ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত সান্তা মারিয়া নভেল্লা গির্জার একাংশ।
জন্মেছি বগুড়া মিশন হাসপাতালে। আমাদের দুই ভাইয়েরই জন্ম সেখানে। বগুড়ার মিশন হাসপাতালের সুনাম ছিল একসময়। মিশন হাসপাতাল সম্ভবত গির্জা দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান, নিশ্চিত নই। রাজশাহীতে কোর্ট যাবার পথে চিড়িয়াখানার পাশে একটা গির্জা দেখেছি। ঢোকা হয়নি কখনো। গির্জার প্রতি আলাদা করে কোনও আগ্রহ ছিলনা। মসজিদে গেছি ছোটবেলায়, প্রার্থনা করেছি, পুজা পার্বণে বন্ধু কৌশিকের হাত ধরে পূজা মণ্ডপে গিয়েছি, প্রসাদ খেয়েছি, এমনকি জীবনে প্রথম যে প্রার্থনার হাত উঠেছিল তাও ছিল মা সরস্বতীর কাছেই। কিন্তু খ্রিস্টানদের উপাসনালয় অধরাই থেকে গেছে।
ইটালিতে এলাম যখন, যে শহরে এলাম, বোলোনিয়ায়, শহর জোড়া গির্জা আর গির্জা। কিন্তু শুরুর দিকে গির্জায় আগ্রহ দেখাইনি কখনো। ভেতরে উঁকি ঝুঁকি মারার ইচ্ছেও জাগেনি তেমন। কিন্তু যতই সময় গেল, শহরের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়তে লাগলো, গির্জাগুলিও কেমন করে আপন হতে শুরু করল। ছুটির দিনগুলিতে গির্জায় আনাগোনা বাড়তে লাগলো। বোলোনিয়া শহরের কেন্দ্রের যে গির্জা সেইটা এত বড়ো, ভেতরটা এত বিশাল, প্রথমে তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতাম। ভেতরে ঢুকলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়তাম। বুঝতামনা কেন এইসব মূর্তির ঢল, এইসব ছবি। তবে ধীরে ধীরে সেখানে সময় দিতে থাকলাম বেশী। শুধু বসে থেকেই কেমন একটা শান্তি পেতাম। গির্জার ভেতর যে কোন ছোটোখাটো আওয়াজ কেমন গমগম করে বেজে ওঠে। বিশেষ করে গরমের দিনে একটু গা জুড়নোর জন্য হলেও ভেতরে গিয়ে বসতাম। প্রথম প্রথম ছবিগুলি দেখে ভাবতাম ধুর, এইসব ছবি না ভিঞ্চির আঁকা, না মিকেলএঞ্জেলোর না রাফায়েল্লোর, এইসব দেখে কি হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে এগুলোর রস আস্বাদন করতে শুরু করলাম। হোক ছবিগুলি নাম না জানা চিত্রকরদের কিন্তু যেভাবে বিশাল বিশাল দেয়ালে নিখুঁত সব চেহারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলে তা চরম উপভোগ্য।
বোলোনিয়া শহরের গির্জাগুলির মধ্যে কোনওটা রোমান আবার কোনওটা গথিক। বাইজেন্টাইন গির্জা এখানে চোখে পরেনি অবশ্য। বাইজেন্টাইন গির্জা দেখেছি রাভেন্না আর ভেনিসে। তবে কোন্ গির্জা রোমান কিংবা কোনটা গথিক এগুলো বুঝতে এখনো হিমশিম খাই। আবার কোনও কোনও গির্জায় বিভিন্ন ধরণের আর্কিটেকচারের সমন্বয় ঘটেছে বলেও শুনেছি। আসলে নানান কালে এই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল শাসন করেছে নানান শাসক বর্গ। খ্রিষ্টান ধর্মের সুচনা এবং বিকাশের সময় জুড়েই গির্জা নির্মাণ চলেছে। সময়ের সাথে সাথে রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বে পরে বিভিন্ন শাসকদের সময় এসব গির্রজার নকশায় এসেছে নানান পরিবর্তন। পাপাল স্টেট কর্তৃক শাসিত হবার সময় তো ছিল গির্জার রমরমা। জনগনের করের টাকা আর দান খয়রাতের টাকা তারা দুহাতে ব্যয় করেছেন বিশালাকারের গির্জা নির্মাণে। কমিশন দিয়েছেন তখনকার নামকরা খ্যাতিমান সব চিত্রকরদের, দেয়াল কিংবা সিলিং জুড়ে পেইন্টিং করার জন্য কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য। মুল্যবান পাথর আর সোনা দানা দিয়ে ভরিয়ে দেয়া হয়েছে গির্জার নানান অংশ। তাইতো কোনও কোনও গির্জা নির্মাণ করতে ব্যাপক সময় লেগেছে। ধরা যাক কোনও এক রাজ্য কেন্দ্রীয় গির্জা নির্মাণের ঘোষণা দিল, সাথে সাথে এলাকায় নকশাকারীদের মাঝে সাড়া পড়ে যেত, জমা পড়ত নানান নকশা, সেগুলি থেকে বাছাই করে একটি নকশা নির্বাচন করা হত। তারপর শুরু হত নির্মাণ কাজ। কিন্তু নির্মাণ কাজ নানান কারণে বাধা পড়ত। বিরূপ প্রকৃতি, প্রধান নির্মাণকারীর অসুস্থতা কিংবা মৃত্যু, ফান্ড নির্মাণে সীমাবদ্ধতা, রাজ্য প্রশাসনে পরিবর্তন, নির্মাণ কাজে স্থবিরতা এসব ছিল গতানুগতিক ব্যাপার। তাইতো মিলানের বাসিলিকা নির্মাণ করতে ছয়শো বছর লেগেছে, বোলোনিয়ার লেগেছে চারশো বছর।
কোনও কোনও গির্জার দেখেছি বাইরের অংশ ভীষণ সুন্দর তো ভেতরটা সাদামাটা, অন্ধকার (রোমান), আবার কোনও কোনওটা ঠিক তার বিপরীত যেমন গথিক অথবা বাইজেন্টাইন। কোনও কোনও গির্জার ভেতরে অসংখ্য মূর্তি; পেইন্টিং। আবার কোনও কোনওটাতে একদমই নেই। কোনও কোনও গির্জার সিলিং জুড়ে অনেক ছবি, তো কোনও কোনওটার দেয়ালে। কোনও কোনও গির্জার সঙ্গীতের যন্ত্রগুলি (কয়্যার) খুবই আকর্ষণীয় করে সাজানো, বিশালাকার তো কোনটাতে বেশ ছোটোখাটো , কোনটাতে আবার একবারেই নেই। কোনও কোনও গির্জার ভেতরে মুল্যবান মালামাল রয়েছে প্রচুর তো কোনটার আবার দরিদ্র রূপ। ইটালির এক এক জায়গার গির্জার নকশা কিংবা নির্মাণ আবার একেক রকম। ভেনিসের একরকম, তো ফ্লোরেন্সের আরেকরকম। রোমের একরকম তো মিলানের আরেক টাইপ। এক সময় এই গির্জা নির্মাণ নিয়েই এক রাজ্যের সাথে আরেক রাজ্যের চলত ব্যাপক প্রতিযোগিতা, কে কার চাইতে বড়ো গির্জা বানাতে পারে। তবে এইসব নির্মান করতে গিয়ে যে খরচ হত তা নিশ্চয়ই মানুষের শ্রম ও ঘামে ভেজা ট্যাক্স থেকে নেয়া। এইসব গির্জার শিল্প মুল্য রয়েছে নিশ্চয়ই কিন্তু এর পেছনে শোষণের ইতিহাসও কিছু কম নেই। এইযে বিশাল বিশাল সব স্থাপনা ,এইযে সব তুঘলকি কাণ্ড কারখানা, বুজরুকি ব্যাপার স্যাপার- রেনেসাঁসের দেশে এগুলো যে এখনও প্রবল প্রতাপে টিকে আছে তাও কম বিস্ময়কর নয়! রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে ধর্মের যে বরাবরই একটা দহরম মহরম ছিল এবং আছে তা এইসব দেশে এলেও ঠিকই টের পাওয়া যায়। তবে এটাও ঠিক গির্জাগুলি এইসব শহরের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। এখানে গির্জাগুলিতে সকল মানুষ যে প্রার্থনা করতে আসেন তা তো নয়, বহু মানুষ আছেন যারা এইসব দেখে অতীতের স্বাদ নিতে চান, অনুপম চিত্রকলা দেখে মুগ্ধ হতে চান।
কেন্দ্রীয় গির্জা কিংবা বাসিলিকা কিংবা দুয়োমো সম্পর্কে আমার জানা শোনা কম। শুনেছি প্রতিটি বাসিলিকার বাইরে তিনটি দরজা থাকে, শুনেছি প্রতিটি বাসিলিকার পশ্চিম দিকের অংশটাই সবচাইতে গুরুত্ব সহকারে এবং আকর্ষণীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়। এমন আরও অনেক কিছু শুনেছি। কিন্তু এই বিষয়ে পড়েছি কম আবার দেখেও যে অনেক কিছু বুঝে ফেলেছি তাও নয়। তাই বেশি প্যাঁচাল না পেড়ে বরং ছবি সহকারে কিছু গির্জার বর্ণনা দিতে মন চায়।
১) প্রথমে সেন্ট পিটারস বাসিলিকার ছবি না দিলে ইটালি মাইন্ড করতে পারে। এই গির্জার ভেতর একবারই যাওয়া হয়েছিল ভু পর্যটক অণু মশাইয়ের সাথে। এই গির্জার ভেতরটা সত্যিই হাঁ হয়ে যাবার মতন। বিশাল ব্যাপক কারবার। আদার ব্যাপারির সেখানে বেশী সময় কাটানো মানে সময় নষ্ট করা। তবে সবচাইতে আকর্ষণীয় হল মিকেল এঞ্জেলোর পিয়েতা। তাঁর একটা ছবি না তুললে জীবন বৃথা! দেখার কাজ পরে! চতুর্থ শতকে এই গির্জার অস্তিত্ব ছিল। এটি খ্রিস্টান ধর্ম পালনকারীদের শীর্ষ পীঠস্থান, রেনেসাঁস স্থাপত্যকলার সেরা নিদর্শন।
২) ভেনিসের বাসিলিকা সান মার্কো। পাদ্রি সান মার্কোর একটি আবক্ষ মূর্তি এই গির্জার মাথায় শোভিত। এই গির্জাটি বাইজেন্টাইন শিল্পের এক অনুপম নিদর্শন। এর ভেতরে বাইরে পুরোটাই চোখ ধাঁধানো। ভেতরে ঢুকতে ম্যালা টাইম লাগে, লম্বা লাইন, ব্যাগ থাকলে তা আবার পাশেই একটি জায়গায় রেখে আসতে হয়। নানান ঝামেলা শেষ একবার ঢুকলে মন ভালো হতে বাধ্য। একবার ক্যামেরা নিয়ে ঢুকলে একদম খনি। এত সুন্দর ইন্টেরিয়র সমৃদ্ধ গির্জা পুরো দুনিয়াতেই বিরল। পুরো গির্জাটি যেন শিল্পকর্ম দিয়ে মোড়ানো, তাও মোজাইকের নিখুঁত সব কাজ। সেই মোজাইকের ভেতর সোনাদানা ও মণিমাণিক্যের ছড়াছড়ি। আর তাঁর ভেতর থেকে নানান রঙের আলোর বিচ্ছুরণ গির্জার ভেতরটাকে মাখিয়ে দিয়েছে। এত নিখুঁত গির্জা কিংবা শিল্পকর্ম, না দেখে বিশ্বাস করা কঠিন। তাইতো এর অপর নাম 'সোনার গির্জা।'
৩) দুনিয়ার তৃতীয় সর্ববৃহৎ গির্জা হল মিলানের ক্যাথিড্রাল। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, মোটের ওপর একটুও পছন্দ হয়নি। মনে হচ্ছিল কি সব সুঁইয়ের মতন সব খাড়া হয়ে রয়েছে। কিন্তু এর পরে যতবার এর সামনে গিয়েছি, মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। এ যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছয়শ বছর তো আর সাধে লাগেনি ভায়া এ কাম শেষ করতে। ২৫০ টি সিঁড়ি বেয়ে এর মাথায় চড়তে হয় কিন্তু এই বেচারির সেই সুযোগ হয়নি। সেখান থেকে নাকি মিলান শহরের অনুপম সৌন্দর্য দেখা যায়। গির্জার ভেতরটা কেমন সাদামাটা। একমাত্র মেঝের নকশাই সুন্দর লেগেছে। । ১৩৮৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি একটি গথিক চার্চ।
৪) সৌন্দর্যের কথা যদি বলতেই হয় তবে ফ্লোরেন্সের দুয়োমো হচ্ছে আমার কাছে সবার সেরা। এই গির্জার বাইরের অংশের লাল গম্বুজ দেখলে মনে হয় যেন তাকিয়েই থাকি। ইঁট দিয়ে তৈরি এই লাল গম্বুজটি বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজ। কাছে থেকে এর সৌন্দর্য সুধা তেমন উপভোগ করতে না পারলেও দূর থেকে তাকে মনে হয় যেন এক রূপসী লীলাবতী। কিন্তু এই গির্জার ভেতরটা খুব যে আকর্ষণীয়, তা বলা যাবেনা। শুধু গম্বুজের ভেতরের অংশটার সিলিং ভরা অপূর্ব শিল্পকর্ম। কাজটি কে করেছেন তা অবশ্য অজানা রয়ে গেছে এখন অব্ধি। গথিক এই গির্জা দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্রকম্পিত থাকে সবসময়।
৫) জেনোয়ার দুয়োমো অপেক্ষাকৃত বেশ ছোট। আর এর সামনে বড় কোনও পিয়াজ্জাও নেই। তাই একে খুঁজে বের করতে হয়। তবে এর বাইরের অংশটি চমৎকার। সাথে সিংহের মূর্তি একদম নজরকাড়া। খ্রিস্টাব্দ পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে এই রোমান চার্চের নির্মান কাজ শুরু হয়।
৬) তুরিনের দুয়োমো দেখেছি যখন, সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে, ভেতরটা গেছে বন্ধ হয়ে। তাই এর যেটুকু দেখেছি তাও বাইরে থেকে। আলাদা করে এর সৌন্দর্য সুধার কিছুই উপলব্ধি করতে পারিনি। তবে দুয়োমোর সামনের ছোট্ট পিয়াজ্জাটি বেশ উপভোগ্য। এই রোমান চার্চের শুরুটা হয়েছে খ্রিস্টাব্দ ষষ্ঠ শতকে।
৭) সিসিলির রাজধানী পালেরমোর কেন্দ্রীয় গির্জাটি অপূর্ব। এর আশেপাশে পুরো অংশটি চমৎকার মূর্তি দিয়ে সাজানো। এর নির্মাণশৈলী খুবই স্বতন্ত্র। তার কারণ কয়েক শতাব্দী জুড়ে এর নির্মাণ কাজ চলেছে এবং সম্প্রসারিত হয়েছে। একসময় এটি মসজিদ হিসেবেও ব্যাবহৃত হয়েছে। এর ভেতরটাও বেশ চমৎকার। কোথাও কোনও বাহুল্য নেই। ছিমছাম, সাদাসিধে। একটা সারল্য আছে এর পুরো গঠনে।
৯) ইটালির সর্ব পূর্ব দিকের শহর ওত্রান্তো। এর কেন্দ্রীয় গির্জাটি আকারে ছোট হলেও দেখতে বেজায় সুন্দর। ১০৮৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৪৮০ সালে অটোমান সম্রাট ওত্রান্তো আক্রমন করলে এখানকার স্থানীয় সৈন্যকুল এই গির্জার ভেতর আশ্রয় নেয়। অটোমান সৈনিকরা গির্জার দরজা ভেঙ্গে প্রত্যেক স্থানীয় সৈনিকদের নির্মম ভাবে হত্যা করে এবং চার্চের অনেক স্থাপনা নষ্ট করে। পরবর্তীতে গির্জাকে তাঁরা মসজিদে রূপান্তরিত করে। যদিও সেই মসজিদ গির্জায় পরিণত হয় পুনরায়।
১০) বোলোনিয়া শহরের বাসিলিকা নির্মান করতে সময় লেগেছে চারশো বছর। এটি একটি অসমাপ্ত গির্জা। এর পশ্চিম দিকের ফেসেডের কিছু অংশ মোজাইক দিয়ে আবৃত হলেও গির্জার বাকি অংশ অর্থাভাবে সমাপন করা সম্ভব হয়নি। এই গির্জার ভেতরটা খুবই চমৎকার। শুধু আকারের ব্যাপকতাই নয় গির্জার ভেতরে অসংখ্য চিত্রকলার উপস্থিতি মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখে। চারদিকের জানালা দিয়ে আলোকচ্ছটা এসে গোটা গির্জার ভেতরটাকে আলোকিত করে রাখে। আর এর নানান স্তম্ভে অনেক কারুকাজ, অনেক দেয়াল চিত্রকর্ম।
১১) বোলোনিয়ার পাশেই মদেনা শহরের ক্যাথিড্রাল রোমান স্টাইলের গির্জার এক অসামান্য উদাহারন। এই দুয়োমোর ভেতরটা খুব সাধারণ মনে হলেও এর সাথে লাগোয়া টাওয়ারটি অতুলনীয়। ১০৯৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয় এই রোমান চার্চের।
১২) পিসার ক্যাথিড্রালটি অতুলনীয়। সবাই পিসার হেলানো টাওয়ার দেখতে গেলেও এর ঠিক সামনেই পিসা ক্যাথিড্রাল পুরো এলাকার সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতি একটি অপরূপ নির্মাণ। ভেতরটাও কোনও অংশে কম নয়। ১০৬৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর স্থাপত্যকলায় রয়েছে পিসান এবং রোমান শিল্পের সমন্বয় আবার একই সাথে বাইজেন্টাইন স্থাপত্যকলারও সন্ধান পাওয়া গেছে এখানে।
১৩) মানতুয়া শহরের দুয়োমো বাইরে থেকে দেখলে বৈশিষ্ট্যহীন মনে হলেও ভেতরটা রীতিমতন বিস্ময়কর। এর ভেতরে এক ইঞ্চি জায়গাও যেন বঞ্চিত হয়নি শিল্পকর্মের ছোঁয়া থেকে। দূর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমান এই বিস্ময়কর গির্জাটি দেখার জন্য। এত সুন্দর চিত্রকর্ম সমৃদ্ধ গির্জা নাকি গোটা ইটালিতেই বিরল।
১৪) সিয়েনা শহরের দুয়োমোর রয়েছে জগত জোড়া খ্যাতি। এর সৌন্দর্য বাইরেও যেমন ভেতরেও নাকি তেমন। তবে ভেতরে ঢুকতে আট ইউরো লাগবে এই ভয়ে সেখানে ঢোকা হয়নি এই অভাগার। ১২১৫ থেকে ১২৬৩ ছিল এর নির্মাণকাল। সিয়েনা ক্যাথিড্রালের ফেসেডকে অনেক বলেন ইটালির অন্যতম সেরা। এই অংশে রোমান, গথিক এবং ক্লাসিকাল স্থাপত্য বিদ্যার অনুপম সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
১৫) প্রাতোর দুয়োমোর বাইরের অংশটি দোনাতেল্লোর অপুর্ব ভাস্কর্যে বিশিষ্ট হয়ে রয়েছে। ৯৯৪ সালে এই রোমান চার্চের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। শুরুতে এই চার্চের আকার ছোট হলেও পরবর্তীতে এর সম্প্রসারিত রূপ পুরো ইটালি জুড়ে ব্যাপক ভাবে আলোচিত এবং অভিনন্দিত হয়।
( এই রচনার সাথে যুক্ত দুটি ছবি আমার পূর্বোক্ত দুটি রচনা থেকে নেয়া হয়েছে। পিসার ক্যাথিড্রালের ছবিটি অণু তারেকের তোলা)
মনি শামিম
মন্তব্য
ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ সুমিমা।
অণুরে, এইবার কৌস্তুভ আসার পর ভেনিস আর ফ্লোরেন্স এর আরও কিছু ছবি তোলা হল। তবে এই চার্চ কথার আর একটি পর্ব দেবো যেখানে মুলত সিলিং, দেয়াল, চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য এইসব থাকবে।
বাহ, দারুণ হল পোস্টটা!
সময় পেলে কীবোর্ড হাতুড়ি দিয়ে বেরিয়ে থাকা শব্দ গুলো ছেঁটে ফেলেন, ব্যস ঝকঝকে হয়ে যাবে সবকিছুই।
facebook
দারুন। চলুক
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত। আমি গির্জা নিয়ে আরেকটি পর্ব লিখতে চাই। সেখানে গির্জার ভেতরের নানান শিল্পকর্ম এবং আরও নানান গির্জা সম্পর্কে কিছু বর্ণনা থাকবে।
খুব ভালো পোষ্ট।
আরও আশা রাখি।
ধন্যবাদ প্রদীপ্ত। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ শাব্দিক। নতুন লেখা দিন জলদি।
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই। সেদিন একটা ছোট্ট পুস্তক আলোচনা লিখে আবার কোথায় উড়াল দিলেন?
ছবিগুলি দেখে গেলাম, দারুন!
পরে সময় নিয়ে লেখা পড়ব।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ধন্যবাদ শাব্দিক। এখন কোথায় বেড়াচ্ছেন? ছবি কুতায়?
দারুণ! চলুক মনি ভাই।
অসংখ্য ধন্যবাদ তানিম ভাই। দেখা হবে খুব শীঘ্রই।
ধন্যবাদ তাসনিম ভাই। নতুন লেখা কই?
দারুণ লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
শুধুমাত্র এই একটি কারণে ইউরোপে বারবার যেতে ইচ্ছে করে। গীর্জা ইউরোপীয়দের কাছে ধর্মশালাতো নয়, এগুলো সব শিল্পের জীবন্ত সংগ্রহশালা। দারুণ লেখা আর ফাটাফাটি সব ছবি।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
ধন্যবাদ সুমাদ্রি। ঠিক বলেছ ভাই। গির্জা ইউরোপে ধর্মশালার পাশাপাশি শিল্পের জীবন্ত সংগ্রহশালা। সেইসাথে ধর্ম নামক বুজরুকি এক বস্তুকে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার যন্ত্র, ধর্মের নামে টেকা টুকা কামানো আর চাকরি বাকরি বাগানোর মোক্ষম এক জায়গা, পরলোকের ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রের ওপর ভর করে থাকা এক সিসিমপুর।
অসাধারণ! অনেকদিন পর আপনার ছবি দেখলাম... আবারো মুগ্ধ হলাম।
সব ছবিই ভালো লেগেছে, কিন্তু প্রথম থেকে ছয় নম্বর ছবিটা থেকে চোখ সরাতে পারছি না। অপূর্ব!
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ সবজান্তা। ভালো থাকুন। লেখায় আরও নিয়মিত হোন।
অনেক ভাল লাগলো বিশেষ করে ছবিগুলো। আরও লেখা চাই
ধন্যবাদ। তবে ভাই আপনার নামটি উল্লেখ করেননি যে? মন্তব্য করার সাথে সাথে নামটি জুড়ে না দিলে চিনব কিভাবে?
নতুন মন্তব্য করুন