঢেউয়ে ভাগ করে
আমি থামিয়ে রেখেছি, সবার দৃষ্টির অন্তরালে ...
দুধের মতো ধবল ফুলের হৃদয় এসে
লাল-নীল-কমলা ফুলের ঢেউগুলোকে
পুরোপুরি ঢেকে দিতে চাইলেও -
এক-একটি পৃথক ধারায়
তারা প্রকাশিতই থেকে গেল শেষপর্যন্ত :
যেন বা কোন আবরণ
সূচ সুতোয় সেলাই করে যাওয়া, জড়াবে ?
পৃথিবীর শীতের হাত, দুঃখ ছোঁবে না ;
গোলাপ টিকলি
পথিক ছিলাম শুধু দেখে যেতাম পড়শির বাগানে
ফুটছে প্রতিদিন
কয়েকটি লাল এবং গোলাপি গোলাপ নিশ্চুপ।
মানুষেরও নীরব সৌন্দর্যে, আমি সর্বদাই মুগ্ধ হই!
ফুলের ভারে সে বৃক্ষ এখন নুইয়ে পড়েছে আমার
কবিতার টেবিলে
কচি পাতা আর দেখতে পাচ্ছি তার সবুজ ডালগুলো
অতীত কাঁটাগুলোকে ভালোই লাগছে আমার।
আমার বড়বোন হলুদের দিন গলায় গাঁধা ফুলের মালা
আর সিঁথিচূড়োয় পরেছিল গোলাপের টিক্লি ...