১
আমরা তখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দরজায় কড়া নাড়ছি। আশির দশকে আমরা দুই পিঠাপিঠি ভাই, রাজশাহীর সবুজ মতিহার চত্বরে দাপাদাপি করে বড় হচ্ছি। আশির দশকে বিটিভির পাশাপাশি দূরদর্শনের নিয়মিত দর্শক আমরা। গান আমাদের বিনোদনের একটা প্রধান আশ্রয়। আমরা তখন নানান ধরণের গান শুনি, বারোভাজা টাইপ, বাছ বিচার কম। বাবার একটা টু -ইন-ওয়ান ক্যাসেট প্লেয়ারে শুনি সাগর সেনের কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত, ব্যান্ড সঙ্গীতের রমরমার সময়ে আমরা তার মুগ্ধ শ্রোতা, আবার এদিকে রয়েছে ইংরেজি গানের প্রতিও দুর্বার আকর্ষণ আর সবার ওপরে কিশোর কুমার। মেটাল, রক, পপ, ফোক সব শুনে টুনে সাফা অবস্থা। তখন বাজারে সুমনের ক্যাসেট বেরিয়ে গেছে, এ আর রহমান রোজা দিয়ে মাতিয়ে ফেলেছেন, বন্ধু শাকিরের মাধ্যমে হাতেখড়ি হচ্ছে জাগজিত আর চিত্রা সিং এর গজল। নব্বইয়ের দশকে ডিশ এন্টেনা কেবল এলো এলো। সব ধরণের গান শোনা তো হচ্ছে, তবে ঠিক এক জায়গায় এসে আটকে থাকা যাচ্ছেনা।
ঠিক এমন সময়ে কোথা থেকে কিভাবে পঞ্চম এসে এই দুই সঙ্গীত শ্রোতার একেবারে মর্মমূলে প্রবেশ করল, তা কিছুতেই বোঝা গেলনা! সে যেন এলো কিছু না বলে অনাহুতের মতন, আর আমরাও যেন তাকে পেয়ে জাপটে ধরে ফেললাম। মানে আর যাই হয়ে যাক সঙ্গীতের দুনিয়ায়, ভাই তোমাকে আমরা আর ছাড়ছিনা, এমন অবস্থা। তারপরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প-৭২/সি তে বসে দুই ভাই মিলে শুরু হল পঞ্চমের গানের তালিকা তৈরি। কিন্তু তালিকা করা কি চাট্টিখানি কথা! পরিচিত গানগুলির কথা বাদ যদিও বা দিয়ে ফেলি, কি হবে অপরিচত, অজানা গানের বেলায়? তখন তো আর জয় বাবা গুগলনাথ নেই যে সামান্য এক বাটনের ক্লিকে সাহায্য করতে আসবে! তবে ইচ্ছে থাকলে উপায় তো হয়েই যায়!
এখন পঞ্চমের সুরে গান রেকর্ড করতে হবে, হিন্দি চলচ্চিত্রের গান। কোথায় হবে? কোথায় পাই? রাজশাহী নিউ মার্কেটেই তো রয়েছে রেকর্ডিঙের দোকান। তবে সেখানে রেকর্ডিং কি ভালো হবে? বন্ধুরা যে তখন সিনা টান টান করে ঢাকা থেকে গান রেকর্ড করে আনে, আর সেই সব গানের কি নিখুঁত রেকর্ডিং, আহা! আর নানান ধরণের ইংরেজি গান রেকর্ড করা মানে যেন জাতে ওঠা। রেইনবো নামক দোকানে গান রেকর্ডিং না করলে কিংবা তাঁদের প্রকাশিত ইংরেজি গানের ম্যাগাজিন না পড়লে ঠিক স্মার্ট হওয়া যায়না আমাদের ছোট্ট মতিহার চত্বরে! কিন্তু ঢাকায় কি পঞ্চম অধরা? ঢাকা অবশ্যই তখন আমাদের কাছে এক অচেনা শহর, স্বপ্নের নগরী! ঢাকায় তেমন কেউ থাকেনও না আমাদের। সব কাজের কাজি বন্ধু শাকিরের বাড়ি ঢাকায় আর ও ভর্তিও হয়েছে সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রেকর্ডিঙ টেকর্ডিঙে বস লোক। বললাম এই বিপত্তির কথা। ও বলল, "তালিকা দে, ঢাকায় কি এক রেইনবো ছাড়া দোকান নেই?" কাজেই দিলাম তালিকা, দিলাম ষাট মিনিটের টিডিকে টেপ ক্যাসেট আর সাথে রেকর্ডিঙের টাকা। মাস খানেক চরম উত্তেজনা সহকারে অপেক্ষার পর হাতে এলো পঞ্চমের প্রথম এ্যালবাম। আমরা দুই ভাই নাওয়া খাওয়া ভুলে শুনতে লাগলাম একের পর এক জাদু!
কিশোর কুমার আর পঞ্চমের সে এক কি যোগ! সাগর এর চেহেরা হ্যায় ইয়া , মাঞ্জিল এর রিমঝিম গিরে সাভান , অমর প্রেম এর চিঙ্গারি কোই ভাড়কে , মেরে জিভান সাথির ও মেরে দিল কে চ্যায়েন , খুশবুর ও মাঝিরে , পরিচয় এর মুসাফির হুঁ ইয়ারোঁ , গোলমাল এর আনেওয়ালা পাল , অনামিকার মেরি ভিগি ভিগি সি , সাত্তে পে সাত্তার দিলবার মেরে , রামপুর কা লাকশমান এর গুম হ্যায় কিসি কে পিয়ার মে , জাওয়ানি দিওয়ানির জানে জা আর আঁধির তেরে বিনা জিন্দেগি সে - এই মোট বারোটা গান দিয়ে শুরু হল আমাদের ষাট মিনিটের পঞ্চম যাত্রা।
তারপরে একে একে পঞ্চমকে আবিষ্কার করার পালা আমাদের। মুলত আমারই আগ্রহটা বেশী ছিল সেই সময় কেননা নানান ছুতোয় আমার ঢাকায় যাবার পরিমাণ একটু একটু করে বাড়তে শুরু করল। আর সেই সাথে বাড়তে থাকলো পঞ্চম প্রীতি আর পঞ্চম রেকর্ডিং। মনে পড়ে কতদিন ফার্মগেট থেকে টেম্পো করে চিপাচিপির মধ্যে এলিফেন্ট রোডের সেই ভুলে যাওয়া নামের দোকানে গেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের সঙ্গীতের পাতা একটি একটি করে উল্টিয়েছি শুধু, আর পাগলের মতন খুঁজেছি পঞ্চমকে। আর পেয়ে গেলে যেন স্বর্গ হাতে পেয়েছি। এভাবেই পেয়েছি পারিন্দার পিয়ার কে মোড় পে , পেয়েছি জিভার রোজ রোজ আঁখো তালে , পেয়েছি লিবাস এর খামোশ সা আফসানা , পেয়েছি কিতাব এর ধান্নো কি আখো মে এবং দ্রোহীর তুম জো মিলে ! এভাবে একটু একটু করে পঞ্চমকে আমাদের জীবনের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।
২
স্কুলের পড়াশুনো ছিল তাঁর দু চোখের বিষ। পঞ্চমের বাবা ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার। চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতের সব নক্ষত্র আর রথী মহারথীদের তাঁদের বাড়িতে নিত্য যাতায়াত। স্কুলের নিয়মবদ্ধ পড়া নয়, তাঁর ভালো লাগত গান, সঙ্গীত আয়োজন, সুর আরোপ। মেট্রিকে ফেল করে বাবার গানের স্টুডিয়োতে ঘুরঘুর করতে লাগলেন। শচিন কত্তাও ভাবলেন একে দিয়ে তো আর পড়াশুনা হবেনা, কাজেই তাঁর কাছে থেকে বরং গানের খুঁটিনাটি শিখে নিক। তবে নিজের কাছে নেয়ার আগে তিনি সঙ্গীতের প্রাথমিক পাঠ গ্রহণের জন্য পঞ্চমকে পাঠালেন উস্তাদ আকবর আলী খাঁ সাহেবের কাছে, পাঠালেন অন্নপূর্ণার কাছে, তবলা শেখার জন্য পাঠালেন সমতা প্রসাদের কাছে। সেখান থেকে সঙ্গীতের প্রাথমিক তালিমটা সম্পূর্ণ হল, তবে কিনা গুরু হিসেবে মানতেন সলিল চৌধুরীকেই। ছেলেবেলা থেকেই অসাধারণ মাউথ অর্গান বাজাতে পারতেন আর উস্তাদের যোগ্য সহায়তায় শিখলেন সেতার বাদন। আশা ভোঁসলে তাঁকে প্রথম দেখেন যখন, পঞ্চমের বয়স মাত্র পনেরো। মাথায় তেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করতেন বলে বারো বছরের কিশোর ভেবে বসেছিলেন। "ন দো গিয়ারা" চলচ্চিত্রের গানের রিহার্সেল চলছে, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই পনেরো বছরের এক কিশোর হাফ প্যান্ট পরে আশার কাছে এসেছেন একটি গানের তালিম দিতে! কুড়ি বছরের আশা তখন সাথে সাথে তাঁকে নস্যাৎ করে দিলেন এই বলে যে এমন অর্বাচীন নয়, রিহার্সেল দেবেন তো একমাত্র কত্তার কাছেই। শুনে গাল ফুলিয়ে চলে গেলেন পঞ্চম। তখনো আশার জানা হয়নি কত্তার অ্যাসিস্ট্যান্ট এই বালক যে কিনা স্টুডিয়োতে ঢোল-তবলা আর হারমোনিয়াম বয়ে নিয়ে বেড়ায়, একসময় তাঁর সাথেই তিনি গাইবেন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ গানগুলি!
ষাটের দশকের শেষে হিন্দি চলচ্চিত্ররে গান ও সুরে আধুনিকতা প্রবেশ করেছে তাঁর হাত ধরে। সত্তর দশকের শুরুর দিকে সারা বিশ্বে পরিবর্তনের জোয়ার বইছে, তরুণরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে দেশে দেশে, সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার, হিপ্পি সংস্কৃতি, নকশাল আন্দোলন! ভারতে চলচ্চিত্র কিংবা গানের জগতে তাঁর প্রভাব পরবেনা, সেইটা কিভাবে হয়? জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা মেহমুদ একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন, "ভুত বাংলা," পঞ্চম তাঁর বন্ধু, তবে সঙ্গীত পরিচালনার ভার দিতে চান শচিন কত্তাকে, কত্তা আবার ছোটখাটো ব্যানারে কাজ করতে চান না, দায়িত্ব গছিয়ে দিলেন পঞ্চমকে, মেহমুদ রাজি হয়ে গেলেন। মান্না দে গাইলেন আও টুইস্ট কারে । সিনেমা তেমন ব্যাবসা করলনা। তবে গানে এলো নতুনত্ব, শ্রোতার কাছে ঠিকই ধরা পড়ল এক উঠতি প্রতিভার উত্থান। এবার এলো "বাহারোঁ কে সাপ্নে।"সেখানেও তিনি প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রাখলেন, তবে সিনেমা যথারীতি ফ্লপ। আর তারপর এল পঞ্চমের প্রথম ব্রেক থ্রু। নাসির হোসেনের ব্যানারে প্রথম বড় মাপের কাজ। "তিসরি মাঞ্জিল।" পরিচালনা করবেন বিজয় আনন্দ। আর মুল পাত্রের চরিত্রে বিপুল সমাদৃত শাম্মি কাপুর! কিন্তু শাম্মি কাপুর শঙ্কর জয়কিশান ব্লকের ভক্ত মানুষ। বহু হিট গানের জন্ম দিয়েছে এই জুটি। একটি সমৃদ্ধ কমফোর্ট লেভেল আছে তাদের মাঝে। এইটা তিনি কিছুতেই ভঙ্গ করতে রাজী নন আর তাছাড়া ঠোঁট মেলাবেন এক অখ্যাত, অর্বাচীন ছোকরার সুরে, কদাচিৎ নয়! অনেক কথা কাটাকাটি, মান অভিমান চলল বেশ কিছুদিন। অগত্যা নাসিরের অনুরোধে গানের সুর জমা দিয়ে দিলেন পঞ্চম। নাসির অনেক অনুনয় বিনয়ের পর শাম্মিকে রাজী করালেন গান শোনানোর। আর শাম্মি যখন প্রথম শুনলেন সেই গানগুলি, অবাক হয়ে গেলেন, থমকে গেলেন! আজা আজা ম্যায় হু পিয়ার তেরা গানে এ কেমন মনমাতানো অভিনব সঙ্গীত আয়োজন কিংবা ও হাসিনা জুলফো ওয়ালি , আর ও মেরে সোনা রে গানের এ কি অদ্ভুত মেলোডি। তিনি তৎক্ষণাৎ সায় দিয়ে দিলেন নাসিরকে যে চলুক তবে পঞ্চমের সুর! আর তারপর হিন্দি চলচ্চিত্র সঙ্গীতের ইতিহাসে সংযোজিত হল যেন এক নতুন অধ্যায়!
৩
তবে ইতিহাস পরেও বলা যাবে। এক লেখাতে পঞ্চমের সঙ্গীত যাত্রা সবটুকু বলা সম্ভবও নয়। তারপরেও বলতে চাই যখন, লিখতে চাই যখন, সেটা আরেক লেখায় করা যাবে! আমার দুই বছরের বড় ভাই মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠায়, বলে, "মনি, আজ রাহুলের এক নতুন গান শুনলাম, তোমায় পাঠাচ্ছি, শোনো।" আমি ভাইয়াকে বলি, "ভাইয়া তুমি হিফাজাত চলচ্চিত্রের মুহাব্বাত তো কারতা হ্যায় গানটা শুনেছ? এই নাও।" পঞ্চম আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আজ উনিশ বছর হল। তারপরেও আমরা আজো নতুন নতুন করে তার গান শুনছি, তাঁকে নতুন করে পাব বলে তার গান বিনিময় করছি। পঞ্চম ওরফে রাহুল দেব বর্মণ কি এক শুভক্ষণে আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছিলেন জানিনা। শুধু জানি যে তাঁর সঙ্গীত, তাঁর সুর আমরা বহন করে চলেছি। আমাদের হাসি-কান্নার সঙ্গী হয়ে আছেন তিনি এবং থাকবেন!
শুভ জন্মদিন পঞ্চম! তোমার মাধবীলতার সুবাস এখনও বাতাসে ভেসে আছে, তোমার মহুয়ার মৌ আজও থেকে থেকে জমে আছে, তোমার পোড়া বাঁশি শুনে ঘরে থাকা এখনো দায়! তুমি বেঁচে থাকবে তোমার অবিস্মরণীয় সব সৃষ্টি দিয়ে। তুমি থাকবে, তুমি আছো!
মন্তব্য
কী সুন্দর করে লেখেন মনি ভাই! আমিও পঞ্চমদা'র পাঁড় ভক্ত। আমিও কলেজ পড়ার সময় ঠিক এই গানগুলোই রেকর্ড করার জন্য চিটাগং এর বড় বড় মার্কেটগুলোর এধার ওধার ঘুরে বেড়াতাম। আহা টু-ইন-ওয়ান!! আহা মধুর সেই টিডিকে ক্যাসেট যুগ!! আহা ক্যাসেটের ফিতে আটকে গেলে মন খারাপ খারাপ হওয়ার দিনগুলো!!
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
পঞ্চমের ফ্যান কম নেই এই উপমহাদেশে। পঞ্চম আমাদের জন্য রেখে গেছেন আধুনিক গানের এক খনি। তাঁর অনেক অজানা, অপরিচিত গান যা হারিয়ে গিয়েছিলো, সেগুলি একটু একটু করে খুঁজে বের করছেন তাঁর ফ্যানরা। নতুন কিছু খুঁজে পেলে সচলে তা জানাতে চাই। ধন্যবাদ সুমাদ্রি। তোমার সাথে তো আমার অনেক মিল রে ভাই। আর আসলেই সেই টিডিকের যুগ! ফিতে আটকে গেলে তা ছাড়িয়ে নেবার মধুর যন্ত্রণা উপভোগ! ভোলা অসম্ভব রে ভাই!
নাহ্, আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি।
কিশোর কুমার - রাহুল দেব বর্মণ আমারও প্রিয় মিউজিক আইকন। বয়সে সম্ভবত আপনার চে বেশ কিছুটা ছোট আমি, সে কারণে যে সময়ের কথা বললেন, তখনও আমি নিজে ক্যাসেট রেকর্ড করানো শুরু করিনি। তবে রাহুল এবং শচীণ- পিতা-পুত্র দুই দেব বর্মণের গানই প্রচুর শোনা হতো বাসায়। সেখান থেকেই মুগ্ধ শ্রোতা। আর নিজে একটু বড় হওয়ার পর, যখন টিউশনি করে কিছু কামাতে শুরু করলাম, সে সময় লতা-আশা-কিশোর কুমার- মুহাম্মদ রাফি সবার গানই সিডি কিনে শুনেছি।
রাহুল দেব বর্মণের সবচে বড় গুণ ছিলো (আমার মনে হয়) তার সিগনেচার মিউজিকস্কেপ। সে সময়ের হিন্দি সিনেমার গানে সুর কিছুটা বৈচিত্র্যহীণ হয়ে পড়ছিলো- রাহুল এসে সব পালটে দিলেন। রাহুল-কিশোর জুটির কতো গান যে আমার ভীষণরকমের প্রিয়, সেগুলি বলে শেষ করা যাবে না। বহু গানই স্মৃতিজড়ানো।
লেখাটার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ সবজান্তা দারুণ মন্তব্যের জন্য। উনার সিগনেচার মিউজিকস্কেপ নিয়েই বিস্তে বিস্তে লেখা সম্ভব। লেখা হয়েছেও, বই আকারে তা বেরও হয়েছে। সলিল চৌধুরী আশির দশকে একবার বলেছেন যে পঞ্চমই হলেন গত কুড়ি বছরে ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতের একমাত্র ফেনোমেনন। রাহুল উনার সময়ের চাইতে এগিয়ে থাকা একজন সুরকার। আশির দশকে যে গান হয়েছে, তা সবই তো তারই গান, একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে করা! এমনকি তাঁর পর যারা এসেছেন, বাপ্পি লাহিড়ী, আনন্দ মিলিন্দ, জতিন ললিত, অনু মালিক এমনকি এ আর রহমান, সবার "সুরেলা" গান, তাঁর গানেরই কনটিনিউয়েশন বলে মনে হয়! সুরের সঙ্গে কোনদিন এই বাপ বেটা আপোষ করেন নি। রাহুলের সঙ্গীত এখনও যেন "মিন্ট ফ্রেশ।" মনে হয় যেন কালই তা সুরারোপিত হয়েছে! এ এক অদ্ভুত ঘটনা। এমন কেন হয়, জানা নেই!
বঙ্কা, একদিন আমি আর তুমি আজিজে খুজে খুজে এদের বাপ বেটার গান কিনছিলাম।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
।।।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দারুণ আলোচনা। রাহুল দেব বর্মণের বেশ কিছু গান ঘুরে ফিরে শোনা হয়, কী আশ্চর্য এক প্রতিভা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম। উনাকে নিয়ে আরও কিছু লেখার দুঃসাহস দেখানোর ইচ্ছে আছে। দেখা যাক। আসলেই উনি এক আশ্চর্য প্রতিভা।
ইস কী সুন্দর করে যে লেখেন মনি ভাই! মুগ্ধ হয়ে তন্ময় হয়ে এক টানে পড়ে গেলাম! আমি জন্মের সাথে সাথে কিছু শিল্পীর সুর কানে নিয়ে বড় হয়েছি। আমার বাবা মা দুইজন ভীষণ রকম গানের ভক্ত। বাসায় বিভিন্ন ধরণের গান বাজতো ক্যাসেট প্লেয়ারে। তবে খুব বেশিদিন আমরা ক্যাসেট প্লেয়ার জিনিসটা পাই নি। কখনো ক্যাসেট প্লেয়ারে গান রেকোর্ডও করা হয় নি। আপনাদের সময়টা অন্য রকম ছিলো আসলেই। আমরা খুব সহজে সব পেয়ে যাই বলেই হয়ত খুব সহজেই সব ভুলে যেতে পারি। তবে শৈশবের স্মৃতিতে অমর এই সব শিল্পীদের গান উজ্জ্বল হয়ে আছে বাবা মার জন্য। যে বয়েসে বাচ্চারা ছড়া গান শেখে সেই বয়েসেই আমি মনে পড়ে রুবী রায় গাইতে পারতাম সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে!
লেখা অসাধারণ মায়াময় হয়েছে। পাঁচ তারা দিলাম
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ধন্যবাদ মেঘা। লেখা ভালো লাগছে কারণ দেখতে হবে তো লেখা হচ্ছে কাকে নিয়ে? আমি তোমাকে এও বলে রাখি যে পঞ্চমকে নিয়ে আরও লেখা হবে। তাঁর সঙ্গীতের এমন জাদু এবং এমন তাঁর সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে তাকে অস্বীকার করার কোনও উপায়ই নেই! ভারতে অসাধারণ সঙ্গীত পরিচালক অনেক আছেন। ব্যাপক তাঁদের অর্জন কিন্তু এই দুই বাপ বেটার মতন এত গ্রহণযোগ্যতা আর কারোর নেই। বিশাল তাঁদের ভক্ত গোষ্ঠী। বিস্তে বিস্তে প্রবন্ধ আর বই রচনা হয়ে চলেছে তাঁদের নিয়ে, আজও! তাঁরা গ্রাম বাংলার সহজ সরল সুরকে এনে বসিয়ে দিয়েছেন তাঁদের শিল্পে। কোনদিন জটিলতার চর্চা করেন নি। আর তাই আজও তাঁদের গান আমরা শুনি। আমাদের মনোযোগ হরণ করে, কেড়ে নেয়। আধুনিক সঙ্গীতকে তাঁরা এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যাকে আর টেনেটুনে নামানোও সম্ভব নয়!
আমি ব্যক্তিগতভাবে রাহুলদা'এর চেয়ে ওনার বাবা শচীন কর্তার গান বেশি পছন্দ করি, তাই বলে অবশ্য উনি ম্লান হয়ে যান না, উনিও আমার অনেক শ্রদ্ধেয়। লেখা ভালো লাগলো
_______________
ফরহাদ হোসেন মাসুম
মাসুম ভাই, আমি প্রায়ই এই তুলনাটা শুনি। আমার নিজের কাছে কত্তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতের রাজা মনে হলেও পঞ্চমকে জ্ঞান করি তাঁর সুযোগ্য যুবরাজ হিসেবে। আসলে দুই জিনিয়াসের তুলনা হয়না। দুজনাই সহজ সঙ্গীতের চর্চা করেছেন জীবনভর। সুরটাকে সরল রেখে নানান ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করেছেন দুইজনই। দুজনাই সঙ্গীতের জগতে নমস্য মানুষ। প্রণাম জানাই দুজনকেই! ধন্যবাদ পুনরায়।
চমৎকার লেখা মণি ভাই, পুরাই হিট!
খুব ভাল লাগলো, সেই সাথে প্রিয় কিছু গান শুনতে শুনতে মন খারাপ হয়ে গেল উত্তরের রাতে, মেরি ভিগি ভিগি সি-
facebook
শুধু মনে পড়ে রুবি রায়? আর গানগুলি শুনবিনা? পঞ্চম আসলেই রকস রে!
ভাল লাগলো লেখাটা। আমিও তাঁর ভক্ত কিশোর বয়স থেকে। তাঁর সব গানই ভাল লাগে, তবে অসাধারন লাগে পাড়োশন এর কিশোর-মান্না যুগলবন্দী "এক চাতুর নার বাড়ি হোসিয়ার", যতবার শুনি ভাল লাগে। মনে হয় আর কি কেউ পারতো এমন একটা গানের জন্ম দিতে?
আব্দুল্লাহ এ এম
চাতুর নার গানটি নিয়ে মান্না দের সাথে পঞ্চমের রাগ অভিমানের ব্যাপারটা কি জানা আচে আপনার, মামুন ভাই?
না, জানা নেই। কি ঘটেছিল?
আব্দুল্লাহ এ এম
চমৎকার লেখা।
শেষ হয়ে গেল বলে একটু আফসোসই হচ্ছে।
গান শিখিনি কখনো বলে আফসোস হয় এখন। খারাপ করতাম না বোধহয়। গানের মানুষদের ঈর্ষাই।
প্রখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী 'কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়' বইতে শচীন দেববর্মণ আর পঞ্চম দুজনকে নিয়েই অনেক কথা আছে। আসলেই অসাধারণ প্রতিভা ছিলেন। সঙ্গে মনে পড়ে মীরা দেববর্মণকেও। কর্তার অনেক বিখ্যাত গান তাঁরই লেখা।
লেখায় পাঁচ তারা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পঞ্চম কে নিয়ে লেখার মুশকিল হল, যতই লিখি, লেখা আর ফুরায়না! এত কিছু আছে তাঁকে নিয়ে লেখার, এত গান আছে শোনাবার, এক লেখায় তা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, একটু একটু করে তাঁর সঙ্গীত যাত্রার বর্ণনা সম্ভব। আর কে না শচিন কর্তা আর পঞ্চমকে নিয়ে লিখতে না চাইবেন! তাঁরা তো আধুনিক গানের রাজা মহাধিরাজ! তিথিডোর, পুলকের এই বইটির পিডিএফ ফরম্যাট পাওয়া যায়?
ঠিকাছে, পেলে জানাব।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হুমম ! সঙ্গীত আর চিত্রকলা যে হাত ধরাধরি করে সে কি আর বলতে হয় !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আর কথাসাহিত্য? সেটি বুঝি পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়? যদিও এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ওই লাইনটা আমার জন্য নয়! বোদ্ধা নই, বিশেষজ্ঞ নই। শুধুই শ্রোতা, দর্শক আর পড়ুয়া। কিন্তু সচলে আসার পর মনে হচ্ছে, লিখিই না যা শুনেছি, যা দেখেছি, যা পড়েছি। আপনিই তো বলেছিলেন, মনে আছে? তবে কবিতা ধরে ধরে কিভাবে মনোজ্ঞ আলোচনা হতে পারে, তাঁর একটা কৌশল আপনার কাছ থেকে আমার শিখতে হবে দাদা। এবার এসে শিখবো।
আপনি খুব ভালো লেখেন। সচলের ভালো লেখকদের মধ্যে আপনার স্থান প্রথম সারিতে। সে যে কোন বিষয়ই হোক না কেন? আপনার লেখনীর এমনই গুন, যে মুগ্ধ পাঠককে টেনে নিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত, মাঝ পথে থামবার জো থাকেনা। লিখতে থাকুন।
জীবনটা তো খুব অনিশ্চিত, পরে যদি আর বলা না হয়! তাই!
--------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ। দুই দিন নেট থেকে বিযুক্ত ছিলাম। আপনি অনেক চমৎকার কমপ্লিমেন্ট দিলেন আপু। কিন্তু আমি কি তাঁর যোগ্য? লিখব। আপনারা বলছেন। না লিখে পারা যায়? লিখব। পরে যদি আর না লেখা হয়!
খুব সুন্দর লেখা। আপনার লেখা যেমন হয় - মনে হয় যেন আপনার আবেগ, ভালবাসা সামনে থেকে দেখছি, ছুঁয়ে বুঝতে পারছি।
হ্যাঁ, এই বাপ ব্যাটার কোনো তুলনা নেই। আমার বাবা-মা, আত্মপরিজন সকলেই আমার স্মৃতি যতদিন পিছনে যায় তখন থেকেই শচীন-কত্তার গানের কোনো-তর্কের-অবকাশ-না-রাখা ফ্যান (তাঁদের আমলে ফ্যান-এর ধারণাটা ছিল না, কিন্তু সেটাই ছিলেন তাঁরা)। আমি সেই গুণকীর্তনে প্রভাবিত হয়ে বড় হয়েছি। ফলে রাহুল-এর আবির্ভাব-এর সময়ে তাঁকে ততটা মনের ভিতর-এ নিইনি। সব সময় পিতা-পুত্রর একটা এখন-বুঝি-বেঠিক তুলনায় তাঁকে মর্মে পেতে খানিকটা দেরী হয়ে যায়। তারপর নানা কারণে বছর কয়েক গান শোনা খুব কমে গিয়েছিল। এর পরে আবার যখন শুনতে শুরু করলাম তখন প্রথম থেকেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম আর অবাক হয়ে দেখলাম যে সেই মুগ্ধতার মাত্রা তাঁর বাবার জন্য যে মুগ্ধতা আছে তার থেকে কোন অংশেই কম নয়! যত দিন গেছে, আরো গভীর হয়েছে পঞ্চম-এর সুরের, তার মিউজিকস্কেপ-এর প্রতি আমার আকর্ষণ, অনুরাগ। আর উত্তরসুরীদের কাজের মধ্য দিয়ে তিনি তো আজো রীতিমতো প্রবহমান, জীবন্ত।
- একলহমা
ধন্যবাদ। সিরিজ একটা করতে বসেছি। ঘষামাজা চলছে ব্যাপক। পিতা পুত্র আসলেই বস।
দারুণ একটা লেখা। এই পোস্টটা বাঁধায়ে রাখতে হবে। সিরিজ করে ফেলেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই। সিরিজ করতে চাইছি। পঞ্চমকে নিয়েই যদি না লিখি, তাহলে কেম্নে কি, বলেন?
আমার কাছে একটা এমপিথ্রি আছে Tribute To A Burman Legends
বাপ-ব্যাটা মিলিয়ে প্রায় শ দুয়েক হিন্দি গান।
জোসসস
বাহ, দারুণ তো? পঞ্চম দুই হাজারের ওপর গান বেঁধেছিলেন। কর্তার হাজার খানেক হবে? তাঁর মধ্যে মাত্র দুইশো? আমরা আরও ছুপা রুস্তমের সন্ধানে আছি ভাই।
আপনি যে ভালো লেখেন, আপনার কমপ্লিমেন্ট মাথা পেতে নিলাম অপু ভাই।
দারুণ লাগলো।
আপনার লেখাগুলো পড়ছি। সচল আরেকজন ভালো লেখক পেলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন