মানুষের মধ্যে একটা প্রবণতা বেশ প্রবলভাবেই লক্ষ্য করা যায়- আমাদের আশেপাশের যেকোন বস্তুর মধ্য থেকেই প্যাটার্ন বা নকশা খুঁজে বের করার চেষ্টা এবং তারপর সেই নকশার সঙ্গে আমাদের চেনা কোন বস্তুর মিল খুঁজে পাওয়া। মনোবৈজ্ঞানিক টার্ম ব্যবহার করলে একে বলা হয় পেরেইডোলিয়া। আকাশ থেকে পানি, গাছ থেকে পিঁপড়া, মাছ থেকে পাখি - সবকিছুতেই আমরা মিল করতে পারি এমন কোন নকশা বা আমাদের চেনা জিনিসের সাদৃশ্য খুঁজে পাই। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই ঘুরে ফিরে বিভিন্ন ছবি। আর এইসব নকশার সঙ্গে যদি ধর্মকে মিলিয়ে দেয়া যায় তবে গণহিস্টেরিয়ার শিকার মানুষদের হাতে ছবিগুলি ঘুরতে থাকে সবজায়গায়। সেজন্য আমরা, আকাশে আল্লাহর নাম দেখি, হিমালয় পর্বতে ভগবান এবং গাছের পাতায় যিশু খুঁজে পাই। আর কোন বস্তুর আকার বা নকশার সঙ্গে চেনা কোন কিছুর মিল খুঁজে পেলে মানুষ তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে। এই ঘটনাগুলিকে ডক্ট্রাইন অফ সিগনেচার্স (Doctrine of signatures) বলে।
আসলে ব্যাপারটা এমন যে- কোন নকশাকে আমরা সেই জিনিসের সঙ্গেই তুলনা করতে পারি যাকে আমরা পূর্বে দেখেছি। চিত্রকর বা ভাষ্করদের কাছে পেরেইডেলিয়া একটা টুল এর মত। মিল থেকে তারা অমর শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারেন। কিন্তু যুগে যুগে মানুষ পেরেইডোলিয়াকে কুসংস্কার ছড়ানোতেই ব্যবহার করেছে প্রায় সবক্ষেত্রে। অদ্ভুত আচার (Doctrine of signatures) তৈরি হয়েছে এই কারনে। বিশেষ করে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন উপাদান যার সঙ্গে মানবঅঙ্গ বা রোগের লক্ষণের মিল আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাকতালীয়ভাবে এসব উপাদান কোন রোগের জন্য উপকারী হিসেবে দেখা দেয়। এবং তাহলেই হয়েছে, কুসংস্কারিক ধারনা পুরোপুরি বদ্ধমূল হয়ে সমাজে বেড়ে ওঠে। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।
১। ওয়ালনাট এবং মস্তিষ্ক
প্রথম ছবিতে দেখছেন, ওয়ালনাট দেখতে অনেকটা মস্তিষ্কের মত। সেজন্য মাথাব্যাথার ঔষধ হিসেবে ওয়ালনাট ব্যবহার করা হয় কিছু সমাজে।
২। আইব্রাইট এবং চোখ
এই ফুলগাছগুলি ব্যবহার করা হয় চোখের রোগ উপশমে।
৩। উইপিং উইলো গাছ এবং বিষণ্ণতা
বিষণ্ণতা দূর করতে এই গাছের পাতা খাওয়ানো হয়। নুয়ে পড়া পাতার শাখা থেকে মানুষ ভেবেছে যে এরা বিষণ্ণতায় ঝুঁকে আছে।
৪। কিডনী বিন
কিডনীর মত দেখতে ডাল কিডনীর রোগ সারানোতে ব্যবহৃত হয়।
৫। এভোক্যাডো
এভোক্যাডো ব্যবহৃত হয় গর্ভকালীন মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য।
৬। অগ্নাশ্যয় চিকিৎসায় মিষ্টি আলু
বলে রাখা ভাল উপরের সবগুলি উদ্ভিজ্জ্ব উপাদানই কিছু কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা দেখায়। যেমন, জন্ডিসের সময় আমাদের দেহ হলুদবর্ণ ধারণ করে বলে হলুদ খাওয়ানোর চল আছে। হলুদের এমনিতেই কিছু স্বাস্থ্যগুণ বিদ্যমান। আর এসব কারণে তাই কুসংস্কার বদ্ধমূল হওয়াটা সহজ হয়ে যায়।
নিচের জিনিসগুলিও বিভিন্নধরনের মানবঅঙ্গের সঙ্গে মিলে যায়। ছবি দেখে কোনটা কিসে ব্যবহৃত হয় বলে দিন দেখি! নামগুলি সাহায্য করতে পারে!
নিপলওয়োর্ট
(স্তনবৃন্তের ব্যাথা সারানো)
পাইলওয়োর্ট
(পায়ুদেশের রোগ সারানো)
কোকো ডেমার বাদাম
(স্ত্রী যৌনস্বাস্থ্য রক্ষা)
কলার কথা বাদই দিলাম, কিন্তু এসপারাগাস?
(পুং যৌণক্ষমতা বাড়ানো)
মতিকন্ঠের সুবাদে এই জিনিস আগেই দেখেছেন হয়তো!
(পুং যৌণক্ষমতা বাড়ানো)
মাশরুম?
(স্তন ক্যান্সার)
আবার, প্রকৃতিতে বিবতর্নিক ধারায় এমন কিছু নকশা বা আকার জীবদেহে তৈরি হয় যা বিবতর্নিকভাবে কোন জীবকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে এবং ফলে জীবজগতে বিস্তারে সাহায্য করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মাশরুমগুলি কোন গুহ্য কারনেই আপনার কোন অঙ্গের মত হয়েছে! এমন কিছু উদাহরণ:
বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণীটির কানের উপরে চোখের মত দাগ বাজ বা ইগলকে ভয় দেখায়:
মথের ডানায় চোখের মত দাগ পেঁচার মুখের মত দেখায়:
পাতায় ডিমের নকশা
উদ্ভিদের পাতাটি এমন নকশা করেছে যা দেখে পোকা ভাববে তাদের গোত্রের কেউ এসে আগে থেকেই ডিম পেড়ে রেখেছে। তাই তারা আর ডিম পাড়বেনা এবং পাতাখেকো পোকার হাত থেকে উদ্ভিদ বেঁচে যাবে।
তাহলে মূল ব্যাপারটা হল আপনি আপনার আশোপাশে অনেক কিছুর সঙ্গেই আমাদের চেনা বস্তুর মিল খুঁজে পেতে পারেন, সেটা স্বাভাবিক। প্রকৃতিতে বিভিন্ন জীব ব্যাপারটাকে দারুণ সুবিধাজনক কাজে লাগায়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটাকে অলৌকিক পর্যায়ে নিয়ে যেয়ে তাকে অতিগুরুত্ব দেয়াটা কুসংস্কারে রূপ নেয়। আপনি যেমন আকাশে বাতাসে পবিত্র নাম খুঁজে পেতে পারেন, তেমনি আপাত অশ্লীল বস্তুও খুঁজে পেতে পারেন। নিচের ছবিটি একটি উদাহরণ হতে পারে। অনেকেই হয়তো আগে দেখেছেন। একজন শিশুকে দেখালে সে এখানে কয়েকটি ডলফিন খুঁজে পাবে। কিন্তু আপনি কী জিনিস দেখছেন?
সূত্র:
১. বই, সায়েন্স অফ সুপারস্টিশান
২. উইকিপিডিয়া
৩. http://ishtarsgate.wordpress.com/2012/01/11/gods-pharmacopoeia-the-doctrine-of-signatures/
৪. http://wortsnall.wordpress.com/2013/09/01/the-doctrine-of-signatures-pseudoscience-or-botanical-gnosis/
৫. http://adarwinstudygroup.org/biology-culture-psychology/mimicry/
৬. কয়েকটি ছবি আরও কিছু ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
মন্তব্য
-- এটা দিয়ে কি চিকিৎসা করা যেতে পারে ??
****************************************
সর্বরোগ!
নাউজুবিল্লাহ!
এই সব টাইট ঈমানের ছবি দেখায়া আমগো ঈমান ঢিলা করতে আইছেন, না?
[ পোস্ট]
সজীব ভাই,
শেষ ছবির ক্যাপশনেঃ পাতা পোকার রূপ নিয়েছে টা পোকা পাতার রূপ নিয়েছে হবে বোধ হয়
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইটা আসলে কোনটাই হবেনা। আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
--
সাক্ষীর মত আমিও বলি পোস্ট
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনি পবিত্র বিশ্বাসের ঘরে আঘাত করেছেন, আপনার বিচার হওয়া দরকার। একখান সুক্কু নিরপেক্ষ আর্ন্তজাতিক মানের তদন্ত কমিটি দিয়ে( কোন ইহুদি/নাসার থাকতে পারবে না) অাপনার এই গভীর ষড়যন্ত্রের মুখোশ খুলে দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট ।
মাসুদ সজীব
আমি কিছু জানিনা, আমি নিষ্পাপ।
-ব্যবহারবিধি কি? মাথাব্যাথার সময় ওয়ালনাট মাথার উপর রেখে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙলে হয়ত মাথাব্যাথা সারবে
আনন্দদায়ক লেখা
হাতুড়িটা সরাসরি মাথায় মারলে ভাল কাজ করার কথা মনে করি!
ইন্টারেস্টিং!
স্যাম্ভাই কি এইখান থিক্যা নয়া ব্যানারের থিম খুইজা পাইলেন নাকি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লোকজন পরে আমার নামে মামলা করে দেবে ভাই। এই বুদ্ধি দিয়েন না।
ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা জানবেন সজীব ওসমান।
--------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
দারুণ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
চমৎকার
--আরাফ করিম
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
সর্বনাশ! প্রায় পাঁচ মিনিট ঠায় তাকিয়ে থেকেও আমি ডলফিন দেখতে পেলাম না। বহু কষ্টে ডলফিনের লেজ সদৃশ কিছু একটা বের করতে পারলাম।
নিজের মনের কলুষতায় বিষণ্ণ হয়ে গেলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
হেহে..
তবে যেকোন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষই এই দ্বিধায় ভুগবেন ছবিটা দেখে.. বিষন্ন হওয়ার কিছু নাই।
আজকে প্রকাশিত এই বিষয়ে একটি লেখা, ইন্টরেষ্টিং
নতুন মন্তব্য করুন