ফ্লোরেন্সের অনবদ্য গির্জা সান মিনিয়াতো আল মন্তের পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটি কবরস্থান। সেখানে বিভিন্ন কবরের ওপর নানান ভাস্কর্য পুরো গির্জাটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
ইটালির ছোট বড় প্রতিটি শহরেই রয়েছে একটি করে কেন্দ্রীয় গির্জা যা সাধারণভাবে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হয়ে থাকে। এই কেন্দ্রীয় গির্জাগুলির বাইরের ফেসেডের ছবি দিয়েছিলাম আগের লেখায়। কিন্তু এইসব কেন্দ্রীয় গির্জা বা দুয়োমোর বাইরেও অসংখ্য উল্লেখযোগ্য গির্জা রয়েছে ইটালিতে। যেমন অনেক গির্জা নির্মাণ করা হয়েছে শহরের নিকটবর্তী পাহাড়ের চুড়ায়। এগুলি অনেকটা তীর্থস্থানের মতন। এমনি দুটি উল্লেখযোগ্য গির্জা হল তুরিনের সুপেরগা এবং বোলোনিয়ার সান লুকা। এছাড়াও রোমের পালাতিনে পাহাড়ে রয়েছে বাসিলিকা সান্তা মারিয়া দি আরেয়া কোয়েল্লি। মজার ব্যাপার হল পাহাড়ের চুড়ার ওপরে অবস্থানরত এই প্রত্যেকটি গির্জা থেকে শহরগুলির অসাধারণ প্যানোরামা দেখা যায়। তাই চার্চ দেখতে গিয়ে শহর দেখাও হয়ে যায়।
আবার অনেক ছোট গির্জাও রয়েছে যা বাইরে থেকে দেখলে অতি সাধারণ, কিন্তু ভেতরের ইন্টেরিয়র একদম চমকে দেয়ার মতন সুন্দর। আবার বিভিন্ন গির্জার ভেতরে রঙ এর ব্যাবহারেও রয়েছে ভিন্নতা। এমনি একটি গির্জা হল রোমের একমাত্র গথিক গির্জা সান্তা মারিয়া মিনেরভা। এই গির্জাটির ভেতর থেকে নীল রঙ এমনভাবে আলোকিত হয়েছে যে এর ভেতরে একবার ঢুকলে বের হওয়া মুশকিল। এমন আরও দুটো গির্জা দেখেছি ফ্লোরেন্সে। একটি ঠিক গির্জা নয় বরং সমাধি বলা ভাল, সান্তা ক্রোচে, যদিও এর ভেতরেও রয়েছে গির্জা। আরেকটি হল ফ্লোরেন্সের পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত সান মানিয়াতো আল মন্তে। দ্বিতীয়টি এতটাই সুন্দর, যে যারা ফ্লোরেন্সে বেড়াতে যান, তাঁদের জন্য এটি একটি অবশ্য দর্শনীয় গির্জা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
১) বাসিলিকা সান্তা ক্রোচে। যারা ফ্লোরেন্সের দুয়োমো দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, তাঁদের সান্তা ক্রচে না গিয়ে উপায় নেই। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রাঞ্চিস্কিয়ান গির্জা! এর ভেতরে যে অনুপম চিত্রকলা আর ভাস্কর্যের সম্মিলন ঘটেছে, তা না দেখে বিশ্বাস করা যাবেনা।
২) বাসিলিকা সান্তা ক্রোচের ইন্টেরিয়র।
৩) সান্তা ক্রোচের ভেতরটা জুড়ে রয়েছে বিখ্যাত সব ব্যাক্তি বর্গের সমাধি। গ্যালিলিও, মিকেল এঞ্জেলো, মাকিয়াভেল্লি ইত্যাদি গুণীজনের সমাধি আছে এখানে। তবে এর ভেতরে চার্চটিও দারুণ সুন্দর। দেখুন।
৪) ফ্লোরেন্সের নিকটতম পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে বাসিলিকা সান মিনিয়াতো আল মন্তে। এই চার্চটি ইটালির আরেক বিস্ময়। এই অনুপম গির্জা দেখলে ড্যান ব্রাউনের থ্রিলার গুলির সেটিং মনে পড়ে যায়। বেশ অন্ধকার গা ছমছমে একটা ব্যাপার আছে এখানে। পুরো চার্চটিই যেন আস্ত এক জাদুঘর। চিত্রকলায় পরিপূর্ণ।
৫) চার্চটির ইন্টেরিয়র।
৬) নেপলসের অপরূপা বাসিলিকা সান ফ্রাঞ্চেস্কো দি পাওলা।
৭) ষষ্ঠ শতাব্দিতে নির্মিত পালেরমোর বিখ্যাত গির্জা সান জিওভানি দেইলি এরেমিতি। এই গির্জাটির লাল গম্বুজটির আকৃতি মসজিদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আসলে মুসলিম শাসনের সময়কালে এটিকে গির্জা থেকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।
৮) তুরিনের পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত সুপেরগা চার্চ এর ভেতরের সিলিং।
৯) রোমের অসাধারণ সান্তা মারিয়া মিনেরভা। এটি রোম শহরের প্রথম গথিক স্টাইলে নির্মিত গির্জা। এর ভেতরের সৌন্দর্য অতুলনীয়।
১০) রোমের পালাতিনে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত রোমান বাসিলিকা সান্তা মারিয়া দি আরেয়া কোয়েল্লির সম্মুখভাগ।
১১) চার্চটির সিলিং।
১২) ফ্লোরেন্সের সান্তা ক্রচে গির্জার ভেতরে একটি চিত্রকর্ম। শিল্পীর নামখানি মনে পড়ছেনা।
১৩) রাভেন্না দুয়োমোর ভেতরে রোববারের প্রার্থনা।
১৪) ওত্রান্তো শহরের দুয়োমোর সিলিং।
১৫) বাসিলিকা সান্তো স্তেফানো, বোলোনিয়া। এটি মুলত সাতটি ক্ষুদ্রাকৃতির গির্জা শোভিত একটি কমপ্লেক্স।
১৬) ক্যাথিড্রাল সান পিয়েত্রো, বোলোনিয়ার ভেতরে প্রখ্যাত ভাস্কর আলফন্সো লোম্বারদি কৃত টেরাকোটার "যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুশয্যা"-র ভাস্কর্য।
১৭) সাঙ্কচুয়ারি দি সান্তা মারিয়া দেল্লা ভিতা, বোলোনিয়া এর ইন্টেরিয়র।
১৮) বাসিলিকা সান দোমেনিকো, বোলোনিয়ার সিলিং ভরে রয়েছে গুইদো রেনির এই মাস্টারপিস।
১৯) ফ্লোরেন্সের কেন্দ্রে অবস্থিত বিখ্যাত বাপ্তিস্তেরি।
২০) রাভেনা শহরের বাসিলিকা সান ভিতালের ভেতরে বাইজেন্তাইন শিল্পকলার প্রথম দিকের নিদর্শন, খ্রিষ্টাব্দ পঞ্চম শতকের মোজাইকের চিত্রকলা।
২১) পালাজ্জো ভেক্কিওর মাথা থেকে দেখা ফ্লোরেন্সের দুয়োমো।
২২) ফ্লোরেন্সের দুয়োমোর সিলিং।
২৩) রোমের ত্রাজান কলামের ঠিক সামনে একটি জমজ গির্জা রয়েছে। তারই একটি গির্জা সান্তা মারিয়া দেল লরেতোর সিলিং।
২৪) ইটালির অনেক গির্জার ভেতরে নিজস্ব জাদুঘর রয়েছে। তার অনেগুলির আছে ফ্রি এন্ট্রান্স। সেখানে পোপ কিংবা বিশপ কর্তৃক ব্যাবহৃত নানান সামগ্রী শোভিত থাকতে দেখেছি। এটি ক্যাথিড্রাল সান পিয়েত্রোর নিজস্ব জাদুঘরের একটি সামগ্রী।
মন্তব্য
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
। ছবিগুলো দারুণ।
মারাত্মক
ন্যাট জিওর কোন এক প্রোগ্রামে দেখেছিলাম এক অতি পুরাতন গীর্জার দেয়ালে একটা ছোট এক মানুষ সমান গর্ত। কোন প্যাসেজ বা গুপ্তপথ নেই, খালি ওইরকম গর্ত করা। অনেক পরে আবিষ্কৃত হল যে ওই এলাকা ক্রুসেডের সময় মুসলমানেরা অধিকার করে আর গীর্জাটাকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। দেয়ালের গর্তটা মসজিদের মিম্বর। আপনার ৭ নম্বর ছবির গীর্জা থেকে মসজিদে রূপান্তরের গল্পে মনে পড়ল।
..................................................................
#Banshibir.
ধনবাদ সত্যপীর। অসংখ্য ধন্যবাদ।
লিয়ে লিলছে !
facebook
মামু, তুমার যাওয়া জায়গায় গেছিনু খো। লিলাম তো ওখানে গিয়ে উস্তাদ।
এই পোস্ট খুলে রেখে এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস আবার পড়তে হবে
আপাতত
পড়েন, পড়েন। পড়ে লিয়ে লেন।
শামীম ভাই, আপনার তোলা ছবিগুলো এমনিতেই জীবন্ত লাগে; তাঁর উপর বিস্তারিত তথ্যে টইটম্বুর ইটালিতে বেড়াতে আসা বাঙালি পর্যটকদের আপনার এই ছবি ব্লগই গাইডের কাজ করবে আশা করি। আর আমাদের মত অন্ধদের (যারা ইটালিতে বসবাস করেও এই বিখ্যাত স্থানগুলো চোখ খুলে দেখেনা) আলোকিত হওয়ার উৎসাহ দেবে।
কি, ঘুরবেন না আমার সাথে? চুদুর ভুদুর করলে কিছুই দেখতন ন!
ফেইসবুক
---------------------------------------------
এক আকাশের নীচেই যখন এই আমাদের ঘর,
কেমন ক'রে আমরা বলো হতে পারি পর. . .
চমৎকার লাগলো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আসলেই ইতালির এই গির্জাগুলো দেখলে মনে হয় রবার্ট ল্যাংডন-এর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি এঞ্জেল্স অ্যান্ড ডিমন্স থ্রিলারে ! দারুণ ছবি তোলেন ভাই আপনি ।
আরে ছি ছি। শুরুতেই সান্তা ক্রচে'র ছবি দিয়েছেন আর যে বেচারা খুঁজেপেতে খবর করে ওখানে নিয়ে গেল তারই কথা চেপে গেছেন?
হাসা কথা। তুমি না বললে সান্তা ক্রোচে নামক অসাধারণ এই চার্চ কাম সমাধি দেখা হতনা। আরে বাপজন্মে এর নামই তো শুনিনি। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর খাটো করতে চাইনে। এর পরেরবার সবে যখন, আমরা যাবো অন্য কোথাও অন্য কোনখানে।
নতুন মন্তব্য করুন