বেশ কয়েক দশক আগের কথা। বর্ধমান শহরে একটি ছেলে থাকত। বাবা কর্মসূত্রে বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতেন। মা একা ছেলের সব দুষ্টুমি সামলাতে পারতেন না। ছেলেরও বাড়ীতে মায়ের সাথে একা একা ভালো লাগতো না। তার ভালো লাগতো কলকাতায় জেঠুর বাড়ীতে থাকতে। সেখানে ভীষণ আদর। জেঠু, বড়মা, দাদা, দিদির নয়নের মণি সে সেখানে। সোনা, একটা সন্দেশ খাবি, একটা জিলিপি ... একটার পর একটা চলছেই। বিকালে কখনো জেঠুর কোলে চেপে বেড়িয়ে ফেরার সময় জেঠুকে গল্প শোনায়, "দেখ জেঠু, তোমাকে আমি কি সুন্দর বেড়িয়ে নিয়ে এলাম। বাসে চাপা পড়লে না, ট্রামে চাপা পড়লে না, শেয়ালে তাড়া করলো না।" জেঠু বাড়ি ফিরে হাসতে হাসতে সবাইকে সেই গল্প করে।
মুস্কিল হতো যখন বাবা কিছুদিন পর আসতেন, ছেলেটিকে বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিছুতেই যাবে না সে। হাত-পা ছুঁড়ে সে কী কান্না। সেও কাঁদছে, তার বড়মাও কাঁদছেন। উত্তর কলকাতার গলিতে ট্যাক্সি দাড়িঁয়ে আছে, আর তার দরজার সামনে হাউমাউ, কান্নাকাটি চলছে, প্রায়ই এই নাটকটা দেখা যেত। কিছুদিন পরই আবার জেঠুর কাছ থেকে বাবার কাছে চিঠি যেত, "খোকাকে নিয়ে আয়।" আবার কিছুদিন পর একই নাটক।
খোকা দিনে দিনে বড় হচ্ছে। দুষ্টু বুদ্ধিও বাড়ছে সাথে সাথে। সেবার হাওড়া পৌঁছে তার মথায় নতুন দুষ্টুবুদ্ধি চাপলো। হঠাত চীতকার, "পুলিশ, পুলিশ। আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।" ব্যাস, ভিড় জমে গেল। "ছেলেধরা, ছেলেধরা। মার, মার।" লোকজন এই মারে কি সেই মারে। বাবা হঠাত দেখলেন, তিনি ঘেরাও হয়ে পড়েছেন। দূর থেকে দুয়েকজন পুলিশও ছুটে আসছে। তবে তিনি তো ওই ছেলেরই বাবা। একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে, মাথা ঠান্ডা রেখে ভিড়ের উদ্দেশ্যে বললেন, "একবার জিজ্ঞেস করেই দেখুন, কার ছেলে কে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।"
চার বছরের বাচ্চা। অতো লোক দেখে একটু তো ভড়কাবেই। একদম সত্যি কথাটাই বলে দিল। "বড়মার কাছ থেকে বাবা আমাকে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে। আমি যাবো না-আ-আ-আ-আ।"
তার অনেকদিন পর আজ সেই ছেলেটা মিউনিখে। তার মেয়ে সেখানে কিন্ডারগারটেনে যায়। সেদিন মায়ের সাথে বাড়ী ফেরার সময় তার বায়না চাপলো, এখন সে বাড়ী যাবে না, বন্ধুর বাড়ী যাবে। হাত-পা ছুঁড়ে চিল-চিতকার। মাটিতে পা আঁকড়ে সে মায়ের সাথে টাগ-অফ-ওয়ার চালিয়ে গেল। বড় রাস্তার মধ্যে একটা বাচ্ছা হাউমাউ করে কাঁদছে, আর একজন তাকে ধরে টানছে। শেষকালে সেই পুরোনো গল্প। পুলিশ এসে গেলো।
পুলিশ দেখেই মেয়ে চুপ। চিরকাল তাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এটা-সেটা করান হয়েছে। আজ সামনে সেই সত্যিকারের পুলিশ দেখে তার সব চেঁচামেচি বন্ধ। এদিকে মায়ের অবস্থাও খুব ভাল নয়। জ়ার্মান ভাষায় তো তিনি মহাপন্ডিত। ইরেজি হলে না হয় পুলিশকে কিছু বুঝিয়ে দিতেন। যাই হোক, আকারে ইঙ্গিতে ব্যাপারটা বোঝানো গেলো। পুলিশ একগাল হেসে মেয়েকে একটা চকোলেট দিয়ে গেলো। মেয়ে বাড়ী ফি্রতে ফিরতে মাকে বললো, "তবে যে তুমি বলেছিলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে?"
শঙ্কর
মন্তব্য
দাদা কি পাঞ্চলাইন দিলেন, হাসতে হাসতে যে গড়াগড়ি খেলুম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
মজার
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আপনার ঘটনা শুনে আমার মায়ের অভিশাপ মনে পড়ে গ্যালো 'তোর বাচ্চা তোর মতই ত্যাদর হবে'
দারুণ! এরকম লেখা আরও চাই! খুবই মজা পেলাম। ইতিহাস এভাবেই ফিরে ফিরে আসুক।
[অফটপিকঃ কিছু বাক্যে কি ভুল যায়গায় লাইন-ব্রেক পড়েছে? তেমন হয়ে থাকলে কোন মডুকে বলুন, ঠিক করে দেবে। বলছি কারণ, আমি ওরকমটা দেখে কবিতা ভেবেছিলাম শুরুতে। ]
শঙ্করদা তো ব্যাট করতে নেমে পর পর দুই বলে কাভার ড্রাইভ মেরে বাউন্ডারি পার করে দিলেন। চালিয়ে যান।
আপনার অ্যাকাউন্টটি দেখতে পাচ্ছি "অতিথি সচল" হিসেবে সক্রিয় হয়ে গেছে। এখন আর আপনার লেখার নিচে নামধাম যোগ করা লাগবে না, লেখার ওপরেই দেখুন চলে এসেছে। এই বিদঘুটে ব্যাপারস্যাপার বুঝতে হলে এখানে চোখ বুলাতে পারেন।
আগের পোস্টে বলে গেলেন "ব্যাটা নাম কই?"
এই কথা শুনে শঙ্করদা সাবধানী হয়ে যেই না নাম-ঠিকানা সব দিলেন, অমনি আপনি এসে বলছেন...নাম-ঠিকানা দেয়া লাগবে না
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
দিন বদলাইসে না ?
আমি এর আগের আর পোস্ট খুঁজে পাচ্ছি না! সেগুলো কি লেখকের ব্লগে সংযুক্ত করা হয় নাই?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লেখাটা চমৎকার!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
- জনগণের ইতিহাস বদলানো দেখে হিংসা হয়। নিজের ইতিহাস বদলানোর অভিপ্রায়ের ইতিহাস তো ইতিহাসের পাতাতেই লেখা হয়ে থাকবে! এই জীবনে আর সেটা দেখা হলো না বুঝি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছেলেবেলা সবারই চমৎকার...হায়রে ছেলেবেলা... (দীর্ঘশ্বাস...)
লেখা পড়ে মজা পেলাম...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
মডুভাই,
আরেকটা লেখা দেব ভাবলাম। বলে কিনা ব্লগ সংরক্ষ্ণ চলছে। কাল আবার চেষ্টা করুন। দুঃখে আমার ডানদিকের কানটা সবুজ হয়ে গেছে। এমনটি আর কখনো বলবেন না। প্লীজ।
কাল দেখা হবে।
ও মডুভাই,
বলতে ভুলে গেছি। আমার প্রথম গল্পটিকে (সরকারী অতিথিশালা), আমার ব্লগে নিয়ে আসা যায় না? বেচারী কেমন অনাথের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যতই ফটরফটর করুক, মডারেটরগুলি বাংলাদেশের লোক তো! রেডটেপিজমের চূড়ান্ত করে ছাড়ে! এইখানে দেখুন একটু।
মজা পাইলাম।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ইতিহাসের এভাবেই পুনরাবৃত্তি ঘটে! পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আবার এটাও ভাবছি যে আমাদের জীবনে কবে এমন পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মত মানুষের আগমন ঘটবে!
:)। মজা লেগেছে।
আরে আপনি বর্ধমানের লোক নাকি? কবে ছেড়েছেন বর্ধমান? কোন স্কুলে পড়তেন?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বর্ধমান CMS-e পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। তারপর বাবা বদলি হলেন। পরে দু-তিনবার গেছি। শেষ গেছি প্রায় বছর কুড়ি আগে।
নতুন মন্তব্য করুন