শঙ্করের কথা
বছর দেড়েক হল কলকাতা ফিরে এসেছি। এসেই যা চাপ, কী-বোর্ডে আঙুল বসানোর সময়ই পাই না। অনেক কষ্টে পুজোর ছুটির মধ্যে এটা নামালাম। ভালো লাগ্লে বলবেন কিন্তু।
দিয়ার কথা
ঠিক দুপ্পুরবেলা ছাদে বসে আমের আচার চুরি করে খাওয়ার থেকে আনন্দের আর কিছু আছে নাকি? কিন্তু আমার মাকে সে কথা বোঝাবে কে? আচ্ছা, মা কি কোনদিন ছোট ছিল না? যেই না আচারে হাত দিয়েছি ওমনি নিচের থেকে হাঁক, “দিয়া, দিয়া কোথায় গেলি?” সেকী ডাক। পাশের বাড়ীর দত্তকাকুর ছাদ থেকে কয়েকটা কাক উড়ে গিয়ে ওই দূরের গাছের ডালে বসে কা-কা করে তারস্বরে প্রতিবাদ করতে লাগলো। এ পাশের মুখুজ্যেদাদুর বাড়ীতে জলের পাম্পটা ঘাবড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। ট্যাঁপা পেয়ারা গাছে উঠেছিল পেয়ারা পাড়তে, ধপ করে পড়ে গেল। আমিতো এক ছুট্টে নীচে। তাড়াতাড়িতে আচারের শিশিটাও ভালো করে বন্ধ করতে পারিনি।
নীচে নামামাত্রই বিস্ফোরণের ধারাপ্রপাত শুরু। মনে হল এক কানে হিরোসিমা, এক কানে নাগাসাকি আর মাথার ওপর ভিসুভিয়াসের বন্যা। আচ্ছা আমার কি দোষ বল তো? গরমের ছুটি, সকাল বেলা দই-মুড়ি খেয়ে, কয়েক পাতা ছুটির হাতের লেখা শেষ করে মনে হল কালকের টিভিতে দেখা করিনা কাপুরের মতো সাজবো। তা মায়ের লিপিস্টিকটা যে অতো ঠুনকো সে আমি কি করে জানবো? একটু লম্বা করে যেই ঠোঁটে ঠেকিয়েছি, ওমনি দু-টুকরো। তারপর ক্লিপগুলো কি পাতলা, কি পাতলা। দু-তিনটে ক্লিপ খুলতে গেলাম সব গুলোই এদিক ওদিক দু-দিকই খুলে গেলো। বাবাকে বলতে হবে এরকম হাল্কা জিনিস মাকে যেন আর না দেয়। একটা ঝুটো মুক্তোর নেকলেস পরতে গিয়ে যখন সবকটা মুক্তো খুলে গিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল, মনে হল এই গয়নাগুলো পরার কোন মানেই হয়না। করিনা কাপুর নিশ্চয়ই এরকম হাল্কা-পুল্কা গয়না পরেনা। সব টুকরো-টাকরা গুলো বেশ করে গুছিয়ে রেখে দিয়ে পাড়া বেড়াতে বেরোলাম। মা রান্না করে, চান করে খেয়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে, গয়নার বাক্সটা ঠিক মত লাগছে না। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে পড়ল মায়ের হাতের পাখার বাড়ি থেকে বাচাঁর একটাই জায়গা আছে। আমি এক এক লাফে দু-তিনটে সিঁড়ি পেরিয়ে গ্যারেজে ঢুকে সোজা গাড়ীর ডিকির ভেতরে। মা এখানে আমাকে খুঁজেই পাবে না।
পানুর কথা
নাঃ, বেশ বেলা হয়ে গেছে। অন্যদিন দুটো বাজার আগেই ক্লাব থেকে ফিরে আসি। কিন্তু আজ ১-১ হয়ে যাওয়ার পর শেষ গেমটা অনেকগুলো বোর্ড ঘুরলো। শেষ বোর্ডে গুপী একটা মুন্নাভাই মার্কা ফিনিশ না দিলে আরো কতো দেরী হত কে জানে। পিসি নিশ্চয়ই খচে বোম হয়ে গেছে। দু-জনা পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকছি, হঠাত শুনি পিসেমশায়ের গলা। এইমাটি করেছে। ভরদুপুরে হঠাত পিসেমশাই বাড়ীতে কেন? দরজার পাশে আরী পেতে শুনি, পিসেমশাই পিসিকে বলছেন , “ভারী ঝামেলায় পড়া গেল। এরপর তো যখন-তখন বাড়ীতে পুলিশ আসতে পারে। তুমি একটু সাবধানে থেক। এসব কথা তো আর টেলিফোনে বলা যায়না, তাই বাড়ী এসে বলে গেলাম।” এই বলে দড়াম করে দরজা খুলে গটগট করে বেড়িয়ে গেলেন। ভাগ্যিস আমরা বুদ্ধি করে পাশের দিকে সরে গেছিলাম, তাই আমাদের দেখতে পাননি। হুঁ হুঁ বাব্বা, আমরা কি অতোই বোকা। ধরা পড়লে এখনই এতো দেরী কেন, কোথায় ছিলাম, ছুটির পড়া কদ্দুর হল, কত কৈফিয়ত। তার ওপর পুলিশ। তখনই গুপীকে বলেছিলাম, “আরেকবার ভেবে দেখ, গড়বড় হলে কিন্তু মুশকিলে পড়ে যাবো। “ তা গরীবের কথা বাসি হলে মিষ্টি হয়। এবার বোঝ বড়মামার গুঁতো। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে একটা ঝাপট দিতে গিয়ে দেখি গুপী হাত-পা এলিয়ে পড়ে আছে। নির্ঘাত পুলিশের নামে ভির্মি খেয়েছে। কল থেকে জল নিয়ে মুখে-মাথায় ছিটিয়ে দিতেই চোখ খুললো, “পানুরে, পুলিশ।”
- তা এখন কি করবো? তখন মনে পড়েনি। কতোবার বললাম, গুপী আরেকবার ভেবে দেখ। ‘না কিছু হবে না। হলে আমি সামলে নেব। ম্যায় হুঁ না।’ এবার কোথায় যাবি শাহরুখ খান?
- গুপীরে, ব্যাপারটা এতদূর যাবে ভাবিনি। এখন কি করবো। আমাকে বাঁচা।
খুব তাড়াতাড়ি চিন্তা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। আমি চটপট ভেবে নিলাম। পানুকে এই বিপদের সময় একা ছাড়া যায়না। তার ওপর বাড়িতে পুলিশ আসবে, ফ্যামিলি প্রেস্টিজ। ওয়ারেণ্ট বেরোবার আগেই গুপীকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে। হাওড়া- শেয়ালদা থেকে ট্রেন ধরা যাবেনা, ধর্মতলা থেকে বাস ধরাও রিস্কি। ওসব জায়গায় পুলিশ পাহারা বসানো আছে। এ সব ক্ষেত্রে এরকমই থাকে, আমি টিভিতে দেখেছি। একমাত্র উপায় গাড়ীটা । গুপীর হাত ধরে আস্তে আস্তে গ্যারেজের দরজা খুলে গাড়ীটা বের করলাম। গিয়ার নিউট্রালে দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ী রাস্তায় নামালাম। দুপ্পুরবেলা। রাস্তা শুনশান। চারিদিকে কোন লোক নেই। গাড়ী ঠেলতে ঠেলতে রাস্তার মোড়ে এনে স্টার্ট দিয়েই চোঁ পোঁ ধাঁ।
(চলবে)
মন্তব্য
নীড়পাতায় আপনার নামটা দেখতে পেয়ে দুবার চোখ কচলালাম। ঠিক দেখছি তো? নাকি মায়া?
কোস্তভভাই, মায়া তো বণ্ডকে বোকা বানিয়ে চলে গেছে। এতদিনে বোধ হয় মহামায়া ভার্সান তৈরী। তোমার দুলাইনের জবাব দিতে আমার দুদিন লেগে গেল। বোঝ দুরবস্থা।
ভালো লেগেছে।
জেমস বণ্ড এতদিন কোথায় ছিলো?
...........................
Every Picture Tells a Story
বণ্ড মহামান্যা রানীর সাথে এখন করমরদন করে। আমি এখন বণ্ডেড লেবর।
এটা যে সিরিজ সেটা কোথাও ক্লিয়ার করবেন তো! দেশে ফিরেছেন, একটু দেরিতে হলেও সচলেও ফিরেছেন - দেখতে খুব ভালো লাগছে। আশা করি নিয়মিত লিখে যাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চলবে বলে দিয়েছি কিন্তু। কালকে পরের অংশ নামাব।
রহস্য গন্ধ আছে ভীষণ। ভালো লাগল। তবে পানুর কথাটায় দু'একটা যায়গায় পানু আর গুপি গুলিয়ে গেছে মনে হচ্ছে যেমন -
- এখানে গুপী না হয়ে পানু হবে মনে হয়?
আর
- এখানে পানু না হয়ে গুপী হবে মনে হয়?
এই দুই যায়গায় খটকা লাগল তাই বললাম
০২
শিগগির পরের পর্ব দেন
ডাকঘর | ছবিঘর
হতে পারে। আমারই খেয়াল থাকছে না কে গুপী আর কে পানু, ওরা গুলোতেই পারে। তবে এতো মন দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পানু আর গুপি গুলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাপস শর্মা তো বললেনই। এ লেখাটা বেশ জমবে বলেই মনে হচ্ছে। সবচে বড় কথা, শঙ্করেন মিত্রকে আবারও লিখতে দেখে ভাল লাগছে। ঘনাদা সিরিজে আরো নামাবেন বলেছিলেন কিন্তু!
মনে আছে ভাই। দেড় বছর ধরে গল্পটা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। শুধু একটু দম ফেলি।
আরে আপনি!!!! এতদিন কোথায় ছিলেন ??????
ইতি-
সচলের তুলিরেখা সেন
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ইচ্ছে হয়ে ছিলেম (সবার) মনের মাঝারে !!!
আশা করি পরের পর্বও এতদিনে এসে গেছে। যাই পড়ে নেই সবগুলো। তারপর মন্তব্য।
যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...
এই এতোদিনে এল
শেষ হইয়াও হইল না শেষ>>>
নতুন মন্তব্য করুন