পঞ্চমী সুরে

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৭/২০১৩ - ১০:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

R & S

কর্তা গাইছেন, তানপুরায় সঙ্গত দিচ্ছেন পঞ্চম।( ছবিটি নেট থেকে সংগৃহীত)

"উনি এমন একজন মানুষ যার ভেতর জীবনটা যেন ঠেসে ভরা ছিল। উনাকে আপনি যেমন হারমোনিয়াম থেকে টেনে তুলতে পারবেন না তেমনি ফুটবল ম্যাচ থেকেও উঠাতে পারবেন না, এই ধরনের যোগ ছিল তাঁর জীবনের সাথে .........।" - গুলজার

" খুব বন্ধু মানুষ ছিলেন, তাঁকে আপনি সম্পর্ক দিয়ে বাঁধতে পারবেন না, ও যেন ছিল একটা পাখি, কেবল উড়ত, তাঁকে বেধে রাখা সম্ভব ছিলনা-" আশা ভোঁষলে

"উনি ছিলেন তুফান, ভগবানের বরদান নিয়ে এসেছিলেন।"- পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া

"যত যত সময় যাচ্ছে, আমার এমন মনে হয় যে আরডি বর্মণের কদর মানুষের মাঝে দিন দিন বাড়ছে। বড় মাপের মানুষের চিহ্নই বুঝি এমন! " - জাভেদ আখতার

পঞ্চম জন্মেছিলেন ঘোর বর্ষায়। সন ১৯৩৯, শচিন কর্তা তখন বাংলার নামকরা কণ্ঠশিল্পী। ১৯৩৪ সালে বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স, যার উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, সেই প্রতিযোগিতায় বাংলা ঠুমরী পরিবেশন করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। মান্না দের কাকা, বাংলায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পুরোধা, কেসি দের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন প্রশিক্ষিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। পঞ্চমের জন্মের পরপর বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও সুর দিতে শুরু করেছেন। বোম্বেতে তখনও যাওয়া হয়নি তার। বোম্বে থেকে প্রথম ডাক পড়ল ১৯৪৪ সালে। প্রথম দিকে আসা যাওয়ার ওপর ছিলেন। বোম্বের বানিজ্যিক বোঝাপড়া এবং গান নির্মাণের সীমাবদ্ধতা তাঁকে এক সময় ক্লান্ত, বিভ্রান্ত করেছিল, একে একে বেশ কিছু সিনেমা ফ্লপ করল, ভেবেছিলেন এ জগত তাঁর জন্য নয়, ভেবেছিলেন কলকাতায় ফিরে আসবেন কিন্তু দাদামনি অশোক কুমারের পিড়াপিড়িতে তা আর হল কই! অশোক কুমারের মশাল এবং ১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শবনম চলচ্চিত্রের গান জনপ্রিয় হবার পর বোম্বেতেই পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করলেন। ত্রিপুরা রাজবংশের এই যুবরাজ যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেছেন, গানের মাঝে সঁপে দিয়েছিলেন তাঁর জীবনের উঠোন। গান আর সুর ছাড়া আর কিছু জানতেন না, অন্য কিছু চিনতেন না! তাঁর এই গানের রাজত্বে আলো হয়ে এলেন পঞ্চম, শচিন-মিরার একমাত্র পুত্র সন্তান। পঞ্চমের নামটিও নাকি কর্তারই দেয়া। একদিন কর্তা হারমোনিয়াম বাজিয়ে নিজের মনে গান গাইছিলেন বাসায়, আর আরেক ঘরে তাঁর শিশুপুত্র প্রায় প্রায় কেঁদে উঠছে, হঠাৎ কর্তার মনোযোগ গেল শিশুর কান্নার মাত্রার ওপর, বাচ্চার কান্না বরাবর ওই সারগামের পা তে এসে আটকে যায় কেন! সেখান থেকেই তিনি নাকি তাঁর সন্তানের নাম রেখেছিলেন পঞ্চম!

মাত্র নয় (সাত?) বছর বয়সে পঞ্চম সুর দেন তাঁর প্রথম গান, অ্যায়ে মেরি টৌপি পালাট কে আ আর দাদা বর্মণ 'ফান্টুস' চলচ্চিত্রে এই গান সংযোজন করেন। নয় বছরের কিশোর পঞ্চম তখন তাঁর নানির সাথে কলকাতায় থাকতেন। ভীষণ রাগ করে একটি চিঠি নাকি লিখেছিলেন তিনি তাঁর বাবাকে। বাবার এই চুরি করাটা নাকি তিনি মেনে নিতে পারেন নি! বাবা কিভাবে সন্তানকে ম্যানেজ করেছিলেন, তা অবশ্য অজানা। কিন্তু বাবা ঠিক বুঝেছিলেন যে আছে, তাঁর পুত্রের মাঝে গান আছে!

কলকাতায় নানির কাছে পঞ্চমকে রেখে মিরার সাথে কর্তা বোম্বেতে থাকতেন। পঞ্চমের নানি সেই আদ্দিকালের গ্র্যাজুয়েট। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁর। কিন্তু নানির কাছে থাকা অবস্থায় পড়াশুনাটা কেন যেন হলনা পঞ্চমের। কর্তা অগত্যা তাঁকে বোম্বেতে নিজের কাছে নিয়ে এলেন। গানের প্রতি আগ্রহ দেখে বানিয়ে দিলেন তাঁর স্টুডিয়োর অ্যাসিস্ট্যান্ট, তখন তাঁর বয়স মাত্র পনেরো । আরেকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন তাঁর, জয়দেব। শচিন কর্তা পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই সর্ব ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরকার। হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং লোকসংগীতকে অনুকরণীয় দক্ষতায় ফিউশন করে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে শুরু করেছেন। শুরুর দিকের কষ্টদায়ক যাত্রা পার করে তিনি তখন চলচ্চিত্র সঙ্গীতের এক নয়া অবতার। ভারতের বড় বড় সব ব্যানার তাঁর সময় পাবার জন্য অধীর। প্রথমে অশোক কুমার এবং গুরু দত্ত, এরপরে বিমল রায়, শক্তি সামন্ত, দেব আনন্দের নবকেতন ব্যানার- সবার গানে সুর দিয়ে তিনি নিজেকে সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন। তাঁর স্টুডিয়োতে কড়া শাসন। রিহার্সেল ছাড়া গান হয়না। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে সেই রিহার্সেল। তাঁর স্টুডিয়োতে গান বাজানোর জন্য নামীদামী সব সঙ্গীত সাধক লাইন দিয়ে থাকেন। এভাবেই জয়দেব ছাড়াও শিক্ষানবিশ হিসেবে আছেন রবীন্দ্র জৈন, মিউজিক এ্যারেঞ্জার হিসেবে আছেন লক্ষ্মীকান্ত এবং পিয়ারেলাল , গীতিকার হিসেবে আছেন মাজরুহ সুলতানপুরি, শৈলেন্দ্র, সাহির লুধিয়ানভি সাহেব, বিমল রায়ের হাত ধরে তাঁর গানের মেহফিলে আসেন তরুণ গুলজার, হেমন্ত কুমার কিংবা সলিল। এ যেন এক চাঁদের হাট। সুর এবং গান যেন মিলিয়ে দিয়েছে সঙ্গীতের এইসব সারথীদের।

আর এরই মাঝে চলছে পঞ্চমের গ্রুমিং। স্টুডিয়োতে দুষ্টুর শিরোমণি ছিলেন। সুযোগ পেলেই জোক করতেন সবার সাথে, আড়ালে সিগারেট ফুঁকতেন, অসম্ভব মেশার ক্ষমতা ছিল তাঁর। হ্যাংলা পাতলা কিশোর পঞ্চমকে একবার কথা না শোনার জন্য গুরু দত্তের সামনে বেশ সজোরে বকাই দিয়ে ফেললেন কর্তা। দুষ্টু কিশোর গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে গেলেন স্টুডিয়ো থেকে। গুরু দত্ত সাহেব পড়লেন বিব্রতকর অবস্থায়। কর্তা পরে বলেছিলেন তাঁর স্টুডিয়োতে সবাই সমান, নিজের পুত্র বলে পঞ্চম বাড়তি সুবিধা কেন পাবে? ভুল করলে শাসন পাবে, নইলে শিখবে কিভাবে? বোঝাই যায় নিরাপদে ছিলেন পঞ্চম। যাঁর বাবা হন স্বয়ং শচিন কর্তা, তাঁর আর কি লাগে? অসাধারণ ডিটেইলসের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর কর্তার। সীমিত যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যাবহার করে সুরের সাধনা করেছেন সারাটা জীবন। চেয়েছেন সুর থাকুক সহজ। বলতেন, যে গান শুনে তাঁর বাড়ির ভৃত্য গুনগুন করে গাইবেনা, সেই গানে তিনি সুর দিতে চান না। কম চলচ্চিত্রে সুর দিতেন। খুঁতখুঁত স্বভাব তাঁর। চলচ্চিত্রের কাহিনী পছন্দ না হলে কাজ করতেন না। সেরা শিল্পী না পেলে কাজ করতেন না। ভীষণ মুডি, ঠোঁটকাটা। মুকেশের সঙ্গীত প্রতিভা খারিজ করে দিয়েছিলেন! মান অভিমানের কারণে দীর্ঘ চার বছর লতার সাথে কাজ করেন নি! আনকোরা নতুন শিল্পী কিশোর কুমারকে প্রায় এক হাতেই প্রতিষ্ঠিত করে ছেড়েছেন তাঁর সুরের দরবারে।

আর এই সবই কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করার বিরল সৌভাগ্য পেয়েছিলেন পঞ্চম। বাবার স্টুডিয়োতে বাবার অনুপস্থিতিতে তিনি জ্যাম সেশনের আয়োজন করতেন। সেখানে নানান ধরনের নতুন নতুন সঙ্গীতের চর্চা চলত, চলত নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা। এধরনের জ্যামিং নাকি এর আগে ভারতবর্ষে আর কোথাও হয়নি! তবে একটা ভিন্ন ব্যাপার মনে হয় এখান থেকে খানিক আন্দাজ করা যায়। আমরা পঞ্চমের গানে একটা প্রধান যে গুন সনাক্ত করতে পারি, তা হল তাঁর তাল, লয় এবং ছন্দের ওপর অসাধারণ দখল। এবং এ নিয়ে সারা জীবন তিনি অগুনতি এক্সপেরিমেন্ট করেছেন, জন্ম দিয়েছেন অজানা, অচেনা এমন এক ছন্দের জগত যাকে অতিক্রম করা প্রায় দুঃসাধ্য! এইযে তাঁর এই দখল, তা সম্ভবত এইসব বিচ্ছিন্ন জ্যাম সেশন থেকে একটু একটু করে গড়ে উঠেছিলো। আশা বলছেন যে তিনি পঞ্চমের নিজ সুরে প্রথম যে গানটি গেয়েছেন, সেই গানটি থেকেই তিনি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন, যে ভারতবর্ষ এক বিরল প্রতিভা প্রসব করেছে। গানটি ছিল 'পাতি পাত্নি' চলচ্চিত্রের, মার ডালেগা দার্দ এ জিগার এর দুরূহ ছন্দ আশাকে বাধ্য করেছিল সাধারনের বাইরে আরেকটু বেশি এফোর্ট দিতে!

তবে 'পাতি পাত্নি' চলচ্চিত্রই কিন্তু আশার গাওয়া পঞ্চমের প্রথম সুর নয়! আশা পরে জেনেছেন যে রিহার্সেলে বাবার অনুমতিক্রমে পঞ্চম যেসব গানের তালিম দিতেন সেগুলি নাকি তাঁরই সুর করা। এই গানগুলির মধ্যে ছিল, পেয়িং গেস্ট এর ছোড় দো আঁচাল, তিন দেবিয়াঁআরে ইয়ার মেরি র , এমন আরও কিছু মন মাতানো গান। ১৯৫৮ সালে গুরু দত্ত সর্বপ্রথম তাঁর ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্রে সুরারোপ করবার জন্য পঞ্চমকে মনোনীত করেন, পঞ্চমকে তখন পায় কে? মাত্র উনিশ বছর বয়সে জীবনের প্রথম ব্রেক তাও আবার গুরু দত্তের প্রযোজনা! দুইটি গানও রেকর্ডিং হয়ে যায়! কিন্তু অজানা এক কারণে চলচ্চিত্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে ভীষণ আশাহত হন পঞ্চম। গুরু দত্তের চলচ্চিত্রে সুর দেয়া আর হয়না তাঁর। তবে দমে জান না তিনি। মনোযোগ দিয়ে বাবার সাথে কাজ চালাতে থাকেন।মাউথ অর্গান বাজানোর সূত্রে 'সোলভা সাল' চলচ্চিত্রেরহ্যায় আপনা দিল গানে তাঁর বাজানো ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ষাটের দশকের শুরু থেকেই কর্তা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এইসময় অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকে ফিনিশিং টাচ দেয়া কিংবা রিহার্সেলের দায়িত্ব পঞ্চম এবং অন্যদের ঘাড়ে এসে পড়ে।

১৯৬১ সাল পঞ্চমের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ এই বছরেই তাঁর নিজের সুরারোপিত প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রের নাম 'ছোটে নবাব।' প্রযোজনা এবং পরিচালনায় কমেডি অভিনেতা মেহমুদ। চলচ্চিত্রটি আরেকটি কারণে তাঁর এবং কর্তার কাছে স্মরণীয় এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।। এই ছবির একটি শাস্ত্রীয় গান ছিলঘার আজা ঘির আয়ে যেটি গেয়েছিলেন লতা। এর আগে দীর্ঘ চার বছর কর্তার সাথে লতার মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। কি একটা গোল লেগেছিল তাঁদের মাঝে যার কারণ আজও জানা যায়না। কিন্তু সন্তানের প্রথম চলচ্চিত্র বলে কথা। একদিন কর্তা লতাকে অনুরোধ করেন,পঞ্চমের সুরে গান গাইবার। লতা তাৎক্ষনিক ভাবে নাকি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র ফ্লপ হয়, কিন্তু ছোটে নবাব লতার সাথে কর্তার নব মেলবন্ধনের নিদর্শন হয়ে থাকে।

এরপরে ১৯৬৫ সালে 'ভুত বাংলা' নামক চলচ্চিত্রে সুর সংযোজনের দায়িত্ব পান পঞ্চম। সেটিও বন্ধু মেহমুদের হোম প্রোডাকশন। বাবার স্টুডিয়োতে অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবার সময় থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট এগারোটি চলচ্চিত্রে সুর দেন পঞ্চম। ১) ছোটে নবাব- ১৯৬১, ২) ভুত বাংলা- ১৯৬৫, ৩) তিসরা কৌন- ১৯৬৫, ৪) তিসরি মাঞ্জিল- ১৯৬৬, ৫) পাতি পাত্নি- ১৯৬৬, ৬) চান্দান কে পালনা- ১৯৬৭, ৭) বাহারোঁ কে সাপ্নে- ১৯৬৭, ৮) অভিলাশা- ১৯৬৮, ৯) পাড়োসান- ১৯৬৮, ১০) পিয়ার কা মৌসাম- ১৯৬৯ এবং ১১) ওয়ারিশ- ১৯৬৯, এর মাঝে ব্যাবসা সফল হয় মাত্র তিনটি চলচ্চিত্র, পাড়োসান, তিসরি মাঞ্জিল এবং পিয়ার কা মৌসাম। ১৯৬৬ সালে তিসরি মাঞ্জিলের এমন বিপুল জনপ্রিয়তার পরেও তিনি পরবর্তী চার বছরে অর্থাৎ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কাজ পেয়েছিলেন মাত্র ছয়টি চলচ্চিত্রে। এইটা একটু অদ্ভুত লাগে। এর একটা কারণ বোধ হয় শচিন কর্তার তুমুল জনপ্রিয়তা। শচিন কর্তা গাইড এবং আরাধনার পর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করছিলেন। বিশেষ করে আরাধনা তাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। কাজেই প্রয়োজকরা তাঁর দুয়ারে ধর্না দিতে লাগলেন, পুত্র রইল আড়ালে। কিন্তু অনেকেই জানতেন না আরাধনা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত আয়োজনের মাঝপথে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কর্তা, রফির কণ্ঠে দুটি গান রেকর্ড করার পর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। সেই সময় তাঁর সুর কে সমাপ্ত করার দায়িত্ব পড়ে পঞ্চমের ওপর। পঞ্চম দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই কিশোরকে দিয়ে দুটি গানের রেকর্ড করেন, মেরে সাপ্নো কি রানি এবং রুপ তেরা মাস্তানা । অনেকে বলেছেন আরাধনা চলচ্চিত্রের অনেক গান সুর দিয়েছেন পঞ্চম নিজে। যদিও এই ব্যাপারে পঞ্চম নিজে কখনও মুখ ফুটে কিছু বলেন নি! যাই হোক, তখনও একমাত্র তিসরি মাঞ্জিল ছাড়া অন্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে পঞ্চম নিজের স্বাতন্ত্র্য নির্মাণ করতে পারেন নি। ছোটে নবাব চলচ্চিত্রের ঘার আয়া ঘির আয়ে, ভুত বাংলার আও টুইস্ট কারে, তিসরা কৌন এর পিয়ার কা ফাসানা , চান্দান কা পালনার শারাবি শারাবি মেরা নাম, বাহারোঁ কে সাপ্নে-র কিয়া জানু সাজান, আজা পিয়া তোহে , চুনরি সাম হাল গোরি , অভিলাশার ওয়াদিঁয়া মেরা দামান , পিয়ার হুয়া হ্যায় জাবসে , পাড়োসান এর মেরে সামনে ওয়ালি খিড়কি, ক্যাহেনা হ্যায় , এক চাতুর নার এবং ম্যায় চালি ম্যায় চালি , পিয়ার কা মৌসাম এর তুম বিন জাঁউ কাঁহা এবং নি সুলতানা রে এই গানগুলি শ্রোতারা পছন্দ করেন ঠিকই কিন্তু একটু ভালোমতন শুনলে মনে হয় যে তিনি যেন পিতার প্রভাব থেকে তখনও নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি।

পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে তিসরি মাঞ্জিল এর আগ পর্যন্ত সময়টুকুকে পঞ্চমের শেখার সময় হিসেবেই ধরে নেয়া যায়। এটা পঞ্চমের গড়ে ওঠার সময়। আমার মনে হয়, এই সময়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিলেন আর সেটি হয়ত এসেছিল সলিল চৌধুরীর হাত ধরে! সলিল কে পঞ্চম গুরু মানতেন। কিন্তু কেন? এত বড় গুরু যে কিনা তাঁর বাড়িতেই রয়েছে, সলিল যার কাছে আসতেন আশীর্বাদ নেয়ার জন্য, পরামর্শ নেয়ার জন্য, আড্ডা দেয়ার জন্য, তাঁকে পাশ কাটিয়ে সলিল কেন পঞ্চমের গুরু হতে যাবেন? এর একটা কারণ বোধ করি সলিলের পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ওপর অঢেল জানাশোনা এবং তাঁর অনুপম অর্কেস্ট্রা আয়োজনের জন্য। আর ফিউশন বড় পছন্দ পঞ্চমের। পাশ্চাত্য সঙ্গীত শোনেন মনোযোগ দিয়ে। এর সুর, তাল, ছন্দ আত্মস্থ করার চেষ্টারও হয়ত ত্রুটি রাখেন নি। কিন্তু আমরা কর্তার সঙ্গীতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ব্যাবহার সেভাবে দেখিনা। যা শুনি এবং অনুভব করি তা হল এক সহজ সুরের সাবলীল চর্চা, আর এটাই কর্তার বৈশিষ্ট্য। তাঁর গানে পাশ্চাত্য সুরের বিট ভিত্তিক ঝংকার নেই আছে ভাটিয়ালি গানের নিরন্তর আবেগ। ফিউশন কর্তা যেটা করেছেন সেটা হল ফোক সঙ্গীতকে সর্বজনসমাজে হাজির করা যা তাঁর আগে কেউ সফলভাবে করতে সক্ষম হয়নি। ক্যাবারে তিনিও করেছেন, কিন্তু তাও অনেক পরে।

সারগাম এবং তালের ওপর অসাধারণ দখল ছিল পঞ্চমের। এর কিছুটা ছিল প্রাকৃতিক আর বাকিটা তিনি রপ্ত করেছিলেন কর্তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে থাকার সময়গুলোতে। স্টুডিয়োতে থাকবার সময় সেই সময়গুলোতে উনি সময় নষ্ট করেন নি বলে মনে হয়। তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর নিজের স্বতন্ত্র একটা পরিচয় দরকার। এইজন্যই তিসরি মাঞ্জিল চলচ্চিত্রে আমরা কিছু দ্রুত গতির গান শুনতে পাই। তিসরি মাঞ্জিল চলচ্চিত্রের সবচাইতে দুরূহ গান ছিল আজা আজা ম্যায় হু পিয়ার তেরা তেরা গানটি। এই গানে মুখ শেষ হবার পরপরই আ আ আজা নামক একটি বিট ভিত্তিক ছন্দ গাওয়া হয়, পুরো গানকে যা ভিন্ন এক মাত্রায় নিয়ে যায়। বড় সহজ নয় তা গাওয়া। পঞ্চম খানিক সন্দিহান ছিলেন যে রফি এবং আশা তা বুঝতে পারবেন কিনা কিংবা গানটি আসলে কেমন হচ্ছে, ভালো হচ্ছে তো? আশাও খানিক দ্বিধা দ্বন্দ্বের ভেতর ছিলেন। শেষ মেশ লতার কাছে গেলেন পরামর্শের জন্য। লতা আশাকে বললেন পঞ্চম ঠিক যা চাইছে সেভাবে গাইতে! আশা গেয়েছেনও সেভাবেই আর তারপর যা সৃষ্টি হল তা ছিল এক অনাস্বাদিত অভূতপূর্ব গান। আপনারা কেউ যদি রফি আর আশার কণ্ঠে গানটি শোনেন বুঝতে পারবেন আশার কারণেই এই গান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে! এই চলচ্চিত্রের সব কটি গানই বিট বেজড। প্রত্যেকটি গানে আধুনিক যন্ত্রের প্রয়োগ করা হয়েছে। এবং সব কটিই ভীষণ অরিজিনাল। আর তখন এই ধরণের ব্রাস ওরিয়েন্টাল গান ছিল ভারতে নতুন, একটু জ্যাজ, একটু রক, কেউ তা আগে এ নিয়ে তেমন কাজ করেন নি। গানগুলি শুনে কর্তা খুব সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তবে খানিক সন্দেহও কি দানা বেঁধেছিল তাঁর মনে?

(চলবে)


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

হুমম ! একেবারে পঞ্চমাভিধান ! চলুক---

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা। আপনি পাশে আছেন বলে ভরসা পাই।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

চলুক

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সুমিমা। ভালো থাকুন। শুভেচ্ছা।

লোকাল‌য় এর ছবি

সুখপাঠ্য এবং তথ্যভিত্তিক। ধন্যবাদ।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ লোকালয়। শুভেচ্ছা থাকছে।

ফাহিম হাসান এর ছবি

দারুণ লাগছে মনিদা। পুরানো দিনের হিন্দি গানের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ আছে, পোস্টের সুযোগে আবার কিছু গান শুনে উদাস হয়ে গেলাম।

"নেট থেকে সংগৃহীত" না বলে পোস্টে লিংক যোগ করে দিলে বা সূত্র উল্লেখ করে দিলে ভালো হয় হাসি

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম। তোমার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করি। প্রেরণা যোগায় তোমার দুটো কথা। ছবি যুক্ত করার আগে সামনে থেকে তোমার পরামর্শ মেনে চলব। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

জমেছে জোর! হাসি
পরের সংখ‌্যার জন‌্য অপেক্ষায় রইলাম।
- একলহমা

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ এক লহমা। আসবে। দ্রুতই আসবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু
অসাধারণ পোস্ট। চলুক দ্রুতগতিতে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মনি শামিম এর ছবি

চলুক তবে নজ রুল। আমার তো পঞ্চমকে নিয়ে লিখতেই ভালো লাগছে। লেখা এগুচ্ছেও তরতরিয়ে। আপনাদের যে পড়তেও ভালো লাগছে, সেই তো ম্যালা।

সবজান্তা এর ছবি

আমি ঠিক যা যা বলতে চেয়েছিলাম, এসে দেখি ফাহিম হুবহু তাই বলে দিয়েছে হাসি

লেখা চলতে থাকুক, দারুণ একটা সিরিজ হবে কিন্তু!

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সবজান্তা। সিরিজই মনে হয় করতে হবে। পঞ্চমের গান এবং তাঁর জীবনের অনেক খুঁটিনাটি তুলে ধরার ইচ্ছে রাখি। জানিনা তা আদতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। অনেকদিন ধরে মাথার ভেতর পঞ্চমকে নিয়ে লিখব, এমন একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। নেটে অনেক তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে এখন, অনেক হারিয়ে যাওয়া গানও মিলছে তাঁর ভক্তদের গবেষণার কারণে। কাজেই অনেক কিছু লেখা সম্ভব পঞ্চম নিয়ে এখন। এবং লিখব একটু একটু করে। পাশে থাকুন। তথ্যে ভুল-ভ্রান্তি কিংবা সংশয় থাকলে আওয়াজ দেবেন তৎক্ষণাৎ।

সুমাদ্রী এর ছবি

ওহ মনিদা, কী সুন্দর একটা লেখা!! 'আরাধনা'র ' রুপ তেরা মাস্তানা' ' মেরে সাপ্নেকা রাণী' গান দুটোর সুর কেন জানি মনে হয় পঞ্চমেরই করা, শচীণ কর্তার ঐ ধাঁচের সুর শুনি নি কখনও।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সুমাদ্রি। আসলে ওই দুটো গানে কে সুর দিয়েছিলেন এটা আমাদের পক্ষে জানা মুশকিল। পঞ্চম নিজে কখনও তা স্বীকার করেন নি। কাজেই কোনও সিদ্ধান্তে আসা হঠাৎ করে সম্ভব নয়। দেয়া নেয়ার পালা পিতা পুত্রের মাঝে হয়েছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা কিভাবে, কখন, কেন এইসব প্রশ্নের উত্তর সহসা মেলা কঠিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
ইসরাত

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

চলুক ... দৌড়াক...

মনি শামিম এর ছবি

চলুক তবে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
ইসরাত

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ভালো লেগেছে। উত্তম জাঝা!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ।

আয়নামতি এর ছবি

চমৎকার একটা পোষ্ট চলুক শচীন বর্মণ কে 'কর্তা' বলা হতো কেন? উদ্ভট প্রশ্ন না?
হলে হোক, বুঝতে হলে জানতে হবে, ঠিক না? সাথে পুতুল নিয়ে পুতুলটা আপনার মেয়ে নাকি? সুইটু কিউটু খুব!

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি। আসলেই তো, শচিন দেব বর্মণ কে কর্তা কেন বলা হত বা হয়? নেট ঘেঁটে এর উত্তর পাচ্ছিনা এখন পর্যন্ত। অনুমান করি যে এটা আসলে একটি বিশেষণমূলক ডাক। আমরা যেমন লক্ষ্মী বলি, বলি সোনামণি কিংবা বাবু, কর্তাও ঠিক তেমন একটি স্রদ্ধা কিংবা সম্মানসূচক ডাক হতে পারে। শচিন ছিলেন ত্রিপুরার মানুষ। সেখানে শ্রদ্ধেয় জনদের কর্তা ডাকার চল আচে কিনা তা জানিনা।

পুতুলটা আমার সাত বছরের কন্যা। আদরে আব্দারে চাঞ্চল্যে বাবাকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে এই সাত বছর বয়েসে। জানিনা বাকি দিনগুলিতে কি অপেক্ষা করছে? আপনার কমপ্লিমেন্ট পৌঁছে দেব তাঁর কাছে। ধন্যবাদ।

কৌস্তুভ এর ছবি

শচীন দেব বর্মণ ছিলেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের রাজকুমার, সম্ভবত বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে। ফলে তাঁর রাজপদ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তবে তাঁদের জন্য আলাদা সম্পত্তি মাসোহারা ইত্যাদি এবং 'রাজা' না হলেও আলাদা খেতাব ছিল। তাঁদের সম্মান করে 'কর্তা' ডাকা হত। এইরকমই কিছু একটা পড়েছিলাম ওনার জীবনীতে। বইটা তো কাছে নেই নইলে দেখে বলা যেত।

মনি শামিম এর ছবি

বই না থাকলেও চলবে। জানা তো হল 'কর্তা' নামের কার্যকারণ। এই অনেক।

আয়নামতি এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া! দীর্ঘদিন ধরে আপনার পুতুল পরীটি আব্দারে প্রাণচাঞ্চল্যে বাবাইয়ের জানপ্রাণ তামা তামা করে দিক দেঁতো হাসি শুভকামনা।

@কৌস্ত্তভ, ছোট ছেলে বলে 'কর্তা' বলা হতো, যদি মেয়ে হতেন শচীন দেব তাইলে কী উপাধি দিয়ে ভুলানো হতো হে খোকা? লইজ্জা লাগে আমার আবার উদ্ভট সব কৌতুহল। 'কর্তা'র ব্যাপারে বলার জন্য উত্তম জাঝা!

কৌস্তুভ এর ছবি

ডুপ্লি

তানিম এহসান এর ছবি

দারুণ! চলুক চলুক!

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ তানিম ভাই। গান নিয়ে চলুক আরও কথাবার্তা।

কৌস্তুভ এর ছবি

না চললে বোলোনিয়ায় ধর্মঘট লেগে যাবে।

এই ধরনের পোস্টগুলোর একটা সুবিধা হচ্ছে, অনেক ভালো ভালো গান এবং কিছু নতুন গানও একসাথে পাওয়া যায়।

মনি শামিম এর ছবি

ধর্মঘট লাগানোর দরকার নেই বাবা, এই লেখা চলবে এমনিতেই। সাইসাথে গানও যুক্ত থাকবে। ধন্যবাদ কৌস্তুভ, পড়বার জন্য। কোথাও ভুল ত্রুটি হলে শুধরে দিও।

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার। চলুক
আরো লেখা চাই।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ তিথিডোর।লেখা তো আসবে তিথি। এইজন্যই ধারাবাহিক ভাবে লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটু একটু করে পঞ্চমকে উন্মোচন করব।

তারেক অণু এর ছবি

নাহ, আপনার পোস্টগুলো আমার কাজে সমস্যা করছে, একের পর এক গান শুনতে হচ্ছে রাত জেগে!

খুবই ভাল হচ্ছে, পরের পর্ব ছাড়েন গুল্লি

নির্ঝর অলয় এর ছবি

পঞ্চমের কাজে সলিলের কাজের পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। সেটার উল্লেখ ভালো লাগল। পাশ্চাত্যের গানের ফিউশন এঁদের আগে রবিঠাকুর-ডি,এল,রায় প্রমুখ করেছিলেন। তবে জনারণ্যে জনপ্রিয়তা সলিল এবং পঞ্চমের গুণেই হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।