পূর্বকথা:
দু’দিন আগে, ফোনটা পেলাম সকালের দিকে।
- ঐ মিয়া, ফ্রী আছ? চল আজ বসুন্ধরা সিটিতে যাই।
- হ্যাঁ, ফ্রী আছি বলা যায়। ঈদের শপিং?
- এই আর কি। আগে চলই তো। বাইরে একসাথে ইফতারও করলাম, আবার শপিংটাও হয়ে যাবে এই ফাঁকে।
“ওই চাপা মারিস কেন! বল যে মেয়ে দেখতে যাবি বসুন্ধরা সিটিতে”, পাশ থেকে ফোঁড়ন কাটে আরেক বন্ধু। ফোনের ওপাশে দু’জনকে এ নিয়ে হাসিমুখে কথা চালাচালি করতে শুনি।
খুব দ্রুত মাথায় কিছু হিসেব কষে নিলাম। মন খারাপ, বাসায় বসেও এমন আহামরি কোন হাতি-ঘোড়া মারছি না, বাইরে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটালে হয়ত ভালই লাগবে, এইবার আবার এখনো ঈদ মার্কেটে যাইনি, আর এর সাথে উপরি হিসেবে তো ‘বসুন্ধরা সিটি’ আছেই!
(১) ইফতার পর্ব
ঠিক হল ৪:৩০ এ কারওয়ান বাজারের স্টার কাবাবে সবাই দেখা করব। মোট চারজন। আমার অফিস যদিও ছুটি, ওদের অফিস আছে। দু’জন আসবে টঙ্গী থেকে, একজন গুলশান থেকে। আমার নামে সাধারণত একটা বদনাম প্রচলিত আছে, আমি নাকি কোথাও গেলে দেরি করে যাই! ডাহা মিথ্যা কথা! আর এর প্রমাণস্বরূপ দেখা গেল সবার আগে আমিই গিয়ে হাজির (যদিও গিয়েছি আধা ঘন্টা দেরিতে! হাহাহা), বাকিরা তখনো লাপাত্তা! স্টার কাবাবের বাইরে ভীড় ভালই দেখলাম। ভেতরে অবশ্য জায়গা খালি ছিল। আমি ফোন করে খবর নিলাম বাকিদের, কতদূরে আছে, আসতে কতক্ষণ লাগবে। একজনের কথামত আমি আগেই অর্ডার দিতে গেলাম, পরে যদি আবার না পাওয়া যায়! কিন্তু দেখা গেল, আমরা যেটা চাচ্ছিলাম, খাসির ঠ্যাং-এর ভুনা, তা নাই! শেষ পর্যন্ত কি আর করা, আমি একা একা বসে বাকিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম, বাকিরা এলেই অর্ডার দেওয়া হবে। গুলশান থেকে একজন চলে এল, তারও কিছুক্ষণের মধ্যেই বাকি দু’জনও চলে আসল। ততক্ষণে অবশ্য সাড়ে পাঁচটারও মত বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি অর্ডার দেওয়া হল। এরপর শুরু হল আড্ডা। এ কথায় সে কথায়, একজন তুলল ‘সিং ইজ কিং’ এর কথা। সাথে সাথে আমার মনে পড়ে গেল অমিত ভাইয়ের রিভিউয়ের কথা। সিনেমাটা নিয়ে একচোট হাসাহাসি হয়ে গেল। এর মধ্যেই আসল খারাপ সংবাদ। ইফতারের প্রায় মিনিট দশেক আগে এসে ওয়েইটার মামা জানাল, যে অর্ডার আমরা দিয়েছি ওগুলো সার্ভ করা সম্ভব না, শেষ হয়ে গেছে! মেজাজ উঠল চরমে! শুধু আমরাই না, আমাদের আশেপাশের টেবিল থেকেও লোকজন বেশ রাগারাগি করল। কয়েকজন তো পারলে মেরেই বসে! কিন্তু সে বেচারা কাঁচুমাঁচু মুখে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেই চলছিল। কি আর করা। অগত্যা যা আছে তাই দিতে বললাম মামাকে।
“আরো আগে আসা উচিত ছিল”, বললাম আমি। পাশ থেকে বন্ধু বলল, “আগে এসেও তো লাভ হত না, ওই যে দেখ না ওই টেবিলের দুইজন (টোনা-টুনি!) সেই কত আগে থেকে বসে আছে, ওরাও তো পেল না”। আমি বললাম, “আগে আসলে অন্তত একটা লাভ হত, অন্য কোথাও যাওয়া যেত! এখন তো আর সেটাও সম্ভব না”।
অবশেষে যা এল, তা দেখে খাওয়ার ইচ্ছা আর হল না কারোরই। এক্কেবারে শুকনা সব খাবার, এত্তটুকুন ছোট্ট একটা গ্রীলড চিকেন চার টুকরা করে আমাদের চারজনকে দিয়েছে। তো বোঝেন অবস্থাটা! আর শিকটাও এমন পোড়ান পুড়িয়েছে যে সেটাকে কয়লার টুকরো ভাবলেও কাউকে দোষ দেবার উপায় নেই! খেতে গিয়ে দেখা গেল কারোরই খাওয়ার খুব একটা রুচি নেই। কোনমতে খেয়ে একজন উঠল সিগারেট খেতে, আরেকজন গেল তার সাথে। এর কিছুক্ষণ পরেই আরেকজন গেল অদের পিছে-পিছে। আমি তখন টাকা-দিয়ে-কিনসি-সব-খায়া-উঠব নীতি অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিলাম। খাওয়া (কোনমতে) শেষ করলাম, তখনো অনেক কিছুই পড়ে ছিল প্লেটে। কিন্তু বাকিরা কেউ আর আসে না! হায় হায়! সব কি ভাগল নাকি! সাথে সাথে ফোন করলাম। যাই হোক, যদিও বাকি সবাই খুবই নাখোশ, তারপরও বিল মিটিয়ে (এমনকি টিপস’ও দিয়ে!) বের হলাম। বলাই বাহুল্য, খাওয়ায় চতুর্থ স্থান অর্জনের বিরল কৃতিত্ব লাভ করায় এই কাজটা আমাকেই করতে হল!
গন্তব্য? বসুন্ধরা সিটি!
(২) বসুন্ধরা সিটি নাকি বসুন্ধরা 'শিটি'!
এখানে আরেক বন্ধু এসে যোগ দিল আমাদের সাথে। ঢুকেই সবার আগে চলে গেলাম টপ ফ্লোরে, আইস্ক্রীম খেতে। অনেক আগের শোনা “অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়” কথাটা নতুন করে মনে পড়ল আইস্ক্রীম মুখে দিয়েই! অখাদ্য! কোনমতে গলা দিয়ে নামিয়ে, সিনেপ্লেক্সে কি চলছে, কি আসবে, দেখে নিয়ে সেখান থেকে নিচে নেমে ডিভিডির ফ্লোরে গেলাম। এক বন্ধু ব্ল্যাঙ্ক ডিভিডি কিনল। আমিও দেখতে গিয়ে প্ল্যান ছাড়াই কিনে ফেললাম দুটো। অনেক আগের দেখা, ফাইন্ডিং ফরেস্টার; আর ঝুঁকি নিয়ে, বিফোর দা রেইনস। এর মাঝেই বন্ধু জানাল সে তার নিজের জন্য আর বাপের জন্য পাঞ্জাবী কিনবে। কয়েকটা দোকান ঘুরলাম। কিন্তু পছন্দ হল না কোথাও। আর দুই’একটা যাও বা পছন্দ হল, দাম দেখে কেনার আর ইচ্ছা হল না। ট্রেন্ডজ দোকানটা আগে আমার বেশ পছন্দের ছিল। এবার ঢুকে দেখি সব কিছুতেই গলাকাটা দাম বসিয়ে রেখেছে! অদ্ভুত এই দেশ! যার যেভাবে যা ইচ্ছা তাই করে। আর মানুষজনেরও মনে হয় কাঁচা টাকার অভাব নেই কোন। ধুমায়া কিনতে দেখলাম লোকজনকে। কিছু পাঞ্জাবী ঝুলছিল, কাপড়ের মান ও নকশা বিচার করলে, যার দাম কোনমতেই ৮০০’র বেশি হবার কথা না, কিন্তু দামের ট্যাগ ঝুলছে প্রায় ৩০০০-এর কাছাকাছি! সামান্য সব টি-শার্টেরও যা দাম, তাতে করে মনে হল এরপর থেকে আর ট্রেন্ডজ-এ আসা যাবে না। সাধারণ মানের কাপড়ে অসাধারণ দাম হাঁকানোকেই ওরা এখন ট্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছে! আরো বেশ অনেক দোকানই ঘুরে দেখা হল, কিন্তু ব্যাটে-বলে মিলল না কোথাও। তাই আর বেশি সময় নষ্ট না করে ৭ টার দিকেই বের হয়ে গেলাম আমরা।
গন্তব্য? অজানা!
[আগামী পর্বে সমাপ্ত]
বিঃদ্রঃ (বাংলাদেশে) কাল ঈদ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
মন্তব্য
গ্রীলড চিকেন দেখে মনে হল সোমালিয়া থেকে আমদানীকৃত হাড়-জিরজিরে রোগা পটকা এক মুরগী!--------------
প্রিয় অতন্দ্র প্রহরী
সোমালিয়া থেকে আসা মুরগী আমরা কি দেখেছি কখনো? আপনার কথা জানিনা। আমি দেখিনি।
দেখেছি।তাদের দূর্ভিক্ষের বিভতস রুপ।
মৃতপ্রায় মায়ের কোলঘেষে পৃথিবীর সমস্ত অসহায়তা
চেহারায় খোদাই করে বসা
"হাড়-জিরজিরে রোগা পটকা এক শিশু"
মুরগীর তুলনা সেই শিশুদের কথা করিয়ে দিল।
জানিনা কেন। হয়তো আমারি সেন্স অফ হিউমারের অভাব।
হয়তো ইংল্যান্ড এ্যামেরিকা বা অন্য কোন সুখী দেশের ব্লগার
কোন একটা খাবারের সাথে আমাদের বন্যা খরা ঝড়ে ধসে পড়া
মানুষের তুলনা দেয়। আমরা জানিনা।
আঘাত করে থাকলে ক্ষমা করবেন
---
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আমি আসলে অতটা না বুঝেই লিখেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, তা উচিত হয়নি। আপনার অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য দুঃখিত। নাহ, আঘাত করেননি, আমি কিছু মনেও করিনি।
বদলে দিচ্ছি কথাগুলো। ভাল থাকুন। ঈদ মোবারক।
টাকা পয়সা হাতের ময়লা, এই দোকান গুলো তোমাদের ময়লা সাফ করে পরিস্কার থাকতে দেয়, তাও তোমাদের ভালো লাগে না। জানো না পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আমি তো এখনো অত পয়সাওয়ালা হতে পারিনি যে চোখ বুঁজে যেখানে খুশি উড়িয়ে আসব একগাঁদা টাকা।
আমি তো জানতাম ময়লা সাফ করে পরিষ্কার রাখে সাবান!
উদ্ধৃতি
...অনেক দোকানই ঘুরে দেখা হল, কিন্তু ব্যাটে-বলে মিলল না কোথাও।
দেশের অবস্থা দিনদিন যেভাবে এভারেস্টের দিকে যাচ্ছে, মনে হয় আগামী বছর ব্যাট-বল দুটোই ঘরে থাকবে। কেবল প্লেয়াররই থাকবে মাঠে।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
এইটা ভাল বলসেন
এখন আর মন খারাপ কইরা কি লাভ বলেন!
কিন্তু এখন আর মেয়ে দেখা যাবে না, এইটা কে বলল?
চান রাইতে জমজমাট ঢাকা শহর দেখতে আজকে বের হইছিলাম। সাথে বউ আর আমার খেলনা DSLRটা। ভাবলাম চান রাতের উত্সবের ছবি তুলবো। আমাদের তো ঈদের চেয়ে চানরাতটাই মজা ছিলো।
কিন্তু আজকে খুব তাজ্জব হইলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা। লোকজন নাই বললেই চলে, মার্কেটেও ভীড় নাই একদম... ফলে সুন্দরীও নাই।
পোলাপাইন কি চান রাইতের ফূর্তি মিস করে আজকাল? নাকি নতুন কোনো মজা তৈরি হইছে? জানি না।
এমনকি সাধারণত ঈদের আগের রাইতে সরকারী ভবনে বেশ একটা আলোকসজ্জা হয়... আজকে দেখলাম সেটাও নাই... এটা অবশ্য ভালো হইছে... বিদ্যুত খরচা কইরা এইসবের দরকার নাই। তবে কালকে নিশ্চয়ই জ্বলবো।
নাহ্... ঢাকা শহরে ঈদের উত্সব এখন আর আগের মতো হয় না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আহ্হারে আমাদের নজু ভাই ফাটা খাইছে
ব্যাপার না বস, মন খারাপ কইরেন না। খালি উত্তরাতেই ঘুরসেন নাকি এইদিকেও আসছিলেন? আর আপনে যেখানেই যান, সেখানেই তো মনে হয় ওই খেলনাটা গলায় ঝুলায়া নিয়া যান! যা ছবি তুলছেন (ফাঁকা রাস্তা বা ল্যাম্পপোস্ট ), সেইগুলাই না হয় দেখান।
তবে এইটা মনে হয় ঠিক, ঢাকা শহরে আগের মত আর ঈদের উৎসব হয় না!
ইয়ে মানে, ইয়ে হচ্ছে গিয়ে, আচ্ছা থাক।
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
ইয়ে মানে, ইয়ে হচ্ছে গিয়ে, আচ্ছা ঠিকাছে!
ভাবছি...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এখনো?
গতবার দেশে এসে প্রথমবারের মত স্টার কাবাবে যাই, ভালই।
দামাদামির ব্যপারটাও এবারই শিখলাম, প্রথম প্রথম যাই কিনতাম সব ডলারে কনভার্ট করেদেখি এত কম আর দামাদামি না করেই ২-৩ গুন বেশি দাম দিয়ে পটাপট কিনে খুশিতে লাফাতাম। যেমন এখানে যদি ৪ টা চুড়ি কিনি তার দাম হবে ৩ ডলারের মত, যা কিনা বাংলাদেশি টাকায় ১৬০টাকা। যখন দেখি মাত্র ৬০ টাকায় আমি একসেট চুড়ি পাচ্ছি তখন আর কে দামাদামি করে জুতা কেনাতেও একি কান্ড হল। খালাত বোন সব দেখে বকা আর ট্রেনিং দেয়ার পর দামাদামি করে কেনা শিখলাম।
ভাল লাগল লেখাটা, পরের পর্বের অপেক্ষায়।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
হাহাহা। যাক, অন্তত ট্রেনিং পেয়েছেন তো, নেক্সট টাইম দেশে আসলে পুরনো বিদ্যাটা তাহলে ঝালাই করে নিয়েন আবার!
হ্যাঁ, স্টার কাবাব আসলেই ভাল, তখন ইফতারের ঠিক আগে মনে হয় সবার মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেছিলো, আর ভীড় তো অল-টাইম থাকেই। দেশে আসেন, কাবাব খাওয়ার দাওয়াত থাকল
ঠিক আছে, পরের পর্ব এসে পড়ল বলে...
যাই- ছেকেণ্ড পার্ট পইড়া আসি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন