প্রথমেই বলে নেই কোন রকম ভোট চাওয়ার জন্য আমার এই লেখা নয়। বরং সচলের সচেতন ও জ্ঞানী পাঠকেরা যাতে এবিষয়ে আমার (এবং আমার মত আরো অনেককের) যে সংশয় আছে তা নিরসনে কিছু জানাতে পারেন তার জন্য এই লেখা।
যে বিষয়টি নিয়ে এই লেখা তা সবার এত বেশী জানা যে সে সম্পর্কের কিছু বলার নেই। গত বৎসরের শেষভাগ থেকে আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে পরিচিত বা অপরিচিত কারো কাছ থেকে প্রকৃতির নতুন সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের জন্য ভোট দেবার অনুরোধ পাননি। আপনারা ব্যক্তিগত বা গণমেইল, ব্যক্তিগত বা গণ-এসএমএস, পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এই অনুরোধ পেয়েছেন। অনেকেই ভোট দেয়েছেন কক্সবাজার, সুন্দরবন বা গঙ্গানদীকে। পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই এই ভোটের আপডেট নিউজও পাওয়া যায়। বলতে দ্বিধা নেই পত্রিকা পড়ে আমিও ভোট দেয়েছি। পরে হঠাৎ একটা বিষয় মনে পড়তে একটু খটকা লাগলো।
গত নব্বই-এর দশকের শেষভাগে বিশেষতঃ ২০০০ সাল যত কাছিয়ে আসছিল ততই আমরা এরকম মানব ইতিহাসের বা হাজার বৎসরের বা শতাব্দীর সেরা মানুষ নির্বাচনে ভোট দেবার জন্য নানা রকম মেইল বা অনুরোধ পেতাম। পরিচিত/অপরিচিতরা প্রফেটকে বা লেনিনকে বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বা বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেবার অনুরোধ জানাতেন। খুব কম সময়ই এসব ভোটের ফলাফল জানা যেত। মাঝে মধ্যে যে ফলাফল পাওয়া যেত তা অতীব ভয়ঙ্কর। যেমন এলভিস প্রিসলী মানব ইতিহাসে সবচে’ বেশী অবদান রাখা মানুষ বা শতাব্দীর সেরা মানুষ জিম মরিসন ইত্যাদি। এতে আয়োজক এবং যারা অধিকাংশ ভোট দিয়েছেন তাদের মানসিক সুস্থ্যতা সম্পর্কে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। এতে করে আস্তে আস্তে আমরা এধরনের নতুন কোন ভোটের কথা শুনলে উপেক্ষা করে যেতাম।
এবার ব্যাপারটি কিন্তু ভিন্ন ধরনের হয়েছে। এবার বিষয়বস্তু এমনভাবে বাছা হয়েছে যাতে একদেশের মানুষের মধ্যে রাজনীতি বা মতবাদগত পার্থক্যর সুযোগ না থাকে। যাতে আরো বেশী সংখ্যক লোক এতে অংশ নেয়। আয়োজকরাও ১০০ মিলিয়ন ভোটের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছেন। এই পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল।
আমার মনে খটকা লেগেছিল কারা এই আয়োজন করেছে সে ব্যাপারে। ইন্টারনেট ঘেঁটে বা কার্যক্রমটির ওয়েবসাইট দেখে আমি বুঝতে পারিনি কারা এর আয়োজক। তারা কোন দেশের লোক বা তারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই অনুসন্ধানে আমার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে ভেবে অন্য অনেককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি তারাও কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। আমি আয়োজকদের কোন ঠিকানা পাইনি, যদিও আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম ও ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম NewOpenWorld Foundation। ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি এদের কোন ওয়েবসাইট পাইনি। যদিও তাদের ভোটের প্রোগ্রামটার ওয়েবসাইট আছে। আয়োজকদের এক বিজ্ঞপ্তি মারফত খোদ জাতিসঙ্ঘের এই আয়োজনের সাথে জড়িত থাকার কথা জানা যায়। বলা হয়, NewOpenWorld Foundation জাতিসঙ্ঘের পার্টনারশীপ অফিসের সাথে যে সাধারণ লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্য ধারন করে তাতে সুশীল সমাজের অংশগ্রহনে জাতিসঙ্ঘের Millennium Development Goals কার্যক্রমের ক্রিয়েটিভ সল্যুশন হিসেবে এই ভোট।
এই ঘোষনায় কিন্তু এই কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘের অংশগ্রহণ স্পষ্ট হলনা। এমনকি Millennium Development Goals কার্যক্রমে জাতিসঙ্ঘের কাঠামোর বাইরের যে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের তালিকাতেও NewOpenWorld Foundation-এর নাম নেই। তা জাতিসঙ্ঘের কোন সাধারণ কার্যক্রমের বা গোল অর্জনের জন্য আপনি-আমিও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি। তাতে জাতিসঙ্ঘের সরাসরি অংশগ্রহণ আবশ্যিক নয়, শুধু কনফ্লিক্ট না হলেই হল। সেভাবে NewOpenWorld Foundation-ও জাতিসঙ্ঘের Millennium Development Goals-এর জন্য কাজ করতে পারে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের Millennium Development Goals-এর লক্ষ্যগুলি যদি আমরা দেখি তাহলে তার সাথে এই কার্যক্রমের দূর সম্পর্কও বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই ভোট কার্যক্রমের নাম “প্রকৃতির নতুন সপ্তাশ্চর্য”। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে প্রকৃতির পুরাতন সপ্তাশ্চর্যগুলি কোনগুলি? সে প্রশ্নের উত্তর কিন্তু কোথাও নেই। এই কথাও জানা যায় না এই ভোটে যে ফলাফল পাওয়া যাবে তা কিভাবে ও কি ভিত্তিতে মূল্যায়ণ করা হবে। এই ভোট কার্যক্রমের কোন রাষ্ট্রিয় অনুমোদনের কথাও আমরা জানতে পারিনি। ফলাফল নিয়ে কি করা হবে তাও স্পষ্ট নয়। এই ফলাফল কি পর্যায়ে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারবে তাও জানতে পারিনি।
বিষয়টি যদি আর দশটা জাঙ্ক মেইলের মত হত তাহলে আমি মাথা ঘামাতাম না বা আপনাদের সময় নষ্ট করতাম না। বিষয়টির প্রচারণার বহর দেখে আমি চিন্তিত। এই বিপুল প্রচারণার অর্থায়ণ কিভাবে হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়। প্রাসঙ্গিক হিসাবে জুয়েল আইচের একটি গল্প বলি। তিনি বলেছিলেন যাদুকর যে হাতটা নাড়ান সবার দৃষ্টি সে হাতের দিকে থাকে। যাদুকর কিন্তু তখন অন্য হাতটি দিয়ে কৌশলটি করেন (তাস পাল্টান বা ফুল বের করেন)। মিডিয়ার এই প্রবল হাত নাড়ানোতে সন্দেহ হয় অপর হাতে তখন কি খেলা চলছে?
লক্ষ্য করবেন কিছু দিন পর পর এমন কিছু অদরকারী বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক তোলা হয়। ডেনিশ পত্রিকায় প্রফেটের ব্যঙ্গচিত্র, কোরানের বিরূদ্ধে মামলা, হিজাব পরায় ক্লাশ থেকে বের করে দেয়া ইত্যাদি সবই করা হয় সাধারণ মানুষের অনুভুতিকে উসকে দিয়ে হৈ-চৈ বাঁধানোর জন্য। এসব হৈ-চৈ-এর কোন মহৎ উদ্দ্যেশ্য নেই এবং অচিরেই এগুলো বিলীন হয়ে যায়। এর কোনটাই তুলনীয় নয় এমন সব বিষয়ে, যেমন নির্বিচারে মানুষ হত্যা, অবরোধ দিয়ে তিলে তিলে মানুষ মারা, গণধর্ষন, এথনিক ক্লিনজিং, প্রাকৃতিক ও প্রত্নসম্পদ লুট, পরিবেশ ধবংস করা ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিকার রাখার কৌশল এখন মিডিয়া শিখে গেছে। ইন্টারনেটের মত আধুনিক ও শক্তিশালী মিডিয়াকে এই অপকর্মে সফলভাবে ব্যবহারও শুরু হয়ে গেছে।
আমি ব্যবসার বিশেষতঃ ইন্টারনেট-বেসড হাইটেক ব্যবসার খুঁটি-নাটি জানি না। তবে এই ভোট কার্যক্রমের পেছনে যে বিরাট ব্যবসা আছে তা টের পাই। ভোটে জেতা প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্পত্তি বা এই ধরনের কিছু ঘোষণা দিয়ে কর্পোরেট প্রভুরা হাতিয়ে নেয় কিনা ভয় হয়। সেক্ষেত্রে আমরা যে অসহায় দর্শক হয়ে থাকবো এবং আজকের সরব মিডিয়া যে নিরব হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। এই অধম পান্ডবের আশংকা মিথ্যা প্রমাণিত হলেই মঙ্গল।
জাতিসঙ্ঘের Millennium Development Goals-এর সাইটটিতে যদি যান তাহলে একটা প্রশ্ন দেখতে পাবেনঃ “What can you do?”। তার উত্তরটাও সাথে সাথেই পাবেনঃ “Join the Campaign to End Poverty by 2015”। এখন ২০০৮, লক্ষ্যমাত্রার ২০১৫ সাল আর মাত্র সাত বৎসর পর। এই সাত বৎসরে বিশ্বের দারিদ্র্য দূর করতে হলে আলাদীনের চেরাগ থাকাও যথেষ্ঠ নয়। তবু আমাদের সে প্রচেষ্টা থাকা উচিত। আমরা এই ভোট কার্যক্রমে যেমন কোমর বেঁধে লেগেছি বিশ্বের দারিদ্র্য দূর করার কার্যক্রমে আমাদের তেমন কোন উদ্যোগ নেই কেন? কেন মিডিয়াতেও তেমন কোন প্রচারণা চোখে পড়ে না?
মন্তব্য
আমিওতো ভোট দিছিলাম! তাইলে...
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমি তো প্রায় এক ডজন ভোট দিয়েছি। আসলেই ব্যাপারটা কি হচ্ছে?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
উদ্ধৃতি
এই সাত বৎসরে বিশ্বের দারিদ্র্য দূর করতে হলে আলাদীনের চেরাগ থাকাও যথেষ্ঠ নয়।
দরিদ্ররা মরে এমনিতেই সাফ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকবে ধনীরা। আলাদীনের চেরাগ প্রয়োজন নেই।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
চিন্তাশীল মনের চিন্তাশীল স্ফুরণ সত্যি ভাবতে সাহায্য করবে। সেই সাথে বিবেচনা করতে বিষয়কে অনুধাবনের।
হায় আমি কি ভুল করলাম তবে ভোট দিয়ে, এক বুক আশা নিয়ে আমার সোনার বাংলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে প্রথম হবে এই ভেবে! বেনিয়াদের বেনেতি চাল বাণিজ্য শেষে প্রকাশ হয়। তখন পড়ে থাকে দীর্ঘ শ্বাস আর নির্বুদ্ধিতার অনুশোচনা।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
হ্যাঁ, এটা নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। পুরো ব্যাপারটাই একেবারে অস্বচ্ছ। আপনার পোস্টটা ভালো একটা বিষয় তুলে ধরলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কথাগুলো ভাবাল। ধন্যবাদ
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
দারিদ্র দূরীকরণ কোন কঠিন ব্যাপার না। দরিদ্রদের মেরে সাফ করে ফেললেই পৃথিবীর বুক থেকে দারিদ্র দূর হয়ে যাবে।
ভোট তো আমিও দিয়েছি কিন্তু আপনার কথাগুলো কখনো ভেবে দেখিনি।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
আমি ভোট দেই নাই। ফাও ফাও টাইম লস। আসল কাজের বেলায় নাই, টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নাই, শুধু ভোট...
তবে হ্যাঁ, এই ভোটিং-এর কথা বলে আমার এক আমেরিকান দোস্তকে বাংলাদেশ ঘুরতে পাঠাচ্ছি। আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!
ছেলে বন্ধু না মেয়ে বন্ধু?
ভোট আমিো দেই নাই... তবে এই বিষয়গুলা খুব একটা ভাবি নাই... ভোট জমায়ে রাখছি একবারে দিবার জন্য... এখন তো ভাবনা তৈরি হইলো...
ধন্যবাদ...
দিন হইলে এই ব্যাপারে একটু খোজ নিতে হয় দেখি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি কিছু অনুসন্ধান করেছিলাম। এটা ওই লোকের ব্যবসা। টাকা কামানোর ধান্ধা।
ভোট দেইনি, হুজুগের মধ্যে আমি নাই। তবে অনেক বড় বড় লোক ও প্রতিষ্ঠান এই হুজুগে মত্ত ছিল।
সবকিছুর আগে এদের পূর্বে জরিপকৃত সপ্তাশ্চর্য সর্ম্পকে জেনে নেয়া দরকার।
জনগন কি সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে? যদি না করে থাকে বা আগেরগুলোর স্বীকৃতি দেয় তাহলে এটা নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই।
সবাই যেভাবে শংকিত আমি ততটা না ।
পুরো লেখাটার মধ্যে শংশয় গুলা কি কি?
আমি শুধু একটা পেয়েছি
এর উত্তরে আমার বক্তব্য:
১এটা শুধুই একটা ধারনা
২.এটা কিভাবে কেউ আন্তর্জাতিক সম্পত্তি দাবি করবে? প্রত্যেকটা জায়গার সাথে তো দেশের নাম উল্লেখ করাই আছে ।
৩.কর্পোরেট প্রভু কারা ?আর আন্তর্জাতিক সম্পত্তি কিভাবে কর্পোরেট প্রভুরা হাতিয়ে নিবে?তার মানে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন কক্সবাজার যদি সপ্তাশ্চর্যের একটা হয় তাহলে যত পর্যটক আসবে বা যত অর্থ আসবে তার সব ঐ কর্পোরেট প্রভুদের কাছে যাবে??
এসব ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না ।
কারও যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকুন ।কিন্তু দয়া করে অন্যকে অনুতসাহিত(!) করবেন না।
যদি কোন নির্দিষ্ট প্রমান থাকে তাহলে বলুন আমি আপনার সাথে থাকব ।
আমি আপনাদের এখানে নতুন ।কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাচ্ছি ।
নতুন মন্তব্য করুন