সারা দেশ যখন প্রখর দহনে পটেটো চিপস্,রোদের তেজে যখন মগজ-ফ্রাই-তখনো কিন্তু আমার আর আমার দুই মেয়ের চোখে মুগ্ধতা। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জ্যামের মাঝে রিক্সায় বসে আমরা বিস্মিত চোখে দেখি সাত মসজিদ রোডের আইল্যান্ডে কৃষ্ণচূড়ার মাথায় কি রকম অদ্ভুদ সুন্দর লালের রাজত্ব!আকাশের নিচে এত বেশি লালের মিছিল - দেখলেই মন রঙিন হয়ে উঠে। লাল মুকুট নিয়ে গাছগুলো কেমন “চির উন্নত মম শির” ভঙ্গিতে দাড়িয়ে- দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। চলতে চলতে ডানে-বাঁয়ে আমি মেয়েদের দেখাই রাধাচূড়া কিংবা সোনালু গাছে কেমন কাঁচা হলুদ রঙের ফুল ঝুমকোর মতো থোকা থোকা ঝুলছে। হাওয়ার দোলায় বাসি ফুলের পাপড়ি ঝরে গাছের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিছিয়ে দিয়েছে সোনলী গালিচা। সোনালুকে সোনাঝুরিও বলা হয়। যে নামেই ডাকা হোক,এর সোনালী সৌন্দর্যের উচ্ছ্বাসে দৃষ্টি মুগ্ধ না হয়ে পারে না। তখন হয়তো মেয়েরা আঙ্গুল উঁচিয়ে অন্য দিকে আমাকে দেখায় সাদা-গোলাপী থোকা থোকা নরম পেঁজা তুলোর মতো চেরী ফুলের গাছ কোনো বাড়ির গেটের পাশে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে। বিদেশ থেকে এই পরবাসে আছে বলে হয়তো ওর এই নিঃসঙ্গতা! জারুলের বেগুনি ফুল তারার মতো আকাশের নিচে গাছের সবুজ মাথায় কেমন মিটিমিটি হাসে! বিশাল দেহী অশোকের মাথায় রঙনের মতো থোকা থোকা ফুলের বাহারও দেখা যায় ঢাকা শহরের রাস্তায়। রাস্তায় হাঁটতে গেলে এই সব ফুলের মাতামাতি দেখে মনে হয় ফুলের সাথে আমাদের বাস। কংক্রিটের শহরে,বৈশাখের দহনে দ্রোহি ফুলদের এই উল্লাস নগর জীবনে আমাদের দৃষ্টিতে-মনে সত্যি এক ভাললাগার অনুভূতি আবেশ ছড়িয়ে দেয়। নগর জীবনের অনেক অপ্রাপ্তির পর এই প্রাপ্তিটুকু অনেক বিশাল।
গত আঠারো তারিখে সারা শহর জুড়ে হয়ে গেল মুষলধারায় বহু কাংক্ষিত বৃষ্টি। বৃষ্টির ছোঁয়া অল্প সময়ের জন্য হলেও নগর জীবনে নিয়ে এসেছিল প্রশান্তি। বৃষ্টি পড়া যখন চরম তুঙ্গে তখন আমার মেয়েদের স্কুল ছুটি হয়। বৃষ্টির মধ্যে ডবল ভাড়ায় আমি যখন রিক্সা ঠিক করে মেয়েদের নিয়ে উঠে বসলাম,তখন মেয়েদের বায়না - ওরা বৃষ্টিতে ভিজবে। অতএব,রিক্সার হুড ফেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমরা বাসায় ফিরলাম। বাসার সামনে পাকা উঠোনের মতো একটি জায়গা আছে,সেখানে জমা পানিতে মেয়ে দু’জন আচ্ছাসে লাফালাফি করলো। বাচ্চাদের এই দুরন্তপনা দেখে কেউ কেউ বলল,জ্বর বাঁধাবে। আমি জানতাম,ওদের জ্বর আসবে না। মনের আনন্দ বলে কথা। আমরা ছোট বেলা এরকম অনেক ভিজেছি। আমাদের কখনো বৃষ্টিতে ভেজার জন্য জ্বর আসেনি।আমার মেয়েদেরও জ্বর আসেনি। বরং কিছু সময়ের জন্য হলেও ওরা বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের সংগ্রহে রাখবার মতো একটি স্মৃতি তৈরী করতে পেরেছে।
দুঃখের কথা,সে বৃষ্টির পর থেকে কৃষ্ণচূড়ার মিছিল থেকে লাল কমতে শুরু করেছে। সোনালুর সোনা রঙের ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে বিষন্ন হয়ে উঠছে। চেরীকে দেখলেও বিদায়ের সময় আসন্ন - সে কথা মনে পড়ে যায়। আমার মেয়েদেরও মন খারাপ। ওরা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ফুলের এই সমারোহটাকে ভালবাসতে শিখেছিল। আমি ওদের এখন কদম-হাস্নাহেনা-দোলনচাঁপার কথা বলি। আর বলি আমাদের দেশ ফুলের দেশ। আমাদের দেশ সারা বছরই ফুলে ফুলে ফুলময়।
মন্তব্য
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বাহ বাহ সুন্দর লাগলো। সাধারণ দিনলিপিগুলোই মাঝে মাঝে কত অসাধারণ হয়ে ওঠে!
দাড়িয়ে->দাঁড়িয়ে
রঙনের->রঙ্গনের
বিশাল দেহী->বিশালদেহী
দ্রোহি->দ্রোহী
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
লেখা চমৎকার লাগলো।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
বাহ্, চমৎকার লাগলো!! তারাটা ওই জন্যই দেওয়া :-)। খুব সাধারণ কিন্তু সুন্দর।
যাক্ এবার একটু পয়েন্ট কামাই
অদ্ভুদ =অদ্ভুত
বিশাল দেহী = বিশালদেহী
রঙন = রঙ্গন
দ্রোহি = দ্রোহী
কাংক্ষিত = কাঙ্্খ্ষিত (এটা ইউনিকোডে আসছেনা, ং হবেনা, হবে ঙ + ক্ষ)
বিষন্ন = বিষণ্ণ
সোনলী= সোনালী/ সোনালি
সমারোহটাকে = সমারোহকে
এছাড়া আপানার সোনালী বেগুনি গোলাপী চেরী নানা ধরনের (মুজিব মেহেদী ধরন ধরে ফেলেছি দেখুন ) বানান দেখতে পাচ্ছি, আমি দু'টোতেই স্বচ্ছন্দ , কিন্তু লেখায় যে কোন একটা অনুসরণ করলে হয়তো ভালো দেখায়। আর এটা কিন্তু পোয়েটিক সাজেশন, মাইন্ড করলে মাইর দিব। । ভালো থাকবেন ।
৮ পাইলাম, সন্দেশ , প্লীজ সন্দেশ খাওয়ান :
আপনি তো চমৎকার একজন মা।
ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
লেখাটা খুব ভালো লাগলো। সাধারণ দিনলিপি কিন্তু পড়তে কী চমৎকার লাগলো!
সবাই আমার নাম নিয়া একটা টানাহেঁচড়া করেন ক্যান?
(বানানের ভয়ে লেখাই ছেড়ে দিয়েছি)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
খুব ভালো লাগল লেখাটা।
বেশ কিছুদিন আগে কোথায় যেন পড়েছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে না কখনো। তবে পরে ভালোভাবে গা-মাথা মুছে নিতে হয়, শুকনো কাপড় পরতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন