দেহটা নিজের দখলে আছে ভাবলেও আমার শরীরে অসংখ্য এলিয়েন বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের বসবাস। এই জীবগুলিকে ছাড়া আমি আসলে ঠিক আমি নই। তাদের নিয়ে একটি সাধারণ পরিচিতিমূলক লেখা।
আপনি কিন্তু শুধু মানুষ নন, আসলে আপনার দেহের বেশিরভাগটাই মানুষ নয়!
অাণবীক্ষনিক জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসের মোট সংখ্যা আমাদের শরীরের মোট মনুষ্যকোষের সংখ্যাকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যায়। কোন কোন পরিসংখ্যান বলে সংখ্যাটা আসলে প্রতি ১০টি অণুজীব কোষের বিপরীতে ১টি মাত্র মনুষ্যকোষ। শরীরের এই অমনুষ্যকোষগুলিকে একসাথে 'মাইক্রোবায়োম' বলে, যার পরিমান হবে প্রায় দেড় লিটারের মত। এই মাইক্রোবায়োমের বেশিরভাগই হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া - আর আমরা প্রায় তাদের ১০০ ট্রিলিয়ন বহন করি। হ্যাঁ, সংখ্যাটা হইলো - ১০০,০০০,০০০,০০০,০০০।
কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তাদের সবাই ক্ষতিকর নয়। বরঞ্চ উল্টাটা সত্যি। আপনার সুখী এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তাদেরকে প্রয়োজন।
আমাদের দেহের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া আবাস তৈরি করেছে। কয়েকটা দেখে আসি চলেন -
ক. নাসারন্ধ্র
Staphylococcus aureus
আপনার ঠিক নাকের ভেতরে একধরনের সুপারবাগ বাস করে। Staphylococcus aureus খুবই সাধারণ একটি ব্যাকটেরিয়া, প্রচুর মানুষের নাকেই এর উপস্থিতি দেখা যায়। সাধারণভাবে এটা ক্ষতিকর নয়, তবে সুপারবাগ MRSA (্একধরনের প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া) এর মত এরা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, আর এরা যদি জোরেসোরে প্রকোপ শুরু হয় তবে জীবনঘাতি রোগের কারন হতে পারে।
সৌভাগ্যের বিষয় হল বেশিরভাগ ধরনের S. aureus আমাদের কোন ক্ষতি করবেনা এবং এসব ব্যাকটেরিয়া আমাদের নাসরন্ধ্র বন্টন করে নেয় তাদের আত্মীয়, কিন্তু প্রতিদ্বন্দী S. epidermidis এর সাথে, যারা S. aureus কে বেঁধেটেধে রাখে।
খ. মুখগহ্বর
জিহ্বার ব্যাকটেরিয়া
আপনার মুখগহ্বর অণুজীবদের জন্য উষ্ঞ এবং সুবিধাজনক পরিবেশ দেয়। মুখের ভেতরের বিভিন্ন অংশ যেমন জিহ্বা, তালু বা গামের চারিদিকে বিভ্ন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া সম্প্রদায় বাসা বাঁধে।
প্রায় ৭০০ প্রজাতির মনুষ্য মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া অাবিষ্কৃত হয়েছে।
গ. অন্ত্র
Escherichia coli
আমাদের অন্ত্রে দেহের সর্বাধিক, সবচেয়ে ঘনত্বে এবং সবচেয়ে বৈচিত্রময় অণুজীব সম্প্রদায় থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার পরিমান আমরা যত অন্ত্রের অভ্যন্তরে যাবো তত বৃদ্ধি পায়, ক্ষুদ্রান্ত্রের শুরুতে সবচেয়ে কম এবং কোলনের কাছে সর্বাধিক। আসলে, আমাদের মলের অর্ধেক ভরই হচ্ছে অণুজীব - প্রতি ১ গ্রামের গুতে থাকে ১ ট্রিলিয়ন অণুজীব।
ঘ. যৌনাঙ্গ
যোনিদ্বারের ব্যাকটেরিয়া
যোনিদ্বারের ব্যাকটেরিয়ার সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় Lactobacillus নামক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া শর্করাকে ভেঙে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে, যা পরিবেশের pH কমিয়ে দেয় (অম্লত্ব বাড়ায়), ফলে যা বহু ক্ষতিকর অণুজীবের জন্য সুবিধাজনক না। উল্টাভাবে, যখন Lactobacillus এর মাত্রা কমে যায়, ফলে pH নিরপেক্ষ হয়ে যায়, যা বিভিন্ন ধরনের যোনির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, যেমন ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস।
ঙ. ত্বক
ত্বকের রন্ধ্রের চারপাশে ব্যাকটেরিয়া
আপনার শরীরের সর্ববৃহৎ অঙ্গ হল ত্বক এবং এই ত্বকে প্রায় ১০০০ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বসবাস। সংখ্যা দেহের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয় - ত্বকের বিভিন্ন অবস্থা, যেমন তৈলাক্ত অঞ্চল (নাকের দুপাশে), শুষ্ক অঞ্চল (বাহু) অথবা আর্দ্র অঞ্চল (বগল) ইত্যাদি উদাহরণ হতে পারে। তৈলাক্ত অঞ্চলে সবচেয়ে কম ধরনের এবং শুষ্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ধরনের ব্যাকটেরিয়া সম্প্রদায় দেখা যায়।
এইসব অণুজীবগুলি বিভিন্নভাবে আমাদের দেহে ভূমিকা রাখছে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল। কোন কোন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে জেনে রাখুন -
ক. রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা
হ্যাঁ
মাইক্রোবায়োম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। একটা ধারণা আছে যে এখনকার সময়ের এলার্জি আক্রমণের হার বাড়ার পেছনে পরিবর্তিত মাইক্রোবায়োমের ভূমিকা আছে।
খ. ওজন
সম্ভবত
যখন স্থুল মানুষের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ইঁদুরেের অন্ত্রে প্রতিস্থাপিত করা হল তখন দেখা গেল যে ইঁদুর সাহেবও মোটা হয়ে গিয়েছেন। একইরকম ব্যাকটেরিয়া সূক্ষ্মকায় মানুষের কাছ থেকে নিলে দেখা যায় ইঁদুর শুকনাই আছেন।
গ. পরিপাক
হ্যাঁ
অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আমাদের গ্রহণকৃত খাদ্যকে পরিপাক করে পুষ্টি এবং শক্তি গ্রহণে সাহায্য করে। এদের ছাড়া আমরা কোনভাবেই নিজে নিজে এসব খাদ্যকে ভাঙতে পারতাম না।
ঘ. স্ট্রেস বা পীড়ন
সম্ভবত
যখন জীবাণুহীন ইঁদুরকে স্বাভাবিক মাত্রার প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তখন তাদের মধ্যে কম মাত্রার ব্যাকুলতা দেখা গেছে। যেমন আচরণে এবং পীড়নে কম হরমোনের প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
ক. কী খাই?
'প্রোবায়োটিক' (probiotics) হল ভক্ষণযোগ্য ককটেইল বা ব্যাকটেরিয়ার খিচুড়ি - যার মধ্যে থাকে 'ভাল' ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ। যেমন, lactobacilli এবং bifidobacteria - যারা স্বাস্থ্যসুবিধা দিতে পারে ক্ষতিকর অণুজীবের সাথে প্রতিযোগিতা করে।
বিভিন্নধরনের বা বৈচিত্রের ফল এবং শাকসবজী গ্রহণ আপনার অণুজীবগুলির জন্যও স্বাস্থ্যকর। এসব খাদ্যে 'প্রিবায়োটিকস' (prebiotics) থাকে - প্রিবায়োটিকস হল আমাদের জন্য পরিপাক-অযোগ্য খাদ্য উপাদান, কিন্তু এসব খাবার অন্ত্রে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে।
খ. এন্টিবায়োটিক্স
এন্টিবায়োটিকরা শুধুমাত্র ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকেই মেরে ফেলেনা, বরং আপনি যাদেরকে বাসস্থান দিয়েছেন সেই ভাল ব্যাকটেরিয়অগুলিকেও মেরে ফেলে।
সেইজন্য বহু এন্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া। এমনকি শুধুমাত্র এন্টিবায়োটিকের একটি একক কোর্স আপনার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপর বছরখানেকের জন্য প্রভাবে ফেলতে পারে।
অসমাপ্ত বা শর্ট-টার্ম এন্টিবায়োটিক ব্যবহার আপনার অন্ত্রের এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধি বা রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াগুলিকে বহু বছর বাঁচিয়ে রাখতে পারে। একটা গবেষণা দেখিয়েছে যে জীবনের প্রথমভাগে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে একজিমা রোগের উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।
আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য বিশেষ করে এটা একটা অশনী সংকেত যেশনে খুব সাধারণ কোন রোগের জন্য বহুসময় শিশুদের জন্যও এন্টিবায়োটিক প্রস্তাব করে ডাক্তারগণ।
গ. মল প্রতিস্থাপন
মল প্রতিস্থাপনের এই চিকিৎসার কথা হয়ত ইতিমধ্যেই শুনেছেন বিভিন্ন জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাময়িকীর কল্যানে। এই পদ্ধতিতে আমাদের অন্ত্রের সুস্থাবস্থা ফিরিয়ে আনা হয় কোন সুস্থ মানুষের হাগুর ব্যাকটেরিয়া অসুস্থ মানুষের অন্ত্রে প্রবেশ করিয়ে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি Clostridium difficile নামক একধরনে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের আরোগ্যে খুব কার্যকর। একটি পরীক্ষা খুঁজে পেয়েছে যে ৯৪ শতাংশ C. difficile রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন মলদান পদ্ধতির ফলে, যেখানে এন্টিবায়োটিক পদ্ধতি মাত্র ৩১ শতাংশ কার্যকর।
মল প্রতিস্থাপন অন্যান্য রোগ - যেমন কলাইটিস, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য এবং পাকস্থলীর প্রদাহও (irritable bowel syndrome) প্রশমণ করে।
ক. মানুষ বনাম সুপারবাগ - আমরা কি খুব বেশি দেরি করে ফেলেছি?
এন্টিবায়োটিকেরা গত ৭০ বছর ধরে আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে সুস্থ রাখতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এরা ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক দৈহিক কাজকে ব্যাহত করে অথবা তাদেরকে বংশবৃদ্ধি করতে দেয় না।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই এই এন্টিবায়োটিকেরা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে এবং আশংকা করা হচ্ছে যে সামনে এমন দিন আসবে যখন এন্টিবায়োটিকেরা কোন কাজেই আসবেনা। বর্তমান সময়ে চিকিৎসার প্রায় কোনই বিকল্প পদ্ধতি নাই যারা এন্টিবায়োটিক্সকে প্রতিস্থাপন করতে পারে। কারনটা হল যত দিন যাচ্ছে তত এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াগুলি বেঁচে থাকছে, সংখ্যায় বাড়ছে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়াচ্ছে।
এইটা খুব কষ্টকল্পনা নয় যে আগামী ২০ বছরে কেমোথেরাপি বা খুব সাধারণ শল্যচিকিৎসার মত পদ্ধতিগুলি প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে, কারন এগুলি এন্টিবায়োটিক্সের উপর নির্ভর করে। আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যেখানে খুব সাধারন কফ হওয়া বা কেটে যাওয়া আমাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, অধিক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক প্রস্তাব না করা এবং নতুন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে।
খ. গু আমাদেরকে কী বার্তা দেয়?
আমরা তো জানিই যে খাদ্যগ্রহণের পর সেটা পাকস্থলী, বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত হয়ে সময়ে সময়ে মল হয়ে বেরিয়ে আসে। অন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নধরনের ব্যাকটেরিয়া বিভিন্নধরনের খাবারকে ভেঙে বিভিন্নধরনের রাসায়নিক তৈরি করে এবং আমাদের শরীর অন্ত্র থেকে সেসব বেছে বেছে শুষে নেয়।
হিপোক্রেটিস বলেছিলেন যে 'মানুষের সকল রোগের আরম্ভ হয় তার অন্ত্রে।' উক্তিটা সবক্ষেত্রে সঠিক না হলেও সেজন্য অন্ত্র যে শরীর সুস্থ্য থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলে দয়ার দরকার নাই। আর অন্ত্র থেকে বের হয়ে আসা মলও আমাদের স্বাস্থ্যাবস্থা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর আগেই বলেছি, মলের ভরের অর্ধেকই হল অনুজীব। তাই 'গুজীব'গুলিকে অবহেলা করার কোন কারন নাই।
আমাদের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র প্রায় সাগর বা মাটিতে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার সমান। মল থেকে সংগৃহীত এসব ব্যাকটেরিয়ার অনেকগুলির জেনোম বিন্যাস বের করা হয়েছে। এসব পরীক্ষাগুলি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে মলের ব্যাকটেরিয়া থেকে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বহু তথ্য পেতে পারি। যেমন, Methanobrevibacter smithii নামের একটি ব্যাকটেরিয়া আমাদের জানাতে পারে আমরা খাবারের মাধ্যমে ঠিক কতটুকু খাদ্যশক্তি গ্রহণ করেছি।
গ. হিউম্যান মাইক্রোবায়োম প্রজেক্ট
১১৫ মিলিয়ন ডলারের এই গবেষণা প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। উদ্দেশ্য ছিল মানুষের দেহের সকল অণুজীবকে খুঁজে বের করে তাদের চরিত্র বোঝা। মানুষের জীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য গুরুত্বের দিক দিয়ে হিউম্যান জেনোম প্রজেক্টের পরেই এই গবেষণা প্রকল্পকে রাখা যায়। এখন পর্যন্ত বহু সাফল্যজনক ফলাফল এসেছে এখান থেকে। বিস্তারিত জানতে প্রকল্পের উইকি পেইজে ঢু মারতে পারেন।
ঘ. একটা ভুয়া ট্যাবলেট কিভাবে আমাদের দেহে সত্যিকারের প্রভাব ফেলতে পারে?
প্রবোধারোগ্য (placebo effect) এর কথাতো জানেন। ব্যাপারটা হল কোন রোগমুক্তির জন্য আপনি এমন একটি জিনিস, যেমন চিনির গুলি গ্রহণ করছেন যার চিকিৎসাগতভাবে কোন মূল্য নাই। কিন্তু আপনি সেটা জানেন না। ভাবছেন এই জিনিস খেলে আপনার রোগ ঠিকই ভাল হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি দেখা গেল কয়দিন পর আপনি সুস্থবোধ করছেন। একে বলে প্রবোধারোগ্য খুবই দূর্লভ কোন কোন ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি এভাবে কাজ করে। এখানে হোমিওপ্যাথেটিক চিনির গুলির যায়গায় গুড়ের গুলি দিলেও আপনার উপর একইরকম প্রভাব পরতো। এভাবে কঠিন ব্যাথা বা মাইগ্রেনের উপশমে উপকার পেতে পারেন। এমনকি কোন ব্র্যান্ডের চিনির গুলি খাচ্ছেন, তার রঙ কী এসবও আপনার সুস্থতায় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রশ্ন হলো এসবের সাথে দেহের অণুজীবের সম্পর্ক কী?
কিছু কিছু অণুজীবঘটিত রোগের উপর প্ল্যাসিবো ইফেক্টের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাকস্থলীর প্রদাহের খুব স্পষ্ট কারন বোঝা না গেলেও ধারণা করা হয় কিছু ব্যাকটেরিয়া এই রোগের প্রকোপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ৫৯ শতাংশ রোগী এই রোগে ভোগা থেকে স্বস্তি পেয়েছেন প্ল্যাসিবো ইফেক্টের কারনে। যদিও কারণটা অণুজীবে প্ল্যাসিবো ইফেক্টে পরিবর্তনে ফলাফলটা এসেছে কিনা আমরা জানিনা। থাকতেও পারে, কারণ প্রোবায়োটিক চিকিৎসার ফলে এই রোগের প্রশমণ ঘটে। দেহের অণুজীবের উপর প্ল্যাসিবো ইফেক্টের ভূমিকা নিয়ে কৌতুহলকর বহু গবেষণা হতে পারে।
আবার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। এইসবের সঙ্গে রোগনিরাময়ের ব্যাপারস্যাপার যোগ করে কতকিছুই জানার আছে!
সূত্র:
- বিবিসিতে প্রকাশিত মূললেখা টিকে গাঠনিক কাঠামো রেখে এই লেখাটি লিখেছি। বেশিরভাগ তথ্য এখান থেকেই গৃহীত। অনেক অংশই আক্ষরিক অনুবাদ।
- প্রচ্ছদ ছবি পেটা ক্লেন্সির Visible Human Bodies, 2005 সিরিজ থেকে নেয়া
- মলের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে তথ্য এখান থেকে পেতে পারেন।
মন্তব্য
আমাগের বেশিরভাগ কামাই তাইলে পোকায় খায়?
আবার পোকাকে খাওয়ানো খাবার থেকে পাওয়া বর্জ্য আপনি গ্রহণ করেন।
সত্যি, নিজের শরীরে এত পোকা! ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে আসে।
এদেরকে নিজের অস্তিত্ব হিসেবে ধরতে পারেন। তাইলে আর গা গুলানোর অনুভূতি আসবেনা।
শরীরে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে তো আমরা জীবাণুর কাছেই ব্যাপক ভোটে হেরে যাব দেখছি। কি ভয়ঙ্কর সব তথ্য দিলেন।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
হেহে... তবে এরাও আমাদের দেহ ছাড়া অসুবিধায় পরবে। সেইজন্য, ভোটটা আমরা পাওয়ার সুযোগই বেশি!
বলেন কি? এত খাটাখাটনি করে খাওয়া দাওয়া করি পোকামাকড়ের জন্য? পোকামাকড়েরা এইভাবে আমাদের গাধার খাটুনী খাটাচ্ছে? মানুষের শরীর, মন, অস্তিত্ব, সবই তো তাহলে পোকার খেলা। ভবিষ্যতে যখন মানুষ পুরোপুরি বায়োনিক হয়ে যাবে, তখন নিশ্চয়ই এদের হাত থেকে মুক্তি মিলবে?
ব্যাপারটা মিউচুয়াল। আমরা না থাকলে যেমন অণুজীবের অসুবিধা হত, তেমনি অণুজীবগুলি না থাকলে আমরা বাঁচতাম না।
তবে, পুরোপুরি বায়োনিক হওয়ার বিষয়টা বেশ কৌতুহলকর। এই জীবাণুগুলিকে কিভাবে ম্যানেজ করা হবে সেটা ভাবছি।
চমৎকার লেখা! আপনার সিরিজটা খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। অনেক নতুন কিছু জানা হলো।
ধন্যবাদ!
যদি আসল মানুষ কেবলমাত্র ১০% হয়, আর বাকীটা ব্যাকটেরিয়া, তাহলে তো শুধু নাক, মুখগহ্বর, পৌষ্টিক নল আর দেহত্বক নয়, পুরো শরীর জুড়েই থাকার কথা ব্যাকটেরিয়াদের বসবাস। আমাদের হাড় মাংশ কিছুই বাদ যাবার কথা নয়। আসলে কি ব্যাপার সেরকমই? প্রিয়ার পটোলচেরা আঁখির পুরোটাই কি প্রায় ব্যাকটেরিয়া? তার অপরূপ দেহবল্লরী কি তাহলে অগণিত পোকামাকড়ের ঘরবসতি ছাড়া আর কিছু নয়? কিংবা তাঁর বা আমার অতি সংবেদনশীল অঙ্গগুলো? সর্বোপরি আমাদের চালিকাশক্তি বলে বিবেচিত মস্তিষ্ক?
উত্তর হইলো - না!
আসলে ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীব কোষ মানুষের কোষ থেকে অনেক ছোট। সেজন্য সংখ্যায় তারা বেশি হলেও আমরা যে মানুষটাকে দেখি সেটা মানুষের নিজের কোষে তৈরি দেহের অংশই দেখি। আবার দেহের সবজায়গায় অণুজীব বসবাস করতে পারেনা, যেমন রক্তকে বলা চলে জীবাণুহীন। মস্তিষ্কেও জীবাণূ থাকেনা সাধারণভাবে। তবে জীবাণু আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বিভিন্ন উপায়ে।
পটলচেরা চোখের কৃতিত্ব বরং প্রিয়ার ডিএনএ কে দিতে পারেন!
হুমম, ভাগ্যিস মানবদেহে গণতন্ত্র নাই! বড় বাঁচা বাইচা গেছি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনেরা ফেশিষ্ট।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বিজ্ঞান নিয়ে সহজবোধ্য ভাষায় লেখার মত কঠিন কাজটা করার জন্য আপনাকে সবসময়ই ধন্যবাদ দিতে চাই।
আচ্ছা, মল প্রতিস্থাপন ধরণের চিকিৎসা কি এখনও ট্রায়াল পর্যায়ে আছে ? নাকি এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে?
শুভেচ্ছা
চিকিৎসা দেয়া হয় এই পদ্ধতিতে। জনস হপকিন্সে এই পদ্ধতিকে ব্যাকটেরিওথেরাপি বলে।
নতুন মন্তব্য করুন