ছবিসূত্র: Ikumi Kayama
টিনটিন কমিকসের ভক্ত যারা তারা ইয়েতির কথা নিশ্চয়ই জানেন, তিব্বতে টিনটিন বইটাতে এর উল্লেখ আছে। এক বিশালাকার বোকাসোকা পশমে ঢাকা মানুষ সদৃশ প্রাণী। মধ্য, পূর্ব এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় এই বিশালাকৃতির বনমানব বা তুষারমানবের শ্রুতি ছড়িয়ে আছে যার গল্প চীন থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত। আধুনিক যুগে এইরকম কোন প্রাণীর অস্তিত্ব থাকার খুব বেশি প্রমাণ পাওয়া না গেলেও আমরা যদি এইপ বা বিনরের বিবর্তনিক ইতিহাস একটু ঘাঁটি তবে একটা এমন প্রাণীর সন্ধান পাবো যাকে আসলেই ইয়েতি বলে ডাকা যায়। এ হলো জায়গান্টোপিথেকাস (Gigantopithecus), জায়ান্ট এইপ। আমরা যাকে দানোবিনর হিসেবে ডাকতে পারি বাংলায়। তারই কিছু গল্প এখানে।
সেই ১৯৩৫ সালের কোন একদিন জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ রাল্ফ ফন কোয়নিগ্সভাল্ড হংকংয়ের এক ঔষধের দোকানে ঢুকলেন। প্রত্নতাত্ত্বিক বলেই সম্ভবত, এই চীনা ঔষধের উপাদানগুলির মধ্যে একটা বিশালাকৃতির পেষণদাঁত বা মোলার দেখে বেশ আশ্চর্যান্বিত হলেন! বুঝতেই পারছিলেন এটা মানুষ গোত্রভাই কোন বিনরের দাঁত হবে। কিন্তু এতো বড়!?
আসলে এ ছিলো সেই দানোবিনরের দাঁত। পরবর্তীতে পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞানীরা এরকম আরও বহু দানোবিনের দাঁত সংগ্রহ করেন চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারত থেকে। বোঝা যায়, এই অঞ্চলেই তাদের বাস ছিলো। যেহেতু উত্তর-পশ্চিমে ভারত আর দক্ষিণ-পূর্বে ভিয়েতনাম আছে সেহেতু ধারনা করা চলে হয়তো বাংলাদেশের আশেপাশেও আসতো তারা মাঝেমধ্যে ঘুরতে। এখন বিজ্ঞানীরা জানেন যে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে থেকে এরা বসবাস করতো আমাদের আশেপাশে এবং প্রায় ৩ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তখনও আধুনিক মানুষের উৎপত্তি হয়নাই, যাদের জন্য আরও ১ লাখ বছর অপেক্ষা করতে হতো। তবে জাতভাই হোমো ইরেক্টাসগণ ছিলেন তখন। সেজন্য মনে হতেই পারে, এই অঞ্ঝলেই তাহলে সেই শ্রুতিগল্পগুলি শোনা যায় কেন মানুষের। মানুষ কি ইয়েতি দেখেছে? আমার ধারণা দেখার সম্ভবনা কমই। কারন, এতো আগের দিনে মানুষ কোনকিছু দেখলেও মানুষ থেকে মানুষে স্মৃতি এতোদিন ধরে চলে আসেনা। সেজন্য গুহামানবেরা ছবি এঁকে রাখতেন, প্রজন্মান্তরে নিজেদের স্মৃতি ধরে রাখার একটা চমৎকার উপায়। এখন পর্যন্ত কোন গুহাতেই ইয়েতির ছবি পাওয়া যায়নি। সেজন্য, ধারনা করা চলে এই চীন-ভারতসহ এশিয় অঞ্চলে ইয়েতির শ্রুতি সম্ভবত এরকম বিশালকৃতির দাঁত থেকেই এসেছে।
কত বড়? বলছি। দাঁতাগুলি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা কয়েকটা জিনিস বুঝতে পেরেছেন। প্রথমতঃ এরা কোনধরনের বিনর গোত্রের। দ্বিতীয়তঃ এদের আকার এবং ওজন। এবং তৃতীয়তঃ এদের খাবার কিধরনের ছিলো। প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো এরা ওরাংওটানের কাছাকাছি বিবর্তন লতিকায় অবস্থিত। দ্বিতীয়তঃ একই পেষণদাঁত যদি বিভিন্ন বিনর থেকে তুলনা করা হয় তবে বোঝা যায় একটি দানোবিনরের উচ্চতা ছিলো প্রায় ১০ ফুট। আর এর ওজন ছিলো প্রায় সাড়ে ৫শ কেজি! গরিলার দ্বিগুনেরও বেশি। তুলনায় সুবিধার জন্য নিচের ছবিটা দেখতে পারেন। মাঝখানে আধুনিক গরিলা, সর্বডানে দানোবিনর!
ছবিসূত্র: স্টিমাইটি
এদের যতগুলি চোয়াল বা দাঁত খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা এখন বুঝতে পারি যে দানোবিনরগণ ঘাস, ফলমূল আর বাঁশ খেতো। এই উচ্চ শর্করা আর প্রচন্ড শক্ত খাবারের কারনে প্রায় সবগুলি দাঁতই বেশ ক্ষয়ে যাওয়া হিসেবে পাওয়া যায়। দাঁতা ক্ষয় হওয়া সেজন্য বেশ পুরানো রোগ! এই খাবারের প্রকৃতি বোঝার পরে কেন ইয়েতি বা দানোবিনরেরা হারিয়ে গেলো সেটারও মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। প্রায় ৮ লাখ বছর আগে দানোবিনরদের বাসস্থান, অর্থাৎ মধ্য-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। শীত নেমে আসে। ফলে যেসব উদ্ভিদে এরা অভ্যস্থ ছিলো তার অপ্রাচুর্য্যতাও দেখা দেয়। এর সাথে আছে দানোবিনরদের তুলনায় ছোট, কিন্তু বুদ্ধিমান হোমো ইরেক্টাসদের দ্বারা শিকার হওয়ার ঘটনা। এই দুইটা কারনই সবচেয়ে বেশি সম্ভবত ধারণা করা চলে।
ইয়েতিরা তাদের ডেরায়। কয়েকজন ইরেক্টাস শিকারী ঝোঁপে আছেন কোপ মারার জন্য। কাল্পনিক ছবি।
ছবিসূত্র: বিবিসি
বুঝতেই পারছেন, দানোবিনরদের নিয়ে কৌতুহলের কোন খামতি নেই দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞানীদের। সেজন্য, যতটুকু পেষণদাঁতই পাওয়া গিয়েছে খুঁজে তার থেকে ডিএনএ এবং প্রোটিন বিশ্লেষণে লেগে পড়েছেন তারা। নেচারে প্রকাশিত একটা অতিসাম্প্রতিক গবেষণা এবং দানোবিনরকে বিবর্তনিক লতিকার একটা শাখায় ঝুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। (সূত্রঃ ৩) অর্থাৎ, আমরা এখন জানি ইয়েতিরা কোন বংশের।
ডিএনএ আসলে এতো প্রাচীন কোন উপাত্ত থেকে সংগ্রহ এবং ব্যবহার করা বেশ কষ্টকর কাজ। এরা ভেঙে যায় সহজেই। যদিও এখন পৃথিবীজুড়ে ৩০-৪০ বছর আগের হত্যাকান্ডের অনুসন্ধানে এতো পুরানো ডিএনএ ব্যবহার করে ঠিকই খুনী খুঁজে বের করে ফেলার বেশ কিছু উদাহরণ আছে। তবে ৪০ বছর প্রাণীর অস্তিত্বের ইতিহাসের তুলনায় অতি নগন্য সময়! ৫০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত ডিএনএ উপাত্ত বিশ্লেষনে মোটামুটি ব্যবহার করা যায়। তবে তার আগে গেলে বিপত্তি বাঁধে, বিশেষ করে যখন আপনি এর বিন্যাস বের করে অন্যান্য টিকে থাকা বা বিলুপ্ত জীবের ডিএনএর বিভিন্ন অংশের সাথে তুলনা করতে চান তখন। সেজন্য সাম্প্রতিক গবেষণার বিজ্ঞানীরা প্রোটিনের দিকে ঝুঁকেছিলেন।
দাঁতের প্রোটিন (যাকে এনামেল প্রোটিওম বলা হয়) কে ব্যবহার করা বেশ কার্যকর, কারন দাঁত অনেকদিন টিকে থাকে। আর এর মধ্য থাকা অল্পকিছু প্রোটিনকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে বহুদিনের জন্য। মনেই হতে পারে যে বহু লক্ষ বছর পরে কোন বিজ্ঞানী তাদের পরীক্ষা করবেন দেখেই তারা এমন অক্ষয়! মানে, আপনি মরে গেলে কয়েক লক্ষ বছর পরে আপনার নাড়িনক্ষত্র বের করে ফেলা কোন বিজ্ঞানীর হয়তো দুমিনিটির কাজ হবে! প্রযুক্তিটাকে বলে প্রত্নপ্রোটিনবিজ্ঞান (palaeoproteomics)।
যাই হোক, যেভাবে ব্যাপারটা কাজ করে তাকে বলা চলে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং, বা প্রতিপ্রকৌশল। তবে সেটা কাগজে কলমে করা চলে, মানে আমাদের আধুনিক সময়ে, কম্পিউটারে। প্রথমে দাঁত থেকে প্রোটিন সংগ্রহ করে তার বিন্যাস বের করতে হয়। সেখান থেকে উল্টো পথে গেলেই ডিএনএর বিন্যাস তৈরি করা চলে। কারন, প্রোটিন তৈরির কোড বা সূত্র লেখা থাকে ডিএনএতে। এভাবে গত সেপ্টেম্বরেই এক বিলুপ্ত গণ্ডার প্রজাতির দাঁত থেকে প্রোটিন নিয়ে সেই ১৭ লক্ষ বছর আগের গণ্ডারকে প্রাণীজগতের বংশলতিকায় স্থান দিতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীগণ। (সূত্রঃ ৪)
চীনের চিউফেঙ গুহায় পাওয়া এরকম একটি দানোবিনরের পেষণদাঁত কে একই কাজে ব্যবহার করেছেন স্পেনের এই গবেষকদল। দুদিন আগে প্রকাশিত এই গবেষণায় তারা দাঁত থেকে ৬ টি প্রোটিনের প্রায় ৫০০টি বিভিন্ন পেপটাইডের (প্রোটিনের ভগ্নাংশ) বিন্যাস নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তুলনা করলে দেখা যায় এরকম ৫টি প্রোটিন এখনও টিকে থাকা বিনর এবং বানর প্রজাতিতে দেখা যায়। এই তুলনামূলক বিন্যাস গবেষণা থেকে আমরা এখন বুঝতে পেরেছি যে দানোবিনর জায়গান্টোপিথেকাস বা ইয়েতি ছিলো আধুনিক ওরাংওটানের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়। এই দুই থারা সম্ভবতঃ প্রায় ১ কোটি বছর আগে একসাথে মিলেছিলো, সেখান থেকে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।
যেই আবিষ্কার প্রায় অসম্ভব মনে করা হতো কয়েকদিন আগেও প্রত্নপ্রোটিনবিজ্ঞান তাকে সম্ভব করেছে। এই গবেষণা ছাড়া ইয়েতি যে ওরাংওটানের আত্মীয় সেটাই শুধু আবছাভাবে ধারণা পর্যন্ত থেকে যেতো। কিন্তু কতটুকু আগে, কতটুকু কাছে তারা ছিলো সেটা বোঝা সম্ভব ছিলোনা।
শেষ করছি একটা কাল্পনিক বংশলতিকা দিয়ে। ছবিটাকে খুব সিরিয়াসলি না নেয়ার অনুরোধ রইলো। যদিও এটা এই গবেষণার আগে প্রকাশিত এবং ইয়েতিকে একটা কাল্পনিক প্রাণী হিসেবে দানোবিনরের (ছবিতে সাসকোয়াচ) চেয়ে ভিন্ন দেখিয়েছে, তারপরও এটা থেকে বুঝতে আমাদের সুবিধা হবে বংশলতিকা কেমন। দেখুন দানোবিনর কোথায় আছে। ইয়েতির পাশে যেই মাপিনগু্য়ারি, সেটাও দক্ষিন আমেরিকার, বিশেষ করে ব্রাজিল আমাজনে রূপকথা বা শ্রুতির প্রাণী। লোকে ধারণা করেন এটা আসলে একসময় টিকে থাকা জায়ান্ট শ্লথের বিবরণ। শ্লথ বিনর গোত্রে পরেনা। আর দানোবিনরকে এখানে সম্ভবত বিগফুট হিসেবে দেখাচ্ছে। লোককথায় বিগফুটের বিচরণ যেসব যায়গায় শোনা যায় সেখানে দানোবিনরের থাকার কথা নয়।
সূত্রঃ আসলে কে তৈরি করেছেন এই ছবিটা সেটা খুঁজে পাচ্ছিনা।
মন্তব্য
দারুণ পোষ্ট! এখন প্রশ্ন হচ্ছে হোমো ইরেক্টাস যে কয়জন আছিল এশিয়ার এই অঞ্চলে, সবাইই তো মরে ইয়েতি হয়ে গেছিল নাকি? মানে তাদের কাছ থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের কাছে গল্প আসার তো কোন চেইন নাই?
বাংলা নাম পছন্দ হইছে
facebook
এতো আগের গল্প এভাবে প্রজন্মান্তরে আসেনা কখনই। এমনকি একই প্রজাতি মানুষে, হোমো ইরেক্টাসের কথা বাদই দিলাম।
পড়তে অনেক আগ্রহ পেলাম। দানোবিনর অনেক সুন্দর একটা নাম!
লেখাটা পড়ে We only see what we know টাইপের একটা অনুভূতি হলো।
ইংরেজিতে মানুষের প্রজাতিগুলোর একটা করে ছোটোখাটো ডাকনাম আছে। সেগুলো কিছু ইংরেজি শব্দে, কিছু আবার দ্বিপদী নামের specific epithet সরাসরি দখল বা অনুবাদ করে। যেমন Homo habilis এর ডাকনাম হ্যান্ডিম্যান (অনুবাদ), Homo neanderthalensis এর ডাকনাম নিয়ান্ডারঠাল ম্যান, Homo altaiensis আবার ডেনিসোভান, Homo floresiensis এর ডাকনাম টোল্কিনের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে হবিট। নোয়া হারারি তার স্যাপিয়েন্স বইতে মানুষের একমাত্র অবশিষ্ট প্রজাতি Homo sapiens এরও একটি ডাকনাম দিয়েছেন স্পেসিফিক এপিথেটখান দখল করে, সেপিয়েন্স। মানুষের যেহেতু একটি মাত্র প্রজাতিই অবশিষ্ট আছে, মানব গণের অন্য প্রজাতিগুলোকে অনেকেই ডাক নামে চিনতে অভ্যস্ত নন। অনেকে আবার দ্বিপদী নাম কীভাবে কাজ করে সেটা স্পষ্ট বোঝেন না বলে স্পেসিফিক এপিথেটকেই "বৈজ্ঞানিক নাম" ভেবে বসেন। যত দিন যাচ্ছে, এ প্রজাতিগুলো নিয়ে গবেষণার নানা নতুন দিক খুলছে, নতুন প্রজাতির খোঁজও মিলছে। এ প্রজাতিগুলোর জন্যে বাংলাতেও পৃথক ডাক নাম উদ্ভাবন করা যেতে পারে, সেটা স্পেসিফিক এপিথেটের অনুবাদ হোক বা কোনো গল্প থেকে অনুপ্রাণনা নিয়েই হোক।
Homo erectus এর ইংরেজি ডাকনাম চোখে পড়েনি, পুরো প্রজাতির নাম ধরেই সচরাচর উল্লেখ পেয়েছি অল্পস্বল্প যা পড়েছি। বাংলায় এ প্রজাতিটিকে ঋজুমানব ডাকনামে ডাকা যায় কি?
ঋজুমানব পছন্দ হইসে।
আধুনিক মানুষ আসলে হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স। হোমা সেপিয়েন্স আইডাল্টু আরেকটা ছিলো যারা বিলুপ্ত। দুইজনের মধ্যে পার্থক্য করতে সেপিয়েন্স আর আইডাল্টু দুই নামেই চিনতে হইতো।
H. s. idlatu-রও একটা ইংরেজি ডাকনাম আছে, হের্তো ম্যান।
ও। আমি জানতাম না এই নামের কথা! ধন্যবাদ।
দারুণ লেখা।
গুহাচিত্র সম্বন্ধে খুব একটা জানিনা, কিন্তু ৩ লক্ষ বছর আগের জাতভাই হোমো ইরেক্টাসেরা কি গুহাচিত্র আঁকতে পারত? জাস্ট বুঝতে চেষ্টা করছি, বিজ্ঞানীরা যেখানে দানোবিনরের অস্তিত্ব দাঁড় করাচ্ছে, গুহাচিত্র কেন সমর্থন করছে না।
বছর চারেক আগে ‘ধর্ম’ নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখলাম (অ্যাকাডেমিক লেখা) প্রজন্মান্তরে স্মৃতি ধরে রাখার জন্য 'স্মৃতি এবং শ্রুতির’ কথা বলা হয়েছে, যেখানে অবধারিত ভাবেই অতিরঞ্জিত হয়েছে পুরো জিনিসটা – যদিও মূল জিনিসটা্র অবয়ব রয়েই যায় বর্ণনায়। অবশ্য সেসব সর্বোচ্চ বছর হাজার পাঁচেকের কথা।
একটু স্মৃতিকাতরতা, টিনটিনেরও আগে, সেই স্কুল জীবনের গোড়ার দিকে যখন সবে পড়া শুরু করেছি, ইয়েতির রহস্যময় জগতে নিয়ে যান সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক’ দিয়ে। ছোট সাইজের আনন্দমেলায় প্রকাশিত হত, থাকতাম সিলেটে, পাওয়া যেত একমাত্র চিটাগাঙের কারেন্ট বুক সেন্টারে (জানিনা নিউমার্কেটে উল্টো দিকের সেই বইয়ের দোকানটা আছে কিনা) … একটা পর্ব পড়ে পরে্রটার জন্য অনন্ত অপেক্ষা।
গুহাচিত্রের সাথে সেপিয়েন্স, ডেনিসোভান এবং নিয়ান্ডারথালদের যুক্ত করা গেলেও ইরেক্টাস বা ঋজুমানবদের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নাই। তারা হয় এমন চিত্র আঁকতে পারতোনা, অথবা এতো আগের চিত্র টিকে থাকেনাই। প্রথম কারনটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। শিল্পের মতো কাজ করার জন্য এতো চমৎকার মস্তিষ্ক তাদের সম্ভবত ছিলোনা।
হ্যাঁ। আমার মনে আছে আরও দুয়েকটা গল্পেও পড়েছি। সেবা থেকে প্রকাশিত কিসে জানি পড়েছিলাম। কিশোর পত্রিকাতে সম্ভবত। তবে টিনটিনেরটা সচিত্র গল্প বিধায় সবচেয়ে বেশি মনে আছে মনে হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত শামসুল হকের একটা কিশোরতোষ রোমাঞ্চোপন্যাস ছিলো, হিমালয়ের বিভীষিকা, সেটায় ইয়েতির কথা পড়েছিলাম প্রথম। আপনার মন্তব্য পড়ে একটু খুঁজে দেখলাম, বইটা ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। শামসুল হকের আরেকটা চমৎকার কিশোরগ্রন্থ ছিলো বিভিন্ন সংস্কৃতিতে লিপির উদ্ভব আর প্রসার নিয়ে, হরফ পেলাম কেমন করে। এই বইগুলো পুনর্মুদ্রিত হয়ে এখনকার বাচ্চাদের কাছে পৌঁছানো দরকার।
হিমালয়ের বিভীষিকা পড়েছিলাম, প্রাইমারী স্কুলে যতদূর মনে পড়ে, সুন্দর ঘটনা! পড়ে দেখা যায় পুরোটাই, না বলব না, পড়েই জানুক অন্যরা
facebook
মুক্তধারা থেকে শামসুল হকের আরও যে সব বই বের হয়েছিল - টাকা জাদু জানে, মানুষ কী করে গুনতে শিখলো। এইসব বই ১৯৭৮/১৯৭৯ সালে পাঁচ টাকার চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হিমালয়ের বিভিষিকা নামটা মনে পড়ছে। মানুষ কী করে গুনতে শিখল পড়েছিলাম।
টাকা জাদু জানে, এই নামটাই জুড়তে এসে দেখি জুড়ে রেখেছেন। এর আদি সংস্করণ উত্তরাধিকার সূত্রে আমার সংগ্রহে আছে, পুনঃমুদ্রণ চোখে পড়েনি। আহা, কি ঝরঝরে একেকটা বই। মানুষ কি করে গুণতে শিখল- এটির পুনঃমুদ্রণ দেখেছি, কোথা থেকে-বিস্তারিত মনে নেই।
হরফ পেলাম কেমন করে- এটিও গত দশকের মধ্যে পুনঃমুদ্রিত হতে দেখেছি।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই দাঁত থেকে দানোবিনরের পুরো জিনোম সিকোয়েন্স কি বের করা সম্ভব? একটু আগাম কল্পনা করি। জিনোম সিকোয়েন্স বের করতে পারলে গবেষণাগারে কখনো দানোবিনর সৃষ্টি কি সম্ভব হবে? আমার খুব শখ স্বপন কুমার গায়েনের 'স্বাতীর কীর্তি' গল্প সংকলনের প্রচ্ছদে স্বাতী যেমন একটা লক্ষ্মী ডায়নোসরের পিঠে চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে অমন একটা ডায়নোসর পোষা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হেহে.. ও করা গেলে তো মামুট দুটো বানিয়ে তার পিঠেই চড়া যেতো। এখনও খুব সম্ভব হয়নাই। মামুটের পুরো জেনোম সংরক্ষিতভাবে পাওয়া যাওয়ার পরও!
দানোবিনরের শুধু কয়েকটা জায়গা চেনা যায়। এদের সম্পূর্ণ ডিএনএ পাওয়া সম্ভবপর হয়নাই।
নতুন মন্তব্য করুন