শরীর, যৌনতা এবং যৌনশিক্ষা

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৫/২০১৫ - ৯:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[নারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে]

বাঙালির যৌনজীবন নিয়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের একটা লেখার অংশ:

বাঙালির যৌনজীবনে বিজ্ঞান নেই, কলাও নেই; রয়েছে পাশবিকতা। বাঙালির যৌবন অতিবাহিত হয় অবদমিত যৌন কামনা বাসনায়, যার ফল বিকৃতি। ধর্ষণ বাঙলায় প্রাত্যহিক ঘটনা, বাঙালিকে ধর্ষণকারী জাতিও বলা যায়। এর মূলে রয়েছে সুস্থ যৌনজীবনের অভাব। পশ্চিমে যে-বয়সে তরুণ-তরুণীরা ঘনিষ্ট হয়, সুখ আহরণ করে, সে-বয়সটা বাঙালির কাটে প্রচন্ড যন্ত্রণায়।

বাঙালির যৌবনমাত্রই ব্যর্থ, ও যন্ত্রণাপীড়িত। সুস্থ মানুষ ধর্ষণ করে না; অসুস্থরা ধর্ষণ না করে পারে না। বাঙালির বিবাহবহির্ভূত যৌনজীবন ছোটো নয়, তারা খোঁজে থাকে এ-সুযোগের; কিন্তু বিবাহিত যৌনজীবনই তার শরীর কামনা পরিতৃপ্তির প্রধানস্থল। এ-ক্ষেত্রে বাঙালি কি তৃপ্ত? এ-সম্পর্কে কোনো সমীক্ষা পাওয়া যায় না; আলোচনা পাওয়া যায় না কোনো। বাঙালি এ-ক্ষেত্রে পরিতৃপ্ত নয়; শুধু অপরিতৃপ্তই নয়, প্রচন্ড অসুখী।

বাঙালির যৌনক্ষেত্রে পুরুষ সক্রিয় কর্মী; নারী নিষ্ক্রিয় শয্যামাত্র। পুরুষ নিজের সাময়িক সুখ ছাড়া আর কিছু ভাবে না, সঙ্গিনীও যে সুখী হ’তে চায়, তা জানে না; কখনো জানার কথা ভাবে না। বাঙালি নারীপুরুষ পরিতৃপ্তির সাথে পরস্পরকে উপভোগ করে না। উপভোগের ধারণাও তাদের নেই। যে-প্রশান্তি, স্বাস্থ্য ও নিরুদ্বেগ পরিবেশ প্রয়োজন পরিতৃপ্তির জন্যে, তা নেই অধিকাংশ বাঙালির।

... তাই বাঙালি অনুপ্রাণিত হওয়ার সাথে সাথেই উপসংহারে পৌছে; এটা তার জীবনের সংক্ষিপ্ততম কাজ; যদিও এটা বৃহত্তম কাজ জীবনে। এখানে যে-অপরিতৃপ্তি, তা ঘিরে থাকে বাঙালি সমগ্র জীবন; তাকে রুগ্ন ক’রে রাখে। এ-রুগ্নতার ফল বাঙালির হঠাৎ-জাগা কামনা। বাঙালি নারী দেখলেই তাকে কাম্য বস্তু মনে করে, মনে মনে রমণ করে। এমন যৌনঅসুস্থ জাতি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সুস্থ হ’তে পারে না।

- বাঙালির যৌন জীবন এক ট্যাবু : হুমায়ুন আজাদ

যৌনতা নিয়ে এই অবদমন, এইসব বিকৃতি, এইযে অসুস্থতা- এইসকল মনোবৈকল্য তৈরি হওয়ার একটা বড় কারন এবিষয়ে শিক্ষার অভাব। সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য যৌনতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হয়, বিপরীত এবং নিজের লিঙ্গের শরীরকে স্বাভাবিকভাবে জানতে হয়। আর সেজন্য প্রয়োজন এবিষয়ে শিক্ষার। ছোটবেলা থেকেই আমরা যাদের কাছ থেকে নিজেদের শরীর, কৈশোরে শরীরে পরিবর্তন, যৌনাঙ্গ, অভিলাষ এবং যৌনকর্ম এইসকল কিছু নিয়ে শিখি তারা নিজেরাই সঠিকভাবে বোঝেন না স্বাভাবিক যৌনতাকে। নিজেদের শিক্ষাই হয়েছে অসম্পূর্ণ, ভুল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিকৃত। আর এই স্বল্প এবং ভুল জ্ঞান নারীপুরুষ নির্বিশেষে অর্জিত। কিন্তু, নারী নির্যাতন ঠেকাতে শুধু পুরুষকে জানলে হবেনা, নারীকেও জানতে হবে।

শরীর এবং যৌনতা নিয়ে আমাদের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে
নারী শরীর এবং তার যৌনমনস্তত্ব নিয়ে পুরুষদের হাজারো ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে। সেটা সবসময়ই চারপাশে দেখা যায়। কিন্তু ধারনাগুলি মেয়েদেরও কম নেই। এবিষয়ে একটা ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। নারী নির্যাতন রোধ বা এইজাতীয় নামে একটা ফেইসবুক পেইজ আছে, আমি তার সদস্য ছিলাম। এই পেইজ কোন নারী এডমিনই চালান বলে আমার ধারনা। সেখানে একদিন এরকম একটা পোষ্ট আসে: 'নারীর স্তন দেখে যাদের যৌনানুভূতি জাগ্রত হয় তারা অসুস্থ।' বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্তনের শারীরবৃত্তিক কাজ ছাড়াও নারীর স্তনের আকার এবং আকৃতির সঙ্গে মানুষের বিবর্তনে যৌননির্বাচনের সম্পর্ক আছে। এমনকি নারীর শরীরের ঢেউ বা বাঁকের সঙ্গেও যৌন নির্বাচনের সম্পর্ক সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (এগুলো নিয়ে এখানে আর বেশি কপচাচ্ছিনা) অর্থাৎ এই যৌনানুভূতিগুলি অস্বাভাবিক নয়। এখন নারী স্বাধীনতা, তার শরীর নিয়ে ভ্রান্ত বিষয় ছড়ালে আখেরে সমাজের জন্য এটা ভালও নয়।

সুস্থ যৌনমনস্তত্ব গড়ে তোলা জরুরী
শরীরকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হয়। কিন্তু আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরী যেই বিষয়টা সেটা হল দেহের অধিকার নিয়ে স্পষ্ট শিক্ষা প্রদান করা। বিপরীত লিঙ্গের যৌনমনস্তত্ব বোঝাও প্রয়োজন। তাই এই মানসিক শিক্ষাটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেয়া প্রয়োজন। যেমন, একজন নারীর প্রতি একজন পুরুষের যৌনকামনা জাগ্রত হতেই পারে, বিবর্তনিকভাবে এভাবেই আমাদের প্রোগ্রাম করা আছে। কিন্তু তবুও সেই নারী শরীরকে নিগৃহ বা নিপিড়ন করার অধিকার পুরুষের নাই। নারীর অনুমতি ব্যতীত তার দেহের কোন অধিকার পুরুষের নাই। তেমনিভাবে উল্টাটাও সঠিক। শিশুদের মধ্যে এই শিক্ষাটা স্পষ্টভাবে ঢুকিয়ে দেয়া গেলে তারা যৌননিগ্রহের শিকার হলেও বুঝতে পারবে যে তার সঙ্গে অপরাধ করা হয়েছে। শিশুদের প্রতি বিশেষ করে শরীর এবং যৌনতার বিষয়গুলি উন্মুক্তভাবে এবং সঠিকভাবে বোঝাতে হবে যেন সে কোন ধরনের সমস্যার কথা বাবা বা মায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। শিশুনিগ্রহের অনেক ঘটনা এই বিষয়ে অশিক্ষার কারনে প্রকাশই পায়না। তেমনি, পুরুষের মধ্যে উপযুক্ত যৌনমনস্তত্ব এবং সঠিক যৌনজ্ঞানের অভাব তাকে যৌনঅপরাধী করে তুলতে পারে।

শরীর নিয়ে পড়তে হবে
মানুষের শরীর নিয়ে পড়াটা শুধু ডাক্তারের জন্যই বরাদ্দ থাকা উচিত না। নিজের এবং বিপরীত লিঙ্গের শরীর নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান আমাদের থাকা উচিত। কিন্তু সেটা আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাচ্ছি কই। আমি যখন কলেজের ছাত্র তখন আমাদের জীববিজ্ঞান বইয়ে দুইটি অধ্যায় ছিল, পুরুষ এবং স্ত্রী প্রজননতন্ত্র নিয়ে। আমাদের জীববিজ্ঞান শিক্ষক দুই অধ্যায়ের কোনটাই ছুঁয়ে দেখেননি, অর্থাৎ আমাদের পড়াননি। কেন? একধরনের ট্যাবু থেকে, তাইনা? যদিও এইচএসসি পরীক্ষায় একটা সম্পূর্ণ প্রশ্ন এসেছিল এই অধ্যায় দুইটি থেকে। কী করুণ অবস্থা! কিন্তু আমরা যদি সমাজে শরীরকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারতাম তবে এমনটা হতনা। ছোটবেলা থেকেই শরীর নিয়ে শিক্ষাদান খুবই প্রয়োজনীয়, একটি যৌনঅপরাধহীন সমাজ তৈরির জন্য। আমাদের যৌনাঙ্গগুলিকে হাত, পা, মুখ, পায়ুর মতই প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে জানতে হবে, পড়তে হবে। এর মধ্যে কোন দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আর এই জানাটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেই সবচেয়ে ভাল হয়।

অর্থাৎ, সমাজে নারী নির্যাতন, নারী ও শিশুকে যৌন নিগ্রহ-নিপিড়ন ইত্যাদি হ্রাস করার জন্য সবচেয়ে জরুরী যেই বিষয়টা করা উচিত সেটা হল সার্বিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এর জন্য কিশোর-কিশোরী বয়সে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যৌনশিক্ষা প্রদানের কোন বিকল্প এখানে নাই। এই শিক্ষাটা যতটা মেয়েদের জন্য জরুরী, আমি মনে করি তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন একজন ছেলের জন্য। তাহলে, একজন ছেলে যখন বড় হবে তখন যৌনতা এবং নারীশরীর সম্বন্ধে অদ্ভুত, অশ্লীল, কুৎসিত, বিকৃত মানসিকতা তার গড়ে ওঠার সুযোগ কমে যাবে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে একজন নারী বা শিশুকে যৌন নির্যাতন করার পূর্বে সে কয়েকবার ভাববে। এই শিক্ষা যৌনতা এবং নারীর শরীরের অধিকার, নারীর যৌন মনস্তত্ব নিয়ে একজন পুরুষের বিবেক জাগ্রত করবে।

কিছু বই
আমি মনে করি বিদ্যালয়ে যৌনশিক্ষার ক্লাস যেমন নেয়া উচিত, তেমন আমাদের উচিত যৌনতা বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের উপযোগী করে বিভিন্ন বই লেখা, বা অনুবাদ করা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না করা গেলেও এই বইগুলি পড়ানোর জন্য বাবা মা কেই উদ্যোগ নিতে হবে, যদি তার চান তাদের শিশুটি বড় হয়ে একজন সুস্থচিন্তার, একে অপরের শরীরকে সম্মান করতে পারা মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠুক। আমি এই পোষ্টের শেষে ইংরেজীতে রচিত তিনটি বইয়ের নামতুলে ধরছি। কেউ উদ্যোগী হয়ে বইগুলি অনুবাদ করে ফেললে দারুণ হবে!

১। What’s the Big Secret?
লেখক Laurie Krasny Brown
বয়সসীমা: ৪ বা তদুর্ধ

বইটা একেবারে শিশুর সঙ্গে কিভাবে তার দেহ নিয়ে ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করা উচিত, তাকে যেসব ধারনা দেয়া উচিত সেসব নিয়ে। শিশুর যৌন এবং দেহ শিক্ষায় প্রথম বই হতে পারে এটি।

২। It’s Not the Stork!
লেখক Robie H. Harris and Michael Emberley
বয়সসীমা: ৫ বা তদুর্ধ[/b]

এই বইটা শিশু-কিশোরদেরকে বোঝায় কিভাবে সন্তান জন্ম নেয়, তার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, কিভাবে যৌনভাবে সুস্থথাকা যায় ইত্যাদি।

৩। It’s Perfectly Normal: Changing Bodies, Growing Up, Sex, and Sexual Health
লেখক Robie Harris and Michael Emberley
বয়সসীমা: ১০ বা তদুর্ধ[/b]

উপরের তিনটা বইয়ের মধ্যে এইটাই আমার পড়া আছে। (বাকিগুলা রিভিউ থেকে লেখা) কিশোর উপযোগী এই বই বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়া থেকে শুরু করে হস্তমৈথুন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছে। যৌবনে পা দেয়ার আগে এই বইটি কিশোরকিশোরীকে খুব সুন্দরভাবে যৌনকর্ম, শরীর এবং তার অধিকার নিয়ে বোঝায়।

৪। এলেম আমি কোথা থেকে?
জি এইচ হাবিব
অনুবাদটি প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৯


আজকে বাংলায় এধরনের বইয়ের একটা হদিস পেলাম: লেখক জি এইচ হাবিবের করা Where Did I Come From? বইটার অনুবাদ। মূল বইটি পিটার মায়েলের লেখা। বাংলায় অনুবাদের এই জরুরী কাজটি করার জন্য জি এইচ হাবিব প্রশংসার দাবিদার। বইটি আমি পড়িনি, রিভিউগুলি থেকে বুঝতে পারছি এটা চমৎকার বই। শিশুদেরকে যৌনমিলন থেকে শিশু ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলি ছবি দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বইগুলো পড়ে দেখতে হবে।

রাসিক রেজা নাহিয়েন

সজীব ওসমান এর ছবি

কাছে পেলে তো পড়াই উচিত। আমি যেখানে থাকি সেখানের পাবলিক লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে তো এগুলো সহজলভ্য নয়। ফলে কেউ অনুবাদ করলে দারুণ হয়। বাংলাতে বুঝতেও সুবিধা। সঙ্গে খুব সুন্দর ছবিও আছে। শিশু-কিশোরদের জন্য খুব ভাল বই এগুলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাঙ্গালিকে চিনেছিলেন হুমায়ুন আজাদ, তার মত আর কেউ এতটা নিবিঢ়ভাবে বাঙ্গালিকে বর্ণনা করতে সক্ষম হয়েছেন কিনা সন্দেহ! তার উদ্ধৃত কথাগুলিই তার প্রমাণ, কি সার্থকতার সাথেই না আগাপাছতলা তুলে এনেছেন!

আমাদের জীববিজ্ঞান শিক্ষক দুই অধ্যায়ের কোনটাই ছুঁয়ে দেখেননি, অর্থাৎ আমাদের পড়াননি। কেন? একধরনের ট্যাবু থেকে, তাইনা?

জীববিজ্ঞান শিক্ষক জানেন, এগুলো অরুচিকর, সেক্স শব্দটাই তাই ক্লাসরুমে নিষিদ্ধ! অথচ মানুষের জীবনের এই অতি মৌলিক বিষয়টি ক্লাসে আলোচিত হওয়াটা যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং এর শিক্ষন ছাত্রদিগকে সুস্থ যৌনজীবনে উদ্বুদ্ধ করে সমাজকেও সুস্থ করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে, সেই বিষয়টাই হয়ত তার মাথায় নেই! এজন্যই আমার মতে, শিক্ষকদেরও শিক্ষা প্রয়োজন, ট্যাবু ভেঙ্গে ফেলতে এর কোন বিকল্প নেই।
।।।।।
অন্ধকূপ

সজীব ওসমান এর ছবি

সেটাতো প্রয়োজনই। কিন্তু, আমার পয়েন্টটা হল সবাই যখন শিশুকিশোর থেকেই এগুলো পড়ে বা জেনে বড় হবে তখন একটা সচেতন সমাজ তৈরি হবে, সেখানের শিক্ষকও নিশ্চয়ই সচেতন হবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিয়ে ছাড়া যৌনকামনার স্বাভাবিক পরিতৃপ্তি সম্ভব না বলেই হয়ত বাঙালী বিয়ে নিয়ে এত অবসেসড। যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেই অবধারিতভাবে কারো না কারো বিয়ের প্রসঙ্গ উঠবে। আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে এটাকে আমার কাছে বোরিং এবং কিছুটা ভালগার বলে মনে হয়। একসময় প্রতিবাদও করতাম; উল্টো কথা শুনতে হত বিদেশে থেকে বাঙালী সংস্কৃতিকে ঘেন্না করি নাকি।

আর আপনি যেসব বইয়ের নাম দিলেন, সেসব বই শিশুকিশোরদের আগে পড়া উচিৎ তাদের বাবামায়ের। বাল্যবিবাহ নিয়ে ঝর্ণা যা লিখেছেন, সেটা পড়লে বুঝবেন যে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদেরই কোন ধারণা নেই; জোর করে একজন ১৩ বছর বয়সের কিশোরীকে বার্থকন্ট্রোল পিল গেলানো হয়েছে। বার্থকন্ট্রোল পিল যেহেতু হরমোন নিঃসরণকে প্রভাবিত করে, একজন নারীর সম্পূর্ণ মেডিক্যাল হিস্ট্রি পর্যালোচনা না করে কোন সচেতন ডাক্তার কখনও এই ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করবেন না। আমাদের দেশে কম্পাউনডারও যেমন ডাক্তার, তেমনই বার্থ কন্ট্রোল পিলও ওভার-দ্য-কাউনটার ড্রাগ; লোকে ভাবে একটা কিনে এনে খেলেই হয়।

Emran

সজীব ওসমান এর ছবি

বাবামাদের অবশ্যই পড়া উচিত। কিন্তু সার্বিকভাবে পরিবর্তনে বাবামাকেও এসব পড়ে বড় হতে হবে। তাতে করে নিজের সন্তানের প্রতি যথাযোগ্য আচরণ করতে পারবেন।

ঝর্ণার লেখাটা আজ সকালেই পড়েছি। বেশ করুণ এবং হতাশাজনক। এর পরিবর্তন প্রয়োজন।

রানা মেহের এর ছবি

যৌন শিক্ষা, নিজের শরীর নিয়ে জানা এই জিনিসগুলো যে কত জরুরী, নিজের জীবন দিয়েই বুঝি।

প্রথম যখন পিরিয়ড হয়, আম্মা এমন একটা অবস্থা করেছিলেন, বাসায় প্রায় লুকিয়ে থাকতাম। মনে হতো কী একটা অপরাধ করেছি। কেউ বলেওনি এটা কেন হচ্ছে, কী হচ্ছে।
কমাস পর খালার বাসায় গেলাম। সেখানেও একই অবস্থা। মনে হল মরেই যাই, নিশ্চই এটা শুধু আমারই হয়, আর কারো হয়না।

নারী পুরুষের মেলামেশায় বাঁধা থাকাও এর একটা কারণ। আমি পড়েছি গার্লস স্কুলে,গার্লস কলেজে। স্কুলে থাকতে কোন ছেলে বন্ধু ছিলনা, কলেজে ওঠার পর ছেলে বন্ধুরা মজা করে হলেও অনেক জিনিস বুঝিয়ে দিত, আমরাও তাদের বিভিন্ন জিনিস জানতে সাহায্য করতাম। এই তথ্যের আদান প্রদান আমাদের দুই পক্ষেরই খুব কাজে এসেছে।

এই বইগুলোর সঠিক অনুবাদ খুব জরুরী। অনেকেই হয়তো তাও সন্তানদের এসব পড়তে দেবেন না। তবু কেউ কেউ নিশ্চই দেবেন অথবা ছেলে মেয়েরা লুকিয়ে হলেও পড়বে।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই গুরুত্বটা বোঝা সম্ভব। আর বইগুলি পড়ানোর ব্যাপারে বাবামাকেই উদার মনোভাব রাখতে হবে। ছেলেমেয়ের ভালোর জন্যই।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মাসুদ সজীব এর ছবি

যৌনতা নিয়ে লুকোচুরি আমাদের আছেই। একটা উদাহারণ দেই, ছোটবেলায় দেখতাম আমারা সবাই সবগুলো রোজা থাকলেও আমাদের পরিবারের মেয়ে সদস্যরা প্রায়-ই দু-তিনটে রোজা ভাঙ্গে। যদি জিজ্ঞেস করতাম উত্তর আসতো ‘ ও অসুস্থ, বুকে ব্যাথা, জ্বর ইত্যাদি। অর্থাৎ সত্যটা লুকানো হতো। আমাদের পরিবার দেয় না যৌন শিক্ষা, সে নিজেই জানে না বয়:সন্ধিকালে তার সন্তানের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত, কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। লজ্জায় হোক কিংবা অজ্ঞতা প্রসূত হোক এমন কর্ম ক্ষতিকর। এবং এই ভুলশিক্ষায় বেড়ে উঠা মানুষরাই ক্লাস রুমে-পরিবারে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে পারে না। পারে না বলেই জীব বিজ্ঞানের দুটো অধ্যায়কে এরা পাশ কাটিয়ে যায়।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। আর বিভিন্নভাবে বা নিজেরা খুঁজে খুঁজে অদ্ভুত অদ্ভুত যৌনশিক্ষা গ্রহণ করি ছোটবেলায়। পরিবর্তন দরকার।

আয়নামতি এর ছবি

খুব জরুরী একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ জানুন।
যে বইগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো যদি পাঠ্যসূচীতে আনা যেতো!
কবে বুঝবো আমরা গার্হস্হ্য বিজ্ঞানের চেয়েও যৌনবিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের সবার জন্যই মঙ্গলের?

সজীব ওসমান এর ছবি

হুম। পাঠ্যসূচীতে আনা খুব সহজ হবে বলে আমি মনে করিনা। তবে বাবামায়ের নিজেদের উচিত এসব নিয়ে আলোচনা করা, বইগুলি শিশুকিশোরদের পড়তে দেয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বইগুলির বাংলা অনুবাদ হলেও বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহে প্রকাশক/বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়। যেমন, বয়ঃসন্ধি/কৈশোরে শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে আনোয়ারা সৈয়দ হক একসময় একটা বই লিখেছিলেন "তুমি এখন বড় হচ্ছ" নামে। যতদূর জানি, সেই বই এখন আউট-অফ-প্রিন্ট। বই লেখার চাইতে বরং ব্লগ-ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়ত এখন অপেক্ষাকৃত সহজ।

Emran

সজীব ওসমান এর ছবি

সেই আশংকাটা আসলে আমিও করেছি। ঠিকই বলেছেন, অনুবাদ হলেও প্রথমে ব্লগ, ইউটিউব দিয়েই প্রচার করা উচিত। তাতে প্রথম অস্বাভাবিক ভাবটার ধাক্কাটা একটু হয়তো কমবে।

আনোয়ারা সৈয়দ হক এর বইটার নাম আমি আগে শুনিনি। পাওয়া যায় কিনা কারও কাছে খোঁজ নিতে হবে ।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

'সেক্স' বিষয়টা নিষিদ্ধ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত বলেই যৌনতা নিয়ে এতো কুশিক্ষা আর অশিক্ষা বিভ্রান্ত করে রাখে এদেশের অধিকাংশ মানুষকে।
আয়নামতি ঠিকই বলেছেন, আসলেই গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের চেয়ে যৌন বিজ্ঞানের শিক্ষা জরুরি।

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। আমিও একমত।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিকঠাক বইয়ের অভাব অনুভব করি। বই পড়তে আগ্রহী লোক যেহেতু কম, তাই ছোট ছোট ভিডিও হলে ভালো হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সজীব ওসমান এর ছবি

ভিডিও তৈরি করাও দারুন কাজের কথা। কিন্তু কেউ যদি আগ্রহী হয় তবে দুইটাই বানানো সম্ভব।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক আবার ছিলেন উল্টো। তিনি ঐ বিষয়গুলোই খুব রসিয়ে রসিয়ে পর্যাপ্ত রসালো ইঙ্গিত দিয়ে পড়াতেন। ততোদিনে আমরা রসময় গুপ্ত পড়ে ফেলেছি, এক টিকিটে দুই ছবিও দেখে ফেলেছি। ফলে খুব মজা লাগতো ক্লাসগুলো।
এই যে চ্যাপ্টারগুলো এড়িয়ে যাওয়া, আর চ্যাপ্টারগুলোতে বাড়তি ইঙ্গিত দিয়ে পড়ানো দু'টোই আসলে ক্ষতিকর। স্বাভাবিক শিক্ষাটা হয় না। আমাদের কৈশোরের যৌনশিক্ষা বড্ড অস্বাভাবিক।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। এই বিষয়টা ভেবে দেখিনাই। দুইটাই একধরনের বিকৃতি বা অস্বাভাবিকতা প্রসূত। সেজন্য সঠিকভাবে যৌনজ্ঞান প্রদানের বিকল্প নাই শিশুকিশোরদের যা সার্বিকভাবে সুস্থতা দেবে সমাজে এবং এই বৈকল্যগুলি এড়ানো সম্ভব হবে অনেকটা।

রণদীপম বসু এর ছবি

শিশুর এই যৌনশিক্ষার ব্যাপারে এখনপর্যন্ত অভিভাবককেই উপযুক্ত শিক্ষক হতে হবে বলে মনে করি। কেননা প্রতিটা শিশুর মন-মানসিক অবস্থা এবং পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। এক কাতারে সবাইকে একসাথে স্কুলে একই আঙ্গিকে শিক্ষা দেয়ার বিষয়টা কতোটা উপযোগী হবে বিশেষ করে প্রচলিত শিক্ষক-মানসিকতার সাপেক্ষে, তা একটা প্রশ্ন বৈকি !
ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে ওঠা আমার ছেলে সন্তানকে পর্যায়ক্রমে এসব শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমি হয়েছি তাও মজার বৈকি। সন্তান ছেলে হলে পিতাই উপযুক্ত শিক্ষক এবং সন্তান মেয়ে হলে মাতাই অধিকতর উপযোগী বলে মনে হয়। তবে উভয় ক্ষেত্রেই মা-বাবার পারস্পরিক মতবিনিময় অত্যন্ত জরুরি। কেননা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, মা-ই আসলে সন্তানের নাড়ি-নক্ষত্রের সুলুক-সন্ধান খুব ভালোভাবে জানেন এবং বোঝেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে সন্তানের পিতা-মাতা যথোপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত নন তার বেলা ? সেই আবারো স্কুলই ভরসা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সজীব ওসমান এর ছবি

আমরা কিন্তু একই পাঠ্যবই এমনিতেই সবার জন্য স্কুলে পড়াচ্ছি। শুরুটা তো করতে হবে। একেকজন একেকরকম এই চিন্তাটা প্রথমে ভাবাটাই কাজের কথা নয় বলে মনে করি। আবার দুই লিঙ্গের শিশুদেরই উভয় লিঙ্গের সম্বন্ধে সমান জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

আর আমার ধারনা শিক্ষকদের জ্ঞানটা হয়তো একদিনে তৈরি হবেনা। আজকে যাকে শেখাবেন তিনিই ভবিষ্যতে শিক্ষক-শিক্ষিকা হবেন।

সুমাদ্রী এর ছবি

আমাদের অঞ্চলটায় যে সংস্কৃতি বিরাজমান সেখানে 'যৌন' শব্দটাই তো অশ্লীল। স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের এই বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই, এ বিষয়ে কেউ আলোচনা করতে চায় না, এটা নিষিদ্ধ চ্যাপ্টার, গন্ধম ফল। মায়েরা যারা নিজের শরীরটার আচরণ নিয়ে অজ্ঞ তারা তাদের কণ্যা-সন্তানকে কীকরে যৌনতার শিক্ষা দেবে। ফলে রজঃপ্রাপ্তির সময়টা একটা কিশোরীর কাছে ভীতিকর একটা সময়, তাকে শেখানো হয় রজঃস্রাব একটা অসুখ, শরীরটা নোংরা হয়ে যায় তখন, সে স্কুলে যেতে পারবে না, খেলতে পারবে না। যে পিতা তার বয়ঃসন্ধির সময়টা কাটিয়েছে ভয়ানক নিঃসঙ্গতায় আর অস্বস্তিতে, যে একদিন রাতবিরেতে ধরমরিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে তার নিম্নদেশে লেগে আছে হলদেটে আঠালো তরল, যে হতবিহবল কিশোর ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তার পিতা-মাতা তাকে উলটো গাল-মন্দ করেছে সে কী শেখাবে তার পুত্রকে? তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবী প্রথম চুমো খাওয়ার পর খুব মন খারাপ করে বলে, চুমো খেলে পেটে বাচ্চা আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু একদিন বলে, মেয়েদের শরীরে অণ্ডকোষ নেই?

আমাদের এখানে নৈতিকতার যে শিক্ষা দেয়া হয় ওতেই তো রয়ে গেছে গলদ। এখানের সমস্ত সমস্যার মূলে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ। আমরা শরীরটাকে ভাবি নোংরা কিছু একটা, আমরা ভাবি কেন? আমাদের ভাবতে শেখানো হয়েছে শিশুকাল থেকে তাই। এটা হলে ওই ব্রতটা ভেঙ্গে যাবে, ওটা করলে এই ব্রত। এসব কে শেখাবে? পুরো সমাজটাই তো অন্ধ, সমস্ত কিছুর উত্তর ধর্মে পেতে চায় সে।
যে সংস্কৃতিতে শিশুকাল থেকেই ছেলে আর মেয়ে নিজেদের ভিন্ন গ্রহের প্রাণী হিসেবে দেখে, একসাথে খেলা বারণ, বন্ধু পাতা বারণ, পড়ালেখা করা বারণ, বারণ আর বারণ সেখানে কেমন করে নারী-পুরুষ নিজেদের স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে?

আমার মনে হয় যতদিন পর্যন্ত না যৌনতাকে একটা স্বাভাবিক শব্দ হিসেবে আমরা ভাবতে পারছি ততদিন এই বিকৃতি থাকবেই। সহশিক্ষা ছাড়া বিকল্প নেই। শিশুদের, কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বন্ধুতার সম্পর্ক যেন বিরাজ করে এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়া দরকার। আবশ্যিক করতে হবে যৌনতার বৈজ্ঞানিক শিক্ষা, শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে কেননা উনারা নিজেরাই এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। পত্রিকায়, টিভিতে এ নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বা অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। একটা ব্যাপার মানুষের মগজে ঢোকাতে হবে যে শরীর বা শারীরিক ব্যাপারস্যাপার লজ্জ্বার কিছুই নয়, এটাকে জানুন।

তবে আমার মনে হয় না আশাবাদী হবার খুব কারণ আছে, রাস্তায় প্রস্রাব ঠেকানোর জন্য যেখানে আরবী লেখার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, মানুষ যে হারে দিন-দিন ধর্মাশ্রয়ী হয়ে পড়ছে তাতে যৌনশিক্ষা এখানে যে ক্রমশঃই আরো নিন্দিত এবং সমালোচিত হবে সন্দেহ নেই কোন।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

সজীব ওসমান এর ছবি

একদম একমত।
তবুও পরিবর্তনের চেষ্টাতো করতে হবে, আমাদেরই।

এক লহমা এর ছবি

চলুক গুরু গুরু
আমার পড়া সবচেয়ে ভালো মন্তব্যের তালিকায় উপরের দিকে থাকবে এ মন্তব্য। ধন্যবাদ সুমাদ্রী।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

চরম উদাস এর ছবি

আমাদের সমাজ সংস্কৃতির আলোকে এই বইগুলার কোন বাংলা অনুবাদ বা এরকমের কোন মৌলিক বই লেখা কি সম্ভব? হলে কিন্তু দারুণ ব্যাপার হবে। শুরুতে অনেক প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে কিন্তু আস্তে আস্তে নিশ্চয়ই সবাই আরও সচেতন হবে।

সজীব ওসমান এর ছবি

নিশ্চয়ই সম্ভব। কিন্তু ঐযে ইমরান উল্লেখ করলেন, বই লেখা হলেও প্রকাশক পাওয়া যাবেনা। আপাতত ব্লগই ভরসা মনে হয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

শিশিরকণা এর ছবি

অন্তত লুকিয়ে লুকিয়ে রসময় গুপ্তের বদলেও যদি ছেলেপিলে এইরকম বই পড়ে তাহলেও হোত।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সজীব ওসমান এর ছবি

সেটাই। হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চমৎকার বলেছেন! আমাদের যৌনশিক্ষা হয় চটি পড়ে। এতে বিকৃত মানসিকতা বাড়তে বাধ্য। অথচ সেবা প্রকাশনীর একমাত্র যৌনশিক্ষা বিষয়ক বই ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

অতিথি লেখক এর ছবি

১৯৬০-র দশকে আমার বাবা-মার বিয়েতে তারা আবুল হাসানাতের যৌনবিজ্ঞান উপহার পেয়েছিলেন। সেই বই তারা পড়েছিলেন কিনা জানি না, তবে ফেলে দেননি; এবং এখনও আমাদের বাড়িতে বইটা আছে। প্রায় ৬০ বছর আগে আবুল হাসানাত স্বনামে বাংলায় যে বই লেখার, প্রকাশক সেই বই প্রকাশ করার, এবং একজন ক্রেতা সেই বই বিয়েতে উপহার দেয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন, একবিংশ শতকের বাংলাদেশে কোন লেখক/প্রকাশক/ক্রেতা এ ধরণের সাহস দেখাতে পারবেন বলে তো আমার মনে হয়না।

Emran

সজীব ওসমান এর ছবি

ঠিক বলেছেন। যৌনশিক্ষাই শুধু না, ৬০ বা ৭০ এর দশকে স্বাভাবিকভাবে লিখতে পারা আরও কিছু বিষয়ও এখন কেউ লিখতে চাননা হয়তো।
বইটা কি এখনও কিনতে পাওয়া যায়?

সাইফুল আলম এর ছবি

অসাধারন একটি বই।
এর দুইটি খন্ড আছে।
ছাত্রজীবনে আমি কিইনেছিলাম।
সকল পরিবারে এই বই দু'খানা থাকা আবশ্যক।

কিন্তু সমস্যা হলো এখনকার ছেলেমেয়েরা বই পড়েনা।

সজীব ওসমান এর ছবি

সঠিকভাবে যৌনতাকে না বুঝে চটি পড়ে জ্ঞানলাভ করলে সেটা আসলে আমাদের মধ্যে একটা বিকৃত যৌনমানসিকতা তৈরি করে। এর ফলে কোন মেয়ে কোন ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসলেই ছেলেটা মনে করে যে মেয়েটা তার সঙ্গে বিছানায় যেতে চাইছে। শরীরকে সম্মান করার ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলে যায় মানুষ। যৌনঅপরাধ সমাজে বাড়ে এই কারনে। যৌনশিক্ষার অনেক বই থাকার প্রাসঙ্গিকতা সেইজন্য ভালভাবেই অনুভব করা যায়।

স্বপ্নহারা এর ছবি

চলুক

আমাদের সময় বিদ্যুৎ মিত্রের একটা বই ছিল, যেটা অনেক ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিয়েছিল। আমাদের সমাজে সবার যৌনশিক্ষাই অস্বাভাবিক- যেকারণে খুব সম্ভব একটা যৌনকাতর জাতির দেখা পেয়ে যাই প্রতিনিয়তই

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সজীব ওসমান এর ছবি

আরও অনেক বই প্রয়োজন। বড়দের জানার চেয়েও বেশি প্রয়োজন ছোটদের জানার। আর বড়দের প্রয়োজন ছোটদেরকে এসব জানার জন্য সুবিধা করে দেয়া, বা পড়তে দেয়া। এই উদারতাটুকু জরুরী!

সজীব ওসমান এর ছবি

সম্প্রতি কানাডার অন্টারিও রাজ্যে স্কুলে যৌন শিক্ষার কারিকুলাম আপডেট করা হয়েছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক পিতামাতা আন্দোলন শুরু করেছেন ভালভাবে ব্যাপারটা না বুঝেই। বেশকিছু বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানি পিতামাতা আছেন এদের মধ্যে। তাদের ধারণা হয়তো বাচ্চাদের পর্ন দেখানো হবে। যে মিথগুলি ছড়ানো হচ্ছে সেগুলি নিয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

যৌন শব্দটা শুনলে যাদের মনে পর্ন আসে তারা আসলে এই শিক্ষায় বাধা দিতেই চাইবে! :/ তাইনা?

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

এক লহমা এর ছবি

এই চমৎকার এবং জরুরী পোষ্ট-টা আমার নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। মন খারাপ

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সজীব ওসমান এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ইউটিউবের এর মূল সংস্করণের প্রিভিউ দেখা যাবে।

- ইমতিয়াজ।

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।