• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বের্নিনির খোঁজে

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০২/১২/২০১৩ - ১১:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

DSC_9327

নদীর নাম তিবের। আপেনাইন পাহাড় থেকে নেমে এসে তিরেনিয়ান সাগরে গিয়ে মিলিত হওয়া নিরীহ এ নদীটি খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে জন্ম দিয়েছে রোম নগরীর। সেইসাথে জন্ম দিয়েছে নতুন এক সভ্যতা। রোমান সভ্যতা। কিন্তু তিবেরের মতন বড় নিরীহ নয় এই সভ্যতা। সত্য যে এই সভ্যতা এগিয়ে দিয়েছে আধুনিক দর্শন, রাজনীতি। এই সভ্যতা মানুষকে উপহার দিয়েছে রিপাবলিকের ধারণা, এই সভ্যতা মানুষকে দিয়েছে আধুনিক সমরকৌশল এবং স্থাপত্যকৌশল। আবার একই সভ্যতার হাতে বলি হয়েছে মানুষের চেতনা, স্বাধীনতার আকাংখা। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, হত্যা, দুঃশাসনের পাথরে চাপা পড়েছে মুক্তির দুর্মর বাসনা। এই রোমান সাম্রাজ্যের দাসপ্রথার নির্মম শিকার হয়েছে কত মানুষ! এর ধর্মীয় শাসনের বলি হয়েছে কত অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা! তিবেরের তীরে রোমান সভ্যতার পরে একে একে এসেছে বাইজেন্টাইন শাসন, পাপাল ষ্টেট, এসেছে দিগ্বিদিক আলোকিত করা ইউরোপিয়ান রেনেসাঁস, পুঁজিবাদ। কিন্তু তিবের নদী রয়ে গেছে ঠিক তেমনই।

তিবের নদীর ধারে জন্ম নেয়া রোম শহরে প্রতিভার অভাব হয়নি কখনো। রোমান শিল্পকলা এবং রেনেসাঁসের যুগ পেরিয়ে শিল্প নির্মাণেও চলেছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। চলেছে রিফর্মেশন, কাউন্টার রিফর্মেশন। ক্যাথলিকদের একতরফা অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে চাওয়া মানুষ শিল্পকর্মেও নতুন যুগের সুচনা করছেন। এমন সময় গত শতাব্দীর ষোড়শ শতকের শেষে এক ভ্যাগবন্ড রোম শহরে যেন উড়ে এসে জুরে বসে পাল্টে দিচ্ছেন শিল্পের ভাষা। কারাভাজ্জোর ভাষা এমনই যে তাঁর বারোকের রক্তের তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে রেনেসাঁসের সব সুন্দর, মিষ্টি মিষ্টি কামনা- বাসনা। কারাভাজ্জো রোমে এসে শিল্পের ভাষাই বদলে দিতে উন্মুখ। কিন্তু তাঁকে মেনে নেবেন, এমন প্রস্তুতি ছিলনা কারোর। তাই পাপাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট খুঁজে ফিরছে তাঁদের আস্থাভাজন কাউকে।

ঠিক এমন সময় কারাভাজ্জোর মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে রোমের মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে এক তরুণের। বারোকের যাত্রাকে একটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তিনিও কারাভাজ্জোর মতই যেন সসব্যাস্ত। তবে তাঁর শিল্পের ব্যাখ্যা ভিন্ন, শিল্পরূপের আদল ভিন্ন। ছবি তিনিও আঁকেন, তবে তার আসল কর্মের জায়গা হল মার্বেল পাথর দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ। নাম তাঁর জিয়ান লরেঞ্জো বের্নিনি। জন্ম তাঁর নেপলস, বাবার বাড়ি ফ্লোরেন্স। কারাভাজ্জোর মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। বাবা তার মোটামুটি স্বল্পখ্যাত একজন ভাস্কর্য শিল্পী। মাত্র আট বছর বয়সে এই বের্নিনি একটি ছবি এঁকে মোটামুটি তাক লাগিয়ে দিয়েছে তৎকালীন পাপাল স্টেটের এক কর্মকর্তাকে। অনেকে বলেছে, এই জিনিয়াস একদিন মিকেল এঞ্জেলোকেও ছাপিয়ে যেতে পারে! তো এইসব ট্যাগ তো অনেকেরই পিঠে লেগে যায়! ছেলেবেলায় কেউ রাফায়েল্লো,কেউ জত্তো, তো কেউবা ভিঞ্চি। বড় হয়ে গেলে তাঁদের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না! কিন্তু সৌভাগ্য বলতে হবে বের্নিনি পরিবারের। তাঁদের ঘরে বেড়ে উঠল পৃথিবীর শিল্পকলার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা একজন ভাস্কর্য শিল্পীর, মিকেল এঞ্জেলোর পর যিনি ভাস্কর্য শিল্পকে দিয়েছেন নতুন এক দিশার সন্ধান! যার হাত ধরে বারোক ভাস্কর্য পেয়েছে অমরত্বের স্বাদ!

রোম শহরে ঘুরতে গেলে কয়েকটি স্থাপনার কাছে আপনাকে যেতেই হবে। সবার প্রথমে কোলোসিয়াম, তারপর একে একে ত্রেভির ঝর্ণা, পিয়াজ্জা নাভোনা, হাদ্রিয়ামের মোল আর তারপর ভ্যাটিকান জাদুঘর হয়ে সেন্ট পিটার্স। মোটামুটি স্বল্প সময়ে, অর্থাৎ দুইদিনের রোম ভ্রমন এইভাবেই হয়ে যায়। তবে এর বাইরেও আছে কাপিতালিনে পাহাড়, পিয়াজ্জা বের্বেরিনি, সান্তো এঞ্জেলো ব্রিজ আর আছে অসংখ্য অসাধারণ সব যাদুঘর। সমস্যা হল, এক জনমে রোম দেখে নাকি শেষ করা সম্ভব নয়। আবার এখনও নাকি একে পুরোপুরি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এখনও চলেছে পুরাতত্ত্ব বিভাগের হাত ধরে নতুন নতুন খনন কাজ। দিনের রোম, রাতের রোম যে কারণে আরও বিশিষ্ট হয়ে আছে তা হল এই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ভাস্কর্য এবং ঝর্ণা। কাউন্টার রিফর্মেশনের সময় রোমের অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেগুলি পুনঃস্থাপন করতে ব্যস্ত ভূমিকা পালন করতে হয়েছে পাপাল স্টেটকে। আজো আমরা সপ্তদশ শতকে নির্মিত সেই স্থাপনারই চাক্ষুষ সাক্ষী। আর সেইসব ঝর্ণা এবং স্থাপনার অনেকগুলির নির্মাতা দুই জিনিয়াস কিন্তু একে অপরের চিরশত্রু বোরোমিনি এবং বের্নিনি।

আমি নিজে খুব সাধারণ এলে বেলে শিল্পরসিক। অনেক ভাস্কর্যের মানে বুঝতেই অনেক সময় লেগে যায়। পড়তে হয় মিথ, জেনে নিতে হয় দেব দেবীর নাম-ধাম। কোন কিছু চোখের দেখায় ভাল লাগলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তা দেখতে থাকি সবার মতন, মনে নানান প্রশ্ন জাগলে তার উত্তর খুঁজতে থাকি। মানে আর দশজন শিল্পরসিক যেমন হয়ে থাকে আরকি!

যখন প্রথম রোমে গেছি, যখন অণু টানতে টানতে নিয়ে গেছে, তখন শুধু দেখে গেছি, প্রশ্ন না করে কেবল রোম শহরের সৌন্দর্য সুধা উপভোগ করেছি। অণুই বলে গেছে, মনি ভাই, এটা এই, ওটা ওই। সিস্টিন চ্যাপেল দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি, কোলোসিয়াম দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। কিন্তু আর কিছু তেমন টানেনি, শুধু চোখের দেখা দেখে গেছি বলা যায়। কিন্তু আমার দেখাদেখির চর্চা আমুল বদলে গেলো, যখন আমি প্রথমারের মতন কারাভাজ্জোর একটি একক চিত্রকলার প্রদর্শনী দেখি পারমায় আর এই আকর্ষণের ভিত্তি আরও মজবুত হল যখন দ্বিতীয়বারের মতন রোম গেলাম, একা।

সেদিন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা কেবল হয় হয়, মাথার ওপর আকাশ ঘন নীল। তীব্র বাতাস বইছে। প্রচণ্ড শীত। রোমের রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাঁটতে হাঁটতে কেবল ঢুকেছি পিয়াজ্জা নাভোনায়। হঠাৎ একটি মূর্তি দেখে থমকে গেছি খানিক। প্রায় নগ্ন এক বিশাল এবং সুঠামদেহী জনাব কাপড়ের মতন কি একটা দিয়ে নিজের মুখমণ্ডলকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। জনাবের মতন আরও তিনটি বিশাকাল মূর্তি পাশাপাশি আছে বটে এই পুরো ভাস্কর্যে,তবে আমি বিভিন্ন বাঁক থেকে শুধু সেই মূর্তিটি দেখার চেষ্টা করছি। যেদিক দিয়েই তাকাই, মূর্তিটি যেন বারবার আমাকে কাছে ডাকে। কাপড়ের আড়ালে তাঁর মুখটুকু শুধু দেখা যায়। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মূর্তিটিকে দেখা শুরু করলাম। সুঠামদেহী এই পুরুষ কি লজ্জায় অবনত? তাঁর শরীরের চার পাশের নানান খানা খন্দ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে কি জলের ভয়ে হাহাকার করছে? নাঃ, আমার স্বল্প বুদ্ধিতে কিছুতেই বুঝতে পারছিলামনা আদতে কি ঘটছে ওখানে। কিন্তু মনে হল, কোন একটা গল্প যেন বলছে সে! তাঁর এমন বিপুল মাংশল দেহ, তারপরেও কেমন যেন এক আর্তি, তাঁর চোখটাও সে ঢেকে দিয়েছে! আমি স্তম্ভিত হয়ে দেখে যেতে থাকলাম এই অর্ধনগ্ন মূর্তিকে।

DSC_7670

পুরো পিয়াজ্জা নাভোনাকেই বিশিষ্ট করে রেখেছেন বের্নিনি তাঁর 'চার নদীর ঝর্ণা' নামক মাস্টারপিসটি দিয়ে। এই ভাস্কর্যে আমরা চারটি বিশালাকার মানবদেহ দেখি। চার রকম তাঁদের আকৃতি, চার রকম তাঁদের দেহাবয়ব, চার রকম তাঁদের মুখমণ্ডলের আকুতি। যে চারটি নদীকে তারা নির্দেশ করে সেগুলি হচ্ছে গঙ্গা, লা-প্লাতা, দানিউব এবং নীল। এই চারজন জনাব হলেন এ চার নদীর দেবতা। তো দেবতারাও দেখি নানান অঙ্গভঙ্গিতে মুখর। একজন বেশ শান্ত সৌম্য তো আরেকজন এমনভাবে উল্টে আছেন যে এই বুঝি ঘটবে তার সলিল সমাধি। যেমন গঙ্গাদেবতা দীর্ঘ এক দাড় নিয়ে বেশ নিশ্চিন্তে আছেন। বোঝা যাচ্ছে নদীর নাব্যতা ভাল, চিন্তামুক্ত তিনি। আরেকজন ঐযে বলেছি, কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে দিয়েছেন, মানে নদী হয়ত এমনই খরস্রোতা যে জলের তেজ থেকে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বুঝি এই দেবতা! আবার আরেক ন্যাড়া মাথার একজন এই বুঝি পরে গেল! মজার ব্যাপার হল, এই প্রতিটি দেবতাদের মুখে চোখে এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা চলছে যা বারোক শিল্পকলার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে এইসব ছাড়াও রয়েছে, এক ক্ষিপ্ত নেকড়ে, আছে নানান জাতের উদ্ভিদ, আছে এই চার নদীর মোহনায় সটান দাঁড়িয়ে থাকা এক ইজিপ্সিয়ান ওবেলিস্ক।

DSC_3813

DSC_7674

DSC_7675

এই চার নদীর ঝর্ণার অদূরে তাঁর আরেকটি নির্মাণ হচ্ছে 'মুরের ঝর্ণা।' সেখানে দেখা যাচ্ছে সাগর দূত ত্রিতোনের চার অবতার কি একটা বস্তু মুখে ভরে তার ভেতর থেকে জল ছড়াচ্ছেন। মুর বাবাজি দেখছি এক ডলফিনের সাথে জলক্রীড়ায় ব্যাস্ত। জানা গেছে এই মুরের ঝর্ণার ত্রিতোনগুলির নকশা বের্নিনি না আঁকালেও মাঝখানের দণ্ডায়মান মুর সাহেবকে তিনিই মূর্ত করেছেন। আবার নকশা না আঁকালেও তিন হয়ত তাঁর সহযোগীদের সাথে মিলে মূর্তিগুলি নির্মাণ করেছেন!

DSC_7685

DSC_7681

এবার চলে আসি রোম শহরের কেন্দ্রে প্রায়ন্ধকার এক প্রাচীন গির্জায়। আলো টালো প্রবেশ করেনা তেমন এর ভেতরে। বাইরে থেকে দেখতে খুব সাধারণ। ভেতরটাও কেমন বৈশিষ্ট্যহীন। তবে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে এই গির্জায়। গির্জার বাইরে রোমান ভিক্ষুকের অবস্থানও থাকবে বছর ভর। গির্জাটির নাম সান্তা মারিয়া দেল্লা ভিত্তোরিয়া। এই গির্জার পাশাপাশি আরও কয়েকটি স্থাপনা অনেক বেশী সুন্দর। তারপরেও সেগুলিতে মানুষ ভিড় করেনা। তাহলে কি আছে এই বৈশিষ্ট্যহীন গির্জায়?

গির্জার ভেতর স্বল্প আলোয় একটি ভাস্কর্যের কাছেই এই ভিড় লেগে থাকে। তবে কিনা স্বল্প আলোয় সহসাই এই ভাস্কর্যের মাহাত্ম্য বোঝা সহজ নয়। আবার এই ভাস্কর্যের গল্পটা অনেক ভিন্ন। রোমের পথে পথে যে গ্রীক মিথলজির নানান মূর্তির সন্নিবেশ দেখি তাতে দেব দেবীর শৌর্য বীর্যের আহ্বান মূর্ত হতে দেখি। দেখি অসংখ্য ঝর্ণা, দেখি অনেক ঝলমলে বিশালাকার মূর্তি। যেন এইসব দেবদেবীর বিশালত্বের কাছে মাথা ঠুকানোর জন্যই এগুলোর সৃষ্টি। কিন্তু এই গির্জার এই ভাস্কর্যটি যেন অনেক আলাদা, অন্যরকম, একটু বিশেষ রকম কিছু।

এই ভাস্কর্যে আমরা দুইটি মাত্র সাবজেক্ট দেখতে পাই। একজনকে দেখে কিউপিড বলে ঠাহর হয়। তাঁর পিঠ ডানা যুক্ত,তাঁর হাতে একটি তীর। তাঁর ডান হাতের তীরটি যেন বিদ্ধ করার জন্য উদ্যত। প্রেমের দেবতার শরীর থেকে খসে পরেছে তার পাতলা কাপড়। আলতো বাতাসে পেখম মেলেছে যেন তাঁর বস্ত্রখানি। তার চোখেমুখে পেলব এক আভা, যেন ভোগ করছেন তিনি এই মুহূর্তটি, এদিকে তাঁর ডান হাতটি নীচে শায়িত এক খ্রিষ্টান প্রার্থনাকারীর পোশাক অনাবৃত করতে ব্যাস্ত, ঠিক তাঁর বুকের জায়গাটায়। খ্রিষ্টান প্রার্থনাকারীটি একজন মহিলা। তবে মহিলার মুখভঙ্গি এমন কেন? তিনি যেন শিহরিত হচ্ছেন, তাঁর আধো উন্মলিত চোখে-মুখে স্পষ্টত শীৎকারের আভা। তাঁর পরনের ভারী পোশাক অবিন্যাস্ত, জড়সড় হয়ে রয়েছে। তাঁর হাতের আঙ্গুলে কি যেন লেপটে রয়েছে। এক ধরনের যৌন আবহে তাঁর শরীর যেন কুঁচকে উঠেছে। ভাস্কর্যের দুই পাত্র পাত্রীই কিছুটা শূন্যে উড়ে আছেন। তাঁর মানে কি প্রার্থনাকারী প্রার্থনারত অবস্থায় অপরূপ এক দেবতার সাথে মিলিত হচ্ছেন? তাঁরা কি যৌনসংগমে রত? একি কোন স্বর্গীয় প্রেম কিংবা স্বর্গীয় রতিক্রিয়া?

DSC_7638

DSC_7643

ভাস্কর্যটির দুই ধারেই আবার দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি ফিগার এই স্বর্গীয় মিলন প্রত্যক্ষ করছেন। তাঁরা সবাই নিজেদের ভেতর কি যেন বলাবলি করছেন। এমন দৃশ্যের অবতারণায় তারা কি খানিক বিব্রত? দর্শক হিসেবে আমাদের এই ভাস্কর্য দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা। এতো রীতিমতন এক যৌনকর্ম যা কিনা স্থান পেয়েছে একটি গির্জায়? এও কি সম্ভব? আর নারী প্রার্থনাকারীর শীৎকারের যে ভঙ্গিমা তা এমন নিখুঁত রূপে তুলে ধরলেন কে? এমন লাইফ সাইজ একটি মূর্তি নির্মাণের সময় মডেলই বা কে হয়েছিলেন?

bernini-ecstasy-of-st-teresa-s

bernini-ecstasy-of-st-theresa-2-s

ওপরের দুটি ছবি সংগ্রহ করেছি এই লিঙ্ক থেকে।

বলা বাহুল্য এই যুগান্তকারী ভাস্কর্যটিও বের্নিনি মশাইয়েরই কাজ।

তাই খুঁজতে বেরিয়েছি তাঁকে। খুঁজতে বেরিয়েছি রোমের অলিগলি, খুঁজতে বেরিয়েছি তাঁর প্রধান অপ্রধান শিল্পকর্মগুলি, খুঁজতে বেরিয়েছি তাঁর কবর। গত দুই বছর ধরে একটু একটু করে খুঁজে চলেছি বের্নিনিকে। নিজের ব্যাস্ত সময় থেকে খানিক সময় বের করে ৩০০ কিলোমিটার পেরিয়ে আরেক শহরে গিয়ে তাঁকে খোঁজা সহজ নয় মোটেও। তারপরেও চেষ্টা জারি আছে! তাঁর প্রধান যে ভাস্কর্যগুলি রক্ষিত আছে গ্যালেরিয়া বোর্গেজেতে, সেখানেও এইতো ঘুরে এলাম গত হপ্তায়!

কেমন ছিলেন তিনি? রোমের পথে পথে তাঁর যে অসংখ্য স্থাপনা, ভাস্কর্য, কিভাবে, কোন উৎসাহে, কার প্রেরণায় তিনি নির্মাণ করে গেছেন একের পর এক? কেমন ছিল তাঁর জীবন? কেমন ছিল তার মেজাজ, কারা ছিলেন তার শিষ্য? দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন তিনি, কেমন ছিল পাপাল স্টেটের হর্তা কর্তাদের সাথে তাঁর সম্পর্ক? যিনি কিনা এমন শিহরণ, শীৎকারের এমন বাস্তব প্রতিমূর্তি নিখুঁত ভাবে সৃষ্টি করতে পারেন তাঁর প্রেমময় জীবনই বা কেমন ছিল?

সংক্ষেপে পরবর্তী পর্বে সেগুলিকেই খানিক উন্মোচন করার চেষ্টা থাকবে। তার আগে আসছে বড়দিনে আবার রোম যাত্রায় নামতে হবে। যেতে হবে আরও দুটো গির্জায়। ততদিন চলুক মুলতবি।

পুনশ্চঃ লিঙ্কে প্রদত্ত দুটি ছবি ছাড়া বাকি সকল ছবি এই অধমের তোলা।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

=DX

[ (পপ্পন) ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যানন্দ ভাই। বাকি কিস্তি রয়েসয়ে। আর আপনার প্রোফাইল পিকটা এখন অনেক ভাল লাগছে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

:)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কৌস্তুভ এর ছবি

এই পোস্টখানা অশ্লীলতায় ভরপুর।

সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকায় বার্নিনির তৈরি করা পোপ আলেকজাণ্ডারের সমাধিটিও তো মাস্টারপিস। ওভাবে মার্বেল দিয়ে চাদর তৈরি...

মনি শামিম এর ছবি

এই অশ্লীল পোস্টের জন্য যে শাস্তি দেবে দাও। কৌস্তুভ, তোমার এই ছবিখানা দেখার পর এখন তো সেন্ট পিটার্স দৌড়াতে হবে দেখছি। কত কাজ যে বাকি। ভেবেছিলাম তিন পর্বে শেষ করব। তোমাদের জ্বালায় তা আর হবে বলে মনে হচ্ছেনা। কি দরকার ছিল এইসব চাদর টাদরের ছবি এখানে দেয়ার!

কৌস্তুভ এর ছবি

হায় হায় আপনি এতবার রোম গিয়ে সেন্ট পিটার্স দেখেননি? ওটা ত খনি! ভোরের দিকে যাবেন, তখন ভিড় কম থাকে, আর জানলাগুলো দিয়ে মূল নেভ-এ যে আলোর রশ্মি এসে পড়ে তা চমৎকার।

মনি শামিম এর ছবি

না, কৌস্তুভ, সেন্ট পিটার্স এ যাওয়া হয়েছে। অণুর সাথে গেছি, তোমার ভাবীর সাথে গেছি এইতো সেদিন। কিন্তু তুমি যে ভাস্কর্যের ছবি দেখাচ্ছ, সেটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়নি।, এমনকি জানাও ছিলনা এটি তাঁর কাজ! বের্নিনিকে নিয়ে লিখতেই বসেছি যখন, তখন তো আর ফাঁকি চলেনা, তাইনা? তুমি বোধ করি জানো, সেন্ট পিটার্স গির্জার বাইরে যে উদ্যান, তাঁর দুই ধারে প্রায় গোলাকার বৃত্তের যে অসাধারণ স্থাপনা চোখে পড়ে, তার নকশাও এই বাবাজীরই কাজ। এমনকি গির্জার ভেতরে একদম কেন্দ্রে যে উল্লম্ব একটা ব্রোঞ্জের বালদাক্কিনো (!) দেখতে পাই সেটিও তিনিই নির্মাণ করেছেন। ব্যাটার সাথে পোপদের তো হেভি খাই খাতির ছিল। সেই গল্প সামনের বার।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

পাথর কুঁদে 'কাপড়' বা 'চাদর' এর মত জিনিস বানিয়ে ফেলাটা আমাকে বিস্মিত করে সবসময়। তারচেয়েও কঠিন নিশ্চয়ই মানুষের মুখের অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তোলা।

@কৌস্তুভ দা,

এই পোস্টখানা অশ্লীলতায় ভরপুর।

=)) :D =)) ৫৭ ধারায় একটা মামলা করে ফেলি, চলেন।

ধন্যবাদ লেখককে, বের্নিনির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
শুভেচ্ছা :)

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ। ভাল থাকুন।

কৌস্তুভ এর ছবি

আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনি মামলা করে দেন, আমি কানের কাছে নীল চামড়া ইত্যাদি সর্বপ্রকার সাক্ষ্য মাত্র চার আনা মূল্যেই দিতে রাজি আছি।

মনি শামিম এর ছবি

:-?

তারেক অণু এর ছবি

চমৎকার পোস্ট, ৫ তারা।

আপনার সাথেই তো প্রথম দেখেছিলাম রোমের সেই ঝর্ণা। আচ্ছা যে দেবতা মুখ ঢেকে আছে উনি হচ্ছে নীল নদ , আর মুখ ঢেকে আছেন কারণ তখন নীল নদের উৎস জানা ছিল না।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ রে। তাড়াতাড়ি আয় এদিকে। তোর না সিসিলি যাবার কথা? আমি যাচ্ছি এই মাসের শেষে। তুই একদম ঠিক বলেছিস। উইকিপিডিয়াও তোর কথা সমর্থন করছে। দারুণ।

স্পর্শ এর ছবি

খুব ভালো লাগলো, লেখা আর ছবি। (জাঝা)


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ স্পর্শ। ভাল থাকুন।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সুষমামন্ডিত নিটোল একটি পোষ্ট। ধন্যবাদ!

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ ভাই।

তানিম এহসান এর ছবি

পরের পর্ব দেন জলদি।

মনি শামিম এর ছবি

পরের পর্ব এত সহসাই আসবে কিনা তানিম ভাই! আমার আবার রোমে যেতে হবে। বেরনিনির কবর সহ তাঁর আরও একটি চাঞ্চল্যকর ভাস্কর্যের সন্ধান করতে হবে। রোম অনেকবার গিয়েছি বিধায় এর রাস্তাঘাটগুলো এখন আর তেমন অপরিচিত নয়, তারপরেও অনেক গির্জা খুঁজতে গিয়ে বেগ পেতে হয়।

তবে এর মাঝে কিছু পঠিত বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া পোস্ট করার ইচ্ছে রাখি। কিছু পুরনো চলচ্চিত্রের রিভিউ লিখতে চাই। দেখা যাক। আসলে পেশার খাতিরে সময় বের করা কঠিন। তারপরেও সচল থাকার নিরন্তর চেষ্টা, এই আরকি!

ধুসর জলছবি এর ছবি

=DX =DX

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ ডাক্তার।

অতিথি লেখক এর ছবি

^:)^ পরিশ্রমী লেখা, পড়তে ভাল লাগল।
আপনার মত ‘এলেবেলে শিল্পরসিক’ লেখকের রচনায় অতি চেনা ইতালিকে নতুন আঙ্গিকে দেখতে পারছি। (Y)
সাথে আছি! (পপ্পন)

......জিপসি

মনি শামিম এর ছবি

প্রিয় জিপসি, তোমার আসল নাম ধাম, তুমি থাক ঠিক কোথায়, কি কাজ করছ, কিছুই তো জানা হলনা। তোমার ফেসবুক আইডি জানা থাকলে হয়ত তোমার সাথে যোগাযোগ করা যেত! তোমার সাথে সামনাসামনি দেখা করাও তো দরকার। অনেক আলাপ আছে। আমরা বলনিয়া শহরে একটা লাইব্রেরি গড়ে তুলেছি। সেগুলি নিয়েও আলাপ করার ছিল। কিভাবে তোমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব ভাইটি?

আর তাছাড়া লেখালেখি, ঘুরাঘুরি নিয়েও তো অনেক আড্ডা বাকি। একটু আওয়াজ দিও। আমার ফেসবুক ঠিকানা অনুর কাছে পাবে। তোমার জিপসি নাম থেকে তো বোঝার উপায় নেই কিছু!

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়মত আমি ঠিক আপনার সাথে যোগাযোগ করব ......... এদেশে সচল বাঙালি তো খুব বেশি নেই, খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না!
লাইব্রেরির কথা শুনে মনটা হুহু করে উঠল ....... দুই দশক আগে ঢাকার মহল্লায় আমারা বন্ধুরাও গড়ে তুলেছিলাম এক পুঁথিশালা

.......জিপসি

অতিথি লেখক এর ছবি

(জাঝা)
পরের পর্ব কই? O_O

কড়িকাঠুরে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।