সাইবেরিয়ার প্রান্তরে একটা বরফের টিলার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল ওরা তিনজন। মাঝের জন ডঃ কর্চনয়, একটু বয়স্ক, মাঝারি হাইট, একটু বৈজ্ঞানিক বৈজ্ঞানিক চেহারা। তার দু-পাশে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে, তাদেরকে যে কেউ স্ট্যালোন আর আর্নল্ড বলে ভুল করবে। আসলে দুটোই ক্লোন। র্যাম্বো থ্রি সিনেমাতে স্ট্যালোন একাই গোটা রাশিয়ান টিমকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাগে রাশিয়ার সরকার ওদেশে সিনেমাটার প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়। আর সকলের অজান্তে স্ট্যালোনের ব্লাড স্যাম্পল যোগাড় করে ক্লোন বানিয়ে বিভিন্ন অফিসে ক্লোনগুলোকে সিকিউরিটি গার্ড জাতীয় চাকরীতে বহাল করে। স্ট্যালোন ক্লোনিংযের পরে আর্নল্ডের নামটাও তাদের মাথায় আসে।
অনেক দূর থেকে লোকটা স্কী করে আসছিল। যে প্রচন্ড গতিতে যেরকম অবলীলার সাথে বিপজ্জনক বাঁকগুলো পেরিয়ে আসছিল, কোন সন্দেহ নেই যে কোন উইন্টার অলিম্পিকে সোনার মেডেলের দাবীদার হওয়ার ক্ষমতা রাখে সে। লোকটা ইগলুর মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পর বাইনোকুলারটা নামিয়ে রেখে সঙ্গী দুজনকে বললেন ডঃ কর্চনয়, 'আর কোন সন্দেহ নেই। এই লোককেই খুঁজছি আমরা।'
- 'আপনি পুরোপুরি শিওর তো?' ডানদিক থেকে জিজ্ঞেস করল স্ট্যালোস্কি।
- নিশ্চয়ই। তোমরা তো খালি চোখেই ওর স্কী করা দেখলে। এরকম স্কী করতে এর আগে কাউকে দেখেছ?
- 'না, মানে গত দুদিন ধরেই তো আমরা ওর স্কী করা দেখে আসছি। আজকে নতুন কি দেখলেন যে আপনি একেবারে শিওর হয়ে গেলেন?' বাঁদিক থেকে প্রশ্ন করল আর্নিপভ।
- মাইনাস আটাশ ডিগ্রী টেম্পারেচারে কাউকে শুধু স্যান্ডো গেঞ্জী গায়ে স্কী করতে দেখেছ?
দুটো সাদা গরিলাকে সঙ্গে নিয়ে ডঃ কর্চনয় যখন গুঁড়ি মেরে ইগলুর ভেতরে ঢুকলেন, ইগলুর মালিক তখন পেছন ফিরে বসে একটা স্টোভে করে চা-জাতীয় একটা সবুজ ক্ক্বাথ গরম করছেন। লোকটার বোধহয় পেছন দিকেও দুটো চোখ আছে। সবাই নিঃশব্দে ঢুকেছেন লোকটাকে চমকে দেবেন বলে। কিন্তু সে পেছন ফেরা অবস্থাতেই বলে উঠলো, 'আসুন ডঃ কর্চনয়। গরীবের কুটিরে স্বাগতম।'
- মানে? আপনি জানতেন আমরা আসছি?' অবাক বিস্ময়ে বলে ওঠেন কর্চনয়।
- শুধু জানতাম বলে কম বলা হবে, বলতে পারেন আজ একরকম নেমন্তন্ন করেই তো আপনাকে নিয়ে এলাম', বলতে বলতে ঘুরে দাঁড়ালো সে।
একটা রোগা প্যাংলা শুঁটকো কালো লোক, মাঝারি উচ্চতা, চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই, বয়স পঁয়ত্রিশ না পঞ্চান্ন।
- গত তিনদিন ধরে ওই টিলাটার পেছন থেকে আপনারা আমার ওপর নজর রাখছেন দেখছি। কিন্তু কেন রাখছেন বুঝি নি। মনে হল, দূর থেকে হয়তো আমাকে চিনতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে। তাই আজ ফেরার সময়, টি-শার্টটা খুলে, শুধু স্যান্ডো গেঞ্জী পরে স্কী করতে হল, যাতে আপনি নিঃসংশয় হয়ে আমার গরীবখানায় পদধূলি দেন। এবারে বলুন, কি সেবা করতে পারি আপনাদের?
- আপনাকে আমাদের সঙ্গে এখনি যেতে হবে। ইন্টারপোলের অনুরোধ।
- এই মুহুর্তে তো তা সম্ভব নয়। অরোরা বোরিয়ালিসের স্পেক্ট্রাম এন্যালিসিস করছি এখন। এর সাথে বিগ ব্যাং থিওরীর একটা গাণিতিক সম্পর্ক আছে কি না, সেটা জানতে আমার আরো চার মাস মত লাগবে। তার আগে তো আমার পক্ষে এই এলাকা ছাড়া সম্ভব নয়।
- 'আপনি যেতে না চাইলে আপনাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুকুম আছে আমাদের ওপর', আর্নিকভ বলে উঠলো। এই ছিঁচকে চামচিকেটাকে এত সম্মান দিয়ে কথা বলার কোন কারণ সে খুঁজে পায় নি।
- কি দরকার এত ঝামেলা করার? আমি তো মাত্র চারমাস সময় চেয়েছি। কথা দিচ্ছি ঠিক চার মাস পরে, সজ্ঞানে, নিজের দু ঠ্যাংযের ওপর হেঁটে গরিলা-পরিবৃত না হয়েই আমি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে ঢুঁ মারবো।
'তবে রে বেটা ছুঁচো। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা', এই বলে দুই মুশকো ছুটে এল কাজ শেষ করতে।
ইগলুর দেয়ালটা থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে স্ট্যালোস্কির দেহটা ঘাড় মুচড়ে পড়ল। আর্নিপভের চেহারাটা বড়, ওর ওপর জোরটা একটু বেশীই হয়ে গেছিল। ইগলুর অন্য দিকের দেয়ালটা ভেঙ্গেই পড়লো সে। ভাঙ্গা দেওয়ালটার দিকে তাকিয়ে তালুতে জিভ ঠেকিয়ে একটু চু-চ্চু শব্দ করলেন ঘনাদা, 'দেওয়ালটা এখুনি সারাতে হবে। নাহলে সারারাত ঠান্ডা ঢুকে জমিয়ে দেবে।'
এদিকে ডঃ কর্চনয় তখন হিস্টিরিয়া রুগীর মত হাত-পা ছুঁড়ছেন।
'আমি তখনই বলেছিলাম, শুধু মাসলম্যান নয়, একটু মগজওয়ালা লোক দিও আমার সঙ্গে। তা কেউ আমার কথা শুনলে তো। এই গাধাদুটো আমার সমস্ত কাজ ভেস্তে দিল। এখন আমি কি করি?', এই বলে ছুটে এসে হাঁটু গেড়ে ঘনাদার পা চেপে ধরেন তিনি, 'আপনাকে যেতেই হবে মিঃ দাশ। সমস্ত পৃথিবীর সামনে এখন ভীষণ বিপদ। আপনার গাণিতিক সমাধান কদিন পরে হলেও চলবে। কিন্তু আমাকে প্লীজ নিরাশ করবেন না। আপনার ওপরে সবাই নির্ভর করে আছে।'
- আরে ছাড়ুন ছাড়ুন। কি করছেন কি ডঃ কর্চনয়। আমাকে তখনই যদি পুরো সমস্যাটা খুলে বলতেন, তাহলে হয়তো ব্যাপারটা এতদূর গড়াতো না। কিন্তু ইগলুর দেওয়ালটা তো আগে সারিয়ে নিই। একেই তো শুধু গেঞ্জী পরে একটু ঠান্ডা মতন লেগে গেছে।
- ওটা ওই দুই হনুমান সারিয়ে দেবে। আপনি চিন্তা করবেন না।
দশ মিনিট পর বিছানায় বসে বাসক পাতার গরম রসে চুমুক দিতে দিতে ঘনাদা জিজ্ঞেস করলেন, 'এবার আপনার সমস্যাটা খুলে বলবেন ডঃ কর্চনয়।' ইগলুর বাইরে তখন স্ট্যালস্কি আর আর্নিপভ গজগজ করতে করতে রাজমিস্ত্রীগিরি করছে।
'ন্যানো টেকনোলজির নাম শুনেছেন?'
মন্তব্য
চলুক।
"সচাপ্টে" আর "মিস্টার ডস" শব্দ দুইখান শুধু মিস করলাম গল্পে। কিন্তু উত্তম পুরুষে বয়ান ছাড়া কি ঘনাদার গল্প জমে?
আরো দ্রুত চলুক!...অপেক্ষায় আছি!
--------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
ন্যনো-২ চাই, দেতে হইবে শীঘ্রই।
আর নেটে ঘনাদারে খুঁজে পাওয়ার সিস্টেম থাকলে একটু আওয়াজ দিয়েন তো ভাই।
আপনার লেখার ভংগীটি রীতিমত দুর্ধর্ষ। যদিও ঘনাদার গল্প উৎমপুরুষেই মানায় বেশী, তারপরেও আপনার গল্পবলার স্টাইলে একদম বাঁধা পড়ে গেছি। তাড়াতাড়ি আসুক পরের পর্বটি।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
দুর্ধর্ষ! ফাটাফাটি যাকে বলে! শিগগির পরের পর্ব চাই!
শেষ হলে পুরোটা একসাথে পড়ব
আমি ঘনাদার খুবই বড় ফ্যান...
আপনি খুবই চমৎকার একটা ভঙ্গীতে বলেছেন। তাও শিশির,শিবু- এদের মিস করছি কিছুটা। ঘনাদার ল্যাংবোটেরাই তো তাঁর আসল আকর্ষণ...
অনুগ্রহ করে পরের অংশ দ্রুত লিখুন...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
এত ছোট কেন?
ভাল হয়েছে, চলুক ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
নতুন মন্তব্য করুন