গরম খবরটা নিয়ে গরম গরম লিখে ফেলছি। আজকে একদল জিনবিজ্ঞানী তাঁদের আবিষ্কার প্রকাশ করেছেন যেখানে তারা খুঁজে বের করেছেন যে আমাদের অজান্তেই আমাদের আশেপাশেই অতিমানব বা সুপারহিরো থাকতে পারেন, জিনেটিক সুপারহিরো।
রেযিলিয়েন্স প্রজেক্ট নামের গবেষণাটি এমন ১৩ জন মানুষকে খুঁজে পেয়েছেন যাদেরকে 'রিজিলিয়েন্ট' বা 'স্থিতিস্থাপক' বলা চলে। প্রায় ৬ লাখ সুস্থ মানুষের জেনোম থেকে খুঁজে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে এই ১৩ জন মানুষের দেহে যেই মিউটেশান বা পরিব্যক্তি আছে সেটা অন্য 'সাধারন' মানুষে থাকলে তাদের ভয়াবহ, কোন ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী জিনগত রোগ হতে পারতো! কিন্তু এই ১৩ টা মানুষের হচ্ছে না। শিশুকালেই যে রোগে প্রাণ যেতে পারতো তারা বেশ বয়স বেড়ে বুড়ো হচ্ছেন। কাহিনী কী?
ইন্ডাষ্ট্রি এবং একাডেমিক কয়েকটি গবেষণা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণায় ৫৮৪ মারাত্মক জিনগত রোগের জন্য দায়ী মিউটেশানগুলি খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেল, ৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৩০৩ জন মানুষে এই মিউটেশানগুলা থাকতে পারে। আরও কিছু পরীক্ষার পরে শেষে ১৩ জন মানুষে মিউটেশানগুলি আছে বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এই ১৩ জন মানুষে মিউটেশানগুলি থাকার কারনে যেই মারাত্মক ৮ টি শিশুরোগ হতে পারতো তাদের নাম - cystic fibrosis, Smith-Lemli-Opitz syndrome, familial dysautonomia, epidermolysis bullosa simplex, Pfeiffer syndrome, autoimmune polyendocrinopathy syndrome, acampomelic campomelic dysplasia এবং atelosteogenesis।
এই ১৩ জন মানুষের সুপারহিরো হওয়ার পেছনে কারনটা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। আরেকটি গবেষণায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল যে প্রতি ২০ হাজার আলঝাইমার্স রোগীর ঝুঁকিতে থাকা মানুষের মধ্যে ১ এজন মানুষ এমন থাকেন যার জেনোমে ২০০ টার মত অনন্য মিউটেশান আছে এবং এদের আলঝাইমার্স রোগও হয় না। হয়তো এই বাড়তি মিউটেশানের কোনগুলি রোগ হওয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে! খুঁজে পাওয়া ১৩ জন সুপারহিরোর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম হতে পারে। রোগগুলির জন্য দায়ী মিউটেশানগুলি ছাড়াও তাদের জেনোমের অন্য কোন মিউটেশান, যা সাধারন মানুষে থাকেনা, সেটা (বা সেগুলি) এই সুপারহিরোদের জিনগত রোগ হতে বাঁচায়।
প্রশ্ন হলো এই আবিষ্কার থেকে আমাদের লাভ কী হল? কয়েকটা লাভ হল। প্রথমতঃ বলার অপেক্ষা রাখেনা এটা একটা অসাধারণ আবিষ্কার, আমরা কিছু সুপারহিরোর সন্ধান পেলাম। দ্বিতীয়তঃ এই মিউটেশানগুলি ১৩ ব্যক্তিকে বিবর্তনিক সুবিধা দেবে স্বাভাবিকভাবেই। এ নিয়ে এখন প্রচুর গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত হল। তৃতীয়তঃ জিনেটিক রোগের চিকিৎসায় এই গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। যেসব মিউটেশানগুলির কারনে রোগের প্রকোপ বাধাগ্রস্থ হয় সেগুলি খুঁজে তারা কিভাবে কাজ করে বোঝা গেলে সে অনুযায়ী গবেষণার মাধ্যমে এই অতি মারাত্মক রোগগুলির বিরুদ্ধে চিকিৎসার উপায় আবিষ্কার করা সম্ভব। একটা উপায় হতে পারে রোগীদের জেনোমে সেই সুবিধাজনক মিউটেশানগুলিকে এনে দেয়া বা আবির্ভাব ঘটানো, যারা ক্ষতিকর জিনের প্রভাবকে কমপেনসেট (ভাল বাংলা কী হবে এই শব্দের?) করবে।
পদ্ধতিটা হল একধরনের জিন থেরাপি। কিন্তু তার জন্য দরকার ১৩ জন মানুষের পুরো জেনোমকে বিন্যাস করা। কারন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন মিউটেশানকে খুঁজে যেই গবেষণাটি হয়েছে তাতে পুরো জেনোম বিন্যাসের দরকার ছিল না, শুধু রোগের জন্য দায়ী মিউটেশানের জায়গাগুলির বিন্যাসের দরকার ছিল। নির্দিষ্ট মিউটেশানের স্থানের বিন্যাসের জায়গাগুলার চেয়ে পুরো জেনোম অনেক বড়। বিন্যাস বের করাটা আরও জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু, ১৩ টি মানুষের জেনোমের অন্যান্য জায়গায় মিউটেশান খোঁজার জন্য পুরো জেনোম বিন্যাস বের করার কোন বিকল্প নাই।
এইখানে এসে একটা মস্ত ঝামেলা হয়ে গিয়েছে। কারন এই ১৩ জন সুপারহিরোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা! যখন এই বিপুল পরিমান মানুষের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছিল তখন পরিচয় গোপনের একটা ব্যাপার ছিল। নাম রাখা হয়নাই, যোগাযোগের ঠিকানা রাখা হয়নাই, চিকিৎসা রেকর্ড রাখা হয়নাই। কার নমুনা কোনটা সেটা নির্ধারন তাই কঠিন ব্যাপার। গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহের ঝামেলাগুলি এড়াতে এবং অন্যান্য সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা। এই মানুষগুলির পুরো জেনোম বিন্যাস করা হয়নাই। এখন গবেষণা সংস্থাগুলি, বিশেষ করে যারা নমুনা সংগ্রহ করেছে (সংস্থার নাম 23andMe) তারা ব্যাপারটার সমাধানে চেষ্টা করছে। আশা করছি তারা সফল হবেন।
এখন এই নাম পরিচয় না জানা ১৩ জন সুপারহিরো এবং গবেষকগণের জন্য থ্রি চিয়ার্স। পাশের মানুষটাকে আর অবহেলা করবেন না। সেই হতে পারেন একজন জিনেটিক সুপারহিরো, যার প্রতিটা কোষে আছে ভবিষ্যতের ঔষধ তৈরির সূত্র, বিবর্তনে সুবিধা পাওয়ার চাবিকাঠি।
আরও বিস্তারিত জানতে -
১. ওয়াইয়ার্ড
২. নিউ ইয়র্ক টাইমস
মন্তব্য
এইসব গবেষনার কথা যখন শুনি আর নিজের দেশের দিকে তাকাই তখন ভিষন হতাশ লাগে। তবু আশা জাগে অনুসন্ধান আর গবেষনার এই সব অগ্রগতির খবর শুনে। আশা জাগে রূপকথাতুল্য বিশ্বাসের অন্ধত্ব সরিয়ে আমাদের দেশের ছেলেরাও হয়তো বিজ্ঞান শিখবে একদিন।
সোহেল ইমাম
আমিন
compensate = ভারসাম্য বজায় রাখা (আপনার লেখার ক্ষেত্রে)।
ভালো লেখা। তবে লেখাটি আরো বিস্তারিত হতে পারতো।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
প্রতিশব্দ এবং কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
আমি আসলে বিজ্ঞান নিয়ে ছোট বা মধ্যম সাইজের লেখা ব্লগে কেমন কাজে করে সেটা একটু পরীক্ষা করছি।
DO you really believe those 13 super humans are missing? I think it is a propaganda so that scientist can easily do their research.
ফরহাদ মজহার আপনাকে খুঁজতেসে। স্বত্তর যোগাযোগ করেন।
বাহ-
facebook
সজীব ভাই, আমার মনে হয় বিজ্ঞান নিয়ে ছোট বা মধ্যম সাইজের লেখার প্রয়োজন আছে বিস্তারিত লেখার পাশাপাশি, আমার খুব পছন্দ হইসে আপনার লেখা। একটা ভাবনা যোগ করি, সম্ভবত গবেষনা প্রকল্প টির প্রাথমিক উদ্দেশ কোন বিশেষ মানুষ এর পুরো জিন বিন্যাস করতে হবে বা হতে পারে এধরনের ছিল না, ওমন হলে স্টাডি ডিজাইন এ নিশচয় কোন একভাবে ব্যক্তিদের সনাক্ত করবার ব্যাবস্থা থাকতো, এ ধরনের অবস্থা অনেক সময়ই তৈরী হয় গবেষনা ক্ষেত্রে ।
আবারো ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
অনন্যা
ধন্যবাদ অনন্যা।
আসলে প্রথমে পুরা জেনোম বিন্যাসের কোন প্ল্যানই এদের ছিলনা। যে কোম্পানিটি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তারা এটা আসলে করে বানিজ্যিকভাবে। কেউ নিজেদের জেনোমে কোন জিনগত রোগের ত্রুটি দেখতে চাইলে তাদের কাছে নিজের ডিএনএ নমুনা পাঠাতে পারে। গবেষণাটির ফলাফল আসার পরে পুরো জেনোমের বিন্যাসের দরকার হয়েছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া, উত্তর দেবার জন্য। বড়ই লজ্জা পাইসি, জেনোম বিন্যাস রে জিন বিন্যাস বলায়।
অনন্যা
শেষ হইয়াও হইল না শেষ! হায়, বোলগ এত ছোট ক্যানে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন