ধর্ষণ শব্দের ব্যবহার, বিশ্বকাপ, আমরা

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: বুধ, ০৯/০৭/২০১৪ - ৮:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখছি। বিভিন্নরকমভাবে আমরা আমাদের প্রিয় দলের বা বিপক্ষ দলের খেলাকে বর্ণনা করি। আবেগাপ্লুত হয়ে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি খেলাটা কী দারুণ বা কী বাজে হয়েছে, কোন দল কত ভাল খেলেছে ইত্যাদি।

কিন্তু ইদানিং, খেলার ধরন বোঝাতে একটা শব্দের ব্যবহার প্রায়ই দেখছি- 'রেইপ' বা 'ধর্ষণ'।

যেমন, মানুষ অবলীলায় বলে যাচ্ছে-

'জার্মানি ব্রাজিলকে রেইপ করেছে।' অথবা,
'নেদারল্যান্ড আর্জেন্টিনাকে ধর্ষণ করেছে।' অথবা,
'এমন ধর্ষণ কোনদিন দেখিনাই।' অথবা,
'সিরিয়াল রেপিষ্ট ইতালি।'

এইভাবে মনোভাব প্রকাশ বহুকারণেই করা উচিত নয়। কয়েকটা পয়েন্ট বলছি:

১. মানুষ নিজের আধিপত্য প্রকাশ পছন্দ করে। কিন্তু আধিপত্যের নিকৃষ্টতম উদাহরণ হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ কোন মহিমান্বিত বস্তু নয় যে সেটা দিয়ে কোন একটি দলের দারুন খেলাকে বর্ণনা করতে হবে। এভাবে ব্যবহারের ফলে সমাজের একটি হীনতম অপরাধকে আমরা কোন ভাল জিনিসকে বর্ণনায় ব্যবহার করছি। এভাবে ব্যবহার করতে করতে ধর্ষণ জিনিসটাকে হয়তো খুব খারাপ লাগবেনা কিছুদিন পরে। এটা আমাদের মানসিক বিন্যাসে গেঁথে যাবে, এবং এরকম হীন সামাজিক অপরাধে আমাদেরকে উৎসাহিত করবে।

২. একটা সমাজে নারীকে অপমানের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল তাকে ধর্ষণ করা। যেকোন হানাদার বাহিনী বিপক্ষের সমাজের মনোবল ভেঙে দিতে বহু যুদ্ধেই এর ব্যবহার করেছে। পুরুষের দ্বারা সমাজে ঘটিত নিকৃষ্টতম কাজগুলির একটি হল র্ধষণ। তাই, না, এটা কোনভাবেই উচিত নয় যে আপনি খেলাকে ধর্ষণ দিয়ে বর্ণনা করবেন। আপনি কখনই বলতে পারেন না যে- 'আমরা ঐ দলকে ধর্ষণ করেছি।'

৩. ধর্ষণ একজন মানুষের জীবনে অমানবিক বিপর্যয় নিয়ে আসে। একজন নারী এবং তার পরিবার অসহনীয় দুর্দশার মধ্য দিয়ে যায়। মেয়েদের আত্মহত্যার একটা বড় অংশ ঘটে ধর্ষণের কারনে। এই নিকৃষ্ট কাজকে দিয়ে কেন আপনার একটি দলের পারফরমেন্সকে বর্ণনা করতে হবে? এটাতো নিজের পছন্দের দলকে অপমান করা!

শব্দটি আপনি হয়তো হুজুগে ব্যবহার করছেন। কিন্তু বিবেক দিয়ে চিন্তা করে দেখুন। সংযত হোন।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

আধিপত্যের নিকৃষ্টতম উদাহরণ হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ কোন মহিমান্বিত বস্তু নয় যে সেটা দিয়ে কোন একটি দলের দারুন খেলাকে বর্ণনা করতে হবে।

উত্তম জাঝা!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
আরে, আমিও কালকে ভাবছিলাম ঠিক এই জিনিসটা নিয়ে লিখবো। অনেক ধন্যবাদ মনের কথা লিখে দেয়ার জন্য। আমি নিজেও একই দোষে দোষী। অনেক সময় অনেক জায়গায় ফাজলামি করে রেপ, উপুরজুপুরি এসব শব্দ ব্যাবহার করেছি। কিন্তু এটা একদম বন্ধ করা উচিৎ।

সজীব ওসমান এর ছবি

লিখে ফেলুন। আপনার লেখার হাত হাজার গুণ ভাল। অনেক মানুষ তাহলে পড়তে পারবে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

উদাসদা, 'উপুর্যুপুরি' শব্দটা কিন্তু নিজে খারাপ না। এটার সাধারণ অর্থ হল বারবার। 'উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত' -এই লেখাটাও কিন্তু পত্রিকায় আসে। কিন্তু, শব্দটা ঐ বাজে শব্দটার সামনে বসে বসে নিজেই কলঙ্কের ভাগীদার হয়ে গিয়েছে।

শুভেচ্ছা হাসি

সুবোধ অবোধ এর ছবি
সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

"একটা সমাজে নারীকে অপমানের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল তাকে ধর্ষণ করা।" সহমত প্রকাশ করছি।
আপনার লেখার পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেল। আমি গত তিন/চার বছর যাবত বকা/গালি/খারাপ শব্দ উচ্চারণ করিনা।
আপনার জন্য শুভ কামনা...
- খোরশেদ খোকন (khokonz@gmail.com)

সজীব ওসমান এর ছবি

আপনাকে অভিনন্দন

সবজান্তা এর ছবি

গতকালই টুইটারে পশ্চিমবাংলার পরিচালক, এবং অভিনেতা সৃজিত মুখোপাধ্যায় তার ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলেন, একই বিষয়ের উপরেই।

যারা ধর্ষণের উদাহরণ টানেন, তাদের অধিকাংশই সম্ভবত ধর্ষণকে জায়েজ করার মানসিকতা থেকে সেটা করেন না। বরং আমার মনে হয়েছে, ধর্ষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা থেকেই করেন। কিংবা দৈনন্দিন পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের সংবাদের আধিক্যে পাঠকের কাছে ধর্ষণের খবর আর আবহাওয়ার খবর সমান গুরুত্বহীনতা বহন করে।

শুধু ধর্ষণই না, কৌতুকের ক্ষেত্রে একই কথা খাটে মানসিকভাবে অসুস্থ (প্রচলিত বাংলায়, পাগল) ব্যক্তিদের নিয়েও। এই ব্যাপারটা উপলব্ধি করার পর থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আর কখনো কোনো "পাগলের" কৌতুক বলি, সেটা যতোই হাসির হোক না কেন। আশা করি আমরা সবাই-ই "পাগল" কিংবা "ধর্ষণ" -এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলি নিয়ে আরেকটু সংযত হবো।

সজীব ওসমান এর ছবি
সজীব ওসমান এর ছবি

আমরা মাঝেমধ্যে কোন কিছুতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যাই যে তার ভাল-খারাপ বিবেচনা করতে পারিনা। অভ্যাসের বশে বলতেই থাকি। নিজেদের ব্যবহৃত শব্দ নিয়ে একটু সচেতন হলে মঙ্গল।

এক লহমা এর ছবি

পূর্ণ সহমত। অত্যন্ত দামী পোস্ট।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দীনহিন এর ছবি

সব মানলাম, শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, যেমনঃ
আজকের সভ্য-ভব্য ইউএসে কথায় কথায় যে 'ফাক' শব্দটি্র প্রয়োগ হয়, তার মাজেজা কি?

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সবজান্তা এর ছবি

ফাক (Fuck) শব্দটা একটা গালি বা স্ল্যাং। আমরা অনেকেই (অন্তত আমি কিংবা আমার পরিচিত) যেমন "বাল" শব্দটা বলে থাকি, তেমন কনটেক্সটেই ব্যবহার হয় এটা।

কথা হচ্ছে, বাংলাতে আমরা কি বাল শব্দটা সর্বত্র, সবার সামনে ব্যবহার করি? ফর্মাল আলোচনায় ব্যবহার করি? না, সেটা আমরা করি না। তেমনি ইউএসের লোকজনও (অন্তত আমার অভিজ্ঞতাতে) সবার সামনে, বিশেষত ফর্মাল আলোচনায় ফাক শব্দটা ব্যবহার করে না।

অবশ্য যেটা বুঝলাম না, ধর্ষণের আলোচনায় "ফাক" কীভাবে আসলো? এই দুইটা তো সমার্থক না বলেই জানতাম!

মেঘলা মানুষ এর ছবি

F*** এবং ধর্ষণ সমার্থক নয়। উভয় পক্ষের সম্মতিতেও এই F*** হতে পারে, যেখানে ধর্ষণ এ উভয় পক্ষের সম্মতি থাকছে না।
এই শব্দের উৎপত্তির বিষয়ে প্রচলিত মত হল, Fornication Under the Consent of King এর অদ্যাক্ষর নিয়ে বানানো সংক্ষিপ্ত আকার।

আর, F*** এর ব্যব‌হার কিন্তু অন্য রাগ/বিরক্তি বোঝাতে ব্যব‌হার হয়। যেমন, বাংলায় 'ধুর', 'ধ্যাত' এসবের মত (তবে চরম আকারে)।

দীনহিন ভাইরে পড়ার জন্য একটা লিংক দিলাম।

শুভেচ্ছা হাসি

হিমু এর ছবি

এই শব্দের উৎপত্তির বিষয়ে প্রচলিত মত হল, Fornication Under the Consent of King এর অদ্যাক্ষর নিয়ে বানানো সংক্ষিপ্ত আকার।

এটা একটা আরবান লিজেন্ড, ব্যাকক্রোনিম বলে এগুলোকে। জার্মানিক ভাষাগুলোতে ফাক ক্রিয়ার জন্যে কাছাকাছি শব্দ ব্যবহৃত হয়।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এটা যে আরবান লিজেন্ড সেটা জানতাম, এটা গুগল করে এখান থেকে পেয়েছিলাম যেখানে লেখাই ছিল এটা প্রচলিত ধারণা, ঠিক না। এমন কি এটা Fornication Under the Christ, King / Forced Unlawful Carnal Knowledge, ইত্যাদি, ইত্যাদি এসবের সংক্ষেপও মনে করত কেউ কেউ।

আপনার Dutch ভাষার Fokken, Norwegian ভাষার Fukka, Swedish ভাষার Focka এসবও তো আছে। আমারই উচিত ছিল এটাকে 'কথ্য ধারণা' হিসেবে ট্যাগ করে দেয়া।

শুভেচ্ছা হাসি

সজীব ওসমান এর ছবি

পুনম পান্ডে দেখলাম 'জার্মানির রেইপ সিন পর্ণহাবে আপলোড করতে দিচ্ছেনা' এই মর্মে টুইটারে জোক করেছেন।

এক লহমা এর ছবি

রুচিহীন নোংরা টুইট।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মন মাঝি এর ছবি

ধর্ষণ কোন মহিমান্বিত বস্তু নয় যে সেটা দিয়ে কোন একটি দলের দারুন খেলাকে বর্ণনা করতে হবে।

আপনার মূল বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত আমি।

তবে আমার কেন যেন মনে হয়, এই ক্ষেত্রে 'রেইপ' শব্দটা জার্মানির "দারুন খেলাকে বর্ণনা করতে" নয়, বরং ব্রাজিলের নিদারুন অসহায় পরাজয়কে বর্ণনা করতেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

****************************************

সজীব ওসমান এর ছবি

হয়তো, কিন্তু দুই অর্থেই শব্দটির বাজে ব্যবহার।

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা!
এসব নিয়ে আরো বেশি বেশি বলা দরকার!
আপনারা যারা সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করেন তাদের উচিৎ হবে সাথে সাথে এসব ভুল ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলা।
শব্দের আকাল হলে দরকারে নতুন শব্দ আসুক। খেয়াল করবেন আমাদের মধ্যে অনেকেই দুম করে বলে বসি, কবিতা/লেখা/ইত্যাদি বুঝলাম না,' আমি কাব্য/সাহিত্য/ইত্যাদি'র প্রতিবন্ধী'। 'প্রতিবন্ধী' বিষয়টা কতটা যন্ত্রণার সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। অথচ এসব উটকো ব্যবহারকারীরা সেটা বিন্দুমাত্রও অনুভব না করেই ব্যবহার করে বসেন এমন কিছু। বন্ধ হওয়া দরকার এসব!

সজীব ওসমান এর ছবি

ঠিক।

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজে কখনও শব্দটি ব্যবহার করিনি।
কিন্তু অনেক শুনেছি। খারাপ লাগেনি কখনও। আ-জ খুব খারাপ লাগলো আপনার লেখা পড়ে ।

ভালো থাকবেন সজীব ওসমান।
আপনার জন্য শুভকামনা।

-----------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। সেটাই। আমাদের চিন্তা আচ্ছন্ন থাকে মাঝেমধ্যে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলিনি। ভেবেছিলাম, কী জানি! সব ব্যাপার বোধহয় মেয়েরা ইমোশনালি নেয়। কিন্তু একথা সত্যি, মেয়ে হিসেবে এই শব্দটার যথেচ্ছ ব্যবহার আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়। এবং মানুষ হিসেবে অন্যরাও আপত্তির কারণ এবং যুক্তিগুলো খুজে পেয়েছেন দেখে আশান্বিত হলাম।
লেখককে ধন্যবাদ।
-সুস্মিতা শ্যামা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।