একটা কাটা দাগের চিহ্ন মুছে যেতে কতদিন সময় লাগে? কিংবা আদৌ কি মুছে যায়? যায় না।খুব সুক্ষ একটা চিহ্ন কিন্তু ঠিকই থেকে যায়।যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাঁপাতলা গ্রামের মালোপাড়ার হামলার তো বেশ কিছুদিন হলো।আমরা দেশের আমজনতারা খবরের ভিড়ে ভুলতে বসেছি মালোপাড়ার মানুষদের দুঃখ আর কান্নার কথা,হয়তো ভুলতে বসেছি তাদের আস্থা হারানো এই অবিশ্বস্ত জনপদে আতংক নিয়ে বেঁচে থাকার কথা । আমাদের এই ষোল কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিনই নতুন নতুন রগরগে খবরের জন্ম হয় বলেই হয়তো এই ভুলে যাওয়া।
কিন্তু তারা কি ভুলতে পারবে এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের দিনটির কথা। কী ভয়াল থাবায় ভেঙ্গে গেছে তাদের তিল তিল করে সাজানো ঘর,তিল তিল করে বেড়ে ওঠা বিশ্বাস।ছোট্ট বিপাশা কি আর কোনোদিন বিশ্বাস করতে পারবে আমাদেরকে।তার ছোট্ট মনে যে ভয়ের সঞ্চার করেছি আমরা রাজনীতির নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে ,সেই ভীতি কি এই বাচ্চাটি কাটিয়ে উঠতে পারবে কখনো?
ভাগ্যিস আমাদের এই ছোট জনপদে মিডিয়ার জোয়ার ছিল।তাই এই ভয়াবহ অমানবিকতার খবর ব্যাপকভাবেই সবার সামনে এসেছে। কতটা ক্ষোভ আর কত হিংস্র আক্রমন ছিল তা ওইসব খবরের ফুটেজ দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায়। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় মা সঞ্চিতা বর্মনের কোলে ক্ষুধার কষ্টে কান্নারত বিপাশা বর্মনের ঐ ছবিটা এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।মা-মেয়ের পাশেই ছবিতে স্পষ্ট হয়ে থাকে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন।
শুধু যশোর না,দিনাজপুর ,সাতক্ষীরা ঠাকুরগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর এই নির্যাতনের খবর পড়ে কী ভীষণ লজ্জা লাগছিল আমার খুব কাছের কিছু মানুষদের কথা ভেবে।আমার কাছের কিছু বন্ধু,আমার অনেক মন খারাপ করা সময়ে ভালোবেসে ভরসা দেয়ার আপনজন আমার দু’জন দিদি এরা আমাদের কি ভাববে,আমার যে কি কষ্ট লাগছিল,আমার মনে হচ্ছিল এই সব আপনজনদের সামনে গিয়ে আমি কিভাবে দাঁড়াব?
একজন দিদিতো বলেই ফেলল,”এই অবিশ্বস্ত জনপদে কিভাবে আস্থা নিয়ে বাঁচব আমরা?”
“একটা কথা কি জানো আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সবাই আমাদের ব্যবহার করে।এ দেশের বেশিরভাগ মানুষই বলে আমরা আওয়ামীলীগ সরকারের ভোটব্যাংক হিসেবে কাজ করি।অথচ তুমিই দেখ আমাদের হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসেবেও আছে ।যদি ধর্ম দিয়েই মানুষ বিচার করা হবে,ভোটের পরে প্রতিবারই এমন বর্বরভাবে নির্যাতন করা হবে এবং এই দল, ঐদলের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদেরকে সাধু মানুষ কিংবা ধোয়া তুলসী পাতার মতো মনে করবে তাহলে আমাদের ধর্মেরই যারা রাজনীতি করেন তারা কেন তাৎক্ষনিক ভাবে সবাই এক হয়ে প্রতিবাদ করে না।এখানে ধর্ম কিংবা মানুষ মুখ্য নয় ,মুখ্য কেবল রাজনৈতিক ফায়দা।আর তাইতো এত দীর্ঘ সময় পর ও এদেশে আমাদের পরিচয় আমরা সংখ্যালঘু।
এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় আসলে অনেকে অনেক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখায়।এই সব ভালোবাসার মধ্যে অনেক মেকি ভালোবাসা যেমন থাকে তেমনি নিখাঁদ ভালোবাসাও থাকে।আর সে কারণেই হয়তো এত কষ্টের পরও ঠিকই বেঁচে থাকি। কিন্তু বিশ্বাস করো এভাবে বাঁচার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।সারাক্ষণ ভীতি।এই ভীতি কেন থাকবে?কেন আমাদেরকে সবসময় একটা বিশ্রী আতংক নিয়ে থাকতে হবে এই বুঝি কোনো হামলা হয়?এটা কী কোনো স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের জীবন হতে পারে? "
আমি একটা কথাও বলতে পারিনি।
আচ্ছা বলার মতো কোনো কথা কি আমার থাকতে পারে?
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মালোপাড়ার ধ্বংসস্তূপ এ রঙ লেগেছে।সঞ্চিতা বর্মন খুব চমৎকার একটা কথা বলেছে।ভাঙ্গা ঘরের পরিবর্তে পাকা দালান পাচ্ছে,খুশিই তো লাগার কথা,কিন্তু এই পাকা ঘরে কি ছোট্ট বিপাশা ভুলে থাকতে পারবে সেই দুঃসহনীয় কাল রাত্রির কথা।
মন্তব্য
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
মন খারাপ---
____________________________
মানুষ অনেক কিছুই পারে। ভালোও পারে, মন্দও করতে পারে।
আজ হঠাৎ মনে হল:
কোনদিন কোন বাবুই পাখিকে দেখিনি আরেকটা বাবুই পাখির বাসা ভেঙে ফেলতে,
একটা সাপও আরেকটা সাপের গর্তে আগুন লাগায় না।
অথচ, সেখানে মানুষ হয়ে আমরা কতটা নিচুতে নেমে যেতে পারি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমরাই তৈরি করি।
লেখিককে শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
মানুষে মানুষে পার্থক্য আছে বলেই হয়তো পৃথিবীটা এখনো মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়নি।
অনেক ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ।
ধর্ম থেকেই বিবেকের উৎপত্তি। বিবেক ভুলে যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে যদি কেউ কাজ করে তাকে মানুষ বলা চলেনা।
ইউক্লিড
নতুন মন্তব্য করুন