গরম চায়ের কাপে সবে চুমুক দিয়েছি, এমন সময় শিশিরের ফোনটা এল, "সামনের শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা কি করছ?"
এক গাল হেসে বললাম, "যাই করি। তোমার জন্য সব প্রোগ্রাম ক্যান্সেল।"
- একবার আসবে নাকি?
যাবোনা মানে! আমি তো মুখিয়ে আছি, কবে ডাক আসে এই আশায়। এককথায় রাজি।
শুধু রাজি নই, বাকি দুজনাকেও জানিয়ে দিতে গিয়ে দেখি, তারাও এক পায়ে খাড়া। বাকি কটাদিন যে কিভাবে কাটলো সে আমি-ই জানি। গৌরের তো দিন ভুলে যাওয়া অভ্যেস, ওকে রোজ দুবেলা ফোন করে মনে করিয়ে দিতে হয়। শিবুর আবার শেষ মুহূর্তে কিছু না কিছু ভুলে যায়। ওকেও বিকেল থেকে মনে করাতে হবে জুতো, ছাতা, চশমা - সব নিয়েছে তো। তাবলে আমাকেও যে ওরা দুগ্ধপোষ্য বালক ভাবে, কে জানতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিশির আমার অফিসে এসে মোবাইলে রিমাইন্ডার লাগিয়ে গেল, আদিখ্যেতা আর কাকে বলে!!!
শুক্রবার বিকেলেই আবার যতো কাজের চাপ। পৌঁছতে একটু দেরীই হয়ে গেল। বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেন এখনও বদলায়নি। ঢুকতেই দেখি নরক গুলজার। শিশির, শিবু, গৌরের সাথে এক বিদেশি ভদ্রলোক বসে।
"কি হে, রিমাইন্ডার দেওয়া সত্ত্বেও দেরী!", শিশিরের রাম চিমটি।
কড়া একটা জবাব দেওয়ার আগেই খাঁটি বাংলায় বিদেশি ভদ্রলোক বলে উঠলেন, "তাতে কি হয়েছে। চলে আসুন ..."
বিদেশী ভদ্রলোকের মুখে খাঁটি বাংলা শুধু নয়, নিজের নামটাও শুনে একটু চমকেই উঠলাম। উনিও সেটা উপভোগ করলেন বলে মনে হল। হাসতে হাসতেই বললেন, "মধ্যপ্রদেশের স্ফীতি দেখে মনে হচ্ছে টেবিলে বসেই কাজ করেন। আর চশমার পাওয়ার থেকে আমার ধারণা আপনি এইচ-আর বা হিসাব-বিভাগে আছেন। খুব সম্ভবতঃ হিসাবেই - ঠিক বলেছি?"
- আরিব্বাস! আপনি তো মশাই সত্যিকারের ডিটেক্টিভ দেখছি।
- দেয়ার ইউ আর। একদম পেরেকের মাথাতেই হাতুড়িটা মেরেছেন। অধমের নাম শার্লক হোমস।
এটা একটা রসিকতা না বোঝার মত মূর্খ আমি নই। একগাল হেসে বাকিদের দিকে তাকালাম। শিবু বলল, 'আমিও বোকা বনে গিয়েছিলাম। আমার নাম-ধাম এমন কি ছোটবেলার দু-চারটে ঘটনার কথাও উনি বলে দিলেন। বড়বাজারের নামকরা জ্যোতিষীর মত।"
শিশির পরিচয় করিয়ে দিল, "মিঃ শার্লক হোমস। অরিজিন্যাল শার্লক হোমসের প্রপৌত্র। ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন ঘনাদাকে নিয়ে যেতে।"
- বাংলাটা তো প্রায় বাঙ্গালীর মতই বলেন দেখছি।
- বাংলাভাষার সাথে পরিচয় ছোটবেলাতেই। স্কুলে একটা বিদেশী ভাষা নিতে হয়, আমি বাংলাটাই নিয়েছিলাম। আর মিঃ ডসের কাছে যখন অনুরোধ করতে হবে, তখন তাঁর মাতৃভাষাতে করাই ভালো মনে হল।
"হ্যাঁ, তারপর কাজটা কি যেন বলছিলেন?" এতক্ষণে শ্রীমুখ থেকে বাণী নির্গত হল।
- বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে ইংল্যান্ডকে বাঁচানোর পথ এক আপনি-ই জানেন। শুধু প্রধান-মন্ত্রীই নন, স্বয়ং রাণী নিজে আমাকে বলেছেন, তাঁর হয়ে আপনাকে অনুরোধ করতে।
“তাহলে তো যেতেই হচ্ছে। ডঃ সিংয়ের সঙ্গে মিটিংটা না হয় একটু পিছিয়ে দেব, বারাকের সঙ্গে না হয় পরের বারেই দেখা হবে ... অবশ্য ও যদি ততদিন থাকে ... সোনিয়াজী আর আদবানীজির ব্যাপারগুলো অবশ্য ততো ইম্পর্ট্যান্ট নয়, পরেও করা যেতে পারে। চলুন তাহলে ...”, ঘনাদা বিছানা থেকে নামবার উপক্রম করলেন, যেন এখুনি লুঙ্গি পরেই রওয়ানা দেবেন বাকিংহাম প্যালেসের দিকে।
"আরে আরে, সত্যি চললেন নাকি," শিশিরের আর্তনাদ শোনা গেল, "পাসপোর্ট-ভিসার ব্যাপার আছে না?"
"আমার আবার পাসপোর্ট!", হেসে উঠলেন ঘনাদা।
"ঠিকই তো", দাবড়ে উঠলো শিবু, "এ যেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুকে মর্ত্ত্যধামে আসার আগে জিজ্ঞেস করছ - পাসপোর্ট আছে? ঘনাদা গোটা পৃথিবী ঘুরে এসেছেন, কোনদিন পাসপোর্টের গল্প শুনেছো?"
"কিন্তু ভিসা", শিশিরের খড়কুটো ধরার চেষ্টা।
"রানী নিজে অনুরোধ করেছেন, তারপরেও ভিসা", এবার গৌরের জবাব।
"আর আপনারা কন্সুলেট থেকে আসছেন, আপনাদের সাথেই তো পাঁচজনাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি থাকে", ঘনাদা যেন যাবার জন্য একটু ব্যগ্রই মনে হল।
"হ্যাঁ মানে .." একটু যেন চিন্তিতই দেখাল মিঃ হোমসকে।
ঠিক এমন সময় কচুরীর বারকোষ হাতে বনোয়ারীর আবির্ভাব না হলে কি হত কে জানে।
"পাড়ার দোকানটা এখনো সেই রকমই ভাজে", শিশিরের কথা শেষ হতে না হতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল কচুরীর ওপর।
সাধারণতঃ কচুরীর বাটি শেষ না হলে ঘনাদার মুখ থেকে কোন শব্দ বেরোয় না। কিন্তু প্রথম আর দ্বিতীয় বাটির মাঝের বিরতিতে তাঁর ছোট্ট মন্তব্য শোনা গেল, "তিন আঙ্গুলে কচুরী ছেঁড়াটা একটা আলাদা আর্ট যেটা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরাই জানে, তাই না শিবেন্দুবাবু।"
"হ্যাঁ .." খেতে খেতেই জবাব দিলেন আমাদের অতিথি। পরক্ষণেই সচেতন হয়ে উঠলেন তিনি, "মানে .."
- লজ্জা পাবার কিছু নেই। হাতে আরে দাঁতেই ধরা পরে গেলেন আপনি। আপনার ঝকঝকে দাঁত দেখে প্রথমেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। সাধারণতঃ সাদা চামড়ার লোকেদের দাঁত একটু হলদেটে হয়, কালোদের হয় একদম ঝকঝকে সাদা। তবে রুটি বা কচুরী ছেঁড়ার ব্যাপারটা সেদিন খেয়াল না করলে হয়তো ভারতবর্ষের ইতিহাসটাই অন্য রকম লেখা হত, নেতাজীর অন্তর্ধান-রহস্যের যবনিকা সেখানেই পরে যেত, আর তাহলে যে কি হত, সে কথা ভাবলেও আমার বুকের ভেতর হিম হয়ে আসে।
"মানে নেতাজী অন্তর্ধান-রহস্যেও আপনার হাত ছিল?", আঁতকে উঠলো গৌর।
"তেমন কিছু না," খাওয়ার পর হাত ধুয়ে মুখ মুছে শিশিরের কাছ থেকে সিগারেটটা নিয়ে ধরালেন ঘনাদা। ধোঁয়ার আড়ালে বেকুবের মত বসে থাকলেন শ্রীযুক্ত শার্লক হোমস।
"আপনার যুক্তিগুলো বড়ই দুর্বল ছিল - যেমন চশমা পরা নাদুসনুদুস চেহারা হলেই তাকে এইচ-আর বা হিসাবের কাজ করতে হবে, এটা নেহাতই কু-যুক্তি। আমার মনে হচ্ছিল আপনি সবার ব্যাপারে আগে থেকেই জানেন, সেগুলই আউড়ে যাচ্ছেন। সব থেকে বেশি বলেছেন শিশিরের সম্বন্ধে। আর ওর একজন ভায়রাভাই ইল্যান্ডে থাকে অনেকদিন আগে শুনেছিলাম। নামটাও তখনি বলেছিল", যেন গল্পের শেষে গোয়েন্দার মত জলবত তরলং করে বুঝিয়ে দিলেন ঘনাদা।
"রাখুন আপনার শিশিরের ভায়রাভাইকে", শিবু বলে উঠলো। বোকা বনে গিয়ে বেচারা বেশ ক্ষেপেই গেছে মনে হল, "তারপর নেতাজীকে হারিয়ে দিলেন কেমন করে?"
“ওনাকে হারিয়ে দেওয়া কি আর আমার সাধ্য। উনি একাই গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন”, ঘনাদা শুরু করলেন।
"তখন আমি মণিপুর-নাগা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। বর্মা থেকে ভারতে আসার সহজতম পথের মানচিত্র বানাবার কাজে। পরবর্তী কালে আই.এন.এ ফৌজ এই রাস্তাতেই এসেছিল।"
"ও আপনি আগে থেকেই জানতেন আই.এন.এ তৈরি হবে আর তাই তাদের জন্য নিজে নিজেই রাস্তা বানাচ্ছিলেন", শিশিরের উষ্ণ প্রশ্ন। ঘনাদাকে বোকা বানাবার এই পরিকল্পনাটাও বানচাল হওয়াতে ক্ষেপেই আগুন সে।
- হ্যাঁ, কিছুটা আভাস দিয়েছিলেন আমার গুরুদেব।
"আপনার গুরুদেব!!!", আমাদের সমস্বরে বিষ্ময়ধ্বনি শোনা গেল। ঘনাদারও গুরুদেব থাকতে পারেন!!! সেই তিনি কেমন লোক!!!
"কে তিনি?", আমাদের হয়ে শিবুই প্রশ্ন করল।
"গুরুদেবের নাম নিতে নেই", দু-হাত জড়ো করে তাঁর উদ্দেশ্যে আকাশে একটি প্রণাম করে বললেন, "তবে তাঁর কীর্তি-কাহিনী তো তোমরা সবাই শুনেছ। কখনও মড়া, কখনও মেথর সেজে ইংরেজের পুলিশকে ফুলিশ প্রমাণ করে, বড়লাটকে বোমা মেরে, আধখানা মধ্যমা সত্ত্বেও ছদ্মবেশে জাহাজে করে জাপানে গিয়ে আই.এন.এ তৈরী করে নেতাজীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এই ম্যাপ বানানো তাঁরই অগণিত পরিকল্পনার একটি।"
"আচ্ছা আপনি, রাসবিহারী বোসের কথা বলছেন", শিবু বলে উঠলো।
"অমন করে বল না, স্বাধীন ভারতে বিপ্লবী শ্রী রাসবিহারী বোসের নাম করলে দুহাত কপালে ঠেকানো উচিত", বেশ ভর্তসনার সুরেই বললেন ঘনাদা।
"পক্ষীবিদ সেজে তখন উত্তর-পুর্ব ভারত চষে বেড়াচ্ছি", আগের কথার খেই ধরে বললেন, "এমন সময় হঠাত শুনি ম্যাকাওয়ের ডাক। নাগাল্যান্ডের জঙ্গলে ম্যাকাও!! আমি ময়ূরের ডাক দিলাম, ম্যাকাও চুপ করে শুরু হল টিট্টিভের ডাক। সেই পাখির বুলি থেকে খবর পেলাম, নেতাজী গৃহবন্দী।”
“ম্যাকাও আপনাকে বলল যে নেতাজী গৃহবন্দী!” বোকার মতো বলে উঠলেন শিবেন্দুবাবু।
“আরে, ম্যাকাও কেন বলবে, ওটা তো বিপ্লবীদের কোড”, গজগজ করে উঠলো শিবু, “এই বুদ্ধি নিয়ে উনি শার্লক হোমস সেজেছেন ঘনাদার সামনে।”
“নেতাজী খুঁজছেন আমাকে”, শিবেন্দুবাবুর নির্বোধ প্রশ্নটি মাপ করে আবার শুরু করলেন ঘনাদা, “এলগিন রোডের সেই বাড়িতো এখন অনেকের কাছেই মন্দির, কিন্তু তখন আমার যাওয়ার অনুমতি নেই, চারিদিকে পুলিশে ছয়লাপ। কাজেই নেতাজীর ভাইপো শিশিরের সাথে দেখা করলাম। আগেই পরিচয় ছিল। তার কাছেই জানলাম, নেতাজী পালাবেন, উপায় খুঁজছেন। কয়েকদিন শিশিরের কাছে যাতায়াতের পর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল - শিবাজীর থিয়োরী, কিন্তু সেটা নেতাজীকে জানাবো কি করে? ইরেজ পুলিশ এমন কি ভাতের স্তুপও নেড়ে দেখে, ডালের বাটিও ঘেঁটে দেখে। খাবার দেবার সময়তেও পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে, খবরটা পাঠানোই হল প্রথম সমস্যা। তখন আবার শিবাজীর বুদ্ধিতেই এগোলাম। কাঁসার থালা, বড়োবাজারের কাঁসারীকে দিয়ে তাতে ডিজাইন করে শিবাজীর ছবি এঁকে পাঠালাম। আর রেঁধেছিলাম খাস চট্টগ্রামের শুঁটকি মাছের ঝাল - নেতাজীর ফেভারিট। চেটেপুটে থালা পরিষ্কার করে খেতেই নজরে পড়লো শিবাজীর ছবি। কথায় বলে - বুদ্ধিমানের কাছে ইশারাই যথেষ্ট। বাকি ইতিহাস তো তোমাদের জানাই আছে।"
"না জানা নেই", বলে উঠলো শিবেন্দু, "এর মাঝে আপনার রুটি ছেঁড়ার ব্যাপারটা আসলো কোথায়?"
“সেটা অবশ্য আরেক কাহিনী। তার খোঁজ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে সে-এ-ই আফগানিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে। এলগিন রোডের বাড়ি থেকে নেতাজীর অন্তর্ধানের কয়েক দিন পরে সেই পাহাড়ী এলাকায় একটা নতুন মুখের আবির্ভাব অনেকেই খেয়াল করলেও কেউই গুরুত্ব দেয়নি। বিভিন্ন পাহাড়ী সরাইখানায় টুকটাক কাজ করে সে এলাকার প্রায় সমস্ত কর্মচারীদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব জমিয়ে নিয়েছে অল্পদিনের মধ্যে। এদিকে কথ্য ভাষা হল পুস্তু। লোকটি কোথাকার কে জানে, কিন্তু পুস্তু বলে সে একদম মাতৃভাষার মতই। কাজেই নতুন একদল যাত্রীর সঙ্গে সে যখন মোটবাহক হিসাবে যোগ দিল, সবাই সেটাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিল। যাত্রীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোটখাটো চেহারার চুপচাপ একজনকেও কেউ খেয়াল করেনি। সে কারো সাথে কথা বলে না, দিনরাত শুধু লিখে চলে। মাঝেমাঝে বিড়বিড় করে, মাথা দোলায়, দুই হাত আকাশে ছুঁড়ে কাকে যেন চ্যালেঞ্জ জানায় সে।
খুব তাড়াতাড়ি এই ছোকরার মুখে সবাই জেনে গেল যে, ঐ লোকটি হল বোবা। সঙ্গে চলেছেন তার কাকা। উত্তর-পশ্চিমে চলেছেন কোন এক পীর মাজারে। যদি ছোকরার মুখে বাণী ফোটে। সত্যি সত্যি অবশ্য যেদিন সেই লোকটির মুখে বাণী ফুটেছিল, সমস্ত ভারত কান খাড়া করে শুনেছিল, ‘আকাশবাণী বার্লিন, আমি সুভাষ বলছি।’
পথে যেতে যেতেই পৌঁছলাম আরেক সরাইখানায়। মালপত্র কাঁধে নিয়ে আগে ঢুকলাম আমি অচেনা যাত্রী সেজে। দেখেশুনে নিরাপদ মনে হল, বাইরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়লাম আমি। নেতাজী ঢুকলেন তাঁর পাড়াতুতো কাকার সঙ্গে। সবাই খাওয়া-দাওয়া করছে। আমার চোখ ঘুরছে চরকির মত। হঠাত দেখি একদিকে দুজন বসে রুটি খাচ্ছে। আমাদের মত তিন আঙ্গুলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে নয়, অনেকটা আজকের রোলের মত গোল করে কামড় দিচ্ছে, আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। খুব সাবধানে উঠে গিয়ে তাদের পেছনে বসলাম। দুই ইংরেজ গোয়েন্দা আফগানি পোষাকের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখে নজর রেখে যাচ্ছে সবার ওপর। নেতাজীকে দেখে ওদের একটু সন্দেহ হয়েছে। কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা। আমি বিপদ বুঝে উঠে গেলাম আর নেতাজীর পাড়াতুতো কাকার সাথে গল্প জমিয়ে দিলাম। তিনি সুযোগ পেয়ে জোর গলায় সবাইকে জানিয়ে দিলেন, যে সঙ্গের জন তার ভাইপো। বেচারী বোবা, কথা বলতে পারেনা। সঙ্গে নিয়ে চলেছেন পীরের মাজারে, যদি কোন জলপড়া দিয়ে অসুখ সারে। চোখের কোণ দিয়ে দেখি দুই পুলিশ কান খাড়া করে শুনছে। কিন্তু তখনো মনে হল বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোটানায় দুলছে। আমি নেতাজীর মুখে আমার নোংরা হাত ঢুকিয়ে দিলাম। ওনার জিবটা নিয়ে টানাটানি করে বিশেষজ্ঞের মত জানালাম, ভাইপোটি সত্যি-ই বোবা। একজন পুলিশ উঠে দাঁড়ালো। আমি বুঝলাম, সে বড়ো সাহেবকে ডেকে আনবে, আরেকজনা থেকে যাবে নেতাজীকে অনুসরণ করার জন্য। আমি বিপদ গুণলাম। নেতাজীকে বাঁচাবার তখন একটাই রাস্তা আমার সামনে। একটুকরো গরুর মাংস এনে ওনার মুখে গুঁজে দিলাম। নেতাজী একটু চমকে গেলেন, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তাঁর আর ব্যাপার বুঝতে দেরী হল না। ভারতমাতার জন্য যিনি সবই ছেড়েছেন, তিনি নিজের ধর্ম-বিশ্বাসও ছাড়লেন। সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী চুপ-চাপ গো-মাংস ভক্ষণ করলেন। পুলিশ-দুজন এই দেখে নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে বসে পড়লো। নেতাজীর ভারতপ্রীতি কত গভীর, ওরা তার কি বুঝবে?"
"কিন্তু, এ কথার তো কোথাও কোন উল্লেখ পাইনি", বোকা শুয়োড়ের মত ঘোঁত ঘোঁত করে উঠলো শিবেন্দু।
“কোথাও কোন উল্লেখ নেই, তা নয়”, এবার প্রতিবাদ করলাম আমি, “যতদূর মনে পড়ে শৈলেশ দে-র ‘আমি সুভাষ বলছি’তে পড়েছি যে নেতাজী পুস্তু জানতেন না বলে বোবা সেজেছিলেন, একজন নাকি তাঁর জিব ধরে টানাটানিও করেছিল এবং তাঁকে গরুর মাংস খেতেও হয়েছিল।”
- সেখানে কি লেখা আছে যে জিব ধরে কে টানাটানি করেছিলেন?
"মন্ত্রগুপ্তি হে, মন্ত্রগুপ্তি", জবাব দিলেন ঘনাদা, "তোমরা দুটো ইংরেজী পড়ে নিজেকে শার্লক হোমসের বংশধর ভাবো, বোস পরিবারের প্রত্যেকের রক্তে মন্ত্রগুপ্তি আছে। শিশির কোনদিনই আমার নাম আনবে না, যতক্ষণ না সে তার ওপরওয়ালার নির্দেশ পাচ্ছে। আর এখন তাকে নির্দেশ দেবেই বা কে?" এক শিশিরের দুঃখে বিগলিত হয়ে আরেক শিশিরকে দয়ে মজিয়ে সিগারেটের পুরো প্যাকেট-টা নিয়েই বেরিয়ে গেলেন ঘনাদা।
মন্তব্য
অনেক দিন দেখা পাই নি আপনার, ফিরে এসে এমন বোমা! বাঃ বাঃ তোফা খাসা ইত্যাদি এক সাথে বলে গেলাম।
দারুণ! আপনি মাঝে মাঝেই ডুব দেন কেন!
দারুণ! দারুণ!!
অ-সা-ধা-র-ণ। খুব খুব ভাল লাগলো।
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
সব্বাইকে থাঙ্কু। মুপাভাই, আমি কিন্ম প্রতিবার পিয়েলের ফর্ম ভরে সবাইকে জানান দিয়ে, কেন ছুটি নেব কৈফিয়ত দিয়ে, তবে ছুটি নিই।
সে তো জানি, তাই বলে ফিরে এলে একটু ওয়েল্কাম কর্বো না? কী যে বলেন!
লেখা বেশ ভালো লেগেছে।
পাগল মন
আহ, চমৎকার!
কোথায় ছিলেন অ্যাদ্দিন ???????
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এহ হে। সক্কাল সক্কাল একটা ভুল হয়ে গেছে। বইখাতার অভিযোগের উত্তর মুপাভাইকে দিয়ে দিয়েছি। আসলে বইখাতা, বর্ণপরিচয়ের পর থেকেই তোমার প্রতি আমার একটা ভীতি হয়ে গেছে তো, তাই বোধ হয় ...
আর তুলিদিদি, আমি তো সব্বাইকে বলেছিলাম, সিডনীতে আমার দুই জিয়েফ আসছেন, কাজেই কদিনের জন্য আড্ডা বন্ধ। তবে এই কদিন সচলের সব কিছুই আমি পড়েছি, শুধু লগাইনি আর লেখা একদম বন্ধ। কাল প্রোজেক্ট শেষ হল। দুদিন কোন কাজ নেই, অফিসে খালি খালি বসে আছি, একটা লিখে ফেললাম।
দুর্দান্ত!!!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আপনি দেখছি পুরোই শঙ্করেন মিত্র!
দুটো প্রশ্ন। ঘনাদার কপিরাইট এখন কার? তাঁর সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় আছে নাকি?
কচুরি জিনিসটা আসলে কী? সম্ভব হলে একটা ছবি দিন না।
ঘনাদার কপিরাইট এখন কার তা আমিও জানিনা। কলকাতায় ফিরে খোঁজ নেব। এই সিরিজে যদি বেশ কিছু গল্প নেমে যায়, তখন সেটা দরকার হতেও পারে।
কচুরী বা ডালপুরী অনেকটা লুচিরই মতন। ডালবাটা বা কড়াইশুঁটি বাটা একটু তেল মশলা দিয়ে নেড়ে নিও। লুচির লেচির মধ্যে সেটা মিশিয়ে লুচির মত বেলে ছাঁকা তেলে ভেজে নিও। ছবি দিতে পারবো না। আমার কোলেস্টেরল বলে তোমার বৌদি ওগুলো বাড়িতে রান্না একদম বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি আশা করেছিলাম তুমি নিশ্চয়ই গুগলি করে দেখেছ, এবং কিছু পাওনি। তা সত্ত্বেও google.co.in-এ গিয়ে বাংলাভাষায় চিত্র খুঁজতে গেলাম। কচুরী দিয়ে খোঁজ করতে প্রচুর কচুরিপানার ছবি পেলাম। তার সাথে দুটো চেনা লোকের ছবিও পেলাম। আমাদের রণদীপম বসু আর নজরুল ইসলামের ছবি। কচুরীর সাথে তাদের কি যোগ তারাই বলতে পারে।
ওহ, কচুরি মানে ডালপুরি? থাক, ছবি দ্যাখাতে হবে না। তারচে বরং আরেকখান ঘনাদা নামান।
এই এই এই কচুরী আর ডালপুরী মোটেই এক নয়| ডালপুরী তো কেবল ডালের পুর দিয়েই হয় কিন্তু কচুরী অনেককিছু দিয়েই হতে পারে| প্রস্তুতিতেও কিছু তফাৎ আছে|
বাড়ী গিয়ে লিখে দেব নাহয়|
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
লিখে দেবেন মানে? ভেজে খাওয়ান! খাবার জিনিস আবার লিখে বোঝায় নাকি?
কচুরি জিনিসটা নিয়ে আমারও ব্যাপক আগ্রহ বহুদিনের। খালি শুনি, এইটা নাকি অমৃত! দেখতে কেমন, খাইতে কেমন, কইতার্লাম্না!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অসাধারণ লিখেছেন ভাই...একদম প্রেমেন মিত্তির
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
প্রেমেন মিত্তিরের দিন শেষ দেখি। অসাধারণ একটা ঘনাদা গল্প হলো !!!!
_________________________________________
সেরিওজা
এটা তো একেবারে ফাটাফাটি লেখা হয়েচে। চলুক তাহলে, আরো আসুক ঘনাদা, ফিরে আসুক স্মৃতি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
দুর্দান্ত... এই সিরিজ চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনি মশাই মুগ্ধতার পাল্লা বাড়িয়েই চলেছেন।
কাকস্য পরিবেদনা
নতুন মন্তব্য করুন