ও কারাভাজ্জো! মাই কারাভাজ্জো!

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৪/০৬/২০১৩ - ২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

DSC_4054

কারাভাজ্জো রোমে আসার ঠিক এক বছরের মাথায় আঁকেন তাঁর অবিস্মরণীয় "দি ফরচুন টেলার।" এটি রয়েছে রোমের পালাতিনে জাদুঘরে। ১৫৯৪ সালের পুরো বছর জুরে মাত্র দুটি ছবি এঁকেছিলেন তিনি। আরেকটি হল অনবদ্য "দি কার্ড শার্পস।"

পারমায় সেদিন শীতের বিশ্রী কুয়াশামাখা দিবস। রোদের দেখা নেই সকাল থেকেই। কাজ শেষে আমি, লুইসা আর জিওভান্নি হেঁটে চলেছি শহরের শতাব্দী প্রাচীন রাস্তা ধরে এদিক সেদিক। দুয়োমো দেখা শেষ হবার পর যেই না এক প্রাচীন প্রাসাদের মাঝে নিজেদের খুঁজে পেলাম অমনি ধেয়ে এল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি ছেড়ে যাবার নাম গন্ধ নেই। প্রাসাদের ভেতর বিরাট আকারের চিত্র প্রদর্শনী চলছে। বাইরের পোস্টার দেখে মনে হল বেশ বড় মাপের শিল্পীর কাজ। পকেটে পয়সা নেই টিকেট কাটবার। ৮ ইউরো খরচ করে শিল্প প্রদর্শনী দেখার মতন রুচি তখনো হয়নি তৈয়ার। তবে কি মনে হল, লুইসাকে বললাম, চল ঢুকি। বৃষ্টি তো সহসাই থামবে না! ও রাজী হয়ে গেল। আর ভেতরে ঢুকতেই আমিও খুঁজে পেলাম এক অজানা জগত, বদলে গেল চিত্রশিল্প দেখার আমার চিরায়ত অনভ্যাস। যে শিল্পীর চিত্র প্রদর্শনী চলছে তাঁর নাম মিকেল এঞ্জেলো মেরিসি দি কারাভাজ্জো। কারাভাজ্জো নামক গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছে বিধায় নামের শেষে যুক্ত করা হয়েছে এটি। তবে কালক্রমে মিকেল এঞ্জেলো নয়, কারাভাজ্জো নামেই তিনি পরিচিত হয়েছেন, খ্যাতি পেয়েছেন আর সেইসাথে জুটেছে তীব্র বিদ্বেষ এবং দুর্নাম।

তাঁর জীবনকাহিনী গল্পকেও হার মানায়, ক্ষণজন্মা এই জিনিয়াসের বিচিত্র সৃষ্টিসম্ভার বিস্ময়ের জন্ম দেয়। এমন কোনও জিনিয়াস নিয়ে আলোচনা করা বোধহয় মুশকিল যিনি বাস্তব জীবনে একজন খলনায়ক, খুনি, জুয়ারি, মদ্যপ, এমন কোনও শিল্পী নিয়ে আলোচনা করা বোধহয় বিব্রতকর জীবদ্দশায় যার উপাধি জুটেছিল চিত্রকলার এ্যান্টিক্রাইস্ট হিসেবে। তাঁর সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা আরও কঠিন কারণ তিনি কোনও কিছুই লিখে যাননি এমনকি তখনকার জামানার অন্যান্য শিল্পীর মতন একটি চিঠিও তিনি কাউকে লেখেন নি। তারপরেও তিনি লিজেন্ড, তাঁর লিগেসি নিয়ে আলোচনার যে ঝড় উঠেছে বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে, এমন কিছু আর কোনও শিল্পীর ভাগ্যে জুটেছে কিনা সন্দেহ। পুরো তিনশো বছর ধরে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভুলে যাওয়া সব চিত্রকর্ম নতুন নতুন রূপে যেন আবির্ভূত হয়েছে শিল্প অনুরাগীদের মাঝে। তাঁর গভীর ধর্মীয় চিত্রকর্ম যাকে অশ্লীল রূপে অভিহিত করা হয়েছিল তাঁর সময়কালে, কালক্রমে সেগুলিই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে শিল্পকলার ইতিহাসে প্রথম সার্থক আধুনিক চিত্রকর্ম হিসেবে। তাঁর যিশু, মেরি, বাক্কুজ, তাঁর ডেভিড, গোলিয়াথ সব রক্ত মাংসের মানুষ, তাঁদের পোশাক অপরিচ্ছন্ন, তাঁদের গায়ে মাটির দাগ, মনে হয় ক্ষেত থেকে, যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে কেবল তুলে আনা হয়েছে তাদের। তাঁদের সামনে পরিবেশিত ফলমূল ময়লা, অপুষ্ট। তাঁদের চোখে মুখে ছল চাতুরি, যৌন পিপাসা, হাহাকার, বিরক্তি, ঘৃণা আর বিষণ্ণতা। তাঁর পরিবেশিত চরিত্রগুলি এতই জীবন্ত এতই বাস্তব যে মনে হয় তারা যেন কি বলছে, কি যেন ইঙ্গিত করছে আমাদের দিকে। আর এইসব রহস্য, এইসব বাস্তবতা নিয়েই কারাভাজ্জো।

১৫৭৬ সালে মিকেল এঞ্জেলো মেরিসির জন্ম মধ্যবিত্ত এক ঘরে, উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন শিল্পী হবার প্রেরণা। বাবা-মার অনেকগুলি সন্তান, অভাব ছিলনা আবার প্রাচুর্যের মাঝেও কাটেনি তাঁর শৈশব। হঠাৎ প্লেগের আক্রমণে একই দিনে বাবা আর দাদা মারা যান। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই মাও গত হন সাত বছর বাদে। ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং এর প্রতি ঝোঁক, এই পেশায় পয়সা কামানো যায় ভালই, এইসব বিবেচনা থেকে তাঁর আত্মীয় স্বজন আঁকিয়ে হবার প্রাথমিক পাঠ নেয়ার নিমিত্তে মাত্র তেরো বছরের মিকেলকে পাঠিয়ে দেন মিলান শহরে এক মোটামুটি পরিচিত চিত্রশিল্পী উস্তাদ সিমনে পেতেরজান এর কাছে যার গুরু নাকি ছিলেন স্বয়ং তিতিয়ান। একইসঙ্গে ফুট ফরমাস খেটে কাজ শেখা, চার বছরে কোর্সের সমাপ্তি। দরিদ্র গুরুর কাছে তালিম নিতে গিয়ে তাঁর দফা রফা হবার যোগাড়। তবে শিখলেন মনোযোগ দিয়ে। রপ্ত করলেন উত্তর ইউরোপের সাইন্টিফিক ন্যাচারালিজম। তখন উত্তর ইউরোপ জুরে কাউন্টার রিফর্মেশন চলছে। ধর্মীয় ছবি নয়, প্রকৃতির ছবি আঁকা চলছে। মিকেলের গুরু প্রকৃতি থেকে শেখার কথা বলতেন, জোর দিতেন। জিনিয়াস মিকেলের সেইসব শিখতে সময় লাগেনি বেশী। তবে রোমে একদিন না একদিন মিকেল কে আসতেই হত। সব চিত্রশিল্পীর তীর্থ তো সেখানেই! নইলে কল্কে মিলবে কিভাবে? তাই তরুণ মিকেল রোমে চলে এলেন ১৫৯২ সালে।

সপ্তদশ শতকের সূচনাকালে রোম। পাপাল স্টেট তখন টালমাটাল। চারিদিকে গোলযোগের ঘনঘটা। খ্রিষ্টান ধর্মে রিফর্মেশনের নামে প্রোটস্ট্যান্টরা ধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। তাই ধর্মে মানুষের মতি ফেরানোর জন্য ক্যাথলিক খ্রিস্টানেরা নতুন নতুন চার্চ নির্মাণে আর পুরনো চার্চ নবায়নে ব্যাস্ত। আর সেগুলি ভরবার জন্য তাঁদের দরকার প্রচুর চিত্রশিল্প। কিন্তু যুবক মিকেলের থাকবার ঠাঁই নেই, পরনের কাপড়ের নেই কোনও ছিরি। নিজে বাউন্ডুলে, বন্ধু বান্ধবরাও হতচ্ছারার দল। রোম তখন খুবই বিপজ্জনক। আইন শৃঙ্খলার অবস্থা পড়তির দিকে। এমতাবস্থায় দরিদ্র মিকেল আঁকান ফলের ছবি আর যুবকদের ছবি, যেসব ছবিতে উত্তর ইউরোপের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কিন্তু তাঁর আঁকা ফলগুলো ময়লা, ক্ষেত্র বিশেষে বাসি এবং পচা। আর রাস্তা থেকে পথচারীদের মডেল করে এনে যাঁদের ছবি আঁকেন তাঁরা বয়েসে কম, টিন এজ বালক। তখন বালকরাই তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী, পথে পথে পড়ে থাকা মাতাল, বেশ্যা, জুয়ারি তাঁর বন্ধু, মদ্যপ হওয়াটা তাঁর স্বভাব। ভীষণ গরীব ছিলেন শুরুর কিছু দিন, খাবারের পর্যন্ত নিশ্চয়তা ছিলনা। রেনেসাঁসের শিল্পীদের কথায় কথায় তুলোধুনো করতেন, অশ্রদ্ধার চরম প্রকাশে কোথাও এতোটুকু ঘাটতি দেখান নি। আবার রোম তখন শিল্পীদের দ্বারা পরিপূর্ণ। এমন অবস্থায় কে দেবে এই অস্থির ভ্যাগাবন্ডকে তাঁর প্রার্থিত কাজ?

তবে রোমে তখন গুনির কদর ছিল। প্রতিভা বেশিদিন আঁধারে নিমজ্জিত রইতোনা। যতোই বোহেমিয়ান কিংবা উশৃঙ্খল হন না কেন, মিকেলের আঁকা ছবিতে রঙ এবং আলোর ব্যাবহার কেমন অন্যরকম। ভ্যালেন্টিন নামক একজন আর্ট ডিলারের চোখে পড়ে যান তিনি। কয়েকটি ছবি আঁকার পর কার্ডিনাল দেল মন্তে তাঁর ছবির গুন দেখে তাঁকে সরাসরি তাঁর স্টুডিওতে কাজের অফার দিয়ে বসেন। বিনিময়ে মিলবে কার্ডিনালের বাড়িতে একটি বিছানা, অজস্র সঙ্গীতের আসরে উপস্থিতি, লোভনীয় সব খাদ্য-খাবার আর মদ্যপ হবার অবারিত সুযোগ। এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করলেন না তরুণ মিকেল। কার্ডিনালের বাড়িতে থাকা অবস্থায় আঁকলেন অবিস্মরণীয় কিছু ছবি। আঁকলেন দি কার্ড শার্পস, আঁকলেন দি লুট প্লেয়ার, আঁকলেন অনবদ্য ফরচুন টেলার । এইসব ছবির সেটিং এ অনেক নতুনত্ব। শুধু ফিগারের ছবি, পোর্ট্রেট, আর কিছু নেই। নেই ঘরের কোনও ডিটেইলস, পোর্ট্রেটগুলিকে বসানো হয়নি অনাবিল প্রকৃতির মাঝে, ব্যাকগ্রাউন্ড মানে শুধু দেয়াল। আলো আসছে বাইরে থেকে। কিছু মুখের ওপর আলো এসে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে তো কিছু অংশ নিকষ কালো আঁধারে ডোবানো। এই কারাভাজ্জোর বৈশিষ্ট্য।

৪।

কেবল একটু নাম যশ হওয়া শুরু করেছে মিকেলের, অমনি এসে গেল আরেক বিরাট সুযোগ। চার্চে পেইন্টিং করা। রোমে তখন নতুন চার্চ নির্মাণ হচ্ছে। এমনই এক চার্চে হাতেখড়ি হল তাঁর। তিনি মনপ্রান উজাড় করে আঁকলেন তাঁর প্রথম বারোক চিত্রকর্ম। তাঁর অঙ্কিত সন্ত ম্যাথিউর ছবি রোমে ব্যাপক ভাবে সমাদৃত হল। রাতারাতি তিনি খ্যাতি পেয়ে গেলেন। ছবি যা আঁকলেন তাও রোমবাসী আগে দেখেন নি কখনও। আলো আঁধারির এক অচেনা অদেখা জগতে গস্পেলের চরিত্র গুলি যেন মূর্ত করতে শুরু করলেন তিনি।

'দি কলিং অফ সেন্ট ম্যাথিউস' এর ছবিটি জুরে কেমন নিকষ কালো আঁধার, যিশুর মুখে আলো নেই, আঁধারের ভেতর থেকেই আঙ্গুল তুলে নির্দেশ করছেন সন্ত মাথিউসকে। এমন ছবি আরও একটি আঁকলেন মিকেল। অদ্ভুত তাঁর ছবি, এমন সেই ছবিগুলির বৈভব, এমন আকর্ষণীয় সেইসব ফিগার যে জনপ্রিয়তা আর খ্যাতি পেতে সময় লাগেনি মিকেলের। কিন্তু যতই টেকাটুকা আসতে লাগলো ততই বেপরোয়া হতে থাকল তাঁর ব্যাক্তি জীবন। খ্যাতি, অর্থ, সম্মান আর জনপ্রিয়তার পারদ যত ঊর্ধ্বমুখী হতে লাগলো ব্যাক্তিজীবনের বিশৃঙ্খলা আর পতন যেন ততই অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দিতে লাগলো তাঁর জীবনে।

খাবার টেবিলে বচসা, মদ্যপ হয়ে প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া বিবাদ, অযথা পথচারীদের হেনস্থা করার পরিমান বাড়তেই লাগলো। সেই সাথে জমা হতে শুরু করল পুলিস রেকর্ডও। তখন তাঁর পরনে সার্বক্ষণিক সৈনিকদের পোশাক, বেল্টে ড্যাগার আর সাইডে তরবারি ঝুলিয়ে ভয় দেখানো তাঁর স্বভাব হয়ে দাঁড়ালো। একদিন সত্যি সত্যি ছুড়ি বসিয়ে দেন এক পথচারীকে পেছন থেকে, বিনিময়ে জেল জরিমানা গুনতে হয় তাঁকে। জেলে গিয়ে ক্ষ্যাপা হতে থাকেন আরও। জেল থেকে বেরিয়ে যে ছবিগুলি আঁকেন তাতে আলোচনার চাইতে সমালোচনা বেশী হয়। যিশু আর মেরীকে আঁকেন রক্ত মাংসের মানুষ রূপে। মাতা মেরির দেহান্তরের ছবি আঁকান। অভিযোগ ওঠে মর্গ থেকে এক মৃত মহিলার শব তুলে এনে তাঁকে মডেল বানিয়ে মাতা মেরির ছবি এঁকেছেন মিকেল। এইসব সমালোচনা শরের মতন বিদ্ধ করে তাঁকে। এরকম সময়ে এক যুবকের সাথে ডুয়েল লড়তে গিয়ে তাঁকে মেরেই ফেলেন। এইবার আর রেহাই মেলেনা তাঁর। তাঁকে জীবিত অথবা মৃত ধরবার জন্য অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেয় রোমের পুলিস। রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যান মিকেল প্রথমে সিসিলি এবং পরে নেপলস এ।

নেপলসে বেশীদিন থাকেন নি মিকেল। তবে সেখানে তিনি একটু হলেও থিতু হয়েছিলেন, তাঁর তৎকালীন সময়ে আঁকা ছবিগুলি অপেক্ষাকৃত শান্ত, স্নিগ্ধ। আজন্ম বিদ্রোহী সত্তা এইসব ছবিতে যেন নমিত, ক্ষমাপ্রার্থি। খুনের যন্ত্রণায় বিদ্ধ এক সত্ত্বা যেন শান্তির কাছে সমর্পিত। কিন্তু সেখানে বেশীদিন মন টেকেনা তাঁর। খ্যাতির জন্য বুভুক্ষু মন ছুটে যায় মাল্টায়। মাল্টায় গিয়ে উনার সম্মান আর আতিথেয়তা বেড়ে যায় বহুগুণ। মাল্টায় মিকেলকে নাইটহুড প্রদান করা হয়। কিন্তু নাইটহুড পাবার পর আরেক স্থানীয় নাইটের সাথে গোলযোগ করে আবার জেলখানায় যান তিনি। এইবার কাকতালীয়ভাবে জেল থেকে পালিয়ে পুনরায় নেপলস আসেন। আর নেপলস থেকেই আবার রোম যাবার জোগাড় যন্ত্র করতে থাকেন। রোমে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন কি মিকেল কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা? কিন্তু সাগরতীরে জ্বরাক্রান্ত (নাকি খুন??) হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছরে মারা যান এই মহান শিল্পী।

আত্ম-বিধ্বংসী, ক্ষ্যাপা, নিঃসঙ্গ, ঈর্ষা-পরায়ণ, মদ্যপ, জুয়ারি, খুনি এক শিল্পী, জীবিতকালে বহু মানুষের যন্ত্রণার কারণ হয়েছেন যিনি, খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় নিজের ভাইকেও যিনি পারেননি চিনতে, গোটা জীবনই পালিয়ে পালিয়ে কেটেছে যাঁর, কালক্রমে তিনিই হয়ে উঠেছেন বারোক চিত্রশিল্পের সবচাইতে সার্থক রূপকার হিসেবে। মৃত্যুর তিনশো বছরের ভেতর শিল্প সমালোচনায় যার টিকিরও সন্ধান পাওয়া যায়নি আজ শিল্প সমালোচকরা তাঁকে উপাধি দিয়েছেন আধুনিক চিত্রকর্মের জনক হিসেবে। সুন্দর নয়, আনন্দ উল্লাস নয়, তিনি এঁকেছেন ভয়, আতংক, চিৎকার, হতাশা, মৃত্যুর ছবি। ডেভিড এন্ড গোলিয়াথ ছবিতে তিনি ডেভিড নয় দানব গোলিয়াথের স্থলে নিজের চেহারাকে মূর্ত করেছেন। কেন এমন? কেন নিজেকে পিশাচ রূপে প্রতীয়মান করার প্রচেষ্টা? তবে কি নিজের ওপরেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি? যদি তাই হয়, আত্মসমর্পণ করেন নি কেন কারও কাছে? কেন শুধু পালিয়ে বেরিয়েছেন জীবন ভর? রক্ত মেখেছেন, জেল খেটেছেন, রোমের রাস্তায় রাস্তায় মদ্যপ হয়ে খিস্তি খেউর করেছেন আবার বাধ্য ছেলের মত নিবিড় মনে নির্মাণ করেছেন এমন এক বিস্ময়কর কথামালা যার তুল্য কোনও কিছুর সন্ধান মেলেনি আজও।

১৯৫১ সালে প্রথম তাঁর ৮১ টি চিত্র একত্রিত করে শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তাঁর আগ পর্যন্ত শিল্প জগতে তিনি ছিলেন অপরিচিত ও অনাহুত এক অতিথি। শিল্প মাধ্যমে এখন তাঁর যে স্ট্যাটাস সিম্বল তাঁর বয়স মাত্র ষাট বছর। মিকেলের অনেক কিছুই আজ মিথ। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় তিনি এঁকেছেন বিরাট এক শিল্পকর্ম। রাস্তা থেকে ধরে এনে মডেলদের বানিয়ে দিয়েছেন যীশু এবং মেরি। ইউরোপে যখন নুড মহিলার ছবি আঁকার চল ছিল, তিনি এঁকেছেন শুধু বালকদের ছবি। তাঁর ছবির ফলমূল পুষ্ট, টসটসে নয়, বাসি পচা। তাঁর পৌরাণিক চরিত্রগুলি স্বর্গীয় নয়, রক্ত মাংসের মানুষ। তাঁর ছবিতে ফিগারগুলির মুখে চোখে যে আবেগ ফুটে রয়েছে তাঁর নতুন নতুন ব্যাখ্যা আজও দিয়ে চলেছেন সমালোচকরা। তিনি জন্ম দিয়েছেন কিয়ারোস্কুরো নামক একবারে আনকোরা নতুন এক স্টাইলের যার মধ্য দিয়ে আলো আর অন্ধকারের ভেতর জন্ম নেয় শক্তিশালী কনট্রাস্ট, আলো আঁধার যেন ছবির অন্যান্য চরিত্রের মতই গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ, তিনি চিত্রকর্মে ব্যাবহার করেছেন কামারা অবস্কুরা নামক কৌশলের যেটা আবার এই কিয়ারোস্কুরো স্টাইল সার্থক করার অন্যতম উপাদান। শিল্পের নতুন ভাষা খুঁজতে গিয়ে তিনি রহস্যময়তার সন্ধান করেছেন ঠিকই কিন্তু বাস্তবকে বাদ দিয়ে নয়। তাঁর অনুপ্রেরণায় জন্ম নিয়েছে কারাভাজ্জিস্তা নামক এক শিল্পী গোষ্ঠীর। শোনা যায় ফিগার আঁকার সময় তিনি কোনও প্রাথমিক স্কেচ করতেন না। ব্রাশের এক এক আঁচড়ে মূর্ত করেছেন একের পর এক সব মাস্টারপিস। তাঁর একেকটি চিত্রকর্ম যেন আস্ত একেকটি থিয়েটার এর সেটিং। তাঁর ছবিতে আলোক প্রক্ষেপন দেখে মনে হয় থিয়েটারের কোনও নাটক দেখছি। এই বুঝি উন্মুক্ত হল নতুন কোনও ড্রামা!

পারমায় সেদিন যদি না ঢোকা হত প্রাসাদের ভেতর, আমার আর চেনা হতনা কারাভাজ্জোকে। জানা হতনা এমন বেপরোয়া শিল্পির অনুপম সব মাস্টারপিস সম্পর্কে। আমার চোখ যেন খুলে গেছে এক অপার বিস্ময়ে! শিল্পের কি এক অদ্ভুত শক্তি! রেনেসাঁস শিল্পীদের কাজে যে পারফেকশনিজম, যে উজ্জ্বল সব পোর্ট্রেট, কারাভাজ্জোয় এসে তাতে ভর করেছে বারোকের আঁধার। তাঁর চিত্রকর্মে মানুষের চোখে মুখে ভরসা নেই, নেই উল্লাস। আধুনিক জীবন কি এমনই নয়? মৃত্যু, হাহাকার, বেদনাই কি আমাদের নিত্য সঙ্গী নয়? কারাভাজ্জোর চিত্রকর্মের প্রধান যে গুন তা হল দর্শকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি করার অসাধারণ ক্ষমতা। তার শিল্প রক্তাক্ত, বিষণ্ণ তবুও আলো অন্ধকারের এমন নিখুঁত যোগ আর তাঁর ভেতর থেকে উঠে আসা মানুষগুলির এমন উদাত্ত আহ্বান সেগুলিতে যে ছবিগুলি যেন নিজের দিকে টানে, দূরে ঠেলে দেয়না। তাঁর ফিগার গল্প বলে। যে গল্পে স্বর্গীয় শোভা নেই, আছে এই দীনহীন দুনিয়ার ভাষ্য। এইজন্যই কারাভাজ্জো অনন্য, বিশিষ্ট।

তথ্য সুত্রঃ

১) দি পাওয়ার অফ আর্ট- প্রথম পর্ব, বিবিসি
২) কারাভাজ্জো, উইকিপিডিয়া
৩) কারাভাজ্জো বায়োগ্রাফি, স্টাইল এন্ড টেকনিক- আর্টবল ডট কম
৪) কারাভাজ্জো, দি প্রিন্স অফ নাইট- বারগার ফাউন্ডেশন ডট কম
৫) সাক্ষাৎকারঃ পিটার রব
৬) সাম নোটস অন কারাভাজ্জো- প্যাট্রিক সুইফট


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

উত্তম জাঝা!

অসাধারণ ! সিরিজ একটা শুরু করে দেন ভাই নানা শিল্পীদের নিয়ে, দুর্দান্ত হবে!

ক্যারাভাজ্জোর নানা পেইন্টিঙের কথা মনে পড়ে গেল আপনার লেখা পড়তে পড়তে, বিশেষ করে পিনাকতেকো অ্যাম্ব্রসিয়ানায় দেখা পচা ফলের ঝুড়ির কথা।

মনি শামিম এর ছবি

কিন্তু সিরিজ শুরু করার জন্য বিস্তর পড়াশুনা চাই, অখণ্ড মনোযোগ চাই, চাই জাদুঘর গুলিতে ব্যাপক মাত্রার ঘুরাঘুরি। অত সময় তো নেই আর এই শেষ বেলায়। কারাভাজ্জোর চিত্রকর্ম ভালোবাসি বিধায় এই স্মৃতিচারণ। এর পরে আর একটি পর্বে তাঁর কয়েকটি ছবি ধরে আলোচনা করার ইচ্ছে রয়েছে। দেখি, সময় আর সুযোগ পেলে আরও লেখা যেতে পারে গ্রেট মাস্টারদের কাজ নিয়ে। এর আগে সচলে 'অবাঞ্ছিত' লিখেছেন কিছু রেনেসাঁস, বারোক- এইসব চিত্রকলার নানান বৈশিষ্ট্য নিয়ে। আরও ভালো হয় ছবি ধরে ধরে আলোচনা করলে। কি বলিস?

তারেক অণু এর ছবি

বেশী প্যাচাল পাইরেন না, অত্ত অত্ত জ্ঞান লাগবে না, যাদের অত তথ্য লাগবে তারা খুঁজেই নেবে। আপনি আপনার ফিলিংস, দেখা, ঘোরা নিয়ে লিখতে থাকেন, ছবি নিয়ে করলে তো দুর্দান্ত হবে-

মনি শামিম এর ছবি

আচ্ছা, তাই করবো না হয়। দি পাওয়ার অফ আর্ট নামক ডকুমেন্টারি টা সত্যি অনবদ্য। তুইই তো বলেছিলি এর কথা। না? যাই হোক, চিত্রকর্ম নিয়ে দেখি আর কি লেখা যায়।

মেঘা এর ছবি

মনি ভাই অসাধারণ লাগলো! চিত্রকর্মগুলো যে আসলে খুব নিরীহ হয় না তার মধ্যে আরও অনেক কিছু না বলা থেকে যায় ধাঁধার মতোন করে এটা দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড পড়ে জেনেছি। খুব ভাল লাগে ছবি পেছনের কথাগুলো জানতে। ছবিগুলো দেখতে পারলে আরও বেশি ভাল হতো। ভাইয়া পারলে ছবি নিয়ে একটা লেখা দিন। চমৎকার হবে।

রাজশাহীর দাওয়াত দিয়েছিলেন আমাকে মনে আছে তো? আমের সময় তো চলে যাচ্ছে দাওয়াত পাবো কবে?

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

মেঘা, তুমি যদি "গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়াররিং" নামক চলচ্চিত্রটি দেখ, তোমার আরও ভালো লাগবে। কিভাবে ডাচ মাস্টার ইয়োহানেস ভেরমির এই অনবদ্য পোর্ট্রেট টি এঁকেছেন, কত রকম সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে, তাঁর একটা দারুণ গল্প জানা হয়ে যায়। ভেরমিরের ওই পেইন্টিং নিয়ে আর চলচ্চিত্রটি নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।

আবার কোনও একক চিত্রকর্মের পেছনের গল্পই নয় বরং সেই পেইন্টিঙে আর্টিস্ট কি বোঝাতে চেয়েছেন, কিসের দিকে ইঙ্গিত করছেন, দর্শক হিসেবে তা আমাদের কাছে কিভাবে মূর্ত হয়ে উঠছে, আমরা কিভাবে তার ব্যাখ্যা করছি, এইসবও নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তাইনা? আমি আগামীতে কারাভাজ্জোর কয়েকটি ছবি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আশা রাখি পড়বে।

রাজশাহীর দাওয়াতটা এবারের গরমে আর বাস্তবায়িত হচ্ছেনাতো । এই ভরা আমের মৌসুমে আমিই যে নেই জায়গামতন, কি মুশকিল বলতো আপু? আমার না সব সময় সব কিছুতেই বড় দেরী হয়ে যায়! তবে দেশে এলে তোমার রাজশাহী আসাটা পাকা, তা সে যখনই হোক না কেন!

মেঘা এর ছবি

গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়াররিং বই পড়েছি। অণু ভাইয়া পাঠিয়েছিলো বইটা গতবার। এই লেখাটা পড়ে আবার একবার চোখ বুলিয়ে নিতে ইচ্ছা হচ্ছে। দেখি আজ আবার পড়বো বইটা। আমার যেমন ভিঞ্চির ছবিগুলো দেখে সেটার ব্যাখ্যা আর ছবি আঁকার পিছনের গল্পগুলো জানতে বেশি ভাল লাগে। চিত্রকর্ম তেমন বুঝি না বলেই হয়ত সাদা চোখে সব দেখি না আর বুঝেও উঠতে পারি না। তবে কেউ এমন বুঝিয়ে লিখলে দারুণ লাগে। হাসি

আচ্ছা রাজশাহীর দাওয়াতটা তাহলে আপনি আসা পর্যন্ত তুলে রাখলাম। আগামীবার এলেই দাবী নিয়ে হাজির হয়ে যাবো দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

মেঘা, গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়াররিং নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দেবো ভাবছি। আর আমি আসি আগে দেশে। তারপর তোমাকে রাজশাহী নিয়ে যাবো। ঠিক আছে? অণুর কাছে তোমার কথা শুনেছি। আমার আশীর্বাদ থাকছে।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

শিল্পীর আরও কিছু ছবি যদি যুক্ত হতো পোস্টে তাহলে আরও চমৎকার হত। এরকম আরও পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।

মনি শামিম এর ছবি

এই পোস্টটি মূলত কারাভাজ্জোকে নিয়ে আমার মুগ্ধতা জাগানিয়া একটি রচনা, সাথে তাঁর রোমাঞ্চকর জীবন নিয়ে কিছু আলোকপাত করার দুঃসাহস বলতে পারেন। সামনের পোস্টে তাঁর কয়েকটি সৃষ্টি নিয়ে আরও আলোচনা করতে মন চায়। এই স্পর্ধাটুকু অর্জন করে ফেলেছি বলতে পারেন ইতিমধ্যেই। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

আসলেই কি অদ্ভুত জীবন ছিল তাঁর!

মনি শামিম এর ছবি

সেইসময় এমন অদ্ভুত জীবন অন্য শিল্পীদের যে ছিলনা তা নয়। ডুয়েল লড়ে শত্রুকে ঘায়েল করা শিল্পী আরও রয়েছেন। যে কারণে তাঁর জীবন আমার কাছে অদ্ভুত লাগে তা হল, এত আত্ম নির্যাতন, এত দুর্নাম, এত সমালোচনার পরেও ছবি আঁকায় তাঁর মনোযোগের ঘাটতি হয়নি কখনও। তিনি আসলেই ছিলেন সত্যিকারের মাস্টার, শিল্প সৃষ্টি ছিল তাঁর সহজাত। এত ঘটনাবহুল জীবনে তিনি ঠিকই নিজের শিল্পের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় নির্মাণ করতে পেরেছেন, এইটা যেনতেন কোনও অর্জন নয়।

উজানগাঁ এর ছবি

আপনার গদ্য সাবলীল। বিরতিহীনভাবে পড়ে ফেলা যায়। কারাভাজ্জোর কিছুই জানতাম না। আপনার বদৌলতে জানা হল কিছুটা।

আমার মতো ফাঁকিবাজি না করে নিয়মিত লেখবেন আশা করি। চোখ টিপি

মনি শামিম এর ছবি

আরে আপনার লেখার দরকারটাই বা কি, আপনার ছবিই তো কথা বলছে। আপনি ছবি দিন আর আমরা তা ধরে ধরে আলাপ করি। কি, ভালো হয়না?

সত্যপীর এর ছবি

মারাত্মক হাততালি

এরম লেখা আর কয়টা হইলেই সচল কইরা দিবো দেইখেন। লেখতে থাকেন নো ইস্টপিং।

..................................................................
#Banshibir.

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যপীর। আপনার নিজস্ব স্টাইলে লেখা ইতিহাসের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করছি কিন্তু। এইটা দয়া করে বন্ধ করবেন না।

সত্যপীর এর ছবি

মোগল হাত্তি নিয়া গল্প লিখতেছি, আর পর্তুগীজদের সাথে সমুদ্রে পিটাপিটি নিয়া আরেকটা লেখা আধাফিনিশ হইয়া আছে দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

মনি শামিম এর ছবি

জলদি নামান, আপনার ওই লেখাগুলি লা জবাব!

মেঘা এর ছবি

আচ্ছা তার মানে এইভাবে নো ইস্টপিং দিয়ে লিখলে সচল করে দেয়!!! আমি তো বিরাট ইস্টপিং-এর মধ্যে আছি। আমাকে তো তাহলে হাচল থেকে অচল করে দিবে মন খারাপ

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

লেখাই তো দাওনা, অচল না হয়ে উপায় কি?

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

চলুক ভালো লেগেছে, একটানে পড়ে ফেললাম।
একটা কথা, আমার মতে "কিন্তু যতই টেকাটুকা আসতে লাগলো" এই লাইনটা ঠিক লেখাটার ভাব, পরিবেশনা ও শব্দচয়নের সাথে খাপ খাচ্ছেনা। এটা শুধুই আমার মতামত। কিছু মনে করবেন না দয়া করে।

--------------------------------------------------------------------------------

মনি শামিম এর ছবি

ঠিক। এক্কেবারে ঠিক বলেছেন মেহবুবা আপনি। লাইনটা পরে ডিলিট করতে দিব। আপনাদের মুল্যবান ফিডব্যাক পাওয়া যায় বলেই না সচলে ঘাড় গুঁজে লিখি। মনে করার তো প্রশ্নই আসেনা। ধন্যবাদ আপনাকে।

তানিম এহসান এর ছবি

দারুণ দারুণ! খুব আগ্রহ আছে ইতালি’তে জন্ম নেয়া সব চিত্রকর’দের বেলায়, চালিয়ে যান ভাই, সাথে আছি।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ তানিম ভাই। একটি পর্ব বের্নিনিকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। শিল্পীকে নিয়েই নয় শুধু, তাঁদের সৃষ্টি নিয়েও আলাপ জমানো যায়। তাইনা? হতে পারে একেকটি ছবি ধরে ধরে আলোচনা।

কৌস্তুভ এর ছবি

মনিদা, বানান একটু সামলে। গুণী, প্রার্থী, জোগাড়যন্ত্র, খিস্তিখেউড়, শিল্পী, প্রক্ষেপণ...

মনি শামিম এর ছবি

ঠিক আছে। বানানের ব্যাপারে সত্যিই সামলে উঠতে হবে।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অসাধারন! চলুক

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল লাগলো

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ। নাম লেখেন নি যে?

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ। রেনেসাঁস সময়ের তিন মহাগুরু ভিঞ্চি, মিকেল এঞ্জেলো আর রাফায়েল্লো কে নিয়ে বিস্তে বিস্তে লেখা হয়েছে। অণু তারেকের তো একাধিক লেখা আছে ভিঞ্চিকে নিয়ে এই সচলায়তনেই। আমার আগ্রহ মুলত তাঁদের সময়ের আগে পরে কিছু মহান শিল্পীদের নিয়ে। বের্নিনি কে নিয়ে একটা লেখার ইচ্ছে আছে। গুইদো রেনিকে নিয়েও।

আর একটা ইচ্ছে হয় ছবি ধরে ধরে আলোচনা করার। যেমন ধরুন কারাভাজ্জো মহাশয় কারদিনাল দেল মন্তের কমিশনে যে তিনটি মাস্টারপিস এঁকেছেন, দি কার্ড শার্পস, দি ফরচুন টেলার এবং দি লুট প্লেয়ার- এই তিনটি ছবি ধরে আলোচনা চালিয়ে গেলে মন্দ হয়না। আবার তাঁর বাক্কুস, ডেভিড এন্ড গোলিয়াথ আর দি কলিং অফ সেন্ট ম্যাথিউস কে নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে।

আমরা মহান শিল্পীদের নিয়ে কম বেশী জানি, কিন্তু তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে কিংবা কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা এগুলি এঁকেছেন কিংবা ছবিগুলি আদৌ তাঁরা এঁকেছেন কিনা তা জানিনা। তাই ছবি সৃষ্টির পেছনের ঘটনাগুলি মনে হয় আরও আগ্রহ উদ্দীপক হতে পারে।

যেমন ধরুন ডাচ মাস্টার ইওহানেস ভেরমির অঙ্কিত দি গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়াররিং এর কথা!

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

দারুণ ঝকঝকে লেখা ! মিকেল আসলেই সত্যিকারের মাস্টার ! আর কী ঘটনাবহুল জীবন তাঁর !
'The Fortune Teller' -এর দুইটি ভার্সন দেখলাম, ১৯৯৫ এ আঁকা দ্বিতীয় ভার্সনটি ল্যুভরে রয়েছে ।
'The Cardsharps' পেইন্টিংটা আসলেই দুর্দান্ত ! আসন্ন ভায়োলেন্সের রোমহর্ষক উত্তেজনা ! মার্জিত কিশোরের ঘাড়ের উপরে উঁকি মারা লোকটার চোখে-মুখে কী ধূর্ততা ! আর কার্ডশার্প ছেলেটির কী চাতুরীপূর্ণ দৃষ্টি, বেল্টে গুঁজে রাখা এক্সট্রা কার্ড, ছোঁড়া ... কী দুর্ধর্ষ ! এই এক পেইন্টিং নিয়েই তো দিস্তার পর দিস্তা লিখে ফেলা যায় !
ইশ্‌, সামনাসামনি দেখতে পেতাম ! মন খারাপ
ভিঞ্চি আর রাফায়েল্লোকে নিয়েও পোস্ট দিন ?
বিশেষ করে ভিঞ্চিকে নিয়ে আমার বিস্তর আগ্রহ ।
খুব ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে । অশেষ ধন্যবাদ হাসি

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

ভিঞ্চিকে নিয়ে অণু তারেক'র যে লেখাটি আছে তা ঠিক ভিঞ্চিকে নিয়ে নয়, মানে ভিঞ্চির শিল্পকর্ম বা আবিষ্কার নিয়ে নয় । অনেকটা তাঁর গ্রাম 'ভিঞ্চি'কে নিয়ে লেখা । আর বিস্তৃতও নয় অতটা । রাফায়েল্লোকে নিয়ে লেখা আছে ? দেখি নাই তো ! মন খারাপ
তবে সৃষ্টির পেছনের ঘটনা আসলেই রোমাঞ্চকর । মিকেলের শিল্পকর্মগুলো নিয়ে পোস্ট দিলে দারুণ হবে । হাসি বের্নিনি'র ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনাও সুখপাঠ্য হবে ।
Girl with a Pearl Earring চলচ্চিত্রটি দেখা হয়েছে , কিন্তু বইটি পড়া হয় নাই ।

মনি শামিম এর ছবি

রাফায়েল্লোকে নিয়ে নেই বোধ হয়। লিখব নাকি? তবে কি জানেন? রেনেসাঁসের এই গুরুরা এঁকেছেন সুন্দরের ছবি। যেখানে প্রকৃতি সুন্দর, মানুষ সুন্দর। ডেভিড সুন্দর, মোনালিসা সুন্দর। রহস্য যে নেই তা নয়, তবে তাঁদের আঁকা মানুষ পরিপাটি, সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এখানেই কারাভাজ্জোর সাথে তাঁদের পার্থক্য। আর এইজন্যই কারাভাজ্জোকে নিয়ে আরও লিখতে মন চায়। পরিচিত কিংবা বিখ্যাত সব শিল্পী এবং তাঁদের চিত্রকর্ম নিয়ে লেখার চাইতে স্বল্প পরিচিত শিল্পীদের নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করে। যেমন এই ভেরমির কে নিয়েই লেখা যায়। লেখা যায় তাঁর 'উত্তরের মোনালিসা' নিয়েই। তাই না?

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

ভিঞ্চি, মিকেল আর রাফায়েল্লোর বেশীরভাগ শিল্পকর্মগুলোই আপনি নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছেন, আপনার চাইতে ভালো আর কে লিখতে পারবে ? মিকেলকে নিয়ে আরো লিখুন, কিন্তু ভিঞ্চি আর রাফায়েল্লোকে নিয়েও লিখুন ।
"the Dutch Mona Lisa" নিয়ে অবশ্যই লেখা যায়, পড়ি নাই তেমনকিছু এটি নিয়ে ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।