একটি সাম্প্রতিক ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। গত ১৫ই এপ্রিল দেশের কিছু সমকামি মানুষ বিভিন্ন রঙে সেজে একটি প্যারেডে অংশগ্রহণ করেছেন। আর এর দ্বারা বাংলাদেশে খুব সম্ভবত এই প্রথমবারের মত সমকামিগণ সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন।
প্রতিক্রিয়া যা পাওয়া গেল সেটাকে সুস্পষ্টভাবে দুইভাগে ভাগ করা যায়- স্বাগত জানানো এবং সমালোচনা করা। সমালোচনার দিকটাই বেশ ভারী এবং ব্যাপারটা অনেকখানি ঘৃণার পর্যায়েই প্রকাশিত। তাদের হত্যার হুমকিও দিয়েছেন অনেকেই। সমকামিতাকে যদি কোন মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবে দেখা হয় তবে অনেকেই আমরা হয়তো সামাজিক কাঠামো ভাঙা এবং বংশরক্ষার কারন দেখিয়ে বিরোধীতা করবো। কিন্তু আসলেই কি সমকামিতা কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভর করে? আমি একটু খুঁজে দেখতে চাইলাম সমকামিতার বৈজ্ঞানিক কারনগুলি নিয়ে। দেখা যাক।
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ একটি কনফারেন্সে সমকামিতার কিছু জিনেটিক তথ্য উপস্থাপন করেন ইলিনয়ের নর্থওয়েষ্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাইকেল বেইলির দল [সূত্র ৩, ৪]। পরীক্ষাটিতে তাঁরা দেখাচ্ছেন, সমকামিতা সম্ভবত মানুষের ডিএনএ'ই নির্ধারন করে। মাইকেল বেইলি বলছেন 'যৌণ পরিচিতি মানুষের পছন্দের উপর মোটেই নির্ভর করেনা। আমাদের গবেষণা দেখাচ্ছে যে সম্ভবত জিন এর দ্বারাই এটা প্রভাবিত- অন্তত ডিএনএ'র দুইটি সেট এর উপর পুরুষের সমকামিতা জড়িত।'
সমকামিতার পেছেনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দায় ডিএনএ'র উপর বর্তায়। মাইকেল বেইলি'র দলটি ৪০৯ জন সমকামি ভাইদের এবং তাদের পরিবারে সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষা করেছে। পার্থক্য এবং মিল খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে মানুষের X ক্রোমোজমের Xq28 নামের একটি অংশ এবং ৮ নম্বর ক্রোমোজমের কিছু অংশ সমকামি ভাইদের জেনোমে বন্টিত। পরীক্ষাটি ১৯৯৩ সালের আরেকটি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়, যেই পরীক্ষাটিতেও X ক্রোমোজমের সঙ্গে সমকামিতার যোগাযোগ বর্ণিত হয়েছিল।
মাইকেল বেইলি বলছেন, 'একসময় হয়তো মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই বোঝা যাবে শিশুটির জিন সমকামিতাকে সহযোগিতা করবে কিনা; কিন্তু এটা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বল যাচ্ছে না, কারন অন্য কিছু পরিবেশের প্রভাবও আছে (যেমন গর্ভের হরমোন জনিত অবস্থা)।'
গত বছর কানাডিয়ান বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছিলেন যে একজন পুরুষের যত বেশি বড় ভাই থাকবে তার তত বেশি সমকামি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর কারন হিসেবে তারা বলছেন ছেলে সন্তান ধারনের সময় মায়ের গভর্ে একধরনে রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা চালু হয় যেটা ছেলেদের যৌণ পরিচয় নিধর্ারনে প্রভাবে ফেলে [সূত্র ৪]। যত বেশি ছেলে সন্তান মা ধারন করে তত প্রবল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি কাজ করে।
বেইলি বলছেন, 'যদিও বলা হচ্ছে সমকামিতায় পরিবেশের প্রভাবের কথা, এই পরিবেশ আসলে সমাজ ব্যবস্থা নয়। এর অর্থ ডিএনএ ব্যাতীত যেকোন কিছু।'
এই মানব আচরণের পেছনের বৈজ্ঞানিক কারনগুলি নিয়ে বেশ সমস্যাতেই পড়তে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। বিবর্তনিকভাবে সমকামি মানুষ সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা নয় বলেই ভাবতেন অনেকে। কারনটাকে বলা হয় 'ডারউইনিয় প্যারাডক্স'। যেহেতু সমকামিগণ একই লিঙ্গের হওয়ার কারনে বংশবৃদ্ধি করতে পারছেন না সেহেতু প্রাকৃতিক নির্বাচনে সমকামিগণ হারিয়ে যাওয়ার কথা। এ সংক্রান্ত জিনগুলি (যদি থেকে থাকে) তাই বংশপরম্পরায় পরিবাহিত হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু যেহেতু কিছু জিনেটিক সূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে সেহেতু বিজ্ঞানীরা অন্য সম্ভাবনাগুলি ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনটি কারন থাকতে পারে। যেমন,
ক। যেসব জিন (এলিল বলা যায় সঠিকভাবে) সমকামিতার জন্য দায়ী তাদের অন্য জনন বা দৈহিক কাজ থাকতে পারে। এর ফলে সমকামিরা বংশবিস্তার করতে না পরলেও জিনগুলি তাদের অন্য কাজের ক্ষমতার জন্য জনন-অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
খ। সাধারন ক্ষেত্রে যারা সমকামি নয় তাদের ছেলে বা মেয়ে সুলভ আচরণ অন্য লিঙ্গকে আকর্ষণ করে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েরা ছেলেদের ভেতর এমন কিছু আচরণ খুঁজছে যা সাধারণত মেয়েলি বলে বিবেচিত হতে পারে, যেমন সন্তানের ভাল যত্ন নেয়া ইত্যাদি। সেজন্য ছেলেদের মধ্যে এধরনের 'মেয়েলি' আচরণ অব্যাহত থাকার জন্য জননে স্বল্পমাত্রায় সমকামি জিনগুলি প্রবাহিত হতে পারে। ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনে হারিয়ে যায়নি এমন জিন।
গ। পরের কারনটি হয়ত খুবই সহজ। মেয়েদের জেনোমে ছেলেদেরকে আকর্ষিত করবার যেসব জিন আছে সেগুলি বিবর্তনিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত। তাই এরা বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হবে। কিন্তু স্বল্পমাত্রায় এমন জিন যদি ছেলেদের মধ্যে প্রবাহিত হয় তবে তারা একই লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে। কিন্তু যেহেতু এমনটি ঘটা বিরল সেহেতু গড়ে বিবতর্নিক সুবিধা পেয়েছে।
এই শেষ তত্ত্বটির পিছনে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইতালীতে করা একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে যেসব পুরুষ সমকামি তাদের খালাদের সন্তান সন্ততির সংখ্যা সাধারন পুরুষের খালাদের সন্তান সন্ততি অপেক্ষা বেশি। অর্থাৎ পুরুষের X ক্রোমোজমে থাকা কোন এলিল বা জিন ঐ পরিবারের মেয়েদের বেশি সন্তানসন্ততি হতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সেটা পুরুষটিকে সমকামিও করেছে [সূত্র ২]।
সেই সঙ্গে, (জিনগত ব্যাপার গুলি মাথায় রেখেই) যেহেতু সামাজিকভাবে সমকামিতা এখনও মানবসমাজ থেকে মুছে যায়নি সেহেতু সমকামিতার সামাজিক গুরুত্বটিও এখানে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। আমি এখানে আলোচনা করছিনা। এই লেখাটির শেষ দুটি পরিচ্ছেদ থেকে দেখে নিতে পারেন।
না। বরং অন্য বহু প্রজাতিতে খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে বোঝা যায় জীবজগতে সমকামিতা শুধুমাত্র কারও পছন্দের ওপর নির্ভর করেনা। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি [সূত্র ১]:
- ৪০০ প্রজাতির মত প্রাণীর মধ্যে সমকামিতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে মানুষের সঙ্গে বিবতর্নিকভাবে সম্পকর্িত বোনোবোও আছে।
- এরকম আচরণের জনন-কারন থাকতে পারে। যেমন গোল্ডিড নামক মাছের পুরুষেরা মেয়েদের মত যৌণ আচরণ করে অন্য পুরুষকে ধোঁকা দেবার জন্য।
- দীর্ঘকালীন সমলিঙ্গ অগ্রাধিকার প্রাণীজগতে বিরল। কিন্তু পুরুষ বাইঘর্ন ভেড়াদের (নিচের ছবিতে দেখছেন) ৬ শতাংশই সমকামি হয়!
২০০৭ সালে আমেরিকা ভ্রমণকালীন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার প্রদানের সময় ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমেদেনিজাদ বলেছিলেন 'আমাদের দেশে কোন সমকামি নাই'। ইসলামী সমাজের অধিকতর্া থেকে এমন বক্তব্য আশা করাটা খুব আশ্চযর্ের নয়। শুধু ইসলাম নয়, পৃথিবীর প্রধান ধমর্গুলি সমকামিতাকে অপরাধের দৃষ্টিতে দেখে। নিচের ছবিতে দেখে নিন সমকামিতার শাস্তি কোন দেশে কিরকম। বাংলাদেশে এর শাস্তি হওয়ার কথা যাবজ্জীবন কারদন্ড।
কিন্তু আমাদের কী এবিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় আসেনি? বিবেচনায় আনা যায় 'সমকামিতা জিনেটিক এবং পরিবেশগত প্রভাবের ফল' বনাম 'সমকামিতা হল মানসিক বিকৃতি' এই দ্বন্দটি। বেশিরভাগ পরীক্ষাই সমকামিতার কারন হিসেবে জিনেটিক এবং পরিবেশগত প্রভাবের পক্ষে প্রমাণ দিচ্ছে। কিন্তু তখন আরেকটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। ব্যাখ্যা করছি।
আমরা জানি, সিরিয়াল কিলাররা হল সাইকোপ্যাথ। অর্থাৎ এদের অপরাধবোধ থাকেনা বা কারও প্রতি সমবেদনাও তারা প্রকাশ করেনা। মস্তিষ্ক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে অ্যামিগডেলা নামক মস্তিষ্কের একটি স্থানের সঙ্গে অন্যান্য স্থানের যোগাযোগের সমস্যার কারনে মানুষের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। তাহলে একজন সিরিয়াল কিলারেরও যদি এই দৈহিক সমস্যাটি থেকে থাকে তবে তার কৃতকর্মের জন্য কী তাকে সমাজ ক্ষমা করে দেবে? না, দেবেনা। বরঞ্চ শাস্তি দেবে বা বন্দী করে রাখবে। কিন্তু একটি পরিসংখ্যান বলছে যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন হল সাইকোপ্যাথিক। কিন্তু এদের সবাই কি সিরিয়াল কিলার হচ্ছে? না, হচ্ছেনা। অর্থাৎ আমরা শুধু তাকেই শাস্তি দিচ্ছি যে সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ আচরণ করেছে।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, একজন সমকামি কি সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ? যদি তার সমকামিতার আচরণটি জিনগতভাবে এবং জৈবিক পরিবেশের কারনে হয় তবে সমকামিতা সমাজে বিস্তৃতির ব্যাপার নাই। সমকামিতার সংক্রামণের কোন প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিবর্তনিক ধারায় সবসময়ই কিছু মানুষ জিনগতভাবে সমকামি হবেন। তারা যদি সমাজে কোন অপরাধ না করে থাকেন তবে তাদেরকে শুধু সমকামি হওয়ার জন্য অপরাধী বিবেচনায় আনাটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে।
সূত্র
১। Nathan Bailey et al. "Same-sex sexual behavior and evolution" in Trends in Ecology and Evolution
২। http://www.bbc.com/news/magazine-26089486
৩। http://www.theguardian.com/science/2014/feb/14/genes-influence-male-sexual-orientation-study
৪। http://www.independent.co.uk/news/world/americas/male-homosexuality-influenced-by-genes-us-study-finds-9127683.html
৫। প্রথম ছবি: প্রিয়.কম
৬। ম্যাপের ছবি: উইকিপিডিয়া
মন্তব্য
গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট
সমকামিতা অপরাধ হবে কেন? এটি জিন ও জৈবিক পরিবেশগত আর এর কারনে যেহেতু কারো কোন ক্ষতি হচ্ছে না তাহলে যাবজ্জীবন সাজাই বা হবে কেন?
মাসুদ সজীব
ধন্যবাদ। বুঝতেই পারছেন, কেন হয় সেটার কারনটা সমাজব্যাবস্থা এবং মানসিকতার উপর নির্ভর করছে।
, সমকামিতা প্রাকৃতিক বিষয়। এটাকে যারা ঘৃণার চোখে দেখে অপরাধের পর্যায়ে ফেলেন তাদের জ্ঞান অভাব আছে। আর আছে অজানাকে এড়িয়ে চলার প্রচেষ্টা
facebook
ধন্যবাদ। বাংলাদেশে এই গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে বেশ সময় লাগবে বলেই মনে করি।
বাংলাদেশের দেশের মতো দেশে যারা এধরণের আন্দোলনে পথে বের হবার সাহস পায়, তাদেরকে অবশ্যই প্রশংসা জানাতে হয়। গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতে সময় বেশি লাগলেও এই মিছিল বের করতে পারাও কম কথা নয়। পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতা যে সমাজে সবচাইতে বেশি, সে সমাজের কাঠামোই সবচাইতে সুঠাম। আমাদের ভাবতে হবে, ভাবাতে হবে ও ভাবানোর জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ
স্প্যানিশ উপনিবেশবাদীরা যখন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল অধিকার করতে থাকলো, তখন একটা বিষয় লক্ষ করলো- কোন কোন আদিবাসী সমাজ ভয়াবহভাবে সমকামীতায় আক্রান্ত, কিন্তু কোন কোন সমাজে সমকামীতার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। ইংরেজরা যখন আন্দামান দ্বীপমালা অধিকার করলো, সেখানকার বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের যৌন আচরণেও সমকামীতার কোন নিদর্শন দেখা যায় নাই। তাহলে কি বলা যায়, জিনে যাই থাক, সামাজিক শিক্ষা সমকামীতা চর্চায় অপরিহার্য শর্ত?
আপনার রেফারেন্সের কোন লিংক থাকলে কি শেয়ার করা যাবে?
আমি জানতে চাইছি একটা কারনে। ব্যাপারটা নির্দিষ্ট আদিবাসী গোত্রে পুরোপুরি জিনগত হতে পারে। যেমন, পলিনেশিয়ানদের অতিমাত্রায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগতে দেখা যায় আর এর কারনটা জিনগত।
প্রথম তথ্যটির সূত্র হল http://www.mygenes.co.nz/
দ্বিতীয় তথ্যটি এ আর ব্রাউন এর "দি আন্দামান আইল্যান্ডার" থেকে পাওয়া। এ বইটি নেটে পাওয়া যায়।
আমি বলতে চেয়েছি, সমকামীতা যদি জিনগত আচরণ হয়, তাহলে মানুষের সকল গোত্রের মধ্যেই এই আচরণ কমবেশি একই মাত্রায় দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আইসোলেটেড কিছু গোত্রের মধ্যে এই আচরণ একেবারেই নেই।
জিনগত হলেই সেটা সর্বত্র বিস্তৃত হবে এমন কোনো কথা নেই। হতে যেমন পারে, আবার নাও পারে। উদাহরণস্বরূপ চোখের নীল আইরিসের কথা বলা যায়। এর কারণ জেনেটিক- oca2 নামের একটা জিনে ভ্যারিয়েশন। কিন্তু তাই বলে ‘সকল গোত্রের মধ্যেই এটা কমবেশি একই মাত্রায়’ দেখা যায় না। এমনকি ককেশিয়ানদের বাইরে এটা খুবই বিরল।
রব
এ ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাপারটা সেরকমই ঘটেছে। মানবজাতির যে সকল অংশের পরস্পর পরস্পরের সাথে ইন্টারেকশন আছে, অর্থাৎ একের সংস্কৃতি অন্যের জানার সুযোগ আছে, তাদের সবার জিনেই সমকামিতার সংকেত আছে। আর যারা বহুপ্রজন্ম থেকে মানবজাতির অপরাপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন, তাদের অনেকের জিন থেকে হারিয়ে গেছে সমকামিতার সংকেত।
আমি একটু খুঁজে দেখলাম। আপনার প্রশ্নটি কৌতুহলোদ্দীপক।
যেসব ট্রাইব এর কথা খুঁজে পেলাম তাদের 'সমকামিতা' বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিচুয়ালিষ্টিক। একে 'সমকাম' বলা যায় কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
যেমন পাপুয়া নিউগিনি'র এতোরো বা সাম্বিয়া মানুষেরা ভাবে কিশোরেরা স্পার্ম খেলে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সেজন্য একটা সামাজিক চল হিসেবে এই কাজ করা হয়। কিন্তু এতে কি কিশোরেরা সমলিঙ্গে আকৃষ্ট হয়ে উঠেছে? কোন প্রমাণ তো খুঁজে পেলাম না। আর সমলিঙ্গে আকর্ষন না থাকলে কি আপনি কোন সম্পর্ককে সমকামিতা বলতে পারেন?
এটা নিয়ে আরও তর্ক আশা করছি। ধন্যবাদ উল্লেখ করার জন্য।
একটু ক্লিয়ার করুন।
এর মানে কী? তাহলে সমকামিতার ব্যাপারটি কি জিনগতভাবে নাকি জৈবিক পরিবেশের কারণে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়?
ডারউইন প্যারাডক্স পর্বে যা বললেন সেগুলোর সবই তো 'হয়তো' স্টেটমেন্ট, তত্ত্ব নয়। এমনকি (গ)-এর ব্যাপারে যে প্রমাণ দিলেন সেটিও খুবই দুর্বল।
মাইকেল বেইলি'র কথা তখনই আস্থায় আনা যাবে যখন অনেক অনেক নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠির ওপর গবেষণা চালিয়ে একই প্রকার ফলাফল পাওয়া যাবে, এবং 'X ক্রোমোজমের Xq28' অংশে কারিকুরি করে একজন মানুষকে সমকামী বা বিষমকামী বানানো যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১। কোট যেটা করেছেন সেটা থেকেই আপনার কমেন্টের শেষ বক্তব্যটা নিয়ে আলোচনা করা যায়। জিনের সঙ্গে সমকামিতার যোগাযোগের বিষয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য আসছে, কিন্তু নিঃসন্দেহে প্রমাণের জন্য অপ্রতুল। কোন জিনগত রোগ (সমকামিতার কথা বলছিনা, রোগ যেমন সিস্টিক ফিব্রোসিস) আপনার জেনোমের ঠিক কোন জায়গাটার জন্য হচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা সেই রোগের গবেষণার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারগুলির একটি। বেইলি'র নিবন্ধ প্রকাশের অপেক্ষা করছি, সেইসঙ্গে আরও গবেষণার। তাদের প্রমাণ খুবই অর্থবহ এই কারনে যে ভবিষ্যতে জেনোমের এই জায়গাগুলি নিয়ে গবেষণার পথ সুগম হল। সিস্টিক ফিব্রোসিস এর ক্ষেত্রে অনেক অনেক কম সাবজেক্টে কাজ করা গিয়েছে, ৪০০ ভাই এর চেয়ে (এরা সমকামি ভাই, জিনের সম্পর্কের ব্যাপারে এটা একটু নজরে রাখবেন)। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অনেক সাবজেক্ট প্রয়োজন, ঠিক বলেছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে 'এর সঙ্গে জিনের কোন সম্পর্ক নেই' এটা বলে দেয়া। জৈবিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা আগের গবেষণা দেখিয়েছে।
আর আসলে কোট করা বক্তব্য টা 'জিন এবং জৈবিক পরিবেশ' এর ব্যাপারে দ্বিধা নিয়ে বলিনি, বলেছি 'যেহেতু জিনের সঙ্গে সম্পর্কিত সেহেতু' এই অর্থে। হয়তো খুব পরিষ্কার হয়নি।
২। প্যারডক্সের গ অংশটিকে তত্ত্ব বলা হচ্ছে। আমি বিবিসি রিপোর্টটি থেকে লিখেছি। একে তত্ত্ব বলা যাবে কি যাবেনা সেটা নিয়ে অনেক বড় আলোচনার প্রয়োজন।
৩। যদি এলিলিক কারনে হয় তবে জেনোমে 'কারিকুরি' করে যৌণতা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ এখন অসম্ভব। এধরনের উদাহরণ অন্য ক্ষেত্রেও খুঁজে পাবেন নাই বলেই মনে করি। অনেক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির উপর কাজ করে জিনের সম্পর্ক এবং জেনোমে তার স্থান খুঁজে পাওয়াটা সবচেয়ে বেশি প্রমাণ বহন করবে। বেইলি'র পরীক্ষা এ সংক্রান্ত গবেষণার বড় অগ্রগতি।
আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
তাড়াহুড়োয় পড়লাম। জেনেটিক ফ্যাক্টর নিয়ে ইন্টারেস্টিং আলোচনা ভাল লাগল।
ধন্যবাদ।
সমকামিদের করা এই র্যলিটা আমাদের প্রগতিশীলতার ইতিহাসে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ এই বিষয়ে লেখার জন্য
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ।
এবং কালকে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা বলছে ছেলেদের সমকামিতা অন্ততঃ জিনঘটিত
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন