শিশিরের একটা দিন...

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নখুঁজি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৬/১১/২০১২ - ১০:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটু বেলা করে ঘুম ভাঙ্গে শিশিরের। সে যতক্ষণে ঘুম থেকে ওঠে তার অনেক আগেই দৈনিক পত্রিকাটা দরজার নিচ দিয়ে বাসায় ঢুকে যায়। পেপারটা হাতে নিয়ে একটু পাতাগুলো ওলটায় শিশির। পেপার পড়তে তাঁর ভাল লাগে না। শুধু দুঃখের সংবাদ। তাঁর পরেও একটু চোখ বুলায়। হঠাৎ পেপারের একটা অংশে চোখ আটকে যায়। আর সাথে সাথে তার মনটাও বেশ ভাল হয়ে যায়।

শিশির বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাথরুমে ঢোকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। সে একটা জিনিস খেয়াল করেছে, তার কাছে সারাদিনে খুব কম ফোন আসে। দুয়েকটা ফোন যা আসে তার বেশিরভাগই আসে সে যখন বাথরুমে থাকে। সে কোনরকমে বের হয়ে ভেজা হাতে ফোনটা ধরে, ফোনের ওপাশের কণ্ঠ শুনে কথা বন্ধ হয়ে যায় তার। একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে , কয়েকবার হু হু করে ফোনটা রেখে দেয় সে। সে ভাবতেই পারছে না, যার কথা ভাবতে ভাবতে তার দিন কাটে , যাকে ফোন দেবার সাহস হয়ে ওঠে না। সেই নীলা তাঁকে ফোন দিয়েছে। আবার তাকে দেখাও করতে বলেছে । সে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়। না, সময় বেশি হাতে নাই, তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।

ঘোরের মধ্যেই আবার বাথরুমে ঢোকে শিশির। একেবারে ঝকঝকা ফ্রেশ হয়ে বের হল। খুঁজে খুঁজে তার সবচেয়ে ভাল শার্টটা বের করে গায় দিয়েছে। চুলটা ব্যাকব্রাশ করে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল সে। হুমম বেশ স্মার্ট লাগছে তাকে।

মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে সে সিদ্ধান্ত নিলো, আজকে সিএনজি তেই যাবে সে। একে-তো হাতে সময় কম তার ওপর আবার এত সাজুগুজু নষ্ট হবার ভয়। তাই সিএনজি ই ভরসা।
মোড়ের দোকানে চা খেয়ে সামনে এগোল সে। সামনে দাঁড়ানো একটা সিএনজিটা একটু দরদামেই রাজি হয়ে গেল। আজকে তো সবকিছু না চাইতেই হয়ে যাচ্ছে , আজকে দিনটা মনে হয় বেশ ভালই যাবে।

সিএনজি অটো চলছে। আর তার বুক ধুক ধুঁকনি একটু একটু করে বাড়ছে। আজকে সে নীলা কে বলেই ফেলবে কথাটা। নীলা তার সাথেই ভার্সিটিতে পড়ে। শিশির মেয়েদের সাথে ঠিক ওভাবে মিশতে পারে না। কিন্তু ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে মাঝে মাঝে নীলাকে দেখে। দু-একদিন চোখাচোখিও হয়েছে। এর বেশি কিছু না। হাঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। অটোরিকশাটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ড্রাইভার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেটা চালু করার কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ১০-১৫ মিনিট চেষ্টার পর সে ক্ষান্তি দিল।

আধাঘণ্টা ধরে শিশির আরেকটা সিএনজি অটো ঠিক করার চেষ্টা করল কিন্তু ভাগ্য আগের মত প্রসন্ন হল না। ওদিকে সময় ও নাই। তাই শেষমেশ লোকাল বাসই ভরসা। কোনরকম ঠেলেঠুলে বাদুড়ঝোলা হল এক লোকাল বাসে। একে-তো পা রাখার জায়গা নাই তার উপর পথে জ্যাম। ঘেমে একেবারে নেয়ে যাচ্ছে সে। পায়ের উপর আরেকজন পা দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আজকে সকালেই জুতাটা কালি করেছে সে।

শিশির যখন বাস থেকে নামল তখন সে পুরোপুরি বিধ্বস্ত। শার্ট টায় কারো একজনের পাঁচ আঙ্গুলের হাতের ছাপ। জুতাটা যে আজকে সকালে কালি করা হয়েছে সেটা কোনও পাগলকে বললেও বিশ্বাস করবে না। তারপরও সে একটু ঝেড়েঝুড়ে ভদ্র হল। চুলে আঙ্গুল চালাল। জিন্সের প্যান্টের পিছনের একটা পকেটে থাকে একটা রুমাল সেটা বের করে ঘামটা মুছল। পিছনের আরেকটা পকেটে হাত দিল সে। তারপর মাথায় হাত দিয়ে ওখানেই বসে পড়ল।পকেট টা ফাঁকা, গড়ের মাঠ। আজকে নীলাকে নিয়ে দুপুরে কোথাও খাবে একসাথে আর টুকটাক কিছু উপহার কিনে দেবে বলে যা সঞ্চয় ছিল সব মানিব্যাগে ভরে নিয়েই বেরিয়েছিল সে।

টাকা গেছে গেছে, নীলার সাথে তো দেখা হবে , কথা হবে সেইটুকু আশা নিয়ে নীলার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে ফোন দিল সে। নীলা বাইরে বেরিয়ে বেশ বকা ঝকা দিল তাকে। এত দেরি করার জন্য। সে নাকি বুদ্ধুই থেকে গেল। নীলা তাকে বিল্ডিং এর ভিতর যেতে বলে। ভিতর যেতে যেতে ছোট একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ে শিশিরের। সেখানে লেখা ‘কাজি অফিস’। শিশির ভিতরে ভিতরে শিউরে ওঠে । নীলা যে ভিতরে ভিতরে এতদূর ভেবে রেখেছে তাকে নিয়ে সে ভাবতেই পারেনি। নীলা ঠিকই বলেছে, সে আসলেই একটা বুদ্ধু।

কাজি অফিসের ভিতর গিয়ে শিশির দেখে আরও কয়েকজন দাড়িয়ে। সে মনে মনে নীলাকে ধন্যবাদ দেয়। আসলেই এই মেয়েটা বুদ্ধিমতি, আগেভাগেই সব সাক্ষীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। এরমধ্যে একজনকে ডেকে নীলা শিশিরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ছেলেটার নাম শুভ্র। খুব স্মার্ট। নীলা আনন্দিত চিত্তে জানাল শুভ্রর সাথে কিছুক্ষণ পর তার বিয়ে । অচিরেই শিশির নিজেকে অন্যতম একজন বিয়ের সাক্ষী হিসেবে আবিষ্কার করল। নীলার খুশি খুশি মুখের দিকে তাকিয়ে শিশিরের আবার মনে হল, সে আসলেই একটা বুদ্ধু।

নীলা শুভ্র কে বিদায় দিতে দিতে বেলা বেশ গড়িয়ে গেছে। সাধারণত সিগারেট খায় না সে, কিন্তু আজ কি হল, সে রাস্তায় নেমে টং দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরাল সে। সকালের পেপারের যে অংশটা দেখে মনটা ভাল হয়ে গেছিল সেটা চোখের সামনে ভেসে উঠল,

আজকের রাশিফল। যেখানে তার রাশির পাশে লেখা ছিল, “...যাত্রা শুভ। অকস্মাৎ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। রোমান্স ও বিনোদন শুভ......।।”


মন্তব্য

স্বপ্নহারা এর ছবি

লেখা ভাল লাগছে বন্ধু, খালি শিশির এত দূরের মানুষ হয়ে বিয়ের কথা কেম্নে ভাবলো এইটা খুব কাঁচা হয়ে গেছে!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত-

''নিন্দুক''

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

আমিও সহমত-এইটা আসলেই খুব কাঁচা হয়ে গেছে!

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

ধন্যবাদ বন্ধু।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আহারে!

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

palash এর ছবি

অনেক পুরান গল্প ! ৩ টা নাট্ক অ দেখেচি এই কাহিনির !!!

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

বাহ ! আপনি তো অনেক নাটক দেখেন। আমিও জানি গল্পটা একটু পুরানো ধাঁচের । এখানে আসলে রাশিফলের ব্যপারটা সামনে আনতে চেয়েছিলাম।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

জুন এর ছবি

শিশিরের না মানিব্যাগ হারাইল? সিগ্রেট কিনল কী দিয়া? চিন্তিত

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

সামনের দুইটা পকেটের কোন একটা তে কিছু খুচরা টাকা ছিল বোধহয়।

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

ধন্যবাদ ।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

শিশিরের জন্য মন খারাপ

স্বপ্নখুঁজি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।