কিছুদিন আগে শিশুতোষ বইয়ের আকাল নামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ঐ লেখাটা লেখার সময় একই সাথে ছোটদের পত্রিকার ব্যাপারটিও স্বাভাবিকভাবে মনে এসেছিল। কিন্তু এব্যাপারে লিখতে গিয়ে দেখি তথ্য প্রায় নেই। তারপরও এই লেখাটিতে হাত দেবার সাহস করছি এই ভেবে যে, সচলের পাঠকরা হয়তো আমার এই ছাড়া ছাড়া লেখায় বস্তুনিষ্ঠ তথ্য যোগ করতে পারবেন। তাতে আশা করি আমরা মোটামুটি একটা চিত্র পাবো। আরেকটা দুরাশা আছে। যেহেতু সচলে খোদ লুৎফর রহমান রিটন আছেন, যিনি নিজেই ছোটদের জন্য প্রচুর লেখার পাশাপাশি ছোটদের জন্য একাধিক পত্রিকা বের করেছেন, তিনি চাইলে এব্যাপারে একটা পূর্ণাঙ্গ পোস্ট দিতে পারেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে উল্লেখ করার মত প্রথম ছোটদের পত্রিকা সম্ভবতঃ “টাপুর-টুপুর”। এখলাস উদ্দীন আহমেদ সম্পাদিত এই পত্রিকাটি লেখার মানে, ছাপায়, কাগজে, রঙে এখনো অদ্বিতীয়। যারা “টাপুর-টুপুর” পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা সবাই এর প্রগতিশীল ও আধুনিক অ্যাপ্রোচে এখনো মুগ্ধ হবেন। “টাপুর-টুপুর”-এর সমান্তরালে যে পত্রিকাটির নাম উচ্চারিত হবে তা হচ্ছে রফিকুল হক দাদুভাই সম্পাদিত “কিশোর বাংলা”। “কিশোর বাংলা” কনটেন্টে সমৃদ্ধ হলেও এর ফরমাট, কাগজ, রঙ ছিল একেবারেই অনাকর্ষনীয়। এই পত্রিকাটি বের করার ক্ষেত্রে পেশাদারী মনোভাব (বাণিজ্যিক অর্থে নয়) কাজ করেনি। তাই অপেক্ষাকৃত কমবয়সী বা পড়তে অনাগ্রহী শিশুদের এই পত্রিকাটি আকর্ষন করতে পারে নি। সত্তরের দশক শেষ হবার পর এই দুই পত্রিকাকে আর চোখে পড়েনি।
শিশু একাডেমীর পত্রিকা “শিশু” আর ডিএফপির পত্রিকা “নবারুণ” যাত্রা শুরু করে সত্তরের দশকেই। এদের মধ্যে “নবারুনে”র কাগজ আর ছাপা “শিশু”র চেয়ে ভালো হলেও “শিশু”র কনটেন্ট ছিল অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধ। নিয়মিত পত্রিকা হিসেবে “নবারুণ” দ্রুত পটল তুললেও “শিশু”র সুদিন থাকে আশির দশকের শেষভাগ পর্যন্ত। এরপর সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা হয়, “শিশু”কে গ্রাস করে ক্ষমতাসীনদের তোষণের রাজনীতি। পত্রিকাটির কনটেন্ট আর ছোটদের পড়ার-উপভোগের-শেখার উপযুক্ত থাকে না, পড়ার-বমির-ভুলে যাবার উপযুক্ত হয়ে পড়ে। “শিশু” এখনো প্রকাশিত হয়, সম্ভবতঃ “শিশু” বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রকাশিত হওয়া ছোটদের পত্রিকা।
আশির দশকে সরকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ফাউণ্ডেশন তাদের চার বিভাগীয় কার্যালয় থেকে চারটি ছোটদের পত্রিকা বের করার উদ্যোগ নেয়। ঢাকা থেকে “নতুন চাঁদ”, চট্টগ্রাম থেকে “সাম্পান”, খুলনা থেকে “সপ্তডিঙ্গা” আর রাজশাহী থেকে “ময়ুরপঙ্খী”। বাজেট হালাল করার এই পত্রিকাগুলো শুরুতে বেশ আওয়াজ দিলেও অচিরেই তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেবা প্রকাশনীর “রহস্য পত্রিকা”র বাচ্চা “কিশোর পত্রিকা” আর সিনেম্যাগাজিন “তারকালোক”-এর বাচ্চা “কিশোর তারকালোক”ও কিছুদিন চলেছিল। এই দু’টো পত্রিকাই লেখক আর কনটেন্টের অভাবে শুরু থেকে ভুগেছে। ছোটদের পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে দর্শনটা যে একটু ভিন্ন হওয়া উচিত তা এদের মালিক পক্ষ বোঝেন নি। তাই পত্রিকা দু’টো অবশ্যম্ভাবী পরিনতি বরণ করেছে।
ছোটদের জন্য স্বতন্ত্র পত্রিকার চেয়েও আকর্ষনীয় ছিল দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক ছোটদের পাতা। “কচি-কাঁচার আসর”, “খেলাঘর”, “চাঁদের হাট”, “মুকুলের মাহফিল” এগুলো শুধু সাহিত্য-সাপ্লিমেন্টের নামই না বরং এক সময়ে দেশব্যাপী ছোটদের শক্তিশালী সংগঠণেরও নাম। এক কালে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পত্রিকায় ছোটদের পাতার জন্য আমাদের অধীর আগ্রহ ছিল। এক বাসায় যেহেতু একটির বেশী দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় না, তাই বিভিন্ন পত্রিকার ছোটদের পাতা বদলা-বদলি করে পড়ার রীতিও ছিল।
ছোটদের পত্রিকাই বলুন আর দৈনিকের ছোটদের সাহিত্য-সাপ্লিমেন্টই বলুন একসময় সেগুলোতে প্রতিষ্ঠিত লেখকরা নির্দ্বিধায় তরুন লেখক বা জীবনে প্রথমবার লিখছে এমন সব শিশুদের সাথে সমান তালে লিখেছেন। পুরোনো “টাপুর-টুপুর”, “কিশোর বাংলা” বা “শিশু” হাতে নিলে একথার সত্যতা বুঝতে পারবেন। তারপর কিভাবে যেন ছোটদের জন্য লেখাটা প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা নিজেদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করতে শুরু করলেন। নয়তো ছোটদের জন্য তাঁদের প্রায় সবাই লেখা বন্ধ করে দিলেন কেন? ছোটদের পত্রিকাতে কনটেন্টের অভাবের বড় কারন হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের শিশু-সাহিত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। এখনকার “প্রথম আলো”, ইত্তেফাক”, “যুগান্তর”, “জনকন্ঠে”র মত হেভীওয়েট দৈনিকগুলোর ছোটদের সাহিত্য-সাপ্লিমেন্টগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন তাঁদের মুখ ফেরানোর কারনটা অর্থনৈতিক নয়।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সর্বগ্রাসী আগ্রাসণের যুগে আজকে ছোটদের হাতে তুলে দেবার মত কোন পত্রিকা আর অবশিষ্ট নেই। আজকের ছোটরা যখন বড় হবে তখন তারা তাদের শৈশব নিয়ে আলোচনার সময় কোন পত্রিকার নামই কী মনে করতে পারবে না?
দোহাইঃ
“আসন্ন” আর “ছোটদের কাগজ” এই দু’টি পত্রিকাকে এই আলোচনার বাইরে রাখলাম। কারনটি বোধগম্য। আলোচনায় আনতে পারিনি স্থানীয় পর্যায়ে অথবা ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর কথাও। সেটির কারন তথ্যের অভাব।
মন্তব্য
পরবর্তী প্রজন্ম পত্রিকার জায়গায় কোনো সাইটের নাম মনে রাখলেও আমি অবাক হব না । আমি ছোটোবেলায় পড়তাম আনন্দমেলা, এখনও আমি মিস করি আনন্দমেলাকে ... কিশোর জ্ঞান-বিজ্ঞান আর শুকতারাও পড়েছি কিছুদিন।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
প্রিয় দিগন্ত, ইদানিংকালের আনন্দমেলা দেখেছেন কি? দেখলে আপনার ছেলেবেলার আনন্দমেলাকে মিস করবেন।
ছাপানো পত্রিকার বদলে যদি ইন্টারনেটভিত্তিক কোন পত্রিকার নাম আগামী প্রজন্ম বলতে পারে তাহলেও আমার আপত্তি নেই। তবু বই-পত্রিকা এসব (যে কোন ফর্মে) পড়তে শিখুক।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার আলোচনা | আরও বিস্তৃত হলে ভাল হত |
আর “ শিশু ” আমি এখনো পড়ি তবে স্বপ্নে এটাই পার্থক্য |
আব্বুকে মনে পড়ে অথবা মহেষখালির মূকুট এক নিমিষে আমার সোনালী শৈশব |
একটি ঈদ সংখ্যা খুঁজেছিলাম অনেক পাইনি |
আপনি যেহেতু ছোটদের পত্রিকা নিয়ে লিখছেন, বিভিন্ন পর্বে একটি একটি করে পত্রিকা নিয়ে আলোচনা করুন |
কিভাবে আপ্লুত হতেন | প্রথম লিখা ছাপার আনুভূতি | কেমন লাগত “ ফূটবলার বিঞ্জানী” অথবা “ কচি হাতের কলম থেকে ” |
আর কিছু না হোক কিছুকালের জন্য অন্তত শৈশবে ফিরে যাওয়া যাবে |
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ছিল আরেকটি চমৎকার শিশুতোষ পত্রিকা |
অভিনন্দন সহ
প্রিয় গৌরীশ রায়, আপনি যে প্রস্তাব আমাকে দিয়েছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত লোভনীয়। আমিও আনন্দিত হতাম যদি তা করতে পারতাম। কিন্তু এই পোস্টটি প্রকাশিত হবার পর যা কিছু হয়েছে তাতে আমার মনে হয়েছে আমার অমন কিছু করা উচিত হবে না। ভালো থাকবেন। সম্ভব হলে এসংক্রান্ত আপনার অনুভূতি সচলের পাঠকদের সাথে শেয়ার করবেন।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সেবা প্রকাশনীর কিশোর পত্রিকা সম্পরকে যা বলা হয়েছে তার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করে এবং প্রায় ৮ বছর টিকে ছিল। আমি শুরু থেকে শেষ পরযন্ত এর সহকারি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশের সেরা শিশু সাহিত্যরাই এতে লিখতেন। পত্রিকাটির মান নিয়েও কোন সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কিশোর পত্রিকা সেসময় আলোড়ন তুলেছিল, সেসময়ের পত্র পত্রিকা ঘাটলে কিশোর পত্রিকা নিয়ে অনেক প্রশংসা সূচক আলোচনা পাওয়া যাবে। আসলে লেখক ও মান পত্রিকাটির বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল না। শেষ দিকে তেমন ব্যবসা হচ্ছিল না বলেই কিপ বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ। বাংলাদেশে ছোটদের কোনো পত্রিকার ব্যবসা করে টিকে থাকার নজির নেই।
আর কিশোর তরকালোক এখনো টিকে আছে, বন্ধ হয়ে যায়নি।
প্রিয় টিপু কিবরিয়া, সময় করে মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিশোর পত্রিকার মান নিয়ে আমার সাথে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। শুধু অনুগ্রহ করে এটিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নিবেন না।
"কিশোর পত্রিকা" যখন বের হয় তখন ছোটদের পত্রিকা পাঠকদের আশা ছিল অনেক। কারন, উন্নাসিকেরা সেবা প্রকাশনীর সমালোচনা করলেও বাংলাদেশে প্রকাশনার ক্ষেত্রে তার কী অবদান তা অস্বীকার করার উপায় কারো নেই। কিন্তু বাস্তবে "কিশোর পত্রিকা" আরেকটি "রহস্য পত্রিকা"তে পরিণত হয়েছিল। কিছু পার্থক্যতো ছিলই, তবে ছোটদের পত্রিকা যেমন হওয়া উচিত ছিল তা তেমনটি হয়নি। আমার মত পাঠকরা সেখানেই হতাশ হয়েছেন।
কোন প্রকাশনীই সব লেখকের লেখা প্রকাশ করে না, সেটা সম্ভব নয়। সেবা প্রকাশনী তথা "কিশোর পত্রিকা"ও তার ব্যতিক্রম নয়। তাদের নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী (নেতিবাচক অর্থে নয়) আছে। এভাবে একটি পত্রিকা তার একটি নিজস্ব চরিত্র ধারন করে। আম-জনতা যদি সেই চরিত্রটিকে পছন্দ করে, পত্রিকার আঙ্গিক ও কনটেন্ট পছন্দ করে তবে তার টিকে যাবার সম্ভাবনা বেশি।
"কিশোর পত্রিকা"র ক্ষেত্রে উপরোক্ত এই দুই নিয়ামককে বিবেচনায় এনে আমি মন্তব্য করেছিলাম।
"আসলে লেখক ও মান পত্রিকাটির বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল না। শেষ দিকে তেমন ব্যবসা হচ্ছিল না বলেই কিপ বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ।"
আপনার মন্তব্যের এই অংশটুকু আমার কাছে পরিষ্কার নয়। প্রতিষ্ঠিত লেখকরা লিখছেন, পত্রিকার মান ভালো কিন্তু ব্যবসা হচ্ছে না। কেন? কারন লোকে পত্রিকাটি আর তেমন কিনছে না। লোকে কেন পত্রিকাটি কিনছে না? সম্ভবতঃ তারা আর পত্রিকাটি আগের মত পছন্দ করছে না, তাই না। ব্যাপারটি সোজাসুজি দেখলে কিন্তু তাই হয়। হয়তো বাস্তবে "কিশোর পত্রিকা" বন্ধ হয়ে যাবার অন্য আরো অনেক কারন আছে যা আপনি বলতে পারবেন, যেহেতু আপনি এর সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন।
"বাংলাদেশে ছোটদের কোনো পত্রিকার ব্যবসা করে টিকে থাকার নজির নেই।"
আপনার এই কথাটি সঠিক। যেহেতু আপনি ছোটদের পত্রিকা প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলেন তাই আপনি ভালো বলতে পারবেন এই সরল ঘটনাটি কেন বার বার ঘটছে।
"কিশোর তারকালোক" সম্পর্কে আপনার তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে পত্রিকাটি মনে হয় আর আগের অবস্থায় নেই। আমি কয়েকটি পত্রিকাস্ট্যান্ডে খোঁজ করে পত্রিকাটি পাইনি, ছোটদের জিজ্ঞেস করেও নেতিবাচক উত্তর পেয়েছি।
ছোটদের পত্রিকার ফর্ম ও কনটেন্টের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা মনে রাখা জরুরী তা হচ্ছে প্রতি বৎসর যোগ হওয়া নতুন প্রজন্মের চাহিদাকে মাথায় রেখে সে অনুযায়ী নিয়মিত পরিবর্তন করা। প্রতি বৎসর বিয়োগ হওয়া প্রজন্মের চাহিদা ধরে রেখে পত্রিকা বের করলে এক প্রজন্ম তার ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করবে আর পরবর্তী প্রজন্ম তার ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
ভালো থাকবেন।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কিশোর পত্রিকার আমি নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম, পত্রিকার মান বা কন্টেন্ট নিয়ে আপনার কথাটা সঠিক মনে হলো না। সেই সময়ে কিশোর তারকালোক বা অন্য যে কোন পত্রিকার সাথে কিশোর পত্রিকার মানের পার্থ্ক্য ছিল অনেক। বন্ধের কারণ সম্পর্কে উপরে টিপু কিবিরিয়া বলেছেন, আমি অবশ্য জানতাম না যে এটা বন্ধ হয়ে গেছে, শুনে খারাপ লাগলো।
-----------------------------------
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি, আর কেউ জানে না
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমি মনে হয় এখানে কিছু বলে ভুল করেছি। দুঃখিত।
ব্যাপারটা জটিল,
একটা পত্রিকার মান যা হোক (অনেক হাবিজাবি পত্রিকাই টিকে আছ) টিকে থাকার প্রথম শর্ত ওটার কাটতি। আমরাই এর জন্য দায়ী, আমার ছেলের বয়স আট, আমার এতদিন এ লেখা পড়ার আগে কখনই মনে হয়নি যে ওর জন্য একটা ম্যাগাজিন রাখা উচিত্।
ধন্যবাদ, এখন খুঁজবো। ভালো কথা “আসন্ন” কি এখনো বেরোয়?
...........................
Every Picture Tells a Story
প্রিয় মুস্তাফিজ, আমার এই সামান্য লেখা যদি আপনাকে আপনার জন্য জরুরী এই বিষয়টির কথা মনে করিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে আমি ধন্য। ভালো থাকবেন, কামনা করি পড়ার অভ্যাসে আপনার পুত্র আপনাকেও ছাড়িয়ে যাক।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
@টিপু কিবরিয়া
আপনার এ কথাটিতে আমি আপত্তি জানালাম। আপনি বলবেন না কেন ? আমরা এখানে সবকিছুই আলোচনা করবো। কোনোটা হযতো ধারণা থেকে বলবো, কোনোটা তথ্য সংযুক্তি দিয়ে। কোনোটাতে আমাদের নিজস্ব মতামত থাকবে, কিন্তু সবার এক হতেই হবে এমন কোন কথা আছে নাকি ? যে যা ভালো জানেন বা বুঝেন বা তথ্য ধারণ করেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা জানবো। এখানে আমরা কেউ রোবট নই। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনাও পৃথক। তাই বলে আমার কথা আপনাকে মানতেই হবে এরকম হলে তো সব এক কারখানার রোবট হয়ে যাবো। এই সচলে এমন বহু বিতর্ক হয়েছে। এতে আমরা সবাই তা উপভোগ করি।এমন কি যারা বিতর্ক করেন তারাও। আপনি নির্দ্বিধায় আপনার ভাবনা, মন্তব্য, অনুভূতি প্রকাশ করবেন, এই অনুরোধ রইলো। বিতর্ক হলেই বরং প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে। আমরা সবাই সত্যানুসন্ধানী হতে চাই।
এবার পোস্ট বিষয়ক মন্তব্য।
'টইটম্বুর' নামের আরেকটি শিশুতোষ পত্রিকা ঢাকা থেকে বেরোয়, যা সম্ভবত প্রকাশনার সতের বছরে পা দিয়েছে। এরা প্রকাশনার পাশাপাশি কিছু কিছু উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিও হাতে নেন, যা অবশ্যই ইতিবাচক। যেমন দৃষ্টিমেলা, মা-কে নিয়ে, বাবা-কে নিয়ে ইত্যাদি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
প্রিয় আর বি, সচলে লেখা বা মন্তব্য করার ক্ষেত্রে যে নীতিতে বিশ্বাস করি তা গুছিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমার লেখার শুরুতেও এধরনের আবেদন ছিল। আমি জানি আমি কোন বিষয়েই "অথরিটি" বা "মাষ্টার" নই। তাই ভুল স্বীকার করতে, নতুন কিছু শিখতে বা ক্ষমা চাইতে আমার কোন কুন্ঠা নেই।
"টইটম্বুর"-এর কথা বলার জন্য ধন্যবাদ। তবে পত্রিকাটি কখনো পড়া হয়নি বলে আলোচনা করতে পারবো না। আপনার জানা থাকলে দয়া করে বলুন।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রণদীপম বসুর সাথে সর্বাংশে একমত! তাই তো, বলবেন নাইই বা কেন?
আমি নিজেই তো এই পোস্ট এবং তার মন্তব্যগুলো থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম - বেশীরভাগ ছোটদের পত্রিকার তো আমি নামই জানতাম না। এবং বিভিন্ন মতামত পড়ে টড়ে একধরনের ধারনাও তৈরী হচ্ছে।
এটাই তো উদ্দেশ্য বোধহয়, এতসব ব্লগর ব্লগরের?
কিশোর পত্রিকা এবং তার বড় ভাই রহস্য পত্রিকা দুইটাই আমি এক কালে গোগ্রাসে গিলতাম । বাড়ি থেকে পাওয়া হাত খরচ, পুরাতন খাতা আর সংবাদ পত্র সের দরে বেচে পাওয়া টাকা, নানির কাছে বায়না করে পাওয়া টাকা সব কিছু ব্যায় করতাম এগুলোর পিছে । প্রত্যেক মাসের চলতি সংখ্যাটাও কিনতাম আবার খুঁজে খুঁজে দোকান থেকে এক দুই বছর আগের সংখ্যাও কিনতাম । আমার কাছে এক সময় কিশোর পত্রিকার সব গুলো সংখ্যাই সংগ্রহে ছিল । যে সময়ের কথা বলছি তখন আবার বয়স দশ থেকে চৌদ্দ এর মধ্যে । সেসময় কিশোর পত্রিকাকে আমার কখনই নিজের জন্য অনুপযোগী মনে হয়নি । আমি রহস্য পত্রিকাও গোগ্রাসে গিলি দেখে 'বড়'রা কেউ কেউ অবাক হত, কেউ কেউ উপদেশ দিতে চেষ্টা করত "এটা বড়দের পত্রিকা" । হয়ত আমি নিজে ইঁচড়ে পাকা ছিলাম তাই বড়দের পত্রিকাটাকেও নিজে অনুপযোগী বলে মনে হত না ।
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে "কিশোর জগত" নামে একটা পত্রিকা পড়তাম। অনেকটা আনন্দমেলার ধাঁচে বের হত, গল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস, কমিকস, ধাঁধাঁ এসব থাকতো। ভালোই লাগতো। ওটার কথা মনে আছে কারো?
আরেকটা পত্রিকা ছিলো, সম্ভবত: বাংলা একাডেমী থেকে বের হত, নাম ছিলো "পারিজাত"। বোধহয় ত্রৈমাসিক ছিলো ওটা। ওটাও বেশ ভালোই ছিলো।
এই বোধগম্য কারণটা কি ঠিক বুঝলাম না।
"কিশোর জগত"-এর কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। যতদূর জানি এই পত্রিকাটিও স্বল্পায়ু ছিল।
দু'টি কারনে "আসন্ন" আর "ছোটদের কাগজ" আলোচনায় আনিনি। এক, খোদ শ্রদ্ধেয় লুৎফর রহমান রিটন সচলে আছেন। দুই, এই দুই পত্রিকার ব্যাপারে লেখকের স্বাভাবিক নিরপেক্ষতা নিয়ে আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। আমার এই সীমাবদ্ধতার জন্য পাঠকদের কাছে ক্ষমা চাইছি।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার প্রথম গল্প ছাপা হইছিলো কিশোর জগত-এ...
আসন্ন অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝে একবার চেষ্টা হয়েছিলো... একটা কি দুটো সংখ্যা বোধহয় বেরইছিলো... ঠিক মনে করতে পারছি না। মৃদুল আহমেদ ভালো বলতে পারবে সম্ভবত। তবে একসময় আসন্ন খুব পড়তাম।
কিশোর পত্রিকা আমি খুব একটা পড়িনি। রহস্য পত্রিকাতেই মেতেছিলাম ছোটবেলা থেকেই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধান-শালিকের দেশের কথা মনে পড়ে গেলো। তবে সেটি বোধহয় নিয়মিত ছিলো না।
একমত।
হাঁটুপানির জলদস্যু
"ধান-শালিকের দেশ"-এর কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। এটি অনিয়মিত ছিল। তবে "ধান-শালিকের দেশ" কনটেন্ট বিবেচনায় খুবই সমৃদ্ধ একটি প্রকাশনা। এখনো বইমেলা বা অন্য কোন উপলক্ষে বাংলা একাডেমীর স্টলে যাবার সুযোগ হলে "ধান-শালিকের দেশ" খুঁজি। অনেক ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিকই "ধান-শালিকের দেশ"-এর অনুবাদ থেকে প্রথম পড়েছি।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শিবিরের তরফ থেকে একটা বের হইতো, কিশোর কন্ঠ, কেউ কি দেখছেন এই জিনিস?
আমি দেখছি!
-----------------------------------
তুমি যা জিনিস গুরু আমি জানি, আর কেউ জানে না
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
"কিশোর কন্ঠ" আমিও পড়েছি। এজাতীয় আরো অনেক লোকাল আবর্জনাও পড়েছি। তবে আলোচনায় আনার প্রয়োজন বোধ করিনি। এক্ষেত্রে আমি নিরপেক্ষ নই। ক্ষমা করবেন।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ছোটদের লেখা কিছু তখনো হাতের কাছে নেই!
পঞ্চম শ্রনীর শেষ পরিক্ষা দেয়ার পর, হাতের কাছে পেলাম আকবর হোসেনের "অবাঞ্চিত" উপণ্যাস! সেই শুরু শরৎবাবুর শ্রীক্ন্তকে যদি ছোটদের লেখা বলা যায় তো সেটাই একমাত্র।
সিক্সে উঠে স্বাগতম নামের একটা অনু পত্রিকা পেরাম। ত্রৈমাসিক! ছড়া পাঠালাম।
পাদটীকায় যাদের লেখা মনোনীত হয়নি সেখানে নিজের নাম দেখে আর আগ্রহ হয়নি। পড়তে বা লিখতে।
তার পর আবিস্কার করলাম দাদা ভাই ইত্তেফাকে। সেটার মজা ফুড়েলো খেলা ঘর সংবাদে দেখে। সেই থেকে খেলা ঘরের সদস্য।
অজ পাড়া গাঁয়ে এইটুকু শিশু সাহিত্য!
মজার ব্যাপার ছিল কিচ্ছা। আমাদের গ্রামে বলে পরম কথা। সে মতে যিনি পরম কথা বলতেন তার নাম পরম ভাই। আমার দূর সম্পর্কের দাদু। ছন্দে ছন্দে গেয়ে যেতেন কত রূপকথা!
সেই আমার শিশু সাহিত্য। শিশোতোষ লেখার আকাল আমাদের ভাষায় কবে দূর হবে!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লেখা পড়ে ভাবছিলাম "ধানশালিকের দেশ " এর কথাটি এড করব , কিন্তু মন্তব্যে দেখলাম হিমু সেটা বলেই দিয়েছেন । একটি চমৎকার পত্রিকা , যদিও মাসিক এই পত্রিকাটি বোধহয় ষান্মাষিক হিসেবেই বের হতো । " নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা" যে সংখ্যায় ছিল সেটা পড়তে পড়তে প্রায় ছিড়ে যাওয়ার যোগাড় করেছিলাম ।
আমার প্রথম লেখালেখি শুরু "শিশু" পত্রিকা দিয়ে । একটাকা দামের "শিশু"র অনেকগুলো কপি এখনও আমাদের সংগ্রহে আছে । আনন্দমেলার " ইদানিংকার " সংখ্যা দেখা হয়নি , কিন্তু বুঝতে পারছি যে সেটির মানের অনেক পতন হয়েছে ।
.............
শিশু কিশোরদের পত্রিকা না চলার পেছনে আমার কাছে বড় সমস্যা মনে হয়েছে এর মার্কেটিং । যারাই এই পত্রিকা করেছেন তারা মার্কেটিংয়ে হয়তো প্রয়োজনীয় সচেতন ছিলেন না । সাধারন পত্রিকাস্টলে শিশুদের যাওয়ার কথা নয় , সুতরাং পত্রিকাগুলো সেখানে ঝুলিয়ে রেখে বিক্রী করার যে চেষ্টা হয়েছে সেটি হয়ত তেমন ফল দেয় নি ।
স্কুলকে কেন্দ্র করে এই পত্রিকাগুলো যদি এগুতে পারত তাহলে অনেক ভালো হতো ।
আমার মনে আছে , একবার অনেক চেষ্টা করেও কয়েকবছর আগে আমি সিলেট ঘুরে আসন্ন , কিশোর তারকালোক সহ কোন পত্রিকাই পাইনি । বিসাকে তে আড্ডা মারার সময় জানতে পারলাম আসন্ন এখনও বের হয় ( ২০০১ সালের কথা ) কিন্তু সেটি কেন সিলেটে পাওয়া যায় না , জানি না ।
না পেলে একটি কিশোর এই পত্রিকাগুলো কিভাবে কিনবে ?
বলতে ভুলে গেছি , ঐতিহ্য থেকে একটি শিশু পত্রিকা বের হয় শুধু ঈদের সময় । গতবার দেখেছি , চমৎকার প্রোডাকশন । আনন্দমেলার কথা মনে করিয়ে দেয় , সেটাকে নকল করার একটা চেষ্টা আছে ।
কিন্তু দাম অত্যধিক । সম্ভবত ৩০০টাকা । ৩০০টাকা দিয়ে কয়জন শিশু কিশোর এই পত্রিকাটি কিনতে পারবে , আমার জানা নেই ।
এই ব্যাপারটি ভালো ধরেছেন। ৩০০ টাকা দিয়ে কয়জন শিশু এটা কিনতে পারবে (বা বাবা-মা কিনে দিতে পারবে)? ছোটদের বই আজকাল যা বের হয় তার দাম যদি লক্ষ্য করেন তাহলে একই চিত্র দেখতে পাবেন। ব্যাপারটা বিস্কুট দৌড়ের মত হয়ে গেছে। মুখের সামনে বিস্কুট ঝুলানো আছে কিন্তু আপনার হাত বাঁধা, আবার উচ্চতাও এমন যে লাফিয়ে মুখ দিয়ে কামড়ে নিতে পারবেন না। বিস্কুট দৌড়ের মত শিশুদের অনুপযুক্ত একপেশে খেলার মত শিশুদের বই-পত্রিকার দামও তাদের অনুপযুক্ত-একপেশে হয়ে গেছে। বই-পত্রিকার বিনোদন এখন সুযোগ, অধিকার নয়।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দৈনিক বাংলার শিশুসাহিত্যের পাতা 'সাত ভাই চম্পা' খুব বাছাই করা লেখার জন্য বিখ্যাত ছিল। সম্পাদক ছিলেন আফলাতুন। কিশোর বাংলা ছিল উপমহাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সাপ্তাহিক খবরের কাগজ যার গ্রাহক কিশোর সমাজ। সাহিত্য একটি অঙ্গ মাত্র। রফিকুল হক দাদুভাইয়ের সম্পাদনায় এটি প্রকাশিত হতো। গ্রাহক সংখ্যার হিসাবে এর চেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা আর আমাদের জন্য ছিল না।
নতুন মন্তব্য করুন