বুয়েটের ছাত্রাবাসগুলোর মধ্যে যেগুলো অপেক্ষাকৃত পরে তৈরী করা হয়েছে তারমধ্যে একটি ডঃ এম এ রশীদ হল। রশীদ হল যে কম্পাউন্ডের মধ্যে সেখানে তারচেয়ে পুরনো তীতুমীর হল, শেরে বাংলা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হল আছে। পুরনো হল তিনটির ডিজাইন একই ধরনের, সুপরিসর, এবং যথেষ্ঠ আধুনিক। যারা সেখানে বাস করেছেন তারা সেখানকার অন্য সুবিধাগুলোর কথাও জানেন। এই নগরীতে এমন বাড়ি খুব বেশী নেই যেগুলো ঐ হলগুলোর সমান বা তারচেয়ে বেশী সুবিধাসম্পন্ন। রশীদ হল পরে তৈরী হলেও এর ডিজাইন তার প্রতিবেশী তিন হলের চেয়ে নিম্নমানের, কম দৃষ্টিনন্দন। এই হলের কক্ষগুলো অপেক্ষাকৃত অপরিসর, ব্যালকনি নেই। দরজা-জানালাগুলো দেখলে পুরনো ঢাকার শাঁখারীপট্টির বাড়ীগুলোর কথা মনে হবে।
রশীদ হল সংক্রান্ত পুরনো গল্পটি হচ্ছে, যে স্থপতি এটি ডিজাইন করেছিলেন তখন তিনি একটা জেলখানার ডিজাইনও করছিলেন। হলের ডিজাইন জমা দেবার সময় ভুলক্রমে জেলখানার ডিজাইন জমা দেয়া হয়। বাস্তবে রশীদ হল জেলখানার মত হয়নি সত্য, তবে তা কোন ল্যান্ডমার্কও হয়নি।
এমনতো হবার কথা না। যার পরে জন্ম তারতো আরো আধুনিক, আরো সুবিধাসম্পন্ন, আরো দৃষ্টিনন্দন হবার কথা। কিন্তু তা হয়নি। একটা কারন সবার জানা যে পুরনো হল তিনটি সাহেব স্থপতির ডিজাইন করা আর রশীদ হল স্থানীয় স্থপতির ডিজাইন করা। সাহেবরা কিছু করলেই তা ভালো হবে আর আমরা করলে খারাপ, এমন যান্ত্রিক সরলীকরণে আমার বিশ্বাস নেই। তারপরও বুয়েটে এমন ঘটনা বার বার ঘটেছে।
এর একটি উদাহরন সিভিল বিল্ডিং (সাহেবদের ডিজাইন) এবং ইএমই বিল্ডিং (আমাদের ডিজাইন)। যারা এই বিল্ডিং দু’টো আগে দেখেন নি তারা দেখা মাত্র আমার কথার মর্ম বুঝতে পারবেন। আমরা হাত দিয়ে সুন্দরের কেমন বারোটা বাজাতে পারি তার উদাহরন খোদ আর্কিটেকচার বিল্ডিং। সাহেবদের করা ডিজাইনের ওপর নতুন তলা তোলার সময় স্থানীয় স্থপতি ছাদের প্যারাপেটে বড় বড় বর্গাকার ব্ল্যাঙ্ক রেখেছিলেন। তাতে গোটা বিল্ডিং-এর চেহারা যে কি বিকট হয়েছিল তা যারা তখন দেখেছিলেন তারা মনে রেখেছেন। সবার অসন্তোষের মুখে ব্ল্যাঙ্কগুলো পরে বন্ধ করে দেয়া হয়। পলাশী এলাকায় এখন বুয়েটের যে বিশালাকৃতি অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং তোলা হচ্ছে তা আর যাই হোক সুন্দর কিছু হচ্ছে না। এর বীম আর কলামগুলো সিভিল বিল্ডিং-এর বীম আর কলামগুলোর সাথে তুলনা করলে এটি কি হতে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য প্রকৌশলী বা স্থপতি হবার দরকার পরে না।
বুয়েট কি মানের প্রকৌশলী আর স্থপতি বানায় তার হাজার হাজার প্রমাণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশ হাতে গোনা যে কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশ্ব বাজারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বা লড়াই করতে পারে তার তালিকায় বুয়েটের নাম অবশ্যই প্রথমে থাকবে। তারপরও খোদ বুয়েটে এমন স্থাপনা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা বুয়েটের ছেলে-মেয়েরা প্রতি নিয়ত মেধা আর যোগ্যতায় সাহেবদের হারিয়ে দিচ্ছে। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছে। সেখানে মাতৃভূমিতে তাদের এমন পরাজয় বার বার হয় কিভাবে? একি জল-মাটির গুণ নাকি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা? ট্রেন্ড সেট করার জন্য যাদের জন্ম তারা কেন জল-মাটি বা ব্যবস্থার দাসত্ব করবে?
মন্তব্য
এই বিল্ডিং এর ক্লাসরুমগুলো এত বড় , খোলামেলা আর acoustics(science of sound) এর অবস্তা এত বাজে যে কয়েক সারি পিছনেই আর স্যারের কথা শোনা যায় না । একটা সুবিধাও হয়েছে অবশ্য ছাত্রদের জন্য , পিছনে বসে কথা বললে স্যার বুঝতে পারেন না (!) ।
-----------------------------------------------------কেউ একজন অপেক্ষা করে
এ এক আজব ডাইলেমা !
১-১ এ ই এম ই তে ফিজিক্স ক্লাসে স্যার বলেছিলেন, তোমাদের এই রুমের একুস্টিক ডিজাইনে প্রবলেম আছে। শব্দ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।
নতুন বিল্ডিং এ যেতে হয়নি - এ এক পরম সৌভাগ্য আমার। মাত্র এক সেমিস্টারের জন্য চিরচেনা পুরানো ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা একদমই ছিলো না। তবে জুনিয়রদের কাছে শুনে মনে হচ্ছে এ তো স্বর্গরাজ্য পুরো ! ইচ্ছামত গল্প করা যাবে ক্লাসে - স্যার এর কানের বাইরে।
তবে নতুন ক্যাম্পাসে একটা ব্যাপার খুব ভালো লেগেছে - পুরো ক্যাম্পাস বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ওয়্যারলেস একসেস পয়েন্টের আওতায় থাকবে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এর অন্তর্নিহিত কারনটা কি? বুয়েটে কি এখন বিশ্বমানের আর্কিটেক্ট নেই নাকি যারা ভালো তাদের দিয়ে কাজ না করিয়ে অর্ডিনারিদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কারণ আর কিছুই না কারণ হলো এটা বাংলাদেশ !!!!!!!!
মূর্তালা রামাত
হু, সব ভাইংগা আবার নতুন করে করলে খারাপ হয়না
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আমার মতে রশীদ হলের ডিজাইন এত বাজে হওয়ার কারন তার বেকায়দা লোকেশন। শেরেবাংলা, তিতুমীর, আর সোহরাওয়ার্দী এর তিনটার সুযোগ সুবিধাও কিন্তু সমান না। এদের সবগুলিতে ব্যালকনি থাকলেও শেরেবাংলা ছাড়া বাকি দুইটিতে ঐ জিনিস কাপড় শুকানো ছাড়া কোন কাজে লাগে না।
আর এত হতাশ হওইয়ার কিছু নাই; আমরা খিলগাঁও ফ্লাইওভার বানিয়েছি, life cycle cost বিবেচনায় তা সাহেবদের করা মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে অনেক ভাল।
সুদিন আসবে; ইনশাল্লাহ আমরাই আনব; আমাদের দেশেই।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ভালো প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। সাহেবদের তৈরী দৃষ্টিনন্দন আর্কিটেকচার বিল্ডিং-এর পাশেই একই আদলে নতুন উঠেছে ‘নগর পরিকল্পনা ভবন’। ডিজাইন করেছেন দেশী বিশিষ্ট স্থপতি এবং অধ্যাপক খায়রুল এনাম স্যার (আমি তাঁর কাছে ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন কোর্স করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম!)। দুর্জনেরা বলে জুনিয়র এই বিভাগটির প্রতি হিংসাবশতই (যেহেতু তাদের ত্রিসীমানার মধ্যেই তারা বিল্ডিং করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে) ইচ্ছে করে তিনি এই বিল্ডিংটির খুবই বাজে ডিজাইন করেছেন- ডিজাইনে কোন নতুনত্ব নাই, হুবহু আর্কিটেকচার বিল্ডিং-এর চোথা মারা, কিন্তু ইনফেরিয়র কোয়ালিটি- যেন আর্কিটেকচার বিল্ডিং-এর সতীনের ছেলে- এইরকম একটা ভাব রাখা হয়েছে বিল্ডিংটার মধ্যে। অথচ ৫০ বছর আগে তৈরী আর্কিটেকচার বিল্ডিং-এর তুলনায় নতুন ওঠা এ বিল্ডিংটা অনেক সুন্দর দেখানোর কথা। এছাড়া পাশে একটা বদখত বিল্ডিং থাকার ফলে তাদের আর্কিটেকচার বিল্ডিং-এর সৌন্দর্যও এখন অনেকাংশে হানি হচ্ছে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ- ব্যাপারটা মনে হয় কেবল বাঙালীরাই পারে! তবে আপনার দেয়া উদাহরণগুলো দেখে মনে হচ্ছে- আসলে এদের দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই; এদের কোয়ালিটি আর স্ট্যান্ডার্ডই আসলে এই মানের।
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
মেধা বিকশিত হবার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ লাগে, যথাযথ সাপোর্ট লাগে। সেগুলো নিশ্চিত না করতে পারলে 'অঙ্কুরেই বিনষ্ট' হবার খুবই ভালো সম্ভাবনা রয়েছে!
এখানকার আর্কিটেক্টদের মেধা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, তবে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে তারা তাদের কল্পনার কোন নকশা বাস্তবায়িত করতে গেলে যথেষ্ট পরিমাণ সাপোর্ট পান কি না। আমাদের দেশে তো প্রতি পদে পদে বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতা।
ভবিষ্যতে অবস্থার উন্নতি হবে এমন প্রার্থনা করা ছাড়া আপাতত আর কিছুই করার দেখছি না।
বিশ্বকর্মার ছেলে ছুঁচো???????????????
বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে --দেশে ফিরে জেতে হবে----তবেইনা---হবে--
বুয়েটে স্থাপত্য বিভাগ চালু হয় টেক্সাস এ এন্ড এম-এর অধ্যাপক রিচার্ড ভ্রুম্যানের হাত ধরে। ১৯৬২ সালে তিনিই ছিলেন এ বিভাগের একমাত্র শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠাতা (লিংক)। স্থাপত্য ভবনের নকশাও তিনি করেন এবং যতদূর শুনেছি নামমাত্র পারিশ্রমিকে বা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই। আজ আধুনিক স্থাপত্যে বাংলাদেশের যা কিছু অবদান তার মূলে এই ভ্রুম্যান। তিনি তাঁর ছয় ছাত্র নিয়ে সেদিন যাত্রা শুরু না করলে স্থাপত্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়ত আরো অনেক দিন পিছিয়ে থাকত। গুরু হয়ে ষাটের দশকে তিনি যে নান্দনিক স্থাপত্য বিল্ডিং বুয়েটকে উপহার দিয়ে তাঁর শিষ্যদের শিখিয়ে গিয়েছিলেন, পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যরাই যে কীভাবে সব গুদামঘর টাইপ ডিজাইন করতে পারে- এ আমার বোধ্যগম্য না! আর যাই হোক, বুয়েটের কোন বিল্ডিং-এর ডিজাইন করতে বাজেট নিয়ে টানাটানি ছিল- এটা আমি বিশ্বাস করি না।
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
এই ভবনের acoustic system তো দারুণ!!!স্যারের কথা পিছনে কিছুই শোনা যায় না!!!আমার মত যারা back bencher তাদের ঘুমানো এবং কথা বলার জন্যে আদর্শ পরিবেশ।আমারা ভাবতাম exam building এর acoustic system খারাপ!!কিন্তু দেখতেছি new builiding এরটা এক degree উপরে!!!
------------------
উদ্ভ্রান্ত পথিক
নতুন মন্তব্য করুন