অসাধারণ বৈচিত্রপূর্ণভাবে বিকশিত প্রাণীদের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই আমার মাথায় আসে পাখির কথা। বহু বছরের বিবর্তনিক চাপে এরা বিভিন্ন কাজের জন্য এতো সুন্দরভাবে অভিযোজিত যেটা শুধু তাদের ঠোঁট বিশ্লেষণ করলেই বোঝা সম্ভব। আসলে ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বে পৌঁছানোটা ত্বরান্বিত করেছিলো একধরনের পাখির ঠোঁট। বিভিন্ন কাজের জন্য অভিযোজিত পাখির ঠোঁটগুলি দেখে নিন।
আসলে এই বৈচিত্র ঠোঁটের মতো অন্যান্য দেহাঙ্গেও পাওয়া যায়। এসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে অবশ্য পাখিদের দীর্ঘদিনের বিবর্তনিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। সেই ডাইনোসরদের কাল থেকে। আসলে প্রায় সকল বিবর্তন বিজ্ঞানী, পাখি বিশারদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদই মনে করেন যে পাখিরা আসলে ডাইনোসরদের বংশধর। ৬৬০ লক্ষ বছর আগে এক উল্কাপিন্ডের আঘাতে বেশিরভাগ ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তবে পাখিরা এই গণবিলুপ্তির আগেই বিবর্তিত প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত। সেই ভয়ঙ্কর উল্কার আঘাতে পৃথিবীর ৬০ শতাংশ প্রাণী মরে গেলেও পাখিদের কিছু উত্তরসূরী বেঁচে ছিলেন। তারাই আজকের মুরগী হয়েছেন। তবে, ডাইনোসরদের কাছ থেকে উৎপত্তি বিধায় পাখিদের বলা হয় এভিয়ান-ডাইনোসর বা উড্ডীন-ডাইনোসর।
পাখিরা যেই ডাইনোসরদের দল থেকে বিকশিত হয়েছে তাদেরকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন থেরোপড। এই গোত্রের ডাইনোসরদের মধ্যে আছে ডাইনোসরদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত, টিরানোসরাস। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যাদেরকে নিয়ে লিখেছিলেন - টি রেক্সের সন্ধানে! এই গোত্রের ডাইনোসরদের কয়েকটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমতঃ এরা দুপেয়ে, পাখিদের মতোই। ছোট দুটো পা সামনে বহন করলেও তারা হাঁটার কাজে লাগতোনা। পরে এই হাতদুটিই পালকসহ ডানায় রূপান্তরিত হয়েছিলো। দ্বিতীয়তঃ এরা সর্বাহারী, সেহেতু মাংসাশী। আসলে ভূমন্ডলে বিচরণ করা সবচেয়ে বড় মাংসাশী প্রাণী এই থেরোপড গোত্রেরই। পাখিদের এই গুণটাও আছে। থেরোপড ডাইনোসরগণ এরকম দেখতে ছিলো।
তবে আরেকটা অবাক করার ব্যাপার আছে। পাখিদের সাথে আসলে টিকে থাকা অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিলো হলো সরীসৃপদের সাথে। ব্যাপারটা এখন খুব অবাক করার মতো বিষয় নয়। কারন আমরা বুঝতে পারছি যে সরীসৃপ, ডাইনোসর এবং পাখি - এই তিন ধরনের প্রাণীর একটা একক উৎস প্রাণী ছিলো। অর্থাৎ এরা তিনজনই কোন একক প্রাণী থেকে বিকশিত। তবে আমাদের মতো স্তন্যপায়ীর বিকাশ ডাইনোসর বিলুপ্তির পরে হয়েছে। সেজন্য পাখি আর সরীসৃপের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা আমাদের সাথে সরীসৃপ বা পাখির সম্পর্কের চেয়ে অনেক কাছের। ছবিটায় একটু চোখ বোলাতে পারেন। লক্ষ্য করুন, সবার বামে সরীসৃপ, আর সবার ডানে পাখি।
পাখি-ডাইনোসর সম্পর্কের ব্যাপারটা অলক্ষ্যে থাকার মতো নয় যখন তাদের মধ্যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি তুলনায় আনা হয়। ১৬০০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বহু প্রকৃতিবিজ্ঞানী পাখির উৎপত্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন বলে দলিল পাওয়া যায়। ডাইনোসরদের ফসিল খুঁজে পাওয়া যাওয়ার সময় থেকে এদের সাথে পাখিদের মিল নিয়ে অনেকেই বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। ডারউইনের প্রজাতির উৎপত্তি বইয়ের প্রকাশের পরপরই ১৮৬০ সালে জার্মানির এক লাইমস্টোন বেড থেকে একটা অভিনব ডাইনোসর জীবাশ্ম আবিস্কার করা হয়। জীবাশ্মটির নাম আপনারা সবাই জানেন, আর্কিওপটেরিক্স। ডানাওয়ালা ডাইনোসর। একে আধুনিক পাখি আর সরীসৃপের মধ্যবর্তী কোন প্রজাতি হিসেবে প্রথমে ধরে নেয়া হয়েছিলো।
আর্কিওপটেরিক্সের বার্লিন ফসিলটি দেখুন। ডানা আর লেজের পশমের ছাপও বুঝতে পারবেন স্পষ্ট। এই জীবাশ্ম যে আধুনিক কোন পাখির নয় সেটা তার হাড়ের গঠন দেখে বোঝা যায়। আর জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছিলো জুরাসিক সময়ের মাটি থেকেও। এই পাখিকে জার্মান শব্দে 'উরফোগেল' নামও দেয়া হয়েছিলো, যার অর্থ 'প্রথম পাখি।' যদিও পরবর্তী সময়গুলিকে চীন, মঙ্গোলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং মাদাগাস্কারসহ অন্যান্য আরও জায়গায় এরকম অনেকগুলি পাখি ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যাওয়ায় আর্কিওপটেরিক্সের 'প্রথম পাখি' মুকুটটি টিকে থাকেনি।
বহু বিজ্ঞানীই পরবর্তীতে পাখির সাথে ডাইনোসরের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন এই জীবাশ্মগুলির বিশ্লেষণ দেখে। এদের মধ্যে বিবর্তনতত্ত্বের অন্যতম প্রবর্তক থমাস হাক্সলীও ছিলেন। তিনিই প্রথম ডাইনোসরের সাথে পাখির বিবর্তনিক যোগাযোগের প্রস্তাবটি করেন। পরবর্তীতে ডেনিশ প্রকৃতিবিদ এবং চিত্রশিল্পী হেইলম্যান একটা বই লেখেন যার ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছিলো 'দ্য অরিজিন অফ বার্ডস'। সেখানে তিনি পাখির উদ্ভব যে আর্কিওপটেরিক্সের মতো ডাইনোসর থেকে হয়েছিলো সেটার কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সেই বই থেকে ১৯১৬ সালে হেইলম্যানের আঁকা কাল্পনিক চিত্রটি দেখতে পারেন যেখানে দুটি আদিম ডাইনোসর পাখি ঝগড়া করছে। এটাই সম্ভবত আর্কিওপটেরিক্সের পাখি কল্পিত প্রথম ছবি।
তবে ডাইনোসরের সাথে পাখির মিলন ঘটানোর জায়গাটা তখনও অনেকের কাছেই পরিষ্কার ছিলোনা। সেটা ভাঙে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এসে। ১৯৬৯ সালে ড. অস্ট্রম নতুন খুঁজে পাওয়া জীবাশ্ম থেকে Deinonychus antirrhopus নামের এক ডাইনোসর পরীক্ষা করে সুস্পষ্টভাবে এর সাথে পাখির মিলগুলিকে ধরিয়ে দেন। ডেইনাইকাসের সাথে আর্কিওপটেরিক্স আর পাখির পরিপাক পদ্ধতি, হাড়ের গঠনের তুলনা ইত্যাদি বিশ্লষণ করেন। সেই সময় থেকেই মোটামুটি এই বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রায় সকল বিজ্ঞানীরা মেনে নেন যে পাখিরা আসলে ডাইনোসরের সত্যিকারের বংশধর। যদিও বলে রাখা ভালো, কিছু কিছু বিজ্ঞানী এখনও ডাইনোসর থেকে পাখির উদ্ভব মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করেন। তবে সেবিষয়ে এখনও খুব জোড়ালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডেইনোকাস দেখতে কেমন ছিলো দেখুন। এই পাখিগোত্রের ডাইনোসরগুলিকে বলে সিলিউরোসোরিয় (Coelurosaurian) ডাইনোসর।
এখন এই তত্ত্বের পেছনে কারণগুলি কী কী? পাখিদের সাথে থেরোপড ডাইনোসরের বেশ মিল আছে, আগেই বললাম। তবে প্রথমে অন্য একটা বিষয় আলোচনা করি। আসলে পাখির সাথে সরীসৃপেরই অসাধারণ মিল। এখন সরীসৃপের কথা এখানে আসছে কেন? এর কারন ডাইনোসর যুগে সরীসৃপেরা যেই গোত্রে ভাগ হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয় সেই একই গোত্রের অন্তর্গত আমাদের আর্কিওপটেরিক্সেরা। অন্ততঃ আর্কিওপটেরিক্সের দাঁতগুলি ছিলো নির্ভেজাল সরীসৃপের দাঁতের নকল। মানে পাখি আর সরীসৃপ দুজনের একই উৎসের যোগাযোগ আছে। তাই এদের মিল দেখানোটা একধরনের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আর্কিওপটেরিক্সের ফসিলটি দেখুন। ডানা আর লেজের কথা চিন্তা না করলে এর পাগুলি এবং লেজের হাড় দেখলে আসলেই একটা গুইসাপ বলে ভ্রম হতে পারে। আবার সরীসৃপের মতো পাখিরাও ডিম পাড়ে। সরীসৃপের মতো পাখিদেরও আঁশ আছে পায়ে। একইধরনের কলা থেকে আসলে পালকও তৈরি। কঙ্কালিক সম্পর্কের কথা তো বললামই।
আগেই বলেছি, সিলিউরোসোরিয় ডাইনোসরদের সাথেই পাখির মিল সবচেয়ে বেশি। আসলে পাখিদেরকে এই গোত্রের প্রাণীই ধরা হয়। বাহ্যিক মিলগুলি স্পষ্টতঃ কিছু দেখা গেলেও আমি কয়েকটা মিলের তালিকা দিচ্ছি এখানে -
১. লম্বা হাত, বাহু এবং নখড় থাবা
২. বৃহৎ অরবিট (খুলিতে চোখের গর্ত)
৩. কিছুটা চন্দ্রাকৃতির কারপেল হাড়সহ নমনীয় কব্জি
৪. ডিমের আণুবীক্ষণিক গঠন একইরকম
৫. ইংরেজী এস আকৃতির বাঁকানো ঘাড়
৬. ডানা নাড়ানোর জন্য যেই কার্যকর শক্তি প্রয়োজন তার ভিত্তি তৈরি হওয়া আছে বাহু এবং কাঁধে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরও প্রমাণ পড়তে চাইলে সূত্রে উল্লেখিত লিংকটি দেখে নিন বার্কলে বিশ্বিবদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে। আমি কিছু ছবি এখানে যোগ করছি। প্রথমেই, বিভিন্নরকম ডাইনোসরের সাথে কবুতরের পায়ের মিল। আর্কিওপটেরিক্সের সাথে সবচেয়ে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না?
তবে অনুড্ডীন ডাইনোসর থেকে এই আধুনিক পাখির সময়ে আসতে বেশ কিছু অভিযোজনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে পাখিকে। আবার সবগুলি পরিবর্তন শুধু উড়তে পারা পাখি কেন্দ্রিকও হয়নাই। থেরোপড গোত্রের ডাইনোসর আর মুরগির পায়ের মিল দেখুন। টি রেক্সের আসলে পা দিয়ে কিছু ধরার প্রয়োজন ছিলোনা, তাই পায়ে উল্টামুখি বুড়ো আঙুলের দরকার হয়নাই। মুরগিতে এসে এই পরিবর্তনটা এসেছে। মেটাটারসেল হাড়টা লক্ষ্য করুন।
সাথে আরও কিছু প্রমাণ হাজির করি। বৃহৎ মাংসাশী ডাইনোসরদের এক জটিল ধরনের বায়ুথলী ছিলো যার সাথে পাখিদের ফুসফুসের মিল পাওয়া যায়। ডাইনোসরের জীবাশ্মগুলি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে পাখিদের মতোই খাবার হজম করার জন্য তারা একধরনের পাথর গিলে খেতো, এদের 'গিজার্ড স্টোন' বলে। আর সবচেয়ে কার্যকর যেই প্রামাণিক দলিল (এবং বিতর্কিতও) সেটা সম্ভবত আসে টি রেক্স ডাইনোসরের ফসিল থেকে পাওয়া কোলাজেন প্রোটিনের বিন্যাস বের করার মাধ্যমে। পাখি আর সরীসৃপের সাথে প্রোটিন বিন্যাসের তুলনা করে দেখা যায় টি রেক্স আসলে সরীসৃপের চেয়ে পাখির সাথে বেশি ঘনিষ্ট।
যাই হোক। পাখিদের উৎপত্তি যে ডাইনোসর থেকে সেটার পক্ষেই এতো বেশি প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গৃহীত তত্ত্ব এটাই। তাহলে লেখাটাকে একটা ছবি হিসেবে দেখালে মোটামুটি এই শাখালেখ দিয়ে বোঝানো সম্ভব। তুলনামূলক শ্রেণীবিভাগ থেকে পাওয়া থেরোপডা গোত্রের প্রাণীদের মধ্যে কার আছে দেখুন। উপরের বাম দিক থেকে ঘুরে এসে পাখি পর্যন্ত আসতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে পাখির। আদিম থেরোপড ডাউনোসর থেকে প্রথমে ডানাওয়ালা সিলিউসোরিয়ো ডাইনোসরে রূপান্তর ঘটেছে, সেখান থেকে আজকের পাখি প্যারাভেসগণ বিকশিত।
পরের পর্বে থাকছে পাখির উড্ডয়নক্ষমতা লাভের গল্প।
সূত্র:
http://www.ucmp.berkeley.edu/diapsids/avians.html
নতুন শব্দ ব্যবহার
বাংলা | ইংরেজি |
শাখালেখ | CLADOGRAM |
মন্তব্য
তথ্যবহুল সুন্দর একটা লেখা। পড়ে ভালো লাগলো। ৬৫'র পরে একটা 'মিলিয়ন' হবে বোধ হয়।
জে এফ নুশান
----------------------------
যেইখানে এক বরফ গলা নদী ছিল
সঙ্গে যাবি?
একপাশে তার বৃক্ষবন বার্চ শাখা
মাথার ওপর তীব্র ঘন আকাশ সাদা
বরফ মাখা
খুব সহজে দেখতে পাবি,
সঙ্গে যাবি?
থ্যাঙ্কু। ভুল হয়েছে। ঠিক করে দিচ্ছি।
চিকেন ফ্রাই খাবার সময় কখনও মনে হয়নি ডাইনোসর চিবিয়ে খাচ্ছি। কি সব্বোনাশের কথা।
দারুন লাগলো লেখাটা পড়ে। আরো একটা পর্ব আছে জেনে ভালো লাগলো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
পানিতে নিমজ্জমান ও ভাসমান, কাদায় থাকা বা উভচর, বুকে হাঁটা, দুই এবং চারপায়ে ভূমিতে হাঁটা, আকাশে ওড়া - সব রকমের ডাইনোসরই তো ছিল। তাহলে আধুনিক পাখিদের সাবেক খেচর/ভূচর ডাইনোসরদের নাতিপুতি হতে বাধাটা কোথায়? টেরোড্যাকটিলাস, র্যামফোরিংকাস ইত্যাদিদের কোন নাতিপুতি কি টিকতে পারেনি?
প্রশ্ন-১। আদিম এককোষী জীব থেকে আজকের আধুনিক জীবকূলের সকল সদস্য যেসব ধাপ পার হয়ে এসেছেন সেখানে একটা পর্যায়ে সবাই কি ডাইনোসর ছিল?
প্রশ্ন-২। উপরের প্রশ্ন-১-এর উত্তর 'হ্যাঁ' হলে 'আসমানী বালা'তে কিছু ডাইনোসর কী করে সমূলে বিলুপ্ত হলো আর বাকিদের নাতিপুতি কী করে টিকে থাকলো?
প্রশ্ন-৩। উপরের প্রশ্ন-১-এর উত্তর 'না' হলে যখন 'আসমানী বালা'তে ডাইনোসররা কাবাব হচ্ছিলো তখন অ-ডাইনোসররা বাঁচলো কী করে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হ্যাঁ, অনেক কিছু থেকেই হতে পারতো। কিন্তু আধুনিক পাখিদের জিনেটিক পুল আসলে সংকীর্ণ উৎস থেকে আসার ইঙ্গিত দেয়, অনেক ধরনের ডাইনোসর থেকে নয়। থেরোপড সেরকম একটা ডাইনোসর পদ যার কাছ থেকে এসেছে বলে বেশিরভাগ প্রমাণ জানাচ্ছে। টেরিডিটাইলদের বিভাজন আসলে 'ডাইনোসর' দের আসার আগেই হয়ে গিয়েছে, ঠিক সরীসৃপদের পরেই। তাদের লাইন আলাদা, পাখিদের নয়।
উত্তর ১ - না, ডাইনোসরগণ খুবই আলাদা কিছু বিশেষায়িত প্রাণী ছিলো। সরীসৃপ গোত্রীয়। সেসময় আরও অনেক ধরনের প্রাণী ছিলো, এখনকার মতোই। যেমন, কাছিম, কুমির, পোকা, মাছ, কাঁটুল ইত্যাদি।
উত্তর ২ এবং ৩ - এইটার উত্তর পরের পর্বে দিচ্ছি। ভালো প্রশ্ন। তবে শুধু কিছু ডাইনোসর নয়, অনেক প্রাণীই বেঁচে ছিলো উল্কার আঘাতের কারনে। ডাইনোসরগণ উল্কার ফলে সৃষ্ট আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারনে উদ্ভিদের অভাবের কারনে বৃহৎ আকার ধরে রাখতে পারেনাই। আবার শুধু ডাইনোসরগণ নয়, অন্যান্য অনেক প্রাণীই মরে গিয়েছিলো এর ফলে। যেমন, ৯৩ শতাংশ স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীও ডাইনোসরের সাথে উধাও হয়ে গিয়েছিলো।
প্রশ্নটার জন্য ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে।
মুরগিকে এম-রেক্স ডেকে জাতে তোলার দাবি জানাচ্ছি।
মুর্গেক্স?
দারুণ! আমার খুব আগ্রহের একটা সাবজেক্ট। পুরো সিরিজ পড়ার ইচ্ছা থাকলো ।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আপনার এই সিরিজ আমার প্রিয় একটি টিউটোরিয়াল। বিবর্তনের বিষয়গুলো এত চমৎকার। প্রতিবারের মতো আগাম মুগ্ধতা জানিয়ে পড়তে শুরু করি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ।
ছবিসহ এই লেখা কেএফসি জাতীয় দোকানের সামনে টানায়া দিলে সকল মুরগি বেপারিরাই শেষ পর্যন্ত কলকাতি ম্যাকডোনাল্ডের মতো ১০০% ভেজ-বার্গার বেচতে বাধ্য হবে
কেন্টাকি ফ্রায়েড ডাইনোসর। কেএফডি।
বরাবরের মতই - খুব ভাল লাগল। লেখার শেষে আপনার দেওয়া বার্কলে বিশ্বিবদ্যালয়ের ওয়েবসাইট-এর লিংকটি ঘুরে এলাম। সুন্দর লেখা সেটাও। আপনার-টা পড়তে বেশী ভাল লেগেছে। ছবিগুলো খুব কাজের হয়েছে। এদের সূত্র- গুলো পেলে আরো কিছু ঘোরঘুরি করতে ভাল লাগবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ। সূত্র দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। (আবার খোঁজাটা একটা ঝামেলাই। দেখি। )
ডায়নোসর তো একযোগে সব বিলুপ্ত হয়নি, তাইনা? সকল ডায়নোসরই কেবল এক সময়ে (যুগে) বেঁচেছিল বলে একটা প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে। সেই হিসেবে, সময়ে সময়ে অন্য অনেক প্রাণির মতই, কিছু কিছু ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু শেষের উল্কাকাণ্ডে যখন সকলেরই বিলুপ্ত হয়ার কথা(!) তখনও যে কিছু কিছু টিকে গিয়েছিল তা জানতাম না! কোন প্রজাতিগুলো টিকে গিয়েছিল সে কি নিশ্চিত হওয়া যায়?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হুম। প্রায় দুই-আড়াই কোটি বছরের। বিলুপ্তির জন্য প্রচুর সময়। প্রজাতি উৎপত্তির জন্যও।শেষ বংশধরদের বিলুপ্তির কথাটাতে অভিভূত হয়ে লোকে এই গণবিলুপ্তি নিয়েই বেশি কথা বলে।
৬৬০ লক্ষ বছর আগের বিলুপ্তিটার বহু আগেই অবশ্য পাখিরা বিবর্তিত। দ্বিতীয় প্যারায় আমি ভুলভাবে লিখেছিলাম। এখন একটু পরিষ্কার করে দিলাম। আবির্ভাবের টাইমলাইনটা পরের লেখায় দেবো।
হুম। কিছু ডাইনোসর প্রজাতি টিকে ছিলো। যেমন হ্যাড্রোসরদের কিছু ফসিল পাওয়া গিয়েছে কার্বন ডেটিংয়ে যাদের বয়স ৬৬০ লক্ষ বছরের কমই দেখা গিয়েছে। আরও নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন