ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ার সময় একবার বেশ বেকায়দায় পড়েছিলাম এক বন্ধুকে বই ধার দিয়ে। ওর বাবা ছিলেন আমাদের হাইস্কুলেরই শিক্ষক। বেশ হুজুর টাইপের মানুষ। তিনি গল্পের বই পড়া পছন্দ করেন না, পছন্দ করেন না টিভি দেখা। এমনকি খেলাধূলাও তার ভীষণ অপছন্দের। কারণ এগুলো নাকি ইসলামবহির্ভূত! যাই হোক, আমার বন্ধুও চুরি করেই বই পড়ত। সায়মুম সিরিজের বইগুলো ওর বিশেষ পছন্দের তালিকায় ছিল। তবে ওয়েস্টার্ণ আর মাসুদ রানা-ও পড়ত অনেক। আমি ছিলাম ওর মাসুদ রানা-র মূল যোগানদাতা। "জাপানী ফ্যানাটিক" বইটা নিয়েছিল ও আমার কাছ থেকে। তারপর যে কোন ভাবেই হোক, পড়তে গিয়ে ধরা খেয়েছিল বাসায়। হঠাৎ একদিন সকালে দেখি স্যার (বন্ধুর বাবা) বাজারে যাওয়ার পথে আমাদের বাসায় এসে হাজির। তিনি মাসুদ রানার ওই বইটা নিয়ে আব্বুকে নালিশ জানিয়ে গিয়েছিলেন কেন আমি তার ছেলেকে বিপথগামী করছি!
প্রথম পড়া মোটাতাজা বই হলো সমরেশ মজুমদারের "গর্ভধারিণী"। অসাধারণ লেগেছিল। পড়ার পর নিজেকে কেমন বিপ্লবী/সংগ্রামী মনে হতো তখন। তবে শীর্ষেন্দুর "দূরবীন" আমার পড়া অন্যতম শ্রেষ্ট একটা বই। এতো ভালো খুব কম বই পড়েই লেগেছে আমার। এতটাই ভালো লেগেছিল যে নিজেকে তখন ধ্রুব হিসেবেই কল্পনা করতাম! ততোদিনে স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠেছি। পড়লাম সাতকাহন-১,২। প্রথমটা যতটাই ভালো লেগেছে দ্বিতীয়টা পড়ে মেজাজ খারাপ হয়েছে তার চেয়েও বেশি! এরপর "পার্থিব" বইটাও ভালো লেগেছে অনেক। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বুদ্ধদেব বাবুর "মাধুকরী" শেষ করতে পারিনি। পছন্দের তালিকায় রয়েছে আরো অনেক বই। সব নিয়ে বলতে গেলে এক পোস্টে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। পরে কখনো আলাদা করে বলা যাবে না হয়।
মাঝখানে একবার হুজুগ উঠল ইংরেজে বই পড়তেই হবে! তখন আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে। ধরলাম অরূন্ধুতী রায়-এর "দ্য গড অভ দ্য স্মল থিংস"। বেশ কিছুদিন ভাব দেখিয়ে পড়েছিলাম কয়েক পৃষ্ঠা। নিজেকে তখন কি না কি মনে হতো! ইয়ো, আমি ইংরেজি বই পড়ি! অথচ সেই ভাব খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। কারণ দাঁতভাঙা খটমটে বর্ণনার কারণে বেশিদিন তা পড়তে পারলাম না। এখনো বইটা পড়ে শেষ করতে পারিনি। স্যরি অরূন্ধুতি দিদি, সেই প্রথমবার যতটুকু পড়ে রেখে দিয়েছিলাম এখনো তারচেয়ে বড়জোর দুই কি চার পৃষ্ঠা বেশি ছাড়া আর পড়তে পারিনি, ক্ষমা করে দিও! বেঁচে থাকলে কখনো শেষ করব, আশা রাখি। তবে প্রথম যে ইংরেজি বইটা শেষ করেছিলাম তা হলো সিডনী শেলডনের "ইফ টুমরো কামস্"। অসাধারণ লেগেছিল! এরপর একে একে আরো কিছু সিডনী শেলডন পড়ে ফেলেছিলাম। হালকা মেজাজের এই সহজ ভাষায় লেখা বইগুলো সময় কাটানোর জন্য আসলেই খুব চমৎকার। তবে যে ইংরেজি বইটা সবচেয়ে মনে দাগ কেটেছে তা হলো ড্যান ব্রাউনের "দ্যা দা ভিঞ্চি কোড"। আইইউটিতে তখন আমার সেমিস্টার ফাইনাল চলে। আর আমি পাগলের মতো খালি এই বইটা পড়ি। অডিটোরিয়ামে (আমাদের পরীক্ষার হল) বসে পরীক্ষার মাঝখানে রবার্ট ল্যাংডন খালি ডাকাডাকি করে। হাস্যকর শোনালেও, আমি শুধুমাত্র বইটা পড়ার নেশায় কোনমতে পরীক্ষা শেষ করে কয়েক মিনিট হাতে রেখে খাতা জমা দিয়ে রুমে চলে আসতাম ছুটে। ভাবটা এমন যে আমি না পড়লে যেন ল্যাংডন আদৌ পাজলগুলো সমাধান করতে পারবে না! বইটা যে কি পাগলই না বানিয়ে ছেড়েছিল আমাকে! আর সদ্য পড়া ঝুম্পা’র "হোয়েন মিঃ পীরযাদা কেইম টু ডাইন" গল্পটাও দারুন লেগেছে অনেক। অনেক ছুঁয়ে দিয়েছিল গল্পটি। এরপর বাকি গল্পগুলো পড়ার জন্য "ইন্টারপ্রীটার অভ ম্যালাডীজ" বইটা অনেক খুঁজলাম নেটে, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত পেলাম না কোথাও।
২০০৬ এর ডিসেম্বরে পড়লাম সুচিত্রার "কাছের মানুষ"। বইটা পড়ার শখ ছিল অনেক দিনের। এই বইটা কিনতে গিয়েও এক বিশাল কাহিনী। পিতাজীর ইচ্ছা পূরণের জন্য গিয়েছিলাম বুয়েটে মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষা দিতে। সকালে পরীক্ষা শেষে নীলক্ষেতে গেলাম কয়েক বন্ধু মিলে। ওখানে হঠাৎ মাথায় চাপল যে "কাছের মানুষ" বইটা কিনব। রাস্তার উপরের যেখানে আমি বইটা কিনতে গিয়েছি, একটা মেয়েকে দেখলাম অনেকগুলো বই নিয়ে দোকানদারের সাথে দামাদামি করছে। আমি সেই ললনার সাহায্য প্রার্থনা করলাম নীলক্ষেতে আমার বই কেনার অনভিজ্ঞতার (!) কথা বলে। আমার দেখাদেখি মেয়েটিও তখন "কাছের মানুষ" বইটা বেছে নিল। দোকানদারকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে যেহেতু ও এতগুলো বই কিনবে, তার উচিৎ দাম আরো কমানো। মেয়েটা আমাকে বেশ সাহায্য করেছিল বইটা কেনার ব্যাপারে। দুইতিন’টা দোকান ঘুরে ঘুরে আমরা বইটা কিনেছিলাম। দূরে দাঁড়ানো আমার বন্ধুগুলো পরে অবশ্য মজাদার সব মন্তব্য করতে ছাড়েনি! যাই হোক, কাহিনী থেকে সরে যাচ্ছি, এই কাহিনী আরেকদিন শোনানো যাবে।
এরপর একদিন হঠাৎই অনুভব করলাম তিন গোয়েন্দার অনেক কাজকারবার হাস্যকর লাগে, মাসুদ রানা’র মানও মনে হল নেমে গেছে অনেক, অনুবাদ্গুলোও কেমন যেন আর টানে না আগের মত। কষ্ট পেয়েছিলাম অনেক। দীর্ঘজীবনের বাঁধন মনে হল নড়বড়ে হয়ে গেছে, কোথায় যেন সুরটা কেটে গেছে। অথচ একটা সময় ছিল যখন মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়তাম এই বইগুলোই। মাসুদ রানা-র "অগ্নিপুরুষ", "আই লাভ ইউ ম্যান", "সাউদিয়া ১০৩" বইগুলো এক সময় মনে দারুনভাবে দাগ কেটেছিল, অসংখ্যবার পড়েছি। কিন্তু এখনকার বইগুলোর মান কেন যেন মনে হয় আগের চেয়ে অনেক নেমে গেছে! যাই হোক, এক পর্যায়ে খুব কষ্ট লাগতো যখন অনুভব করতাম ধীরে ধীরে কখন যেন পাঠকের প্রায় মৃত্যু ঘটে গিয়েছিল! এমন সময়ে, এই মুমূর্ষূ অবস্থায় মুখে পানি তুলে দেয়ার কাজটা করল সচলায়তন! অনেকদিন বাদে আবার নিয়মিত পড়ার অভ্যাসটা নতুনভাবে গড়ে উঠেছে। সচলায়তনের মানুষগুলোও অনেক মুক্তমনা, আধুনিক, সচেতন আর রুচিশীল। তাই চেনা-অচেনার গন্ডী পেরিয়ে লেখক হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, মানুষ হিসেবে এদেরকে অনেক আপন, অনেক কাছের কেউ মনে হয়। সব মিলিয়ে তাই সচলায়তন আর এর সদস্যদের প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!
শেষকথাঃ (গত পর্বের শেষ থেকে দ্বিতীয় প্যারায় উল্লেখ করা) সেই বুকশেলফটা এখন কয়েকশ মাইল পেরিয়ে ঢাকার বাসায় আমার ঘরে স্থান পেয়েছে। মনে আছে, এটা আমার ঘরে রাখা নিয়ে আম্মার সাথে কিছুটা আর্গুমেন্ট হয়েছিল। আমি চাচ্ছিলাম না তখন এটা আমার ঘরে রাখতে। কিন্তু এখন আমি নিজেকেই ধন্যবাদ দেই তখন জোরাজুরি করে এটাকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে না দেওয়াতে। কারণ যতবার আমি বুকশেলফ-টার দিকে তাকাই, যতবার আমি এর ভেতরে রাখা বইগুলো দেখি, ততবার আমার ভেতরে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। পুরোন হয়ে যাওয়া সব বই-এর কাগজগুলোর বুকে ছাপা গুটি গুটি কালো অক্ষরগুলো যেন আমার আত্মার সাথে এক অদৃশ্য সেতুবন্ধন তৈরি করে। আমিও তখন দিন-কাল-স্থান ভুলে চলে যাই আমার ফেলে আসা দিনগুলোতে।
মন্তব্য
লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছিলো বই পড়া নিয়ে আমার জীবনের গল্পগুলোর ধারাবিবরণী শুনছি। খুব ভাল লাগল।
তিন গোয়েন্দার মান নেমে যাওয়ার কারণ বোধহয় রকিব হাসানের লেখা ছেড়ে দেয়া; ভলিউম ৪০ অথবা ৩৮ এর পর সব লেখাই অন্য রাইটারের লেখা; কাভারে নাম ছিল রকিব হাসান। সেবা চাচ্ছিল অন্য সব রাইটারের লেখার মান পাঠকের অজান্তে পাঠক থেকে যাচাই করে নিতে। এছাড়া বয়সের একটা প্রভাব তো থাকেই।
আমি ক্লাস টেনের পর খুব একটা সেবা পড়িনি; তিন গোয়েন্দা পড়েছি ৫০ ভলিউম পর্যন্ত। মাসুদ রানা শখানেক। মাসুদ রানার সাগর সঙ্গম আর লেনিনগ্রাদ, উ সেনের বই গুলো বেশ ভাল লেগেছিল।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
পুরো একমত। তবে আমার কাছে মনে হয় 'সেবা' এমন কাজ না করলেও পারত। মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা এগুলো তো কাজী আনোয়ার হোসেন আর রকিব হাসানের অসাধারণ সৃষ্টি। এভাবে শুধু শুধু বই বিক্রির অন্য লেখককে দিয়ে লিখিয়ে নিজের নামে ছাপানোটাকে আমি মোটেও সমর্থন করতে পারিনি।
সময় নিয়ে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
দ্যা দ্যা ভিঞ্চি কোড আমার মনেও দাগ কেটেছিল দারুন ভাবে।
আমারো আর আগের মতো বই পড়া হয় না। মুভি দেখি প্রচুর। আর পাঠাভ্যাসটা পুনর্জীবন পেয়েছে সচলায়তনে এসে।
আপনার লেখা অনেক কিছু মনে করিয়ে দিল। ধন্যবাদ আপনাকে ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমিও প্রচুর সিনেমা দেখি। ভাবছি 'এবং সিনেমা' টাইপের কিছু লিখে ফেলতে পারি এরপর
আপনাকেও ধন্যবাদ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আমার প্রথম কঠিন বাংলার বই পড়া শীর্ষেন্দুর "দূরবীন"। দেশ থেকে এক ফ্রেন্ড গিফ্ট করেছিল বইটা, প্রথমে পড়ার চেষ্টা করে দেখি কিছুই বুঝিনা, ভাবলাম ধুর এটা কি দিল। তারপর পরেরবার দেশে যাওয়ার আগে আগে ভাবলাম দেশে গেলেইতো ধরবে যে পড়লাম কিনা তাই আবার চেষ্টা করলাম, তখন এতই ভাল লাগল যে পুরোটা শেষ করলাম। শেষ করে আমার যে কি আনন্দ লাগছিল যে জীবনে প্রথম এত বড় একটা বই আমি পড়ে শেষ করে ফেললাম। খুব বরাই করলাম কিছুদিন এটা নিয়ে, তারপর কয়েক বছর পর সাতকাহন ১,২ পড়লাম। তারপর এবছর পড়লাম কালবেলা। সবগুলি প্রচন্ড ভাল লেগেছে।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
দূরবীন বইটা আসলেই অসাধারণ। যতবার পড়ি ততবারই ভালো লাগে। কালবেলা-টাও সুন্দর। তবে সাতকাহন-২ আমার ভালো লাগেনি।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
লেখা ভাল লাগল । প্রথম আলো , পূর্ব পশ্চিম কই ? পড়েন নাই, নাকি ভাল লাগে নাই ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আশ্চর্যজনকভাবে এই বইগুলো পড়া হয়ে ওঠেনি এখনো! তবে অসাধারণ এই বইগুলো পড়ার খুবই ইচ্ছা আছে। পড়ে ফেলব খুব তাড়াতাড়ি। সেদিন পূর্ব পশ্চিম কিনতে গিয়ে বিশাল এক মজার কাহিনী হয়ে গেছে। পরে লিখব ভাবছি
ধন্যবাদ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
সেই সময়, প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম, কালপুরুষ-কালবেলা-উত্তরাধিকার, অর্ধেক জীবন, একা এবং কয়েকজন, আট কুঠুরি নয় দরজা, ফুলের দেশে কবিতার দেশে, অগ্নিরথ পইড়া ফালাও তাড়াতাড়ি ... দুই দিনের দুনিয়া
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
ভালো কথা, আমার ইফ টুমরো কামসটা কে জানি গাপ কইরা দিছিলো আইইউটিতে ... সেইটাই তোমার কাছে যায় নাই তো
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
হুমম, পইড়া ফেলাবো তাড়াতাড়ি। কয়েকটা পড়া এর মধ্যে। আসলেই দুই দিনের দুনিয়া
ইফ টুমরো কামস-টা আমি নিসিলাম শাকিলের কাছ থেকে। ওরে জিগায়া দেখতে পারো তোমারটাই ওর কাছে ছিল, নাকি ওইটা ওর নিজেরই ছিল। আমি ফেরত দিসিলাম পড়া শেষ কইরা
অফটপিক: এডি আংকেলের ইনটু দা ওয়াইল্ড-এর সাউন্ডট্র্যাক নামাইসি, তুমি যে লিংক দিসিলা (জিহাদ না রায়হান, কারে যেন)। আংকেল তো জটিল কাম করসে! খুবই ভাল্লাগসে। মাঝে মাঝে অনেক সিনেমা বা টিভি সিরিয়ালে জটিল জটিল সব গান শুনি। এইগুলা কোত্থেকে পাওয়া যায় বলো তো! তাইলে ফ্রী নামায়া নিতাম
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
অনেক মিল পেলাম। দূরবীন খুব ভাল লেগেছে। প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম ভোলার মত নয়। সারা জীবন মনে থাকবে যে এই বইগুলো পড়েছিলাম। একাধিক বার পড়ার মত।
আমাকেও ইংরেজি বই পড়া শিখিয়েছে ড্যান ব্রাউন। অবশ্য ভিঞ্চি কোডের বাংলা অনুবাদই পড়েছিলাম। বাকি তিনটা ইংরেজিতে পড়েছি।
কল্পবিজ্ঞান নিয়ে খুব একটা লিখেননি। আসিমভ, আর্থার সি ক্লার্ক বা কুর্ট ভনেগাটের আইডিয়াগুলো অসাধারণ। গল্প বলার ধরণও খুব সুন্দর। সব সময়ই ভাল লাগে। ভনেগাটের "স্লটারহাউজ-ফাইভ" কয়েকদিন আগে পড়লাম। খুব ভাল লেগেছে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
ভিঞ্চি কোডের ইংরেজিটা সময় পেলে পড়ে নিও। বাংলা অনুবাদগুলো কেন যেন আমার ঠিক ভাল্লাগে না।
হ্যাঁ, সায়েন্স ফিকশন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। আসলে প্রচুর বই পড়তাম এক সময়। সবগুলোর নাম তাই উল্লেখ করা হয়নি।
স্লটারহাউজ-ফাইভ পড়িনি। দেখি, পেলে পড়ব কখনো।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
অনেক কিছু মিলে গেল। তবে আমি মাসুদ রানা পড়ি নাই কখনো। ফাহিম ভাই যেগুলা বলছে তাড়াতাড়ি পইড়া ফ্যালেন। দুই দিনের দুনিয়া। আর পড়বেন বিভূতিভূষণ। এনার মত বাংলা পৃথিবীতে আর কেউ লেখতে পারে না। আমার ইংলিশ বই পড়া শুরু হইছিল কেন ফলেটরে দিয়া। বসরে চরম লাগত। সিডনী শেলডন কয়েকটা ভাল্লাগছে। ব্যাটারে আমার হুমায়ুন আহমেদ মনে হয়।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
তুমিও কিছু মাসুদ রানা পড়ে ফেলো! দুই দিনের দুনিয়া।
তোমার কথার সাথে একমত, সিডনী শেলডন আসলেই হুমায়ূন আহমেদের মতো। তবে আমি এদের একটা কৃতিত্ব সবসময় দেই, টাইম-পাস মার্কা বই লিখলেও এরা কিন্তু পাঠক তৈরি করেছে প্রচুর।
কেন ফলেটের একটা বই-ই পড়েছি। দা ম্যান ফ্রম সেইন্ট পিটার্সবার্গ। বাংলাতে এটার অনুবাদ বের হতো আগে রহস্য পত্রিকায়, অনেক আগে। আততায়ী। দু'একটা পর্ব পড়েছিলাম, মূল বইটা পড়ার আগ্রহ তখন থেকেই জন্মায়। তবে সত্যি বলতে, খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে গিয়ে একটু হতাশ হয়েছিলাম। কয়েক জায়গায় মনে হয়েছে যেন বাংলা সিনেমার কাহিনী!
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
হুঁম, ইংরাজীগুলে ছাড়া বাংলা সবগুলেই মন্তব্যে উল্লেখিতগুলোসহ কেমনে জানি পড়া হইয়া গেছে। তো বছর ছসাত হবে, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র আমার এক ছোট ভাই, যে এখন একটা কলেজের ডাকসাইটে ইংরেজি অধ্যাপক, আমাকে অরুন্ধতির দ্য গড অফ স্মল থিঙ্কস দিলো পড়তে। সে দাঁত ফুটাতে না পেরে আমাকে বিশাল পণ্ডিৎ জাতীয় কিছু ভেবে আমাকেই ওটা গিফট দিলো। হা হা ! আমার আলগা ভাব মনে হয় সে বুঝতে পারে নাই, আমি যে ইংরেজি দেখলেই দশ হাত তফাৎ দিয়া হাঁটি। সে বইটা এখনো বুক সেলফে। দেড় পৃষ্ঠার বেশি আগায় নি। আগাতে পারবো, তাও বিশ্বাস হয় না।
যাক, বই এর এই পোস্টটা ধারাবাহিক চালিয়ে যেতে পারেন। এতে পুস্তকস্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ হয়ে ওঠে।
এখন কি মাসুদ রানা বেরোয় ? স্কুলে থাকতে ভাড়ায় মাসুদ রানা এনে পড়তাম আর পরবর্তীটার জন্য কী প্রতীক্ষা নিয়ে বসে থাকতাম। তখন কাজী আনোয়ার হোসেনের রক্তে যৌবন ছিলো, এখন বার্ধক্য, এ জন্যেই পরের মাসুদ রানা আর উৎড়াতে পারছে না বলে মনে হয়। অন্যকে দিয়ে লেখানোও অন্যতম কারণ হতে পারে।
পরিশেষে ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দা গড অভ দা স্মল থিংস সম্পর্কে ঠিকই বলেছেন। আমি বেশ কয়েক পৃষ্ঠা পড়েছিলাম, কিন্তু শেষ করতে পারিনি আর। মাসুদ রানা সম্পর্কেও ঠিক বলেছেন। এখনকার বইগুলো হয়ত এখনকার স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা পড়ে, আমাদের পক্ষে আর ওগুলো পড়ে হজম করা সম্ভব নয়! মান অনেক নেমে গেছে, কাজীদা নিজেও লেখা কমিয়ে দিয়েছেন অনেক।
পোস্টটা যে ভাই এ পর্বেই শেষ করে দিলাম! তবে চাইলে লেখা যেত আরো অনেক কিছু। দেখি, পরে না হয় আবার কন্টিনিউ করা যাবে
মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আচ্ছা আজকাল আর কেউ আশাপূর্ণা দেবী'র "প্রথম প্রতিশ্রুতি" ট্রিলজি, গজেন্দ্রকুমার মিত্রের "কোলকাতার কাছেই" ট্রিলজি, গৌরকিশোর ঘোষের "প্রেম নেই" ট্রিলজি, অচিন্ত্যকুমার সেনের "নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে" ট্রিলজি - এসব পড়ে না? আমি মনে হয় আসলে ডাইনোসর যুগের, ডিনায়ালে থাকি বলে খেয়াল থাকে না
গড অফ স্মল থিংস, ভিঞ্চি কোড, ইফ টুমরো কামস এগুলো একেকটা একেক সময়ে পড়া, কিন্তু প্রত্যেকটাই খুব ভালো লেগেছিলো।
এই পোস্টটার জন্য কতজনের কতরকম বই কাহিনী জানা যাচ্ছে! খুব ভালো ব্যাপার
স্নিগ্ধাপু, সত্যি কথা বলতে আপনি যে বইগুলোর নাম বললেন, ওগুলো পড়া দূরে থাকুক আমি নাম-ও শুনিনি! তবে এটা কিন্তু আপু আমারই ব্যর্থতা
ডায়নোসর যুগ! মজা পেলাম!
আসলেই, অনেকেই কমেন্টে তাদের ছোটবেলার বই পড়ার কাহিনী শুনিয়েছেন। লেখার আগে এটা মাথায় আসেনি, শুধু নিজের কাহিনী বলার জন্যই লিখেছিলাম। কিন্তু পরে সবার কাহিনী জেনে নিজেরও অনেক ভালো লেগেছে। এখন মনে হচ্ছে পোস্টটা আরো কয়েক পর্বে লিখলে হয়ত আরো অনেকের অনেক কাহিনী জানা যেত।
দু'পর্বেই আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগল
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও তাহলে ডাইনো-যুগের ৷ আমি ঐ সবকটাই মোটামুটি ক্লাস এইট থেকে টেন এর মধ্যেই পড়েছি ৷ না: একটু ভুল বললাম ৷ "প্রথম প্রতিশ্রুতি' সেভেনে পড়েছিলাম৷ বাকীদুটো পরে ৷ ছোটবেলা মানে তো ভোম্বোল সর্দার, বাবুইবাসা বোর্ডিং, কাগ নয়, হলদে পাখির পালক, টংলিং, মনোজদের অদ্ভুত বাড়ী, কাপালিকরা এখনও আছে, বাংলার ডাকাত (৪ খন্ড), সোনার কেল্লা, বাদশাহী আংটি --- আহা কিসব সোনামাখা দিন ছিল ৷
ইয়ে, "নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে আর "অলৌকিক জলযান' অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ৷ আর অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর বিখ্যাত বই হল "প্রথম কদম ফুল' ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ দময়ন্তী!! দেখলেন তো, এমনকি ভীমরতিও শুরু হয়ে গ্যাছে কল্লোল যুগের একের নাম অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছি! 'বাংলার ডাকাত' কিন্তু আমি পড়িনি, কার লেখা?
আর লীলা মজুমদার? ইসসসসস, আমার কি ই ই ই যে প্রিয় তিনি!!! তাঁর লেখা 'বড়দের' উপন্যাস/গল্পগুলো পড়েছেন?
আচ্ছা 'নীলকন্ঠ ..." ট্রিলজি ছিলো না? অলৌকিক জলযানের বোধহয় দু'টো খন্ড ছিলো, তাই না? নাকি এখানেও আমার ডাইনো-মগজ ফাজলামো করছে?
সত্যি! আমার তো প্রায় ভীমরতি ধরার বয়স হয়েই এলো ৷
উফ্ ছোটবেলার বইয়ের কথা (ইন ফ্যাক্ট বইয়ের কথা) শুরু করলে আমি আর থামতেই পারব না ৷ লীলা মজুমদারের বড়দের বই কিছু কিছু পড়েছি, সব নয়৷ এখন তো রচনাবলী বেরোচ্ছে ৷ ঐটা কিনব ৷ বড়দের বইয়ের মধ্যে "বাঁশের ফুল পড়েছি ৷ সেই অবিস্মরণীয় লাইনগুলো "সুখ কি? দু:খ দেবার লোক না থাকাই সুখ ' ৷ আহা! অমন করে আর কাউকে বলতে দেখলাম না স্নিগ্ধা ৷ আর "আর কোনোখানে' আর পাকদন্ডী আমার বড্ড বড্ড প্রিয় ৷
"বাংলার ডাকাত' - যোগেন্দ্রনাথ দত্ত (দত্তই বোধহয়) র লেখা ৷ আর আমার তো মনে হচ্ছে আমি হোঁত্কা মোটা একখান বইই পড়েছিলাম "অলৌকিক জলযান' এর ৷ তবে এমনও হতে পারে আসলে দুই খন্ড কিন্তু কোন প্রকাশক একসাথে বের করেছে আর আপনি সেইটে পড়েছেন ৷ যেমন "মৈত্রেয় জাতক' এখন অখন্ড পাওয়া যায় ৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
হুঁ, 'অলৌকিক জলযান' বেশ স্বাস্থ্যবানই ছিল। তবে পরেরটা সম্ভবত 'ঈশ্বরের বাগান', যেখানে জল সম্পর্কিত কোনও ব্যাপার-ট্যাপার নেই:-) লেখক এখানে আর্চির ভূত ঘাড়ে বয়ে চলা ফ্যাকট্রি ম্যানেজার। যদিও আমি যে এডিশনটা পড়েছিলাম তাতে 'মানুষের ঘরবাড়ি' বলে আরেকটা গপ্পোও জুড়ে দেওয়া ছিল। তবে শেষমেশ আমার ওই নীপাখোঁ-র প্রথম পার্টটাই (প্রি-৪৭, নাকি ৪৬?) সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে।
প্রথম প্রতিশ্রুতি ট্রিলজি, কলকাতার কাছেই ট্রিলজি পড়েছি। নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে শুরু করেছিলাম। ক্ষ্যান্ত দিলাম- বাপরে বাপ ! এতো বর্ণনা... অতীন বাবুর লেখা ওখানেই শেষ !
অতীন বাবুর একটা বইয়ের নাম ঈশ্বরের বাগান কিনা মনে করার জন্য গুগলে সার্চ দিলাম। এই লেখাটা বের হয়ে আসলো। আপনার মন্তব্য দেখে আরেকটা মন্তব্য করলাম আর কী !
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
অতন্দ্র প্রহরী,
আমিও ঐ ডাইনো-যুগের লোক ৷ আপনার লেখা পড়ে বেশ লাগল, একটু মজাও পেলাম কত্ত বড় হয়ে গেছি ভেবে৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
হাহাহা। আপনার কথাতেও মজা পেলাম। প্রচুর ভালো বই পড়েছেন আপনি। এটার আসলেই খুব দরকার যে কোন কারোরই। বই একটা মানুষকে আসলেই পুরো বদলে দিতে পারে, গড়ে তুলতে পারে আদর্শ মানুষ হিসেবে।
তবে আমার লেখার দু'পর্বেই সত্যজিত রায়ের কথা একদমই উল্লেখ করা হয়নি। মাত্র মনে পড়ল। বিশাল ভুল হয়ে গেছে। সত্যজিতের আমি বিশাল ভক্ত। একসময় পাগলের মতো ফেলুদাসহ ওঁর অন্য বইগুলো পড়তাম। মফস্বলে থাকতাম। এক সাংবাদিক ভাই ছিলেন যার ছিল বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। আমি অনেক সকালে তার বাসায় গিয়ে হানা দিতাম এবং তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে কয়েকটা করে সত্যজিতের বই নিয়ে আসতাম। এতদিন পরে হঠাৎ করে তাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে কারণ তিনি কখনো বিরক্ত হতেন না, এবং আমার পাঠোভ্যাস গড়ে ওঠার পেছনে তার-ও কিছুটা হাত রয়েছে।
আপনি সময় নিয়ে পড়েছেন জন্য অনেক ভালো লাগল। কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
কাছাকাছি বয়সীদের পড়ার ধাঁচ অনেকটা একভাবেই গড়ে ওঠে দেখি। ভাল লাগলো।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমার সবচেয়ে প্রিয় কয়েকটি বই:
পারাপার-শীর্ষেন্দু
কবি-তারাশংকর
চৌরংগী-শংকর
কত হাজার বার পড়েছি, তারপরেও পড়তে গেলে চোখ ভিজে আসে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
আমার সবচেয়ে প্রিয় কয়েকটি বই:
পারাপার-শীর্ষেন্দু
কবি-তারাশংকর
চৌরংগী-শংকর
কত হাজার বার পড়েছি, তারপরেও পড়তে গেলে চোখ ভিজে আসে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
নতুন মন্তব্য করুন