“We’ve got a lot of problems in the world; we shouldn’t just arbitrarily lock away certain tools such as genetic engineering. We just have to be mindful of how we use those tools.”
NORM ELLSTRAND
PROFESSOR OF GENETICS
UNIVERSITY OF CALIFORNIA, RIVERSIDE
জিনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম বা জিএমও নিয়ে বহু মিথ ছড়ানো হয় বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও ছড়াচ্ছে সম্প্রতি বিটি বেগুন বিতর্কে। রিভারসাইড ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি লেখা দেখে আমারও ইচ্ছা হল বাংলায় এমন একটি পোষ্টারের মত লেখা তৈরি করা। দেখে নিন:
ভুল
জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি বৈজ্ঞানিক টুল বা উপায়। ১৯৮০'র দশকেই আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ঘোষণা দিয়েছিল যে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ঐতিহ্যগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেনা।
ক্ষতি ঘটতে পারে উপাদান দিয়ে, কোন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া দিয়ে নয়। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উপায়টি দিয়ে কোন উদ্ভিদে বিষ ঢুকিয়ে দেয়া যেতে পারে, যাদের মধ্যে এমনিতে বিষ নেই। আবার একই উপায় দিয়ে ভিটামিন বহন করেনা এমন উদ্ভিদে ভিটামিন ঢুকিয়ে দেয়া যায়। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে মানুষকে বাঁচাবার জন্য ঔষধ তৈরি হয়, ইনসুলিন তৈরি হয়, টিকা তৈরি হয়।
ভুল
কোন নির্দিষ্ট স্থানে অভিযোজিত শস্য বা নেটিভ শস্যে অন্য শস্যের জিন প্রবাহ (ফলে গুনের প্রবাহ) ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে- কিন্তু সবসময়ই নয়।
একটি উদ্ভিদ থেকে আরেকটি উদ্ভিদে গুণের মিশ্রণের সঙ্গে জিএমও থেকে নেটিভ উদ্ভিদে গুণের মিশ্রণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু জিএমও থেকে নেটিভ শস্যে গুণের মিশ্রণ ঘটবেই এমনটি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। বরং প্রাকৃতিক শস্যেই এমনটি ঘটতে পারে। যেমন, এমন জিন প্রবাহের কারনে গুণের মিশ্রণের কারনে সবচেয়ে বড় যেই ক্ষতিটি কৃষকদের হয়েছিল সেখানে দুইটি প্রজাতিই প্রাকৃতিক ছিল, মানে জিএমও ছিল না। ইউরোপে বন্য বিট উদ্ভিদের সঙ্গে সুগারবিট উদ্ভিদের মিশ্রণের কারনে, অর্থাৎ প্রাকৃতিক হাইব্রিডাইজেশানের কারনে, প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় চিনি শিল্পে। [সূত্র]
ভুল
অনুমোদিত জিএমও'র ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা কোন ইস্যু নয়।
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের বরং অন্য অনেকগুলি বিষয়ে অনেক বড় বড় ইস্যু আছে। যেমন, অধিক কীটনাশক প্রয়োগ এবং ফলে খাদ্য শৃংখলে কীটনাশক বিষ হিসেবে ঢুকে পড়া, অথবা ফরমালিনের ব্যবহার, অথবা ব্যাকটেরিয়ার দূষণ ইত্যাদি। কিন্তু যখন একটি জিএমও বাজারে আসছে তখন অনেকগুলি নিয়মতান্ত্রিক পরীক্ষা পাশ করে আসছে। আমাদের সেজন্য এটা ভাবতে হয়না যে কোন জিএম ধান বা আলু এত অধিক ভিটামিন তৈরি করছে যে সেটা ক্ষতিকর হয়ে গিয়েছে। এমন প্রমাণও নাই। যেমন, আমেরিকায় অতি কঠিন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড আছে, আর আমেরিকার মানুষ গত ২০ বছর ধরে জিএমও খেয়ে আসছে। বিনা অসুখে। এই পুরো সময়ে বরং অন্য খাদ্য সমস্যাগুলির কারনে স্বাস্থ্যহানী হওয়ার উদাহরণ বেশি।
ভুল
অনেক খাদ্যগবেষকই মনে করেন যে জিএমও'ই হলো পৃথিবীর ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাবার একমাত্র উপায়। বিশেষ করে গরীব দেশগুলির জন্য অবশ্য বিবেচনার বিষয়।
এই মুহুর্তে যদি জিএমও শস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় তবে আমেরিকা এবং ইউরোপে খুব প্রকট প্রভাব পড়বেনা, শুধুমাত্র খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ছাড়া। হয়তো কিছু কৃষক বিরক্ত হবেন, কারন যারা জিএমএ শস্য উৎপাদনে সুযোগ পেয়েছেন তাদের ৯০ শতাংশই উৎপাদন করেছেন। কিন্তু প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সাব-সাহারিয়ান আফ্রিকা এবং এশিয়ায়। যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন দৌঁড়ে পারছেনা।
ভুল
এমনটা হওয়ার ভাবনাটা অযৌক্তিক। হাওয়াই দ্বীপের ভাইরাস-প্রতিরোধী জিএম পেঁপের উদাহরণ দেয়া যায়।
এ জিএম পেঁপে শুধু হাওয়াইয়ের পেঁপেশিল্পকে বাঁচায়ইনি, বরং গড়পড়তায় ভাইরাসের আক্রমণ কমিয়ে জৈবউপায়ে চাষকৃত (অগর্ানিক শস্য/ফল/সবজী বলা হয়, যার দাম সাধারন বা জিএম শস্যের চেয়ে বেশি) পেঁপের চাষাবাদকে মুক্তি দিয়েছে ভাইরাসের হাত থেকে। [সূত্র]
ভুল
পৃথিবীর প্রায় সকল (অল্প কিছু ছাড়া) জিএম শস্য উৎপাদনের গবেষণাই কোন শস্যকোম্পানির অর্থে বা ফান্ডিং পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিগুলির মত এসংক্রান্ত উচ্চঝুঁকির (ফলাফল আশাব্যঞ্জক হবে কিনা সেই ঝুঁকি থাকে) গবেষণার খরচ সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি নিতে চায় না, ফলে কোম্পানিগুলি বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। এতে কোম্পানি কৃষক এবং মানুষের জন্য উপকারী, বা চাষে সুবিধাজনক, বা অধিক উৎপাদনকারী শস্য দিচ্ছে বটে, কিন্তু কোম্পানির মূল লক্ষ্য হল বীজ বিক্রি করে বা জিএম শস্য নিজেরা উৎপাদন করে মূনাফা অর্জন।
ভুল
আমেরিকার সর্বপ্রথম জিএম পণ্য ফ্ল্যাভর স্যাভর টমেটো এবং নিম্ন-নিকোটিনযুক্ত তামাকের উদাহরণ দেয়া যায়।
উভয় পণ্য দুটিই বাজারজাত করার জন্য উৎপাদিত হয়েছিল কিন্তু অনেকগুলি কারনে অসফল হয়। তারা এখন আর বাজারে নেই। কেউ কেউ হয়তো দাবী করতে পারে সব জিএমও'ই অসাধারণ, কিন্তু তারা নয়। প্রত্যেকটি জিএমও খাবারকে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন, ইলিশ মাছের স্বাস্থ্যঝুঁকির সাথে আমি পেয়ারার সাস্থ্যঝুঁকির তুলনা করতে পারিনা। তেমনি, প্রত্যেক জিএমও পণ্যকে একই মাপকাঠি দিয়ে তুলনা করতে পারিনা জিএমও পণ্যও জৈবিক পণ্য।
ভুল
প্রাকৃতিকভাবেই জীব থেকে জীবে, এমনকি কিংডমের (যেমন, উদ্ভিদ এবং প্রাণী দুইটি আলাদা কিংডমে বিভক্ত) বাঁধা ভেদ করে জিন যেতে পারে।
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া এটা ঘটাতে পারে, যদিও এমন ঘটনা খুবই বিরল, কিন্তু সম্ভব। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে একধরনের ফার্ণ উদ্ভিদ তাদের আলোসংবেদী জিনটি গ্রহণ করেছে একধরনের মস উদ্ভিদের কাছ থেকে [সূত্র]। অন্যদিকে মানুষের জেনোমের ৮ শতাংশ এসেছে ভাইরাসের কাছ থেকে [সূত্র]।
ভুল
এটা সঠিক যে ইউরোপ খুব বেশি জিএমও চাষ করেনা, কিছু জায়গায় জিএমও ভূট্টা ব্যাতীত।
আমরা জানি আমেরিকা পৃথিবীর সিংহভাগ জিএমও'র উৎপাদন করে। কিন্তু ইউরোপের বহু খাদ্যেই জিএমও দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। এসব জিএমও জাত দ্রব্য তারা অন্য দেশ থেকে আমদানী করে। যদিও প্রায় সব প্রধান ইউরোপিয় বিজ্ঞান, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সংস্থা গড়ে জিএমও খাবারের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনার বিপক্ষে মতবাদ দিয়েছেন [। সূত্র]
ভুল
বাংলাদেশে বিটি বেগুনের চাষের অনুমোদন দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর কিছু মানুষ এরকম ছড়ানো শুরু করলেও ব্যাপারটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়।
খাদ্য কোম্পানিগুলোর কূটচালের অংশ হিসেবে প্রথম দিকের দুই একটি জিএম শস্যের জন্য এমন জিনেটিক পদ্ধতির প্রয়োগের সূচনা করেছিলেন যেটাকে 'টার্মিনেটর জিন টেকনোলজি' বলা হয়। এর ফলে একবার ফসল উৎপাদনের পরে কৃষক আর বীজ উৎপাদন করতে পারেন না, কারন উদ্ভিদ বন্ধ্যা হয়ে যায়। কিন্তু আমেরিকাসহ পৃথিবীর সবদেশেই এমন প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিটি বেগুনের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কৃষক পুনরায় বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। [সূত্র]
[ছবিসূত্র: বেশিরভাগ ছবি নেয়া হয়েছে এখান থেকে। বাকিগুলির সূত্র বিভিন্ন ওয়েবসাইট।]
মন্তব্য
জীব-বৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে জিএমও ফুডের যে ভূমিকার কথা শোনা যায়, সে ব্যাপারে কিছু আলোকপাত থাকলে ভালো হত। তারপরও এট একটি দারুণ লেখা। আমার অনেক ভুল ধারণা ভেঙ্গে গিয়েছে। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
গোঁসাইবাবু
একটি পয়েন্টে না লিখলেও আপনি তথ্যগুলি আলাদা আলাদা পয়েন্টে পাবেন। যেমন, ২, ৪, ৫, ৮। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ গৌঁসাই সাহেব।
অনেক কিছু জানলাম ভাই, আর শুধু এই কারণেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই পোস্টটিতে জিএমও বিরোধী কেউ বিতর্কের সূচনা করলে ভাল হত, কারণ তাহলে পাঠক দুপক্ষেরই যুক্তিগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ পেত।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
ধন্যবাদ। জিএমও নিয়ে সচলায়তনের অন্যান্য পোষ্টে কিছু তর্ক হয়েছে। সেগুলো দেখতে পারেন। এখানেও চালানো যায়।
তবে লক্ষ্য করলে দেখবেন আমি এন্টি-জিএমও মিথগুলি শুধু এখানে যোগ করিনি, প্রো-জিএমও মিথও আছে।
সঠিক। আর এজন্যই আপনার লেখাটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। যেকোন নির্মোহ লেখারই আলাদা মূল্য থাকে।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
এটা জিএমও সমর্থন করেন এরকম কারো হ্যান্ডবুক হতে পারে। জিএমওর হ্যান্ডবুক কখনোই নয়। তালিকা সাজাতে আপনি এক্সট্রিম আর্গুমেন্টগুলো বেছে নিয়েছেন যেগুলো খন্ডানো সহজ। উদাহরণ দেয়া যায় ৯ নাম্বারটা দিয়ে। ইইউ মোটাদাগে জিওমের বিপক্ষে এটা আপনার ঐ পয়েন্টটা পড়ে বোঝার উপায় নেই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
জিএমও হ্যান্ডবুকে প্রথম ১০ টি মিথ যেগুলি আসার কথা সেগুলি হিসেবে আমি মনে করি সঠিকভাবেই দেয়া আছে, এবং এখানে এক্সট্রিম উদাহরণগুলিই আসা উচিত। এটা ঠিকই বলেছেন যে ৬ এবং ৭ ব্যাতীত বাকিগুলি জিএমও বিরোধীদের মিথ।
তবে প্রথম ১০টির মধ্যে অন্য কোন মিথ উল্লেখ করা দরকার ছিল সেটা যদি উল্লেখ করতেন তবে আমার জন্য বুঝতে সুবিধা হত।
যেই উদাহরণটি দিলেন সেটা কিভাবে লিখলে আপনি `নিরপেক্ষ`ভাবতেন সেটা চিন্তা করছি। এভাবে লেখা যেত-
``মোটাদাগে জিএমও`র বিপক্ষে আসলে ইউরোপের অবস্থান।``
কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবস্থান এটা নয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেক কঠিন, কিন্তু `বিপক্ষে`মোটেই নয়।
অতঃপর, শেয়ারযোগ্য এই খবর
পরিশ্রমী প্রচেষ্টার জন্যে সাধুবাদ জানাই।
মাসুদ সজীব
থ্যাঙ্কু
বাঃ চমৎকার কাজ হয়েছে এই পোস্ট।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন