রুবা, বৃষ্টি আর স্মৃতির ডালপালা

শামীম রুনা এর ছবি
লিখেছেন শামীম রুনা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০৮/২০০৯ - ৯:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রুবার রিক্সা এসে দাঁড়াল হাতিরপুল আর ইস্টার্ণ প্লাজার চৌমাথার জ্যামে। চতুর্পাশ থেকে যানগুলো ঢুকে পড়েছে, সবাই আগে যেতে চায়। এখানে কোনো ট্রাফিক পুলিশকেও দেখা যাচ্ছে না, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রন করছে ছোঁকড়া টাইপের দু’জন কমিউনিটি পুলিশ এবং এই কর্ম করতে যেয়ে ওরা আরো বেড়াছ্যাঁড়া অবস্থা সৃষ্টি করে এখন অকারণে হম্বিতম্বি করছে নিরীহ গোছের রিক্সাচালক বা প্রাইভেট গাড়ী চালকদের। দেখা যাচ্ছে সবাই শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। টিপটিপ করে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি ঝরছে সকাল থেকে, ঘন কালো কাঁদা আর অবর্জনায় রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ রকম কাহিল হয়ে পড়েছে, তারপর রয়েছে মধ্য ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম। জ্যাম কখন ছুটবে সে ভাবনা নেই রুবার, সে রিক্সার হুডের যতটা সম্ভব ভেতর দিকে নিজেকে গুঁজ দিয়ে আনমনে ওর বাঁ পাশের চোয়ালে হাত বুলায়; সেখানে একটি কালচে দাগের নিচে ফুলে উঠা হাঁড়ের অস্তিত্ব হাতে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে কালরাতের বাজে স্মৃতিটা আবার চোখের সামনে ভেসে উঠে প্লাজমা টিভিতে সিরিয়াল দেখার মতো করে। নকিবের মুষ্টিবদ্ধ হাতের স্মৃতি রুবা মাথা নেড়ে দূর করতে চায় এই মুহূর্তে। এমন সুন্দর বিকেল ( হোক ফ্যাচফ্যাচে বৃষ্টিময় ) নকিবের মতো একজন বর্বর মানুষের কথা ভেবে নষ্ট করার মানে হয় না। নকিবের চিন্তা থেকে সাময়িক পরিত্রান পাবার জন্য ও যাচ্ছে শাহবাগের আজিজ মার্কেটে, বন্ধু শাহীন আর নিঝুমের নতুন গড়ে তোলা বুটিক হাউজে ঢুঁ মারতে। আজিজ মার্কেট এক সময় বইয়ের মার্কেট থাকলেও সেটি এখন ধীরে ধীরে কাপড়ের বাজারে পরিণত হতে চলছে। মানুষেরা কি বই পড়ে সৃজনশীল মনন গঠনের থেকে বেশি ফ্যাশন সচেতন দেহ গঠনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে? তা না হলে শাহীন আর নিঝুম কেনো চারুকলা থেকে পড়াশুনা করে এখন বুটিক হাউজের নামে বানিয়ান বিক্রি করছে? জ্যামে জমে থাকা যান-মানুষ দেখতে দেখতে রুবা এসব ভাবে আবার ভাবেও না। এসব ভেবে ওর লাভ কি? সত্যি বলতে কি, আজকে রুবা বেরিয়েছে কিছু সময়রে জন্য শ্বাস নিতে, নিজের বেঁচে থাকার জন্য নিঃশ্বাস নিতে। নিজ বাসায় ( আসলে নকিবের ) ওর দম আঁটকে আসছিল। ওর কোথাও যাবার নেই, বন্ধুদের সহচার্যে যদি কিছু ভালো সময় পাওয়া যায়, এই আশায় ওর শাহবাগ যাত্রা।
আইজকার মতো কর্ম সাবাড়।
হুম...কি? অন্যমনস্ক রুবা রিক্সাওয়ালার কথা বুঝতে পারে না।
এই জ্যাম যে কখন ছুটবো! রাইতের আগে মনে হয় না। ঐ বান্দীর পুলারা জ্যাম না ছুটাইয়া আরো প্যাঁচায়তে লাগছে। রিক্সাচালক আনাড়ী কমিউনিটি পুলিশদের গাল পাড়ে।
রুবা এবার পূর্ণদৃষ্টি মেলে জ্যামের চিত্র দেখে, ভয়ানক! আজ কি সত্যি এই জ্যাম ছুটার সম্ভবনা আছে? বৃষ্টি এবার বেশ বেড়ে উঠে, বড়ো বড়ো ফোটায় ঝরছে। বৃষ্টির ছাঁট থেকে নিজেকে বাঁচাতে নীল পলিথিনটা চারপাশে ছড়াতে যেয়ে রুবার দৃষ্টি থমকে যায় হাতিরপুল থেকে ইস্টার্ণ প্লাজার দিকে মুখ করে থাকা একটি লাল রঙের টয়োটা ফিল্ডার গাড়ীর উপর। যদিও ওয়াইপার সামনের গ্লাসের উপর কুকুরের মত ক্রমাগত লেজ নেড়ে যাচ্ছে তারপরও বৃষ্টির ছাঁটে ঝাপসা হয়ে উঠা কাঁচের ভেতর দিয়ে রুবা দেখতে পায় বিরক্ত মুখে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে নীলু। রুবার বুকের ভেতরে অকারণে ধ্বক্ করে উঠে। কত বছর পর ও নীলুকে দেখলো, ও সময়ের হিসাব জানতে তৎপর হয়ে উঠে; প্রায় তেরো বছর। সে সময়ের হিসাব জানতে পেরে বিস্মৃত হয়, এতো সময় পেরিয়ে গেছে ওদের বিচ্ছেদের! রুবার গলার ভেতর কান্নার দলাটা ফুলে উঠে, ও আবার তা ঠেলে বুকের গহীনে পাঠিয়ে দেয়। রুবার সম্ভবত পুরুষ ভাগ্য খারাপ। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে যার প্রেমে নিত্যদিন ডুবে ছিল সে কি করে ওকে ভুলে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য অচেনা কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? আর পরিবারের সবাই যে ভদ্র ছেলেকে নকিবকে রুবার স্বামী বানিয়ে দিয়েছে তার কাছে কী করে ও প্রতিনিয়ত নির্যাতিত-লাঞ্চিত হয়?
রুবা আবিস্কার করে গাড়ীর ঝাপসা কাঁচের ভেতর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে নীলু, সম্ভবত রুবাকে চেনার চেষ্টা করছে ও। রুবা রিক্সার ভেতরে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয়, ও চায় না ওকে নীলু দেখুক। আরে, নীলু দেখি বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাড়ীর দরজা খুলে নেমে পড়েছে, কাঁদা-পানি ভেঙ্গে রুবার রিক্সার পাশে এসে দাঁড়ায়,
ঠিক ভেবেছি,তুমিই হবে। সাবলীল কন্ঠে বলে নীলু।
রুবা কোনো কথা বলতে পারে না, অপলক তাকিয়ে থাকে নীলুর দিকে। নীলু সেই একই রকম আছে, এতো বছরেও পরিবর্তন সামান্য, শুধু ওকে মুড়ে রেখেছে সফলতা আর স্বচ্ছলতার মোড়ক।
কেমন আছ রুবা? আন্তরিক কন্ঠে জানতে চায় নীলু।
তুমি আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে নীল। রুবা কোনো উত্তর দেয় না, নীলুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমাকে চিনতে পারছো না রুবা? আমি কি খুব বদলে গিয়েছি?
তুমি আবার কোনো আমার সামনে এসেছো নীল? রুবার অভিমানী চোখ নীলুর কাছে প্রশ্ন করে।
রাগ করে আছ আজো? তুমুল বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে নীলু।
তুমি চলে যাও নীল। তোমাকে দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। রুবা পাথর মুখ করে বসে থাকে।
রুবা, তোমার সাথে কথা আছে। চলো আমার গাড়ীতে।
তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই। রুবা প্রতিটি শব্দের উপর জোর দিয়ে বলে।
কিন্তু আমার আছে। চলো। পুরনো দিনের মত করে নীলু রুবার হাত ধরে টানে।
রুবার যে কি হয়, নীলুর সে হাত ধরে টানা ও উপেক্ষা করতে পারে না, ওর মনে হচ্ছে, ও আবার একটি ভুল করছে। নীলুর ডাকে এভাবে সাড়া দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু তবুও ও বোধহীনের মতো, রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে নীলুর হাত ধরে যেয়ে বসে লাল ফিল্ডারে। নীলু এসে বসে ওর পাশে ড্রাইভিং সিটে, দু,জনেই ভিজে একাকার। বৃষ্টি ভেজা গাছের মতো ওদের গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
দু’জনেই চুপচাপ, কেউ যেন কথা খুঁজে পায় না; রুবা বাইরের দিকে তাকিয়ে জ্যাম দেখে, বৃষ্টি দেখে। নীলু হুইলের উপর আঙ্গুল নাড়াচাড়া করে, অকারণে একবার হর্ণ বাজায়।
তোমার কি তাড়া আছে রুবা? মৃদু কন্ঠে জানতে চায় নীলু, রুবা চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকায়।
তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার সব কথা তোমাকে না বলে আমি আর থাকতে পারছি না।
তুমি দেশে কবে ফিরলে?
আমি তোমার জন্য ফিরে এসেছি রুবা।
আমার জন্য! কেন? বিস্মত রুবা আরো বিস্ময় নিয়ে দেখে কি এক জাদু-মন্ত্রে জ্যাম ছুটে গিয়েছে এবং লাল ফিল্ডার সামনের দিকে ছুটে চলছে।
সেদিনও এমনি বৃষ্টি ছিল রুবা , তাই না? ড্রাইভিং রতে করতে আস্তে করে নীলু বলে।
হুম....। আনমনে রুবা উত্তর দেয়, ওরা কেউ ভুলতে পারেনি প্রথম এক সাথে বেড়ানোর স্মৃতি। সেদিন নীলু ওর এক বন্ধুর সাদা টয়োটা ডিএক্স ম্যানেজ করেছিল রুবাকে নিয়ে ঘুরবে বলে, তারপর ঝুম্ বৃষ্টির ভেতর সারা ঢাকা শহর ওরা ঘুরে বেড়িয়েছিল।
এখন গাড়ী ছুটে চলছে ফার্ম গেটের দিকে, রুবা জানতে চায় না আমরা কোথায় যাচ্ছি; কতদিন....কতদিন নীলুর সাথে দ্বিধাহীনভাবে ও হারিয়ে গিয়েছিল অজানা-অচেনায়, কখনো কিছু জানতে না চেয়ে। সত্যি কি হারিয়ে যেতে পেরেছিল? যদি সত্যি হারাতে পারতো তবে রুবার সারা মন জুড়ে সব হারানোর কষ্ট কেনো? ফার্মগেট পেরিয়ে, মহাখালি পেরিয়ে গাড়ী এখন ছুটছে এয়ারপোর্ট রোড ধরে উত্তরায়। পাশে নীলুকে নিয়ে রুবা কেবলই স্মৃতি হাতড়ায়, বাঁ পাশের সেই বাঁধ; ওপাশে ঢালে একটি ছোট্ট লেক আছে, যেখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা ওরা পার করেছে নিরবিচ্ছিন্ন কথা বলে। আজো কি সেই লেক আছে নাকি, রুবার জানতে ইচ্ছে হয়।তবে এয়ারপোর্টের সামনে ওয়াটার ফ্রন্ট নামে লেকের মধ্যে যে রেস্টুরেন্ট ছিল সেটি এখন আর নেই, কয়েক মাস আগে নকিবকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে সি-অফ করতে এসে রুবা জানতে পারে। আর তা জানতে পেরে ওর মনে হচ্ছিল, স্মৃতি বহুল ডায়রীর একটি পাতা হারিয়ে গেছে।
গাড়ী মাঝারী গতিতে উত্তরা ছাড়িয়ে টঙ্গী এসে যায়, পুরোনো চেনা পথ-ঘাট। তখনো এক তালে নিরবিচ্ছিন্ন বৃষ্টি ঝরছে, রুবা ভাবে, নীলু কি আজ আমাকে স্মৃতিতে চুবাবে বলে এভাবে পাকড়াও করে ধরে এনেছে? আর কত! অহর্নিশ আমি তো ডুবেই বেঁচে আছি।
বৃষ্টি বলে হয়ত, পথ-ঘাট ফাঁকা ফাঁকা। মানুষজন তেমন নেই রাস্তায়, গাড়ীও চলছে গুনে গুনে। দীর্ঘক্ষণ ওরা নিরবে বসে আছে কিংবা যে যার ভাবনায় বুঁদ হয়ে আছে অথবা কথার বিষয়ের অভাবে পড়ে ওরা নিরব। অনেক সময় চুপ মেরে থাকার পর ওদের দু’জনের কাছে নিঃশব্দতাকে আর হিরন্ময় মনে হয় না, দু’জনেই নড়েচড়ে বসে। আর সজোরে ব্রেক কষে গাড়ী থামায় নীলু।
রুবা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে দেখে সামনে সালনার সে কটেজ, যেখানে কোনো এক ছুটিতে দল বেঁধে ওরা সব বন্ধুরা এসেছিল পিকনিকে। সারা দিন হৈচৈ করে কাটিয়েছিল ওরা বিপুল উচ্ছ্বাসে। তারপরও, ও আর নীলু এক ফাঁকে, নির্জনে শালের জঙ্গলে হাত ধরাধরি করে হেঁটেছিল, দৌড়েছিল সামনের সবুজের উপর নুয়ে পড়া নীল আকাশটাকে ছোঁবে বলে। রুবার বুক ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস সশব্দে বেরিয়ে আসতে চাইলে ও সেটির দম আঁটকে মেরে ফেলে, সেই না ছুঁতে পারার ব্যর্থতায় ও আজো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ও জানতে চায়, আমরা এখানে কেনো?
এম্নি। ইচ্ছে হলো তোমার সাথে আবার একবার এসব কিছু দেখি। বিব্রত কন্ঠে নীলু বলে।
নীলুর কথায় রুবার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়, নীলু বুঝতে পারে না ওই হাসি তাচ্ছিল্য নাকি প্রশয়ের। এখনো ঝিরঝির করে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, রুবা গাড়ীর দরজা খুলে ঘাসে নেমে আসে। নবীন, সতেজ সবুজ ঘাস; বৃষ্টিস্নাত শালবন, উপরে শ্লেটঘষা আকাশ, চোখ ধাঁধানো সবুজ নিয়ে জঙ্গল। চারিপাশের তীব্র নির্জনতা আর জনশূন্যতায় রুবার নিজেকে আবার আর একবার মনে হয় পৃথিবীর প্রথম নারী আর নীলুকে প্রথম পুরুষ।ভাবনাটা মনে উঁকি দেবার সাথে সাথে রুবার বুকের গহীনে কষ্টের সাপটা প্যাঁচ খায়, শীতঘুম ভেঙ্গে জাগতে চায় ।
রুবা ভেজা মাটিতে ঘাসের বুকে হাঁটে, বৃষ্টি ওকে আবার ভেজাচ্ছে সে দিকে কোনো হুঁস নেই যেন ওর। ওর পিছু পিছু এসে দাঁড়ায় নীলু, আকাশ পানে মুখ তুলে হা করে বৃষ্টি খায় সে। রুবা নীলুর দিকে তাকিয়ে হাসে, নীলুও রুবার দিকে তাকিয়ে হাসে।
এই জন্য তুমি রুবা। নীলু আপন মনে আওড়ায়, বৃষ্টির ঝিঁঝিঁ ধরা শব্দ চাপিয়ে সে কথা রুবার কানে পৌঁছায় না।
রুবা ভেজা শরীর নিয়ে উঠে আসে কটেজের বারান্দায়, বসার কিছু নেই; ওরা গুনে ধরা কাঠের রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতি দেখে, সবুজ দেখে, বৃষ্টি দেখে, নিরবতা দেখে অথবা দেখে না কিছুই। এক সময় রুবা নীলুর দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকায়, এই দৃষ্টি এতদিন নীলুকে তাড়িয়ে নিয়েছে, নিজের কাছে নিজেকে বিক্ষিপ্ত করেছে। নীলু দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।
কী কথা তোমার নীলু, বলো।
রুবা, আমি তোমার কাছে পাপ করেছি। সে পাপের বোঝায় আমি ক্লান্ত।
পুরনো কথা নীলু। আর কিছু বলার আছে?
দেখ রুবা, সে সময়টা এমন ছিল যে, বাবার মৃত্যুর পর আমাদের বিশাল সংসারের ভার বহনের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর। আমার প্রয়োজন ছির প্রচুর টাকার অথচ তখন আমার কোনো চাকরিও ছিল না। আমি বাধ্য হয়ে লন্ডন প্রবাসী সায়রাকে বিয়ে করে ওর বাবার ব্যবসা দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছি নিজের পরিবারকে জল থেকে টেনে তোলার জন্য।
এসব তো জানা কথা নীলু। আবার কেন বলছ?
আমি ভালো নেই রুবা। তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা যে আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি সে আমাকে পরিবারের কারণে এতো বড় পাপ তোমার সাথে করতে হলো। আমার ভাই-বোনরা সবাই ভালো আছে। সবারই সফল আনন্দময় জীবন। আমি কেবল আনন্দহীন। স্বচ্ছলতা অর্থ আমার পায়ে লুটোপুটি খায় কিন্তু আমি ভালো নেই। আমার মন ভালো নেই রুবা।
রুবা নির্ণিমেষ দৃষ্টি মেলে নীলুকে দেখে, সত্যি কি ও ভালো নেই?
আমার এই ভালো না থাকা আমাকে তাড়া করে দেশে নিয়ে এসেছে। তোমাকে হারানোর পাপে আমি প্রতিনিয়ত বিদ্ধ হচ্ছি। আমি হন্য হয়ে তোমাকে খুঁজেছি, শেষ পর্যন্ত তোমাকে পেলামও। । এখন তুমি বলো, আমি কী করবো। কী করে আমার পাপমুক্তি হবে?
আমি কী করে বলি, তুমি কী করে ভালো থাকবে।
রুবা তুমি কি ভালো আছ? হঠাৎ করে রুবার চোখে চোখ রেখে নীলু জানতে চায়।
রুবা নীলুর চোখে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়, নীলু, আমি সব ভুলে গেয়েছি। তোমার উপর আমার কোনো রাগ-অভিযোগ নেই। তুমি কোনো পাপ করনি, আর যদি করেও থাক আজ তা এই বর্ষার জলে ধুয়ে গেছে। তুমি, আমি আমরা দু’জনে বর্ষার জলে স্নান করে শূচি হয়েছি নীলু। রুবা আনমনে বাঁ চোয়ালের উপর হাত রাখে।
ওখানে কি হয়েছে রুবা?
রুবা কিছু বলে না, প্রকৃতির বুকে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলার শক্তি ওর নেই, ও তাই হাল্কা হেসে সব কিছু বাষ্প করে বৃষ্টিতে মিশিয়ে দিতে চায় যেন।
নীলুর চোখে অবিশ্বাসের ছায়া দোল খায়।
আমি জানি তুমি সুখে নেই রুবা। নীলু রুবার ডান হাত ধরে বলে।
তাতে কী আসে যায়। হাত ছাড়িয়ে নেয় রুবা।
আমিও সুখে নেই।
রুবা নীলুর চোখের দিকে তাকায়, দু’হাত বাড়িয়ে নীলুর দু’হাত ধরে ও; নীল, চলো আমরা বৃষ্টিস্নান করি...... প্রকৃতির তুমুল বৃষ্টিতে রুবা নীলুর হাত ধরে এসে দাঁড়ায়।

আফা, আজিজ মার্কেট আইসা পড়ছে। রিক্সাওয়ালা ঝাঁকি দিয়ে রিক্সা থামিয়ে বলে। রুবা বিভ্রান্ত দৃষ্টি মেলে সামনে তাকিয়ে দেখে, কোথায় সালনা! কোথায় শালবন! কোথায় বৃষ্টিস্নান! কোথায় তেরো বছর আগে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া নীলু! ওর রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে শাহবাগের রাস্তায়। রুবার মুখের দিকে তাকিয়ে রিক্সাওয়ালা কী বুঝে কে জানে, দরদী কন্ঠে জানতে চায়, আফা, কান্দেন কেনো? কোনো সমস্যা হইছে?
নাহ। হেসে বলে রুবা। রিক্সাওয়ালা ভাই, আপনি কি আমাকে রমনা পার্কে নামিয়ে দিতে পারবেন?
রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে রুবার দিকে তাকায়, আসমান ফুটা হওয়া বৃষ্টিতে অতি দুখী ছাড়া কে যায় পার্কে? সে আবার রিক্সা চালাতে শুরু করে।
রুবা আজ বৃষ্টির নিচে, প্রকৃতির কাছে কাঁদবে, স্মৃতির ডালপালা এই বৃষ্টিতে ও আবার মেলে ধরবে নিজের সম্মুখে।


মন্তব্য

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এ যে দেখছি, মিস্টি প্রেমের দুষ্টু গল্প...

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

শামীম রুনা এর ছবি

এ যে দেখছি মিষ্টি কমেন্ট!

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

মোঘল [অতিথি] এর ছবি

পড়লাম। ভালো লিখেছন।

শামীম রুনা এর ছবি

ধন্যবাদ।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

বালক এর ছবি

রুনা আমার বড় বোনের নাম আর রুবা ছোট বোনের। এই গল্পে ২টাই আছে হাসি

_____________________________________________
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

শামীম রুনা এর ছবি

বোনদের দেখছি খুব ভালবাসেন।
ধন্যবাদ গল্প পড়বার জন্য।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

শামীম রুনা এর ছবি

বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখানোর জন্য ধন্যবাদ।

________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভাবিছলাম দুই দুখী মানুষ মিল হয়ে সুখের সমুদ্রে ভাসবে। কিন্তু কি থেকে কী! রুবা কী'না একা ভিজছে ভরা বর্ষার বৃষ্টি, দুঃখভারাতুর মনে! আপা, রুবাকে সঙ্গ দিতে আমাকে পাঠানো যায় না রমনায়! দেঁতো হাসি

গল্প ভালো লাগলো!
....................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

শামীম রুনা এর ছবি

দৌড় দেন, রুবা বোধ হয় এখনো একাই বসে আছে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কন্কী! এতক্ষণ ভিজলে জ্বর আসবে না! দেঁতো হাসি
.................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভালো গল্প আপা। বুঝিনি শেষটা বাস্তব হবে, আশা ছিলো ভিন্নরকম।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল পড়ে...
এ কারণেই হয়ত আমি প্রেম পিরিতি ডরাই....

(জয়িতা)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই তাইলে গঠনা?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।