-১-
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বপ্নার প্রথমবার মনে হয়েছিলো সে ভুল করে ফেলেছে। তারপর গত আট বছরে অনেকবারই তার এমন মনে হয়েছে। খোলা চোখে দেখলে প্রায় নির্ঝঞ্চাট জীবন তাদের। স্বামী-স্ত্রী দু'জনের উপার্যনে সাত বছরের ছেলে বাবু সহ ঢাকা শহরে শোভন জীবন যাপন আর দশটা সুখি পরিবারের মতই, শুধু স্বপ্নার এই ভুল করে ফেলেছে মনে হওয়া ছাড়া।
আট বছরে তার বিবাহিত জীবন পরিণত হয়েছে কতগুলি গতবাঁধা নিয়েমের সমষ্টিতে। এক একটা দিন যেনো ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে কেটে যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, তাড়াহুড়া করে কিছু মুখে গোঁজা, বাথরুমে ঢুকে গোসল সারা, বাবুকে অফিসে যাবার পথে স্কুলে নামিয়ে দেয়া, আর এসবের মাঝে স্বামী রকিবের সাথে দুয়েকটা কথা হয় কি হয় না। যদিও বা হয় তাও কাজের কথা। এরপর বাসের ধাক্কা সামলে অফিসে পৌঁছানোর পর একেবারে ছুটির আগে লাঞ্চের সময়টা ছাড়া দম ফেলার সুযোগ হয় না। এরই মাঝে শ্বশুর বাড়ীতে ফোন করে খোঁজ নেয়া বাবুর দাদু বাবুকে স্কুল ছুটির পর ঠিকমত তুলেছে কি না, বাবু কিছু খেয়েছে কি না, ইত্যাদি। তার শ্বশুর বাড়ী তাদের বাসা থেকে রিক্সায় দশ-পনেরো মিনিটের পথ। স্কুল ছুটির পর তার শ্বশুর বাবুকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে তাদের সংগে রাখে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে রকিব ওকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে বাসায় ফেরে। স্বপ্না তার আগেই বাসায় ফিরে রাতের খাবারের আয়োজন করে। এরপর খাওয়া দাওয়া, বাবুর স্কুলের পড়া একটু দেখিয়ে দেয়া, হয়তো কিছুক্ষণ টিভি দেখা, তারপর সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘুমুতে যাওয়া। রাতেও রকিবের সাথে সাধারণতঃ দরকার ছাড়া কথা হয় না। স্বামী-স্ত্রীর কাছাকাছি আসার রাতগুলোয় হয়তো অন্যদিনের চেয়ে কিছু বেশী কথা হয়, কিন্তু সেতো দরকারেই।
আজকের দিনটাও অন্যান্য দিনগুলোর মত গতবাঁধা আরেকটা দিন। শুধু আজ বারবার স্বপ্নার সেই ভুল করে ফেলার কথাটা মনে হচ্ছে। কাল রাতে বাবু ঘুমুতে যাবার পর তেমন কোনো কারণ ছাড়া সামান্য বিষয় নিয়ে রকিব খিটিমিটি বাঁধায় তার সাথে। এক কথা দু'কথায় কথা বাড়তে বাড়তে এক সময় রকিব সম্পূর্ণ অপ্রাসংগিকভাবে দোলনের কথা তোলে। তাদের যে কোনো ধরণের ঝগড়ায় রকিব দোলনের প্রসংগ টেনে আনে। স্বপ্নার অতীত নিয়ে জঘন্য সব মন্তব্য করে। বিয়ের মাস ছয়েক পর থেকে রকিব তাকে দুশ্চরিত্র, নির্লজ্জ, বেহায়া এসব বলতে শুরু করেছিলো। তখনই স্বপ্নার প্রথম মনে হয়েছিলো ভুল করে ফেলার কথাটা। কিন্তু এতদিন রকিব এই শব্দগুলো ব্যবহার করেই ক্ষান্ত ছিলো। কাল রাতে প্রথমবারের মত বেশ্যা শব্দটা ব্যবহার করেছে। বলার সময় তীব্র ঘৃণায় মুখ কুঁচকেছে। বিয়ের প্রথম বছরগুলোতে রকিবের কটু কথায় তার হৃদয় ভেঙ্গে যেতো, অঝোরে কাঁদতো। আজকাল তেমন বুক ভেঙ্গে যাওয়া অনুভূতি হয় না। সে শুধু চুপ করে থাকে। কাল বেশ্যা শব্দটা শোনার পরও আর সেই সাথে রকিবের মুখের অভিব্যক্তি দেখার পরও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি তার।
সে লক্ষ্য করেছে আগে যখন বরিবের কটু কথায় চোখের জল ফেলতো, রকিব তার কিছুক্ষণের মধ্যে শান্ত হয়ে যেতো। এখন না কেঁদে চুপ করে থাকছে বলে রকিব সম্ভবতঃ উপেক্ষিত বোধ করে। তার রাগ বাড়তে থাকে, গলা চড়তে থাকে। কিছুদিন থেকে মনে মনে তার আশংকা হচ্ছিলো, রকিব হয়তো অতিরিক্ত রাগের বশে অপ্রত্যাশিত কিছু করে বসতে পারে। তাই হলো গতরাতে। তাকে বেশ্যা বলে গালি দেয়ার পর সে ঝগড়া এড়ানোর জন্য বাবু ঠিকমত বিছানায় গিয়েছে কি না দেখার অজুহাতে উঠে যাচ্ছিলো। এ সময় রকিব হঠাৎ পেছন থেকে তার পিঠে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তাকে মেঝেতে ফেলে দেয়। সে পড়ে গিয়ে হাঁটুতে ব্যাথা পেলেও যন্ত্রণা ভুলে প্রচন্ড বিশ্ময়ে তাকিয়ে ছিলো রকিবের দিকে। ঘটনার আকস্মিকতায় রকিবও থমকে গিয়েছিলো। দ্রুত রাগ পড়ে গিয়েছিলো তার এরপর।
তাদের ঝগড়ার সময়গুলোতে বাবু ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। কাল রাতে ঝগড়া শুরু হওয়ার আগেই বাবু তার বিছানায় চলে গিয়েছিলো বলে স্বপ্না মনে মনে আশা করেছিলো বাবু হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো ততক্ষণে। কিন্তু বাবুর ঘরে ঢুকে বুঝতে পেরেছিলো ও জেগে ছিলো। ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলেও, স্বপ্না ওর গায়ে হাত রেখে ওর শরীরের কাঁপন অনুভব করেছিলো। বাবুকে নিয়ে চিন্তিত বোধ করে সে। সাত বছরের শিশুর এসব ঘটনা মনে থাকার কথা। বেশ্যা শব্দের মানে এখন না জানলেও ভবিষ্যতে জানবে। এসব ঘটনা ওর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে নাতো?
রাতে ঘুমোতে গিয়ে রকিব স্বপ্নার গায়ে হাত রেখেছিলো, হয়তো অনুশোচনা থেকে। কিছু বলেনি যদিও। স্বপ্নাও নিশ্চুপ শুয়ে থেকেছিলো। রকিব ঘুমিয়ে পড়েছিলো এর কিছুক্ষণ পর। কিন্তু স্বপ্না ঘুমিয়ে পড়তে পারেনি। তার বার বার মনে হতে থাকে তার ভুলের কথা। এই ভুলটা নিয়ে পার করেছে আট বছর। বত্রিশে পা দিয়েছে সে এবছর। অর্ধেক জীবন পেরিয়ে গিয়েছে। মাঝ বয়স কতোতে? পঁয়ত্রিশে না চল্লিশে? নাকি তিরিশে! ভুলটা আঁকড়ে ধরে রেখে বাকী জীবন কি এভাবেই কেটে যাবে? ভাবতে ভাবতে আর ঘুম আসেনি বাকী রাত।
-২-
সকালে অফিসে যাবার আগে বাবুকে স্কুলে নামিয়ে দেয়ার পথে রিক্সায় বসে বাবু হঠাৎ প্রশ্ন করে, 'আম্মু, তুমি কি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?'
অবাক হয়ে স্বপ্না জিঞ্জেস করে, 'এ কথা কেনো বলছো বাবা?'
'পারবে?'
'তোমাকে ছাড়া কি আমি থাকতে পারি কখনো?'
'আমাদের ক্লাসের একটা ছেলের মা ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।'
'আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবো না।'
এর পর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে বাবু। ওকে চিন্তিত দেখায়। স্বপ্নাও চিন্তিত মুখে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে ওকে। তারপর, যেনো নিশ্চিত হতে পারছে না, এই সুরে বাবু আবার জিঞ্জেস করে 'আমাকে ছেড়ে তাহলে চলে যাবে না কখনো ?'
'কক্ষনো না।'বলে স্বপ্না একহাতে বাবুকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টানে। তার বুকের ভেতরে মুচড়ে ওঠে। এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলে কখন থেকে এসব ভাবছে!
স্বামীকে ভালোবাসে না বোঝার আগেই বাবু তার পেটে আসে। গর্ভধারণের পুরোটা সময় তার বার বার মনে হতো পেটের শিশুটা ভালোবাসার ফসল নয়। মনে সংশয় ছিলো, যে শিশু ভালোবাসার ফসল নয় তার প্রতি ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি হবে নাতো। কিন্তু ওর জন্মের সাথে সাথে সব সংশয় দূর হয়ে যায়। ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর ওকে কোলে নেয়ার সাথে সাথে কোত্থেকে একরাশ ভালোবাসা এসে তার হৃদয় ঘিরে ফেলে। অসম্ভব ছোট্ট, দুর্বল, অসহায়, সম্পূর্ন অজানা অচেনা শিশুটার জন্য অবিচ্ছেদ্য একটা টান স্থায়ী হয়ে যায় তার মধ্যে। আর তারপর থেকে সেই টান শুধু বেড়েই চলেছে।
কখনো কখনো এই একঘেঁয়ে জীবন থেকে বেরিয়ে যাবার চিন্তা যখন মাথায় আসে, তার সাথে বাবুর কথাও মনে হয়। চলে যেতে চাইলেই যদি চলে যাওয়া যেতো। স্বপ্না ভাবার চেষ্টা করে সে যখন বাবুর বয়সী ছিলো তখন তার মা যদি তাকে ছেড়ে চলে যেতো কেমন হতো তার শৈশব। ছোটবেলায় তাদের পাড়ায় কয়েক বাসা পরের একটা বাসায় বাবুর এখনকার বয়সী মা-মরা একটা ছেলে ছিলো। ফাঁক পেলেই বাসা থেকে বেরিয়ে এর বাসা ওর বাসায় গিয়ে করুণ মুখে ঘুরে বেড়াতো। বাড়ীর মহিলাদের বলতো, 'আমার না মা নেই। আপনাকে মা ডাকি?' তাদের বাসায়ও আসতো। স্বপ্নার মাকে মা বলে ডাকতো। মায়ের মৃত্যু সন্তানের জন্য কষ্টকর, কিন্তু মা থেকেও যদি না থাকে, সে কষ্ট নিশ্চয়ই ভয়ংকর। বাবু তাকে আটকে দিয়েছে। চলে যাবার চিন্তা তেমন দানা বেঁধে উঠতে পারে না কখনো।
-৩-
স্বপ্নার কলেজ জীবনের বান্ধবী সুলতানা এখন তার সাথে একই অফিসে কাজ করে। সুলতানা লক্ষ্য করে সকালে কাজে পৌঁছানোর পর থেকে স্বপ্নাকে খুব আনমনা আর চিন্তিত দেখায়। দুপুরে লাঞ্চের সময় অফিসের পাশের রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে সে স্বপ্নাকে জিঞ্জেস করে, 'কী রে, কিছু হয়েছে? মন খারাপ?'
'তেমন কিছু না।' স্বপ্না এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
'বলতে না চাইলে থাক। কিন্তু মনের কথা বলে যদি হালকা হতে চাস, তাহলে আমি শুনবো।'
স্বপ্না মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে সুলতানার বিয়ে হয়েছে কতদিন হলো। তার দুই বছর পর সুলতানা বিয়ে করে। এখন ওদের একটি চার বছর বয়সী মেয়েও আছে। স্বপ্না বলে, 'আচ্ছা সুলতানা, তোদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়?'
সুলতানা হেসে বলে, 'ও আচ্ছা, এই ব্যাপার, আমি ভাবলাম কী না কি! হবে না কেনো, প্রায়ই হয়। সব স্বামী-স্ত্রীর মত আমরাও কোমর বেঁধে ঝগড়া করি।'
স্বপ্না হাসে না। জিঞ্জেস করে, 'তোর স্বামীর দেয়া গালাগালের মধ্যে সবচেয়ে কুৎসিত গালিটা কী?'
সুলতানা হাসি মিলিয়ে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। স্বপ্না আবার জিঞ্জেস করে, 'বেশ্যা বলেছে কখনো?'
সুলতানা এবার স্পষ্টতঃ অস্বস্তি বোধ করে। বলে, 'আমার কথা না টেনে তোর কথা বল। স্বামীর সাথে ঝগড়া করেছিস বুঝতে পারছি। আবার মিটমাটও হয়ে যাবে। এই নিয়ে এত মন খারাপ করার কিছু নেই।'
'তোর কি কখনো মনে হয় তুই তোর স্বামীকে ভালোবাসিস না?'
সুলতানা অবাক হয়ে বলে, 'তা কেনো মনে হবে? আমি ওকে ভালোবাসি। সারাজীবন ভালোবাসবো।'
'সত্যি বলছিস?' স্বপ্নার কন্ঠে চাপা উত্তেজনা প্রকাশ পায়। 'এই ভালোবাসা তৈরী হয়েছে কিভাবে? কবুল বলার সাথে সাথে? তোর যদি অন্য কারো সাথে বিয়ে হতো, তাকেও কি একইভাবে ভালোবাসতি? তার মানে কি সব পুরুষকে তুই সমানভাবে ভালোবাসতে পারিস, বেশ্যাদের মতো?'
সুলতানার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় এবার। গম্ভীর গলায় বলে, 'বিয়ের এত বছর পর আর এসব নিয়ে না ভাবাই ভালো। মেয়েদের ভালোবাসা বিয়ের পর শুধু তার স্বামীর জন্য। অন্য কারো জন্য নয়।'
'কিন্তু সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একজন মানুষের সাথে কবুল বলে বিছানায় ওঠার সাথে সাথে যদি তার জন্য ভালোবাসা তৈরী না হয়, তাহলে কি তা তৈরী করে নেয়ার নিয়ম? তোর স্বামীর প্রতি তোর ভালোবাসা কি সত্যিকারের ভালোবাসা না তৈরী করা ভালোবাসা?'
সুলতানা স্বপ্নার চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে বলে, 'আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। এটাই শেষ কথা।'
স্বপ্না তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। কন্ঠে বিদ্রুপ নিয়ে বলে, 'সত্যি বলছিসতো? অন্য কোনো পুরুষকে পেতে ইচ্ছে হয় না কখনো? অন্য কোনো পুরুষকে আরো বেশী ভালোবাসতি কি না কখনো যাচাই করে দেখতে ইচ্ছে হয় না? এই যেমন ধর জাকীরকে পেতে ইচ্ছে করে না কখনো? লোভ হয় না মনে মনে?'
সুলতানা বিরক্ত হয়ে বলে, 'খাবার শেষ কর। চল উঠি। তোর সাথে এসব নিয়ে কথা বলার কোনো মানে হয় না।' তারপর একটু দ্বিধা নিয়ে বলে, 'জাকীরের প্রসঙ্গ তুলেছিস যখন, তখন তোকে বলে রাখি, জাকীরের সাথে তোর মাখামাখিটা অনেকের চোখে লাগছে। ব্যাপারটা তোর স্বামীর কানে গেলে নিশ্চয়ই তোর জন্য তা ভালো হবে না। নিজের কাছে অন্ততঃ সৎ থাকিস।'
স্বপ্না আর কথা না বাড়িয়ে খাবারে মন দেয়। তাদের সহকর্মী জাকীরের সাথে তার মাখামাখি অনেকের চোখে লাগছে তা সে জানে। কিন্তু নিজের কাছে সৎ থাকার ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার নয়। নিজের কাছে সৎ থাকা মানে কি ভালোবাসার শবদেহ বয়ে বেড়ানো? সেই ভালোবাসা যতই পঁচুক, যতই গলুক তা ছুঁড়ে না ফেলে আঁকড়ে ধরে থাকা? আর যে ভালোবাসার স্বপ্ন সে সারাজীবন দেখেছে, তার অস্তিত্ব নেই বলে মেনে নেয়া?
-৪-
বাকী দিনটা স্বপ্না আর মন দিয়ে কাজ করতে পারে না। বিচ্ছিন্ন সব চিন্তারা আনাগোনা করে তার মাথায়।
দোলনের কথা ভাবে। রকিব মনে করিয়ে না দিলে তার কথা মনে পড়ে না আজকাল। তার অল্প বয়সের ভালোবাসা দোলন। তখন স্বপ্না ষোল, আর তার গৃহশিক্ষক দোলন তার চেয়ে দু'বছরের বড়। তেমন কিছু বলার নেই তাদের সম্পর্কে। শুধু গভীর ভালোবাসা, তীব্র আবেগ আর অদম্য কৌতুহল ছাড়া। দোলনের ছোঁয়ায় আগুন লেগেছিলো তার শরীরে। তেমন আগুন যা একবার জ্বলতে শুরু করলে নিঃশেষ না করে থামে না। সেও পুড়েছিলো ভস্মীভূত না হওয়া পর্যন্ত। হয়তো দোলন তার ভুল ছিলো, হয়তো ছিলো না, কিন্তু তারা যা করেছিলো, তার জন্য জোরালো কোনো অনুশোচনা বোধ করে না সে।
রকিবের কথা ভাবে। রকিবের সাথে পারিবারিক উদ্যোগে যখন তার বিয়ের কথা চলছিলো, তখন তাদের মাসখানেক একত্রে ঘোরাঘুরির সুযোগ দেয়া হয়েছিলো যাতে পাত্র-পাত্রী নিজেদের চিনে নিতে পারে। আজকাল এটাই নিয়ম। পাত্র-পাত্রী ওই অল্প কয়েকদিনে একে অপরের প্রেমে পড়ে। তারপর বিয়ের পর সগর্বে বলে তারা প্রেম করে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেছে! তাদেরটাও সেরকম। সেই মাসখানেকের পরিচয়ে রকিবকে মনে হয়েছিলো খুব আধুনিক আর খোলা মনের মানুষ। তাকে ভালো লেগেছিলো তার। সে আগেই ঠিক করেছিলো যার সাথেই তার বিয়ে ঠিক হোক, বিয়ের আগে সে দোলনের ব্যাপারটা তাকে বলবে। তাই করেছিলো সে। রকিব ব্যাপারটা খুব সহজভাবে নিয়েছিলো সেসময়। বলেছিলো বিয়ের আগে অনেকে অনেক কিছু করে। তার কাছে সেসব কোনো ব্যাপার না। সে নিজেও ধোয়া তুলশী পাতা নয়। স্বপ্নার আরো ভালো লেগেছিলো রকিবকে। রকিব নিশ্চয়ই নিজেকে খোলা মনের মানুষ মনে করতো তখন। এখনও নিশ্চয়ই সে নিজেকে তাই মনে করে, শুধু দোলন-স্বপ্নার ব্যাপারটা তাকে পোড়ায় মাঝে মাঝে! স্বপ্নার হাসি পায়। এক মাসে খুব মানুষ চেনা হয়েছে তার!
জাকীরের কথা ভাবে। সদ্য পাশ করে বেরুনো টগবগে সুদর্শন যুবক, ধারালো বুদ্ধি আর খুব হাসাতে পারে সবাইকে। স্বপ্নার খুব ভক্ত সে। একটু অবসর পেলেই আশে পাশে ঘুরঘুর করে, কথা বলার সুযোগ খোঁজে। স্বপ্না সুযোগ দিলেই বর্তে যায়, মন গোলানো কথা বলে। তার চোখে মুগ্ধতা দেখতে পায় সে যা অনেকদিন রকিবের চোখে দেখেনি। কয়েকবার লাঞ্চের সময় অফিস থেকে একটু দুরের কোনো চাইনিজ রেস্তোরাঁয় গিয়েছে তারা দুই জন। জাকীর অফিসে তাকে ম্যাডাম আর আপনি করে বললেও, বাইরে গিয়ে মজা করার ছলে তাকে তুমি বলেছে। স্বপ্না বাধা দেয়নি। চাইনিজ রেস্তোরাঁর আধো আলো-অন্ধকারে রকিব সাহস করে তার হাত ধরেছে। স্বপ্না প্রশ্রয় দিয়াছে। বুঝতে পারে তার প্রতি জাকীরের আকর্ষণ শুধুই শারীরিক। কিন্তু তারপরও তার ভালো লাগে, নিজেকে কাংখিত মনে হয়। নিভে যাওয়া আগুনটা যেনো জ্বলে উঠতে চায়। রকিবের সাথে সেটা তেমন করে জ্বলে না আজকাল। বিয়ের পর একজন পুরুষ আর নারীর একে অন্যের শরীরের প্রতি যে অদম্য আকর্ষণ থাকে তা তাদেরও ছিলো। কিন্তু সেই আগুনটা যা জ্বলে উঠেছিলো দোলনের সাথে, বা যা জ্বলে উঠতে চায় জাকীরের সাথে, তেমন আগুন শেষ কবে জ্বলেছিলো রকিবের সাথে মনে করতে পারে না সে।
পেছন ফিরে তাকালে দোলনের প্রতি তার কৈশরের তীব্র আকর্ষণ কি সত্যিই ভালোবাসা ছিলো কি না বুঝতে পারে না স্বপ্না। অথচ তখন মনে হয়েছিলো দোলনকে না পেলে জীবন অর্থহীন হয়ে যাবে। রকিবকে ভালোবাসতে চেয়েছিলো, বিয়ের পরে যেমন আর দশটা মেয়ে তার স্বামীকে ভালোবাসে। কিন্তু আর দশটা মেয়ের মধ্যে কোনো এক অলৌকিক উপায়ে যে স্বর্গীয় প্রেম তৈরী হয় তার স্বামীর জন্য, তার মধ্যে তা হয়নি। নাকি হয়েছিলো, সে ধরতে পারেনি? জাকিরের জন্যও কোনো ভালোবাসা অনুভব করে না সে। কিন্তু একটা তীব্র শারীরিক টান অনুভব করে। শরীরের এই টানের পেছনে কি ভালোবাসা কাজ করে? নাকি কোনো অপূর্ণতা?
-৫-
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বাবু আর রকিব ফেরার আগেই স্বপ্না প্রতিদিনের মত রাতের খাবারের আয়োজন করতে শুরু করে। কিন্তু রকিব একা ফেরে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে। বাবু আজ রাতে থাকবে তার দাদা দাদির সাথে। অবাক হয়েছে স্বপ্না। রকিব কখনোই এমন রোমান্টিক নয় যে মাঝে মাঝে স্ত্রীর জন্য ফুল নিয়ে বসায় ফেরে। রকিব তাকে জড়িয়ে ধরে রান্নাঘর থেকে সরিয়ে আনে। তারপর বাইরে নিয়ে যায় রাতের খাবার খেতে। খেতে খেতে আট বছরের বিবাহিত জীবনের কিছু মধুর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় স্বপ্নাকে। স্ত্রী হিসেবে তাকে পেয়ে সে কত সুখী তা বলে। তার সংসারে স্বপ্নার অবদানের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবে না বলে। স্বপ্নার হাত ধরে কাল রাতের ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। অনুতাপে সারাদিন পোড়ার কথা বলে। রাতে বিছানায় গিয়ে গাঢ় স্বরে ভালোবাসার কথা বলে। বলতে বলতে গভীরভাবে চুম্বন করে তার ঠোঁটে। অনেক বেশী আবেগ নিয়ে তাকে কাছে টানে। অনেক অনেকদিন পর রকিব স্বপ্নাকে সেই প্রথম দিনগুলির মত করে ভালোবাসে। তরল হতে থাকে স্বপ্না। গলতে থাকে তার মন। গলতে থাকে তার শরীর। জ্বলে উঠতে থাকে সেই নীভে যাওয়া আগুনটা। পোড়াতে থাকে তাকে সেই অনেকদিন আগের মত। স্বপ্নার ঠোঁট, গলা, ঘাড় চুম্বনে ভরিয়ে দেয় রকিব। আবেশে চোখ বুঁজে থাকে স্বপ্না। রকিব ফিসফিস করে বলে 'ভালোবাসি'। ঠিক তখন স্বপ্নার কানে বেজে ওঠে বেশ্যা শব্দটা। স্বপ্না চিন্তাটা তাড়াতে চেষ্টা করে মাথা থেকে। রকিবের বলা ভালোবাসার কথা চিন্তা করতে চেষ্টা করে। কিন্তু বেশ্যা শব্দটা ক্রমাগত তার কানে বাজতে থাকে, আরো গভীরে গেঁথে যেতে থাকে। আগুনটা পুরোপুরি জ্বলে ওঠার আগেই আবার নীভে যেতে থাকে। তার গলতে থাকা শরীর জমাট বাঁধতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মরা মাছের শরীরের মত শীতল হয়ে যায়। রকিব তার ভালোবাসার আবেগে সেসবের কিছুই লক্ষ্য করে না।
এই পরিবারে নতুন আরেকজন সদস্য আসছে। স্বপ্না জেনেছে মাত্র দুই দিন আগে। এখনো রকিবকে বলার সুযোগ হয়নি। স্বপ্না জানে এই শিশুর জন্যও একরাশ ভালোবাসা তৈরী হবে তার হৃদয়ে। আর আরো অনেকখানি দীর্ঘ হবে তার ভুলের শেকড়, ডালপালা মেলবে।
মন্তব্য
এত্ত ভাল লাগল সেই সাথে খুব মন খারাপ হয়েগেল। খুব খুব ভাল লিখেছেন।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
আমি বোধহয় বার বার আপনার মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছি। প্রথম মন্তব্যের জন্য আপনাকে ইসপিশাল ধন্যবাদ।
- হুমম...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বস্, টেনশনে ফেলে দিলেন। 'হুমম...' মানি কি ভালো না খারাপ? নাকি চলে...?
জীবন থেকে তুলে নেওয়া বলে মনে হল।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
কিছুটা সফল হয়েছি বলছেন? ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো। আপনার লেখার হাত চমতকার।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
ধন্যবাদ। আপনার লেখার হাতও কিন্তু চমৎকার। আমি নিয়নিত পাঠক।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি বলব। অনেকদিন এমন গল্প পড়িনা। অসাধারণ কিংবা এমন চলতি শব্দ বলতে মন চাইছেনা।
আমার পড়া গল্পের তালিকায় এই গল্পটা অনেক উপরে থাকবে। অনেক উপরে। আপনার কাছ থেকে বারবার এমন লেখা চাইব। বারবার, সবসময়।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার মত একজন লেখকের কাছ থেকে এমন হৃদয় ছোঁয়া মন্তব্য আমার জন্য আশাতীত প্রাপ্তি। আমি সত্যিই ধন্য।
মানবিক যন্ত্রপাতিগুলো একত্র জড়ো হইয়া কী করিয়া সংসার নামক একখান মেশিন তৈয়ারী করে তাহার বর্ণনা পড়িলাম...
লীলেন ভাই, জিনিসটা কি শুধুই যন্ত্রপাতি আর মেশিনের বর্ণনায় পরিণত হয়েছে? গল্প হয় নাই?
গল্প হয়েছে বলেই যন্ত্রপাতি আর মেশিগুলোকে এতো পরিষ্কারভাবে চেনা যায়
কী বিচিত্র আমাদের জীবন!
সবচেয়ে কাছের মানুষ ই চূড়ান্ত নির্মম আচরন করে। পরক্ষণেই আবার কিভাবে ঠিক হয়ে যায়। স্বামী স্ত্রীর তো হয়ই মা বাবা ভাই বোনের ও সম্পর্ক ও ঠিক থাকে না।
সংসার থেকে দূরে থাকতে পারলেই বোধহয় এসব টানাপোড়েন থেকে ভাল থাকা যায়।
লেখা অসাধারন লাগল।
ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন, সংসার থেকে দূরে থাকার কোনো উপায় জানা থাকলে একটু জানাবেন।
ভালো লিখেছেন, জাকির কি? নায়ক তো না, ভিলেন কি?
ধন্যবাদ। আসলে কে নায়ক, কে ভিলেন, এইভাবে চিন্তা করিনি। হয়তো সবাই নায়ক, সবাই ভিলেন।
অসাধারন একটা গল্প ! শামীম হক আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা গল্প দেবার জন্য ।
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
খেকশিয়াল, আপনাকেও এতো সুন্দর সুদর সব লেখা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
"এই শিশুর জন্যও একরাশ ভালোবাসা তৈরী হবে তার হৃদয়ে। আর আরো অনেকখানি দীর্ঘ হবে তার ভুলের শেকড়, ডালপালা মেলবে। "
---- হায়রে জীবন............................. অসাধারন গল্প............
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি নিজে কম লিখি, তারপরও বলছি, আপনি কিন্তু খুব কম লেখেন।
আসলে আমার আগের মন্তব্যটার কোন দরকার ছিলো না তাই মুছে ফেললাম - আপনি খুব ভালো লেখেন, আশা করি ভবিষ্যতে আমরা আরো সুন্দর সুন্দর গল্প পাবো
খুব মনে আছে আপনার সেই মন্তব্যের কথা। ভুল ভাঙতে এতোদিন লাগলো!!
আমি আপনার সাথে একমত যে এই সময়ে এমন একটি ব্যাপার গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমি বলতে চেয়েছি এমন একজনের কথা, যে উপলব্ধি করে এই পুরো ব্যাপারটা স্বাস্থ্যকর নয়, কিন্তু কী করণীয় সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয়। আর সেজন্যই আরেকটা সন্তানের আগমনে বাধা দিতে পারছে না, বা দিচ্ছে না।
তার স্বামী তাকে বেশ্যা মনে করে এই বোধ থেকেই সে শব্দটাকে এতো গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। শব্দটা বলার সময় রকিবের চোখে ঘৃণা আর তারপরে তার গায়ে হাত তোলা তার এই উপলব্ধিকে জোরালো করেছে। তার বান্ধবী (বা অন্যরা) কিন্তু ব্যাপারটাকে ততোটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। সাহসী হয়ে উঠতে না পারার সেটাও একটা কারণ।
অচেনা একজন মানুষের সাথে সংসার করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই নিশ্চয়ই সে বিয়েতে জড়িয়েছিলো। তার এই বোধগুলির জন্ম হয়েছে পরে। আমি লিখতে চেয়েছি এই বোধগুলির জন্ম এবং তা ধীরে ধীরে জোরালো হয়ে ওঠা, এবং সেই সাথে প্রথাগত সংসার ও ভালোবাসা সম্পর্কে তার অনিশ্চিত মনোভাব নিয়ে। অন্যভাবে বলতে গেলে, স্বপ্নার সাহসী হয়ে উঠতে না পারাটাই এই গল্পের বিষয়বস্তু, স্নিগ্ধার সাহসী হয়ে উঠতে পারাটা নয়।
পাগল হয়েছেন? আপনার লেখা ফর্দাফাঁই করে বিপদে পড়বো নাকি? আপনার দৃষ্টিভঙ্গী এবং লেখার ধরণের আমি বিশেষ ভক্ত। আপাততঃ মুগ্ধ পাঠক হিসেবে থাকতে চাই। আর, আপনার এই কঠিন কথা বলার আগে কিছু মন ভোলানো কথা বলাটাও ভালো লাগে।
এই ভয়টাই আমার ছিলো ! কি করে আপনি ভাবলেন সেই ধারণা আমার 'ভুল' ছিলো এবং তা ভেঙ্গেছে ?
আমি সাহসী কোথায় ? কিন্তু পড়িয়ে হিসেবে স্বপ্নাকে সেই দুষ্কার্য্যে পাঠাতে চাচ্ছিলাম। আর আপনিও যে সুন্দর করে আমাকে 'ঝগড়ুটে' বললেন সেটাও বেশ ভালো ব্যাপার - সত্যি সত্যি কিন্তু সমালোচনা করতে পারেন মোটেই বিপদে পড়বেন না
আমার জবাবটা পোস্ট করেই দেখলাম, আপনি আপনারটা মুছে ফেললেন। কেন বলুনতো?!
অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প লিখে ফেলার পর আপনি নিজে কি বুঝতে পারেন, সেটা কতটা সুন্দর !
অসাধারণ এবং ভীষন মন খারাপ করা একটা গল্প।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার লেখাগুলি গল্প হয় কি না, সে ব্যাপারেই আমি নিশ্চিত হতে পারি না। সচলায়তনে কিছু পোস্ট করার আগে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে সবসময়। আপনার দয়ার শরীর, তাই এমন দয়ালু মন্তব্য। ধন্যবাদ।
সচলায়তনের বড়ো আকারের লেখাগুলো আমি সচরাচর এড়িয়ে যাই। ফাঁকিবাজ পাঠক (ঠক পাঠকও বলা যেতে পারে) তো! কিন্তু এই গল্পের মন্তব্যগুলোয় মুগ্ধতার ছড়াছড়ি দেখে না পড়ে পারলাম না। এবং পারলাম না নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ না করে।
অসাধারণ! দুর্দান্ত! বুদ্ধদেব বসুর "রাত ভ'রে বৃষ্টি"-র সঙ্গে তুলনীয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ধন্যবাদ। নতুন লেখক বলে আমাদের লেখা না হয় এড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু, আমাদেরতো সেই উপায় নেই। ফাঁকিবাজ পাঠক হয়েও আপনাদের মত লেখকদের লেখা পড়ার লোভ আমাদের পক্ষে এড়ানো সম্ভব না।
যে তুলনার কথাটা বললেন, সেটা কি বিষয়বস্তুর বা ঘটনার? লেখাটা পড়া না থাকায় ধরতে পারিনি।
এমন কথা আমার উদ্দেশে লিখলে বড়োই কষ্ট পাই। সচলায়তনে আমি লেখক বা রেটিং দেখে লেখা পড়ি না। পড়ি লেখার নাম ও বিষয়বস্তু দেখে। কোনও লেখা না পড়ার পেছনে যে-কারণগুলি আমার থাকতে পারে, সেগুলি এরকম:
১. লেখার বিষয় আমার কাছে আকর্ষণীয় নয়;
২. লেখায় বসানোর জন্য যথেষ্ট শক্ত নয় আমার দাঁত;
৩. লেখা বেজায় দীর্ঘ;
৪. লেখা মাত্রাতিরিক্ত ভুল বানানে কণ্টকিত;
৫. সময়াভাব (এমনটি হয় কালেভদ্রে)।
সম্প্রতি-সচল খেকশিয়াল, অতন্দ্র প্রহরী, আকতার আহমেদ, মৃদুল আহমেদ, রেনেটদের লেখাগুলোয় আমার নিয়মিত মন্তব্য আপনার অভিযোগকে মিথ্যে প্রমাণ করে।
বুদ্ধদেব বসুর লেখাটির সঙ্গে আপনার লেখাটি তুলনীয় বিষয়গতভাবে। সুযোগ পেলে পড়তে বলি ছোট্ট এই অসাধারণ উপন্যাসটি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সন্ন্যাসী ভাই, আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চাই। আমি কিন্তু অভিযোগ করিনি, শুধুই মজা করার ছলে কথাটা বলেছি। আমি জানি আপনি নতুন লেখকদের লেখা পড়ছেন এবং মন্তব্য করছেন। আমাদের লেখায় মন্তব্য করছেন, ভালো-মন্দ বলছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন, সেতো আমাদের জন্য অনেক।
বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসটা যদি সংগ্রহ করতে পারি নিশ্চয়ই পড়ে দেখবো।
অসাধারণ লাগলো।দারুন লিখার ক্ষমতা আপনার।মনে হলো পরিচিত কারো জীবনের কাহিনী পড়লাম।
-নিরিবিলি
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পরিচিত মানুষ, পরিচিত গল্প।
অসাধারণ!
---
আপনার লেখা পড়ে মনে পড়লো, অনেকদিন আগে পড়া একটি কবিতা। সম্ভবত মোহাম্মাদ রফিক লিখেছেন কবিতাটি:
ভুল চাবি হাতে ঠায়
দাঁড়িয়ে রয়েছো নারী অন্ধ
পারদের মতো ভাড়ি আর বন্ধ
বিশাল দরজায়।
---
শাবাশ শামীম হক!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আমি কবিতার পাঠক না হলেও এই চারটি লাইন কী করে যেনো স্মৃতিতে ছিলো।
লাইট-ক্যামেরা-একশনের ব্যস্ততার মাঝেও পদধূলি দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
দুর্দান্ত !
তবে আমি ঠিক বুঝি না, এমন কেউ কি নেই, যে অতীতকে মেনে নিতে পারে ? তাদের নিয়েও একটা গল্প লিখে ফ্যালেন
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ।
এমন মানুষ নিশ্চয়ই আছে। তাদের নিয়ে বরং আপনিই একটা দুর্দান্ত গল্প লিখে ফেলুন।
যদি ভাই আপনার মত লেখতে পারতাম, তাইলে কি আর মনে এত ব্যাদনা থাকতো ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এটাতো ভাই আপনার বিনয়। শুধু ক আর খ কিংবা একটা কলম নিয়ে দুর্দান্ত সব গল্প লেখার যে ক্ষমতা আপনার, তার তুলনা হয় না। আপনার নতুন গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
খুব সুন্দর আর পরিণত লেখা। মন ছুঁয়ে গেলো!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে কৃতঞ্জ বোধ করছি।
প্রচন্ড গতিশীল লেখাটা পড়েছিলাম আগেই, মন্তব্য করা হয় নি। মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার মুগ্ধতার কথা জেনে সত্যিই ভালো লাগলো।
সহজ ভাষায় ঝরঝরে দারুণ একটা গল্প! শারীরিক আকর্ষণের বিপরীতে স্বামী-স্ত্রীর তথাকথিত ভালবাসার অপূর্ণতার দ্বন্দ্ব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটি পড়া শেষে পাঠককে ভাবিয়ে তুলেছে নিঃসন্দেহে। গল্পের বিভিন্ন জায়গায় উপমাগুলো ভারি সুন্দর হয়েছে।
এমন সুন্দর আরো অনেক গল্প আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
ফেরারী ফেরদৌস
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
খুব বাস্তব, খুব সুন্দর।
নুশেরা তাজরীন
অনেক ধন্যবাদ!
স্বপ্নারা কখনো তাদের স্বপ্ন ধরতে পারে না, সে রাকীব, জাকীর, অথবা দোলন যাকেই বিয়ে করুক না কেন। স্বপ্নাদের স্বপ্ন আর বাস্তব এক নয়। বাস্তবের কাছে স্বপ্নকে হার মানতেই হয়, সেই সাথে পরাজয় ঘটে স্বপ্নাদেরও।
রাকীবকে নিয়েই হয়তো স্বপ্নাকে পার করতে হবে বাকিটা জীবন। জীবন সায়াহ্নে এসেও স্বপ্না হয়তো হিসাব মেলাতে পারবে না তার চাওয়া পাওয়ার - রাকীবই হলো স্বপ্নার জীবন। জাকীর আর দোলন হল তার স্বপ্ন যা তার কাছে চিরদিনই অধরা থেকে যাবে - এটাই জীবন - এটাই বাস্তব।
এত সুন্দর গল্প লেখার জন্য শুধু ধন্যবাদ নয় আরো অনেক কিছু প্রাপ্য।
-সাহোশি
কোন সময়টাকে ধরতে চেয়েছেন বুঝতে পারিনি। গল্পে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু উত্তর দেননি! এই প্রশ্নগুলো আমিও নিজেকে করি, যেমন নিজরে সাথে সত্ থাকা বা এই জাতীয় মনোভাব। কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্য নিজেকেই নিজের মত করে সমাধান খুঁজে নিতে হয়!
আচ্ছা, আসলেই কি আমাদের জীবন এত অসহায়? বেঁচে থাকা কি আসলেই শব বয়ে বেড়ানোর মত একটা কিছু? বিয়ে বা পারিবারিক জীবন কি আসলেই মহান বা পবিত্র কিছু?
খুব ভাল লাগেনি।কারন আমার জীবনটাই এই পথ দিয়ে যাচেছ ।না জানি ভবিষ্যতে আমার কী হবে।
অসাধারন লাগলো , আর কিছু বলবো না ........
আপনার গল্পটা বর্তমান সমাজের জন্য অনেক বাস্তব.........
আর বাস্তবতা এর থেকেও নির্মম...
কত সহজভাবে বলে গেলেন !
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এই লোকটা এখন আর লিখেন না ক্যান? কেউ কইতে পারেন?
খুব মনা খারাপ করা গল্প।
অথচ এই মন খারাপ করা গল্পটাই কারো কারো জন্যে সত্যি হয়, তাইনা...?
#আসলে অনেক সুন্দর, উপরের সুন্দর মন্তব্যগুলো দেখে একেবারে টাসকি
>ভাল লিখা ইহাকেই বলে, অভিনন্দন আপনাকে।
>ভাল থাকুন সবসময়, এ প্রত্যাশা
দুর্দান্ত!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন