ছেলেটি প্রথম যেবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো, ওকে নিয়ে হাসাহাসির রোল পড়ে গেল পাড়ার ছেলেপেলের ভেতর। কারণ আর কিছুই না, কোথা থেকে যেন ছেলেটা শুনেছিল, দুধ আর আনারস একসাথে খেলে নাকি মানুষ বিষক্রিয়ায় মারা যায়। সেটাই চেষ্টা করে দেখতে গিয়ে মিছিমিছি হাসপাতালে তিনটা দিন কাটিয়ে আসতে হল, আর মাঝখান থেকে খালি খালি লোক হাসানো। বাইরে হাঁটতে গেলে ছেলেটার মাথা সবসময় নিচু হয়ে থাকে। কারো দিকে তাকায় না, তারপরও ও বুঝতে পারে ওকে নিয়ে চারপাশের লোকজন বিদ্রুপমূলক মন্তব্য করছে, হাসছে, এমনকি আবার একই চেষ্টা করবে কিনা ও, বা করলে তার পরিণতি কি হবে, সেটা নিয়ে বাজি ধরছে। আমিও কিন্তু তাদের দলেই। আমরা আবার নামও দিয়েছি একটা ওর। বুইড়া বলদ। ছেলেটা চুপচাপ হেঁটে যায়, কিছুই বলে না।
কিন্তু এই কানাঘুষা, এই হাসাহাসি, আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল মেয়েদের পাড়াতেও। ছেলেটা এইবার ভালভাবে নাড়া খায়। সবার সাথে সাথে রেবার কানেও যায় বুঝি খবরটা। ছেলেটা আবার ওকে বড়ই পছন্দ করে, ভালওবাসে বৈকি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলার সাহস করে উঠতে পারেনি। কিভাবে বলবে! ছেলেটা বড়ই লাজুক যে, আর একটু ভীতুও বটে, সেই সাথে আবার কিছুটা বোকাও। এমনি এমনি তো আর ওর ওই নামকরণ করিনি আমরা! যাই হোক, যখন ও নিশ্চিত হল যে রেবা অব্দি পৌঁছে গেছে খবরটা, তখন ওর ইচ্ছে হল লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। ছেলেটির আবার মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা। অল্পেই মুষড়ে পড়ে। তখুনি ও সিদ্ধান্ত নিল আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করবে।
আগের বারের ভুল থেকে বেশ ভাল রকম শিক্ষা পাওয়ায় ছেলেটা এবার আর ফল-মূল বা খাবার-দাবারের দিকে যায় না। অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় গলায় দড়ি দেবে। কিন্তু দড়ি কোথায় পাওয়া যায়! এখন আবার ওর গতিবিধির উপর সবারই কড়া নজর। বিশেষ করে ওর বাবার। তিনি অনেক চেষ্টা করেও এখনো বের করতে পারেননি কেন তার সুপুত্র আত্মহত্যার মত ঘৃণ্য ইসলাম-বিরোধী কাজ করার পথে পা বাড়াল। ওহ, বলা হয়নি বুঝি, ছেলেটার বাবা আবার পাড়ার মক্তবের হুজুর। ভীষন ধার্মিক। অনেক সন্মানী ব্যক্তিও বটে।
যা হোক, অনেক কষ্টে কয়েক গাছি দড়ি জোগাড় করার পর ছেলেটার মাথায় আসল, ফাঁস নেওয়ার মত কোন জায়গা নেই। ওর ঘরে কোন সিলিং ফ্যান নাই। আর দড়ি যে ঝোলাবে, এমন কোন জায়গাও নাই ওর ঘরে। তাহলে উপায়? ভেবেচিন্তে গলায় ফাঁস নেওয়ার চিন্তা বাদ দিল ছেলেটা। সিদ্ধান্ত নিল ঘুমের ওষুধ খাবে। তাতেও কিন্তু সমস্যার কোন সমাধান হল না। ওর কোন ধারণা নেই কয়টা ওষুধ খেলে মানুষ মারা যায়। কোথায় খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, সেটাও জানা নেই। এবার ও আর চায় না আবার হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার-নার্সদের হাসির খোরাক হতে। আগেরবারের কথা চিন্তা করতেই লজ্জায় এতটুকু হয়ে যায় ও। দাঁতে দাঁত চেপে সিদ্ধান্ত নেয় এবার মরতেই হবে, যে ভাবেই হোক!
ওহ, ছেলেটার বন্ধু আছে কিন্তু একটা। আবীর। এখানে বলে রাখা ভাল, এতসব খবর-টবর কিন্তু আমরা আবার ওর কাছ থেকেই পাই। দুইমুখো সাপ যাকে বলে আর কি। আবীর ওকে অনেক বোঝানোরও চেষ্টা করেছে, কিন্তু লাভ হয়নি কোন। কোনমতেই সিদ্ধান্ত বদলাবে না বলে ঠিক করেছে ছেলেটা। হাজার হলেও এবার ভালবাসার ব্যাপার। রেবার সামনে ও কিভাবে দাঁড়াবে! ছি! কি লজ্জা! তাহলে প্রথমবার কেন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল ছেলেটা? সেইটা জানি না। বুইড়া দামড়াটা সেই কথা আবীরকেও বলেনি।
আসল কথায় আসি। আবীর অনেক বোঝাল ছেলেটাকে। বলল রেবার সাথে দেখা করতে, কথা বলতে। এমনকি ভালবাসার কথা প্রকাশ করার কথাও বলল। কিন্তু ছেলেটা তা শুনলে তো! আগেই বলেছি একবার ছেলেটা অনেক আবেগপ্রবণ। আর বোকা। তবে বোকা হলেও ঘটে এটুকু বুদ্ধি আছে যে বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকাতে গেলে পরিণতি ভাল হয় না। কারণ রেবার বাবা পুলিশের দারোগা। একটু এদিক-সেদিক হলেই প্যাঁদানী খাওয়ার ভাল সম্ভাবনা আছে। রেবার বাবার আবার অনেক রাগ। এর আগে একবার এক ছেলেকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। কারণ? আর কিছুই না, ছেলেটা রেবার ঘরের জানালায় উঁকি-ঝুঁকি মারার চেষ্টা করছিল।
আবীর হঠাৎ ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বলে দারোগার সাথে সরাসরি রেবার ব্যাপারে কথা বলতে। এতে যদি দারোগাবাবু খেপে যায় তো আরো ভাল, হয়ত পিটিয়ে মেরেই ফেলবে। তখন ওকে আর আত্মহত্যা করা নিয়ে চিন্তিত বা নাজেহাল হতে হবে না। কথাটা মনে ধরে ছেলেটার। কী আছে জীবনে! কোনভাবেই যখন হচ্ছে না, তাহলে এইটুকু করতে আর দোষ কি!
শেষ পর্যন্ত কি হল ছেলেটার? জানি না তো! সত্যি বলছি! জানলে অবশ্যই জানাতাম।
(চলবে? জানি না। চললেও চলতে পারে। আবার নাও পারে)
মন্তব্য
বুঝতেছি আপনার মাথায় ছেলেটার গল্প আরও আছে। লিখে ফেলুন।
আমার নাম ব্যবহার করায় মজাক পাইলাম, যদিও চরিত্রটা সাইড নায়কের।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি।
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
চিন্তা কইরো না, সাইড নায়ক তো কি হইছে, নায়িকার চেয়ে কিন্তু সাইড-নায়িকাগুলাই বেশি "উদারমনা" হয়!
পরের পর্ব? দেখি...
তারমানে আবীর হইলো নাটের গুরু?
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
খালি নাট না নজু ভাই, আবীর কিন্তু পাট নেওয়ারও গুরু
(এইটা কোন "আবীর", গল্পের না বাস্তবের, তা কিন্তু কই নাই)
ভালো লাগছে। চলুক!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরুদা, আপনের ভাল লাগসে জেনে খুব ভাল লাগল আমারও।
চলুক। আর এইরকম দু মুখো সাপ টাইপ ফাউল চরিত্রে আবীর নাম ব্যবহার করায় আপনাকে জাঝা
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
এহেন বদ টাইপ, ফাউল মন্তব্য করায় তোর নামে সমন জারী করা হলো।
কয়েকদিন পর টের পাইবি শালা দু মুখো সাপ কারে কয়।
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!
থাক রায়হান, বেচারার স্বপ্নগুলো আর ভাইঙ্গো না
কেন জিহাদ, আবীর আবার কি করসে তোমার?
ঠিক কইরা কও তো, তুমিই আবার "ছেলেটি" না তো?
এটা কেমন কথা!!! চলবে কেন? আপনি চালাবেন..
ভাঙ্গা মানুষ ভাই, এখানে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। লেখকের কথাই ঠিক। ঘটনার উপরই নির্ভর করবে লেখাটা চলবে, না কি আত্মহত্যা করবে। কেননা গল্পের নায়ক লেখক নিজে। অতএব নায়কের আত্মহত্যা সফল হলে লেখা চলার প্রশ্নই আসে না। অতএব লেখা চলার জন্য আমরা নায়ক/লেখকের আত্মহত্যার ব্যর্থতা কামনা করছি।
আমি কি ঠিক বলিনি ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণ'দা, ঠিক বললেন না ভুল তা সময়েই প্রমাণিত হবে আপনার ব্যর্থতা কামনা করে করা প্রার্থনার কথা আমি "ছেলেটি"-র কাছে পৌঁছে দেব
প্রিয় ভাঙ্গা মানুষ, নিজে চলতেই আমার রাজ্যের ক্লান্তি, চালাতে গেলে তো...
অতন্দ্র প্রহরী
গল্পটাকে না চালিয়ে একদম দৌড়ে সামনে নিন।
ভালো গল্পের গন্ধ পাচ্ছি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আপনি যখন ভাল গল্পের গন্ধ পেয়েছেন, তাহলে কিছু না কিছু তো অবশ্যই আছে এর ভেতর ধন্যবাদ। অসংখ্য। আর মূল পোস্টে বলা হয়নি (পরে জানিয়ে আসব), আপনার "পোকাদের দল পাতকুয়ায় ফেরে" গল্পটি আমার অসাধারণ মনে হয়েছে। আপনি লেখেন না কেন?
হুম............ সচলে এখন ধারাবাহিক নাটকের মত লেখকরা নিরিহ পাঠকদের এক সাপ্তাহ বসিয়ে রাখে । এটা ঠিক না , তাই বাকি গল্প পড়তে চাই তাড়াতাড়ি ।
নিবিড়
আপনিও শুরু করুন
ঝোঁকের মাথায় এটুকু লেখা, দেখি কাহিনী নিয়ে এগোতে পারি কিনা। ধন্যবাদ।
গল্পকারদের দেখি হিন্দী 'সিরিয়াল সিন্ড্রোম' এ ধরেছে ।
দৌড়ান ভাই, গল্পকে দৌড়ান ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
"সিরিয়াল সিন্ড্রোম"! দারুন বলেছেন কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা কি?
আপাতত দৌঁড়ানো ডাক্তারের মানা। ফুল বেড রেস্টে থাকতে বলেছে, কি করি!
ওই মিয়া... তাড়াতাড়ি লেখা নামাও। এটুকু পড়ে মজা পাইলাম।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ঠিকাছে বস, আপনে যখন বললেন, এট্টু সাহস পাইলাম আবীরের সাথে কথা বইলা দেখি তাইলে ছেলেটার কাহিনী কিছু জানা যায় নাকি আরো! আপনি মজা পাইছেন শুইনা আমিও অনেক আনন্দ পাইলাম
তাড়াতাড়ি বস। চরম জমছে ...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হাহাহা। থেংক্যু
হুমম ছেলেটার আসলে মরার ইচ্ছাই নাই, রেবারে কুতুকুতু দেয়ার ইচ্ছে। আরে মরতে চাইলে কচু গাছে ফাসি দে, সিলিং এর দরকার, মরাতেও এ্যারোষ্টোকেসী চাই নাকি? নইলে গাড়ির নীচে পড়, পেটের ভেতর বোতল ভাঙ্গা ঢুকা, হাত কাট দুই টাকার বলাকা ব্লেড দিয়া, নইলে পানিতে পড় কলসী দড়ি নিয়া নইলে তড়িত স্পৃষঠ হ। কোন অপশন বাদ গেলে অন্যরা যোগ করে দিয়েন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ছেলেটার চেয়ে তো "এই মেয়ে"-টাকে বেশি অভিজ্ঞ মনে হচ্ছে!
ঠিক আছে, আমি না হয় আবীরকে বলে দিব যাতে ও ছেলেটাকে বোঝায় যে আত্মহত্যা করার আরো অনেক রাস্তা আছে। তারপরও দরকার হলে ছেলেটাকে আপনার আত্মহত্যা সম্পর্কিত কনসাল্টিং ফার্মে যোগাযোগ করতে বলব! আমার তো মনে হয় ছেলেটা জানার পর আপনাকে থ্যাংকু বলবে!
তবে এইটা ঠিক, মরতে কেই বা চায়! সবই তো মায়া
নতুন মন্তব্য করুন