একটা কাহিনী দিয়েই আবার শুরু করছি। ফেইসবুকে কথা বলছিলাম একজনের সঙ্গে, প্রাণের সংজ্ঞা নিয়ে। এনিয়ে কথা বলতে গেলে চিরাচরিত ভুতের মত একটা টার্মের সম্মুখীণ সবসময়েই হতে হয়- আত্মা বা রুহ। সম্ভবত পৃথিবীর বেশিরভাগ ধার্মিক মানুষ এই ব্যাক্তিটির মতই মনে করেন জীবের দেহ হল জড় বস্তু যদি না তাকে রুহ বা আত্মা দেয়া হয়। কোন সর্বশক্তিমান (ধর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন) দেহ তৈরি করেছেন জড় বস্তু দিয়ে আর তারপরে তারমধ্যে আত্মা ভরে দিয়েছেন। ঠিক তখনই কোন জীব জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মস্তিষ্ককে সুখী করার মত খুব সহজ একটি উত্তর। অনেকে পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণেরও চেষ্টা করেছেন যে আত্মা বিদ্যমান। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার এই ব্যাখ্যার খুব সহজ একটা ঝামেলা আছে। বলছি।
আমি জনৈক ব্যক্তিটিকে বললাম, 'আচ্ছা যদি তাই হবে তবে কোষকে দেহের বাইরে এনে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় (সিরিজটির ভূমিকা পড়ে নিতে পারেন)? কোষগুলির তো আত্মা নাই।'
জনৈক উত্তর দিলেন, 'সেটা বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু সে প্রাণ নয়। প্রাণ ঠিক তখনই হয় যখন আত্মা অর্পন করা হয়।'
আমি, 'তাহলে একটু বুঝিয়ে বলুন ঠিক কখন একটা প্রাণীকে জীবন্ত বলব। মানে জীবের দেহগঠনের কোন পর্যায়ে আত্মাটা দেয়া হয়?'
জনৈক, 'যখন হৃৎপিন্ড ধুকপুক করা শুরু করে তখনই আত্মা দেয়া হয়।'
উত্তরটার যে কতগুলি সমস্যা আছে সেটা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। আমি তত গভীরে না গিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলাম, 'তবে গাছের তো কোন হৃৎপিন্ড নাই, মস্তিষ্কও নাই। তবে তাদের কি আত্মা নাই? নাকি আপনি মনে করে গাছ জীবিত নয়?'
কোন উত্তর নাই। আবার জিজ্ঞেস করলাম, 'হৃৎপিন্ডহীন প্রাণীদের কি আত্মা নাই?'
এরও কোন উত্তর নাই।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে 'প্রাণকে আত্মা বা অপার্থিব শক্তি' বলে দেয়ার ব্যাখ্যায় আসলে বড়সড় সমস্যা আছে। উপরের কথোপকথন উল্লেখ করলাম এই কারনে যে এইধরনের ব্যাখ্যা প্রচুর মানুষ বিশ্বাস করেন যা আসলে পরীক্ষায় প্রমাণিত নয়। কিন্তু বিজ্ঞান দিয়ে একটু অন্যভাবে চিন্তা করলে আমরা হয়তো প্রাণের সংজ্ঞার একটু ভিন্ন এবং ইন্টারেস্টিং উত্তর পাব।
পৃথিবীর সব কর্মকান্ডকেই আমরা এখন একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করবো। রসায়ন এবং মৌল-যৌগের ভৌত গুণাগুণ দিয়ে। যেমন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন মিলে পানি তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে উদ্ভিদ কোষের সালোকসংশ্লেষণ- সবই রাসায়নিক প্রক্রিয়া; আবার পানির বৃষ্টি হয়ে নেমে আসা, ভূমিকম্প, পৃথিবীর ঘূর্ণন এগুলি ভৌত প্রক্রিয়া বলা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পরিবেশের সবগুলি প্রক্রিয়াই আসলে ভৌত এবং রাসায়নিক কার্যকলাপের মিলিত রূপ। আমাদের হাঁটাচলা একটা ভৌত প্রক্রিয়া, কিন্তু তার কার্যকারণ নিহীত দেহের রাসায়নিক গঠন এবং প্রক্রিয়ায়। একটু ইন্টারেস্টিং ভাবে বলার চেষ্টা করছি।
আমরা জানি সালোসংশ্লেষণ পৃথিবীর জৈবপরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। আর একে আমরা 'জৈব' ট্যাগ দেই, কারন তা ঘটে কোষের ভেতরে। এখন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে যদি আমরা গবেষণাগারে করি, অর্থাৎ কোষের বাইরে টেস্টটিউবের মধ্যে ঘটাই তবে সেটাকে ঠিক জৈব প্রক্রিয়া বলব? না, আমরা তখন শুধু বলব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এভাবে কোষের ভেতরের সবগুলি ঘটনাকে রাসায়নিক প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
তেমনি, বৃহৎ পর্যায়ে বহুকোষী জীবের দেহের সবগুলি প্রক্রিয়াও একই রকমভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি। আমাদের পাকস্থলী খাবার ভেঙে ফেলে হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং এনজাইম দিয়ে। এনজাইম হল জীবদেহে থাকা একধরনের প্রোটিন যা বিভিন্নধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। আমরা জানি হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে আমরা ভৌত উপায়ে তৈরি করতে পারি। বহু এনজাইমকেও কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা যায়, তবে মনে করি কোষথেকেই বের করে নিলাম এদের। এখন একটি টেস্টটিউবের ভেতরে যদি খাবার রেখে, এনজাইম আর হাইড্রোক্লোডিক এসিড দিয়ে এবং সঠিক পরিবেশ দিয়ে [ভৌত (যেমন তাপমাত্রা) এবং রাসায়নিক (এনজাইম কাজ করার জন্য জরুরী অন্য মৌল/যৌগ)] রেখে দেই তবে টেস্টটিউবের ভেতরেও খাবারগুলি ভেঙে যাবে। আর এরপরে পাকস্থলীর কোষ (এপিথেলিয়াল কোষ) টেস্টটিউবে ছেড়ে দিলে দেখা যাবে তারা ভাঙা খাবারগুলি পুষ্টি হিসেবে গ্রহণ করছে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? কোষের এবং জীবের বাইরের প্রক্রিয়াগুলিকে আমরা গবেষণাগারে রেপ্লিকেট বা পুনঃঘটন করতে পারি। এমনকি বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম পাকস্থলী তৈরি করে ফেলেছেন!
যা বোঝাতে চাইছি তা হল পৃথিবীর সব জায়গাতেই, জীবের ভেতরে কিংবা বাইরে, রাসায়নিক বিক্রিয়া চলছে। কিন্তু কিছু বিক্রিয়াকে আমরা জৈব বলছি, জীবের ভেতরে হচ্ছে বলে। আসলে বিক্রিয়াগুলি কোষের ভেতরে/বাইরে একই জগতের একই নিয়ম মেনে চলে। আলাদা কিছু নাই। তাহলে জীবের বিশেষত্ব কী? এভাবে বলা যেতে পারে- প্রতিটি জীব হল উচ্চমানের রাসায়নিক সিস্টেম যা নিজে নিজে অনুরূপ তৈরি করতে পারে বা 'স্বনবায়নক্ষম' (self renewable) এবং একটি দেহে (বা কোষে) নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে বা 'স্বয়ম্ভর' (self sustainable)। আমার মতে এভাবে জীবকে রসায়ন দিয়ে ব্যাখ্যা করা সবচেয়ে যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাখ্যায় আসছি।
হয়তো ভাবতে পারেন কিভাবে একটি রাসায়নিক পদার্থ স্বনবায়নক্ষম প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারে। খুব সহজভাবেই একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আমি আমার গবেষণাগারে নিয়মিত একটা পরীক্ষা করে থাকি দুইটি এনজাইম দিয়ে (ছবি দেখুন)। তার মধ্যে একটি এনজাইম (E1) একধরনের রাসায়নিককে (লাল) ভেঙে ফেলে এবং দুইটি প্রোডাক্ট তৈরি করে (হলুদ এবং নীল)। আর দ্বিতীয় এনজাইমটি (E2) আবার সেই দুইটি প্রোডাক্ট থেকে আবার লাল রাসায়নিকটি তৈরি করে (মূল বিক্রিয়া ATP -> ADP + Pi -> ATP)। বিক্রিয়াটির তাহলে দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে, ১. এটি স্বনবায়নযোগ্য (self renewable), ২. এটি স্বয়ম্ভর (self sustainable, নিজেকে নিজে টিকিয়ে রাখতে পারে এমন)। মানে আমি যতক্ষণ না বিক্রিয়াটি বন্ধ করছি, বা এনজাইমগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত না নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ বিক্রিয়াটি চলতেই থাকবে। আবার দেখা যাচ্ছে কোষের বাইরে এসেও এনজাইমগুলি একইরকম ব্যবহার করে। মানে, কোন অপার্থিব শক্তির প্রয়োজন হয়না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর সরলতম কোষ জীবনের চিহ্ন দেখাতে গেলে তাকে একটি স্বনবায়নক্ষম এবং স্বয়ম্ভর প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে যেটা বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ দিয়ে তৈরি এবং ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কোষের ভেতরে হাজার হাজার বিক্রিয়া ঘটে যারা একে অপরের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে একটি জটিল কিন্তু একক জীবে রূপ নিতে পারে। এভাবে আমরা পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের একটি যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা পেতে পারি, সেইসঙ্গে বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে আজকের এই বিশাল জীবসমৃদ্ধির ব্যাখ্যাও। তাহলে প্রাণকে খুব স্বার্গিক বস্তু মনে করার কোন কারন নাই। আমরা বিশেষ কিন্তু স্বার্গিক নই। নিচের ছবিটা দেখে নিতে পারেন।
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে প্রাণ তৈরির শুরুতে (৩-৫ বিলিয়ন বছর আগে) কিছু রাসায়নিক দ্রব্য পৃথিবীর বুকে এমন একটি স্বনবায়নক্ষম এবং স্বয়ম্ভর প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছিল যা পরবর্তিতে শুধু পরিবর্তনই হয়নি, বরং সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারনার আলোকেই আমরা আমাদের আগামী পর্বগুলিতে প্রাণ কে বোঝার চেষ্টা করব।
পরবর্তী পর্বগুলি -
১। জীবনের সংজ্ঞা
২। আত্মাহীন রসায়ন
৩। বিশ্বভরা প্রাণ!
৪। আরএনএ পৃথিবীর আড়ালে
৫। শ্রোডিঙ্গারের প্রাণ!
৬। প্রথম স্বানুলিপিকারকের খোঁজে
৭। প্রাণের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞার পরিসর দিন দিন ছোট হয়ে আসছে
৮। ত্বকের কোষ থেকে কিভাবে পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করবেন
৯। গবেষণাগারে কিভাবে প্রাণ তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা
১০। সম্পূর্ণ সংশ্লেষিত জেনোম দিয়ে প্রথমবারের মতো ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি: এ কি কৃত্রিম ব্যাকটেরিয়া তৈরি হলো?
http://danielmartindiaz.com/soulofscience.php#
http://graphs.net/top-biology-infographics.html/photosynthesisfinal
http://victoriastaffordapsychicinvestigation.wordpress.com/2012/02/11/line-17o-astrobiology-carbon-molecular-evolution-human-dna-earth-wow-seti/evolution-diagram_molecular-organizations-prokaryotes-eukaryotes-life-on-land-wow-seti-line-17o-the-idea-girl-says-youtube/
মন্তব্য
লেখাটা পড়ার পর কয়েকটা প্রশ্ন মনে জাগলো। তাহলে একজন মৃত মানুষ আর একজন জীবিত মানুষে পার্থক্য কোথায়?
ধরুন একজন মানুষ ডায়েট কোক খেতে শার্লোক হোমস সিরিজ দেখছে। হঠাৎ তার হার্ট অ্যাটাক হলো। কিছুক্ষণ নিজের শরীরের সাথে লড়ে লোকটি মারা গেল। এখন হয়তো বলা যেতে পারে লোকটির শরীরে নির্দিষ্ট উপায়ে শারীরিক ও রাসায়নিক কার্যক্রমগুলো বন্ধ হওয়ায় সে মৃত্যু বরণ করেছে। কিন্তু যদি সে মারা যাওয়ার সাথে উন্নত চিকিৎসা ব্যাবহার করে তার শরীরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয় তাহলে কি সে পুনরায় জীবন লাভ করবে? অনেকটা যন্ত্র নষ্ট হলে ঠিক করার পর যা হয় তা! দেহের সব কিছু যদি রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল হয় তাহলে আমাদের দেহও তো একধরণের যন্ত্র। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাহায্যে কি মৃত লোককে জীবিত করা সম্ভব?
-শেষ প্রশ্ন
- আমার মতে পুনরোজ্জীবন সম্ভবই শুধু নয়, জড় পদার্থ থেকেই 'প্রাণ' তৈরি সম্ভব।
- তবে মৃত মানুষকে প্রাণ দেয়ার মত বৈজ্ঞানিক উন্নতি এখনও হয়নাই।
- আবার ব্যাপারটা এমনভাবে চিন্তা করতে পারেন। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, দেহের সবধরনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে বসে থাকে, মানে মৃত। কিন্তু সাময়িক, আবার অনুকূল পরিবেশ পেলে পুরোদমে প্রাণের শক্তি দেখায়।
ব্যাকটেরিয়ার উদাহরণটায় আরেকটা ব্যাপার লক্ষনীয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সঠিক পরিবেশ, অনুঘটক ইত্যাদি লাগে, নাহলে বিক্রিয়া সামনে এগুবে না। সুপ্ত ব্যাকটেরিয়াও একই কাজ করছে, সঠিক পরিবেশ পেয়ে আবার জীবিত হচ্ছে। তার রাসায়নিক সিস্টেমে কোন সমস্যা দেখা না দেয়া পর্যন্ত সে জীবিত থাকবে।
হুম। আপনি কি ব্যাকটেরিয়ার এন্ডোস্পোরের কথা বলছেন? এবস্থায় কি সব ধরণের শারীরিক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়? আমি তো জানতাম ব্যাকটেরিয়া এ অবস্থায় তার কার্যক্রমগুলোকে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় নিয়ে আসে। মানে একদম ইনার্ট হয়ে যায় না। এ ব্যাপারটা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন!
আমার জানা মতে একদমই ইনার্ট হয়ে যায়। কারন বলি, এন্ডোস্পোর তৈরির ফলে ৪-৫ মিলিয়ন বছর বেঁচে থাকতে পারে কিছু ব্যাকটেরিয়া। যদি কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া (মেটাবোলিজম বা অন্য কিছু) এরা ঘটায় তবে তার পক্ষে এতদিন ধরে টিকে থাকা সম্ভব নয়। শক্তি শেষ হয়ে যাবে।
মাসুদ সজীব
আমার কাছে একটু ধীরলয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। এতে হয়তো সবার বুঝতে সহজ হবে, তাই চলুক আপনার গতিতে।
মাসুদ সজীব
হুমম। ধন্যবাদ।
মারা যাবার পর ফিরিয়ে নিয়ে আসার মতো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। প্রাণীর শরীর একটি বায়োলজিকাল সিস্টেম। বিভিন্ন অর্গান এক অপরের সহায়তায় চলে।
আপনি হার্ট অ্যাটাকের যে সেনারিওটা বলেছেন সেটাতো মৃত্যু ঘটতে পারে মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেনের অভাবে। অ্যানা বেগেলহোম এই ঘটনাটি দেখুন। এই মহিলা স্কি করতে গিয়ে বরফ ঠান্ডা পানিতে পড়ে ৮০ মিনিট ডুবে থাকেন এবং মৃতবৎ হয়ে যান। সাধারণ হিসেবে এনার মৃত্যু হবার কথা। কিন্তু ঠান্ডা পানিতে ছিলেন বলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রয়োজন হয়নি অত বেশী। শেষমেষ বেঁচে উঠেছেন।
মৃত মানুষ আর জীবিত মানুষে পার্থক্য হলো মৃত মানুষের অর্গানগুলো একে অপরের সাথে কাজ করে মানুষ নামে পুরো সিস্টেমটা চালাতে পারছে না। একারনে মৃত্যুর পরও সুস্থ অর্গানগুলো প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।
হুম। তা তো অবশ্যই। ব্যাপারটা তো আমরা আমাদের চোখের সামনেই দেখি। কিন্তু এর পেছনের কারণটা কি? কেন কিছুক্ষণ আগেই যে মানুষটার সব অর্গানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে তাকে জীবিত মানুষ বানিয়ে ছিল। হঠাৎ সে অর্গানগুলোর সমন্বয় হারানোর কারণ কি?
মানে যদি অক্সিজেনের অভাবে কারোও মৃত্যু হয় তাহলে তো আবার অক্সিজেন সরবরাহ করলে তো সে আবার জীবন লাভ করার কথা! যে কম্বিনেশনটা মিসিং ছিল সেটা ফিরিয়ে দিলেই তো জীবিত হওয়ার কথা! কিন্তু এমনটা হয় না কেন?
- শেষ প্রশ্ন
ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়। অনেকগুলা কারনে এমনটা না হতে পারে। যেমন অক্সিজেন যতক্ষণ ছিলনা ততক্ষণে শরীরের যেই ক্ষতিটা হয়েছে (যেমন কোষের ক্ষতি হওয়া) সেগুলা ফিরিয়ে আনা যায়না। হয়তো ভবিষ্যতে যাবে।
সমন্বয় হারানোর তো অনেক কারন থাকতে পারে। একটা অর্গান নষ্ট হলেই তো দেহের সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাপারটা হঠাৎ হতে হবে এমন কোন কারনও নাই। বহুদিন রোগভোগের পরে হতে পারে। যেমন, মস্তিষ্কে টিউমার হলে দেহের বেশিরভাগ যায়গার সমন্বয়ের ক্ষতি হয়।
চমৎকার আগাচ্ছে। সেল্ফ রিনিউয়েবল বাংলা নিজ থেকে বিবর্তনশীল ও সেল্ফ সাসটেইনেবল নিজ থেকে টেকসই এরকম অনুবাদ করা যেতে পারে।
ছবির ব্যাপারে একটা টিপস দেই। যে ছবি দিতে চান সেটার কিওয়ার্ডটার সাথে svg যোগ করে গুগল করলে ছবিগুলোর এসভিজি ফর্ম্যাট পাবেন। মনমতো ছবি পছন্দ করে সেটা inkscape সফটওয়্যার দিয়ে ওপেন করে ইংরেজি শব্দগুলোর জায়গায় বাংলা খুব সহজে প্রতিস্থাপন করে দিতে পারবেন। যেগুলো বাংলা হয় না সেগুলো বাংলা অক্ষরেই লিখুন। তবুও পড়ালেখার বিষয়গুলো বাংলায় হোক।
এই পদ্ধতিতে ছবি এডিট করে সেটা inkscape-এ emf/wmf ফরম্যাটে সেইভ করতে পারবেন। এটা মাইক্রোসফটের ভেক্টর ফর্ম্যাট। দৃষ্টিনন্দন করে পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড তৈরি করতে পারবেন এই ছবিগুলো ব্যবহার করে।
সংযোজনঃ
রেডিটে এই পোস্টটা পড়েছিলাম। পাঠকদের কিছু চিন্তার খোরাক যোগাবে হয়তো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ টিপস এর জন্য। আমি চেষ্টা করে দেখবো।
ভাবছিলাম বাংলাটা করবো ঐ দুটি শব্দের। কিন্তু খুব ভাল শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে পারছিলাম না।
সেল্ফ-রিনিয়েউবল = স্বনবায়নক্ষম,
সেল্ফ-সাসটেইনেবল = স্বয়ম্ভর
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সেল্ফ রিনিউয়েবল বোধহয় স্ব-নবায়নযোগ্য এবং সেল্ফ সাসটেইনেবল বোধহয় 'নিজ থেকে অব্যাহত থাকে যা' বা 'স্ব-শক্তিপ্রদ' বেশী যুতসই হয়।
সাসটেইনেবলের একটা প্রচলিত বাংলা ইতিমধ্যে আছে - টেকসই। অর্থনীতির আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের বাংলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
স্ব-টেকসই কেমন হয়ে যায়না?
দুজনকেই ধন্যবাদ। সাসটেইনেবল টার বাংলাগুলা কঠিন এবং অপ্রচলিত শব্দ হয়ে যাচ্ছে। স্বনবায়নক্ষম (বা -যোগ্য) খুব ভাল শব্দ।
স্বয়ম্ভর কিন্তু সেল্ফ-সাসটেইনেবলের ব্যবহৃত বাংলা বিকল্প। সংসদ অভিধানেও আছে। একটু অপ্রচলিত ঠিকই, কিন্তু আমরা নিজেরা যদি সুযোগ পেয়েও ব্যবহার না করি, তাহলে তো প্রচলিতও হবে না কোনোদিন।
হুম। ঠিক। পরিবর্তন করে দিচ্ছি।
জবাব নেই হাসিব ভাই!! আপনার এই পদ্ধতি আমার পরবর্তী প্রেজেন্টেশনে কাজে লাগাবো। অসংখ্য ধন্যবাদ।
____________________________
এত চমৎকার লাগলো! জীব বিজ্ঞান আমার প্রিয় বিষয় ছিলো না কখনো, কিন্তু খুব কৌতূহলোদ্দীপক লেখা। আগ্রহ নিয়ে পরের পর্বগুলোর জন্য বসে থাকলাম।
____________________________
আপনি এই সিরিজের প্রতিটি পোস্টেই সিরিজের শিরোনামটি ("প্রাণ কী?") ট্যাগ আকারে রাখতে পারেন কিন্তু। সেক্ষেত্রে সেখানে ক্লিক করলে সবকটি পর্ব একসাথে পাওয়া যাবে। শেয়ার করতেও সুবিধা।
'প্রাণ কী' ট্যাগ করে দিলাম। ধন্যবাদ।
টার্মিনোলজিক্যাল শব্দটিতে গিয়েই টাইপো হওয়াতে অসস্তি লাগছে। - `এপিথেলিয়াল কোষ বলে´
স্যরি। খেয়াল করিনি। ঠিক করে দিচ্ছি।
স্যরি হবার মত কিছু তো হয়নি! টাইপো যে কারো, যে কোন লেখাতে হতে পারে।
আমি আপনার এই সিরিজটি আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। ইন্টারেস্টিং এই বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক লেখাটি চালিয়ে যাবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
হুম। ধন্যবাদ
পড়ছি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই পর্বটা খুব ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইন্টারেস্টিং ভাবে বলার চেষ্টার কথা না বললেও চলে, শুরুতে তো ইন্টারেস্টিং উত্তর খোঁজার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছেই।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
ধন্যবাদ
দারুণ! জীববিজ্ঞান শিখেই ফেলব এবার
দুর্দান্ত শিরোনাম, ততোধিক দুর্দান্ত বিষয়বস্তু
কবিগুরুর গানঃ "জানার মাঝে অজানারে, করেছি সন্ধান/বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ" শুনতে শুনতে সাথে আছি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ
"কোষের ভেতরে হাজার হাজার বিক্রিয়া ঘটে যারা একে অপরের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে একটি জটিল কিন্তু একক জীবে রূপ নিতে পারে।"
বিষয়টা কিভাবে হয় জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছি।
আমরা, জীবজগতে এনজাইমের ব্যবহার খুব দেখি। যেমন একটি ব্যাকটেরিয়াতেও হাজারটা এনজাইম কাজ করে। কিন্তু আমরা জানি রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলোকে এনজাইম ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কোন কোন বিক্রিয়াকে একমুখী করে, যেমন: গ্লাইকোলাইটিক পাথওয়েতে গ্লুকোজের সাথে ফসফেট যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটা এখমুখী; আবার কিছু বিক্রিয়াকে উভয়দিকেই সঞ্চালন করতে সহুযোগীতা করে, যেমন: ঐ একই পাথওয়েতে ফসফোগ্লিসারেট ও ডাইহাইড্রোক্সি এসিটাইল ফসফেট পরস্পর থেকে তৈরী হয়। এই এনজাইমগুলো আবার ডিএনএতে কোড করা থাকে। ডিএনএ থেকে ট্রান্সক্রিপশন হয়ে ট্রান্সলেশন হতে অনেকগুলো এনজাইম, আরএনএ, স্প্লাইসোজোম, রাইবোজোম ইত্যাদি একসাথে কাজ করে। আবার ফসফেট রুপে এনার্জি ধরে রাখতে এটিপি, ক্রিয়েটিন ফসফেট ইত্যাদি সিনথেসিস হওয়ার জন্য গ্লাইকোলাইটিক পাথওয়ে, সালোকসংশ্লেষণ, মিথানোজেনিক পাথওয়ে, অক্সিডেটিভ ফসফরাইলেশন, ডিনাইট্রিফিকেশেন, সালফেট রিডাকশন পাথওয়ে ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়াতে থাকে।
সুতরাং কিভাবে এসব প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট এনজাইমগুলো একটার সাথে আরেকটি সম্পর্কিত হলো, কিভাবে এই এনার্জি কনসার্ভিং প্রক্রিয়াগুলোর সাথে এনার্জি ইউজিং ও স্ট্রাকচার ডেভোলিং প্রক্রিয়াগুলো কাপলিং হলো এ বিষয়গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আপনার পরবর্তী পোস্টগুলোর শিরোনাম খুব আগ্রহউদ্দীপক। পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
----
সন্দেহপ্রবণ
জীবকে এককোষী হিসেবে ধরলেও পুরোটা বেশ জটিল, বুঝতেই পারছেন। আবার বেশিরভাগ বিক্রিয়া একমুখী, ঠিকই বলেছেন। অন্যদিকে স্বনাবায়নে শুধু কোষের ভেতরের জিনিসপত্রই কাজ করেনা, পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই রিসাইক্লিং হয় অনবরত। কিভাবে সম্পর্কিত হল সেটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং আমি পরের দুয়েকটা পর্বে আলোচনার চেষ্টা করবো উদাহরণ দিয়ে। কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। শুধু তাই নয় একটি আদিকোষের সাইটোপ্লাজমের এনজাইমের ফাংশনের জন্য প্রয়োজনীয় অপটিমাম হাইড্রোজেন আয়ন কনসেনট্রেশন, তাপমাত্রা, পানির পরিমাণ, বিভিন্ন অজৈব যৌগের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কিভাবে সংরক্ষিত হয়? কিভাবেইবা কোষের ঝিল্লীতে প্রোটিন নির্মিত সুনির্দিষ্ট দরজা, সুরঙ্গ ইত্যাদি যুক্ত হয় যা বাইরের পরিবেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে? কিভাবে সাইটোপ্লাজমের অবস্থিত হাজার রকমের অনুগুলো পারস্পরিক স্প্যাটিয়াল হাইনড্রেন্স ছাড়া থাকছে? গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়। আশা রাখি আপনার পরবর্তী পোস্টে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাবো।
খুব বিস্তারিত ব্যাখ্যার হয়তো সুযোগ এখানে পাবোনা। তবে আমি বেসিক কনসেপ্ট টা ছোঁয়ার চেষ্টা করব। বিরাট বিরাট পন্ডিতেরা এখানে এসে হোঁচট খেয়েছেন, আমি হয়তো অতটা ভাল ব্যাখ্যাও করতে পারবোনা। দেখা যাক। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার পরবর্তী পোস্ট আগ্রহ নিয়ে পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
----
সন্দেহপ্রবণ
ধন্যবাদ। আমি আসলে অনেকদিন লিখছিনা। এই সিরিজটা চলমান রাখা উচিত। দেখছি পরের পোষ্ট কবে দেয়া যায়।
নতুন মন্তব্য করুন