বিজ্ঞানমনষ্কতা নিয়ে কিছু চিন্তা ২

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: সোম, ২১/০৯/২০১৫ - ৮:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত কয়েকবছর ধরে দু'একটি ব্লগে বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছি। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয়করণ আমার লেখালেখির প্রেরণা ছিল। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ লিখতাম আমি, যেমন, ডিএনএ বা প্রোটিনের গঠন, কাজ, বিবর্তন, জীবের বিলুপ্তি ইত্যাদি নিয়ে। আমার ধারণা ছিল বাংলায় বিজ্ঞান পড়তে পড়তে সাধারন মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাতীরা বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহী হয়ে উঠবে, নিজেরাই বিজ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে। আবার বাংলায় লেখালেখির ফলে বাংলাদেশের সাধারন মানুষ হয়তো আরও যুক্তিবাদি হবেন বা বিজ্ঞানসচেতন হয়ে উঠবেন- এমনটা ভেবেছিলাম। বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির এই সুফল অবশ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আমার আরেকটা উপলব্ধি হল- মানুষের সাধারন বিজ্ঞান জ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনষ্কতা গন-পর্যায়ে খুব একটা থাকেনা। কিভাবে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করতে হয়, অথবা কোনটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কোনটা নয় - সেই পার্থক্য বোঝার মত চিন্তাশীল হয়ে গড়ে ওঠেন না সাধারন মানুষ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের খবর এবং ভুয়া বৈজ্ঞানিক তথ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাটা। যেমন, 'ঝাল খাবার, যেমন মরিচ খাওয়া শরীরে টেষ্টেসটেরন হরমোনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়' এবং 'মরিচের সঙ্গে পেপে বেটে খেলে ১ সপ্তাহে ক্যান্সার সেরে যাবে' - দুইটা তথ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়, অনেকগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে একে প্রমাণ করতে। অন্যদিকে দ্বিতীয় তথ্যটি গাঁজাখুড়ি, কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নাই। কিন্তু অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী মন দ্বিতীয়টাকে খুব সহজেই গ্রহণ করে নিতে চায়। এখানে গ্রহণ করে নেয়াকে 'বিশ্বাস' হিসেবেও পড়তে পারেন। বলে রাখি, অনেক ক্ষেত্রেই সাধারন মানুষের পক্ষে সত্যিকারের বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্য বোঝা বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু একটা যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনষ্ক মন অন্ততঃ জানার চেষ্টা করবে কোন তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে, কোনটা নয়। প্রথমেই নিঃসংশয় হয়ে বিশ্বাস করে বসবে না। সংশয়বাদী মন বিজ্ঞান চিন্তার অন্যতম সহায়ক। সেজন্য, সাধারন মানুষের বিজ্ঞান জ্ঞান থাকাটা অপরিহার্য না হলেও বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

এই সোশাল মিডিয়ার যুগে সঠিক এবং ভুয়া তথ্যের পার্থক্যগুলি বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষেত্রবিশেষ কঠিনও। তবে, যেহেতু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি সরাসরি এই আধুনিক সমাজকে প্রভাবিত করে সেহেতু এই সমাজে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের বিজ্ঞানসচেতন হয়ে উঠতে হবে। যুক্তিবাদি মন সঠিক-ভুলের পার্থক্য বোঝায়। বিজ্ঞানমনষ্ক মন কুসংস্কার থেকে দূরে রাখে; নিজের, অন্যের, সমাজের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। প্রকৃতির নিয়মকে বোঝার জন্য, আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে, এমনকি মানুষের মনকে বুঝতেও বিজ্ঞানচিন্তার বিকল্প নাই। বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদি চিন্তা একেকজন সুবিবেচক, বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে আমাদের। আর, একজন বিজ্ঞানসচেতন মানুষ তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে জীবনের প্রথম ধাপেই বিজ্ঞানচিন্তার বিকাশ ঘটানো। বিজ্ঞানচিন্তা কিভাবে করতে হয় সেটা বোঝা।

ছোটবেলায় কখনও বাসায় রাতে শিস বাজালে মা খুব রাগ করতেন। বলতেন, 'রাতে শিস বাজালে ডাকাত আসে।' গাজীপুরের এক গ্রামে বড় হওয়া মা এই জিনিস তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। বুঝতেই পারছেন, এই তথ্যের কোন পারিপার্শ্বিক প্রমাণ নাই। হয়তো তাদের গ্রামে কোন একসময় পাশাপাশি কোন বাসায় কেউ রাতে শিস বাজিয়েছিল, এবং কাকতালীয়ভাবে ঐ বাসাগুলোতে ডাকাত পড়েছিল। ফলে সেই গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, আশেপাশের চৌদ্দটা গ্রামে, লোকলোকান্তরে ছড়িয়ে গিয়েছে এই মিথ- 'রাতে শিস বাজালে ঘরে ডাকাত আসে।' ঘটনাটা শুধুমাত্র কাকতাল ছিল। কিন্তু কেউই যুক্তি দিয়ে সত্য যাচাইয়ের চেষ্টা করেন নি, ছড়িয়ে দিয়েছেন কথাটা। এটা বিজ্ঞানমনষ্ক বা সচেতন সমাজ কার্যকারণ দেখতে চাইতো এবং নিশ্চিতভাবেই হয়তো ভুল প্রমাণিত হত এই তথ্য। এইভাবে প্রতিদিনের জীবনে অসংখ্য তথ্য আমরা গ্রহণ করে নেই যুক্তি এবং বিজ্ঞানমনষ্কতা ছাড়া। তেমনি, ছোটবেলা থেকেই আমাদের বিভিন্ন আদর্শিক অবস্থান তৈরি হয় গুরুজন বা সমাজের তৈরি করে দেয়া আদর্শ বা অবস্থান থেকে যার পেছনে প্রায়ই বিজ্ঞান নির্ভর সিদ্ধান্ত থাকেনা। অভিজিৎ এর ভাষায়, "আমরা গুরুজনদের বহুল ব্যবহারের জীর্ণ আদর্শের বাণী আর অভিভাবকের শেখানো বুলি তোতাপাখির মত আজীবন আউড়ে যেতে ভালবাসি।' আবার যুগ যুগ ধরে চলে আসা কোন কোন অলৌকিকত্বে বিশ্বাসের অভ্যাস আমাদেরকে অভ্যস্ত করে তোলে অন্য অনেক নতুন অলৌকিকত্বেও বিশ্বাস স্থাপন করতে। প্রশ্ন করতে বাধা দেয়। যুক্তিহীন মস্তিষ্কের চিন্তা নতুন নতুন কুযুক্তি বা অযৌক্তিকতাকে আনয়ন করে। যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনষ্ক মন এমনকি কোন সত্য ঘটনাকেও যাচাই করে নিতে চায়।

ঝামেলাটা হল ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানমনষ্কতার শিক্ষা আমরা পাইনা। বরং উল্টাটা পাই। অপ্রমাণিত বা ভুল প্রমাণিত কিছু ধারণা দিয়ে মনকে ভরিয়ে তুলতে থাকা হয়। যুক্তিদিয়ে কিছু বোঝার আগেই আমরা শিখে ফেলি বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী। পারিবারিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। আমি এখানে বলতে চাচ্ছিনা যে ছোটবেলায় থেকে বড় হতে রূপকথার বা ফ্যান্টাসি গল্পের প্রয়োজন নাই। এইসব গল্প আমাদের কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। বরং আমি তো বলবো যত বেশি সংখ্যক সম্ভব কল্পকাহিনী পড়ানো উচিত উদীয়মান কচি মনকে। কিন্তু তার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক এবং পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমেই এও বোঝানো উচিত যে, সকল কিছুই যাচাই করে নিতে হয়- যুক্তি দিয়ে। 'আজকে তুমি যা শুনছো তা কি সত্যিই ঘটেছে বা ঘটে? কিভাবে জানবে?' কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিয়ে। এই জগতে বাস্তবিক বা ব্যবহারিক সত্যকে জানার, প্রকৃতির নিয়মকে ব্যাখ্যা করার একমাত্র উপায় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। কোনধরনের ভাববাদী বা অলৌকিক চিন্তা দিয়ে বস্তুজগতের প্রাকৃতিক নিয়মকে প্রমাণ করা যায় না। প্রয়োজন সুপরিকল্পিত পরীক্ষা।

যেমন, নিউটনের অভিকর্ষ বল আবিষ্কারের যেই কাহিনী খুব জনপ্রিয় সেটা হল- গাছ থেকে আপেল পৃথিবীর দিকে পড়ার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে নিউটনের চিন্তা এসেছিল কেন উল্টাটা হচ্ছেনা, আপেলগুলি নিচে না এসে উড়ে চলে যাচ্ছেনা। এর ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানী নিউটন কোন প্রাচীন পুঁথি ঘেটে কোন ব্যাখ্যা খুঁজে বের করতে পারতেন। যেমন, কোন অলৌকিক স্বত্ত্বা আপেল গাছকে আদেশ করেছে মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করতে, তাই আপেল মানুষের কাছাকাছি পতিত হয়, উড়ে চলে যায়না। কিন্তু নিউটন তা করেন নি। তিনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাইলেন প্রাকৃতিক এই ঘটনাকে। আমাদের উপহার দিলেন অভিকর্ষ বলের সূত্র। নিউটনের যদি বিজ্ঞানমনষ্ক, উৎসাহী মন না থাকতো তবে তিনি এই প্রাকৃতিক ঘটনার অন্যরকম ব্যাখ্যা খুঁজতে যেতেন না।

বেশ কিছুদিন ধরে আমার মনে হচ্ছে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের খবরগুলিকে বা জানা তথ্যগুলিকে বাংলায় অনুবাদ বা জানানোর পাশাপাশি আমাদের উচিত বিজ্ঞান নিয়ে কিভাবে চিন্তা করতে হয় সেটা সেখানো। শুধু আবিষ্কারের খবর পড়েই কেউ বিজ্ঞানমনষ্ক হয় না। আগেই বলেছি, দুঃখের সঙ্গেই আমি খেয়াল করেছি যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্য এবং বিজ্ঞান বলে চালানো গাঁজাখুড়ি খবরের মধ্যে সাধারন মানুষ পার্থক্য করতে পারেন না। শুধু সাধারন মানুষ বলছি কেন, সামাজিক ইন্টারনেট মাধ্যমে একজন প্রাণরসায়নের অধ্যাপক কে যখন দেখলাম '১ দিনে ক্যান্সার সারাবে যে ফল'- তখন হতাশ হলেও অবাক হইনি। একজন বিজ্ঞানের অধ্যাপক কখন একটা গাঁজাখুড়ি খবরকে বিজ্ঞানতথ্য হিসেবে প্রচার করেন? আমি মনে করি- যখন বিজ্ঞানচিন্তার প্রক্রিয়া না বুঝে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেও মানুষ দিব্যি অবৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা করে চলেছেন এমন হাজারটা উদাহরণ দেয়া যাবে। বিজ্ঞানের দর্শনকে গ্রহন করেন না এদেশের বিজ্ঞান পড়ুয়া মানুষও। এখানে বলে রাখা ভাল, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেই বিজ্ঞানমনষ্কতা তৈরি হয়না। বিজ্ঞানকে আমরা দর্শন হিসেবে গ্রহণ করতে পারিনি বলেই। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও প্রবল কুসংস্কারি মন তৈরি তাই অহরহই ঘটছে, আমাদের আশেপাশেই প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞানের দর্শন বলতে আমি বোঝাই বিজ্ঞান চিন্তার প্রক্রিয়াকে। মনে করি আপনি কোন বইয়ে এই তথ্যটি খুঁজে পেলেন - ঘোড়ার ডানা থাকতে পারে যা বাতাস ছাড়াই উড়তে পারে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে উড়ো কথা শুনে বা পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই তথ্য প্রমাণ ছাড়া কিছুই আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না। যদি করে থাকেন তবে আর যাই করুন, আপনি বিজ্ঞানচিন্তা এবং বিজ্ঞানচর্চা - কোনটাই করছেন না। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আপনি চাইবেন তথ্যটাকে প্রমাণ করতে। মনে করি আপনি চাইলেন প্রমাণ করতে। তাহলে সেটা করতে গেলে বিজ্ঞান প্রক্রিয়া সম্বন্ধে আপনার সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে, সেটা খুব কঠিন বিষয়ও না। কোন তথ্য বা ঘটনাকে প্রমাণ করতে হলে প্রথম যেটা করতে হবে তা হল- আপনার মনটাকে একদম পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। যে তথ্যই হোক, সেটাকে প্রমাণ করা বা না করা সম্পূর্ণ নির্ভর করা উচিত পরীক্ষার উপর। আগে থেকেই যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকেন যে - 'ঘটনাটা ওভাবেই হয়েছে', তবে আপনি বিজ্ঞানচর্চা করছেন না। বিজ্ঞানচর্চা করতে হলে এমনভাবে পরীক্ষাকে নকশা করতে হবে যেন কোন তথ্যকে প্রমাণ করাটার সবগুলো সম্ভাব্য উত্তরই আপনি যাচাই করতে পারেন। আর বিজ্ঞানমনষ্ক মনের কাজ হল- যে প্রমাণই আসুক সেটাকে গ্রহণ করতে পারা। আমার পরিচিত কেউ কোন ঘটনাটা বলেছে, অথবা, কোন পবিত্র বইতে কোন ঘটনা পড়েছি বলেই যে ঘটনাটা আসলে অমনটাই হয়েছে - এটা বিশ্বাস করাটা বিজ্ঞানপ্রক্রিয়া নয়। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ যদি তথ্যটাকে ভুল প্রমাণ করে তবে তাকে গ্রহণ করার মত মানসিকতা থাকতে হবে। বিজ্ঞানের দর্শন এটাই। বুঝতেই পারছেন, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেই যা আমাদের উপলব্ধিতে আসেনা।

বিজ্ঞানের দর্শকে না বোঝার খুব ভাল উদাহরণ হল সকল ধরনের তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্যকে গ্রহন করতে না চাওয়া। ব্যাপারটা এমন যেন - যে জিনিস আমার ভাল লাগবে না সেটা আমি গ্রহণ করবো না। অন্যদিকে যে জিনিস আমার ভাল লাগবে বা সুবিধা দেবে তার পক্ষের প্রমাণ না থাকলেও তাকে গ্রহণ করার মনোভাব। যেমন, বিবর্তন কে বহু ধার্মিক মানুষ গ্রহণ করতে চান না। বহু তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও। বিজ্ঞানসমাজে প্রায় সর্বজনগৃহীত এই তত্ত্বকে পাশ কাটিয়ে অস্বীকার করতে চান সাধারন ধার্মিক সমাজ। ধর্মকাহিনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায়। অভিজিৎ রায় বলছেন, "বিবর্তনের ধারণা সাধারন মানুষ এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি, কারন এ তত্ত্ব গ্রহণ করলে 'ঈশ্বরের অনুগ্রহপ্রাপ্ত' বিশেষ সৃষ্টি মানুষের বিশিষ্টতা ক্ষুন্ন হয়। আর একারণেই মানুষ নিজেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ভেবে নিজেকে সৃষ্টির মধ্যমণি মনে করে, পৃথিবীকে মহাবিশ্বের মাঝখানে বসিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে।" বিজ্ঞান দর্শন অনুযায়ী, কোন বৈজ্ঞানিক সত্য বা ফ্যাক্ট মানুষের ভাল লাগা বা না লাগার উপর নির্ভর করেনা। এভাবেই বৈজ্ঞানিক সত্যগুলি হাজার বছর ধরে চলে আসা বিভিন্ন মিথ, মিথ্যা, ভুল, কুসংস্কারকে ভেঙেছে। আমরা না চাইলেও বৈজ্ঞানিক সত্যকে গ্রহণ করতে পারার মানসিকতা মানবিক উদারতা তৈরিরও উৎকৃষ্ট উপায়।

সেজন্য, বিজ্ঞানের কোন কোন তথ্যকে জানানো বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে বাংলাভাষায় উপস্থাপন করাটাই বিজ্ঞানলেখক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শেষ করে দেয়না। বিজ্ঞানের দর্শনকে বোঝাতে হবে সাধারন মানুষকে, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীকে। বিজ্ঞানচিন্তা কিভাবে করতে হয় শেখাতে হবে। এটাই একজন বিজ্ঞানপ্রচারক-বিজ্ঞানপ্রসারকের প্রধান কাজ, বিজ্ঞান দর্শনকে ছড়িয়ে দেয়া। এই কাজে ড. অভিজিৎ রায় ছিলেন মাস্টারক্লাস। বিজ্ঞানদর্শনকে তিনি মানুষের মাঝে বিলাতে চেয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সাধারন মানুষ বিজ্ঞানচিন্তা করতে শিখুক, সকল ধরনের কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যের সন্ধান করতে শিখুক, অলৌকিকত্বের শেকল ছিড়ে বেরিয়ে আসুক। একজন সফল বিজ্ঞান দর্শনের প্রসারক অভিজিৎ। এই কাজ করতে গিয়ে তাকে মৌলবাদি চক্রের চক্ষুশূল হতে হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু অভিজিৎ পরাজিত হন নি, তাঁর চিন্তা, কাজ রয়ে গিয়েছে আমাদের সাথে। অকালপ্রয়াত এই প্রাজ্ঞকে জন্মদিনে শ্রদ্ধা। আপনার মশাল যেন দেশের বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষ বয়ে যেতে পারে এই কামনা।

এই সিরিজের আগের লেখাটির লিংক

(ছবিসূত্র: http://www.moddb.com/)


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বিলম্বিত শুভ জন্মদিন অভি'দা।

বিশাল একটা মন্তব্য সাজাতে সাজাতে পড়ে শেষ করলাম, তারপর এইটা

কোন বৈজ্ঞানিক সত্য বা ফ্যাক্ট মানুষের ভাল লাগা বা না লাগার উপর নির্ভর করেনা। এভাবেই বৈজ্ঞানিক সত্যগুলি হাজার বছর ধরে চলে আসা বিভিন্ন মিথ, মিথ্যা, ভুল, কুসংস্কারকে ভেঙেছে।

দেখে মনে হল এইটুকুই আসল কথা... Let there be light...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
এই মানুষটার ধৈর্য দেখে মুগ্ধ হতাম। বিবর্তন বা এজাতীয় কোন বিষয় নিয়ে কারো সাথে তর্ক হলে এক দুই কথার পর ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। মনে হয়, যে সব জেনে আছে বলে মনে করে আমার কি ঠ্যাকা তাকে শিক্ষিত করার। অথচ এই মানুষটাকে দেখতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়ে যুক্তি দিয়ে ফারাবি শ্রেণীর ছাগলগুলাকেও বুঝাতে যেত। ঘরের খেয়ে বনের মোষ শিক্ষিত করতে যাবার পুরস্কার এই !

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। আর খুঁটিনাটির দিকে তীব্র মনোযোগ ছিল। হারালাম..

এক লহমা এর ছবি

চলুক
এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় না কো আর। সশ্রদ্ধ স্মরণ।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

স্যাম এর ছবি

বিজ্ঞানের দর্শনকে বোঝাতে হবে সাধারন মানুষকে, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীকে। বিজ্ঞানচিন্তা কিভাবে করতে হয় শেখাতে হবে।

এটাই জরুরী। অনেক ভাল লেগেছে লেখা।

সজীব ওসমান এর ছবি

হুম.. ধন্যবাদ

স্পর্শ এর ছবি

এই পোস্টে অভিজিৎ দার একটা ছবি ছিলো। লাল ব্যানারের মাঝে। এখন মনে হয় সরিয়ে ফেলা হয়েছে বা কাজ করছে না। ছবিটার লিঙ্ক কি দেওয়া যাবে? সংগ্রহ করে রাখতে চাই।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সজীব ওসমান এর ছবি

এই লিংক এ পাবেন। কোন কারনে মাঝেমধ্যে দেখা যাচ্ছেনা ছবিটা। সরাইনি।
http://www.atntimes.com/wp-content/uploads/2015/03/%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%8E-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F.jpg

সো এর ছবি

শ্রদ্ধা

সজীব ওসমান এর ছবি

শ্রদ্ধা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।