• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ভেরমিরের বালিকা এবং মুক্তোর দুল!

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২২/০৬/২০১৩ - ১১:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Girl_with_a_Pearl_Earring

"গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়ার রিং"

ভেরমির বদ্ধ জানালা খুলে গ্রিটকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, বলতো গ্রিট, মেঘের কি রঙ? গ্রিট জানালা থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বলে ওঠে, "সাদা।" তারপরে খানিক বাদে বলে ওঠে "না না, সাদা নয়!, হলুদ, নীল, ধূসর...ওগুলোই মেঘের রঙ!" ভেরমির এই উত্তর শুনে খুশী হন,তৃপ্ত হন। গ্রিট এরপর উন্মুক্ত আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আচ্ছা, আজকের আকাশ কি একটু বেশীই সুন্দর?

যে ঘরে বসে তাঁদের এই কথোপকথন সেটি আসলে ডাচ চিত্রশিল্পী ইয়োহানেস ভেরমিরের জগৎ সংসার। এটি তাঁর স্টুডিয়ো। এখানে নিবিষ্ট মনে ছবি আঁকেন তিনি। ভেরমিরের বাবা ছিলেন দরিদ্র আর্ট ডিলার। ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং এর প্রতি ভেরমিরের ঝোঁক। কিন্তু ভালো পেইন্টারের কাছে শিখবেন, এমন পয়সা নাকি ছিলনা তাঁর বাবার। তারপরেও ভালো ছবি আঁকেন তিনি। তবে কিনা বছরে একটি দুটির বেশী ছবি আঁকতে পারেন না। ডিটেইলস এর প্রতি সাংঘাতিক ঝোঁক আর অসম্ভব পারফেকশনিস্ট। বিয়ে করেছেন মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরে। কিন্তু বিয়ে করে বউ ঘরে এনে আরও বিপদাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন। সংসারই চলেনা এমন অবস্থা! অবশেষে ঠাঁই মিলেছে কড়া মেজাজের শাশুড়ির কাছে। ভেরমিরের ছেলেপুলে অনেক। তাঁর স্ত্রী ফি বছর একটি করে সন্তান প্রসব করেন। একে একে এগারটি সন্তান জন্ম নেয় তাঁদের ঘরে! পুঁচকে ছেলেপুলেগুলি জ্বালিয়ে মারে সবাইকে। তাঁর মধ্যে বড়টাই খুব মুখরা, আর মুখে তাঁর সবসময় অভিযোগের পসরা সাজানো।

ভেরমির বেশী চেঁচামেচি পছন্দ করেন না। খুব কম কথা বলেন। প্রয়োজনের কথা কাউকে মুখ ফুটে বলতেও তাঁর দ্বিধা অনেক। নিজের ভেতর ডুব মেরে থাকা মানুষ তিনি। তাঁর শাশুড়ি এই বাড়ির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁর কথার নড়চড় হবার জো নেই! শাশুড়ি তাঁর চিত্রকর্মের ভক্ত, এইসব আর্ট বেচে ঘরে কিছু টাকা আসে বলে জামাই তাঁর চোখের মণি। কিন্তু ভালো দাম পাওয়া যায় এমন আর্ট ডিলার কোথায় এই ছোট শহরে। একজন আছেন বটে, ভ্যান রাইফেন। তিনিই এই ছোট্ট ডেল্ফট শহরে ভেরমিরের শিল্পের একমাত্র সমঝদার। বছরে দুই একটা যা আঁকেন ভেরমির, তাই কিনে নেন এই লোক।

বাসায় এতগুলি বাচ্চা কাচ্চা, অনেক কাজ, বাসার কাজগুলি বয়স্ক এক পরিচারিকা দিয়ে আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই ডাক পড়ল অল্প বয়স্ক এক গৃহভৃত্যের। সেই সূত্রেই গ্রিটের এই বাসায় কাজ পাওয়া। শুরু থেকেই কাজের প্রতি অখণ্ড মনোযোগ তাঁর। ভীষণ পরিশ্রমী আর একনিষ্ঠ গ্রিট। কাজে কর্মে কোথাও ফাঁকিবাজি নেই। কাজের পুরস্কার স্বরূপ দায়িত্ব পড়ল এই বাড়ির জামাইয়ের স্টুডিয়ো পরিষ্কার করার। তো গ্রিটের কাছে জামাই বাবাজি কেমন রহস্যময় মনে হয়। এই বাড়িতেই থাকেন বটে তিনি, তবে কদাচিৎ দেখা মেলে। সারাদিন কই থাকেন এই ভদ্রলোক? তাঁকে নিয়ে অনেক কৌতূহল জমে গ্রিটের মনে। স্টুডিয়োটি তাঁর মনে ধরে, ভালো লাগে সেই স্টুডিয়োতে পড়ে থাকা রঙ, ক্যানভাস। এদিকে গ্রিটের কাজ পছন্দ হয় ভেরমিরের। তিনি বুঝতে পারেন এই মেয়ের মাঝে বোধহয় এক শিল্পী বাস করে। ভেরমির খেয়াল করেন যে তাঁর ক্যানভাসের দিকে অনেক সময় গ্রিট এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে গ্রিট সামনে আগান আবার পিছে যান, বিভিন্ন কোণা থেকে কম্পোজিশনকে দেখেন। এইসব ছোট ছোট আগ্রহ দেখে তিনি গ্রিটকে প্রস্তাব দেন তাঁর স্টুডিয়োতে তাঁর সাথে রঙ মিশ্রণের কাজে। মালিকের কথা কি আর ফেলা যায়! আর মনে মনে কি একটু খুশীও হন না গ্রিট? এদিকে ভেরমিরের আগ্রহ, কাজ করতে গিয়ে ভেরমিরের হাতের স্পর্শ ষোড়শী রমণীর হৃৎকম্পন বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

গ্রিট বাজার করতে যান এক মাংসের দোকানে। সেখানে এক উঠতি বয়সী ছেলের সাথে ভাব জন্মাতে সময় লাগেনা তাঁর। ছেলেটি বেশ সদালাপী আর মুগ্ধতা ছড়াতে থাকেন গ্রিটের পানে। গ্রিট আর কতদিন ছেলেটির আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারেন?

ভেরমির এই বছরে তেমন কিছুই আঁকতে পারছেন না। এই নিয়ে শাশুড়ি বেশ অতৃপ্ত। সংসার বড় হচ্ছে, খাই খরচ আকাশ চুম্বি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বেড়েই চলেছে। এদিকে ভয়ও পান! শিল্পী মানুষকে বেশী চাপ দিলে যদি হিতে বিপরীত হয়? এইজন্য দাঁতে দাঁত চেপে ভেরমিরকে সমানে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। এদিকে বেচারা ভেরমির তাঁর পরবর্তী ছবির বিষয় খুঁজতে গিয়ে হয়রাণ হয়ে পড়েছেন। তিনি সাধারণত আটপৌরে ঘর গেরস্থালিকে উপজীব্য করে ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। আর ভালবাসেন নতুন নতুন রঙ সৃষ্টিতে। এই বছর কি হয়েছে, কোনও কিছুতেই তাঁর মন বসছেনা। এদিকে তাঁর উৎসাহ বাড়ানোর জন্য আর্ট ডিলারের বাসায় তাঁর সম্মানে এক ভোজসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ভ্যান রাইফেনকে ভজানোর অনেক চেষ্টা করেন শাশুড়ি। সেই ভোজসভায় খাবার সার্ভ করতে গিয়ে লম্পট ভ্যানের চোখে পড়ে যান গ্রিট। ভ্যান হঠাৎ বলে বসেন এই সুন্দরী রমণীকে আঁকলে কেমন হয়। উপস্থিত সবাই হতভম্ব ও বিব্রত হন। ভেরমির বুঝতে পারেন না কি বলবেন। কিন্তু খানিক চিন্তা করার পর কিছুদিন বাদে তিনি মনস্থির করেন, গ্রিটের ছবিই আঁকবেন! ভ্যানের সাথে ছবির অন্তিম মুল্য নিয়ে একটা রফাও হয়ে যায় তাঁর।

এদিকে পাড়ায় রটে যায় গ্রিট মডেল হবেন ভেরমিরের। রাস্তায় ডেকে ভ্যান রাইফেন সরাসরি ভেরমিরের সামনে তাঁকে প্রস্তাব দিয়ে বসেন। গ্রিট হাঁ বলবেন না না বলবেন তাও বুঝে উঠতে পারেন না। বাড়ির মালিকের অনুরোধ কিংবা আদেশ,সাড়া দেবেনা এমন সাহস কার? ভেরমিরের অনুরোধ আছে আরও, তাঁকে পড়তে হবে মুক্তোর কানের দুল। বাড়িতে মুক্তোর কানের দুল আছে একমাত্র ভেরমিরের স্ত্রীর। কিন্তু তিনি রাজী নন। এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে গ্রিটের সাথে ভেরমিরের দহরম মহরম তাঁর চক্ষুশূল হয়ে রয়েছে। আবার তাঁরই কানের দুল পড়বেন এই বাড়ির ভৃত্য, এও কি মেনে নেবার মতন? এদিকে বাড়ির আসল কর্ত্রী ভেরমিরের শাশুড়ি বুঝতে পারেন যে অনেকদিন পর জামাই বাবার মতি ফিরেছে, এই সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবেনা। তাই কন্যার মুক্তোর দুল তিনি কৌশলে জামাইয়ের হাতে তুলে দেন।

গ্রিটের মাথায় সেদিনও ছিল গৃহ পরিচারিকার টিপিকাল টুপি। ভেরমির তাঁকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে দূর থেকে তাকে দেখছেন এবং আঁকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু তাঁর সাদা টুপি মুখটাকে ঢেকে রেখেছে। বিরক্ত ভেরমির তাকে বলেন, "গ্রিট তোমার মাথার টুপিটা খুলবে?" গ্রিট আচমকা এই আবদার শুনে দিশেহারা অবস্থায় বলে, "না, আমি তা পারবনা।" "কি? তুমি পারবেনা?" গ্রিট বলেন, "না পারবনা নয়, আমি তা করবনা।'" ভেরমির বলেন, "তোমার মাথার টুপি তোমার মুখটাকে ঢেকে দিয়েছে গ্রিট, এটা খুলে পাশের ঘরে আরেকটা স্কার্ফ রয়েছে, যাও সেটা পড়ে এসো।'" হতভম্ব গ্রিট ইতস্থতঃ ভাবে নতুন স্কার্ফ পড়ে এল। এবার ভেরমির তাঁর কাছে এসে বলে উঠলেন "গ্রিট, তোমার মুখটা একটু খোল তো!'" গ্রিটের ভারী মুশকিল! এইসব কি অত্যাচার! মুখ হাঁ করবার পর ভেরমির তাঁকে বলেন, "ঠোঁটটা এবার ভিজিয়ে ফেল।" মরণ! প্রমাদ গোণার পালা এবার গ্রিটের। যাই হোক, এই কাজটাও হয়ে গেল। এইবার ভেরমির শুরু করলেন গ্রিটকে আঁকা!

মোটামুটি এই হল সংক্ষেপে বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং আলোচিত পোর্ট্রেট "গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়ার রিং"এর গল্প। গল্প লিখেছেন ট্রেসি শেভলিয়ের আর এর চলচ্চিত্র রূপ দিয়েছেন পিটার ওয়েবার। এই গল্পের বেশীরভাগটাই কল্পনা, সত্য কিছু থেকে থাকবে হয়ত, তবে তাতে রঙ চড়ানোর সম্ভাবনাই বেশী। যে চিত্রকর্মে শুধু স্রষ্টার নাম আছে তারিখ নেই, কোন্ আর্ট ডিলারের কাছে তা বিক্রি হয়েছিল কিংবা আদৌ তা বিক্রি হয়েছিল কিনা, হলফ করে কিছুই বলা যায়না, সেটা নিয়ে মহৎ সাহিত্য রচিত হতে পারে তবে তাতে সত্য উদ্ভাসিত হয় কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনেক সন্দেহ। ভেরমির তাঁর সময়ের হল্যান্ডের একটি ছোট্ট শহরের এক অখ্যাত, অনালোচিত চিত্রশিল্পী। জীবদ্দশায় মাত্র কয়েকটি ছবি আর্ট ডিলার ভ্যান রাইফেনকে বিক্রি করেছেন কি করেন নি তা নিয়েও রয়েছে সংশয়ের বেড়াজাল। অসহনীয় দারিদ্র্য পীড়িত অবস্থায় কেটেছে যাঁর সারা জীবন! জীবনে যে পেইন্টার মাত্র একত্রিশটি চিত্রকর্ম অঙ্কন করতে পেরেছিলেন যার বেশিরভাগের সৃষ্টির দিন তারিখ অজানা, এমন চিত্রকর্ম শুধু সন্দেহেরই জন্ম দিয়ে চলে! আর তাছাড়া যে বালিকা মুক্তোর দুল পরে রয়েছে সে কি আসলে ওই বাড়ির সামান্য এক গৃহপরিচারিকা? নাকি ভেরমিরের ষোড়শী কন্যা, নাকি আর্ট ডিলারের কন্যা? এগুলো জানার আদৌ উপায় আছে কোনও? সত্য হল নেই। নেই তা জানার আর কোনও উপায়!

কিন্তু কি আছে এই ছবিটিতে যা অজানা অচেনা এক শিল্পীকে জগতের অন্যতম সেরা চিত্রশিল্পীদের কাতারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে? এই ছবিতে প্রথম যে বৈশিষ্ট্যকে স্ত্রাইকিং বলে মনে হয় তা হল এই ছবির অবিশ্বাস্য কন্ট্রাস্ট। পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড অন্ধকারে ঢাকা আর তাঁর মাঝে বালিকার তুলনারহিত দৃষ্টিপাত! এ যেন কারাভাজ্জোর কিয়োরোস্কুরা! যেভাবে আলো এসে বালিকাকে উজ্জ্বল করেছে তাঁর সমতুল্য আর কিছু দেখেছি কি কখনও? মনে তো পড়েনা! আর ষোড়শী বালিকা কি যেন বলছে আমাকে? কি বলছে? তাঁর নমিত কণ্ঠস্বর কি বলছে ফিসফিসিয়ে? সে কি আমাকে আহ্বান করছে? সে কি বলছে, "এসো, আমার হাত দুটো ধর, চল আমরা হারিয়ে যাই?" নাকি তাঁর কণ্ঠে প্রত্যাখ্যানের সুর। নাকি সে বলছে, "ধুর, আর কত তাকাবে আমার দিকে?" কি বলছে সে? এ কেমন রহস্যময় দৃষ্টি বিনিময়? তাঁর এই তাকানো, তাঁর ঠোঁটে হাল্কা হাসির রেখা, তাঁর এই মোশন, সেকি আমার দিকে আসছে নাকি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? এই গতির চিহ্ন কি তাঁর মুক্তোর কানের দুলে খেলা করে? তাঁর স্কার্ফ তো মনে হয় দুলে উঠেছে সামান্য। এই যে তাঁর কথা বলার ভঙ্গী, এইযে তাঁর গতির আভাস, এই সব কিছুই অনেক অব্যাক্ত ধ্বনির জন্ম দেয়, অনেক নিস্তব্ধ কথামালা সৃষ্টি করে। আর এই রহস্যময়তা সময় কালকে ছাপিয়ে আমাদের হৃদমন্দিরে হানা দেয়। এই রূপসী, তন্বী রমণী জন্ম দেয় এক দুর্মর আকাঙ্ক্ষা কিংবা বাসনা। যে দুরে সরে যেতে চায়, তাকে আরও কাছে পেতে ইচ্ছে করে, যে কাছে আসে তাকে ইচ্ছে হয় জরিয়ে ধরতে। প্রেমিক হিসেবে এইতো আমাদের চিরায়ত বাসনা। তবে কি ছবিটি বাসনার উজ্জ্বল প্রতিবিম্ব? ভেজা ঠোঁটে এক ষোড়শী রমণী কি সেই অমূল্য বাসনার আহ্বান জানাচ্ছে আমাদের অনন্ত কাল ধরে?

ভেরমির মোনালিসা আঁকেন নি। তিনি একটি বালিকাকে এঁকেছেন যার কানে মুক্তোর দুল ঝুলছে। এই ছবিতে মুক্তোর দুল ঔজ্জ্বল্যের প্রতীক । খুব সহজ সাধারণ একটি প্রতিকৃতি। বালিকাটির মাথায় অদ্ভুত স্কার্ফটি হালকা নীল রঙের সহযোগে যেন জ্বলজ্বল করছে! এ ছবিতে যেন কোথাও কোনও কিছুর বাড়াবাড়ি নেই, নেই কোনও জটিলতা। একটি নারীর শাশ্বত আহ্বানের বিশ্বস্ত রূপ হয়ে রয়েছে শুধু। এমন খাঁটি এমন সজীব চিত্রকর্ম আমরা কি বারবার পাই? সহসাই মেলে কি এমন স্বর্গীয় চাহনি? তারপরেও এত ইউনিক এই চিত্রকর্মের উপাধি জুটেছে 'উত্তুরের মোনালিসা' হিসেবে, কেউ কেউ বলেছেন 'ডাচ মোনালিসা।' তবে সত্য হল এটা মোনালিসা নয়। তার চাইতে ভিন্ন কিছু। এর প্রেক্ষিত ভিন্ন, এর সৌন্দর্য ভিন্ন, এর রূপ-রস-আঙ্গিক-গঠণ পুরোই আলাদা। আমরা জানি, মোনালিসা হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসলে এ ছবির গুরুত্বকেই স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এটি কোনোভাবেই মোনালিসার সাথে তুল্য নয়। এটি একান্তই এক ডাচ মাস্টার এর অনবদ্য মাস্টারপিস যাঁর সাথে কোনও কিছুই তুল্য নয়। আমরা এও জানি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এই ছবির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই এই রূপসী ছলনাময়ী প্রদর্শনীর নাম করে গোটা বিশ্ব পরিভ্রমন করে বেড়াচ্ছে আর বিশ্বব্যাপী তাঁর প্রেমিক প্রবরদের আহ্বান করে যাচ্ছে। এ এক অনন্ত যাত্রা যার কোনও শেষ নেই! ভেরমিরের বালিকাকে আমরা হৃদ মাঝারেই রেখেছি, যেতে দিইনি, দেবোনা।

ছবিটি আরেকটু বড় করে আরেকবার দেখি? ছবিটি কিন্তু উইকি থেকে নেয়া।

Girl_with_a_Pearl_Earring


মন্তব্য

মেঘা এর ছবি

(ইটা)

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

:)

মেঘা এর ছবি

বই পড়েছি সেদিন অন্য একটা লেখায় বলেছিলাম মনে হয়। আজকে ছবির বর্ণনা পড়তে চমৎকার লেগেছে‍! এতো কিছু বলে টানে নাকি ছবিটা? এতোদিন চোখেই পড়ে নি!

লেখা বরাবরের মত চমৎকার হয়েছে ভাইয়া। (Y)

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘা। আশীর্বাদ থাকছে।

মনি শামিম এর ছবি

মেঘা, গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়ার রিং চলচ্চিত্র হিসেবে চমৎকার, সন্দেহ নেই। একটি নিটোল গল্প চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এটাও সত্যি। তবে কিনা শিল্পকর্ম হিসেবে তা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। এমনকি এই চিত্রকর্মে যে একটি গতির ব্যাপার আছে সেটাও ঠিকমতন ধরতে পারেনি! অবশ্য গল্প হিসেবে ভেরমির এবং গ্রিট এর ভেতরের কাল্পনিক সম্পর্ক উপস্থাপনে অনেক আগ্রহ দেখেছি গল্প লেখকের। কিন্তু চিত্রকর্মের পাত্রী হিসেবে তাঁর দ্বন্দমুখর উপস্থাপনের কোথাও খানিক ঘাটতি থেকে গেছে বলে মনে হয়। ট্রেসি শেভলিয়ের এর চমৎকার একটি সাক্ষাৎকার আছে এই গল্প নিয়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাক্ষাৎকারটি পড়িনি, কিন্তু আপনার সাথে পুরোপুরি একমত।
- একলহমা

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সহমত পোষণ করবার জন্য। :)

অতিথি লেখক এর ছবি

খাসা লেখা হয়েছে। চলচ্চিত্রটাও ভাল লেগেছিল। কিন্তু আপনার লেখার সাথে সহমত। আর তাই, লেখাটা খুব পছন্দ হয়েছে। (আপনার এই সব লেখা যেদিন বই হয়ে বের হবে, সানন্দে proofreading-এর দায়িত্ব নিতে রাজী আছি :) )
- একলহমা

মনি শামিম এর ছবি

জানিনা, কোনও একদিন বই হিসেবে প্রকাশিত হবে কিনা। এই সব তুচ্ছ, দীনহীন কথামালা কি কেউ বইয়ের আকার দেবে? মনে তো হয়না। আর যদিও বা কারও ভাবনায় আসে, আপনার দুয়ারেই প্রথম কড়া নাড়বো প্রুফরিডিং এর জন্য। ঠিক আছে?

সুমাদ্রী এর ছবি

ফিল্মটা দেখেছিলাম। আপনার লেখা পড়ে ছবিটাও দেখে ফেললাম। ধন্যবাদ মনি ভাই।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সুমাদ্রী। তোমার গল্প একটু সময় নিয়ে পড়বো। ভালো থেকো ভাই।

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

ছবিটা দেখতে হবে। =DX

--------------------------------------------------------------------------------

মনি শামিম এর ছবি

চমৎকার চলচ্চিত্র মেহবুবা আপা। এ এমন এক সিনেমা যেখানে ছোট ছোট দৃশ্য সহযোগে মানুষের মনের অব্যাক্ত অনুভুতিগুলি জোড়া লাগানো হয়েছে। এই অনুভূতিগুলি আবার উচ্চকিত নয় মোটেই। নমিত, সাব্টল। এইজন্যই তা আরও গেঁথে যায় মনের ভেতর। মূল চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন স্কারলেট ইয়োহান্সেন।

সত্যপীর এর ছবি

হাতে সময় থাকলে ভিডিও ব্লগিং করতে চেষ্টা করতে পারেন বস. যেটা লিখছেন সেটাই বলে যাবেন ব্যাকগ্রাউন্ডে, আর ছবি দেখালেন বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে. ৫/১০ মিনিটে ভিডিও ব্লগিংখতম. কিছু বেসিক অডিও ভিডিও সফটওয়ার, একটা কাজ চলার মত স্পিকার, ইউটিউব একাউন্ট আর দুনিয়ার সময়, এই হলেই চলবে. আপনার টপিকটা ভিডিও ব্লগিংএর জন্য চমৎকার.

..................................................................
#Banshibir.

মনি শামিম এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, এই নতুন প্রযুক্তি জানান দেয়ার জন্য। সত্যপীর ভিডিও ব্লগিং প্রথম দেখেছি আপনার কল্যাণে। আপনি পানিপথের ওপর যেটা করেছিলেন। অসাধারণ হয়েছিল। কিন্তু আপনি এটাতে যে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন, আমার তা অর্জন করতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। আর খুব একটা ভালো না হলে তো ডুবে যাবে সব প্রচেষ্টা। নয়কি? আবার কথার পিঠে কথা সাজিয়ে অক্ষরের মাধ্যমে উপস্থাপন করার যে আনন্দ তা কি ভিডিও ব্লগিং এ আছে? তারপরেও দেখব চেষ্টা করে। সহযোগিতা করবেন, কথা দিন?

সত্যপীর এর ছবি

খুব একটা ভালো না হলে তো ডুবে যাবে সব প্রচেষ্টা। নয়কি?

নয়। নিজের আনন্দের জন্য করুন, প্রথমটাই বিবিসির ডকুমেন্টারি হবে ভাবলে কি আর চলবে। ভালো না হলে পাব্লিকের ছাতার বাড়ি দুইচাইরটা খাইতে হইতে পারে। আমি প্রায়ই খাই। তাতে কোন সমস্যা নেই বরং লাভ পাবেন পরবর্তী গুলা বানানোর সময়।

আবার কথার পিঠে কথা সাজিয়ে অক্ষরের মাধ্যমে উপস্থাপন করার যে আনন্দ তা কি ভিডিও ব্লগিং এ আছে?

নাই। দুইটা দুই জিনিস। বানাতে গেলে বুঝবেন কিছু জিনিষ লেখায় আনতে খুব সমস্যা হয় সেইটা ভিডিওতে সহজেই চলে আসবে। দেখেন ভালো লাগে কিনা। লেখালেখি খুব সহজ ব্যাপার, যেকোন সময়ই করতে পারবেন তাই না? মাঝে মধ্যে কমফোর্ট জোনের বাইরে যাওয়া ভাল। আমি পাপিষ্ঠ তারেক অণুকেও গুঁতা দিছিলাম বিভিন্ন ফোটো নিয়ে ভিডিওব্লগ করার জন্য, সে ব্যাটা ঘুরতে ঘুরতেই অস্থির এগুলি করার তার টাইম নাই :p

আর টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি নিয়ে কথা অফলাইনে নেয়া যাক। আপনার কুশ্চেন থাকলে একটা গুপন বার্তা পাঠায় দেন, কথা হোক।

..................................................................
#Banshibir.

স্যাম এর ছবি

লেখালেখি খুব সহজ ব্যাপার

হ, কইছে :p

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আরে আপ্নেও কয়া দেনঃ "ব্যানার বানানি খুউব সোজা কাম... ;) "

আমরা খালি পড়ি আর দেখি, এইটা আরও সোজা :D

মনি শামিম এর ছবি

লেখালেখি, ভিডিও ব্লগিং, স্যাম ভাইয়ার মতন ব্যানার বানানো কোনও কিছুই কঠিন নয়, যদি পর্যাপ্ত পরিমান আগ্রহ আর ইচ্ছেটা মজুত থাকে। এই ধরুন, সারা জীবন চিত্রকর্ম অঙ্কন আমার কাছে ভীষণ কঠিন কাজ বলে মনে হয়েছে। আর আজ লিখতে বসে ইচ্ছে হল, আচ্ছা, তাঁরা পারলে আমি পারবোনা কেন, হ্যাঁ, হয়ত তাঁদের মতন পারবোনা, কিন্তু হবে তো কিছু একটা। তাই বাজার থেকে কাগজ আর জলরং কিনে এখন ইউটিউব দেখে শিখছি জলরং দিয়ে পেইন্টিং। এখন সাইত্রিশ বছরে এসে এসব কাজ নতুন করে করতে ইচ্ছে করছে। হয়ত হবেনা কিছুই কিন্তু আমাদের কাছে কি অসম্ভব, বলুন?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যদি ৫৫ বছর পার করে তোমাদের মত তুখোড় ব্লগারদের দুনিয়ায় ঢুকে পড়ার দু:সাহস করতে পারি, মন চাইলে তোমাদের মত রত্নরা সব পারবে। এই মন্তব‌্য লিখতে লিখতে আমার চোখ ভেসে যাচ্ছে। একটানা হতাশ হতে হতে হঠাৎ করেই একদিন এসে পড়ি সচলায়তনে। আমার দিন বদলে যায়। ফিরে আসে সেই হারিয়ে যাওয়া ভরসাটা - পারবে, বাঙালী পারবে। চলতে থাকুক সচলায়তন।
- একলহমা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

মনি শামিম এর ছবি

পারবে, বাঙালী পারবে

(Y)

মনি শামিম এর ছবি

পারবে, বাঙালী পারবে

(Y)

মনি শামিম এর ছবি

দুঃখিত তো আমার বলা উচিৎ কৌস্তুভ। আমারই তো নিয়ম কানুন আগে ভালো করে পড়া উচিৎ। সচল যেটা করতে পারত, আমাকে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ পাঠিয়ে বলা যে, আপনার লেখাটা এই কারণে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কাজেই পরে পোস্ট করুন। অবশ্য জানিনা, এমন বার্তা পাঠানোর রেওয়াজ এখানে আছে কিনা! তারপরেও ধন্যবাদ কৌস্তুভ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। আর হবেনা এমন!

কৌস্তুভ এর ছবি

একি, নীড়পাতায় মনিদার দুদুখানা পোস্ট? মডুরা কি নাকে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে ঘুমায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর

মনি শামিম এর ছবি

(ধইন্যা) কিন্তু নাম কোথায় ভাই?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

মনি শামিম এর ছবি

(ধইন্যা)

রণদীপম বসু এর ছবি

ছবিটাকে আরো বড়ো করে দেখতে পারলে মনে হয় এর অনবদ্য আকর্ষণটা আরো অনেক বেশি বেড়ে যেতো। কিন্তু বড় করতে পারলাম না ! আপনার ফ্লিকারে গিয়ে দেখি চুপসে ছোট হয়ে গেছে ! হা হা হা !

ছবির গল্প ভালো লেগেছে। চলুক।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মনি শামিম এর ছবি

ঠিক। আর একটু বড় করে দেখাতে পারলে সত্যি আরও ভালো ভাবে বোঝা যেত! তবে এর চাইতে বড় করে দিতে চাইলে ফ্লিকার আর সচলে কাটাকাটি লেগে যায় যে? দাদা, এই যৎসামান্য লেখা আপনার ভালো লাগছে, এটাই তো চরম প্রশান্তির! এরপর ঢাকায় এসে আপনার সাথে আরও বাৎচিত চলবে!

বন্দনা এর ছবি

মুভিটা দেখেছি, বেশ ভালো লেগেছিল, নিজের এমন একটা ছবির জন্য খুব ইচ্ছে হয়েছিল তখন। আপনার লেখা পড়ে পুরানো ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো আবার।

মনি শামিম এর ছবি

এই ধরণের ছবি দেখলে কার না নিজের পোর্ট্রেট আঁকানোর ইচ্ছে হয়! মুভিটা আসলেই চমৎকার। সহমত।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ছবি'র গল্প শুনতে ভালো লাগলো।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ পান্থ।

তারেক অণু এর ছবি

উনার আরও কয়েকটা কাজ দেখেছি, বিশেষ করে লেস মেকারটা চোখে লেগে আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা বেশ ভালো লাগলো। (জাঝা)

রেনোয়া এমন কমবয়সী একটা মেয়েকে বারবার এঁকেছিলেন, সেই মেয়ে নিয়েও গল্প আর রহস্য কম নয়। উপন্যাসটা পড়ার ইচ্ছে রইলো।

______________
ফরহাদ হোসেন মাসুম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।