মোবাইলটা তখনও হাতে ধরাই থাকে। শুধু মনে হয়, আমার জগৎ সংসার চেনা পৃথিবী সব উল্টে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেছি! আমার আর কিছু নাই! ভেতরের এমন হু হু করা শূন্যতা আমাকে জড়িয়ে ধরে, ভরহীনতায় টলে উঠি। তারপরও, কী এক জেদে সঙ্গাহীন হই না বা আছড়ে পড়ে যাই না। নিজের চোখের তারায় একটি মুখ জ্বলজল করে। আমি প্রবল ভাবে সে মুখকে নিজের অনুভুতিতে আনতে চাই।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার দুই মেয়ে, ওরা হতবিহ্বল। হয়ত মাম্মার মুখ দেখে ভয়ংকর কোনো ঘটনা আঁচ করে। ওরা কেঁদে ওঠে আমার কোনো কথা না শুনে। আমি ওদের দিকে তাকাই, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারি না; আমার দুই চোয়াল পরস্পর আঁটকে থাকে। আমি শুষ্ক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বোবা মানুষের মতো কিছু বলতে চেষ্টা করি, পারি না; মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের বিল্ডিং-এ আমার যে ভাগ্নি থাকে তার কাছে ছুটে যায়।
আমার রিক্সা লালমাটিয়ার দিকে যেতে যেতে কাছের মানুষদের মোবাইলে ক্রমাগত চিৎকার করে একটি কথা বারবার বলতে থাকি, ওরা টুটুলকে কোপাইছে! কথাটি বলতে আমার একদম ভালো লাগে না। যতবার এই কথাটি উচ্চারণ করি ততবার আমার ভেতরে একটি আইস বার্গ ভাঙে আর আমি হিম হতে থাকি!
এই কথাটি ফোনে আমাকে অফিস পিয়ন রাসেল বলেছিল। “সবাইরে কোপাইয়া বাইর থাইক্কা ওরা দরজায় তালা দিয়া গেছে। ম্যাডাম তাড়াতাড়ি আসেন….”
পরে এফবি’তে দেখেছি, রণদা’ও; কোপ খেয়ে আটকে থাকা অবস্থাতেই স্টেটাস দিয়েছিলেন; “কোপাইছে আমি টুটুল ভাই আর তারেক”
আমি রাসেলের কথা বুঝতে পারি না তা কিন্তু না। আমি ওর কথা ঠিকই বুঝতে পারি। আমার আর টুটুলের মনে এরকম একটি শঙ্কা ছিল কিন্তু শঙ্কা যে বাস্তব হতে পারে তা কেনো যেন মনে হতো না। যে রাতে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয় সে রাতেই তো আমরা জেনেছিলাম, টুটুলের কাজ কর্মও অনেকের পছন্দ নয়। তারা চায় টুটুলকেও হত্যা করতে, শুদ্ধস্বরের অফিস, বই’র গোডাউন পুড়িয়ে দিতে চায়। ভয় পেয়েছিলাম আমরা, যত না টুটুল তার চেয়ে আমরা বেশি। টুটুল আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলত, আমি তেমন ইম্পর্টেন্ট কেউ না। আমাকে মেরে কি করবে! ভয় দেখিয়েছে হয়ত। আমিও ওর কথায় নির্ভয় হতে চাইতাম। সত্যি তো, ও তো তেমন ইম্পর্টেন্ট কেউ না। আবার ভাবতাম, টুটুলের কাজও তো সমাজের কারো না কারো চিন্তাতে সুক্ষ হলেও দাগ কাটতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু এ্ই কাজের জন্য ওর জীবন সংসয় হতে পারে তা ভাবতে মন চাইতো না। প্রথম দিকে হুমকিকে শুধু ভয় দেখানো হুমকি মনে হলেও কয়েক মাস পর এসে কেমন যেন আর ভয় দেখানো হুমকি মনে হচ্ছিল না। টুটুলের ফোনে আজগুবি আর ইনফরমেশন জানতে চাওয়া ফোনকল, অফিসে বই কিনতে আসা বা বই প্রকাশে আগ্রহী অনাহূত যুবকদের আগমণ, বাইরে বের হলে মনে হতো কেউ যেন ফলো করছে। অক্টোবর মাসের শুরুতে, আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিক নিচের খালি ফ্ল্যাটে চোর ঢোকা কিন্তু কিছু চুরি না করে চলে যাওয়া এইসব কিছু আমাদের অস্বস্তিতে ফেলত, তারপরও এসবকে কেবলই সন্দেহভাবতাম; আর সন্দেহের উপর ভিত্তি করে কতোটা আর সতর্ক হওয়া যায়! কিংবা, আমাদের কী করার ছিল টুটুলের জীবনের নিরাপত্তার জন্য? টুটুল তো জিডি করেছিল সেই ২৮শে ফেব্রুয়ারিতে, জিডির রেজাল্ট হিসাবে পুলিশ মাঝে মাঝে সদল বলে এসে অফিসে একটা ঘুর্ণি দিয়ে যেত। পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তা বলতে ওটুকু প্রাপ্তি ছিল আমাদের। এটাও ঠিক, ঘাড়ের ওপর দুইটা পুলিশ বয়ে বেড়ানোর মতো সঙ্গতি বা সামাজিক অবস্থার মানুষ নয় টুটুল। ও ছাপোষা লোক, কাজের ধান্ধায় রিক্সা, সিএনজি’তে চড়ে, প্রতিদিন চেনা-অচেনা অনেক লোকের সাথে কথা বলতে হয়-এভাবে কতটা সতর্ক থাকা যায়! এটাও সত্যি, ফেব্রুয়ারির পর থেকে মানুষজনের সাথে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসাও কমে এসেছিল। সবকিছু মিলে পরিস্থিতি ক্রমশ আইসোলেটেট হয়ে গিয়েছিল। আগামী বই মেলা নিয়ে আমার মনে অনিশ্চয়তা কাজ করছিল। পনেরোর বই মেলায় অভিজিৎ রায়-এর মতো লেখককে হত্যা এবং তার বিচার না হওয়া, ওয়াশিকুর, অনন্ত বিজয় দাস, নিলয় নীল এত ব্লগার খুন, আবার টিএসসি’তে এবছর পহেলা বৈশাখে যা ঘটে গেল-বিচারহীন এতসব ঘটনার পর ষোল’তে শান্তিপূর্ণ একটি বই মেলার আশা করতে পারছিলাম না কিছুতেই। কিন্তু, টুটুল আগামীর বই মেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠতে চাইছিল। বইয়ের মাধ্যমে, মানুষের ভাবনার, চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনের স্বপ্ন ও ঠিকই দেখতো। তাই তো, ঠিক ঠিক লেখকদের সাথে যোগাযোগ করে পাণ্ডুলিপি নিয়ে আগামী বই মেলার কাজও চালাচ্ছিল।
আমি যখন অফিসের সামনে পৌঁছাই তখন লালমাটিয়ার সি ব্লকের পুরাটা রাস্তায় যেন হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে। পুলিশের গাড়ি, ভ্যান, চাপা কথা-আমি রিক্সা থেকে নামতেই একজন পুলিশ সামনে দাঁড়িয়ে, আপনি টুটুল ভাবী?...উনাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে, আপনি ওখানে যান।
কে একজন পাশে এসে বলে, ভাবী আপনি আমার সাথে চলেন। আমি তাকে চিনি না,(পরে জেনেছি ও বিডি নিউজে কাজ করে আর কয়েক বছর আগে শুদ্ধস্বরে কাজ করতো, আমি ওকে তখন চিনতে পারি নাই।) তারপরও অচেনা মানুষটির সাথে সিএনজিতে চড়ে বসি। রাস্তায় জ্যাম কম, সিএনজিও ঠিকঠাক চলছে; আমার মনে হয় অনন্তকাল বুঝি শেষ হয় না পথ! কয়টা বাজে? দুপুর তিনটা কী কয়েক মিনিট বেশি হবে হয়ত তখন। টুটুল তো আমাকে দুইটা আটাশে শেষ এসএমএস পাঠিয়েছিল," ফিরতে দেরী হতে পারে। আজীজ মার্কেটে যাব…” তারপর আমি গোসল সেরে টেবিলে ভাত নিতে নিতে মনে হলো, অফিসে রণদা আর তারেকও আছে। খেয়ে যেতে বলি ওদের। ভাবতে ভাবতেই তো ফোন করেছিলাম টুটুলকে। পর পর দুইবার রিং হবার পরও যখন টুটুল ফোন ধরে না, তখনই পাল্পিটিশন যেমন বেড়ে যায় তেমনি ওর ওপর রাগও হয়। কত দিন বলেছি, ফোনটা যেন রিসিভ করে শুধু হ্যালো বলে। তা না হলে আমার টেনশন হয়। আর তখনই টুটুলের ফোন থেকে ফোন করে রাসেল আমাকে উপরের কথাগুলো বলে! কয় মিনিটের ব্যবধানে এতসব ঘটনা ঘটে গেল! আমি কিছু জানলাম না, বুঝলাম না!
আমি যখন ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে গিয়ে দাঁড়াই সামনে তিনটা ট্রলি। আমার পা টলে উঠে। তখনো চেনা-জানা, আত্মীয় বা বন্ধুরা কেউ আসে নাই। আমি একা, সম্পূর্ণ একা। ইমার্জেন্সির ফ্লোর জুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত! তিনটা ট্রলিতে তিনজন মানুষ শুয়ে আছে, কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। ওদের ঘিরে আছে হাসপাতালের নির্বিকার স্টাফ। আমার বুকটা আবারও ধ্বক করে উঠে। এতক্ষণ সিএনজি করে আসার সময় আমি শুধু মনে প্রানে চেয়েছিলাম, ও যেন বেঁচে থাকে। আমার সঙ্গে আসা ছেলেটিও বার বার বলছিল, টুটুল ভাই বেঁচে আছে। ভাবী আপনি ভয় পাবেন না। তারপরই মনে হয়েছে, ওর ডায়াবেটিস আছে। যদি ব্লাডের সেল ভাঙা শুরু হয় কতক্ষণ ও টিকে থাকতে পারবে…এই সব কত কিছু ভাবনা বার বার মাথায় এসেছে আবার পর মুহূর্তে ভেবেছি; টুটুল ঠিক আছে। একদম ঠিক আছে। আর এই মুহূর্তে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে মনে হয় কোন জন টুটুল? আর ওই ট্রলিগুলোতে শুধু টুটুল নয় আমাদের আরো দুই বন্ধু! তারপরও আমি স্বার্থপরের মতো টুটুলকে খুঁজে নিই আর একটি রক্তাত্ব মানুষের হৃদস্পন্দন নিজের হাতে স্পর্শ করবার তীব্র ইচ্ছায় ওকে আঁকড়ে ধরি। আমার ভেতরে তুমুল বেগে স্মৃতিরা আসা-যাওয়া করে-ও কি আছে? ও কি বেঁচে আছে? ওর সঙ্গে একান্ত স্মৃতিগুলো নির্লজ্জ বেহায়ার মতো আমার মনে পড়তে থাকে আর মনে হয়; তুমি তাকাও। একবার তাকাও। আমার দিকে একবার তাকাও। আমি সবকিছুর বিনিময়ে আর একবার তোমার চোখে নিজের ছবি দেখতে চাই!
টুটুল চোখ মেলে আমার দিকে তাকায়। দৃষ্টিতে শূন্যতা! ও কি আমাকে চিনে নাই? টুটুল আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে, ওর চোখ থেকে পানি নাকি রক্ত গড়িয়ে পড়ে আমি বুঝি না। কেমন গড়গড়া স্বরে আমাকে বলে, রুনা…! ওর কথায় আমি এপর কী করেছিলাম বা ভেবেছিলাম মনে নাই। তবে টুটুলের পরের কথাটা ছিল, তারেক… রণদাকে একটু দেখ…
পাশের ট্রলিতে তারেক, নিশ্চুপ আর নিথর। আমার বুকের ভেতরটা আবারও হিম হয়ে আসে। তারেক! কত পরিচিত মিষ্টি মুখ! কথায় কথায় শুধু হাসে। টুটুল তারেককে খুব ভালোবাসে। আর ওর সে ভালোবাসা কখন যেন আমার ভেতরও প্রবাহিত হয়ে গেছে। আমিও তারেককে খুব স্নেহ করি, যেন আমার ছোট ভাইটি! আমি ওর রক্তে ভেজা কপালে হাত রাখলে তারেক তাকানোর চেষ্টা করে, হয়ত আমাকে দেখে বা দেখে না। আমি কোনো কথা বলতে পারি না। তারেকের মাথার কাছে কয়েক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে পাশের ট্রলিতে রণদা’র কাছে গিয়ে দাঁড়াই। রণদা এই প্রথম আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলেন না, শুভ অপরাহ্ন! প্রানপ্রাচুর্য্যে ভরপুর রণদা’র চোখে তখন পুরাই স্তব্ধ করা দৃষ্টি! আমি রণদা’কেও কিছু বলতে পারি না, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি।
এর মধ্যে শুরু হয় হাসপাতালের লোকজনের বকাঝকা। রোগীদের টিকেট কেটে আনেন। না হলে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব না। টিকেট! বিস্মিত হই না, ফেব্রুয়ারির ছাব্বিশ তারিখ যখন অভিজিৎদা আর বন্যাদি’র খবর শুনে এসেছিলাম, তখনও শুনেছিলাম; দশ টাকার টিকেট কেটে আনার হুঙ্কার! যেন জীবন থেকেও দশ টাকার টিকেটের দাম বেশি! আমি হতব্হ্বিল, টিকেট কাটতে কোথায় যাব? রাসেল বলল, ম্যাডাম আমি টিকেট কেটে আনছি..
আমি ওকে তিনজনের টিকেট কেটে আনতে বললাম। এই তিনজনের টিকেট কেটে আনার গল্পটাও ইন্টারেস্টিং! আমরা যতক্ষণ ইমার্জেন্সিতে ছিলাম, ততক্ষণ হাসপাতালের লোকজন আমাদের টিকেট কেটে আনার হুঙ্কার দিয়েছে আর প্রত্যেকবার, প্রতি পেসেন্টের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা গিয়ে প্রত্যেকে তিনটা করে টিকেট কেটে এনেছে। মানুষের এই চরম দু:সময়ে এতবার করে টিকেট কাটনোর রহস্যটা আমার কাছে রহস্যই রয়ে গেছে। আর দশ টাকার টিকেটের পরিবর্তে চিকিৎসা না করার ব্যাপারটাও খুবই অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। অবশ্য তখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন নাই এরা যে নাস্তিক ব্লগারের ট্যাগ খাওয়া!(হায়রে! মুক্তচিন্তক, মুক্তমনা আর যুক্তিবাদী হলেই মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়! ব্লগ নামক অন লাইনে লিখলে মানুষ অবাঞ্চিত ব্লগার হয়ে যায়! যে লেখা মানুষকে ভাবতে সাহায্য করে তেমন লেখার বই ছাপালে অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়!) দেখলাম, টিভি ক্যামেরা,পত্রিকার রিপোর্টার এইসব হাবিজাবি যন্ত্রপাতি আর মানুষজন এসে হাসপাতালকে সরগম করে তুললে হাসপাতালও ট্রিটমেন্ট দেওয়া শুরু করলো। ব্রাদারদের পরিবর্তে ডাক্তাররা এসে রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল।
টুটুলকে যখন ওটিতে নেয়া হলো তখন পুরু হাসপাতাল মানুষে মানুষে ভরে গেছে। এর মধ্যে তারেকের কাছ থেকে ওর বাসার ফোন নাম্বার নিয়ে ওর বাসায় খবর দিয়েছি। আর রণদা ফেসবুকের মাধ্যমে উনার বন্ধু বান্ধবদের জানিয়ে ছিলেন। সবার আত্মীয়, বন্ধু আর শুভাকাঙ্খিরা দলে দলে ছুটে আসছিলেন। তিন পেসেন্টের জন্যে ও প্লাস, এ প্লাস, আর বি প্লাস ইমার্জেন্সি ব্লাডের প্রয়োজন, কোথা থেকে শ’খানেক ব্লাড ডোনার এসে জড়ো হয়ে গেছে। কেউ এসে বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে আমাকে, কেউ এসে কাঁধে হাত রাখছে কেউ বা মাথায় হাত রেখে নীরবে বলে যাচ্ছে, আমরা পাশে আছি। এই যে বন্ধুদের এত ভালবাসা, এই যে স্বজনদের এত আহাজারি, এই যে শুভাকাঙ্খিদের এত শুভ কামনা! প্রচণ্ড দুর্ভাবনার ভেতরও আমি মনের ভেতর আস্তে আস্তে সাহস পেতে থাকি। মনে হয়, টুটুলের, টুটুলদের আর কতজন শত্রু, হাজার হাজার বন্ধুর ভিড়ে!
মন্তব্য
... ... ... ... ...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কেউ কেউ বলে লেখে/টেখে কিচ্ছু হয় না। কেউবা বলে সব কিছু লিখে রাখতে হবে। জানাতে হবে। ছড়িয়ে দিতে হবে।
আমরা লেখার পক্ষের মানুষ। আমরা জানিয়ে দেবো সবকিছু, সবাইকে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অনেকক্ষণ ভেবেও কি বলবো বুঝতে পারলাম না ...
পাশে আছি
...........................
Every Picture Tells a Story
রাত তখন চারটার কাছাকাছি হবে, ডালাস যাওয়ার জন্যে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম! ফেসবুকে খবরটি দেখে কেমন জানি শূণ্য হয়ে গিয়েছিলাম! সেই শূণ্যতায় বিহ্বল হয়েই রাত চারটার দিকেই তপু ভাইরে ফোন দিয়ে দিলাম!
টুটুল ভাইয়ের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত পরিচয় নেই! আসলে ব্যক্তি পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, মুক্তমনের প্রতিটি মানুষ যে আত্নার সবচেয়ে কাছের প্রিয়জন সেদিন আরো ভালোভাবে অনুধাবন করেছিলাম। ভালোথাকুক টুটুল ভাই, নিরাপদে থাকুক আলোর পথের সব যাত্রীরা।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
এসব পড়লে ভেতরটা খালি খালি লাগে আপু।
আপনার আর বাচ্চাদুটোর ওপর যে কী গিয়েছে, ভাবতেই ভয় লাগে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
টুটুল ভাইয়ের মত সাহসী মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, জয় আমাদের হবেই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আমরাও চরম উদ্বিগ্ন ছিলাম ৩১ অক্টোবর। চোখের সামনে ভাসছিল টুটুল ভাই রণদার মুখখানা। রণদা, টুটুল ভাই ও তারেক রহিমের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
পড়ার সময় একটা চাঁপা কষ্ট হচ্ছিল, বড় অসহায় লাগে এসব দেখে।
৩০শে অক্টোবর মানে ঐ শুক্রবার রাতে ফেসবুক ডি-অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছিলাম। শনি রবি, দু'রাতে দুটো সাবমিশন, কাজ করবো বলে।
সকালে মিটিং ছিলো একটা, তাড়াহুড়োয় আর নিউজ চেক করা হয় নি। ওখানে বসেই সচল সুপাশিআপুর মেসেজ পেয়েছিলাম ভাইবারে, আমার খুব মন খারাপ লাগছে বা এরকম কিছু..
আমি আসল ঘটনা বুঝিনি, হঠাৎ মন খারাপ! এমনিই হয় তো।
পুরো দিন গেলো ওভাবেই, চারটার দিকে বোধ হয়, সচল খুলে লিটারেলি মাথা ঘুরে গেলো। দেশে একজন প্রকাশক মারা গেছেন, আরো তিনজনকে কুপিয়েছে, গুলি করে রুমে তালা মেরে রেখে গেছে যাতে মরে যায়। এই তিনজনকে তো আমিও চিনি!
টুটুল ভাইকে একবারই দেখেছিলাম বইমেলায়, শুদ্ধস্বরের স্টলে, ব্যস্তসমস্ত অবস্থায়।
আর তারেক ভাই একদম প্রথম দেখা সচলদের একজন। জুয়েইরিযাহ মউ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, আজিজে। একদম ক্যাজুয়াল একটা মানুষ, হাসিমুখ সবসময়..
এরপর যেখানে যতো নিউজ ঘেঁটেঘেঁটে পড়ি, উনাদের মুখ আর চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছিলাম না।
ব্লগাররাই তো দেশের তেলগ্যাসপানির সবচেয়ে বড় হুমকি, তাদের একের পর এক গরুছাগলের মতো কুপিয়ে, জবাই করে ফেলে যায়। অতো দূরের দেশ ফিলিস্তিনে বোমা পড়লে হ্যাশট্যাগের মচ্ছবে ভাসে হোমফিড, নিজের দেশের মানুষের রক্ত দেখে কেউ কিচ্ছু বলে না!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
...
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ঐ ভয়াবহ দিনগুলির কথা চিন্তা করতেই মনটা অসাড় হয়ে যায়; আমি চিন্তাও করতে পারি না কীরকম ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে আপনারা সময়টা পার করেছেন।
টুটুল ভাইয়ের মত সাহসী প্রকাশকরাই আমাদের প্রেরণা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এরকম মর্মান্তিক একটা সময়ে হাসপাতালের লোকজন এমন আচরণ করতে পারে! তাও একবার না বারবার!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মানসিকভাবে শক্ত থেকে আপনি আচমকা আসা একটা ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আপনাকে স্যালুট।
_____________
সৌমিত্র
অতি বাস্তবতায় কঠিন মুহূর্তে নিজেকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি সামাল দেবার যে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন তাতে মনটা ছু্য়েছে।আসলে প্রিয় মানুষের এত কঠিন অবস্থা দেখে নিজের আবেগ আর পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাকে যেভাবে মানিয়ে নিয়েছেন আপনাকে মনের অন্তঃস্থল থেকে মোবারকবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন