আজ ডারউইন দিবস, চার্লস ডারউইনের জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে বাঙালী সমাজে যেসব ধুন্দুমার কান্ড ঘটে সেসব চিন্তা করে লিখছি।
বাংলায় এখনও বিবর্তনের পক্ষের চেয়ে বিপক্ষের বই বেশি জনপ্রিয়। যদিও বাংলায় বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে বই বের হচ্ছে প্রায় ৪০ বছর ধরে। এই বিবর্তন-বিরোধি অবস্থানের এতো প্রসার ইংরেজি শিক্ষিত মহলে এখনও হয়নাই। একশ বছরের বিজ্ঞান পরাজিত করেছে অন্ধবিশ্বাসকে, তবে ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নির্ভর করছে এইসব দেশের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উপর। আমেরিকা বা ব্রিটেনের এখনকার নির্বাচিত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকে বিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করে দেখুন। এরাতো টীকাকেই বিশ্বাস করেনা। সেটা ট্রাম্প হোক বা জনসন। রক্ষণবাদিতা কোনদিক দিয়ে কখনই শুভ কিছু ঘটিয়েছে এমনটা দেখাতে পারাটা কঠিনই, যদি মানবজাতির ইতিহাসকে পর্যবেক্ষণ করেন।
যাই হোক, আরিফ আজাদ বা ডা. রাফান আহমেদ বিবর্তনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে বই লিখছেন প্রতি বইমেলাতে। ব্যবহার করছেন বিজ্ঞানকেই। তারা আবার ধর্মগল্পগুলাকে বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করতে চান না। যেমন, চাঁদকে আঙুলের ইশারায় দুভাগ করা, এর প্রমাণ খোঁজেন না। কিন্তু বিজ্ঞানের কোন প্রমাণ ধর্মের বিরুদ্ধে গেলে সেটা বিজ্ঞান দিয়ে অপ্রমাণ করতে বেশ আগ্রহী! এসব বই বেশ জনপ্রিয়ও, অধুনা বাংলা বইমেলাগুলাতে জনপ্রিয়তমও।
বাংলার বিজ্ঞানপ্রেমিরা কী ভাবেন সেটা হইলো কথা। বিশ্বাসের বাইরে আপনার সন্দেহপ্রবণ মন কী চায়? নিচের লেখাটা পড়লে দেশের পাঠকদের সম্বন্ধে একটা বিশেষরকম ধারণা জন্মাতে পারে। গত বইমেলার সময়কার খবর।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৩য় সপ্তাহে এসে সবচাইতে আলোচিত বইয়ের নামের তালিকাতে প্রথমে রয়েছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২। আলোচিত এ বইটি গত শুক্রবার প্রথমবারের মত মেলাতে আসার পর প্রথম দিনেই বইটির সকল প্রিন্ট কপি বিক্রি হয়ে যায়। প্রচুর চাহিদাসম্পন্ন এ বইটি প্রকাশের চতুর্থ দিন থেকে বাজারেও চাহিদামাফিক পাওয়া যাচ্ছে না। বইটির প্রকাশকের সাথে কথা বলে জানা গেছে বইটি প্রকাশের প্রথম ৩দিনেই প্রায় ৮,০০০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। তাই অনেকেই বইটি পাচ্ছেনা। এখনও প্রতিদিন প্রিন্ট চলছে। আশা করছি, সবাই বইটি পেয়ে যাবেন।প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১ম পর্বটিও ছিলো গত ২ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি বিক্রিত বই। বই বিক্রি সম্পর্কিত অনলাইন বিপণন সাইট রকমারী ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা গেছে তাদের সকল সময়ের সবচাইতে বিক্রির তালিকাতে এক নাম্বারে রয়েছে এ বইটি। রকমারী একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে ১ম পর্ব বইটি তারা এখন পযন্ত ১লাখ কপি বিক্রি করেছেন।
- দৈনিক যুগান্তর
'পাঠক অনুযায়ী লেখা, না লিখে পাঠক তৈরি করা' কোনটা জরুরী সেই তর্ক উঠতে পারে। প্যারা সাজিদের লেখক আরিফ আজাদ কোনটা করতে সফল হয়েছেন? দুই বছরে ১ লক্ষ বই বিক্রি তো তুমুল ব্যাপার!
হাজার রকমের লেখালেখি বা বইয়ের ঘরানার মধ্যে দুয়েকটা ধরন হল বিজ্ঞান নিয়ে। মোটাদাগে বিজ্ঞানবইকে দুইভাগে ভাগ করা চলে - প্রথমটা হল পাঠ্যবই, আর দ্বিতীয়টা পপুলার সায়েন্স বা সহজবোধ্য বিজ্ঞান বই। পাঠ্যবইগুলি মূলতঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং গবেষণার মূলবিষয়ে জ্ঞানলাভের জন্য পড়া হয়। কিন্তু, জনপ্রিয় বিজ্ঞান বই পড়া হয় আনন্দ পেতে, 'রিডিং ফর প্লেজার' যাকে বলা চলে। সাথে কিছু জানার আনন্দ।
পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ার বিষয় হলেও আধুনিক সমাজের মানবিক, যুক্তিযুক্ত মানসিকতার বিকাশে, সর্বোপরি বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ তৈরির জন্য জনপ্রিয় বিজ্ঞান বইগুলির কোন বিকল্প নাই। বলা চলে, একটা সমাজে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখা বা বই যত সহজলভ্য সে সমাজ ততটাই বিজ্ঞানমনষ্ক হতে বাধ্য।
স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় শ্রোডিঙ্গারের 'হোয়াট ইজ লাইফ' বইটার সন্ধান আমাকে দেন একজন শিক্ষক। আমি অণুজীববিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও এইরকম বইয়ের সন্ধান নিজের বিভাগের কোন শিক্ষকের কাছ থেকে পাইনাই। অবশ্য কোর্সের পাঠ্যবইয়ের বাইরে তারা কোন বইয়ের কথাই বলতেন না। বরং আমি বইটার সন্ধান পাই সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে, যিনি নিজের পড়ার বইয়ের বাইরেও এসব 'ছাইপাশ' পড়তেন।
তখন বইটা পড়ে তেমন কিছুই বুঝিনাই, সম্ভবও ছিলনা। আসলে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক পর্যায়ের এবং জীববিজ্ঞানের কলেজ পর্যায়ের পড়াশোনা না থাকা কেউ এই বই পড়ে 'প্রাণ কী' প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন অথবা বেশ বুঝেছেন বলে দাবি করেন তবে সেইটা সঠিক হবেনা বলেই মনে করি। পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে আমি ৩/৪ বার বইটার কাছে ফিরে গিয়েছি। প্রতিবার অল্প অল্প বেশি বুঝেছি। কিন্তু সম্পূর্ণ বোঝাটা বেশ কয়েক বছর পরে হয়েছে। আমি সেটা নিয়ে একটা ব্লগপোস্টও লিখেছিলাম, শ্রোডিঙ্গারের প্রাণ। পদার্থবিজ্ঞানের কোন মানুষের সাথে বসে পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা যেতো, তবে আমাকে কেউ বোঝাতে পারবেন এমন ভরসা আমার ছিলোনা তেমন কোন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রের উপর।।
হোয়াট ইজ লাইফ পড়ে একটা হতাশা কাজ করেছিল। এমনকি জীববিজ্ঞানের যেসব বিষয় নিয়ে ১৯৪৪ সালে শ্রোডিঙ্গার লিখেছেন সেসব আমি ৭০ বছর পরে জীববিজ্ঞান পড়ে ধরতে পারছিনা। এমনকি আমার স্নাতক কোর্সের পড়াশোনার সাথে কোন মিল পাইনা। অণুজীববিজ্ঞানের আধুনিক টেক্সট বইগুলা অবশ্য দারুণভাবে লেখা, অনেককিছু সময়ের ক্রমানুসারে গল্পের মত। ব্যাপার হচ্ছে আমরা কিভাবে পড়াচ্ছি বা পড়ছি সেগুলা। ক্লাসের বা কোর্সের বাইরের হলও এই পাঠ্যবই গুলা পড়তে দারুণ লাগতো। জিন কী - জিনিস এইটা বোঝার জন্য জিন আবিষ্কারের ইতিহাস পড়তে হয়। কোনটার পরে কী আবিষ্কার হল, একটা উত্তর পাওয়ার পরে কোন উত্তরটা খোঁজার ব্যাপার ছিল, কিভাবে আবিষ্কার হল ইত্যাদি। আমি এখন মনে করি বাংলায় প্রচুর পরিমান বিজ্ঞানবইয়ের অভাব বা আমাদের কাছে সহজলভ্য করার অভাব এখানে অনেকখানি ভোগান্তি দিয়েছে।
সংখ্যাটা অপ্রতুল হলেও মানুষের বিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বাংলায় বই বহু আগে থেকেই লেখা হচ্ছে, হয়েছে। ড. অভিজিৎ রায়েরও বহু আগেই। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে লেখকের নাম আসে তিনি দ্বিজেন শর্মা। তবে দ্বিজেন শর্মারও বহু আগে সেই ৭৬ সালেই মানুষের বিবর্তন নিয়ে একটা সম্পূর্ণ বই লিখেছিলেন ড. কাজী আবদুর রউফ, মানুষ ও সংস্কৃতি। বহু আগে পড়া, আবার নতুন করে পুরানো প্রিন্ট পেয়ে অর্ডার দিয়ে দিলাম।
যারা বলেন যে আরিফ আজাদদের মোকাবেলা করতে আমাদের 'কাউন্টার' বই লেখা উচিত - তাদের কথার যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করি। মানে বিবর্তন নিয়ে বেশ ভালো মানের বই কিন্তু বাংলায় লেখা হয়ে গিয়েছে। সেগুলা কি পড়েছি? নাকি আন্দাজেই খালি নতুন বই লেখা লাগবে চিৎকার করি।
হ্যাঁ, বিবর্তনকে সাধারনের মাঝে একদম সাধারন ব্যাপার করে ফেলতে অনেক বেশি বেশি এধরনের লেখা প্রয়োজন, সেটা তো বোঝাই যায়। ১০ বছর আগেও বিবর্তন নিয়ে কিছু লিখলেই মানুষের গাল খেতে হতো। এখন যারা অনেকে চিক্কুর পাড়েন তাদের অনেকে আগে গালাগালিই করতেন। ফার্স্টহ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স আছে। এমনকি বাংলাদেশে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের অনলাইন আড্ডাতেও আমাকে গালাগালি দেয়ার উদাহরণ আছে বিবর্তন নিয়ে লেখার কারনে। চিন্তা করুন, মাইক্রোবায়োলজি পড়া পোলাপান বিবর্তন বুঝছে না! এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে এসে তাদের দুয়েকজন বিবর্তনের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে দুবার ভাবেন। দেশে পড়াশোনার জিনিসপাতির অভাব ছিলো বলে ভাবনায় মৌলবাদি দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন কি তারা?
অবশ্য এখন দেশেও প্রভাব পড়েছে অনলাইনে লেখালেখির কারনে এবং বিশ্বব্যাপি মুক্তজ্ঞানের প্রসারে। আমাদের সময়ে ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা দেশে তেমন ছিলোনা। বাসায় ইন্টারনেট ছিলোনা, সেরকম পদ্ধতিই তৈরি হয়নাই তখনও দেশে। ১৭ কিমি দূরে সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করে ইমেইল দিতে হতো লোকজনকে। এখন বাসায় বসে চাইলেই কোন জীববৈজ্ঞানিক ঘটনার বিবর্তনিক ব্যাখ্যা আপনি পড়ে ফেলতে পারছেন পৃথিববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওয়েবসাইট থেকে। এসব বিজ্ঞানীদের কাজ পড়তে পারছেন অনলাইনে।
ভাবছি, এসবের ভিড়ে কাজী আবদুর রউফদের প্রচেষ্টাকে আমরা ভুলে যেন না যাই। যখন প্রায় কেউই আপনার কথা শুনবেনা বা বুঝবেনা জানতেন তখন আপনি চেষ্টা করেছিলেন দেশে বিজ্ঞানের সবচেয়ে আক্রান্ত হওয়া ধারণাকে প্রচার করতে। সেইসাথে অনলাইন যোদ্ধাদেরও সাধুবাদ দিতে হবে। অনলাইনে বাংলায় লেখালেখি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলিদানগুলা মাথায় রেখেও আমরা কেউ কেউ এই যাত্রায় সামিল ছিলাম, এই ভাবনাটা ভালোও লাগায়। অভিজিৎ রায় হত্যার বিচার না হলেও তাদের মতো মানুষদের প্রচেষ্টা আমাদের তরুনদের মানসিক পটভূমিকে পরিবর্তন করে ফেলেছে অনেক। প্রচেষ্টা চালু থাকুক।
যেকোন দেশে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার, চিন্তাভাবনা বিজ্ঞানমুখী করার, কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলার সবচেয়ে ভাল উপায় হয় মাতৃভাষায় সহজ করে বিজ্ঞানশেখানো, শিশু-কিশোর বয়স থেকে।
কিন্তু যখন আপনি গবেষণা করছেন, তখন আপনার গবেষণার ফলাফল সারা পৃথিবীর সঙ্গে বন্টন করে নিতে হয়, জানাতে হয়, যেন অন্যান্যরা আপনারবিজ্ঞান বা যেকোন গবেষণা থেকে উপকৃত হয়, সেটাকে আরও উন্নত করতে পারে, সর্বোপরি মানবসভ্যতার কাজে লাগে। ঝামেলা হইলো, আপনি যদি বাংলায় মৌলিক গবেষণাপত্র লেখেন তবে সেটা পৃথিবীর কতজনের কাছে পৌঁছাবে? জাপানীরা বিজ্ঞান গবেষণায় (অটোমোবিল, ইলেক্ট্রনিকস এবং কোষবিজ্ঞান) বেশ অনেক ধরনের ভূমিকা রাখছেন। তাদের দেশে বিদেশী গ্রাজুয়েট ছাত্রদেরও থিসিস পেপার ডিফেন্ড করতে হয় জাপানী ভাষায়। কিন্তু যতক্ষণ না আপনি ইংরেজী ভাষায় সেই গবেষণাটা প্রকাশ করছেন ততদিন সেটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীদের সাথে বন্টন করতে পারছেন না। একটা পৃথিবীতে যেকোন বিষয়ে বিশ্বের সব অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটা সাধারন ভাষা দরকার। ইংরেজী সেই স্থান নিয়েছে, যেভাবেই হোক।
আবার বিশ্বের সবস্থানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে গবেষক, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, লেখকেরা ইংরেজী ভাষায় বই লিখছেন। সেগুলি বাংলায় অনুবাদ করা যায় বা লিখে ফেলা যায় বাংলায়। কিন্তু যে লিখবেন বা যে জ্ঞানটা আহরণ করবেন, বলাই বাহুল্য, তার ইংরেজী ভাষা জানা থাকতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পরিমান জ্ঞান ইংরেজী ভাষায় সংরক্ষিত। আধুনিক পৃথিবীতে ইংরেজীর আধিপত্য বলেই। সেজন্য, ইংরেজীকে ফেলে দিয়ে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়। আমার মতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা দরকার, কিন্তু সেই সঙ্গে কিছু মাত্রায় ইংরেজীরও দখল থাকা প্রয়োজন।
বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক ভালো বই লিখতে হলে প্রথমে ভাল বিজ্ঞানী হতে হবে। এরপর সহজ, সাবলীল এবং সহজবোধ্য শব্দে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই লেখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা বড় বড় বিজ্ঞানীদের সম্পৃক্ত করে লেখাতে হবে।
- গুরু বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের কথা দিয়ে আজকের পর্ব শেষ করলাম।
মন্তব্য
বাংলাদেশের বিজ্ঞানসাহিত্য বিবর্তন, মহাকাশ (কোন গণিত ছাড়া শুধু মুখরোচক টেক্সট) গণিতবিদ ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের জীবনী (aka, মজার মজার ঘটনা) এবং বিভিন্ন সংখ্যার/অংকের ফজিলতের বাইরে বের হতে পারে না কেন? আমি মূলধারা, ব্লগ কোথাও একটা কমপ্লেক্স ফিজিক্স, বা ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে লেখা পড়িনি। বিজ্ঞান পড়েছে যারা তারা তাদের এডভান্সড বিষয় নিয়ে বাঙলা বা ইংরেজিতে লেখে না কেন?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কয়েকবছর আগে বার্লিনে সম্ভবত স্ট্রাসেনবানে আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হচ্ছিল!
উচ্চতর বিষয়ে ইংরেজি বই অসংখ্য। বাংলাতে না লেখার কারণ সম্ভবত "কেন লিখব" সেই প্রশ্নের উত্তর বের করতে না পারা!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমার প্রশ্নটা এখনো জারি আছে। আমি এখন বাংলা ভাষায় একটা দর্শনের এবং একটা ভাষাতত্ত্বের একটা বই পড়ছি। বেশ রিগোরাস, ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর মতো। আমি বাংলায় এই মানের বিজ্ঞান বই পড়তে চাই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সমস্যাটাও কিন্তু রয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মত বিজ্ঞানের বই বাংলায় লিখতে পারা লোকের সংখ্যা সামান্য। কিন্তু যারা পারেন, তারা লিখবেন কেন? এটা অসীম পরিশ্রমের কাজ আর সে একবার করলেই শেষ হয়না। আধুনিক বিজ্ঞানের বই বছর বছর হালনাগাদ করতে হয়। আমার মনেহয় নিচের (অসম্পূর্ণ?) তালিকার এক বা একাধিক কারণে কেউ বই লেখে,
১। কিছু লোকে আহা উহু করবে, পুরষ্কার মিলবে, শ্লাঘানুভুতি হবে।
২। লোকে কিনবে, পড়বে। তাতে গৌরবের সঙ্গে মিলবে পয়সা।
৩। কোন রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সংস্থা অন্তত লেখকের পারিশ্রমিক দেবেন। বইটা পড়বে কিছু আগ্রহী লোকে, দশকধরে। অথবা কিছু লোকে প্রয়োজনের তাগিদে।
৪। ধর্মপ্রচার বা জ্ঞান প্রচারের উদ্দেশ্যে (এটা খেওনা, ওদিকে যেওনা টাইপ লেখা)।
৫। একেবারেই লিখতে আরাম লাগে বলে লেখা (মূলত, ব্যক্তিগত ডায়েরি, "সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে" টাইপ বই, তবে কিছু তথ্যবহুল বইও আছে)।
৬।...?
এর মাঝে এক বা একাধিক কারণ কি উচ্চতর বিজ্ঞানের বই লেখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তাই কি? যেমন, এবার আর গতবারের বইমেলাতে বিজ্ঞানবইগুলা লক্ষ্য করুন। জীববিজ্ঞানে প্রায় কোনটাই শুধু বিবর্তন নিয়ে প্রকাশিত হয়নাই। ব্লগে হয়তো বিবর্তন নিয়ে বেশি দেখেন লেখা। তার বিভিন্ন কারন থাকে। আবার, বিবর্তনকে বাদ দিয়ে জীববিজ্ঞান প্রায় অসম্ভব। সেজন্য বিবর্তনের কিছু কথা আসেই।
এডভান্সড বিষয় নিয়ে লিখবে কেন সেটা হইলো কথা। যেসব লেখক এমন এডভান্সড বিষয় বুঝতে পারেন তারা ইংরেজী থেকেই পড়ে নেন। জীববিজ্ঞানে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আমি লেখা যদিও দেখেছি, ক্রিস্পার।
এডভান্সড বিষয়ে বাংলায় কেন লিখবো না সেইটার উত্তরই খুঁজছি আমি। আর লেখা ক্রিস্পি হতে হবে কেন? ফেসবুকে পোচুর লাইক পাওয়া যাবে এই জন্য?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দুঃখিত, আমি পরিষ্কার করে উল্লেখ করিনাই। ক্রিস্পার একটা প্রযুক্তির নাম। জিন সম্পাদনা নিয়ে সবচেয়ে আধুনিক এবং সবচেয়ে বেশি কাজ করা প্রযুক্তি।
উপরে অনার্য সঙ্গীতের মন্তব্যের সাথে একমত। এখন কেউ যদি শুধুমাত্র নিজের খেয়ালে 'উচ্চতর বিষয়গুলি' নিয়ে বই লিখতে চান তবে সেটা পারেন। এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। বাংলায় সাধারন বিজ্ঞানের বই পড়ার পাঠক তৈরি প্রধান লক্ষ্য বিধায় যারা পারেন তারাও হয়তো দ্বিতীয় দিকেই ঝোঁকেন।
পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশীদ এককালে লিখেছেন প্রচুর। কোন বইয়েরই দ্বিতীয় সংস্করণ হয় নি। পল্টন আর নীলক্ষেতের ফুটপাথ ঢুঁড়ে আর বাংলা একাডেমির ধুলোপড়া সেল ঘেঁটে একসময় এর একটি অংশ সংগ্রহ করেছিলাম। কিছু হারিয়েও ফেলেছি।
এরপরে আর কেউ সেভাবে লিখেছেন কি না, আমার জানা নেই। পরবর্তী লেখকেরা অবধারিত ভাবেই তাঁর ছাত্র হবেন, এমন সম্ভাবনা আছে। শিক্ষকের খাটুনির ফলাফল দেখেও তাঁরা পিছিয়ে যেতে পারেন, এই আশংকা আছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে লেখা বই, (এই ধারার অন্যান্য বইয়ের) "মূল" কিন্তু বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা তথ্য উপাত্ত নয়, মূল হচ্ছে মানুষের "চিন্তার কিছু প্রবণতা" ব্যবহার করে বাজার ধরা। বিবর্তন বিরোধিতার ক্ষেত্রে সবচে বড়টা যে প্রবণতা ব্যবহার করা হয় সেটা কনফার্মেশন বায়াস। সেইজন্য আইনস্টাইনের থিওরি বিরোধিতা করা বই বাজারে ওঠেনা, জনপ্রিয়ও হয়না। মোটাদাগে, "কনফার্মেশন বায়াস" বিক্রি করা বইয়ের মুগ্ধ পাঠকপাল যৌক্তিক চিন্তা করতে পারেন না। বাস্তবে বেশিরভাগ মানুষই যৌক্তিক চিন্তা করতে পারেনা। "উঁচু পর্যায়ের শিক্ষিত" মানুষেরাও নয়। যেমন আপনি বললেন অণুজীববিজ্ঞান পড়া মানুষজন বিববর্তন মানেনা! মানবে তো পরে, বুঝতেই তো পারেনা!
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করিনা বিজ্ঞান পড়িয়ে একটা দেশকে যৌক্তিক চিন্তা করতে শেখানো যাবে। "অযৌক্তিক" চিন্তার প্রবণতা মানুষের স্বভাবগত। সামান্যকিছু "হার্ডকোর ফ্যানাটিক সোশিওপ্যাথ" ছাড়া সেই স্বভাব কাটিয়ে ওঠা মানুষ কমই পাওয়া যায়
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মানুষের স্বভাবগত হলেও কিছু সমাজে কেন যৌক্তিক চিন্তার গ্রহনযোগ্যতা বেশি সেটা তো প্রশ্ন থেকে যায়। আমার ধারণা রাষ্ট্র, সমাজ আর যারা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন তাদের সবার বড় ভূমিকা আছে এখানে।
এই ধাঁধাঁর জবাব খোঁজার আগে যৌক্তিক চিন্তার গ্রহনযোগ্যতার হিসেব কীভাবে করবেন সেটা বিবেচনা করা দরকার বলে আমার মনেহয়। শিক্ষিত মানুষের সহনশীলতা, অন্তত, সভ্য-সামাজিক বিচার বিবেচনার ক্ষমতা বেশি হতে পারে। কিন্তু বিবর্তন মেনে নেয়ার জন্য যতটা যৌক্তিক চিন্তা করতে পারা প্রয়োজন সেটা অনেক শিক্ষিত সমাজে দেখা যায়না। আমি বেশ স্পেকটিকাল এই প্রসঙ্গে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেছিলেন ,”আমি ক্লাসে এত করিয়া ছাত্রদের পড়াইলাম, যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপরে পড়িয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়। তাহারা তা পড়িল, লিখিল , নম্বর পাইল, পাস করিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল যখন আবার সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হইল তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করিয়াছে বলিয়া তাহারা ঢোল, করতাল, শঙ্খ লইয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। ইহা এক আশ্চর্য ভারতবর্ষ ।”
আচার্য প্রফুল্ল রায় এর দিনে যা ছিল, এখনো তাই আছে। এতদিনে ও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নাই, বিজ্ঞানের এত প্রভূত উন্নতি সত্ত্বেও । সেই কারণেই আরিফ আজাদের বই বেস্ট সেলার হয় এবং দিনের পর দিন বেস্ট সেলার থাকে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একটা পথ হল বিজ্ঞান কে জনপ্রিয় করা। পপুলার সায়েন্স ক্যাটেগরির বই পাবলিশ করা। অবশ্য ধর্ম আর বিজ্ঞান-এর তফাৎ না বুঝলে চন্দ্রগ্রহণ দেখে ঢোল, করতাল নিয়ে রাস্তায় নামা বা আযান দেয়া বন্ধ হবে না।
বাংলায় মৌলিক গবেষণাপত্র লেখার পথে দুটো বাধা আছে। প্রথমত, বাংলা ভাষাই এখনও সাম্প্রতিক বিজ্ঞানকে পূর্ণরূপে প্রকাশের জন্যে প্রস্তুত নয়। বিজ্ঞানে শিক্ষিতরা ভাষার ফাঁকগুলো ইংরেজি দিয়ে ভরাটের পক্ষপাতী, কারণ এদের বেশিরভাগেরই বাংলা ভাষায় দখল খুবই নড়বড়ে। দ্বিতীয়ত, এসব মৌলিক গবেষণাপত্র সম্পাদনা, নিরীক্ষা আর প্রকাশের কাঠামো এখনও অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিন্ন অনুষদ মিলে যদি জোরালো উদ্যোগ নিয়ে বাংলায় কোনো গবেষণা সাময়িকী প্রকাশ করতো, তাহলে হয়তো কাজ এগোতো। কিন্তু বহু "শিক্ষিত" জনের সমন্বয় আর নিয়ত শ্রম দাবি করে, এমন জিনিস বাঙালি সমাজে সহজে গজায়ও না, বা গজালেও অঙ্কুরে মরে।
বিকল্প থাকে কিশোরপাঠ্য বিজ্ঞান বই লেখা। এখনকার কিশোররা কতটুকু নিতে পারে, সেটা বিবেচনা করে বই লিখতে গেলে ঘুরেফিরে বিজ্ঞানীদের জীবন থেকে কিছু উপাখ্যান তুলে ধরা ছাড়া আর কিছু লেখা হয় না। বিজ্ঞানমুখী চিন্তা করতে গেলে সমাজ থেকেও খানিকটা সাড়া লাগে, সেটা বাঙালি সমাজে মেলে না। নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে বিজ্ঞানমুখী চিন্তা উৎসাহিত করা হচ্ছে, এমন দৃষ্টান্ত না থাকলে চিন্তার রাস্তায় কেউ যাবে না।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, বহুলাংশে বিজ্ঞান ব্যাপারটাকে আমাদের সমাজে একটা ইয়োরোপীয় প্রপঞ্চ হিসেবে তুলে ধরা হয় (বিকল্পও নাই)। ফলে আমরা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য ইয়োরোপ আর তার একদা-উপনিবেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে অভ্যস্ত। বিজ্ঞান-টিজ্ঞান সাদা চামড়ার লোকেরা করবে আর আমরা আমাদের সংস্কারের চুলায় ভেজা খড় ঢুকিয়ে ফুঁ দিয়ে যাবো, এটা সমাজের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অবচেতনে কাজ করে বলে আমার মনে হয়। বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বইগুলো যদি চিন্তার এ ধারাকে জোরদার করে, তাহলে আত্মশক্তির জায়গাটা দুবলা থেকেই যাবে। বাংলাভাষী বিজ্ঞানীরা যদি প্রয়োজনে ছায়ালেখক সাথে নিয়ে নিজেদের গবেষণা নিয়ে লেখেন (একটা সমস্যা আর তার সমাধানে পৌঁছানোর গল্প), তাহলে একটা বড় আর নতুন ধারার কাজ হতে পারে।
হুমম। ভালো বলেছেন।
সেঁজুতিদের বক্তব্যটার কথা মনে হলো। তারা তাদের হাসপাতালে বিজ্ঞান নিবন্ধগুলির বাংলা-সংক্ষেপ তৈরির চিন্তা করছিলো।
বিজ্ঞানচর্চাতে পিছিয়ে থাকলে দেশী বিজ্ঞানীরা বাংলায় সুখপাঠ্য মূলভাবনার কিছুও লিখতে পারেন না। সাথে যদি থাকে নিজের বিষয়ের গবেষণা নিবন্ধ পড়ার বাইরে অন্যান্য পড়াশোনার অভাব তবে সেটা আরও বড় অন্তরায় হিসেবে দেখা দেয়।
ডারউইন দিবস উপলক্ষে সচলে একটা ভালো লেখা পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার লেখা পড়ে সেই তৃষ্ণা দূর হলো। অনেক ধন্যবাদ চমৎকার এই লেখা উপহার দেবার জন্য। অনেক ভাবনার খোরাক রয়েছে বিবর্তন/বিজ্ঞান নিয়ে বাংলায় লেখালেখি নিয়ে।
নিজের অলসতায় এবং সময়স্বল্পতায় সময়মত কিছু লিখতে পাড়লাম না । আশা করি সামনে সময়সুযোগ পেলে একটা লেখা দেব।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
- বাংলাতে নাকি ইংরেজিতে?
যেমনটি বলেছেন, অন্ততপক্ষে কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলার জন্য শিশু-কিশোরদের জন্য সহজভাবে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানের বই লেখাটা গুরত্বপূর্ণ। হাসিব মাহমুদের মত উচ্চতর বিজ্ঞান বইয়ের আশা আর করি না (‘পড়া-লেখা-জানাওয়ালা-সফিস্টিকেটেডদের’ একাংশ বাংলাকে অপাঙ্ক্তেয় মনে করে)।
উচ্চ বিদ্যালয়ে নাকি উচ্চমাধ্যমিকে মনে নেই, বিবর্তনের উপর যে বইটা সবচেয়ে ভাল লেগেছিল সেটা ছিল তখনকার সবচেয়ে বিক্রিত বইয়ের প্রকাশনী সেবার (প্রকাশনী)। লেখক কিংবা বইয়ের নাম মনে করতে পারলাম না। তার সাথে যেটা গুরুত্বপূর্ন, বন্ধুদের মধ্যে সেই বই নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছিল। জানিনা, মফস্বলে আগের মত ‘বিজ্ঞান মেলা’ কিংবা ‘বিজ্ঞানের উপর বক্তৃতা’ আর হয় কিনা।
অনার্যের ‘কনফার্মেশন বায়াসের’ সেইযুগের জনপ্রিয় লেখক মরিস বুখাইলি তখন জনপ্রিয়। আরিফ আজাদ কিংবা বুখাইলির বই পড়া হয়নি। তবে ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে মুখোমুখি করার পরিবর্তে বুখাইলির ‘রিকনসিলিয়েশন’ কিন্তু ভাল ছিল।
হিমু যেমনটি বলেছে, সমাজের সাড়া কিংবা সমাজের রেডিনেস অনেক গুরুত্বপূর্ন। পরিবারকে সমাজের গুরত্বপূর্ণ অংশ ধরে নিয়ে প্রবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের জন্য অস্বস্তি হয় (এই মূহুর্তে দেশের বইরে থেকে অনুভুতি)। অবশ্য শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট আপনারা ব্যাপারটা হয়ত তেমনভাবে বুঝতে পারবেন না। ‘বিজ্ঞান-শিক্ষা’ কিংবা ‘বিজ্ঞান বইয়ের’ প্রতুলতার মধ্যে থেকে বরঞ্চ মারাত্মক ‘কগনেটিক ডিসোনেন্সের’ শিকার হচ্ছে। কারণ, ফ্রেম অভ রেফারন্স তৈরির গুরত্বপূর্ন দুই কুশীলব পরিবার এবং ধর্মশিক্ষক অন্য কথা বলছে। সে অবশ্য অন্য বিতর্ক।
এই প্রসঙ্গে খানিকটা বাববাকুম করার লোভ সামলানো গেলনা!
ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে মুখোমুখি করার চেষ্টা কিন্তু বৈজ্ঞানিক নয়, ধর্মাচারণ হবে হয়ত! ধর্মকে বিজ্ঞানের মুখোমুখি করার (মোটাদাগে, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে প্রমাণ করার) মূল কারণ হচ্ছে মানুষের স্বভাবগত "সিদ্ধান্ত-কে যৌক্তিক বানানো"র প্রবণতা। সংখ্যাগরিষ্ঠে এই কাজ কেন করে তার চমৎকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু আদতে এ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার একেবারে উল্টো। বিজ্ঞানে যুক্তি-তর্ক আগে, শেষে সিদ্ধান্ত।
যে "জিনিস"কে ভুল প্রমাণ করা যায়না, সে বিজ্ঞানাগারের চৌকাঠও মাড়াতে পারেনা। বিজ্ঞানের আওতার বাইরের "বস্তু"কে বিজ্ঞানাগার থেকে এটা-সেটা-ওটা এনে খুঁচিয়ে সত্য প্রমাণ করার প্রচেষ্টা একইসঙ্গে অবৈজ্ঞানিক এবং হাস্যকর।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হেহে, নদীর এপার কহে... আমার অভিজ্ঞতা উলটো। শ্রোয়েডিঙ্গার মশাই লিখেছেন বলেই নাম দেখে লাফাতে লাফাতে কিনেছিলাম। তারপর দেখি পুরোটাই জীবিবিজ্ঞানের কচকচি! নো পদার্থবিজ্ঞান।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন