(প্রভাত পাটনায়েকের “Whatever Happened to Imperialism” শীর্ষক রচনাটি নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত “Monthly Review”-এর Volume: 42 No: 6-এ নভেম্বর, ১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রচনাটির আমার অনুবাদ ইতিপূর্বে মাসিক “সংস্কৃতি”র ২৭ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা, অগাস্ট ২০০০-এ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯০ সালের লেখাটি ২০০০ সালে যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল তার আট বৎসর পরে আজও তার প্রাসঙ্গিকতা একই প্রকার রয়ে গেছে। প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে অনুবাদটি ঈষৎ পরিবর্তন করে এখানে পোস্ট করা হল।)
সাম্রাজ্যবাদের কি হল? (প্রথম পর্ব)
এ ব্যাপারে আর কিছু বলা নিরর্থক। বিষয়টি এমন নয়, যেভাবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়ে থাকে, অনুন্নত বিশ্বের দুর্ভাগ্যের প্রধান কারন কি সাম্রাজ্যবাদ নাকি তাদের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব। এধরনের মূল্যায়ণ দুর্বল সুত্রায়ন বৈ কিছু নয়। বিষয়টি এমন নয় যে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের সাহায্য ব্যতীত টিকে থাকবে, যা মার্কসীয় প্রক্রিয়ায় এক অগ্রহনযোগ্য প্রশ্ন। বিষয়টি এমনও নয় যে, সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক অমুক অমুক তাত্ত্বিকের বিশ্লেষন সঠিক (এটি স্তুতি, বিশ্লেষন নয়)। বিষয়টি এমন এক ধাঁধা যে, যখন এই ‘সম্পর্ক-ব্যবস্থা’টি সাম্রাজ্যবাদের আবরণে ঢাকা, এবং গত পনের বৎসরে যার খুব কমই পরিবর্তন হয়েছে। আজ এমনকি মার্কসবাদীদের মধ্যেও সাম্রাজ্যবাদের কোন উল্লেখ ছাড়াই মৌলিক প্রশ্নগুলো আলোচিত হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপের গতকালের মার্কসবাদীরা আজ নানা কারনে সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে কথা বলা বন্ধ করেছেন। মিঃ গরবাচেভ সম্ভবতঃ সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে একটি বাক্যও ব্যবহার না করে তার ‘পেরেস্ত্রয়কা’ লিখেছেন। কিন্তু মার্কিন মার্কসবাদীরা কেন এ ব্যাপারে নিশ্চুপ হয়ে আছেন - যারা তাদের সোভিয়েত বা পূর্ব ইউরোপীয় সহযোগীদের অবস্থায় নিপতিত হন নি?
অনেকে ভাবতে পারেন যে এর কারনটি লুকিয়ে আছে সাম্রাজ্যবাদের আরো শক্তিশালী ও সুসংগবদ্ধ হয়ে ওঠার মধ্যে। ভিয়েতনাম ছিল সাম্রাজ্যবাদের একটি সমস্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে একটা ছোট দেশকে নিয়ন্ত্রনে আনতে পাঁচ লাখ সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল সেটি ছিল ‘ভিয়েতনাম’ বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ করার ব্যর্থতা। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে হেরেছিল কারন তারা এই ‘ম্যানেজ’ করার এই ব্যর্থতাটিকে চিহ্নিত করতে পারেনি। তখন থেকে যে করেই হোক অনুরূপ কোন সমস্যা তৈরী হতে দেয়া হয়নি, কারন এখন সাম্রাজ্যবাদ বিষয়গুলোকে ভালোভাবে ‘ম্যানেজ’ করতে শিখেছে। ভিয়েতনামের জনগণ যুদ্ধ জয় করতে গিয়ে যে মূল্য দিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে তা দুর্বল করে দিয়েছে। তারা আরো শিক্ষা নিয়েছে যে পরিস্থিতি তাদের বৈরী। একজন মানুষ, তা তিনি প্রথম বিশ্বেই থাকুন আর তৃতীয় বিশ্বেই থাকুন, এখন বুঝতে পারছেন যে এটা এমন একটা ‘হার্ডল রেস’ যেখানে ঘোড়া কোন না কোন ‘হার্ডলে’ হুমড়ি খাবেই।
একটা বিপ্লবী সরকারের আগমন প্রথমতঃ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত। যদি কোনভাবে একটা বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়, তখন তার উপর একটা অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচীতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু অভ্যন্তরীন বৈরীতা সৃষ্টি করা হবে যা পরিণামে গৃহযুদ্ধের সূচনা করবে। এরপর বিপ্লবী সরকার যদি ঐ গৃহযুদ্ধে জয়ীও হয় তবু সে তার সীমিত সম্পদ দ্বারা এই অর্থনৈতিক পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হবে। তখন তাকে বৈদেশিক সাহায্যের জন্য বাইরে হাত পাততে হবে এবং সেখানে আইএমএফ বা বিশ্ব ব্যাংকের মত সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটবে। এরপর তারা (বাইরের সংস্থাগুলো) ঐসমস্ত আর্থ-সামাজিক সংস্কারগুলোর পরিবর্তন দাবী করবে।
কয়েক বৎসর আগেও তৃতীয় বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা হত। যেমন, মার্কসীয় সমাজতন্ত্র, জওয়াহেরলাল নেহেরুর সমাজতন্ত্র, জুলিয়াস নায়েরেরের সমাজতন্ত্র বা চেড্ডি জাগানের সমাজতন্ত্র। আজ আইএমএফ-এর শর্তসমূহের চাপে সেসব সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন ধুসর হয়ে গেছে, এমনকি সাবেক সমাজতান্ত্রিক বিশ্বেও। সন্দেহ নেই, অনেকেই বলবেন এটা তৃতীয় বিশ্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী শাসনামলের বোকামীর ফল। আমাদের পূর্ববর্তী উদাহরনটির সাথে তুলনা করলে বলা যায়, যদি ঘোড়াটি সবগুলো ‘হার্ডল’ অতিক্রম করতে না পারে তবে হুমড়ি খাবার জন্য সে-ই দায়ী। কিন্তু আমি মনে করি, ঘোড়াটি যদি বুদ্ধিমান ও প্রশিক্ষিত হয় তাহলে সে সবগুলো ‘হার্ডল’ অতিক্রম করতে পারবে। অন্য বিবেচনায় আমরা ঘোড়াটিকেই ‘হার্ডল’গুলো দেখতে না পাবার জন্য দায়ী করছি যা সঠিক নয়।
রূঢ় সত্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ এত সফলতার সাথে ‘হার্ডল’গুলো সাজিয়েছে এবং নেতৃত্বকে ‘ম্যানেজ’ করার ব্যাপারে এতটাই দক্ষ হয়েছে যে তার সর্বগ্রাসী উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদ বুঝেছে যে সর্বত্র পাঁচ লাখ সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন নেই। আর যদি কোথাও পাঁচ লাখ সৈন্য পাঠানো হয়েও থাকে তাহলে নৈতিক বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে না এবং সাম্রাজ্যবাদের বাস্তবতা অচিহ্নিতই থেকে যায়। ইতিহাসের পরিহাস এই যে, সাম্রাজ্যবাদের হুমকি আজ এতই কার্যকর যে তা নিঃশব্দে চলতে পারে এবং তাকে চিহ্নিত করা যায় না। শুধুমাত্র মাঝে মধ্যে তার এই নিঃশব্দ চলনের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে তার কুৎসিত চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদের ব্যাপারে মার্কসীয় আলোচনার এই নিরবতা (বিশেষতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) বর্তমানে এর অসাধারণ শক্তি ও সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ।
ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে লুই আলথুসার মন্তব্য করেছিলেন, “তাত্ত্বিক ধারনাগুলো পুরোনো জু্তা নয় যে আপনি যখন খুশি তা পরিত্যাগ করতে পারেন। তারা আপনাকে খুঁজে বের করবেই”। এক্ষেত্রে আমরা এমন এক পুরোনো ধারনার কথা বলছি যা আমাদের আরো নিষ্ঠুরভাবে খুঁজে বের করবে। সাম্রাজ্যবাদের কল্যাণে কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রগুলোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা হ্রাস পেয়েছে। তাত্ত্বিক অভিঘাত, যা ধারণাটিকে অন্তর্গতভাবে পরিচালনা করছে তা তৃতীয় বিশ্বের বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিরূদ্ধে আঘাত হানতে পারে যা তাদের বাস্তব পশ্চাদপসরণকে ত্বরান্বিত করবে। যদি এধরনের পশ্চাদপসরণ হয় তখন সাম্রাজ্যবাদের মানে দাঁড়াবে তৃতীয় বিশ্বে ডানের বিরোধিতার শক্তি বৃদ্ধি। বিপ্লবের শক্তি হ্রাস মানে তৃতীয় বিশ্বে বর্ণবাদ, মৌলবাদ আর জাতিবিদ্বেষী আন্দোলনের প্রসার।
মন্তব্য
আপনার লেখা আমার বেশ লাগে। এর আগে আমেরিকার বেল আউট নিয়ে যেটা লিখেছিলেন, সেটাও খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম।
তবে এ লেখাটার সামগ্রিক চরিত্রের সাথে একমত হয়েও আমি বলব, বিপ্লবের শক্তি হ্রাস মানে তৃতীয় বিশ্বে বর্ণবাদ, মৌলবাদ আর জাতিবিদ্বেষী আন্দোলনের প্রসার হবে - মোটা দাগে এত সরলীকরণ করে আমি সমাজকে দেখি না।
আজকের দিনের সমাজবিশ্লেষকেরা সমাজকে দেখেন মূলতঃ বিভিন্ন সঙ্ঘাত বা 'এন্টাগনিজম' এ সমৃদ্ধ বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের সমাবেশে ভরপুর এক জটিল সিস্টেম হিসেবে। মার্ক্সের 'দ্বান্দ্বিকতা'র বদলে সমাজের চালিকা শক্তি তাদের কাছে 'এগ্নোস্টিক প্লুরালিজম'। বিপ্লব মানেই সবসময় যে মার্ক্সবাদী বিপ্লব - তাও কিন্তু নয়। মার্ক্স তত্ত্ব দেওয়ার আগেও বিপ্লব হয়েছে, পরেও হয়েছে। এমনকি কমিউনিজমের পতনের পরও এই 'পুঁজবাদী' বিশ্বেও মানুষের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ থেকে সময়, পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন বুঝে বিপ্লব হচ্ছে। অধিকার আদায়ের দাবী আসলে মানুষের মজ্জাগত। স্পার্টাকাসের দাস বিদ্রোহের কথা আমি সেই ছোটবেলায় পড়েছি - যা আন্দোলিত করেছিল আমার মত অসংখ্য মানুষকে। আরো উদাহরণ দেয়া যায়। একসময় নারীদের ভোটাধিকার ছিলো না, তারা আন্দোলন, বিদ্রোহ করে ভোটাধিকার আদায় করেছে। এক সময় কালোমানুষদের অধিকার ছিলো না কোন সাদা চামড়ার মানুষের পাশে বসে যানবাহনে চলাচলের কিংবা একই রেস্তারায় বসে খাবার খাওয়ার। তারা একটা সময় সে অধিকার আদায় করেছে নিজেদের প্রয়োজনেই। মার্টিন লুথার কিং কিংবা রোসা পার্ক্সের মত নেতারা মার্ক্সিস্ট ছিলেন না, কিন্তু তারা অধিকার আদায়ের দাবীতে নেতৃত্ব দিতে পারেছিলেন। নব্বইয়ে গণ-অভুত্থানে এরশাদের পতন কি মার্ক্সবাদী আন্দোলনের ফসল ছিলো? একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম কি কোন শ্রেনী সংগ্রামের ফসল ছিলো? কিছু উপাদান প্রচ্ছন্ন ভাবে থকেলেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সার্বিকভাবে কোন মার্ক্সীয় সংগ্রাম ছিলো না, ছিলো আমাদের অধিকারের লড়াই। সে জন্যই একাত্তরে নেতৃত্বে ছিলো আওয়ামিলীগের মত মধ্যপন্থি একটি দল। আজকে সারা বিশ্ব জুড়ে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কোনভাবে মার্ক্সিস্ট আন্দোলন বলা যায়? যায় না। আসলে আজকের বিশ্বের অধিকাংশ সমস্যাই স্থানীয়। স্থান, কাল, পরিবেশ এবং সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সমাধান আসছে। কোথাও কোথাও বিপ্লবীরাও ক্ষমতায় যাচ্ছে - নেপালে কিংবা ভেনিজুয়েলায় , কিন্তু মার্ক্সীয় বিপ্লবের বদলে শেষ পর্যন্ত 'পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক' পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়ে। মার্ক্সের তত্ত্ব আগা-গোঁড়া মেনে সেই সনাতন বিপ্লব হচ্ছে - তা সবসময় বলা যাবে না। আবার কোথাও কোথাও বিপ্লব খুব বাজে ভাবেও শেষ হয়েছে এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়। কখনো বা বিপ্লব করতে গিয়ে উলটো প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ভারতে নকশাল কিংবা বাংলাদেশে ‘সর্বহারা পার্টি’র অব্যাহত সন্ত্রাসের কথা বলা যায়। আমি সম্প্রতি একটা লেখা লিখেছিলাম এ বাস্তবতাগুলো বিশ্লেষণ করে, যদিও লেখার প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন। কিন্তু তারপরও হয়ত এ প্রসঙ্গে চিন্তার খোরাক যোগাতে পারে। লেখাটা আছে এখানে।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আপনি উত্তরটা দিয়েই দিয়েছেন লেখায় ... সাম্রাজ্যবাদ দক্ষ হয়েছে সব ক্ষেত্রে আর সেই কারণেই সাম্রাজ্যবাদীরা রাজত্ব করে চলেছে। সহজ হিসাব পৃথিবীতে বেশী দক্ষ ব্যবস্থাই রাজত্ব করছে ... তাতে মানুষের ভাল হোক বা না হোক। এ তো স্বাভাবিক ...
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
এক হিসেবে পট্টনায়েকের কথা খুবই সত্যি - কোনকিছুর আপাত অনস্তিত্ব তার অস্তিত্বকে বরং আরো জোরালো ভাবে প্রকাশ এবং প্রমাণ করে। মার্কিন একাডেমিয়া বা মার্ক্সবাদী আলোচনায় সাম্রাজ্যবাদের অনুপস্থিতিও তাই। কিন্তু, এখন এই ২০০৮ সালে - ইরাক যুদ্ধ, বিশ্ব মন্দা, এবং চীন আর ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদির প্রেক্ষিতে আমার তো ধারনা 'সাম্রাজ্যবাদ' এর কন্সেপ্ট টাই নতুন করে ভাবতে হবে।
ডিপেনডেনসী স্কুলের সেই কোর পেরিফেরী, যা দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বেশ সহজেই সনাক্ত করা যেতো - তা কি এখন আর স্পষ্ট করে ধরা যায়? হ্যা, এখনো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো পেরিফেরীতেই আছে, কিন্তু কোর দেশগুলোর 'সাম্রাজ্যবাদী' প্রক্রিয়া আর তৃতীয় বিশ্বের ধনিক (পড়ুন ইউ এস ডলারের হিসেবে যারা মিলিওনিয়ার!!) শ্রেনীর কার্যক্রম, খুব কি আলাদা?
আগে ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বা আগ্রাসন নির্ণায়িত করা যেত, এখন এই বিশ্বায়নের যুগে সবকিছুই খুব বেশী রকম ফ্লুয়িড বলে মনে হয়। মনে হয় পুরো পৃথিবী জুড়ে সব দেশের ধনিক শ্রেণী একটা শ্রেণী, তাই দেশ হিসেবে আলাদা করে সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের আর দরকারই বা কি?
মার্ক্সিজম নিয়ে আমার খুব বেশী পড়াশোনা নেই, তাই আপনাদেরই বোধহয় উত্তরটা দিতে হবে
এই প্যারাটা আমি ঠিকমতো বুঝতে পারিনি।
প্রিয় অভিজিৎ, আপনার অবস্থান ও ব্যাখ্যার সাথে আমার দ্বিমত আছে। বস্তুতঃ এ ধরনের অবস্থান নিয়ে আরো কয়েকজনের (যেমন, ফারুক ওয়াসিফ এবং সুমন চৌধুরী) সাথে আমার দ্বিমত আছে। আমার ইচ্ছে আছে এব্যাপারটা নিয়ে আমার অবস্থান স্বতন্ত্র একটা পোস্টে তুলে ধরার।
আপনার লেখা "মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান" আমি আমার পছন্দের তালিকায় যুক্ত করে রেখেছি এ নিয়ে পরে লিখবো বলে। এ কথা আমি সে লেখার মন্তব্যেও বলেছি।
এই দু'টো বিষয় নিয়ে আমি নিজেই নিজের কাছে 'খেলাপী' হয়ে আছি। আপাততঃ কৈফিয়ত "সময় ভিখেরী হয়ে ঘোরে সময়ের কাছে, অথচ সময়ই জানে কথা আছে, ঢেড় কথা আছে"।
প্রিয় দিগন্ত, ইকোলজিক্যাল বিবর্তন বা সামাজিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে "শেষে সত্যের জয় হয়" ধরনের ব্যাপার সবসময় সত্য নয়। তবে কোন ব্যবস্থাই পরম নয়। কোন ব্যবস্থা তার অন্তর্গত দ্বন্দ্বকে প্রশমণের, এবং পারিপার্শ্বিকের সাথে পরিবর্তন ও অভিযোজন করতে না পারলে তার ধ্বংস অনিবার্য। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দর্শনকে আসমানী কিতাবের মত ব্যবহার করলে ধূর্ত ও প্রবল প্রতিপক্ষের হাতে সে মার খাবে সেটাই স্বাভাবিক।
প্রিয় স্নিগ্ধা, আমরা জানি যে সাম্রাজ্যবাদ তার প্রতিপক্ষের চেয়ে একসময় তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দুর্বল ছিল। এ কথার মানে হচ্ছে এই যে, তখন তার দাঁত-নখগুলো মখমলে ঢাকা ছিল না। তাই তার বিপরীত মতবাদ তার মানবিক ও কল্যানমূখী চেহারা (ও মন) দিয়ে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছুতে পারত। সংগঠণের পক্ষেও তখন বৈপ্লবিক কর্মসূচী দেয়া সহজ হত। কিন্তু আজ সাম্রাজ্যবাদ তার সেই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠেছে। ফলে সে একইসাথে সংগঠণ ও আদর্শ উভয়ে দিকেই আক্রমণ করতে পারছে।
তৃতীয় বিশ্বের সংগঠণগুলো ষাটের ও সত্তরের দশকে অনেকাংশে দ্বিতীয় বিশ্বের উপর নির্ভরশীল ছিল, এমনকি আশু করণিয় বা তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাতেও। দ্বিতীয় বিশ্বের অবলুপ্তির ফলে এই নির্ভরশীলতাটিকে কমিয়ে দিনে দিনে স্বনির্ভর হবার বদলে (খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) সংগঠণগুলোকে আস্তে আস্তে নিরাশ্রয় করে তোলা হয়েছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। লক্ষ্য করুন, পাটনায়েকের ভবিষ্যতবানীর আঠারো বৎসরের মধ্যে তার কি করুণ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সাম্রাজ্যবাদের পেরিফেরি বিশাল তার বহু আলামত আছে। মখমলে সাজানো নখের ছোবল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বীয় সীমিত স্বার্থে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে বা করানো হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে - আমরা কি সাম্রাজ্যবাদকে আমাদের উপর মাতবরি করার ভূমিকাকে মেনে নিয়েছি নাকি মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ?
মার্ক্সবাদের ফোকর ছিল বলে সফলতা আসে নাই। সাম্রাজ্যবাদের ফোকর ও অনেক।
ষষ্ঠ পান্ডবদা,
ফোকরগুলা নিয়া কিছু লেখেন।
শুভাশীষ দাশ
প্রিয় শুভাশীষ, আপনার মন্তব্য আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি তাহলে আপনি "সাম্রাজ্যবাদ" আর "মার্কস্বাদ" এই দুটি বিষয়কে পরস্পর বিপরীত চরিত্রের একই ধরণের জিনিষ বলে মনে করছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমি আপনার সাথে একমত না। "মার্কস্বাদ" আর তার "প্রয়োগ"কে আমি এক হিসাবে দেখিনা। পার্থক্যটা অনেকটা science আর technology-র পার্থক্যর মত। যাকগে এখানে সে বিতর্কে যাবনা, এতদিন পরে এই লেখা পড়ে কেউ মন্তব্য করল দেখে ভাল লাগল। মার্কস্বাদ প্রয়োগের ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী ও প্রশ্ন নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। বিস্তারিত ইতিহাস লেখার যোগ্যতা আমার নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দাদা ষষ্ঠ পাণ্ডব
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভে একটা মজার লাইন পড়ছিলাম- ধনতন্ত্রে মানুষ শোষণ করে মানুষকে আর সমাজতন্ত্রে ঘটে এর উল্টোটা।
শুভাশীষস্কি দাশভ
নতুন মন্তব্য করুন