আজকে একটা বেশ অভূতপূর্ব ব্যাপার ঘটেছে। প্রথমবারের মতো বাংলায় কোন লেখা প্রকাশিত হলো বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট প্রকাশনা সংস্থার সাময়িকী গ্লোবাল হেলথ এ। এর সাথে সচলায়তনের কিছুটা গল্প জড়িত। সেই গল্পটাই বলছি।
গত বছরের শেষের দিকে বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ইলাইফে ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক প্রখ্যাত গবেষকদল একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন যেখানে বাংলাদেশে গবেষণা করতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় সেটার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে আমরা সচলায়তনের পক্ষ থেকে গবেষণাদলের অন্যতম গবেষক ড. সেঁজুতি সাহার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি এবিষয়ে তার ভাবনা আমাদের সাথে তুলে ধরতে। সেখানে বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে ছিলো বাংলাভাষায় বিজ্ঞান পড়ার বা গবেষণাপত্রগুলি পড়ার জন্য এই ভাষায় বিজ্ঞানসম্পদগুলির অপ্রতুলতা। আমরা সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেই যে ইলাইফে প্রকাশিত প্রবন্ধটির একটা বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করবো। আজকে সেটি প্রকাশিত হলো সচলায়তনের প্রথম পাতায়, অনুবাদ করেছেন ড. মোহাম্মদ আসিফ খান।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি সচলায়তন থেকে সেই যাত্রা। প্রধান গবেষকদের একজন ড. সেঁজুতি সাহা তাদের হাসপাতালে একটি জরিপ চালান যেখানে জিজ্ঞেস করা হয় তাদের গবেষকদের মধ্যে কতজন ইংরেজীতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলি পড়েছেন। আশাহত হতে হয় সেই সংখ্যা শুনে। বেশিরভাগ মানুষই বাংলায় লেখাগুলি পাওয়ার অপ্রাপ্যতাকে দায়ী করেছেন। বিষয়টা নিয়ে তাই আজকে সুবিখ্যাত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন সেঁজুতি এবং তার গবেষকদল। সেখানে বাংলাভাষায় গবেষণা আর বিজ্ঞান সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজনীয়তাগুলি তুলে ধরা হয়।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো এই ল্যানসেট প্রবন্ধটিতে প্রথমবারের মত বাংলাভাষায় একটি লেখা ছাপা হয়, যেটা ছিলো ইংরেজি প্রবন্ধটির অনুবাদ (মূল প্রবন্ধের সম্পূরক অংশ)। অভূতপূর্ব ব্যাপার! আমাদের সচলায়তন থেকে যেসব চিন্তার উদ্রেক ঘটেছিলো সেখান থেকে এমন একটি পরিণতি বেশ আশাই জাগায়। ধারণা করি আমাদের দেশের গবেষকগণ শুধুমাত্র ইংরেজির গড্ডালিকা প্রবাহে প্রবাহিত না হয়ে নিজেরাও বাংলাভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা করে আমাদের বিজ্ঞান গবেষণা আর এর সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবেন।
সেই শুভকামনা রেখেই এবং অনুপ্রেরণা জাগাতে আমি এখানে বাংলা প্রবন্ধটির ছবি তুলে দিচ্ছি।
মন্তব্য
দারুণ খবর! এ উদ্যোগে জড়িত সবাইকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন!
এ চর্চা আরো বেগবান হোক। আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণার প্রয়োজনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও যদি গবেষণাপ্রবন্ধ লেখা শুরু করেন, লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
অভিনন্দন! বাংলায় গবেষনা চর্চা এবং প্রবন্ধ প্রকাশ আরো বেগবান হোক এই কামনা রইলো।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
ডঃ সেজুতি সাহা আমার সহকর্মী। তার এই অবদান বাংলা ভাষাবাসীদের মৌলিক গবেষনা সম্পর্কে জানতে আরো উৎসাহ তৈরি করবে। এটা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। উনি প্রধানত "চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন" এ একজন বিজ্ঞানী হিসাবে কর্মরত আছেন। আর্টিকেল টাতে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করলে আরো ভালো হত। আমরা সবাই তার উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বাহ সত্যিই খুব আনন্দ লাগছে। সেঁজুতি দি এবং অন্যন্যরা মিলে শুরুটা তো করেছেন। এক সময় কলেজ কলেজে জার্নাল বের হবে। জার্নালগুলো বিশ্ব মানের হবে। আমরা পারবো। আমরা সত্যিই পারবো।
নতুন মন্তব্য করুন