বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞানশিক্ষা মানেই কাউকে বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে তৈরি করা নয়। উদাহরণ খুব কাছেই আছে, বিজ্ঞান পড়েই বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়া গেলে পদার্থবিজ্ঞান পড়ে ফারাবির মত মৌলবাদি তৈরি হতোনা। আসলে আমাদের জন্য বিজ্ঞানশিক্ষা মানে হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা অর্জন। যেমন, আপনি একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বা হৃৎপিন্ডের চিকিৎসক বা ওয়াসার পানি বিশেষজ্ঞ মানে কিন্তু এটা নয় যে আপনি বিজ্ঞানমনষ্ক- যদিও বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যবহারিক বা তাত্ত্বিক শাখা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আবার, আপনি কোন একটি বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন, যেমন, আলোক কণিকা বিশেষজ্ঞ বা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। তবে, বিশেষজ্ঞ মানেও কিন্তু এটা নয় যে আপনি বিজ্ঞানমনষ্ক হয়েছেন। আপনি বরং কোন একটা বিষয়ে কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছেন বা পড়াশোনা করে সেই বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছেন এবং এইসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিতে নিজেকে প্রস্তুত করতে পেরেছেন। বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়ার সাথে আপনার এসব গুণাবলীর পার্থক্য আছে।
কিভাবে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করতে হয় সেটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াতেই শেখানো হয়না। আসলে বিজ্ঞানের দর্শনকে পড়ানো হয়না বলেই বিজ্ঞানমনষ্কতা গড়ে ওঠেনা। আমরা বিজ্ঞান পড়ে মোটামুটি কারিগরি শিক্ষালাভ ছাড়া তেমন কিছুই করিনা। বিজ্ঞান পড়াটাকে শুধু ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস হিসেবেই কল্পনা করে বসে থাকি বিধায়। বিজ্ঞানমনষ্কতার সঙ্গে যুক্তিবাদি মন গড়ে তোলার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানের দর্শনকে বোঝা গেলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আর এই দর্শনকে বোঝা খুব কষ্টকর নয়।
বিজ্ঞানের শুরু হল পৃথিবীর সকল কিছুকে প্রশ্ন করা দিয়ে, পৃথিবীর নিয়মকানুন, ঘটনা এসব কিছুর শুলুকসন্ধান করা। আমরা যা দেখি, উপলব্ধি করি তার প্রক্রিয়া বোঝা, কোন ঘটনা কেন হচ্ছে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা। অর্থাৎ, প্রশ্ন করা ছাড়া বিজ্ঞান হতে পারেনা। একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া সেজন্য শুরু হয় প্রশ্ন দিয়ে, যার উত্তর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং ফলাফল দিয়ে বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করতে হয়। যুক্তি দিয়ে ফলাফল বিশ্লেষণে যেই সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে যৌক্তিক তাকে গ্রহণ করা হয় এবং পুনঃপুনঃ বিভিন্ন পরীক্ষায় একই ফলাফল পাওয়া গেলে সেই সিদ্ধান্ত বা প্রমাণিত অনুকল্পকে তত্ত্বের মর্যাদা দেয়া হয়। ব্যবহারিক এবং সময়ের পরীক্ষায় তত্ত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বিজ্ঞানের এই মূল বিষয়টি ধার্মিক দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন, আল্লাহ/ভগবান/ঈশ্বরের অস্তিত্বে অথবা ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত কোন কাহিনীকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন তবে আপনি সরাসরি নাস্তিক বা নির্ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন। মানে ধর্মে বর্ণিত কোন ঘটনা বা বিষয় বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিতে হবে, প্রশ্ন তো করাই যাবেনা। এই বিষয়টাকে উল্লেখ করা হয় 'বিশ্বাস' হিসেবে। অন্ধভাবে বিশ্বাস করাটাই হল প্রচলিত অর্থে ধর্মচর্চা। এটা বিজ্ঞানের দর্শনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
বিজ্ঞানের দর্শন একেবারেই ধর্মদর্শনের বিপরীত হলেও বিজ্ঞানশিক্ষাপ্রাপ্ত কেউ কেউ বিজ্ঞানপরীক্ষা দিয়ে ধর্মের কাহিনীকে ব্যাখ্যা করতে চান। সেটা বিজ্ঞানদর্শন সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকার কারনেই। আমি একটু ব্যাখ্যা করছি।
একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় প্রথম যেটা করতে হয় সেটা হল প্রশ্ন, সেখান থেকে সম্ভাব্য উত্তরগুলি নিয়ে একটি অনুকল্প বা হাইপোথেসিস দাঁড়া করাতে হয়, যেটা সঠিক হতেও পারে, নাও পারে, মানে প্রমাণ সাপেক্ষ। অন্যদিকে ধর্মচর্চায় প্রথমে যেটা করতে হয় সেটা হল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। দুটার মধ্যে সংঘর্ষ কোথায় তার উদাহরণ হিসেবে নিচের ছবিটা দেখতে পারেন।
মনে করি ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী পয়গম্বর একদা আঙুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিধাবিভক্ত করেছিলেন। তাহলে এটা যে সত্যি ঘটনা সেটা কিভাবে জানবো? বা এমনটা যে সত্যিই ঘটানো যায়? ধর্মবই পড়ে? না, বিজ্ঞান সেভাবে কাজ করেনা। সত্যতা বা প্রশ্নের উত্তর জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হল বৈজ্ঞানিক একটি পরীক্ষা দ্বারা। কিন্তু ঝামেলা টা তো এই জায়গায় যে একজন ধার্মিক ব্যক্তি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে 'ঘটনা সত্যি', মানে প্রমাণ ছাড়াই। অর্থাৎ, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকাহিনী পরীক্ষা করার প্রথম ধাপেই ধার্মিক ব্যক্তি অকৃতকার্য হবেন। প্রমাণিত যেকোন ফলাফলকেই আপনার গ্রহণ করতে পারতে হবে, নাহলে সেটা বিজ্ঞান নয়। আপনি যতগুলি বিজ্ঞান পরীক্ষাই এরপরে করেন তার ফলাফল এবং প্রমাণে সিদ্ধান্ত আসার কথা 'আঙুলের ইশারায় চাঁদ বা অন্য কোন গ্রহ/উপগ্রহকেই দ্বিধাবিভক্ত করা যায়না।'
আর এখানেই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য, এখান থেকেই যুক্তিবাদি মন তৈরি হয়। একজন মুসলিম ধার্মিক হিসেবে উপরের পরীক্ষার প্রমাণ কি আপনি মেনে নেবেন? প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর হবে 'না'। তাহলে আপনি 'বিজ্ঞানচর্চা' কোথা থেকে করছেন? দেশের সিংহভাগ বিজ্ঞানপড়ুয়ার মতামত ধর্মকাহিনীর পক্ষে যাবে। আর গোড়ায় গলদ বলেই কেউ যখন ধর্মকাহিনীকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তখন আমি বিশেষ পাত্তা দেইনা। আপনি যখন আগেই ধরে নেন যে ঘটনাটি ঠিক ওভাবেই ঘটেছে, তবে আপনি বিজ্ঞানমনষ্ক তো ননই, বিজ্ঞানচর্চাও করছেন না। দুঃখজনক হল, দেশের বেশিরভাগে বিজ্ঞানপড়ুয়া এরকমই।
বিজ্ঞানপ্রচারক অভিজিৎ রায় মারা যাওয়ার পরে প্রচুর বামাতি বলেছেন যে ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই, যারা বিরোধ করে তারা পশ্চিমাপ্রবণ। সেটা যে কতবড় চাপাবাজি সেটা উপরের উদাহরণ থেকেই ধারণা করতে পারছেন। অভিজিৎ রায় মারা যাওয়ার পরবর্তীতে একজন নৃবিজ্ঞানীর লেখা এবং একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের শিক্ষক কর্তৃক বিজ্ঞানমনষ্কতা যে ভাল কিছু নয় সেটার প্রচার উল্লেখ করছি, যেখানে বলা হয়েছে "ধর্মের বিপরীতে দাঁড় করানো ছাড়া বিবর্তনের আর কোন উপযোগ নাই।" আমি এই বিষয়ে আর খুব বেশি কথা বলতে চাইনা- গত ১০০ বছরের অন্য কোন তত্ব নিয়ে ধার্মিকদের কোন প্রশ্ন নাই, যেটা আছে বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে। ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে মিলছেনা বলেই এই মতামত, এমনকি তথাকথিত শিক্ষিত সমাজেও। এই মনোভাব সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানমনষ্কতার বিপরীত।
আমাদের জন্য লজ্জাজনক এই পরিস্থিতি। অন্ততঃ এই শিক্ষক যেই বিজ্ঞান পড়াবেন সেটা যে বিজ্ঞানমনষ্কতা তৈরি করবেনা সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমার বিজ্ঞান পড়ার অভিজ্ঞতাও এর বাইরে নয়। বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণীবিভাগ মুখস্থ পড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক, কিন্তু বিবর্তনকে মানতে নারাজ, আমাদের সামনে ভুলেও একবার উল্লেখ করেন না 'বিবর্তন' শব্দটি। পুরো ৫ বছর জীববিজ্ঞান পড়েছি একবারও 'বিবর্তন' শব্দটি তাদের মুখে না শুনে। বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোতে এটা কল্পনাই করা যায় না। এমন হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে। বিজ্ঞান না পড়া মানুষজন হয়তো বিজ্ঞানমনষ্ক নাই হতে পারেন, কিন্তু বিজ্ঞান পড়ুয়াদের মধ্যে এ কী দূরাবস্থা? আমার প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে জামাতের সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষক ছিলেন। ফারাবিরা যে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই বেরুবে সেটা আর আশ্চর্য কি?
আর সেজন্যই একজন অভিজিৎ রায়কে আমি এখন আরও অনেক বেশি অনুভব করছি। আমরা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও বিজ্ঞানমনষ্ক হতে পারিনি বলেই। অভিজিৎ রায়ের আগে বাংলাদেশের তিনজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী লেখকের কেউই বিজ্ঞানে ডিগ্রীধারী ছিলেন না। আমি আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ এবং আরজ আলী মাতুব্বরের কথা বলছি। ফলে বোঝা যাচ্ছে, কাউকে বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিজ্ঞান কোন বিষয় হিসেবে পড়ার দরকার নেই। কিন্তু শংকটা অন্যজায়গায়। যারা বিজ্ঞান পড়ছেন তারাই বিজ্ঞানমনষ্ক হচ্ছেন না। আর সেখানেই হতাশা। আমার দেখা কুসংস্কারাক্রান্ত মানুষগুলির মধ্যে বিজ্ঞান পড়া মানুষগুলিকে খুব বেশি আলাদা করা যায়না। সেজন্যই একজন বিজ্ঞানপ্রচারক, প্রসারক অভিজিৎ রায়ের মত মানুষগুলির এত বেশি প্রয়োজন। তাদের কলম আমাদেরকে বিজ্ঞানমনষ্ক করে তুলে, দেশকে, সমাজকে করে তোলে বিজ্ঞানমুখী।
বিজ্ঞানমনষ্কতার সঙ্গে নাস্তিকতার বা নির্ধার্মিকতার সম্পর্ক কেন আছে সেটা উপরের উদাহরণটি থেকে বুঝেছেন নিশ্চয়ই। একজন বিজ্ঞানীর পক্ষে ধার্মিক হওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। ধর্ম কখনই যুক্তি মানেনা, পৃথিবীর কোন ধর্মই। আবার বিজ্ঞান পড়লেই যে বিজ্ঞানী হয়না সেটা আমি আগেই বলেছি। বিজ্ঞানী হলেন তিনিই যিনি বিজ্ঞানের দর্শন কে বোঝেন, সেভাবে বিজ্ঞানচর্চা করেন। বিজ্ঞানপ্রচারককেও তাই যুক্তিবাদি, তথা বিজ্ঞানমনষ্ক হতে হয়। অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, ছিলেন একজন বিজ্ঞানমনষ্কও।
বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলির বিজ্ঞান গবেষনায় রত ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার সময় প্রথমেই বিজ্ঞানমনষ্কতার জ্ঞান দেয়া হয়, অন্ততঃ সুপারভাইজর হাতে ধরে শিখিয়ে দেন কিভাবে বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তা করতে হয়। এইসব দেশের প্রাথমিক স্কুলেই পড়ানো হয় বিজ্ঞান পড়তে গেলে অযৌক্তিক সকলকিছুকে একপাশে রেখে পড়তে হবে। এসব দেশের সবচেয়ে বড় নাস্তিকতদের আড্ডা হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জীববিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্ম সাংঘর্ষিক বলেই এমন। সেজন্য, আমরা যত বিজ্ঞানমনষ্কতা তৈরি করতে পারবো তত বেশি নির্ধার্মিকতা বা নাস্তিক্য আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একটা বিজ্ঞানমুখী সমাজ গড়তে হলে আপনাকে এটা মেনে নিতেই হবে। আর, ফলাফলকে ভয় পেলে তো বিজ্ঞানমুখী সমাজও গড়ে উঠবেনা।
যুক্তিবাদি বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ নাস্তিক হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু নাস্তিকতাকে অপরাধ হিসেবে নিলে বিজ্ঞানমনষ্কতা কোনদিনই তৈরি হবেনা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে। এটা যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবো তত মঙ্গল। শেষ করতে চাই কিছু প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। ঠিক এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে পুরষ্কৃত করতে গিয়ে বলেছিলেন 'বিজ্ঞানমনষ্কতা সৃষ্টির জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিন'। জাতীয়ভাবে বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে এটা কিভাবে সম্ভব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? দেশের মুক্তচিন্তকদের অবাধে চলাফেরা, বিজ্ঞানচিন্তা, প্রকাশ, প্রচারের পথ উন্মুক্ত করে দিন। অন্ততঃ সেই ব্যবস্থাটুকু নিন এই প্রত্যাশা।
মন্তব্য
"যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বৈজ্ঞানিকও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, তারা তার বংশধর।" -- হুমায়ুন আজাদ।
এ ধরণের কথা অনেক উত্তরাধুনিকও অবশ্য বলে থাকেন। নৃবিজ্ঞানী আর জীববিজ্ঞানের শিক্ষকের লেখাগুলির লিঙ্ক কি দেয়া যাবে?
Emran
এখান থেকে পাবেন। বামাতি শিক্ষকের নাম জোবায়ের মাহমুদ। ধাতানি খেয়ে পোষ্ট সরিয়ে ফেলেছেন।
লিঙ্ক ধরে লেখাটা পড়ে এলাম। কুৎসিত এবং একই সাথে ভয়ানক প্ররোচনামূলক!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এদের মানসিকতা বুঝতে পারাটা একটা মনোবিজ্ঞান গবেষণার ইন্টারেষ্টিং বিষয় হতে পারে।
লিঙ্কে প্রাপ্ত নিবন্ধের লেখক "রক মনু" যে ঠিক কোন অর্থে "নৃবিজ্ঞানী", সেটাই বুঝলাম না। তবে "বাছবিচার" নামের এই ব্লগের লেখক তালিকায় কিছু পরিচিত নৃবিজ্ঞানীর নাম দেখে বুঝলাম "রক মনু" ফরহাদ মগবাজারের উত্তরাধুনিক শিশ্যদের একজন। বিবর্তন শব্দটাই এদের কাছে বিবমিষা উদ্রেককারী। ফরহাদ মগবাজার তো প্রথম আলোতে একবার দাবী করেছিলেন যে জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বোটানিক্যাল রিসার্চের মধ্য দিয়ে নাকি বিবর্তনের গালে কষে এক থাপ্পড় মেরেছেন!
Emran
আমি এদের কয়েকজনকে ফেইসবুকে অনুসরণ করি কিছু বিজ্ঞান বিষয়ে তাদের মতামত, চিন্তা বোঝার জন্য। কিন্তু প্রায় একশভাগ ক্ষেত্রেই এদের মনোভাব আমাকে বিরক্ত করে।
দারুন একটি লেখা পড়লাম । ধন্যবাদ সজীব ওসমান ভাই ।
"যুক্তিবাদি বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ নাস্তিক হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু নাস্তিকতাকে অপরাধ হিসেবে নিলে বিজ্ঞানমনষ্কতা কোনদিনই তৈরি হবেনা "-------- এই লাইনটা খুব ভাল লেগেছে ।
-------------
রাধাকান্ত
ধন্যবাদ
অনেক উন্নত (!) দেশেও বিবর্তনবাদ নিয়ে ম্যালা জল ঘোলা হচ্ছে। রাষ্ট্রও চিপায় পড়ে চুপচাপ থাকে, ভোটের মায়া সবারই কম বেশি আছে। এখানেই দরকার কিছু লোকের যাঁরা লাভ-লোকসানের হিসেব না করে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলায় কাজ করে যাবেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই যে আমাদের দেশে এরকম লোক বিরল। আর, তার মাঝেও আমরা হারালাম একজনকে।
"বিবর্তনবাদ" শব্দটাই ভুল এবং বিভ্রান্তিজাগানিয়া। বিবর্তন একটা পর্যবেক্ষণীয় প্রক্রিয়া, কোনো মতবাদ নয়। "অভিকর্ষবাদ", "সান্দ্রতাবাদ", "প্লবতাবাদ" বলে যেমন কিছু নেই, বিবর্তনবাদ বলেও তেমনই কিছু নেই।
"বিবর্তনবাদ" কথাটা ভুল কেন হবে, বুঝিনি। এভোলুশন একটা থিয়োরী, এবং এই থিয়োরির সাথে আমাদের বায়োলজিক পর্যবেক্ষণের প্রায় শতভাগ মিলে যায় একেবারে খাপে খাপ, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা থিয়োরীই। নিউটনের গ্রাভিটেশন ল'গুলোও থিয়োরী। থিয়োরী বা মতবাদ হিসাবে, এগুলোর শেষে "বাদ" লাগানোয় ভুল দেখছিনা।
----যান্ত্রিক বাঙালি
বিবর্তন নিজে একটা তত্ত্ব নয়, প্রক্রিয়া। বরফ গলে পানি হওয়া যেমন কোনো মতবাদ নয়, প্রক্রিয়া। আপনি যেটাকে তত্ত্ব বলছেন, সেটা সম্ভবত ডারউইনের "প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের তত্ত্ব"।
আপনার "প্রায় শতভাগ" কথাটা খুব আগ্রহোদ্দীপক। আপনি "এভোলুশন একটা থিয়োরী" বলতে যা বোঝেন, তার সঙ্গে খাপে খাপ মেলেনি এমন দুয়েকটা জীববৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের কথা উদাহরণ হিসেবে বললে "প্রায় শতভাগ" কথাটার প্রতি সুবিচার হতো মনে হয়।
ওহ আচ্ছা, বুঝেছি। আপনার ধারণা সঠিক, আমি ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বই বুঝিয়েছি, আর মনে করেছি আপনিও সেটাই বোঝাচ্ছেন। মেঘলা মানুষের কমেন্টে ঠিক বোঝার উপয় নেই কোনটা বুঝিয়েছেন। কেউ মতবাদটাকে রেফার করতে চাইলে বিবর্তনবাদ শব্দটা ব্যাবহার করা যেতেই পারে।
আর "প্রায় শতভাগ" কথাটা "ওভারহোয়েলমিং" এর বাংলা করতে গিয়ে বলা---এটা যে কেউ "শতভাগ" পড়ে নিতে পারেন, সমস্যা নেই।
----যান্ত্রিক বাঙালি
অবশ্যই। জনপ্রিয় কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল এবং মানুষের জন্য বিপজ্জনক প্রচুর সিদ্ধান্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র এভাবে গ্রহণ করে।
ধন্যবাদ
অনেক প্রয়োজনীয় আর যুগোপযুগী একটা লেখা। আমার মনে আছে যখন কলেজ এ পরতাম একটা গুজব উঠেছিল অমুক তারিখে পৃথিবী ধংস হয়ে যাবে। আমাদের কেমিস্ট্রি র একজন টিচার পর্যন্ত বলছিল কেয়ামত চলে আসছে। ওই দিন সূর্য পশ্চিম দিকে উঠবে। আমি সাহস করে টিচার কে জিগ্গেস করতে পারিনাই যেএকটা দিন এর জন্য সূর্য পশ্চিম দিকে উঠতে হলে তো পৃথিবী কে হটাত করে উল্টোদিকে ঘুরতে হবে. আর পৃথিবীর সব জায়গায় তো এক এ সাথে রাত আর দিন হয় না.
সাহস হয় নাই এই কথা জিগ্গেস করার। কারণ একে তো ছাত্রী তার উপর বিধর্মী। এত বড় বেয়াদবির না জানি কি শাস্তি পাইতাম।
সবসময় আমাদের শিখানো হয় আল্ল্লাহ / ইশ্বর/ ভগবান কে ভয় করতে। আর এই ভয় ই আমাদের কোনো প্রশ্ন করতে দেয় না. আমরা ভাবি প্রশ্ন করলেই আমাকে ধরে দোজখে/নরকে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু এইরকম ভেবে কি আমরা সৃষ্টিকর্তা কে এ অপমান করি না. কেউ যদি সত্যি আস্তিক হয় তাহলে তার তো এই বিশ্বাস থাকা উচিত যে সৃষ্টি কর্তা অসীম করুনাময়। তাকে ভয় করার কিসু নাই. যদি ভয় করার বদলে সৃষ্টিকর্তা কে ভালবাসতে শিখানো হত তাহলে বোধয় মানুষের ধর্মান্ধতা অনেক খানি কমত.
ভয় করুন আর ভলো-ই বাসুন। কোন ফয়দা নাই। 'সৃষ্টিকর্তা'র মান-অপমান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরলে সমস্যা অবশ্যম্ভাবী।
প্রচলিত ধর্ম গুলোর কথায় বিশ্বাস রেখে বিজ্ঞানমনস্ক হবার কোন পথ নাই। তবে একদিনে তো আর মন থেকে সব সংস্কার ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায় না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এই যে এই পোস্টটাকে এপ্রিশিয়েট করতে পারছেন। এটি একটি ভালো লক্ষন। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমি সৃষ্টি কর্তার মান অপমান নিয়ে মোটেই চিন্তিত না. সৃষ্টিকর্তা যদি থাকেন তাহলে তিনি সমস্ত ধর্মের উপরে , সমস্ত মান-অপমান এর ওপরে । আমি বিশ্বাস করি মানুষের কল্যাণ এর জন্য ধর্ম। ধর্মের কল্যাণ এর জন্য মানুষ না.
এক টা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে গেলে একটা অলৌকিক ভিত্তি দরকার হয়. সেটা না থাকলে একটা ধর্ম টিকে থাকতে পারে না. (একারণেই রাজা রামমোহন রায় এর ব্রাহ্ম্য ধর্ম টিকে থাকতে পারে নি. কারণ সেটার কোনো অলৌকিক ভিত্তি ছিল না. ছিল না বছরে একদিন celebrate করার জন্য ঈদ বা পূজার মতো কোনো অনুষ্ঠান।) আবার শুধু হাস্যকর অলৌকিক গল্প গুলি যদি ভিত্তি হত তাহলে সেগুলি এত হাজার বছর টিকে থাকত না. প্রচলিত সমস্ত ধর্ম গুলির অসম্ভব শক্তিশালী দর্শন আছে যা মানব কল্যাণ এর জন্য। সেই দর্শন এক কোথায় বুঝে ফেলার মতো না. বা এক কোথায় উড়িয়ে দেয়ার মতো না. একটা জিনিস পুরো পুরি বিশ্বাস করতেও যেমন যুক্তির দরকার । আবার একটা জিনিস অবিশ্বাস করার জন্য ও যুক্তির দরকার। অন্ধ বিশ্বাস আর অন্ধ অবিশ্বাস দুটার মাঝে কোনো পার্থক্য নাই.
অন্ধ অবিশ্বাস জিনিসটা আবার কি?
আপনি আমার লেখার মূল বক্তব্য বুঝতে সক্ষম হননি বুঝতে পারছি।
পৃথিবীতে যত ধর্ম বা "অলৌকিক" বিষয় আছে, তার অধিকাংশকে অবিশ্বাস করেই মানুষ বেঁচে থাকে। অবিশ্বাস করার জন্য ও যুক্তির দরকার পড়লে পরস্পর-বিরোধী অসংখ্য মতবাদ মেনে নিতে হবে, সেইজন্যই সেটা সম্ভব নয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
"যুক্তিবাদি বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ নাস্তিক হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু নাস্তিকতাকে অপরাধ হিসেবে নিলে বিজ্ঞানমনষ্কতা কোনদিনই তৈরি হবেনা" - পুরাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বিজ্ঞানমনস্কতা বনাম বিশ্বাসমনস্কতা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখাটিতে। ‘বিজ্ঞান বনাম ধর্ম’ এই আলোচনায় প্রায়শই উঠে আসা নৈতিকতা প্রসঙ্গে আমি কিছু যুক্ত করি।
নৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার ভার বিজ্ঞান নেয় না। বিজ্ঞান মানুষকে ভৌত বাস্তবতা সম্পর্কে ইনফর্ম করে। এবং এর ফলে অনেক নৈতিক সিদ্ধান্ত যেটা আগে ধর্মীয় বা অন্য কোনো কু-সংস্কারের উপর নির্ভর করে নেওয়া হত সেটা আরো ভালোভাবে নেওয়া যায়। বিজ্ঞান বনাম ধর্মে এই নৈতিকতা অংশ নিয়েই মানুষকে তেনা পেচাইত দেখা যায়। আমার মতে প্রকৃত মুক্তমনা হিসাবে গড়ে উঠতে একজন মানুষকে হতে হবে বিজ্ঞান মনস্ক এবং মানবতাবাদী।
ভন নয়মান এর কথা ধরুণ। মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাধর বিজ্ঞানী, কিন্তু ম্যানহাটন প্রোজেক্টে কাজ করেছেন, এমনকি এটম বোমাদুটো ঠিক কোথায় মারলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে সেটাও গাণিতিকভাবে হিসাব করে বের করেছেন। ফলে তিনি বিজ্ঞানমনস্ক হলেও মানবতাবাদী হয়ে উঠতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে আসে বিজ্ঞান বনাম প্রযুক্তির কথা। বিজ্ঞান হচ্ছে বিশুদ্ধ জ্ঞান। কোনো ভৌত নীতি সম্পর্কে পরীক্ষিত সিদ্ধান্ত সমূহই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। যে জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আপনার দেখানো ফ্লোচার্টের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। বিজ্ঞানের কোনো ভালো খারাপ হয় না। E=mc^2 তাই এই মহাবিশ্ব সম্পর্কিত গভীর সত্যের একটা বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বানানো এটম বোমা হচ্ছে প্রযুক্তি। যেটার এখনো পর্যন্ত ভালো কোনো ব্যবহার পাওয়া যায় না। ওদিকে এটমিক পাওয়ার প্লান্টও প্রযুক্তি। প্রযুক্তি হিসাবে পাওয়ার প্লান্ট নৈতিক, কিন্তু ওয়েপন অফ ম্যাস ডেস্ট্রাকশন অনৈতিক। এই নৈতিক-অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্যই দরকার মানবতাবাদ। যেখানে সব ধরনের ধর্মীয় নৈতিকতায় ‘বিধর্মীদের' একরকম বাদ দিয়েই হিসাব করা হয় এবং মানুষের চেয়ে ঐ ধর্মের উপাস্যের কাল্পনিক চাওয়া না চাওয়াই বেশি গুরুত্ব পায়। সেখানে মানবতাবাদ সবার উপর মানুষকে গুরুত্ব দেয়। তাই নৈতিক প্রশ্নে ধর্ম-বনাম-বিজ্ঞান বিতর্কের চেয়ে মানবতাবাদ-বনাম-ধর্মীয়নৈতিকতাই আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া প্রয়োজন।
মানুষকে হয়ে উঠতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক এবং মানবতাবাদী। দুটোই। এবং ধর্মীয় জীবন বিধানের বিকল্পও তাই শুধু বিজ্ঞান বা শুধু মানবতাবাদ নয়। ‘বিজ্ঞানমস্কতা+মানবদাবাদ’। মানবতাবাদ বলতে কী বুঝবো সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনার অবকাশ আছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একশো ভাগ সহমত।
আপনার কমেন্ট পুরা পড়ার আগেই আমার কমেন্ট করেছি, পুরো পড়লে আমার কমেন্ট টা হয়ত দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করতাম না।
--যান্ত্রিক বাঙালি
---যা
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন, মানবিকতা।
মানবিকতার পাঠ প্রয়োজন, কিন্তু আমার মতামত হল মানবিকতার যর্থাথ অর্জনে সেইসঙ্গে যুক্তিযুক্ত মানসিকতার প্রয়োজন। যেমন, মানুষ ছাড়া কোন একটি গোত্রবদ্ধ মানসিকতার যেই মানবিকতার অর্জন এবং প্রদর্শন, যেমন, ধার্মিক মানবিকতা, সেটা একেবারেই একপেশে এবং স্বার্থপর। মানুষের চেয়ে নিজের গোত্রের প্রতি অনুরাগ প্রদর্শনের এই মানবিকতা অযৌক্তক। সেজন্য বিজ্ঞানমনষ্কতার সঙ্গে মানবিকতাও জড়িত, খুব আলাদাভাবে চিন্তা করা যায়না। যুক্তিবাদি সমাজে মানবিকতাও যথার্থ হবে বলে আমার ধারণা।
এই মন্তব্যটা লেখার 'ফুটনোট' হিসেবে লাগিয়ে দিলে লেখাটা আরো মজবুত হবে।
-সো।
অসাধারণ এই লাইনগুলি! কেন অনেকগুলো বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান পইড়াও অনেক ডাক্তার ঘোর সাম্প্রদায়িক হয়, তা বুঝা যায় এখান থেকেই!
অসাধারণ এই লেখা! অভিজিৎদাকে নিয়ে এই ধরনের লেখাই বরং বেশী প্রাসঙ্গিক। অভিজিৎদার মুক্তমনা সমাজ আর কিছুই নয়, একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ ছাড়া! আর বিজ্ঞানমনস্ক হতে বিজ্ঞান পড়তে হয় না, ভাবনার জগতটাকে প্রশস্ত করতে হয়, যুক্তির অনেক চলাচল থাকতে হয় সেখানে, যেকোন ধারনা/প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রেখে দিতে হয় অবারিত!
এই দৃষ্টিকোন থেকে দেখলেই বোঝা যায়, কেন গাদা গাদা বিজ্ঞানের বই পইড়াও কেন বহু ইঞ্জিনিয়ার, বা, ডাক্তার কেন বিজ্ঞানমনস্ক নয়; আবার তেমন কোন বিজ্ঞান না পড়েও কেন আরজ আলী মাতুব্বর হতে পারেন বিজ্ঞানমনস্ক!
অন্ধকূপ
ধন্যবাদ। অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ গড়ার যুদ্ধকে বজায় রাখতে হবে আমাকে আপনাকে।
লেখায় বেশ কিছু জিনিস তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন (শুধু আপনি নন ইদানিং অনেকেই করছেন), একে একে আসি।
১।নাস্তিকতা শব্দটির অর্থ সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাস, এটার সাথে প্রচলিত ধর্মগুলোর মানা অথবা না মানা, এই প্রশ্নটা আসে না। কেউ প্রচলিত ধর্মগুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে (বা ধর্মগুলোর একটা সাবসেট নিয়ে) পুরোদস্তুর আস্তিক হতে পারেন, সেসব ক্ষেত্রে এই আস্তিকদের সাথে বিজ্ঞানমনস্কতার তফাৎ অনেক কমে আসবে। সেক্ষেত্রে আপনার একটা অনুচ্ছেদের হেডলাইনে "বিজ্ঞানমনস্কতা ও নাস্তিকতা" কথাটা গোলমেলে। তার থেকে "বিজ্ঞানমনস্কতা ও নির্ধম" বললে আরো একুরেট হয়।
২। অভিজিৎ হত্যায় আসল ইস্যু মোটেও কোট"বিজ্ঞানমনস্কতা"আনকোট নয়, বরং আসল ইস্যু সহিষ্ঞুতার অভাব। দেশের সকল মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক বানিয়ে ফেললেও যদি সবাই মার-মার-কাট-কাট হয়ে থাকে, আর মনে মনে ভাবে যে "আমার পিয়ার রিভিউড পেপারের ভুল বাইর কইরা পাবলিশ করস, সাহস কত, তোরে তো কুপামু" তাহলে লাভটা কী? এই প্রসঙ্গটা দেখলাম উপরে স্পর্শও খানিকটা স্পর্শ করেছেন।
৩। এই পয়েন্ট টা একটু মোটা দাগের। আমরা সাধারণত বিজ্ঞান বলতে যা বুঝি(বায়োলজি, ম্যাথ, কম্পু/ফিজিক্স ইত্যাদি), সেটা দিয়ে মানুষের সামাজিক কার্যকলাপের নিয়ম কানুন তৈরী করা খুব মুশকিল, উদাহরণ, ইউজেনিক্স--- এটা নিয়ে সচলায়তনেও লেখা আছে , যেটা বেশ একটা বায়োলজিসম্মত ব্যাপার, কিন্তু মানুষ শুনলে আঁতকে উঠবে। (অন্য পাঠকদের জন্য, ইউজেনিক্স হচ্ছে মানুষদের সিলেকটিভ ব্রিডিংএর মাধ্যমে মানুষের গুণাবলী উন্নত করার চেষ্টা, অনেকটা যেমন বিভিন্ন গৃহপালিত পশু যেমন গরু, কুকুর ইত্যাদিতে খুব সাফল্যের সাথে করা হয়। হিটলার এটা করার চেষ্টা করেছিলেন, আমেরিকাতেও পঞ্চাশের দশকেও কিছু কিছু সংস্থা এটা করার চেষ্টা করেছে।)আরেকটা উদাহরণ হতে পারে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে এই যে "এথিক্স" ডিভিশন থাকে, সেটাও আসলে বলে দেয় যে শুধু সাইন্টিফিকালি ভাবলেই হয়না, মানব সমাজে পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার জন্য এথিক্স নিয়েও ভাবতে হয়।
সামাজিক বিজ্ঞানে, আমার ধারণা , এথিক্স ইত্যাদি নিয়ে ভালৈ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হয়, কিন্তু সেটা নিয়ে আমার ধারণা কম(আমি এঞ্জিনিয়ারিং এর)। বাংলা-ফেসবুক জগতে যত বড় বড় মিলিট্যান্ট নাস্তিক দেখি, তাদের সবাই মোটামুটি এই ট্রাডিশননাল সাইন্স/এঞ্জিনিয়ারিং লাইনের, এবং তারা পবিত্র বইয়ের লাইনের ভৌত-বৈজ্ঞানিক ঘাটতি বের করেই সন্তুষ্ট, তাদের একটা বড় অংশই ৩নং পয়েন্টের ভ্রান্তিতে ভোগেন।
--যান্ত্রিক বাঙালি
আমি আপনার কমেন্টের যথার্থতা ভালভাবে ধরতে পারিনি, দুঃখিত। তালগোলও খুব বেশি দেখছি না। কেন সেটা একে একে বলছি:
১.
ক. আমি নির্ধামিকতা লিখতে পারতাম, এই অংশটুকুর প্রথম বাক্যে উল্লেখও করেছি। কিন্তু টাইটেলে নাস্তিকতার চেয়ে উপযুক্ত কোন শব্দ নাই। এইটার আক্ষরিক সংজ্ঞায় না গিয়ে বরং কিভাবে সাধারনভাবে বাংলায় মানুষ এটাকে বোঝেন সেটার উপর গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করছি। এই শব্দটিক এডাল্টারাইজ করা হয়েছে বিধায় বিজ্ঞানমনষ্কতা বোঝাতে এই শব্দের ব্যবহার আরও বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি। আর এখানে আমি নির্ধামিকতাকেই শুধু বোঝাইনি। নাস্তিকতাকেও বুঝিয়েছি। কেন সেটা পরের অংশে বলছি।
খ. হ্যাঁ, কেউ কেউ শুধু নির্ধার্মিক, কিন্তু নাস্তিক নন (খুব বেশি যৌক্তিক অবস্থান নয় বলেই আমার মনে হয়)। যাই হোক, এদেরকে যদি আপনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে 'খোদা নাই' তবে কি এরা মানতে রাজি হবেন? আমার অভিজ্ঞতা বলে হবেন না। বিজ্ঞানমনষ্কতার তফাৎ সেখানে তো কমছে না। সেজন্য আপনার মতামত এখানে দূর্বল।
২. আপনি আমার লেখাটি পুরোটা পড়লে হয়তো বুঝবেন যে আমি অভিজিৎ রায় কেন খুন হয়েছেন সেটা নিয়ে একেবারেই লিখছি না। তাই আপিন এখানে 'বিজ্ঞানমনষ্কতা' ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করার তাৎপর্য বুঝিনি।
৩. আপনি এটার সঙ্গেই মানবিকতার উল্লেখ করতে চেয়েছেন বুঝেছি। স্পর্শের কমেন্টে আমার উত্তর দেয়া আছে। আর এথিক্সের প্রশ্নে আমি বলবো, সার্বিকভাবে মানবিক নৈতিকতার জ্ঞান কোন এসব এথিক্স কর্মশালায় দেয় না। যেটা দেয় সেটা হল কোন একটি বিষয়ভিত্তিক নৈতকতা চর্চার জ্ঞান। এখান থেকে 'মানুষ হত্যা খারাপ' এরকম নৈতিক জ্ঞান আশা কেন করবেন সেটা বুঝিনি।
মিলিট্যান্ট নাস্তিক তো আর মানুষ খুন করছেন না। আবার তাদের অবস্থান যদি যুক্তি এবং বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তার ফসল হয় সেটাতে খারাপ টা কি হচ্ছে?
মানবিকতা দেখাতে গিয়ে কোন অযৌক্তিক অচলায়তন না ভাঙতে চাওয়াটাও ভাল নয়। এতে দূরপাল্লায় মানুষের এবং তার অস্তিত্ব ও অগ্রগতির ক্ষতি।
ধন্যবাদ, আপনার লেখাটা আবার পড়লাম, আপনার কিছু কথার সাথে একমত,
১। ক) নাস্তিক বলতে যদি "সাধারনভাবে বাংলায় মানুষ" যা বোঝে সেটা ধরি, তাহলে আপনার কথা ঠিকই বলেছেন, সেটায় একমত। (তবে সচলায়তনের লেখক পাঠক আর "বাংলার সাধারণ মানুষ" এক নন, সেটাও একটা ব্যাপার।)
খ) "খোদা নাই" এই প্রশ্নের পক্ষে বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক যুক্তির কথা আসার আগে, খোদা বলতে কে কী বোঝেন, সেটায় আসতে হবে। কেউ বলবে খোদা উপরে বসে বসে তার উপর বিভিন্ন গজব নাজিল করছেন আর বলেছেন প্রতি পদে পবিত্র বই আক্ষরিকভাবে মেনে চলতে, আবার ২য় ব্যাক্তি বলবে, খোদা সম্ভবত বসে বসে ফিজিক্সের ল' গুলো তৈরী করে বিগ ব্যাং এর ঠিক আগের মূহুর্তে আদেশ দিয়েছেন "যা জী লে তেরে জিন্দেগী"। ১ম জনের মত, ২য় জনকেও কী আসলেই খুব সবল প্রতি-যুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব? এখন ২য় জন যদি আপনার যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হয়ে আস্তিকই থাকে, তাহলে আপনার মতে এই ১ম আর ২য় লোকের বিজ্ঞানমনস্কতায় "তফাৎ" নেই। তাহলে কিন্তু আপনার কথায় এবসোলিউট লজিক্যাল ম্যানের একটা আদর্শের কথা পাচ্ছি, (এবং আপনার স্কেলটা পুরো বাইনারী) সেটা কি বাস্তবে আদৌ সম্ভব, না উচিত?
২। এটায় আপনি ঠিক বলেছেন, ২য়বার পড়ায় ক্লিয়ার হয়েছে, ধন্যবাদ।
৩। মিলিট্যান্ট নাস্তিকরা খুন করছেননা, সেটা ভালো ব্যাপার, কিন্তু তাদের কেন উগ্র ধর্মবাদীদের মত খুন-করে-কি-করেনা স্কেলে বিচার করতে হবে সেটা বুঝিনি। অনেকের মধ্যেই "(ট্রাডিশনাল)বিজ্ঞানই সবকিছু" এমন ভ্রান্ত ধারণা দেখেছি, সেটাই বলতে চেয়েছি।
--------যান্ত্রিক বাঙালি
আমার অবস্থান হল, যদি নাস্তিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানমনষ্কতা এবং যুক্তিবাদিতা যুক্ত না থাকে তবে সেই নাস্তিকতাও মৌলবাদিতার মতই। কিন্তু কেউ যদি তার অবস্থানকে বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তা দিয়ে ব্যাখ্যা এবং প্রমাণ করতে পারে তবে সেখানে কোন সমস্যাই দেখিনা।
লেখাটা পড়ে মন ভরে গেলে......মনে জমে থাকা কিছু না বলা প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে গেলাম......ধন্যবাদ লেখাটা আর মন্তব্যে বিভিন্ন যুক্তি খন্ডনের জন্যও
ধন্যবাদ
বিবর্তন শিখাইলেতো দেশের স্কুল কলেজগুলা সব আল্লার ঠাডা পইড়া জ্বইলা ছারখার হইবো।
জরুরী লেখা-
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
স্বয়ম
খুবই দরকারি একটা লেখা
নতুন মন্তব্য করুন