নিছক কৌতূহলবশত লেখা। কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন আর ডেইলি সান পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের করা মামলার রায় পড়ে কৌতূহলের উৎপত্তি। তিনটা রায়ই প্রায় একই রকম লাগল যেহেতু অভিযোগগুলো প্রায় অভিন্ন ছিল। এই লেখায় আপাততভাবে কালের কণ্ঠেরটাতেই মনোযোগ দেই।
রায় অনুযায়ী, মতিউর রহমান অভিযোগে বলেছিলেন,
১নং প্রতিপক্ষ জনাব ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় লাগাতার অব্যাহত ও বিরামহীনভাবে ফরিয়াদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুৎসাপূর্ণ মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে পারিবারিক পরিমণ্ডলে, কর্মস্থলে এবং দেশে-বিদেশে আত্মীয় ও শুভাকাঙ্ক্ষী এবং হিতৈষী মহলে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কূটকৌশল হিসেবে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার সম্মানহানি করেছেন।
অভিযুক্ত প্রতিবেদনগুলোর একাংশঃ
১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় ‘মতিউর রহমান ও প্রথম আলোর সেইসব ভূমিকা’; ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রথম আলো নেমেছে মিথ্যাচারে’; ১৪ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘নামাজকে বিদ্রূপ করছে প্রথম আলো’; ১৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে দেখি, এমন গুনাহর কাজ বিধর্মীরাও করে না’ ও ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ১৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর প্রথম পাতায় শীর্ষ সংবাদ হিসাবে- (ক) মহানবীর নাম নিয়ে আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করে নাকে খত দিয়েও শিক্ষা হয়নি প্রথম আলোর। (খ) নিজেদের অপকর্মের জন্য প্রথম আলো ও এর সম্পাদক মতিউর রহমান নাকে খত দিয়েছেন বারবার।...প্রকাশ করে ফরিয়াদীকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ‘আমার মায়ের কান্নাও গলাতে পারেনি মতিউর রহমানকে’ – কার্টুনিস্ট আরিফের সাক্ষাৎকার সম্বলিত এই প্রতিবেদন (যেটা মূলত বাংলানিউজ থেকে কালের কণ্ঠ সংগ্রহ করেছিল) নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। ফরিয়াদী কি দাবি করেছেন যে এটা বানোয়াট সাক্ষাৎকার?
অভিযোগ আর রায়ের শুনানিতে ঐ কার্টুন প্রকাশের জন্য না না ভাবে দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা, কার্টুনিস্টকে চাকরিচ্যুত, আর আলেম সমাজের সাথে বৈঠক করে যে দেশকে উদ্ধার করেছেন, মতিউর রহমান সুদীর্ঘভাবে তা উল্লেখ করেছেন। যতদূর বুঝলাম, যেহেতু এত এত ক্ষমা প্রার্থনা প্রকাশ আগেই করা হয়ে গেছে, তা নিয়ে পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটার জন্য রায় কালের কণ্ঠের বিরুদ্ধে গেছে (তেমন কোন শাস্তি না, স্রেফ সতর্ক করা হয়েছে)। এখানেই প্রেস কাউন্সিলের কার্যকারিতার পরিসর নিয়ে কৌতূহল জাগল।
১) প্রেস কাউন্সিলে কি শুধু সম্পাদকেরা মামলা করার এখতিয়ার রাখেন না কি সংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত যে কেউ? যদি শেষেরটা হয়, তাহলে কার্টুনিস্ট আরিফ কি তাকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরিচ্যূত করার জন্য মামলা করতে পারে/পারত মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে?
২) শুধু পাঠক হিসেবে কেউ কি প্রেস কাউন্সিলে (সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কিত) কোন অভিযোগ রাখতে পারেন?
৩) মানহানির মামলায় যদি সতর্ক করে দেওয়া হয়, তাহলে মাহমুদুর রহমান যে ‘আমার দেশ’-এ সমানে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে আসছিল, সেই ব্যাপারে প্রেস কাউন্সিল চুপ কেন? না কি যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ মামলা করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেস কাউন্সিল কিছু করে না?
৪) প্রেস কাউন্সিল আর কী কী করার অধিকার রাখে?
(সবচেয়ে হাস্যকর এবং নির্লজ্জ ব্যাপার হল যে ফরিয়াদী একদিকে নিজের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুৎসাপূর্ণ মানহানিকর প্রতিবেদন’ এর জন্য মামলা করেন, তিনিই অপরদিকে সহিংসতায় উস্কানীদাতা মাহমুদুর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেন)
মন্তব্য
"সবচেয়ে হাস্যকর এবং নির্লজ্জ ব্যাপার হল যে ফরিয়াদী একদিকে নিজের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুৎসাপূর্ণ মানহানিকর প্রতিবেদন’ এর জন্য মামলা করেন, তিনিই অপরদিকে সহিংসতায় উস্কানীদাতা মাহমুদুর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দেন"
আবার বিবৃতিতে ইমদাদুল হক মিলনেরও নাম থাকে। পুরাই তামাশা লেগেছে রায়গুলো পড়ে।
- অপর্ণা।
http://www.presscouncil.gov.bd/
এখানে পাবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ! আমি আরো বাংলায় সার্চ দিয়ে দেখছিলাম
দেখি পড়ে কী লিখেছে।
--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!
নতুন মন্তব্য করুন